প্রিয়জন❤Part-27

0
2443

প্রিয়জন❤Part-27
Writer-Moon Hossain

কুসুম কালারের একটা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে আমি বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছি।
উনি ভোরে ফোন করে বলেছেন সকালে অফিস যাওয়ার আগে আমাকে দেখে যেতে চান।
আমি কিছু বলার আগেই উনি বলল,যদি না আস তবে শশুর বাড়ি চলে যাব। তারপর শশুর আর বড় শ্যালকের সামনে সোজা তোমার রুমে হাজির হব।
সকাল হতে এখনো অনোকটা সময় বাকি। আমি ভোর থেকেই পর্দার আড়ালে বেলকুনি দাড়িয়ে রইলাম উনার জন্য।
অপেক্ষা করতেও এক ধরনের অনুভূতি হয় সেটা খুব মিষ্টি অনুভূতি।অপেক্ষার ফল মিষ্টি হলে সেরকম অপেক্ষা হাজার বার করতে ইচ্ছে করে।
উনি খুব স্প্রিরিটে ড্রাইভ করেন।
উনিও কুসুম কালারের শার্ট পড়েছে ইন করে।
দেখতে খুব হ্যান্ডসাম লাগছে।
উনি ফোন করে বললেন -পর্দা দেখার জন্য কি এসেছি?
পর্দার আড়াল থেকে বের হও প্লিজ।
তোমার চাঁদ মাখা মুখশ্রী দেখে অফিসে যেতে চায়। সারাদিন তো আর দেখতে পাব না। আজ অফিসে অনেক কাজ।
তোমাকে দেখে দিনটা শুরু করতে চাই।
আমি শান্ত স্বরে বললাম-আজ কি আমার সাথে দেখা করবেন না?
আমাদের দেখা হবে না আজ?
-আজ তোমার হাসব্যান্ডের অনেক অনেক কাজ।
-আমার জন্য একটুও সময় বের করতে পারবেন না?
-দেখা করে কি হবে? তোমার কাছে আসতে দাওনা। তোমার হাত ধরতে দাওনা।
কখনো আমাকে একটা চুমুও দিলে না। যতক্ষণে আমি জোরাজোরি করে তোমার কপালে দিই।
আমি রেগে বললাম-এই আশা ভুলে যান।না জানি কত কি আপনি দেখেছেন ঐ সব রেস্টুরেন্টে। নিজেও নিশ্চয়ই করেছেন।
-আমার প্রিয়তমা রাগ করেছে আমার উপর?
-না না আপনার উপর রাগ করতে পারি? হাসছি আমি।
উনি হেসে বললেন-আমি কি দেখেছি , করেছি তা তোমার সাথে দেখা হলেই বুঝতে পারবে।
এখন একটু স্মাইল দাও তো দেখি।
উনি হাত দিয়ে ইশারা করছেন স্মাইল দেওয়ার জন্য।
আমি উল্টোটা করলাম। রেগে রেগে তাকালাম।
হঠাৎ উনি টাই নিয়ে গলায় প্যাঁচাতে শুরু করলেন।
– টাই এমন করছেন কেন?
-আজ এখুনি আমি টাই প্যাঁচিয়ে প্রাণ ত্যাগ করবো যদি আমার প্রিয়তমার হাসি মুখ না দেখতে পাই।
উনার কান্ড দেখে প্রথমে ভয় পেলেও এখন হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যথা হয়ে গেলো।
আমার এমন দুষ্টু স্বামীর উপর বেশিক্ষন রাগ করে কেউ থাকতে পারবে না।
উনি বলল-প্রিয়তমা তুমি সব সময় এমন করেই হাসিখুশি থেকো।
তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী দেখার জন্য কোটি কোটি বছর অপেক্ষা করতে পারি।
.
.
