প্রিয়জন❤Part-29

0
2273

প্রিয়জন❤Part-29
Writer-Moon Hossain

আগুন- আমার প্রতিটা কাজ ওর কাছে জানাতে আমার ভালো লাগে। বুঝতে পারিনি কখন ও আমার প্রিয়জনের সাথে প্রয়োজন হয়েও দাড়িয়েছে। ওকে ছাড়া আমি কিছু চিন্তাও করতে পারিনা। ও আমাকে সব সময় নানা ভাবে মহান আল্লাহর তায়ালার পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করে।
আমিও অনেকটা নিজেকে গুছিয়ে এনেছি। নিজেকে কন্ট্রোল করতে শিখেছি।
আমার জন্মদিনে প্রথম উইশটা মোম করেছে।
আমাকে সুন্দর একটি অডিও ক্লিপ পাঠিয়ে ও আমাকে অবাক করে দিলো। খুব সুন্দর একটি গজাল রেকর্ড করে আমাকে চমকে দিয়েছে ও।
ওর সাথে দেখা করার পর ও আমার হাতে একটি নামাজ শিক্ষার বই তুলে দিলো। আর কিছু হাদিস সংক্রান্ত বইও তুলে দিলো আমার হাতে।
ও শুধু বলেছিল -সময় বের করে অবশ্যই এগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে নেবেন।
আমি ওর হাত ধরে বললাম- তুমি কিন্তু তোমার কাজে সফল হচ্ছো।
খুব চালাকি করে আমার মধ্যে একজন প্রকৃত মুসলিমের বীজ বপন করছো। সরাসরি বললে হয়ত আমি আল্লাহ ও তার নবী রাসূলগনের মাহাত্ম্য বুঝতে পারতাম না৷
তুমি আমাকে ধীরে ধীরে আল্লাহর দ্বীনের পথে নিয়ে এসেছো।
ও একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল- আপনার মধ্যে ইতিবাচক মানবিক দিক গুলো রয়েছে। আপনি চাচ্ছেন বলেই আল্লাহর দ্বীনের পথে আসতে পাচ্ছেন।
.
.
আমার জন্মদিন উপলক্ষে বিশাল পার্টির আয়োজন করলো আমার বাবা।
বাবা তার একমাত্র ছেলের জন্মদিনে দুহাত ভরে খরচ করছেন।
মোম বলল জন্মদিন পালন করা বা উৎসব করা মুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ।
ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হলো পার্টিতে এটেন্ড হওয়ার জন্য।
.
.
মাগরিবে নামাজ পড়ে মোম যথারীতি কিছু দোয়া দুরুদ পাঠ করলো। এবং তছবি নিয়ে বসলো৷ যে প্রত্যেক ফরয সালাতের পর “” ৩৩ বার সুবহানআল্লাহ “”৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ “”৩৩ বার আল্লাহু আঁকবার এবং একশত পূর্ণ করতে লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়্যিন ক্বদির। পড়বে তার গোনাহ সমুহ মাফ করে দেওয়া হবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়। আল্লাহু আকবার। মুসলিম – ৫৯৭।
সন্ধ্যার সময়ে পার্টিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য মোম কে পিক করে নিলাম।
মোম কে বললাম- তোমার প্রবলেম হবে নাতো?
