প্রিয়জন❤Part-26

0
2429

প্রিয়জন❤Part-26
Writer-Moon Hossain

মোমের ফোন কেনা হয়েছে ইতিমধ্যেই।
মোম সর্বপ্রথম আগুনকে ফোন করলো।
মোমের নার্ভাস লাগছিলো যখন নাম্বার ডায়াল করেছিল। ফোনের রিংয়ের আওয়াজ হচ্ছে আর মোমের মনেও আওয়াজ হচ্ছে।
এই পাঁচ বার রিং হয়েছে তবুও আগুন রিসিভ করছে না।
মোম-কোনো বিপদে পড়লো নাতো? না না কি সব ভাবছি। হয়ত বিজি তাই রিসিভ করছে না।
মোম আগুনের ফোনের জন্য সেই কখন থেকে ওয়েট করছে।
আগুন যখন দেখবে তার প্রিয়তমা অনেক গুলো কল দিয়েছে তখন নিশ্চয়ই সব ব্যস্ততা ফেলে নিজেই কল করবে।
মোম ওয়েট করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
মোমের ঘুম যখন ভাঙলো তখন মোম ফোন চ্যাক করে দেখে আগুনের মিস কলস অনেক গুলো।
মোম-শুধু শুধু ঘুমালাম। জেগে থাকলে রিসিভ করতে পারতাম।
ম্যাসেজ চ্যাক করে দেখলাম একটা ম্যাসেজ।
“প্রিয়তমা কল রিসিভ না করার জন্য দুটো অপশন ভেবেছি।
1:তুমি লজ্জা পাচ্ছিলে এতোদিন পর আমার সাথে কথা বলতে।
2:তুমি কল করতে করতে আমার জন্য ওয়েট করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলে।
আমি জাস্ট মুগ্ধ হলাম আবারও উনার পজিটিভ চিন্তা ভাবনার জন্য। উনি খুব সুন্দর আমাকে বুঝতে পারেন।
রিং হচ্ছে। টুপ করে রিসিভ করলাম।
চোখ বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
ওপাশ থেকে আমার উনার কন্ঠ শুনতে পেলাম।
-এখন কেমন ফিল করছো প্রিয়তমা?
-আজ কতদিন পর আপনার মুখে প্রিয়তমা ডাক শুনলাম।
আমার অন্তর জুড়িয়ে গিয়েছে।
.
.
– তোমার কন্ঠ শুনে আমার জীবন ফিরে পেয়েছি। আমার খুশি ফিরে পেয়েছি।
আমার সুখ খুঁজে পেয়েছি।
কিছুক্ষণ আগুন আর মোমের মাঝে কথা হলো না।
দুজনে শুধু নিশ্বাস নিচ্ছে বুক ভরে।
দুজনের স্পন্দন কথা বলছে।
আগুন-আমি ওকে সব সময় আমার আশেপাশে ফিল করতে পারি। মনে হয় ও আমার বুকের মাঝে লুকিয়ে আছে।
এই কয়েকটা দিন ওর সাথে কথা না বলে খুব কষ্টে দিন গুলো কাটিয়েছি।
ও নিশ্চয়ই আমার মতোই কষ্ট পেয়েছে।
আরকিছুদিন তোমাকে কষ্ট করতে হবে প্রিয়তমা।
এরপর আমি তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসব।
আমি বললাম-প্রিয়তমা চোখের পানি গুলো মুছে নাও রাইট নাও।
ও অবাক হয়ে ভেজা কন্ঠে বলল-আমি তো কাঁদছি না।
-আমার মন কে ফাঁকি দিতে পারবে না।
দেখ আমি ঠিক আছি এবার মুছে নাও চোখের পানি।
-পারবো না। আপনি এসে মুছে দিয়ে যান।
-ফিরে এসে তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। তখন একফোঁটা চোখের পানি ফেলতে দেবো না তোমাকে।
তোমার এক ফোঁটা চোখের পানি ডায়মন্ডের থেকেও আমার কাছে বেশি দামী।
.
.
আগুন-ওর সাথে প্রায় তিন ঘন্টা যাবৎ ফোনে কথা বললাম অফিসে আমার পার্সোনাল রুমে বসে।
সিকিউরিটি কে বলে দিয়েছি আমি না বলা পর্যন্ত যেনো কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। যতই গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকুক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমার ওয়াইফ।
এখন আমি ওর মান ভাঙাতে বিজি থাকব।
ফোন রেখে দেওয়ার পর মনে হলো আরও অনেক কথা বলার বাকি ছিলো।
এতো কথা বললাম তবুও যেনো তৃপ্তি পেলাম না।
ভালোবাসা আর ভালোলাগা মানুষের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরকিছু হতে পারেনা।প্রচুর কথা বললেও মনে হবে কম বলা হয়েছে। আরও কিছু কথা বাকি ছিলো।
মন ছটফট করতে থাকে কখন আবার কথা হবে।
.
