প্রিয়জন❤Part-40
Writer-Moon Hossain
[ গল্প শেষ করে ফেলতাম বাট বেচারা আগুনের যে বড় স্বাদ তার প্রিয়তমার সাথে সংসার করার তাই কয়েক পার্ট বাড়ালাম]
আগুন-বিশ্বাস হচ্ছে না ও আমার কোলে, আমার বুকে আছে।
মোম লক্ষ্য করলো আগুন হাসছে।
মোম বলল- হাসছেন কেন?
-তোমার শাড়ি পড়া একটুও হয়নি তাই।
আমি আসলেই এটা খেয়াল করিনি।
শাড়ির কুঁচি এলোমেলো হয়েছে।
আমি শাড়ি পড়তে পারিনা।
তাই উনিই আমাকে রুমে নিয়ে এসে নামিয়ে নিচু হয়ে শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে লাগলেন।
উনার হাত আমার গায়ে স্পর্শ করছে। আর আমি শিহরিত হচ্ছি। উনি আমার নাভিতে হঠাৎ একটা চুমু দিয়ে বসলেন। আমি হতভম্ব। লজ্জায় দাড়াতে পাচ্ছিনা।
উনি কুঁচি করে দিলেন খুব সুন্দর ভাবে।।
আমি অবাক হয়ে বললাম- আপনি কিভাবে কুঁচি করলেন? যতদূর মনে আছে আপনি কুঁচি পারেন না।
-ইউটিউব থেকে শিখেছি।
বলেই উনি জিহ্বায় কামর দিলেন।
আমি রেগে তাকিয়ে বললাম – আর কি কি শিখেছেন?
উনি আমতা আমতা করে বলল- জানিনা।
-তার মানে সব জানেন।
আমার সংসারে এসব চলবে না।
আপনাকে একটা কথা বলতে চাই। যেটা সাহস আর লজ্জায় আগে বলতে পারিনি।
আগুন মোমকে বিছানায় বসিয়ে হাঁটু গেড়ে বলল- আমার কাছে সাহসের কি আছে? তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী। আমাকে সবকিছুই বলতে পার।
-আমার লজ্জা করছে।
বিষয়টি একটু পার্সোনাল।
আগুন হেসে বলল- আমার কাছে লজ্জার কি হলো?
আমিই তো তোমার লজ্জা নিবারণ করি তাইনা?
বলো?
মোম বলা শুরু করলো – ইসলামের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুন ।।।।
আল্লাহ তা’আলার দেয়া এ সুন্দর যৌবনকালটাকে ক্ষয় করার জন্য যে ব্যক্তি তার স্বীয় লিঙ্গের পিছনে লেগে যায় এবং নিজ হাত দিয়ে এটা চর্চা করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তার এ হাত পরকালে সাক্ষী দেবে যে, সে এ পাপ কোথায় কতবার করেছে- যা পবিত্র কালামে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻧَﺨْﺘِﻢُ ﻋَﻠَﻰٰ ﺃَﻓْﻮَﺍﻫِﻬِﻢْ ﻭَﺗُﻜَﻠِّﻤُﻨَﺎ ﺃَﻳْﺪِﻳﻬِﻢْ ﻭَﺗَﺸْﻬَﺪُ ﺃَﺭْﺟُﻠُﻬُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻜْﺴِﺒُﻮﻥَ [ ٣٦ : ٦٥ ]
“সেই দিন আমি তাদের মুখের উপর মোহর মেরে দেব, বরং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে, আর তাদের পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করত সে-সন্বন্ধে। ” -(আল- কুরআন, ৩৬:৬৫)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
“ যে ব্যক্তি স্বীয় জিহ্বা এবং লজ্জাস্থান জামিন হবে আমি তার জাহান্নামের জন্যে জামিন হবো।” -(বুখারি, মিশকাত)
উক্ত হাদিস থেকে প্রমানিত হচ্ছে, মানব দেহের এ দু’টো অঙ্গ অত্যন্ত দুর্বল ও বিপদজনক। এ দু’টো অঙ্গের মাধ্যমে বিশেষ করে লজ্জাস্থানের মাধ্যমে পাপ করাতে শয়তানের জন্য খুব সুবিধা। এ দু’টো অঙ্গের মাধ্যমে বেশীরভাগ পাপ হয়ে থাকে। যদি কোন ব্যক্তি এ দু’টো অঙ্গের হেফাজত করে, বিশেষ করে যুবক অবস্থায় লিঙ্গের হেফাজত করে অবয়িদ কোন প্রকারেই বীর্যপাত ঘটাতে চেষ্টা না করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশের বিরাট সুযোগ পেয়ে যাবে।
অন্যত্র সহীহ হাদীস থেকে আরও প্রমানিত হয়ঃ
“(একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যুবকদের লক্ষ্য করে বলেন) হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখে, তাদের বিবাহ করা উচিত। কেননা বিবাহ দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। আর যে বিবাহের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখে না, তার উচিত (কামভাব দমনের জন্য) রোযা রাখা।” -(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেনঃ
“তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ তা’আলা নিজের দায়িত্ব মনে করেন। (১) ঐ খতদাতা ব্যক্তি, যে তার খতের মূল্য পরিশোধের চেষ্টা করে। (২) সে বিবাহিত যুবক, যে চরিত্রের হিফাজতের উদ্দেশে বিবাহ করে। (৩) সে মুজাহিদ, যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে।” -(হাসানঃ আত-তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত)
হস্তমৈথুন এমনই একটি কাজ যার অর্থ নিজেকে কলুষিত করা। এটা একটা জঘন্য কলুষ বা পাপ বোধযুক্ত কাজ। হস্তমৈথুন এমনই গোপনীইয় পাপ যা মানুষ চোরের মত চুপিসারে করে এবং প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেনঃ
“উত্তম চরিত্র হল পু্ন্য। আর যে কাজ তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে এবং লোকের কাছে প্রকাশ হওয়াকে তুমি পছন্দ কর না, তা হল পাপ।” -(মুসলিম, মিশকাত)
অশালীন, অশোভনীয় ও অন্যায় কাজে মনে সঙ্কোচবোধ করার নাম হলো লজ্জা বা হায়া। যার লজ্জা নেই সে পারে হস্তমৈথুনে লিপ্ত হতে।
লজ্জা বা হায়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
“লজ্জাশীলতা কল্যাণই বয়ে আনে।” -[বুখারী ও মুসলিম]
মুসলিমের এক বর্ণনায় এরূপ রয়েছেঃ “লজ্জাশীলতার পুরোটাই কল্যাণময়।”
ইসলামের দৃষ্টিতে এটা হারাম এবং কবীরা গুনাহ।শরীয়ত অনুযায়ী যারা হস্তমৈথুন করে তারা সীমালংগনকারী।
শারীরিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।পুরুষ হস্তমৈথুন করলে প্রধান যে্সব সমস্যায় ভুগতে পারে তার মধ্যে একটি হল
[১] পুরুষ হস্তমৈথুন করতে থাকলে সে ধীরে ধীরে নপুংসক(Impotent) হয়ে যায়।অর্থাৎ যৌন সংগম স্থাপন করতে অক্ষম হয়ে যায়।
[২] আরেকটি সমস্যা হল অকাল বীর্যপাত।ফলে স্বামী তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে অক্ষম হয়।বৈবাহিক সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয় না।
[৩] অকাল বীর্যপাত হলে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায়।তখন বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা হয় ২০মিলিয়নের কম।।যার ফলে সন্তান জন্মদানে ব্যর্থতার দেখা দেয়।
(যে বীর্য বের হয় সে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা হয় ৪২ কোটির মত। স্বাস্থ্যবিজ্ঞান মতে কোন পুরুষের থেকে যদি ২০ কোটির কম শুক্রাণু বের হয় তাহলে সে পুরুষ থেকে কোন সন্তান হয় না।)
[৪]। অতিরিক্ত হস্তমৈথুন পুরুষের যৌনাঙ্গকে দুর্বল করে দেয়।
Dr.Liu বলেন-
“There is a huge change in body chemistry when one
masturbates excessively”
আর শরীরের অন্যান্য যেসব ক্ষতি হয়-
১) Nervous system, heart, digestive system, urinary system এবং আরো অন্যান্য system ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।পুরো শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং শরীর রোগ-বালাইয়ের যাদুঘর হয়ে যায়।
২) চোখের ক্ষতি হয়।
৩) স্মরণ শক্তি কমে যায়।
৪) মাথা ব্যথা হয় ইত্যাদি আরো অনেক সমস্যা হয় হস্তমৈথুনের কারণে।
৫) আরেকটি সমস্যা হল Leakage of semen। অর্থাৎ সামান্য উত্তেজনায় যৌনাঙ্গ থেকে তরল পদার্থ বের হয়।ফলে অনেক মুসলিম ভাই নামায পড়তে পারেন না।মহান আল্লাহ্ তা’আলার স্মরণ থেকে মুসলিমদের দূরে রাখে হস্তমৈথুন।
রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন-
“যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী জিনিস (জিহ্বার) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী জিনিস (যৌনাঙ্গের) নিশ্চয়তা (সঠিক ব্যবহারের) দেবে আমি তার বেহেশতের নিশ্চয়তা দিব।” -(বুখারী ও মুসলিম)
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকল প্রকার পাপ বোজার এবং তা থেকে দূরে থাকার তাওফিক দিক। আমীন।[নিশ্চুপ বালিকা নামের পোস্ট দাতা থেকে একটা গ্রুপ থেকে কপি করেছি এইটুকু। ]
.
