প্রিয়জন?Part-15

0
3083

প্রিয়জন?Part-15
Writer-Moon Hossain

মনের মানুষের কাছাকাছি থাকলে সময় কখন চলে যায় তা টের পাওয়া যায়না। মনে হয় সময় হাওয়ার মতো দ্রুত চলে যায়। মনের কাছাকাছি মানুষের সাথে কাটানো সময় কে ফ্রেমে বাঁধতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে মনের মানুষের সাথে কাটানো সুন্দর মূহুর্ত গুলো মনের ফ্রেমে ধরে রাখি।
মোম-উনি আমার থেকে একটু দূরে একটা চেয়ারে বসে আছেন। বসে বসে আমার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছেন।
আমার অস্থিরতা ক্রমশ বাড়ছে।
এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে লজ্জা কর আমার। আর সেটা যদি উনি হয় তাহলে তো কথায় নেই।
.
.
.
কিভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমাকে পাহারা দিচ্ছে।
আগুন- ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে জনম জনম। ওর মুখ খানি দেখা না গেলেও আমার মনের চোখ দিয়ে ওকে দেখছি।ওর কাছাকাছি আছি এতেই আমি খুশি।
আজ আমার প্রাণটা বের হয়ে গিয়েছিল।
আমি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।
ওর একটু কিছু হলে আমার সহ্য হয়না। আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনা।
.
.
ওর এতটুকু কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই এটা আজ বুঝতে পারলাম।
নিজের কাছে ওয়াদা করলাম আর কখনো যত কিছুই হোক ওর গায়ে হাত তুলব না। যেদিন তুলব ঐদিন আমার শেষ দিন হবে।
.
.
.
বিয়ের অনুষ্ঠানে আগুনের বাবা, আরু আর আগুন এসেছে।
মোমের সাথে বা ওর পরিবারের সাথে ওদের দেখা এখনো হয়নি।
মোমের বাবাকে হঠাৎ আগুনের বাবা ডাক দিল ভীড়ের মাঝে।
মোমের বাবা সৌজন্য বোধগম্য সালাম দিল।
মোমের বাবা আগুনের বাবাকে এড়িয়ে গেলো।
মোমের বাবাকে আগুনের বাবা ছাড়ার পাত্র নয়।
আগুনের বাবা বলল- কেমন আছিস??
আরমান-আলহামদুলিল্লাহ।
-তুই সেই স্কুল কলেজ থেকে আমার কাছ থেকে পালিয়েছিস আর এখনো পালাচ্ছিস।
-আর তুই সেই স্কুল কলেজ থেকে আমার পেছনে পড়ে আছিস।
-তুই যতই পালাস মাই ফ্রেন্ড কখনো আমার থেকে বাঁচতে পারিস নি।
আর এখনো পারবিনা।
মিথ্যে আশা করিসনা।
-তোর সাথে কথা বলায় বৃথা। তুই আর আমি সম্পূর্ণ আলাদা জগতের মানুষ।
আমাদের মতের মিল কখনো ছিল না।
আর হবেও না।
-মাই ফ্রেন্ড তুই তো ধর্ম কর্ম করিস। তাহলে তুই এখন আল্লাহর কালাম পড়া সম্পর্ক কে মানছিস না কেন?
– তুই ধর্ম কর্ম মানিস না। তাই তোর মুখে এই কথা মানায় না। তুই অসুস্থ ছিলি। মৃত্যু পথ যাত্রী তাই তোর শেষ ইচ্ছে রেখেছিলাম।
কে জানতো তুই এখনো বেচে থাকবি।
-আমার কৈ মাছের জান
ফ্রেন্ড। দেখ মাই ফ্রেন্ড ধর্ম হলো শেষ কালের কাজ আর কর্ম হলো এখনকার কাজ।
যত বেশি কর্মের প্রতি নির্ভর হবি তত বেশি প্রতিষ্ঠিত। পুরো ময়মনসিংহে আমার সমকক্ষ কেউ আছে???
সোসাইটির সবচেয়ে দামী গাড়ি, বাড়ি গুলো আমার। আমি সোসাইটির মাথা।
আমার কথায় শেষ কথা সোসাইটি তে।
.
.
.
