প্রিয়জন❤Part-28

0
2297

প্রিয়জন❤Part-28
Writer-Moon Hossain

-আপনি কি করেছেন? সেটা বুঝতে পেরেছেন ?
-নো
-এভাবে একজন মানুষ কে আঘাত করা যায়না সেটা জানেন?
-ইয়েস
-আপনি আমাকে মিথ্যে বললেন কেন?
-রিজন ছিলো
– কেন এটা করলেন?
-রিজন ছিলো।
-আপনি যে একটা মানুষ কে আঘাত করে অন্যায় করেছেন সেটা জানেন?
-ইয়েস
-আপনি এর জন্য অনুতপ্ত?
-নো
-আপনি ভুল করেছেন।
-প্রশ্নই আসেনা।
মোম আগুনকে একের পর এক প্রশ্ন করছে আর আগুন ভাদ্য ছেলের মতো সব উওর দিয়ে যাচ্ছে।
মূলত মোম সোজা গাড়ি থেকে নেমে আগুনের সামনে দাঁড়ায়।
আগুন প্রথমে না দেখলেও যখন মোম কে দেখতে পেলো তখন আঘাত করা বন্ধ করলো সীমিত সময়ের জন্য।
আগুন শুধু বলল-তুমি আমার গাড়িতে ওয়েট করো।
মোম বলল-আমার কিছু কথা ছিলো।
-তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো।
আগুনের লোকেরা আঘাত করা লোকটা কে নিয়ে চলে গেলো জীপে করে। আগুন মোমের পাশে বসে নিজের ও মোমের সিট বেল্ট লাগিয়ে কোনো কথা না বলে ড্রাইভিং করতে লাগলো।
কিছুক্ষণ ড্রাইভ করে গাড়িটাকে একটা রোডে সাইড করলো।
আগুন নেমে রোডের সাইডে দাঁড়াল মাথায় হাত দিয়ে।
মোম আগুনের একপাশে দাঁড়াল।
তখনই মোম আর আগুনের মধ্যে কিছু কথা-কাটাকাটি চললো।
মোম -আপনি মানুষ হয়ে এমন অমানুষের মতো একটা লোক কে মারলেন কি করে?
– কারণ ওর শাস্তি এটাই ছিলো।
তুমি সামনে চলে এলে বলে নইলে শয়তানটা কে মেরে তক্তা বানিয়ে আমাদের বাংলো বাড়ির কাজে লাগাতাম।
.
.
মোম শান্ত কন্ঠে বলল- এভাবে কাউকে আঘাত করতে নেই। সে যত বড়ই অন্যায় করুক তাকে আঘাত করে নিজের ক্ষমতা জাহির করতে নেই।
কি এমন করেছে যে আপনি লোকটা কে অমন ভাবে পেটালেন?
আগুন মোমের হাত ধরে বলল- আমার জীবন, আমার জান, আমার প্রাণ, আমার প্রিয়তমাকে সে আঘাত করেছে তাই শাস্তি টা নিজ হাত দিয়ে মনে শান্তি পেলাম।
-আপনি ঠিক কি বলতে চাচ্ছেন বুঝতে পাচ্ছিনা।
মোম -উনার কথা শুনে চমকে গেলাম। উনি লন্ডনে যাওয়ার পর ভার্সিটি থেকে বের হতেই একা ছিনতাইকারী আমার হাতে কি যেন করে ফোনটা নিয়ে গিয়েছিলো।
হাত ছিলে রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল।
সেই ঘটনা ওখানেই শেষ।
আরু এই বিষয়টা জানে। তার মাধ্যমে উনিও জেনেছেন বিষয়টা।
পার্কিংয়ের জায়গায় সি সি টিভি ক্যামেরা ছিলো যার মাধ্যমে উনি লোকটা কে দেখে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
এজন্যই তখন ঐ আঘাত প্রাপ্ত লোকটাকে চেনা চেনা লাগছিল।
আমি হতবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
উনি ঠিক কি দিয়ে তৈরি সেটায় জানার চেষ্টা করছিলাম।
আমি বললাম- লোকটা কে খুঁজে পেলেন কি করে? ময়মনসিংহ কম বড় না।
উনি মাথায় হাত দিয়ে বলল-বুদ্ধি থাকলে মঙ্গল গ্রহ থেকেও প্রাণী খুঁজে আনতে পারব প্রিয়তমা।
উনার রিংটোন বেজে উঠলো। উনি কার সাথে যেন কি কথা বললেন।
কথা বলার সময় আমার দিকেও তাকালেন।
আমি বললাম -কি হয়েছে?
-তেমন কিছু না।
-তেমন কিছু না আমি জানতে চাই।
-তেমন কিছু না জানলেও চলবে তোমার।
-তেমন কিছু আমি জানতে চাই। তারপরে ডিসাইড করব কোনটা চলবে আর কোনটা চলবে না।
.
.
উনি শান্ত স্বরে বলল- ঐ শয়তানটার হাত দুটো এমন ভাবে ভেঙেছে যে কখনো হাত দিয়ে একটা পিঁপড়াও টাচ করতে পারবে না।
আমি উনার কথা শুনে হতবাক।
উনাকে কেমন অচেনা লাগছে। এমন হচ্ছে যেন উনি অনায়াসে অনেক গুলো খুন করতেও দ্বিধাও করবেন না।
.
.
-আপনি মানুষ হয়ে একটা মানুষ কে এভাবে আঘাত করতে পারেন না।
আপনার মধ্যে কি কোন মমতা কাজ করেনি।
আমার জন্য আপনার এতো মায়া মমতা কাজ করে কিভাবে?