মোম মাথা নিচু করে বলল- আমি আপনাকে উপদেশ দিয়ে ছোট করতে চাইনি। আমার থেকে আপনিই ভালো বুঝতে পারেন।
আগুন মোমকে বুকে নিয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়ে বলল- আমি ছোট হব কেন? এগুলো ইসলামের বাণী। আমি এসব বিষয়ে এখন জানি আগে না জানলেও।
তবুও তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয়তমা।
মোম আগুনের বুকে মাথা গুজে চোখ বন্ধ করে শান্তির নিশ্বাস ফেলল।
আগুন মোমের কানে কানে বলল- এই জীবনে তুমি থাকতে তুমি বাবা হতে দেবে না আমাকে।
মোম -উনার কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে হতভম্ব!
একদিনের ভেতরেই আমি সবাইকে আরও আপন করে নিলাম যদিও সবাই আপন ছিল। আমাকে আরও রুম থেকে নিয়ে যায় বাবা মায়ের রুমে দিকে। যাওয়ার আগে আমি উনাকে সালাম জানিয়ে রুমের বাহিরে এই সংসারে পা দিলাম। আরু আমাকে বাবা মায়ের কাছে নিয়ে গেলো।
সেখানে উনাদের সালাম জানিয়ে আমি আমার দায়িত্ব সব বুঝে নিলাম।
শশুর বাবা আর শাশুড়ী মা আমাকে দোয়া করলেন।
আমি সবার সামনে খেতে বসেছি। আমাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে টেবিলে খেতাম কিন্তু দস্তরখানা বিছিয়েই সব সময় খাওয়ার পর্ব চলতো আমাদের। দস্তরখানা বিছিয়ে সবাই মিলে খাওয়া উওম।
আমি নতুম বউ বলে আজ ব্রেকফাস্ট বানাতে পারিনি। তবে দুপুর থেকে আমি আমাদের সংসারের সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেব।
দুপুরের রান্না আমি করব।
টেবিল ব্যবহার না করে আমাকে দস্তরখানার ব্যবস্থা করতে হবে। আর সেটা ধীরে ধীরে করতে হবে। হঠাৎ করে বললেই হবেনা।
সবচেয়ে বড় কথা হলো এই বাড়ির সবাইকে ইসলামের পথে নিয়ে আসতে হবে। আর সেটাও ধীরে করতে হবে।
আমি খেতে চাইনি কিন্তু বাবা মা বলল- তুমি এই বাড়ির বৌমা সবার জন্য কিন্তু আমাদের জন্য মেয়ে।
আরু যেমন আমাদের মেয়ো তেমনই তুমিও আমার মেয়ে।
হঠাৎ উনাকে দেখলাম। একটা আসমানী রংয়ের পাঞ্জাবি পড়েছেন উনি।
পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে বের হয়েছেন উনি।
কি যে সুন্দর লাগছে উনাকে এই স্নিগ্ধ সকালে।
সবাই কে শুভ সকাল বলে টেবিলে বসলেন। তার আগে আমাকে একটা ইশারা করলেন।
আমি বুঝতে পারলাম উনি কি বলতে চাচ্ছেন।
.
.
