প্রিয়জন❤Part_02
Writer_Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
মোম -শাড়ির কুচি গুলো ধরে আমি সোজা উপরে চলে গেলাম। আমার সালোয়ার কামিজ আর বোরখা খুঁজে পেলাম না কোথাও। ফোনটাও পাচ্ছিনা কোথাও।
শাড়ি পড়তে পারিনা তাই কুচি ঠিক করতে পাচ্ছিনা।
বিপদ যখন আসে তখন চারদিক দিয়েই আসে।
আশেপাশে কাউকে দেখছিনা।
ইয়া মাবুদ তুমি তোমার এই অধম বান্দিকে রক্ষা কর।
অবশ্য মাবুদ যা করছেন ঠিক করেছেন।
এটা আমার শাস্তি ছিল।
আমাকে কেউ এরকম শাড়ি পরিয়ে দেবে আর আমি পরে নিলাম। কিন্তু আমি তো ইচ্ছে করে পরিনি।
ওরা জোর করে পরিয়ে দিয়েছে। মোম একটা উড়না গায়ে জরিয়ে নিলো।
.
শাড়ির কুচি হাতে নিয়ে মোম এদিক ওদিক ঘুরছে সবার আড়ালে।
কাউকে ডাকতেও পাচ্ছেনা।
হঠাৎ আগুন এসে মোমকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখলো।
আগুন বলল…ফলো মি।
মোম-না। আল্লাহর দোহায় আপনি সামনে থেকে যান।
পার্টি আরও মেয়েরা আছে ওদের শাড়ির কুচি খুলুন।
-যেটা করতে বলেছি ওটা কর। ফলো মি।
আগুনের পেছনে মোম হাটঁতে লাগল।
আগুন একটা রুমে ঢুকল।
মোম রুমে ঢুকতেই আগুন দরজা বন্ধ করে দিলো।
মোম -দরজা কেনো বন্ধ করলেন???
দেখুন যেখানে যুবক যুবতি একান্তে দেখা করে সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হলো শয়তান।
-সো ওয়াট??
-সো ওয়াট মানে? আপনাকে সব ভেঙে বলতে হবে?
-তুই তো অনেক জ্ঞানী। এই কারণেই তোকে…
আগুন পুরো কথা না বলে মোমের দিকে এগিয়ে শাড়ির কুচি ধরলো।
.
.
এক ঘন্টা হয়েছে আগুন মোমের শাড়ি কুচি ঠিক করছে।
-ভাইয়া আর কতক্ষণ? এক ঘন্টা হয়ে গেলো যে।
– জাস্ট কোয়াইট।
এতো সময় লাগছে কেনো বুঝতে পারলাম না। আগে কখনো করিনি তো। বুঝেছি শাড়ির বিষয়ে কোর্স নিতে হবে।
আগুন কিছুতেই কুচি ঠিক করতে পারলো না।
মোম কাঁদো কাঁদো করে বলল…এখন কি হবে?
আগুন কিছু না বলে বাহিরে গিয়ে কাকে যেনো ফোন করল।
কিছুক্ষণ পর মোমের হাতে একটা পার্সেল তুলে দিলো।
মোম পার্সেল খুলে দেখে একটা নিউ বোরখা। আগুন মোমের কানে কানে বলল…আমার শুধু তোমার শাড়ির কুচি খুলতে ভালো লাগে।
মোম হা হয়ে তাকিয়ে রইল। কি সর্বনাশের কথা!
.
.
মোম তাড়াতাড়ি বোরখা পরিধান করলো।
মোম বাড়ি যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো আগুনের মা আসমা কে সালাম করে পায়ে হাত দিয়ে।
আগুনের মা তার মর্ডান বান্ধবীদের সাথে হাসি তামাশা করছিলেন
মোম -আন্টি আসব?
-হ্যাঁ মামুনি এসো?
