প্রিয়জন❤Part-22

0
2392

প্রিয়জন❤Part-22
Writer-Moon Hossain

মোমের ঘুম আসছেনা। কাল সকালেই আগুন কয়েক মাসের জন্য লন্ডন চলে যাবে বিজনেস এর জন্য। প্রতিদিন যাকে না দেখলে প্রাণ চলে যাওয়ার উপক্রম হয়, সেই তাকে কয়েক মাস না দেখার যন্ত্রণা কতটুকু হবে তা আগুন মোম দুজনেই বুঝতে পেরেছে।
মোম এখন আগুনের পৃথিবী হয়ে দাড়িয়েছে। মোমের সাথে থেকে সেও মোমের মতো চিন্তা ভাবনা করে। । আগুন তার বাবা কে মানা করে দিতো লন্ডন যাওয়ার জন্য যদি সে আগের আগুন খান থাকতো।
.
.
মোম নামাজ পড়তে বসলো। আজ মোম অতিরিক্ত নফল নামাজ পড়লো। কিছুতেই তার মন স্থির থাকতে পাচ্ছেনা।
মোমের ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।
মোম জানে আগুন তাকে স্বরণ করেছে।
মোম কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একজন হ্রদয় কাতর প্রেমিকের আওয়াজ শোনা গেলো।
-আমি তোমার প্রেমে কাতর হওয়া প্রেমিক স্বামী বলছি প্রিয়তমা।
মোম-উনার কন্ঠ আগের মতো শোনাচ্ছে না।
উনি এমন ভাবে কাতর গলায় কথা বলছেন যেন মজনু হয়ে গিয়েছে অথবা ফরহাদ।
মোম চুপ করে আছে দেখে আগুন আবার বলল- ভাবছো আমি মজনু ফরহাদের মতো কাতর গলায় কথা বলছি কেন তাইনা প্রিয়তমা?
আমি তোমার প্রেমে রিয়েলি ম্যাড হয়ে গিয়েছি।
তোমাকে ছাড়া এক মূহুর্ত আমি থাকতে পারবনা।
মোম শান্ত স্বরে বলল – দেশেও তো আমরা একসাথে সব সময় থাকিনা। তখন তো আপনার এতো দুঃখ হয় না।
আগুন কাতর গলা ছেড়ে এখন রুঢ গলায় বলল-শোন প্রিয়তমা আমরা এক দেশ এক শহরে আছি। আমাদের মন যখন চায় তখন আমরা দেখা করি।
একই শহরে থাকার জন্য আমার মনে হয় তুমি আমার কাছে আছো। বিদেশে গেলে তুমি আমার থেকে হিসাব ছাড়া মাইল মাইল দূরে থাকবে।
আর তখন তো তোমাকে আমি যখন মন চায় দেখতে পারবনা।
-ফোন তো আছে ফোনে কথা বলবেন।
-এনি চান্স তোমাকে দেখতে মন চাইল তখন??
-মনের আয়না তে দেখে নেবেন।
-সে তো আমার মনের কোটি কোটি মিররে তোমার ছবি ফ্লেম করা আছে। বাট এনি চান্স তোমাকে সরাসরি দেখেতে মন চাইলো তখন? বা তোমাকে টাচ করতে মন চাইবে তখন?
ফোনের ভেতরে তোমাকে সরাসরি দেখা বা টাচ করা যাবে না।
তখন আমি তোমাকে না দেখতে পেয়ে , টাচ না করতে গিয়ে ৫০ তলা ফ্লোরের জানালা দিয়ে ধপ করে লাফ দেব দুঃখে কষ্টে।
.
.
.
মোম-উনার কথা শুনে আমি শোয়া থেকে বসে পড়লাম।
-ভয়ে আমার হ্রদয় ছটফট করছে। আপনাকে কতবার বলেছি এসব কথা বলবেন না আল্লাহর দোহায়।
-বাট এটাই সত্য।
আরেকটা সত্য হলো তুমি আমাকে ভালোবাসো না। তুমি আমাকে ছেড়ে বেশ সুখেই থাকবে।
উনি ফোনটা কেটে দিলো অভিমান করে।
.
.
আমি উনার কান্ড দেখে চোখের পানি মুছে একটু হাসলাম।
খুব ভালো করে জানি উনি আবার কল করবে।
আগুন-রাগ দেখিয়ে কল কেটে দিলাম। ওকে ছাড়া আমি এখন থাকতে পারিনা। এটা ও বুঝেও বুঝেনা। আর কল করব না।
