প্রিয়জন❤Part-25

0
2346

প্রিয়জন❤Part-25
Writer-Moon Hossain

আগুনের বিরহে সবাই যেনো কেমন হয়ে আছে। পরিস্থিতি এতোটা জটিল যে সবাই আল্লাহর স্বরণে এসেছে।
আগুনের মা আর আরু দুইজন মোমের সাথে জায়নামাজে বসেছে মাথায় কাপড় দিয়ে।
মোম নিজের শাশুড়ী আর ননদকে প্রথমে তওবা ইস্তিগফার শিখিয়ে দিলেন।
উচ্চরণঃ আসতাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন্ কুল্লি যাম্বিও ওয়া আতূবু ইলাইহি।
অর্থঃআমি সমস্ত গুনাহ্ হইতে তওবা করিতেছি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি।
কোনোদিনও আল্লাহর পথে না আসা আগুনের বাবাও একটা জায়নামাজ কিনে এনে নিজের রুমে বসে আছেন হাতে তছবি নিয়ে।
সবাই শুধু পথ চেয়ে বসে আছে আগুনের জন্য।
আগুনের মা, মা আগুনের বাবাকে সবকিছুর জন্য দ্বায়ী ভাবেন। কেননা, তার আদেশেই আগুন লন্ডনে গিয়েছে।
লন্ডনে আগুনের বাবা একটা ব্রাঞ্চে ঝামেলা দেখা দিয়েছে। সেখানকার সিনেটররা বেশ ভয়ংকর ঝামেলা করছে।
আগুনের বাবার পর সবকিছু আগুনকে সামলাতে হবে এই ভেবে তিনি আগুনকেই এই বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে লন্ডনে পাঠিয়েছেন।
আগুন যেহেতু লন্ডনে বড় হয়েছে সে হিসেবে সে এই বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে পারবে৷
.
.
মোমের বাবা বাহিরে বসে আছেন গাড়িতে। ড্রাইভার এসে তা ভেতরে জানালো।
মোম-আমার ইচ্ছে করছে না যেতে। কিন্তু এমন ভাগ্য আমার মন খুলে দুঃখ প্রকাশ করতে পারবোনা সবার সামনে।
আমার শশুর বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, টেনশন করোনা। তুমি চলে যাও। কিছুদিনের জন্য ঐ বাড়িতে থাকবে।
আগুন এলে তোমাকে তোমার আসল বাড়িতে নিয়ে আসব। এটা হলো তোমার বাড়ি মা।
শাশুড়ী মা কিছুতেই আমাকে ছাড়বে না।
তিনি নাকি উনার ছেলের গায়ের গন্ধ আমার গায়ে পাচ্ছেন।
বিধায় নেওয়ার সময় তিনি আমাকে বললেন- তোমার মাথা কেনো ঘুরছিলো? ওয়াক ওয়াক কেন করছিলে?
তোমার সাথে আমার ছেলের ক্লোজলি কমিউনিকেশন হয় সেটা জানি।
আমার ছেলে একদম ফ্রী ভাবে তোমার কথা সহ সব কথা বলে। ওর মাঝে কোন রকম জটিলতা নেই।
আমি মাথানিচু করে রইলাম। আর বললাম-চিন্তা করবেন না মা। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে ঘুম ভাঙার পরেই আপনার ছেলের খবর পানেন। ইনশাআল্লাহ।
আমি বহু কষ্টে উনাকে ঘুম পাড়িয়ে বাবার সাথে গাড়িতে বসলাম।
বাবা সাথে গাড়িতে বসলে অন্যদিন কত কথা বলতো। কত হাদিস না বলতেন।
কিন্তু আজ চুপচাপ।
আমিও জিজ্ঞেস করলাম না কিনা। জিজ্ঞেস করলে আমার সমস্যা হতে পারে। কি বলতে কি বলে ফেলি।
আমি মিথ্যে বলিনা কখনো। বাবা কিছু জিজ্ঞেস করলে সেটা যতই বিপদজনক হোক সত্যিটা বলতেই হবে।
আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে উনাকে অনুভব করছি।
উনি যেন আমাকে কোথা থেকে দেখতে পাচ্ছে।
উনাকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারিনা। প্রতি মূহুর্তে উনাকে ফিল করতে পারি।
এটা বুঝতে পেরেছি উনার মতো দুষ্টু ছেলেমানুষী পাগল ছেলেটা কে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।
বাবা হঠাৎ করে বললেন, সৌদির সেই ছেলেটা ফোন করেছিলো।
সে তোমার সাথে দেখা করতে চায়।
আমি কিছু বললাম না শুধু চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু পানি পড়ছে নিজের অজান্তে।
উনি থাকলে এই বিষয়টা নিয়ে আমার মনে ভয় জন্মাতো না।
উনি নেই সেই সুযোগে বাবা তার কাজ সারতে চাচ্ছেন।
“কোথায় আপনি? আমার মনের ব্যথা গুলো কি আপনার মনে ব্যথার সৃষ্টি করছে না? আমার চোখের পানি গুলো কি আপনার চোখ বেয়ে পড়ছেনা। আমার মনের ডাক গুলো কি আপনাকে আমার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেনা?