আগুন-অফিসে প্রচুর কাজ করতে হচ্ছে। একটার পর একটা কাজ। ওকে ফোন করার সময়টুকু পাচ্ছিনা।
বাট ওকে আশেপাশে ফিল করতে পাচ্ছি।
মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে ওকে আমার সামনে বসিয়ে রাখতে।
ফোনটা নিয়ে টুপ করে একটা ম্যাসেজ লিখে সেন্ড করলাম।
“তোমাকে যখন আমার কাছে একেবারে নিয়ে আসবো তখন তুমিও আমার সাথে রোজ সকালে অফিসে আসবে।
তোমার কাজ হলো আমার সামনে বসে থাকা। আমি কাজ করবো আর তোমাকে এক পলক এক পলক দেখবো।
মোম-উনার ম্যাসেজ দেখে হেসে দিলাম জোরে খাবার টেবিলে।
বাবা ভাইয়া ভাবি সবাই অবাক হয়ে গেলো।
আমি আমতা আমতা করে বললাম-পুরোনো কথা মনে পড়লো তাই হাসি চলে এসেছে। দুঃখীত।
বাবা বলল-আমার মায়ের মুখে হাসি থাকবে। সে যখন খুশি তখন হাসবে। এতে দুঃখীত হওয়ার কি আছে?
ভাইয়া বলল-তোর হাসি মাখা মুখ দেখতে খুব ভালো লাগে। সব সময় এমন হাসি খুশি থাকবি।
ভাবি বলল-মনে হয় আপনার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মোমের হাসি আসা শুরু করেছে। হোমিওপ্যাথি যে হাসিপ্যাথি সেটা তো জানতাম না।
ভাইয়া বলল-তাহলে তোমাকেও এই চিকিৎসা দিতে হবে।
-না বাবা না, আমি সারাদিন কাঁদবো তবুও আপনার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করবো না আল্লাহর দোহায়।
.
.
একদিন আগুন মোমের হাত হাতমোজা খুলে হাত গুলোতে অনেক গুলো চুমু খেল।
মোমকে কিছু না বলতে দিয়ে আগুন বলল- তোমার হাতের দাগ গুলো এখনো যায়নি। আরু সব বলেছে।
তোমার যন্ত্রণা হয়েছিলো যখন হােতে ব্যাথা পেয়েছিলে?
ঐ জানোয়ারটা কে পেলে আমি এর থেকেও বেশি যন্ত্রণা দেব।
মোম আগুনকে শান্ত করে বলল- অন্যায়কারীর সাথে অন্যায় ব্যবহার করতে নেই। তাতে আপনার আর ঐ লোকের মাঝে কি পার্থক্য থাকবে।
-প্রিয়তমা ইউ দ্যাা গ্রেট। যত দেখছি ততই তোমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।

আগুন দাড়িয়ে আছে ভার্সিটির সামনে।
মোম আর আরু ক্লাস থেকে বের হয়ে আগুন কে দেখতে পেলো।
আগুন বলেছিল আজও সে বিজি তাই আসতে পারবে না।
কিন্তু ঠিক সময় উপস্থিত হয়েছে আগুন।
আরু মোমকে ধাক্কা দিয়ে বলল-ভাবি তোমার জন্য কত দরদ।
– উনি আমার জন্য নয় তোমার জন্য এসেছে।
তোমার তো আজ গাড়ি আসেনি।
ঐ দেখ আমার গাড়ি এসেছে।
আগুনকে দেখে ভার্সিটির মেয়েরা ইতিমধ্যেই নিজের মধ্যে আলাপআলোচনা শুরু করেছে।
.
.
একটা মেয়ে বলল-এতো শাহাজাদা ।
আরেকজন বলল- আমার সপ্নের রাজকুমার।
মোম আগুনের সামনে দিয়ে সোজা নিজের গাড়িতে উঠে বসল।
আরু গাড়িতে বসতেই আগুনও গাড়িতে বসলো।
সিট বেল্ট লাগিয়ে আগুন জোরে জোরে গাড়ি স্টার্ট দিতে লাগলো।
মোম গাড়ি থেকে নেমে সোজা আগুনের গাড়ির সামনে দাড়াঁল।
আগুন ভেতর থেকে দরজা খুলে দিলো।
মোম বসতেই আগুন মোমের কাছে এলো।
আগুন হাত দিয়ে মোমের কাঁধ স্পর্শ করলো।
মোম বলল-কি হচ্ছে কি? মাথা নষ্ট? বোনটা কে চোখে পড়ছে না?