মোমের নেকাবটা খোলা ছিল।
সবাই মোমের নূরানী মুখ দেখে চমকে গেলো।
সুন্দরী মেয়ে তো কতই আছে কিন্তু মোমের মতো এমন সুন্দরী কেউ দেখেনি।
মনে হচ্ছে মোমের মুখ থেকে জ্যোতি বের হচ্ছে।
বোরখাতেও মোম কে দারুন মানিয়েছে।
মোম -আমি খালাম্মাকে সালাম করলাম পায়ে হাত দিয়ে।
সবাই একটা ধাক্কা খেলো।
আজকাল কার মেয়েরা৷ মুখেই সালাম দিতে ভুলে গেছে। আর মোম পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেছে ।
মোম – আমি খালাম্মাকে বললাম চলে যাব।
খালাম্মা অনেক জোর করলো পার্টিতে থাকতে কিন্তু রাজি হলাম না। শেষে খালাম্মা আগুন ভাইয়াকে বলল আমাকে পৌঁছে দিতে।
আগুন ভাইয়া ড্রাইভ করছে।
একটু রাস্তা যেতেই আগুন ভাইয়া ব্রেক করলো।
আগুন ভাইয়া এতোক্ষণ চুপ করে ছিলো।
উনি গাড়ি থেকে নেমে পেছেনে আসল।
উনি সামনে বসে ড্রাইভ করছিলেন।
আর আমি পেছনে বসে ছিলাম।
উনি গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বললেন… চলে আয়। আমার সাথে সামনে বসবি।
আমি বললাম_এখানেই ঠিক আছি।
-সব সময় হাদিসের কথা বলিস। হাদিসের কোথায় বলা আছে যেখানে বড়দের কথা অমান্য করতে হয়?
-মাফ করবেন। মানুষ অতি নগন্য মানুষ তাই ভুল করে।
আমি আগুন ভাইয়ার পাশে বসলাম।
অনেকটা রাস্তা যেতে হবে।
আজকাল ময়মনসিংহে রাতে রাস্তায় বের হওয়া সেফ নয়।
রাস্তাটা খুব নীরব।
আমার উনার সাথে কেমন যেনো সেফ মনে হচ্ছে।
আগুন ভাইয়া একটা কথাও বলল না।
হঠাৎ আগুন ভাইয়া একটা জোরে ব্রেক মারলো।
আমি সামলাতে না পেরে আগুন ভাইয়ার উপরে পড়ে যাচ্ছিলাম।
আগুন ভাইয়া তৎক্ষনাৎ ব্রেক থামালো আর একটু দূরে সরে গেলো যেনো আমার গায়ের সাথে উনার বডি না লাগে।
আমি একটু অবাক হলাম।
আমাকপ বাসায় নামিয়ে দিয়ে আগুন ভাইয়া চলে যাচ্ছিলেন।
আমি বললাম -ভাইয়া মায়ের সাথে দেখা করে যান।
ভাইজানও তো এসেছেন অফিস থেকে উনার সাথে আলাপ করে যান।
উনি বললেন -না আরেকদিন। তারপর ফিসফিস করে বললেন… একদিন তো এই বাড়ি আমার সব হবে। তখন আলাপ করা যাবে ঘন্টার পর ঘন্টা।
আমি -ভাইয়া কিছু বললেন?
-না। আচ্ছা বাসায় যা।
.