প্রবলেম হলে যাওয়ার দরকার নেই। আমিও পার্টিতে যাব না।
মোম আমার গালে হাত দিয়ে বলল- সেটা আমি দেখব। আপনার খুশির জন্য এতোটুকু করতেই পারি। আপনি তো আমার খুশির জন্য সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এসেছেন।
সব সময় চেষ্টা করেন নানা ভাবে আমাকে খুশি করতে।
আমার প্রিয়তমার হাতের পায়েস যেন অমৃত।
আমি ওর হাতের পায়েস খেয়ে মুগ্ধ।
এই পায়েস যদি কম্পিটিশনে যায় নির্ঘাত ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করবে।
পায়েস যদি এতো মজার হয় না জানি অন্য খাবার গুলো কত মজার হবে।
আমি ওর হাত ধরে বললাম-আমার জন্মদিনের সেরা উপহার গুলো তুমি দিয়েছো।
তুমি আমার জন্য পায়েস রেঁধে আনবে এখন থেকে। শুধু জন্মদিন উপলক্ষে নয় প্রতিদিন পায়েস রাঁধতে হবে আমার জন্য।
মোম- যথারীতি পার্টিতে উপস্থিত হলাম।
উনি আমাকে নিয়ে সোজা মায়ের কাছে নিয়ে গেলেন।
আরু আমাকে দেখে বলল-আজকের দিনেও তুমি বোরখা পড়লে। দেখ সবাই কত সুন্দর করে সেজেছে।
তুমি তো সবার থেকে সুন্দরী। ইশশ, আমার কত শখ তোমাকে সবার সামনে তোমার পরিচয় করিয়ে দেব।
সবাই তোমাকে দেখে জ্বলে পুড়ে কয়লা হয়ে যাবে।
আমি বললাম- না না এটা ঠিক নয়। আমি কারো ইর্ষার পাত্র হতে চাইনা। তাছাড়া আমি এভাবেই ঠিক আছি। সাজতে আমার ভালো লাগেনা।
উনি আরুর মাথায় একটা টোকা দিয়ে আমার নেকাব খুলে বলল- আমার বউ এমনিতেই সুন্দরী। তোদের মতো আটা, ময়দা, সুজি, হালুওয়া মাখতে হয়না। ওর সৌন্দর্য শুধু আমি দেখব আর কাউকে দেখতে দেব না।
আমি উনার থেকে হাত ছাড়ালাম। একেবারেই লাগাম ছাড়া উনি। মায়ের সামনেই উনি আমার হাত ধরে টানাটানি করে।
কি আশ্চর্য!!!
বাবা এসে আমাকে বলল- এই ছেলের কথা একবারও তোমার মনে পড়েনা মা।
আমি বললাম- ছেলে বড় হয়েছে সে নিজের খেয়াল রাখতে পারে। ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি। বৌমা আছে আমার ছেলেকে দেখার জন্য।
বাবা কে সালাম দিয়ে বললাম- কেমন আছে আমার ছেলে।
বাবার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি পড়ে গেলো।
বাবা বলল- বেঁচে থাক মা। খুব তাড়াতাড়ি নাতি নাতনির মুখ দেখাতে হবে কিন্তু।
উনি আমার তাকিয়ে একটু হেসে বললেন- বাবার আশা কবে পূরণ হবে প্রিয়তমা?
আমি বললাম- খুব শীগ্রই!!!
বলেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
আমি শাশুড়ী মায়ের সাথে ভেতরে গিয়ে বোরখা খুলে ফেললাম। একটা সবুজ রংয়ের শাড়ি আর হাতে কিছু চুড়ি পড়েছিলাম। চুল গুলো ছড়িয়ে রাখলাম।
মা আমাকে দেখে আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন – আল্লাহ তোমাকে নিখুঁত ভাবে তৈরি করেছেন।
আমার ছেলেকে মুগ্ধ করার থেকেও বেশি সৌন্দর্য তোমার আছে।
আরু আমাকে দেখে বলল- ভাবি এখন যদি তোমাকে আর আমাকে কেউ দেখে তাহলে কেউ আমার দিকে তাকাবেনা। সবাই তোমার দিকেই তাকিয়ে থাকবে।
আমি শুধু শুধু পার্লার থেকে সেজে এলাম।
আমি হেসে বললাম- তুমিও খুব সুন্দর। অতিরিক্ত সাজগোছের কারণে তোমার আসল সৌন্দর্য নকল সৌন্দর্যে ঢেকে গিয়েছে।
-সত্যি বলছো?