ও কল দিলেও রিসিভ করবো না। ফোন অফ করে রাখব।
উচিৎ শিক্ষা দেব প্রিয়তমাকে।
আচ্ছা ও কি খেয়েছে? আমার থেকে দূরে থাকলে একসাথে টাইম ফিক্সড করে আমরা খাওয়া দাওয়া করি।আমি যেহেতু খাইনি তাহলে ও খায়নি।
.
.
ফোনের রিংটোন বাজছে…
মোম হেসে ফোনটা রিসিভ করতেই আগুন অস্থির হয়ে বলল-তুমি খেয়েছো প্রিয়তমা?
মোম মজা করে বলল- আপনার চলে যাওয়াতে আমি খুশিতে এক গামলা পোলাও খেয়েছি।
আগুন কাতর গলায় বলল-আমাকে ছাড়া কিভাবে পারলে?? কি নিষ্ঠুর ভাবে খেলে ক্ষুধার্ত স্বামীকে ফেলে প্রিয়তমা।
এখন আমি ফোন অফ করে রাখব। তুমি ১০০০ বার কল করলেও রিসিভ করবো না।
আগুন ফোন কেটে দিলো।
মোম- উনি আমার উপর রাগ করে থাকতে পারেনা। মাঝে মাঝে উনাকে রাগাতে ভালো লাগে। উনার রাগী লুক দেখতে ভালো লাগে।
আমি উনাকে কল করলাম তিন বার। ওরে বাবা মহাশয় খুব রেগে আছে। কল কেটে দিচ্ছে। আমার মজা লাগছে। উনিই শেষে কল করবেন আমাকে।
একটু পরেই উনার কল আসলো- প্রিয়তমা তুমি তো পোলাও খাওনা। আমার সাথে মজা করো??
প্রিয়তমা পোলাও নিয়ে তোমাকে মজার একটা জোক্স বলি শোন, এক লোক দিনে ৮ বার করে পোলাও খায়। এতো পোলাও খায় তবুও মোটা হয়না। লোকটা ডক্টরের কাছে গেলো। তারপর……..
মাঝ রাত পর্যন্ত উনার সাথে আমার কথা হলো। উনি এতো এতো মজার জোক্স বললেন যে আমি হাসতে হাসতে শেষ। সাথে উনার হাসিও শুনছি। উনি ফোনে একটু আওয়াজ করে হাসেন।
উনি বললেন-এখন ঘুমুতে যাও প্রিয়তমা। তোমার শরীর দূর্বল।
উনাকে ঘুমানোর কথা বলে আমি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার প্রস্তুতি নিলাম আর মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উনাকেও নামাজ পড়ার তাগিদ করব।
.
.
.
সকালে ভার্সিটিতে না গিয়ে সোজা উনার ঠিক করা রেস্টুরেন্টে গেলাম।
উনি আমাকে এমন ভাবে খাওয়াচ্ছেন আজ যেন এটাই শেষ খাওয়াচ্ছেন।
আমি বললাম-আপনিও খান।
উনি বলল-তোমার নূরের মুখশ্রী দেখলে আমার ক্ষিদে চলে যায়। ক্ষিদে না লাগলে কি খাওয়া যায় প্রিয়তমা?
মোম -উনার কথা শুনে লজ্জা পেলাম। হঠাৎ হঠাৎ উনি এমন কিছু বলে আমাকে আরও বেশি লজ্জা দেয় যদিও আমি এমনিতেই লাজুক।
উনি হঠাৎ আবেগের সুরে বললেন -তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে যাব? যেতে পারবনা।
বিজনেসে প্রচুর লস হচ্ছে তাই যেতে হবে।
আমি উনার হাত ধরে বললাম- মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যাবসায় শুধু লাভ কিন্তু লস নেই তা হালাল হয় না। যেমন সুদের ব্যবসায় শুধু লাভ আর লাভ হয়।
-প্রিয়তমা তুমি আমার মনে আশার বীজ বুনে দিলে। আমি তোমার ভালোবাসায় দূর্বল কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসার শক্তি। তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না প্রিয়তমা। কি সুন্দর করে তুমি বললে বিজনেসের লাভ লসের বিষয়টা।