আমি শুয়ে আছি।
এই কয়দিন ধরে বাসা থেকে বের হয়নি।
আজ একটু ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হলাম।
ক্লাসে যারা যারা বোরখা পড়ে তারা আমার বান্ধবী।
ক্লাসে মাত্র আমি সহ তিনজন বোরখা পড়ে।
মাঝে মাঝে আমাদের নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে।
সবাই বলে আমরা নাকি দেমাগ দেখায় সুন্দর বলে। তাই নাকি রুপের অহংকারে বোরখা পড়ি।
আমি কিছু বলিনা। ধৈর্য রাখতে বলেছেন মহান আল্লাহ তায়ালা।
ধৈর্য ধরলেই সবকিছু নরমাল হয়ে যাবে।
আমার দুটো বান্ধবীর নাম হলো…. ইসরাত, নুসরাত।
ওদের প্রচুর কথা সবচেয়ে প্রিয়। আর আমার কম কথা বলাই প্রিয়।
আমি ভার্সিটি থেকে বের হতেই দেখি আগুন ভাইয়া দাড়িয়ে আছেন রাস্তার পাশে গাড়িতে হেলান দিয়ে।
ভার্সিটির মেয়েরা হামলে পড়ে উনাকে দেখছেন।
উনি খুব সুদর্শন।
উনার মতো পুরুষ খুব কম দেখা যায়।
আমি বাড়ি ফিরলাম।
মা নফল নামাজ পড়ছিলেন। আমাকে ফিরতে দেখে আমার কাছে এসে দোয়া করে মাথায় ফু দিয়ে দিলেন।
.
.
মোমের মা সালমা ধার্মিক মহিলা। জীবনেও বেগানা পুরুষদের সামনে যান নি।
সালমাকে তার বাবা হাফেজা বানিয়েছেন।
মোমের নানাজান একজন আলেম। মোমের নানিজানও একজন ধার্মিক মহিলা।
মোমের মা বললেন… মা মেয়েদের এতোক্ষণ বাহিরে থাকতে নেই।
মোমের বাবা আরমান খন্দকার একজন মাঝারি বিজনেস ম্যান।
তিনিও ধার্মিক লোক।
উনি সবসময় পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে থাকেন এমনকি অফিসের জন্য একই রকম।
এই নিয়ে আড়ালে অনেকেই তাকে নিয়ে মন্তব্য করেন।
তিনি খুব অমায়িক একজন ধার্মিক লোক।
সারাক্ষণ হাতে দেখা যাবে হাদিসের বই।
কখনো মিথ্যে বলেছেন নাকি তাগে সন্দেহ আছে।
মোমেরা একভাই এক বোন।
মোমের বড় ভাই আরশাফ পড়াশোনা শেষ করে বাবার ব্যাবসায় সাহায্য করছেন। পাশাপাশি তিনি একজন আলেম।
মোমের দাদা খুব মর্ডান ছিলেন। তিনি মারা গিয়েছেন কিন্তু দাদিজান এখনো বেঁচে আছেন।
তিনিও একজন ধার্মিক মহিলা।
প্রায় প্রায় উনার দম আটকে ইন্তেকালের উপক্রম হন কিন্তু আল্লাহর রহমতে বেচে উঠেন।
দাদিজান সবসময় আল্লাহকে নিয়ে থাকেন। উনাকে বেশিরভাগ সময় জায়নামাজে বসে থাকতে দেখা যায়।
সবার ধারণা এই মহিলা কখনো ইন্তেকাল করবেনা।
কই মাছের জান হয়েছে নামাজ কালম পড়তে পড়তে।
মোমদের দোতালা বাড়িটা একটা শান্তির বাড়ি।
বাড়িটার দিকে তাকালেই শান্তির সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে।
.
.
অন্যদিকে আগুনদের বাড়ি হলো একটা শৃঙ্খলাহীন বাড়ি।
আগুননের বাবার নাম আজান খান। নামেই শুধু মুসলিম। কখনো নামাজ পড়েছে নাকি সন্দেহ আছেন। বিদেশ থেকে পি এইচ ডি করে প্রচুর ব্যাবসা শুরু করেন। যেটাতেই হাত দিয়েছেন সেটাতেই লাভবান হয়েছেন।
এমন কোন ব্যাবসা নেই যেটা তার নেই। ভদ্রলোকের এতো টাকাপয়সা যে বাংলাদেশ কিনে ফেলতে পারেন এটা সোসাইটির ধারণা।
উনি হচ্ছেন খুব বেশি ওভার মর্ডান। তেমনি বউ ছেলে মেয়েকেও তেমন বানিয়েছেন।
উনার সোসাইটির সবাই ওভাড মর্ডান।
নামেই যা মুসলিম। ধর্মের ছিটে ফোটাও তাদরে মধ্যে নেই।
.