.
লন্ডনে শীত ভালোই পড়েছে।
এখন আমি একটা পার্কে দাড়িয়ে আছি।
অনেক গুলো কাপল ঘুরে বেড়াচ্ছে পার্কে। একটা কাপল কে দেখলাম এক চাদরে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে হাঁটছে।
মোমের কথা আরও বেশি মনে পড়ছে। মোম থাকলে হয়ত আমিও এক চাদরে ওকে জড়িয়ে ধরে হাটঁতাম।
লন্ডন হলো বিচিত্র জায়গা।ছোট থেকে এখানে বড় হয়েছি তবুও আমি এদেশের কেউ হয়ে উঠতে পারিনি।
পারবো কিভাবে আমার মনটা যে আগেই দেশের একটা মেয়ের কাছে দিয়ে এসেছিলাম৷
.
.
রেস্টুরেন্ট গিয়ে খাবার অর্ডার করে ওকে ফোন দিলাম।
-আসসালামু আলাইকুম।
অফিসের কাজ শেষ?
-ইয়েস ম্যাম। এখন আমার ওয়াইফের সাথে কাজ করবো।
– কি কাজ করবেন স্যার?
-সামনে থাকলে দেখতে কি কাজ করতাম।
-আবার লাগামহীন কথা।
-সংসার যখন করবে আমার সাথে তখন এই লাগামহীনকে নিয়েই সংসার করতে হবে। কিছু করার নেই মাই ডিয়ার ওয়াইফ।
-লাগামহীন কে কিভাবে লাগাম লাগাতে হয় সেটা আমি জানি মাই ডিয়ার হাসব্যান্ড।
হাসছেন কেন?
-তুমি আমাকে অনেক আগেই লাগাম লাগিয়েছো তাইতো তোমার কথায় ডানে যাই একবার আরেকবার বামে যায়। তুমি যেটা বলো সেটাই করতে আমার ভালো লাগে।
– আপনি…
-আমি কি বলো….?
-আচ্ছা আপনি কোথায়? খেয়েছেন?
-তোমাকে ছাড়া কখনো খাই?
আমি রেস্টুরেন্ট খাবার সামনে নিয়ে বসে আছি।
-ভাবি আমাকে খাবার দিয়ে গিয়েছেন। আমিও আপনার জন্য ওয়েট করছিলাম।
-ভেরি গুড। এখন তবে আমরা খাওয়া শুরু করি।
-বিসমিল্লাহ্
-ইয়েস বিসমিল্লাহ্
মোম-খেতে খেতে বললাম।
রেস্টুরেন্টে নিশ্চয়ই আরও লোকজন আছে?.
-ইয়েস প্রচুর লোকজন।
-সবাই কি খাচ্ছেন?
-নো।
-খাবারের জায়গায় খাচ্ছে না কেন?
– সবার কথা জানিনা তবে আমার সামনের টেবিলে…..
-সামনের টেবিলে কি…?
-লিপ কিসের কম্পিটিশন চলছে। বাকিরা হাত তালি দিয়ে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
– আলাই কালাই মাশকালাই।
আপনি কি এসব দেখছেন?
-দেখছিনা ভাবছি।
-মানে?
-ওদের জায়গায় আমি তোমাকে আমাকে ভাবছি।
-আপনাকে খুন করে ফেলবো। এখুনি রেস্টুরেন্ট থেকে উঠে পড়ুন।
-আরে বাবা রাগছো কেন?
-আপনি উঠুন?
-আমি তো খাইনি।
-খাওয়া লাগবে না
-ক্ষিদে লেগেছে।
-একদিন না খেলে কিছু হয় না। এখুনি উঠুন এটা আপনার ওয়াইফের অর্ডার।
.
.
উনি হঠাৎ খুব হাসছেন।
রাগে ফোনটা রেখে দিলাম।
কত বড় সাহস উনার। দেশে এসে এর ভয়ানক বিচার হবে।
বলে কিনা….
.
.
.
আগুন- দেশে এসে পড়লাম। দুপুরে পা দিলাম দেশের মাটিতে।
সবার আগে বাসায় গিয়ে বাবা মায়ের কাছে গেলাম। আরু তো আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। আমি বললাম-আমার লিটিল সিস্টার এই কয়েকমাসে অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।
এবার তাহলে বর খুঁজতে হবে বাবাকে বলে।
আরু লজ্জা পেয়ে আমাকে মারতে লাগলো।
বাবা মা সবাই খুশি আমার আসাতে।
এখন আমি আমার খুশি আমার প্রিয়তমার সাথে দেখা করতে গেলাম।
লেট হয়েছে আরুর সাথে দুষ্টমি করতে গিয়ে। তাছাড়া আজ সারাদিন ফোন অফ ছিলো বিশেষ কারণে।
মোম ১০০ টা মিসকলস দিয়েছে ফোন চ্যাক করে দেখলাম।
.