.
.
মোম মাথা নিচু করে বলল-ফ্লাইট কটায়?
আগুন বলল- ফ্লাইট দুপুর দুটোয় ঠিক হয়েছে।এখন বাজে ৯টা। ১০টায় ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা দেব।
তারপর তোমার থেকে অনেক দূরে লন্ডনের ফ্লাইটে বসব।
আগুন – কয়েকটা মাস ওকে ছাড়া দুঃখে কাটাতে হবে।
দেখলাম ও নেকাব লাগাচ্ছে তাড়াতাড়ি কারণ ওয়েটার আসছে এদিকে।
লক্ষ্য করলাম একটা ওয়েটার বার বার এসে বলছে কিছু লাগবে স্যার? কোন প্রবলেম হচ্ছে?
বুঝতে বাকি রইল না কিছু। এমন সুন্দরী ওয়াইফ থাকলে আমার মতো হাসব্যান্ড এর সহ্য ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
আমি উঠে শার্টের হাতা ফোল্ড করে ওয়েটারের দিকে এগুচ্ছি।
মোম ভয়ে আমার হাত ধরে ফেলল।
আমি মোমকে ইশার দিলাম ভয়ের কিছু নেই তারপর ওয়েটারের পকেটে কিছু নোট গুজে বললাম – না ডাকা পর্যন্ত এখানে আসবেন না এবং অন্য কাউকেই আসতে দেবেন না এই সাইডে। আমি এই সাইডের সবকটা টেবিলের বিল দেব, কেমন?
ওয়েটার ভয়ে ঢোক গিলছে।
.
.
.
মোম মাথা নিচু করে আছে কিছু বলছেনা।
ও না থাকলে আমি রিয়েলি এই ওয়েটারের মাডার করে ফেলতাম।
সিচুয়েশন স্বাভাবিক করে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।
মোম চোখ বন্ধ করে ফেলল ভয়ে।
ওর ভয় কাটানোর জন্য বললাম- এখনই এতো ভয় পাচ্ছো তাহলে এই ভয়ংকর লোকের সাথে সংসার করবে কি করে?
ও চোখ খুলছেনা এখনো। আমি ওর হাত আমার গালে নিয়ে বললাম- প্রিয়তমা তাকাও তোমার আগুনের দিকে। পৃথিবীর সবার জন্য আমি ভয়ংকর বাট তোমার কাছে আমি শান্ত হয়ে থাকব ফুল লাইফ।
.
.
.
রেস্টুরেন্টের সাইডে ছোট রাস্তায় ওকে নিয়ে হাঁটছি।
হঠাৎ ওর হাত আমার হাতের মুষ্ঠি বদ্ধ করলাম হাত মোজা খুলে।
মোম-আচমকা উনি আমার হাত ধরায় ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।
এখন খুব লজ্জা লাগছে সাথে উনার স্পর্শে আমি শিহরিত হচ্ছি। অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করছে এভাবে হাত ধরে পাশাপাশি হাটতে।
উনি হঠাৎ আমার সম্মুখে এসে বললেন-প্রিয়তমা তুমি তো জানো লন্ডন কেমন শহর?
ওখানে বড় হয়ে আমি ওখানকার কালচার নিজের মধ্যে ধারণ করেছি। আমার প্রচুর বান্ধবী ছিল, প্রচুর ড্রিংক করতে হতো, ক্যাসিনো তে জুয়া খেলতে হতো ফ্রেন্ডের সাথে। জুয়া খেলা আর ড্রিংকস নিয়ে অনেকের সাথে ব্যাপক শত্রুতার জন্মও করেছি। জানতো, আমার মাথা গরম তাই মারামারি কাটাকাটি হিংসা বিদ্বেষ লেগেই থাকতো আমার সাথে। দেশে এসে সব ভুলে গিয়েছিলাম বাট ওখানে গিয়ে এসব যদি আবার শুরু করতে পারি। তুমি কি আমাকে ভুল বুঝবে প্রিয়তমা??
আমি শুধু উনার দুই গালে হাত রেখে বললাম- ? . শয়তান মানুষের মাঝে শত্রুতা ও ঘৃণা সৃষ্টি করে। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ- ‘শয়তান তো কেবল চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত হ’তে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা নিবৃত্ত হবে কি?’ (মায়েদাহ ৫/৯১)। পরস্পরে ভাল আচরণ করতে হবে। অন্যথা এই দুর্বলতার সুযোগে শয়তান মানুষের মাঝে সংঘর্ষ বাধিয়ে চরম শত্রুতা সৃষ্টি করবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَقُلْ لِعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوًّا مُبِينًا- ‘(হে নবী!) তুমি আমার বান্দাদের বল, তারা যেন (পরস্পরে) উত্তম কথা বলে। (কেননা) শয়তান সর্বদা তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৫৩)। এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ ‘যে আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে’। আল্লাহ পাক আমাদেরকে ইবলিশ শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে হেফাজত করুন।
-আপনি প্রতিটা মূহুর্তে আল্লাহর নাম নেবেন তাহলে শয়তান কখনো তার কাজে সফল হবে না।আপনাকে শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে বাঁচতে শিখতে হবে।
আমি আপনার জীবনসঙ্গী। আপনাকে সঠিক পথে আনার জন্য আপনার পাশে থাকব সারাজীবন।
আগুন -ওর কথা শুনে আমি ভরসা পেলাম। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আমার প্রিয়তমার জন্য হলেও আমি এসব থেকে ডিস্টেন্সে থাকব।

.
.
ওকে ওর বাসায় নামিয়ে দেওয়ার সময় ওর হাত ধরে বললাম- ফিরে এসে তোমার কথা মতো চলব। তুমি আমাকে নিজের মতো করে গড়ে নিয়ো প্রিয়তমা।
মোম আমাকে ভরসা দিলো আর আমি আচমকা ওর কপালে কয়েকটা চুমু দিয়ে বসি। ওর চমকানো সিচুয়েশনে ওর দুই হাতেও অনেক গুলো চুমু দিলাম। মোমের লজ্জা রাঙা মুখ তুলে বললাম –
প্রিয়তমা তোমার জন্য এই বুকে অজস্র ভালোবাসা জন্মেছে যা সমুদ্র সমান, পাহাড় সমান,আকাশ সমান যা তোমার ভালোবাসার জন্য তৃষ্ণার্ত…
.
.
.
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here