প্রিয়জন❤Part-32

0
2277

প্রিয়জন❤Part-32
Writer-Moon Hossain

আগুন প্রায় একমাস ক্লিনিকে পড়ে আছে। অনেক দিন জ্ঞান ছিল না। এক্সিডেন টা গুরুতর ছিল। আগুনের মোটামুটি স্বাভাবিক হতে সময় লাগলো। আগুন নিজের বাড়িতে এসেছে আজ। নিজের রুমে বসে আছে রুম অন্ধকার করে। কয়েকদিন ধরে রুম অন্ধকার করে বসে আছে বাট ঠিক সময়ে মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েছে সে। আগুনের কার্যকলাপে কেউ ডিস্টার্ব করলো না ভয়ে। আগুনের মেজাজ সম্পর্কে সবাই জানে। আগুন ঠিক কি করতে চাচ্ছে বা করবে সে সম্পর্কে কারও ধারণা নেই। আগুন একবারও মোমের কথা মুখে আনেনি। সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
আগুনের বাবা তার স্ত্রী কন্যা কে বলেছে যেন আগুনকে এই বিষয়ে কোন প্রশ্ন না করা হয়।
আগুন ভাবলো, খুব ভাবলো। তার মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে সে কিছু একটা প্ল্যান করছে।