.
.
আরও দুইদিন কেটে গেলো।
আমার শরীর খুব খারাপ। ঔষধ পত্র ইচ্ছে করেই খাচ্ছিনা। খুব কষ্ট হচ্ছে। বাসায় সবাই আমাকে নিয়ে ব্যাস্ত তবুও আমার নিজেকে অসহায় লাগছে।
উনাকে ছাড়া যে আমি ভালো হবো না কখনো। বাঁচতে ইচ্ছে করছেনা।
” হে আল্লাহ আমাকে ধৈর্য দান করো। সবকিছু ঠিক করে দাও।
উনাকে ফিরিয়ে দাও।
.
.
ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছি। বাবা আমার পাশে বসলো।
ভাইয়াও এসেছে সাথে ভাবি।
আমি উঠে সালাম দিলাম -আসসালামু আলাইকুম।
বাবা ভাইয়া দুজনেই সালামের জবাব দিল-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
বাবা বলল- তোমার শরীর ঠিক আছে মা? কয়দিন ধরে তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে।
-বাবা তেমন কিছু না। আমি ঠিক আছি।
ভাইয়া আমরা মাথায় হাত বুলিয়ে বলল-অবেলা শুয়ে আছিস যে?
-ঐ একটু ব্যাথা করছে।
সে কি তোর পেট ব্যথা আর তুই কিছু বলছিস না।
দাঁড়া এখুনি তোর চিকিৎসা করে দিচ্ছি।
আয়েশা যাও তো আমার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ব্যাগটা এনে দাও তো।
আশরাফ বাবার বিজনেসের পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিতে বিশেষজ্ঞ। বন্ধু মহল আর আত্মীয়স্বজনদের কিছু হলেই সে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে।
মোম-আমার উনার দুঃখে বুকে ব্যাথা করছে। কষ্টে মনে ব্যথা করছে আর ভাইয়া পেট ব্যথা ভেবে তেঁতো নিম পাতার রস আর কি কি জানি মিশিয়ে আমাকে খাইয়ে দিলো। আর ভাবি ভাইয়ার নির্দেশে পের মালিশ করে দিলো। জন্মের তেঁতো বিষ যেন খেলাম। গলা দিয়ে যেন নামছেই না। মৃত মানুষও জীবিত হয়ে যাবে ভাইয়ার ঔষধ খেলে।
ভাইয়া বলল-নো টেনশন। আল্লাহ তায়ালা মানুষের উপকারের জন্য আমাকে এই জ্ঞান দান করেছে। এখুনি তোর পেট ব্যথা ভালো হয়ে যাবে আর তুই ১০০ মিটার দৌড়ে প্রতিযোগিতাও করতে পারবি।
ভাইয়ার কথা আর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় আমি হাসবো না কাঁদব আল্লাহ জানে।
.
.