আরু ফোনে গেইম খেলা বাদ দিয়ে বলল-দাদাভাই চালিয়ে যাও, টেনশন নিয়ো না আমরা আমরাই তো।
আগুন দুজনকে একটা ধমক দিলো।
-সিট বেল্ট লাগাচ্ছিলাম। আর তোরা কি না কি ভেবেছিস।
তোদের মাইন্ড এতোটা সস্তা?
আবার দাবি করিস আমাদের ছেলেদের মাইন্ড বাজে, নোংরা। আমরা কিছু ভাবার আগেই তোরা ভেবে ফেলিস।
তোদের থট গুলো এতো বাজে ছিঃ ছিঃ। না জানি আর কি কি ভাবিস তোরা।
মোম আর আরু নিজেদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে একসাথে বলল- আল্লাহর দোহায় We are sorry.
.
.
আরুকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে মোমের বাসার উদ্দেশ্য ড্রাইভিং করছে আগুন।।
দুজনের কেউ কথা বলছে না।
হঠাৎ আগুন ড্রাইভ থামিয়ে বলল- আচ্ছা তখন ওভাবে আমাকে ইগনোর করলে কেন?
মোম মাথা নিচু করে বলল- আপনি অফিস থেকে এসেছেন। আপনি ক্লান্ত তাই আরুকে পিক করে বাসায় গিয়ে আপনার রেস্ট নেওয়া দরকার ছিল।
আরুকে নামিয়ে আবার আমাকে বাসায় নামিয়ে আবার বাসায় যাবেন। এতো ঝামেলার দরকার কি?
আগুন অগ্নি মূর্তি হয়ে বলল- আমি তোমাকে বলেছি আমি টায়ার্ড?
– আপনাকে দেখে মনে হচ্ছিল।
-আমি তোমাকে বলেছি তোমাকে পিক করতে আমার ঝামেলা মনে হবে?
মোম -উনার অগ্নি মূর্তি মুখ দেখে কিছুটা ভয় পেলাম।
কিছু ভুল করলাম নাতো।
আগুন -ওর চিন্তা ভাবনা দেখে আমি জাস্ট সারপ্রাইজ।
বলে কিনা ও আমার কাছে ঝামেলা।
আমার প্রিয়তমা আমার কাছে ঝামেলা শেষপর্যন্ত।
আমি মাথায় হাত দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলাম।
হঠাৎ ওর হাতের স্পর্শ পেলাম।
আমি না তাকিয়ে বললাম -তুমি তোমার স্বামীর মনে দুঃখ দিয়েছো প্রিয়তমা।
সামান্য স্পর্শে কাজ দুঃখ মুছবে না।
ও তখন কিছুটা দূরে সরে গেলো।
বোধহয় কিছু বুঝতে পেরেছে আমি কি মিন করছি।
আমি সোজা ওর কোলে শুয়ে পড়লাম।
তারপর ওর নেকাবটা খুলে ফেলে অনেক ক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।
ওর মুখশ্রী দেখে আমি সব ভুলে যাই । কি মায়া মমতায় ভরা আমার প্রিয়তমার মুখ খানি।
মহান আল্লাহ তায়ালা ওকে নিখুঁত ভাবে গড়েছেন।
আমি ওকে বললাম- তোমাকে এমন কিছু করতে হবে যেনো আমার সব দুঃখ মুছে যায়।
ও চিন্তিত মুখে বলল- একটা গজাল গাইব?.