মোম বসে আছে বেলকুনিতে। এখান থেকে খুব সুন্দর ময়মনসিংহ বক্ষপূত্র নদ দেখা যায়। নদের হাওয়া বার বার আগুনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। আগুন মোমকে বলেছিল যখন থেকে তাদের ঘর সংসার শুরু হবে তখন মাঝে মাঝে নৌকাভ্রমণ করে বেড়াবে তারা। দুটো নৌকাও নাকি আগুন তৈরি করে রেখেছে এর মধ্যে।
আর এখন একা একা নদ দেখতে হচ্ছে মোমের।
মোমদের এই বাড়িটি খুব প্রাচীন দুতলা বাড়ি।
বাড়িটি চড় এলাকার মধ্যে পড়েছে। যেখান থেকে নদ খুব কাছে আছে।
আসলাম মোম কে অনেক বার বলেছে নৌকা ভ্রমণে যেতে কিন্তু মোম রাজি হয়নি।
মোমের মা এমন গ্রাম্য পরিবেশে এসে খুশিতে আটখানা। তিনি তার স্বভাব মতে এখানকার মহিলাদের নিয়ে তালিম করতে বসেন। বিভিন্ন হাদিস পড়ে শোনান। কোরআন পড়ে শোনান সুর তোলে। মাঝে মাঝে মোম আর আয়েশাও যোগ দান করে। মোমের কোরআন পাঠ অসম্ভব সুন্দর। সুর তোলে কোরআন পাঠ করার সময় চোখের পানি ফেলে মোম। সবাই বলে, আহা! কি সুরেলা পাঠ। এতো সুন্দর করে কেউ কখনো কোরআন পাঠ শোনেনি।
.
.
মোমের ফোন না থাকায় অনেক বার চেষ্টা করেছে আয়েশার ফোন দিয়ে আগুনকে ফোন করতে।
আগুনের ফোন এক্সিডেন্টের সময় ভেঙে গুড়ো হয়ে গিয়েছে।
আরমান সাহেব একদিন আয়েশা কে সরাসরি মানা করেছে মোম কে ফোন দিতে।
মোমের কোন দরকার হলে যেন আরমান সাহেবের ফোন থেকে ফোন করে এই নির্দেশ দিয়েছো মোম কে।
মোম তার বাবার ফোন দিয়ে আগুনকে ফোন করার কথা মাথায় আনেনা। আরমান সাহেব একদিন মেয়ের রুমে প্রবেশ করে বলেন, বাবা মা সব সময় সন্তানদের ভালো চান।
কখনো সন্তান দের খারাপ চান না।
একটি মেয়ে জন্ম দিয়ে তাকে বড় করে সঠিক পাত্রের কাছে তোলে দেওয়ায় হলো একজন পিতার কর্তব্য।
ছেলেটা তোমার জন্য ভালো না। ওর বাবা কে আমি চিনি। ছেলেটা বাবার মতোই রগচটা হয়েছে।
রাগচটা মানুষ কোন ধর্ম জ্ঞান মানে না। তারা সব সময় ভুল কাজ করে বসে।
তোমার সাথে ওর এক মাসও সংসার টিকবে না।
তোমার একটা ভুলের কারণে তোমাকে শেষ করে দিতেও দুবার ভুলবে না।
রাগচটা মানুষের ভালোবাসা হলো ওদের ইগো। তোমার সাথে ওর বিয়ে হয়েছে, তাই তোমাকে ওর সম্পত্তি ভাবে।
তোমাকে কাছে রাখার ইগো ওর মধ্যে কাজ করছে।
ও আমার কাছে হারতে চায় না। আর তুমি কিনা ওর ইগো কে ভালোবাসা ভাবছো মা!
এতো বোকা কেন তুমি?
মোম হাতের বইটা রেখে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল- বাবা আমি উনাকে আমার স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি যেদিন থেকে জেনেছি উনি আমার স্বামী।
আমি আমার স্বামীর হাত কখনো ছাড়বো না। যদি উনি ছেড়ে দেন তবুও না। আপনি আমাকে যে শিক্ষা দিয়েছেন তাতে মানুষ চেনা বা মানুষ কে দ্বীনের পথে নিয়ে আনার ক্ষমতা আমার যথেষ্ট আছে।
আমাকে উনাকে জোর জবরদস্তি করে বলতে হয়নি বা আমি বলিনি আমাকে পেতে হলে ধর্মের পথে চলতে হবে। নিজেকে মুমিন হিসেবে গড়ে তোলতে হবে এটা নিয়েও জোর করিনি।
উনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান তাই নিজ থেকে আল্লাহর পথ বেছে নিয়েছে কেননা উনি জানেন একমাত্র আল্লাহর পথে চললেই আমি উনার সাথে থাকব।
উনি যেমন হোক না কেন আমি উনাকে নিজের থেকেও বিশ্বাস করি।
আমি জানি উনি আসবেন আমাকে নিতে এখানে।
মোমের বাবা কিছু বলবে অমনি মোম বলল- চিন্তা করো না বাবা আমি কিছুই করবো না। ইচ্ছে করলে পালিয়ে যেতে পারতাম। অনেক আগেই উনার ডাকে সারা দিতে পারতাম কিন্তু আমি তা করিনি। আমার ইচ্ছে ছিল উনাকে তোমার মতো গড়ে তোলার।
আমি চিৎকার চেচামেচি করে তোমাদের বাধ্য করবো না উনাকে মেনে নিতে।
একদিন তুমি নিজে বলবে উনি আমার জন্য একদম সঠিক এবং আল্লাহর আরশ থেকে আমাদের বন্ধন তৈরি হয়েছে।
মেয়ের কথা শুনে আরমান সাহেব হতভম্ব। এটা কি সেই মেয়ে যে বাবার সামনে চোখ তুলে কথা বলেনি। প্রতিটা পদক্ষেপে যে মেয়ে বাবার আদেশ মেনে চলতো, যে বলতো বাবা তুমি যা ভালো মনে করো আমার জন্য।
.
.
আসলাম বাহির থেকে সব কথা শুনতে পেলো।
আসলাম তাড়াতাড়ি মোম কে বিয়ে করে সৌদি নিয়ে যেতে চাচ্ছে।