ঐ দিন বিকেলেই আরু ফোন করে জানিয়েছে উনার খোঁজ পাওয়া গেছে।
উনি একদম সুস্থ। খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন।
আমি উনার খবর পেয়ে সোজা শোকরানার নামাজ পড়ে নিলাম। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।
আল্লাহ আমার উপর দয়া করেছেন। তিনি পরম দয়ালু, পরম করুনাময়।
আমার ফোন কেনা হয়নি আর নতুন করে সিমকার্ডটাও কেনা হয়নি।
ভাবি আমাকে তার ফোন দিয়েছিল কিন্তু আমি নিইনি। কারণ আমি ভাবিকে আমার কোন বিষয়ে ইনভলভ করতে চাইনা।
আমার ভাইয়া, ভাবির সংসারে কোনরকম আচ লাগতে দেব না আমার জন্য। উনাদের সম্পর্কের মাঝে চুল পরিমাণ বিভেদ সৃষ্টি হতে দিতে পারিনা।
.
.
বাবা বলেছেন তিনি আমার জন্য জাপান থেকে একটা ফোনের অর্ডার করেছেন যেটা দুই একদিনে পার্সেল হিসেবে আসবে।
আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম উনার কন্ঠ শোনার জন্য।
যাইহোক, উনি ঠিক আছেন এটাই আমার জন্য যথেষ্ট।
উনার সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলাম।
আমার মন থেকে একটা পাথর নেমে গেলো।
মনে হচ্ছে পৃথিবীতে আরও কয়েক যুগ উনার সাথে বেঁচে থাকলে মন্দ হবে না। একটু আগে পর্যন্ত বাঁচতে ইচ্ছে করছিলো না।
চোখের সামনে কেমন যেন আজরাইল আজরাইল ছায়া দেখতে পাচ্ছিলাম।
প্রতিদিন আরু কে ফোন করে উনার খোঁজ নিতাম।
একদিন লজ্জা ভেঙে বলে ফেললাম-তোমার ভাইয়া কি আমার কথা কিছু বলেছে?
আরু হাসতে হাসতে শেষ।
ও বলল- ভাইয়া বলেছে হানিমুন করার জন্য নাকি সুইজারল্যান্ড সবচেয়ে পারফ্যাক্ট প্লেস। তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবার প্ল্যানও করে ফেলেছে। টিকিটও কেটে ফেলেছে। তাছাড়া হোটেলের রুম বুকিং করে ফেলবে আজ কাল।
-তোমার ভাইয়া একটা পাগল৷ একটুও লজ্জা নেই নিজের হানিমুনের কথা বোন কে বলে কেউ।
আমি মনে মনে লজ্জা পেলাম বেশকিছুটা। মনে মনে বললাম-আগুনের প্রিয়তমা সংসার জীবনে তোমার কপালে সুখের দুঃখ আছে। তোমার লাগামহীন নির্লজ্জ স্বামী তোমাকে কি করবে তা আল্লাহ জানে। কে জানে আর কত প্ল্যান বানিয়ে রেখেছেন তিনি।
.
.
একদিন বাসায় একটা পার্সেল এলো।
পার্সেলটা আমার কাছে ফুলি নিয়ে এলো।
আমার সিগনেচার লাগবে রিসিভ পেপারে। ভাগ্য ভালো বাবা আর ভাইয়া অফিসে। মা, ভাবি আরব কে আমার কাছে রেখে মাদ্রাসায় গিয়েছে।
বিদেশি পার্সেলটা খুলে চমৎকার কিছু তছবি পেলাম।
নানা রংয়ের তছবি দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো।
পার্সেলটার উপরে আগুন খান নাম লেখা দেখে আমার বুকে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো।
খুশিতে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।
পার্সেলটা সোজা বুকের মাঝে জরিয়ে ধরলাম। মনে হলে উনাকে জরিয়ে ধরেছি। লজ্জায় মুচকি হাসছি আমি।
-ফুপু মা এমন করছো কেন? আরবের চমকানো চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। সে কেমন আশ্চর্য হয়ে আমাকে দেখছে।
কিছু বুঝতে পারলো নাকি দুষ্টু জ্ঞানী আরব টা।
আরব বড়দের মতো করে আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করছে।