সবাই কে আমি পরিবেশন করে দিলাম।
সবাই বলল- আমি পরিবেশন করেছি তাই আজকের ব্রেকফাস্ট ধারুণ টেস্ট হয়েছে।
উনি আর আমি বসে বসে সবার খাওয়া দেখছি কিন্তু খাচ্ছিনা।
উনি নিষেধ করেছেন এখন খেতে। বাবা মা যখন বলল কেন আমরা খাচ্ছিনা তখন আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রইলাম।
উনি হেসে বলল- তোমরা খাও। আমরা বরং ডায়েট করি। সবাই হেসে ফেলল।
আমি রুমে গিয়ে বসতেই উনি একটা ট্রে করে নাশতা নিয়ে এলেন।
আমাকে বলল- প্রিয়তমা আমাদের সংসারের প্রথম সবকিছু স্বরণীয় করে রাখতে চাই তাই এখন আমরা একান্তে আমাদের প্রথম নাশতা খাব।
হা করো প্রিয়তমা?
আমি হা করলাম। উনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন আর ছুরি দিয়ে আপেল কাটছেন। আমি সাহায্য করতে চাইলাম কিন্তু উনি চোখ গরম করে তাকালেন।
উনি আমাকে খাইয়ে দিলেন আর আমিও উনাকে খাইয়ে দিলাম।
উনি বলল- এই খাওয়া সম্পূর্ণ হয়নি।
– কেন?
– মিষ্টি খাওয়া হয়নি।
আমি বললাম ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আসি।
উনি আমাকে উনার কাছে নিয়ে বললেন – তোমার ঠোঁটের মিষ্টি সবকিছু কে হার মানাবে।। আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে আছি। এর মধ্যেই উনি আমাকে খুব কাছে টেনে আমার ঠোঁটে ভালোবাসার পরশ দিলেন।
.
আমাকে নিয়ে আরু রান্না ঘরে ঢুকল।
আরু ফোনে গেইম নিয়ে পাশে বসে গেইম খেলছে আর আমি রান্নার সব আয়োজন করছি।
আজ বিশেষ আইটেম তৈরি করতে হবে।
সবাই আমার রান্না দুপুরে খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছে।
একটু টেনশন হচ্ছে। সবকিছু পারব তো।
হঠাৎ উনি এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন। আমার চুলের সুবাস নিয়ে আমার গলায় মুখ গুজে নাক ঘষছেন।
আমি বললাম – কি হয়েছে?
উনি আমাকে উনার দিকে ঘুরিয়ে বলল- টেনশন করছো কেন? তোমার স্বামি আছে না?
– আপনি রান্না করবেন?
– তোমাকে কে একদিন তো বলেছিলাম আমি তোমার সামনে থাকলে দুজন মিলে বাসার সব কাজ করব।
– রান্না জানেন কিনা সেটা বুলুন?
– গরম পানি ছাড়া আর তেমন কিছু জানিনা।
আমি হেসে দিলাম।
উনি আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন – তুমি আমাকে বলে দেবে কি করতে হবে তাহলেই তো হয়।
যাইহোক আমি আর উনি রান্না শুরু করলাম।
উনাকে যা করতে বলা হয় উনি তাই করে বাধ্য ছেলের মতো।
একটু প্রশ্ন করে এই আরকি।
যেমন-
আমি বললাম- পেয়াজ গুলো নিয়ে আসুন।
-কেন?
-কাঁটার জন্য।
-কেন?
-তরকারি তে লাগবে।
-কেন?
– তরকারি পেয়াজ ছাড়া খুব একটা রান্না হয়না।
-আচ্ছা।
পেয়াজ নিয়ে আসার পর বললাম – পেয়াজ গুলো খোসা ছাড়িয়ে দিন।
-কেন?
-খোসা সহ পেয়াজ তরকারি তে দেওয়া যাবেনা।
-কেন?
– কখনো দেখেছেন কমলা বা মাল্টা খোসা সহ খেতে?
-আচ্ছা।
এবার পেয়াজ গুলো আমি যেভাবে মিক্সিং করেছি আপনিও সেভাবে মিক্সিং করুন মিক্সারে।
-কেন?
– কেন?
– যেন এটা তরকারি তে দেওয়ার উপযোগী হয়।
– কেন?
– কারণ তরকারি তে আস্তো পেয়াজ দেওয়া হয় না।
– কেন?