উনি আমার হাত ধরে বলল- শোনো, আমাদের মুসলিম আইনে আছে, চোরের হাত দুটো কেটে দাও যেন তারা ২য় বার চুরি করতে না পারে।
সেই বিচারে আমি ছিনতাইকারীর হাত ভেঙে দিয়েছি যেন, ২য় বার ছিনতাই করতে না পারে। খুব সিম্পল বিষয়।
.
.
আমি কোন কথা না বলে সোজা রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগলাম।
উনিও আমার পেছনে হাঁটা শুরু করলো।
উনি পেছন থেকে ডাকছে।
-প্রিয়তমা আমি ভুল কি করেছি তুমি বলো?
ছিনতাইকারী কে একটা উচিৎ শিক্ষা দিয়েছি মাত্র।
পেছন থেকে উনি আমার হাত ধরে হালকা টান দিয়ে আমাকে উনার কাছে নিয়ে আসেন।
সত্যি বলতে আমি এই প্রথম উনাকে সহ্য করতে পাচ্ছিনা। আমি বললাম -মানুষ যত বড়ই অন্যায় করুক তাকে এভাবে আঘাত করতে নেই। পাপ কে ঘৃণা করার কথা বলা হয়েছে কিন্তু পাপী কে নয়। ছিনতাইকারী লোকটা কে আপনার এভাবে আঘাত করা কোন সাহসের কাজ নয়।
আপনি জুলুম করেছেন তার উপর।
আমি উনাকে অবাক করে দিয়ে সোজা সি এন জি তে উঠে পড়লাম।
আমি পেছনে তাকায়নি। জানি উনিও সি এন জির পেছনে দৌড়াবেন।
লন্ডন থেকে এসে উনি আগের মতো হয়ে গিয়েছেন ধারণা করছি।
একটা মানুষ কিভাবে আরেকটা মানুষ কে এভাবে আঘাত করতে পারে এটাই ভাবছি।
লোকটা যত বড়ই অন্যায় করুক না কেন তাকে বোঝানো যেত ভালো মতো।
.
.
উনি অনেক বার ফোন দিয়েছে। আমি কেটে দিলাম।
তবুও কল করছে। আমি ফোন অফ করে রাখলাম।
দিলাম একটা লম্বা ঘুম।
ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিলাম।
ভাবি এসে জানালো ল্যান্ডলাইন থেকে কে যেন ফোন করে আমাকে চাচ্ছে।
আমি টেলিফোন ধরতেই উনার কন্ঠ শুনতে পেলাম।
-প্রিয়তমা তুমি ফোন ধরছো না কেন?
ফোন অফ করেছো কেন?
তুমি খেয়েছো?
আমি ফোন রেখে দিলাম।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবলাম উনার আজ ভয়ংকর রুপ দেখেছি।
এতো ভয়ংকর রুপ কারো হতে পারে সেটা জানতাম না।
অবশ্য যারা নামাজ কালাম না পড়ে তাদের এমনই রুপ বের হবে সেটাই স্বাভাবিক।
এখন যদি উনি পাঁচ জনের গলা কেটে রক্ত দিয়ে আমার আর উনার ছবি একেঁ আমাদের বেড রুমে ঝুলিয়ে রাখে তাতেও আশ্চর্য হবো না।
শুনেছি উনার বাবাও এমন ধরণের কাজ করেছে বেশ কয়েকবার।
বাবা মনে হয় এজন্যই রাজি নন এই সম্পর্ক কে টিকিয়ে রাখতে।
উনার সাথে কয়েক দিন ধরে কোনো রুপ যোগাযোগ নেই। ফোন সাইলেন্ট অথবা অফ করে রাখি।
ক্লাসেও যাইনা। ক্লাসে গেলেই উনার খপ্পরে পড়ব।
আমি উনার উপর খুব রেগে আছি সেটা বুঝতে পারলাম।
.
.
আগুন- ওকে ছাড়া আমি নিশ্বাস নিতে পাচ্ছিনা।
আমার সাথে পুরোপুরি কন্ট্রাক অফ করে রেখেছে।
বাসা থেকে বেরও হচ্ছে না।
কি করবো বুঝতে পাচ্ছিনা।
ইচ্ছে করে ওর বাসাতে চলে যায়। বাট এটা করলে ওর সমস্যা হতে পারে।
ওর জন্য টেনশন হচ্ছে।
ও কেমন আছে সেটাও জানিনা। আমার উপর অভিমান করে আছে সেটা বুঝতে পারলাম।
ও আমার পুরো কথাটা শুনলো না পর্যন্ত।
শুধু আমাকে আঘাত করতে দেখেই নিজের মধ্যে কিছু ধারণা নিয়ে নিলো।
আমার থেকে দূরে থেকে আমাকে শাস্তি দিচ্ছে।
আগুন খুব জোরে একটা ঘুষি দিলো গাড়িতে।
.
মোমের রাতে মনে হলো আগুন নিচে দাড়িয়ে আছে বেলকুনির দিকে তাকিয়ে।
মোম তছবি হাতে নিয়েই বেলকুনিতে গেলো।
ঐ তো আবছা আবছা আগুন কে দেখা যাচ্ছে।
মোম কে দেখে আগুন ইশারা করছে। হাত নাড়াচ্ছে।
মোম -যা ইচ্ছে তাই করুক। সারা রাত দাড়িয়ে থাকলেও আমি কথা বলব না উনার সাথে।
মোম সোজা ঘুমিয়ে পড়ল।
ঘুম আসছে না কিছুতেই।
মোমের বাবা এসে মোমের মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।
বাবা থাকা কালীন মোম ভয় পাচ্ছিল যদি বেলকুনিতে গিয়ে আগুনকে দেখে ফেলে।
তাহলে সে কি জবাব দেবে?