.
মোম ক্লাস করে ফেরার সময় আগুনকে আবার দেখতে পায়।
মোম ভাবে আরুকে নিতে এসেছে মনে হয়।
কিন্তু আরু তো ক্লাসে আসেনি।
মোমের খটকা লাগল যখন দেখলো সে যেদিন যায় ঐদিন আগুনও ভার্সিটি যায়।
.
মোমের সাথে পার্টির পরে আর আগুনের সাথে সরাসরি দেখা বা কথা হয়নি।
মোমকে বাসায় এসে দেখো সবাই গ্রামে গিয়েছেন বড় খালার মেয়ের বিয়েতে। বড় খালা নাকি হার্ট অ্যাটাক করেছেন তাই খবর পেয়ে তৎক্ষনাৎ সবাই মোমকে ফেলে চলে গেছেন।
কাজের লোক বললেন… আগুন এসে মোমকে গ্রামে নিয়ে যাবে।
মোম দুপুরের খাবার খেলো…. লুচি, গোশত আর দই।
আগুন বিকেলে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় দাড়ালো বাট ভেতরে ঢুকলো না।
কাজের মেয়ে মোম কে খবর দিতেই মোম রেডি হয়ে নিচে নেমে সোজা রাস্তায় গেলো।
আগুন কালো পোষাক পড়েছে। চোখে সানগ্লাস।
খুব সুদর্শন লাগছে তাকে
.
.
আগুন ড্রাইভ করছে।
মোম চুপচাপ বসে আছে তার পাশে।
হঠাৎ আগুন বলল… মুখের নেকাব টা খোলা রাখবে আমার সাথে থাকলে।
মোম অবাক হলো। আগুনের সামনে নেকাব খুলতেই হবে কেনো আর হঠাৎ তুমি করে বলছে কেনো।
তুমি ডাকাটা মোমের অবশ্য ভালো লেগেছে।
মোম -আমি একটু অবাক হলাম উনার কথা শুনে।
আগুন ভাইয়া হঠাৎ ব্রেক করে গাড়ি থামালেন।
মোম আগুনের উপরে পড়ে গেলো।
আগুন দুই হাত উপরে তুলে ফেললো…
মোম লজ্জা পেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো…
আগুন হঠাৎ মোমের কাছে এসে মোমের নেকাব খুলে দিলো আর মোমকে বলল…আমাকে তোমার কেমন লাগে মোম???
মোম আগুনের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল….
আগুন বলল….এতো চুপচাপ থাক কেনো তুমি কিছু বলো।
মোম তার লজ্জা রাঙা মুখে বলল…. কি বলব? আমি ব্যকওয়াড ব্যাকডেটেড ধরণের মেয়ে।
আমি আপডের কথা জানিনা..
-তোমার যা ইচ্ছে তাই বলো… তবুও কিছু বলো তোমার সুরেলা কন্ঠে ….
মোম একটা হাদিস বলল……..”হে ইমানদারগণ তোমরা পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না। বাস্তবিকই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য। আল কোরআন -সূরা
বাকারা..আয়াত-২০৮..পারা-২।
আগুন হঠাৎ স্টেয়ারিংয়ে নিজের মাথায় জোরে জোরে বারি দিতে লাগল….
মোম ভয় পেয়ে বলল….ভাইয়া আপনাকে কি জ্বীনে ধরেছে?
আগুন বলল…কি ধরেছে??
-জ্বীন
-এটা মনে হওয়ার কারণ?
-লক্ষ্যণ দেখে তাই মনে হচ্ছে।
.
.
চলবে…….❤❤