-রোমান্টিক মুডে আছি তাই ধারণার বাহিরে ছিলো ও এমন কথা বলবে।
অনিচ্ছা সত্বেও আমি বললাম-গাও দেখি। তোমার কন্ঠ যে সুরেলা তাতে তুমি যা গাইবে তাই মধুর মতো কানে লেগে থাকবে।
সত্যি সত্যি ওর গজাল শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে রইলাম। এতো সুন্দর হয় গজাল ধারণার বাহিরে।
গজালের কথা গুলো, ওর সুরেলা কন্ঠ , আল্লাহর রহমত, সব মিলিয়ে ১০০তে কোটি কোটি হয়েছে।
ওর গজালটা আমার কানে লেগে রইলো তিন দিন।
আহা!কি মিষ্টি কন্ঠ।
আমি ওকে বললাম -তোমাকে সারাজীবনের জন্য বুকিং দিলাম। আমার যখন মন চাইবে তখন গজাল গাইতে হবে। না বললে সোজা তোমাদের বাসায় চলে যাব তারপর শশুর বাড়ির সকলের সামনে দিয়ে সোজা তোমার রুমে যাব এবং সবার সামনে হেসে ডোর লক করে ফেলবো।
.
.
মোম- আপনাকে গজাল শোনাতে পারলে আমি ধন্য।
আমার পরম সৌভাগ্য আপনি আমার গাওয়া গজাল পছন্দ করেছেন।
উনি যখন তখন ফোন করে আবদার করেন গজাল গাইতে।
প্রতিদিন কতবার যে গজাল শুনবেন আর হাত তালি দিয়ে আমার প্রশংসা করবেন।
মাঝরাতে আমার দুষ্টু স্বামী ফোন করে বলবেন – গজাল সাহেবা কেমন আছেন?
-গজাল সাহেবা এখন ঘুমুচ্ছে।
-অকারণে ঘুম ভাঙালাম নাতো?
-ঘুম ভাঙিয়েছেন যখন তখন বলে ফেলুন ঘটনা কি?
-কোন ঘটনা নেই। ঘটনা ঘটবে সংসার শুরু হওয়ার পর।
-তাহলে সংসার শুরু করার পর ফোন করবেন।
-দূর তখন কি মাঝ রাতে একই বিছানায় থেকে ফোনে কথা বলার সুযোগ সময় থাকবে?
তখন তোমাকে নিয়ে ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় চলে যাব।
আমি তখন লজ্জা পেয়ে বলতাম – আল্লাহর দোহায় এসব কথা নয়। কেন ফোন করেছেন?
-শুধু শুধু
-শুধু শুধু?
-ইয়েস ম্যাম শুধু শুধু!
আমি ইচ্ছে করে লাইন কেটে দিতেই উনি ফোন করে বললেন -ফোন রাখলে কেন?
-শুধু শুধু!
-শুধু শুধু!
-ইয়েস স্যার শুধু শুধু!
.
.
মাঝে মাঝে উনি মাঝ রাতে আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলেন যেন উনি অন্য কেউ।
-আমার মনে অনেক অনেক দুঃখ গজাল সাহেবা। আমি ম্যারিড। আমার বেহেশতের হুরের মতো বউ আছে তবুও রাতে একা থাকতে হয় । একটা গজাল গেয়ে আমার মনের দুঃখ গুলো ভুলিয়ে দিন গজাল সাহেবা।
আমিও তখন মজা করে বলি -দেখুন আমিও ম্যারিড। আমারও রাজকুমারের মতো স্বামী আছে। আমিও একা থাকি রাতে। আমারও অনেক অনেক দুঃখ।
তাই বলে কি আমি কখনো অন্যের স্বামীকে ফোন করে বলি আমাকে একটা কবিতা শোনান। বলে রাখি উনি অনেক সুন্দর কবিতা লিখেন। কবিতা যত না সুন্দর তার থেকেও উনি খুব সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করেন।
.
.

একদিন আমি গাড়ি থামিয়ে দেখলাম উনি একজনকে খুব মারছেন। একেবারে লোহা দিয়ে পিটিয়ে।উনাকে এখন আর আমার দুষ্টু ছেলেমানুষী ভাদ্য স্বামী লাগছে না। মনে হচ্ছে ভয়ানক নির্দয় কোন ছেলে।
আমি উনাকে তৎক্ষনাৎ ফোন করলাম।
-আসসালামু আলাইকুম।
আপনি কোথায়?
উনি হেসে বলল-অফিসে!
-কি করছেন?
-পুরোনো ফাইল দেখছি। বিশাল গন্ডগোল!!!
.
.
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here