মোম বাইরে বের হয়েছে
একটু দেখবে চারদিকের পরিবেশ।
পেছন থেকে মোম আসলামের পায়ের আওয়াজ পেলো।
আসলাম বলল – আসসালামু আলাইকুম!
মোম বলল -ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আসলাম মোমের সাথে হাটতে হাটতে কথা বলছে। এই একমাস আসলাম মোমের পরিবারের সবার মন জয় করে নিয়েছে। সবাইকে প্রতিদিন গজাল গেয়ে শোনায়।
সবার খেয়াল রাখে সে। কারও কিছু প্রয়োজনের আগেই সে সবকিছু হাজির করে। আরবকে সারাদিন কোলে করে রাখে।
মোমকেও নানা ধরনের হাদিসের বই পত্র এনে দেয় যেগুলো খুব দুষ্প্রাপ্য।
ঐ দিন ইসলামিক উপন্যাসিক কাশেম বিন আবুবাকারের ইসলামিক ফুটন্ত গোলাপ এবং সপ্নে দেখা সেই মেয়েটি উপন্যাস খুব সুন্দর সবুজ মলাটে বেধে নিয়ে এসেছিল।
মোম পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে তার কাছ থেকে কিছু আশা না করতে।
মোম জানে এসব আসলাম নিজের কার্য সিদ্ধির জন্য করছে। সব কিছু মেকি।
.
.
নদের কাছে আসতেই আসলাম বলল – তুমি আমাকে ইগনোর করছো।
এটা কি সেই মাস্তান লোকটার জন্য? যার কোনো ধর্ম জ্ঞান নেই? তুমি ঐ লোকটার জন্য আমার মতো আলেম যে কিনা ইসলামিক শিক্ষায় নিজেকে সৌদি থেকে
দীক্ষিত করেছে তাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছো?
তুমি একটা দ্বীনদার নারী হয়ে অমন মূর্খ ছেলের জন্য আমাকে দূরে ঠেলে দিতে পারো না। তুমি জানো সৌদি থেকে এসে কতগুলো মসজিদ তৈরি করেছি? । সেগুলোর ডিজাইন কোথা থেকে এনেছি তা ঐ ইবলিশটার চিন্তার বাহিরে।
মোম হাত দিয়ে ইশারা করে বলল – ব্যাস। অনেক হয়েছে।
রাসূল সাঃ বলেছেন—

মসজিদের ব্যাপারে লোকের পরস্পরের গর্ব করা কিয়ামতের আলামতের অন্তর্ভুক্ত।

সুনানে আন- নাসায়ী,৬৮৯।
আপনি মসজিদ তৈরি করে গর্ব করছেন যেটা ঠিক না। আমার স্বামী কখনো নিজের প্রশংসা বা এরকম কেয়ামতের আলামতের দিকে পা বাড়ায়নি। আপনার মতো কিছু অন্ধ লোকেরা আলামত ডেকে আনেন কেয়ামতের।