-এটাই নিয়ম।
-আচ্ছা।
এই হলো উনার কাজের ধরণ।
উনি কাজ দেওয়া মাত্র কাজ করবেন খুব তাড়াতাড়ি তবে শুরুর আগে প্রশ্ন করবেন।
উনি আমাকে সবকিছু তে হেল্প করলেন।
আমি স্টোভ অন করতে ভয় পাই তাই এই কাজটা উনিই করেন। বিশাল কড়াইয়ে তেল উনি ঢালেন। ঘি উনি ঢালেন।
উনাকে দেওয়া কাজ যখন যখন শেষ তখনই সোজা আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার গলার সাইডে মুখ গুজে থাকবেন এবং তার দুই হাত দিয় আমার কোমর ধরে চুপচাপ দেখবেন আমি কি করছি।
একটু পর পর উনি রুমাল দিয়ে আমার কপাল মুছে দেবেন যদিও এক বিন্দু ঘাম আমার কপালে থাকেনা।
উনি প্রথম কাজ করেছিলেন স্টোভ অন করা। অন করেই হাঁপানোর অভিনয় করে বললেন – বউ আমার কপালের ঘাম তোমার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে দাও।
– কেন?
– আমি কাজ করেছি তাই ক্লান্ত। স্ত্রীর কর্তব্য হলো তার স্বামী কাজ করলে আঁচল দিয়ে তার কপাল মুছে দেওয়া।
আমি হেসে উনার কপাল মুছে দিলাম। ১০ মিনিট পর পর উনার কপালের ঘাম মুছে দিতে হয়। তখন উনি এমন ভাব করবেন যেন আমি তাকে খাটিয়ে মেরেছি।
অবশ্য আমার এটা করতে ভালো লাগে খুব।
উনার হেল্পে আমি সমস্ত রান্না সেরে নিলাম।
উনি আমার পাশে আছেন বলেই আমি ঝামেলা ছাড়া আমি সব রান্না করলাম।
উনি এখনো পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন। কত বার বললাম – রুমে বিশ্রাম নিন। উনি বলে আমাকে ছেড়ে যাবেন না।
আমাকেও নাকি তাহলে বিশ্রাম নিতে হবে উনার সাথে।
আমি সবকিছু খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখলাম রান্না ঘরে।
হঠাৎ অসাবধানে আমার হাত থেকে পায়েসের বাটি পড়ে গেল। উনার জন্য একটু পায়েস নিয়েছিলাম খাওয়ানোর জন্য।
.
.
আমার নতুন সংসারে অবচেতন মনে বিশাল একটা আশংকার আভাস পেলো।
যদিও এসব শুভ অশুভ লক্ষ্যণ ঠিক না তবুও…
উনি তখন নিচে পড়ে থাকা পায়েসটা পরিষ্কার করে বলল- আমাদের মহা নবী (সাঃ) কি বলেছেন জানো?
আমি মাথা নাড়ালাম। তখন উনি বললেন –
“ অশুভ লক্ষণ বা কুলক্ষনে বিশ্বাস করা শির্ক ” ============================= রাসূল (সাঃ) বলেন, অশুভ বা কুলক্ষণ ফল গ্রহণ করা শিরকি কাজ। কথাটি তিনি ৩বার বললেন।(আবু দাউদ সহিহ সনদে বর্ণিত) রাসূল (সাঃ) গুরুত্বপূর্ণ কোন কথা ৩বার করে বলতেন। মানুষ বিভিন্ন কুলক্ষনে বিশ্বাস করে থাকে যেমন, ১- পিছন থেকে ডাকলে অকল্যাণ হবে, ২- সকাল বা সন্ধ্যা বেলায় দোকানে বাকি দিলে ব্যবসায় ক্ষতি হবে, ৩- রাত্রের বেলায় গাছ থেকে ফল পারা ঠিক নয়, ৪- হাতের রাশি বা কোন কিছু গণনা করে মঙ্গল অমঙ্গল নির্ধারণ করে কোন কাজ করা বা কোন কাজ থেকে ফিরে আসা, ৫- বাচ্চাদের কপালে কালো ফোঁটা না দিলে মানুষের নজর লাগবে —————— এরকম বহু কুলক্ষণ বা অশুভ বিশ্বাস, বিভিন্ন মানুষ করে থাকে। কিন্তু এই বিশ্বাসগুলো আল্লাহকে বিশ্বাসের পরিপন্থি। মানুষের একটু চিন্তা করে দেখা দরকার, মানুষের সমস্ত কল্যাণ অকল্যাণ তোঁ মহান আল্লাহ তা’লার কাছেই রয়েছে, পিছন থেকে ডাক দেওয়ার সাথে বা এই ধরনের যতো কুসংস্কারের সাথে কল্যাণ অকল্যাণের কি সম্পর্ক।
.