মোম লাইব্রেরিতে বই নিতে গেলো।
লাইব্রেরির একটু ভেতরে একটা বইয়ে হাত দিতেই কারো স্পর্শ পেলো মোম।
মোম প্রথমে শিউরে উঠলো।
আগুনের কন্ঠ শুনে সে সামলে নিলো।
আগুন বলল- ভয়ের কিছু নেই। আমি ছাড়া কে টাচ করবে তোমায়? কার এতো বড় সাহস।
মোম চলে যাচ্ছিলো।
আগুন মোমকে নিজের কাছে এনে মোমের নেকাব খুলে ফেলে।
-এতো রাগ তোমার?? এতো অভিমান। অভিমানে তোমার ফেস লাল হয়ে গিয়েছে।
মোম চুপ করে আছে।
-কিছু বলো?
-জুলুমকারীদের সাথে কথা বলতে পারব না।
-কে জুলুমকারী?
-এটাও বলে দিতে হবে?
আগুন -আমাকে ইগনোর করছো কেন?
কত কষ্ট হয়েছে আমার জানো?
-জুলুম করে আপনার তো খুশিতে নাচার কথা। আপনি কেমন নাচেন একটু দেখান তো?.
আগুন মোমের হাতে একটা পেপার কাটিন তুলে দিলো।
পেপারে একটা ছবি ছাপা ছিলো ঐ লোকটার।
ছবির পাশে লেখা লোকটা এর আগে অনেকের হাতের রগ কেটেছে।
লোকটার নিক নেইম রগ কাটা ফজলু।
– লোকটা একটা প্রচন্ড জানোয়ার ছিলো।
এই লোক কে শাস্তি দেওয়ার জন্য তুমি আমাকে শাস্তি দিচ্ছো প্রিয়তমা।
– লোকে খুন করলে আপনি কি লোকটার মতো লোকটাকে খুন করতেন?