কাকে আপনি মাস্তান বলছেন? কার ধর্ম জ্ঞান নেই?
সৌদি গেলে সেখানে কয়েকটা সার্টিফিকেট পেলেই কেউ দ্বীনদার হয়ে যায় না। এমন হলে সবাই সৌদি গিয়ে সার্টিফিকেট কিনে আনতো। নিজেকে দ্বীনদার বললেই কেউ তা হয়ে যায়না।
হতে পারে উনি আপনার মতো ধর্মীয় শিক্ষায় বড় হয়নি তার মানে এই না যে উনি কোন মূর্খ ফেলনা বস্তু।
উনি আমার স্বামী আর আমি উনার কালেমা পড়া স্ত্রী , এটাই সত্যি। আপনি হলেন বেগানা পুরুষ। আপনি আমার জন্য হারাম। অন্যের বিবাহিতা স্ত্রীর দিকে তাকালে আপনি আর দ্বীনদার দাবি করতে পারবেন না নিজেকে।
উনাকে মূর্খ বলার আপনি কে? আল্লাহ সেটা দেখবেন। আপনি যেটা সেটা বিচার করতে চান তাহলে উনাকে আল্লাহর পথে আনতে সাহায্য করুন। একজন মুসলিম হিসেবে আপনার সেটা কর্তব্য।
আসলাম বলল- তোমার মাথার স্ক্রটা ডিলে করেছে ঐ ইবলিশটা। আসলাম শেখ জানে কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় ইবলিশকে।
.
.
মোমের চোখ থেকে পানি পড়ছে। এভাবে সে আর কতদিন সবার সামনে যুদ্ধ করবে।
আগুনের কথা খুব মনে পড়ছে মোমের। না জানি কেমন অবস্থায় আছে সে।
একটা খোঁজ যদি মোম জানতো তবে তার মনের অশান্তি টুকু দূর করতে পারতো।
সন্ধ্যা হয়েছে। সূর্যটা পশ্চিম দিকে অস্ত যাচ্ছে। মোম বালির মধ্যে হাঁটছে।
হঠাৎ সে সূর্য ডুবে যাওয়ার আলোতে একজন কে দেখলো মোমের কাছে আসতে।
ঐ তো আগুন কে দেখা যাচ্ছে। পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে সে এদিকে আসছে। দাড়ি গজিয়ে লম্বা দাড়িওয়ালা লোক হয়ে গিয়েছে আগুন।
কি সুন্দর লাগছে আগুনকে। চেহেরা থেকে নূরের ছটা পড়ছে৷
মোম এক দৌড়ে আগুনের বুকে মুখ লুকালো।
আগুন মাথায় হাত বুলিয়ে বলল- পাগলি মেয়ে, এভাবে কেউ কাঁদে? তুমি কাঁদলে আমারও চোখে পানি চলে আসে প্রিয়তমা!
আগুনের চোখ থেকে পানি পড়ছে।
মোম আগুনের গাল মুছে দিলো হাত মোজা খুলে। আগুনও মোমের গাল মুছে দিলো।

আগুন মোমের নেকাব খুলে কপালে অনেক ক্ষণ ধরে ভালোবাসার পরশ দিলো মোম তার হাতের ছোয়াঁয় আগুনকে ভালোবাসার পরশ দিলো। মোম দুই হাত আগুনের গালে রাখলো। আগুন তার দুই হাত মোমের গালে রাখলো। আগুন নাক দিয়ে মোমের নাকে ঘর্ষণ করে মোমের কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে রাখলো। দুজনে খুব কাছাকাছি আছে যেখান থেকে নিশ্বাস আর বুকের মাঝের ভালোবাসার স্পন্দন শোনা যায়।
.
.
মোম বাড়ি আসছেনা। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
আসলাম আরমান সাহেব কে আস্থা দিয়ে মোমকে নিয়ে আসার জন্য বের হলো।
আগুন আর মোম এখনো এই অবস্থায় রয়েছে।
দুজন দুজনকে হাজার বছর ধরে দেখেনি এমন মনে হচ্ছে।
আসলাম গিয়ে এই দৃশ্য দেখে ফেলে। আসলামের মাথায় রক্ত উঠে পড়েছে।
আসলাম রাগে নিজের ঘরে হাটাহাটি করছে।
মোম বলল- , আল্লাহ তাআলা বলেন,
“যখন বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। (বুখারী ৭৫৩৬নং)।
আপনি আল্লাহর পথে অগ্রসর হয়েছেন, এখন সবার ভুল ধারণা ভেঙে যাবে।
আগুন মোমের মুখে আঙুল দিয়ে বলল- আল্লাহর পথে চলার মতো শান্তি পৃথিবীতে আর কোথাও নেই।
মোম অনেক্ক্ষণ আগেই এসেছে। আগুন মোমকে বাড়ির সামনে এগিয়ে দিয়েছে। আগুন কাছাকাছি একটা মসজিদে থাকার ব্যবস্থা নিয়েছে।
মোম বোরখা না খুলেই বেলকনিতে দাড়িয়ে রাতের তারা দেখছে। তাকে খুব খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছে । এতোদিন প্রতিটি মোনাজাতে আগুনের নাম ছিল। আজ আল্লাহ তা পূরণ করেছে।
হঠাৎ আসসালাম এসে সালাম দিলো।
মোম উওর দিয়ে চলে যেতে চাইলো অমনি আসলাম মোমের হাত ধরে সোজা দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ফেললো।
.
.
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here