-সত্যি সত্যি তিন সত্যি।
হঠাৎ উনি ভেতরে আসলো।
আরুকে বলল- এখন ভাইয়া ভাবিকে একটু প্রাইভেসি দাও মাই লিটিল সিস্টার।
-দাদাভাই এটা কিন্তু তোমার বাসার বেডরুম না। মনে রেখ এটা কমিউনিটি সেন্টারের রুম।। আমি আরুর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালাম।
এই মূহুর্তে উনি আমার সামনে দাড়িয়ে চোখের পলক না ফেলে আমাকে দেখছেন।
হঠাৎ উনি বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লেন।
আমি ভয়ে ভয়ে উনাকে বললাম – কি হয়েছে? শরীর খারাপ?
উনি আমাকে খুব কাছে টেনে নিয়ে বললেন – তোমাকে এতো সুন্দর লাগছে জাস্ট বলার বাইরে। সামান্য শাড়ি আর চুড়িতে সবার থেকে তোমাকে অনিন্দ্য সুন্দরী লাগছে। চোখ ফেরাতে পাচ্ছিনা।
তোমাকে তোমাকে…..
উনি আমাকে ছুঁতে চেয়েও ছুয়ে হাত সরিয়ে নিলেন।
আমি স্বভাব মতোই লজ্জায় রাঙা হয়ে গেলাম।
উনি আমার গলায় হাত বুলাতে লাগলেন।
আমি কিছুক্ষণ পর উনার বুকে মুখ লুকালাম।
উনি বললেন-তোমার লজ্জার কারণ আমি এবং লজ্জা ঢেকে দেওয়ার কারণও আমি।

উনি আমাকে বলল- তুমি প্রেমের ক্ষেত্রে প্রচন্ড কিপটে। আমাকে কখনো একটু আদর করোনি।
আমার হঠাৎ কি যেন হলো আমি আমি উনার কপালে একটা চুমু দিয়ে বসলাম।
.
.
উনি জ্ঞান হারানোর মতো একটা অভিনয় করলেন।
বললেন -আমি আজ মরে যাব সুখে।
পার্টি যথাক্রমে শুরু হলো। পার্টিতে হঠাৎ অনেক গুলো মেয়ে দেখতে পেলাম। সবার গায়ে উগ্র ড্রেস ছিলো। আমি রুমের বেলকুনি থেকে দেখতে পেলাম সবাই কে।
উনি মেহমানদের আপ্যায়ন করছিলেন।
মেয়েগুলো মধ্যে একটা মেয়ে উনাকে দূর থেকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
উনি ঐ মেয়েকে ছাড়িয়ে বললেন -এটা লন্ডন নয়। এটা বাংলাদেশ।
কি করছো কি?
-সরি। তোমাকে কতদিন ধরে দেখিনি। তাই হঠাৎ দেখে জরিয়ে ধরলাম।
উনাদের কথা গুলো ইংরেজিতে ছিলো বেশিরভাগ।
হঠাৎ আরু এসে বলল-ভাবি এই মেয়ে গুলো আর তাদের সাথে ছেলে গুলো দাদা ভাইয়ের সাথে লন্ডনে পড়াশোনা করতো।
ভাইয়ার পরে ওরা বাংলাদেশে এসেছে।
আর দাদাভাই কে জড়িয়ে ধরেছে যে মেয়েটা ঐ মেয়েটা দাদাভাই কে লাইক করে।
আমি বললাম- তোমার ভাইয়ের মতো ছেলে কে সব মেয়েরাই লাইক করবে!