-তোর কথা শেষ?? আল্লাহ হাফেজ।
আগুনের বাবা বিয়ার খেতে খেতে বলল -আরে দ্বারা। আসল কথায় হলো না।
তুই ভেবেছিলি আমি মরে যাব তাই আমার ইচ্ছে পূরণ করেছিলি।
ভেবেছিলি আমি মরে গেলে তুই আর তোর মেয়ে বেচে যাবি। বিয়ের সম্পর্ক টা সবাই ভুলে যাবে আমি মরে গেলে তাইনা???
মোমের বাবার মাথায় রক্ত উঠে পড়ার উপক্রম আগুনের বাবার এসব গা জ্বালা কথা শুনে।
-তখন যদি জানতাম তোর কৈ মাছের জান তাহলে আমার মেয়ের এতো বড় ক্ষতি করতাম না।
-তোর মেয়েকে রাজরানি করে রাখব। সে হবে সোসাইটির সবচেয়ে ক্ষমতা বানের বৌরাণি। এটা কে তুই ক্ষতি বলছিস??
-আমার মেয়ে চাকরানী হয়ে থাকবে কোন মোল্লার ঘরে।
-মাই ফ্রেন্ড তুই পাজামা পাঞ্জাবি তে কি পেয়েছিস??
আমার এই কোর্টটার প্রাইস জানিস???
আর তুই এসব কি পড়িস?? ঢোলা পাজামা পাঞ্জাবি। বউ বৌমা মেয়েকে কিসব বোরখা পড়িয়ে রেখেছিস?? একটু ফ্যাশনেবল হওয়ার ট্রাই কর।
-ঝিনুকের ভেতর যেমন মূল্যবান রত্ন লুকায়িত থাকে তেমনি পর্দার ভেতর মেয়েদের সম্মান রক্ষা থাকে। আমার পোশাক আশাক হলো একজন ইমানদারের পোশাক। যা তোর কোটি টাকার কোর্টে পাওয়া যাবেনা।
আগুনের বাবা হাসতে হাসতে বলল- তোর কথা শুনে দেখ সবাই হাসছে।
তুই বড্ড ওল্ড মাই ফ্রেন্ড। ধর্ম কর্ম নিয়ে পড়ে থাকলে আমি প্রতিষ্ঠিত হতে পারতাম না। দেখ আজ আমার কত নাম ডাক সুনাম।
-মৃত্যুর পর এসব নিয়ে যাবি?? ওখানে তুই ফকির থাকবি।
-সেটার ব্যবস্থা আমি করেছি। শহরের বাহিরে ভেতরে প্রচুর স্কুল কলেজ মাদ্রাসা দিচ্ছি। দরিদ্রদের দান করছি। আমার আন্ডারে কত এতিমখানা চলে তা তোর ধারণার বাহিরে।
আমি কাঁচা কাজ করিনা মাই ফ্রেন্ড হা হা হা।
কিছু মানুষ আছে যাদের সাথে পারা যায়না। আগুনের বাবা তার মধ্যে একজন।
মোমের বাবা মাথা ঘুরছে। এমন সময় আগুন এসে তাকে ধরলো।
আশরাফ এসে আগুনের বাবাকে বলল-চাচাজান দয়া করে চুপ করুন। বাবা আর নিতে পাচ্ছেনা।
আরমান চোখ মেলে আগুনকে দেখে কিছু বলল না। আশরাফের সাথে আগুনের চোখাচোখি হলো।
আগুন কমিউনিটি সেন্টারের রুমে আরমানের বিশ্রামের ব্যবস্থা সহ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করলো। একজন ডক্টরকেও নিয়ে এলো আগুন। প্রেসক্রিপশন নিয়ে আগুন নিজে ঔষধ নিয়ে এলেো।
.
.
.
আশরাফের সাথে সালাম বিনিময় শেষে মোমের বাবার সাথে কুশল বিনিময় করে আগুন চলে এলো।
আশরাফ-বাবা কেমন বোধ করছেন?
আরমান- আলহামদুলিল্লাহ। বাবা যতটা খারাপ ছেলেটা ধর্ম কর্ম না করলেও ততটা ভালো। আশরাফ আমি নামাজ পড়ব। ব্যবস্থা কর।
মোম দরজার আড়াল থেকে কথাটা শুনলো।
মোম আগুন দুজনেই তাদের নিয়ে ব্যস্ত ছিল।
তা না হলে তাদের বাবাদের বাকযুদ্ধ এতটা হতো না।
আগুন আর মোম পরে এসব জানতে পারল আরুর কাছ থেকে।
.
.
.