আগুন মোমের হাত ধরে বলল-তোমার এতো যুক্তি আমি বুঝিনা। আমি নিজেকে তোমার কাছে সঁপে দিয়েছি। এখন তুমি আমার ভরসা। তুমি আমাকে বলে দাও তোমার রগচটা স্বামী নিয়ে কি করবে?
মোম বলল-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
.
যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহ’র কাছে সঁপে দেয়, আল্লাহ’ই তার সকল প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট হয়ে যান এবং অভাবনীয় জায়গা হতে তার রিযিকের ব্যবস্থা করেন।
.
আর যে ব্যক্তি নিজেকে দুনিয়ার কাছে সঁপে দেয়, আল্লাহ তাকে দুনিয়ার কাছেই সঁপে দেন।
.
ইমাম বাইহাক্বী, শু’আবুল ঈমান, হাঃ ১০৪৪ ; ইমাম তাবারানী, আ-মু’জামুস সাগীর, ১/১১৬
____________
আগুন মোমের দিকে তাকিয়ে রইল।
মোম বলল- আপনি নিজেকে আমার কাছে না সঁপে মহান আল্লাহর কাছে সঁপে দিন, তাহলে তিনি আপনার সকল প্রয়োজন পূরণ করবেন। আমার কাছে নিজেকে সঁপে দিলে আপনি শুধু দুনিয়ায় সুখ পেতে পারেন কিন্তু আখিরাতে নয়।
আগুন বলল- তোমার প্রতিটা কথা আল্লাহর পথের দিকে অনুসরণ করায়। তুমি সত্যি একজন প্রকৃত মুসলিম নারী।
ক্ষমা করে দিয়ে একজন প্রকৃত মুসলিম নারীর কাজ করো এখন।
ক্ষমা করে দাও প্রিয়তমাা।
-ক্ষমা করে দেওয়ার মালিক আল্লাহ তায়ালা। আমি কেউ নই। তবুও আপনি অনুতপ্ত হয়েছেন। বুঝতে পেরেছেন কোনো ভাবেই জুলুম করা জায়েয না। জুলুম না করে বুঝিয়েও কাজ আদায় করানো যায়, সঠিক পথে আনা যায়,শাস্তি দেওয়া যায়।
আগুন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
মোম আগুনের কাঁধে মাথা রেখে বলল-খুব ভয় করে আপনার খামখেয়ালি স্বভাব দেখে। আপনি খুব খামখেয়ালি পূর্ণ একজন মানুষ। আপনার মাথা গরম। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না কখনো।
রেগে গেলে প্রচন্ড ভয়ংকর দেখায় আপনাকে।
মনে হয়…
আগুন বলল – কি মনে হয়?
-আমার সামান্য ভুলের কারণে মাথা গরম করে আমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দেবেন। একদিন তো আমাকে মেরেই ফেলেছিলেন ঐ বিয়ের উৎসবে।

.

.
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here