পার্সেলে নানা ধরনের চকলেট ছিলো। চকলেট বক্স গুলোতে আরব আর আমার নাম লেখা ছিলো।
“আরব, প্রিয়তমা।
ইংরেজিতে নামগুলো লেখা ছিলো।
আরবকে চকলেট দিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলাম।
পার্সেল খুলে একটা চিঠি পেলাম।
উপুড় হয়ে শুয়ে চিঠিটা খুললাম।
একবার চোখ বন্ধ করে আবার চোখ খুলে চিঠি পড়া শুরু করলাম।
” প্রিয়তমা”
-তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো নেই আমি।
এখানে অনেক ঝামেলা চলছিল। আমার প্রাণ সংকটে ছিলো সেটা আগে থেকেই জানতাম। তুমি টেনশন করবে বলে তোমায় কিছু বলিনি। এই এই খবরদার চোখের পানি ফেলবে না। এখন আমি ঠিক আছি। কিছুদিন আত্মগোপন করেছিলাম। যেন শত্রুরা ভাবে আমি দেশে পালিয়েছি। ঠিক সে সময় আমি এন্ট্রি নিয়ে সব শত্রুর মোকাবিলা করলাম। এখন পরিস্থিতি স্বামীর দখলে। সমস্ত যোগাযোগ অফ করেছিলাম বিকোজ আমার ফোন, ল্যান্ডলাইন সবকিছু ট্রেক করা হয়েছিলো। আমার সূত্র ধরে দেশে তোমাদের ক্ষতি করতে পারে তাই যোগাযোগ অফ রাখতে হয়েছে। আমাকে মাফ করে দিও তুমি। আরুর কাছে সবকিছু জানতে পারলাম, তুমি কিভাবে মায়ের খেয়াল রেখেছো আর বাবাকেও সাহস দিয়েছে সে সব শুনেছি আমি। দেখতে হবে কার ওয়াইফ তুমি!
তোমার মনে ডাক, চোখের পানি আর মনের যন্ত্রণার ব্যথা গুলো সোজা আমার বুকে বিঁধেছে।
তোমার ফোন ছিনতাইয়ের কথাও শুনেছি। তোমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারাতে খুব অসহায় লাগছিল তাই পার্সেলটা পাঠালাম।
“জানো প্রিয়তমা, আমার ছুটে দেশে তোমার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে। তোমার চোখের পানি মুছে দিতে ইচ্ছে করছে।
অনেক পেইন আর এলন ফিল করছি বিদেশের মাটিতে।
তুমি ছাড়া আমি এক মূহুর্ত থাকতে পাচ্ছিনা।আমি বুঝতে পেরেছি পৃথিবীর সব মূল্যবান বস্তু থেকে তুমি সবচেয়ে দামী। কিছুই চাইনা আমার তোমাকে ছাড়া। আমার খুশি শুধু তোমার মাঝে। সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
আমার ইচ্ছে করছে ষাট তলা ফ্লোর থেকে লাফিয়ে পড়তে কেননা, এই বিরহ সহ্য হচ্ছে না। তোমাকে ফোন পাঠালাম না কারণ সমস্যা হতে পারে তাই তোমার ফোনের এরেন্জড হলেই কল করো আমায় । তোমার প্রেমিক স্বামী তোমার ওয়েটে আছে।
এখন তোমার রেকর্ড করা ভয়েস আর তোমার গায়ের গন্ধ লেগে থাকা রুমাল দিয়ে কাজ চালাচ্ছি। জানিনা কখন তোমাকে কাছে দেখতে পারবো।
নিজের খেয়াল রেখো আমার জন্য হলেও। তুমি না খেলে ভাববে আমিও খাইনি।
এই বিরহ সহ্য হচ্ছেনা, হচ্ছেনা, হচ্ছেনা।I can’t live without you! I Love you very much❤ আর কিছু লিখতে পাচ্ছিনা কারণ মনে হচ্ছে এক হাজার পৃষ্ঠা লিখলেও আমার মনে জমে থাকা কথা লিখা শেষ হবে না। উফফ,যদি পার্সেলের ভেতর মানুষও ঢুকে চালান হয়ে যেত তাহলে আমিও পার্সেলে ঢুকে পড়ে তোমার কাছে চলে আসতাম।
ইতি তোমার নিরিহ
” স্বামী ”
চিঠিটা শেষ করে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা করছে। মনে হচ্ছে ভাইয়ার হোমিওপ্যাথি এবার কাজে লাগবে।
.
.
.
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here