পার্টিতে যত মহিলারা এসেছিলো তারা সবাই মোম কে দেখে অবাক হয়ে গেলো।
সবাই মোমের কথা আগুনের মা কে জিজ্ঞেস করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলো।
সবার মনে একটাই কথা, এতো নিখুঁত সুন্দরী তাও আবার সামান্য শাড়ি চুড়িতে, পার্টিতে আসা সব মেয়ে আর মহিলারা মোম কে দেখে একবার আর একবার নিজেদের দেখে। সবার সামনে মোমকে একেবারে আলাদা লাগছে।
আগুনের মেয়ে ফ্রেন্ডের নাম, ডেইজি।
ডেইজির কানে কানে তার বান্ধবীরা বলল ভেতরে একটা মেয়ে আছে সে নাকি একেবারে বেহেশতের হুর।
সামান্য শাড়ি আর চুড়িতেও তাকে নাকি সবার থেকে সুন্দরী লাগছে।
ডেইজি মোম কে দেখে অনেক্ক্ষণ চোখ ফেরাতে পারলো না।
মেয়ে হয়েই সে চোখ ফেরাতে পাচ্ছেনা আর ছেলেরা মোমকে দেখলে কি করবে তা ভেবে পেলো না ডেইজি।
ডেইজি বলল-আন্টি কে এই মেয়ে?
আগুনের মা বলল- ও তোমার আংকেলের বন্ধুর মেয়ে। খুব লক্ষ্যি আর পর্দাশীল মেয়ে।
আগুনের মা মোমের সত্যিকারের পরিচয়টা দিলো না কারণ একটা ঝামেলা হতে পারে।
সবকিছু ঠিক হলে সবাই জানাবে এই চমৎকার মেয়েটি তাদের বাড়ির বৌমা, আগুনের বউ।
ডেইজি মোম কে বলল- হ্যালো ইয়াং গার্ল।
মোম বলল- আসসালামু আলাইকুম!
ডেইজি সহ সব মহিলারা অবাক হয়ে গেলো।
এই মেয়ে বলে কি?
ডেইজি নিজেকে ছোট মনে করলো মোমের সামনে। মোমের সামনে সে বা যারা এসেছে তার কিছুই না। পার্টির সব মহিলারা মোমকে নিয়েই আছে দেখে আগুন স্বস্তি পেলো। তার প্রিয়তমাা সকলের মন জয় করে নিতে জানে।
ডেইজি মোমের হাত ধরে বাহিরে নিয়ে যেতে চাইলে মোম বাঁধা দেয়।
মোম বলল – আমি কোন বেগানা ছেলেদের সামনে যাব না। ডেইজি অবাক হয়ে বলল- মেয়েদের সৌন্দর্য হলো ছেলেদের দেখানোর জন্য
ছেলেরা আমাদের না দেখলে আমাদের সৌন্দর্য দিয়ে হবে কি?
মোম বলল- অবশ্যই সৌন্দর্য দেখানোর জন্য তবে তা নিজের স্বামীর জন্য।
আমার সৌন্দর্য মহান আল্লাহ তায়ালা দান করেছে তা স্বামীর জন্য। অন্য লোক কে বৃথা দেখাতে যাব কেন?
সবাই হাত তালি দিয়ে মোম কে বাহবা! দিলো।
হঠাৎ আগুন এসে বলল- ডেইজি ওকে ওর মতো থাকতে দাও। ও খুব ধার্মিক আর পর্দাশীল মেয়ে। মৃত্যু মেনে নেবে তবুও নিজের ধর্ম শিক্ষা থেকে এক চুলও নড়বে না।
মোম বলল- দয়া করে মিউজিক বন্ধ করুন। এশার আজান দিচ্ছে। আমি নামাজ পড়ব।
এবারেও সবাই অবাক হলো। এতো সুন্দর পরিবেশ ছেড়ে কেউ নামাজ পড়তে যাবে এটা কেউ বিশ্বাস করতে চাইছে না।
.
.
আগুন মিউজিক বন্ধ করে দিলো। মোমের জন্য একটা রুম খালি করে দিলো নামাজ পড়ার জন্য।
ডেইজি মেয়ে হয়েও মোমের প্রশংসা না করে পারলো না তবে সেটা প্রকাশ করলো না।
.
.
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here