আমি দৌড়ে উনার বুকে মাথা রাখলাম। উনার বুক হলো আমার নিরাপদ স্থান মহান আল্লাহ তায়ালার পরে।
উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল- পাগলামি বউ আমার। এসবে কেউ বিশ্বাস করে?
আসলে এসব আমাদের প্রথা হয়ে দাড়িয়েছে। তোমার কোন দোষ নেই।
তুমি আর কখনো এসব কল্যাণ অকল্যাণের বিষয়ে ভাববে না কথা দাও প্রিয়তমা? এসব খুব পাপ প্রিয়তমা!
উনি আমাকে বোঝালেও আমি মনে মনে ভাবছি কখনো আমার হাত থেকে খাবার পরেনা। আজ হঠাৎ পরে গেলো তাই কেমন যেন লাগছে। দূর এসব কি ভাবছি? এসবের কোন স্থান নেই।
আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম। আমার স্বামী আমার পাশে সুস্থ সবল ভাবে পাশে থাকবে এটাই আমার সৌভাগ্য।
.
.
রান্না ঘর থেকে বের হওয়ার পরে দেখলাম, বাড়ির ভৃত্য থেকে শুরু করে সব মহিলারা দাড়িয়ে আমাদের দেখছে।
আমরা স্বামী স্ত্রী মিলে রান্না করেছি এটাই উনাদের অবাক করছে। রুমে গিয়ে আমরা দুজন বিশ্রাম করলাম। উনিও আমার পাশে শুয়ে বিশ্রাম নিলেন আর মিটিমিটি হাসছেন।
কেন হাসলেন সেটা জিজ্ঞেস করলাম না। জিজ্ঞেস করলে নিজেই ফাঁদে পড়তে পারি।
আমি দাড়িয়ে আছি আর উনি আমার হাত ধরে আছেন।
সবাই খাওয়া শুরু করেছে।
উনাদের কিছু মহিলা মেহমানরাও খাচ্ছে।
সবাই একটু একটু খেয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। উনি আমাকে ইশারা করে একটা বয়স্ক মহিলাকে দেখিয়ে বললেন – ঐ মহিলা কে দেখে নাও। যত বিয়ে হয়েছে তত নতুন বউয়ের রান্নার খুট ধরে। যত ভাল রান্না হোক না কেন খুঁত ধরবেন। আমি একটু ভয় পেলাম। বাট উনি হেসে বললেন বাট আমার বউয়ের খুঁত ধরতে পারবেন না।
হঠাৎ একজন বয়স্ক মহিলা বলল- সামান্য আলু ভাজা খেয়ে মনে হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খাবার। এই আলু ভাজা এতো সুস্বাদু হয়েছে যে আমি আরও দুই প্লেট ভাত খাব আলু ভাজা দিয়ে। অন্যজন বলল- বাকি জীবন আমি ডাল দিয়ে খেয়ে জীবন পার করব। ডালের মতো সুস্বাদু কিছু নেই।
আরেকজন বলল- এই মাছের কোফতা হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কোফতা। আমি কয়েক টা টিফিনবাক্স করে বাসায় নিয়ে যাব আমার ডিয়ার আগুনের বউকে দিয়ে রান্না করিয়ে।
আগুন – সবাই খেয়ে ওর প্রশংসা করছে আর ও আমার বুকে চোখের পানি ফেলছে। আমি ওর গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ওর কান্না দেখে আমারও কান্না চলে এসেছে।
বউয়ের রান্না আমার কাল হয়ে দাড়িয়েছে। রাত ১১ টা বাজে। সব মহিলারা প্রিয়তমাকে নিয়ে রান্না ঘরে আছেন। সবাই রান্না শিখছে ওর কাজ থেকে। আমি গেলে আমাকে অপমান করে রুমে পাঠিয়ে দেয়।
আমি আমার স্ত্রীর বিরহে শোকে পাগল হয়ে গেলাম!!
আমি শুধু আল্লাহ তায়ালা কে বলছি – আমার বউকে আমায় দিয়ে দাও। ওকে সবার হাত থেকো বাচাও।
সেই বিকেল থেকে এখনো ওর মুখ দেখতে পারিনি।
অজানা ভয় লাগছে যদি ওকে সবাই যার যার বাসায় নিয়ে যায় তাহলে তো আমি শেষ। সবাই যে হারে ওকে নিয়ে আছে তাতে ওকে রাতে দূরে থাক দিনেও দেখতে পাব কিনা সন্দেহ আছে!!!! প্রিয়তমা!!!!
চলবে……