.
মোম দাড়িয়ে বসে আছে বেঞ্চে। আমি সোজা মোমের চোখ ধরে বললাম- বলো তো কে আমি?
ও আমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে লাগলো। বুঝতে পারলাম ও অভিমান করেছে।
ওর হাত ধরে আমার গাড়িতে বসালাম।
ও মাথানিচু করে আছে। আমি ওর নেকাব খুলে দেখলাম ওর ফেস লাল হয়ে আছে। কান্না করেছে নিশ্চিত।
আমি কান ধরে বললাম -আই এম সরি প্রিয়তমা।
আহা! তবুও ওর অভিমান ভাঙছে না। ওর অভিমান করা জায়েয। ওর জায়গায় আমি থাকলে আমি তো অভিমানে হার্টফেল করতাম। স্বামী হিসেবে আমার দায়িত্ব ওর সাথে মিষ্টি ব্যবহার করে ওর অভিমান ভাঙানো।
আমি ওকে বললাম – স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব,কর্তব্য ও ভালোবাসা…..ইসলাম দিয়েছে তাদের অধিকার ** [ একজন স্ত্রী যেমন স্বামী ছাড়া পরিপূর্ণ নন তেমনি একজন স্বামীও স্ত্রী ছাড়া পরিপূর্ণ নন ]কারন – ** সূরা নিসাতে আল্লাহ বলেন – দেখ! তুমি ও তোমার স্ত্রীর মাঝে জন্মগতভাবে কোনো পার্থক্য নেই….আল্লাহ্পাক হাওয়া (আঃ) -কে আদম (আঃ)থেকে সৃষ্টি করেছেন… তাই মহিলা পুরুষের অংশ…তোমার শরীরের যে কোনো স্থানে আঘাত লাগলে তুমি কষ্ট পাও…আঘাত যেন না লাগে,সে ব্যবস্থা কর.. ঠিক তেমনি ভাবে তোমার স্ত্রীর প্রতিও লক্ষ রাখবে, সে-ও তোমার শরীরের একটি অংশ……** ** তাই তো রাসূল (সাঃ)বলেছেন- [ তোমাদের মধ্যে তারাই উৎকৃষ্ট, যারা তাদের স্ত্রীর কাছে উৎকৃষ্ট এবং আপন পরিবার-পরিজনের প্রতি স্নেনশীল……] (তিরমিজি শরিফ) ** রাসুল (সাঃ) বলেছেন- [ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর কষ্টদায়ক আচরণে ধৈর্য ধারণ করবে,মহান আল্লাহ তাকে হজরত আইয়ুব (আঃ)-এর সমান ‘সওয়াব’ দান করবেন…..] ** আবু হোরায়রা (রাঃ)থেকে বর্ণিত… রাসুল (সাঃ) বলেছেন- [ হে মানব জাতি! স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার ব্যাপারে আমার হুকুম মান্য কর… পাঁজরের হাড় থেকে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, (পাঁজরের উপরের হাড়টি সবচে’ বেশি বাঁকা..যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে) স্বভাবতই তারা বাঁকা…! যদি তুমি বাঁকা হাড়কে শক্তির দ্বারা সোজা করতে যাও, তবে তা ভেঙে যাবে..তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দাও, সব সময় বাঁকাই থাকবে…. এজন্য আমার শেষ নির্দেশ হিসেবে কবুল কর, স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর,কল্যাণ’কামী হও……] (বোখারী ও মুসলিম) ** মূল কথা- স্ত্রীর সঙ্গে সুন্দর ও ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের আপন করে নিতে হবে। স্বামীর কাছ থেকে যখন কোনো স্ত্রী ভালোবাসা পাবে, তখন সে তার সবটুকু স্বামীর জন্য উজাড় করে দিবে…..।
.
.
প্লেনে আমার পাশে একজন মৌলভি ছিলো।
উনার সাথে আলাপ চলা কালীন ওর কথা বলেছিলাম। উনি আমাকে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে এই কথা গুলো বলেছেন।
ও আমাকে সোজা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করছে।
ও বলল-আমি আপনার উপর অভিমান করেছিলাম কিন্তু বেশিক্ষণ অভিমান করে থাকতে পারলাম না।
জানেন আমার কত টেনশন হচ্ছিল?
-আমি ওর কপালে চুমু দিয়ে বললাম- আমি তো তোমার সামনে এখন। যত অভিমান করার করে নাও।
যতবার অভিমান করবে ততবার অভিমান ভাঙাব প্রিয়তমা।
.
.
.
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here