মোম – আল্লাহ বাবাকে সুস্থ করে দাও। চাচাজান কে হেদায়েত দাও। বাবা এমনিতেই চাচাজানের জন্য উনাকে সহ্য করতে পারেনা আর এখন আরও সহ্য করবেনা।
উনাকে দেখলাম বেলকুনিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে হতাশ হয়ে।
যাব না যাব না বলেও গেলাম উনার কাছে। উনার ফর্সা মুখটা হতাশায় আছন্ন কালো হয়ে গিয়েছে এটা দেখে আমার হ্রদয়ে আঘাত পড়ল কেন যেন।
.
.
আগুন -কি থেকে কি হয়ে গেল। বিষয়টি আরও জটিল হয়ে গেলো। সবদিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে আমাকে।
আঙকেল সুস্থ হলে কথা বলতে হবে।
মোম নিশ্চয়ই আমাকে আরও দূরে ঠেলে দেবে।
আমার প্রিয়তমা নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পেয়েছে।
হঠাৎ মনে হলো ও আমার কাছে আছে।
আমি পাশে না তাকিয়েই ফিল করেছি ও দাড়িয়ে আছে।
আগুন না তাকিয়েই বলল- আই এম সরি প্রিয়তমা।
আমার কারণে তোমার মনে দুঃখ লেগেছে।
তোমরা সবাই টেনশনে পড়ে আছো আমার কারণে।
আমি অনেক অনুতপ্ত।
-প্লিজ এভাবে বলবেন না। চাচাজান কে বুঝিয়ে বলুন।
শুধু শুধু…
আপনারা বৃথা চেষ্টা করছেন।
-আমার এই হ্রদয়ে হাত রেখে দেখ কি বলে?
আমর মন কি চাচ্ছে।
আমার মন আমার হাতে নেই।
পাথরের বুকে ফুল ফুটিয়ে ছাড়ব আমি এই তোমার মাথায় হাত দিয়ে বললাম।
-এটা কি করলেন আপনি??
কখনো সম্ভব নয়। এক রাশ কষ্ট পাবেন পাথরের বুকে ফুল ফুটাতে।
তবুও ফুল ফুটবে না।
আগুন মোমের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চলে গেলো।
মোম বেলকুনিতে অনেক ক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছে। বিকেল হয়ে যাচ্ছে তবুও আগুন মোমের খাওয়ার নাম নেই। মোমের চোখ আগুনকে খুঁজে চলেছে।
হঠাৎ মোমকে আরু এসে ভেতরের বুফে নিয়ে গেলো।
আগুন সেখানে খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে।
আগুন কে দেখে মোমের স্বস্তি হলো।
আগুন নিজেই আরু আর মোমকে সার্ভ করে দিচ্ছে।
আরু বলল -দাদাভাই আমি ফ্রেন্ডদের সাথে খাব। তুমি মোমের সাথে খাও।
উফফ সরি ভাবির সাথে খাও।
মোম আগুনের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।
আরু চলে যাওয়ার পর আগুন বলল-লজ্জা লাগছে তোমার???
মোম মাথা নিচু করে আছে।
-নেকাবটা ওপেন করো। দাড়াও আমি করিয়ে দিই।
– আমি খাব না।
-আমার শশুর শাশুড়ী, বড় শ্যালক ভাবি এবং আরবের খাবার উপরে ব্যাবস্থা করে দিয়েছি। উনারা এতোক্ষণে খেয়েছেন।
এখন আমার বউয়ের পালা এবং আমার।
আগুনের মুখ থেকে আমার বউ শব্দটা শুনে মোম লজ্জায় ভেঙে পড়ল।
মনে অজানা সুখ কাজ করছে।
এই সুখের উৎস কি সে জানেনা।
-প্রিয়তমা তুমি এতো লাজুক কেন???
আমাদের বাসরে তোমার কি হবে সেই কথা সব সময় ভাবি। কি ভাবে কি হবে তোমার???
মোম এবার লজ্জায় মরে যাওয়ার উপক্রম।
আগুন মোমের পায়ের উপর পা তুলে ঘষতে লাগল খেতে খেতে।
মোম নিষেধ করতে পাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে ছুটে পালাতে আগুনের কাছ থেকে। আগুনের স্পর্শ মোমকে শিহরিত করে তুলছে। মোম শরীর আচমকা থর থর করে কাপঁছে। কি করছে আগুন? মোম কে সুখেই মেরে ফেলবে?
.
.
.
আগুন মোমকে খাইয়ে দিচ্ছে সাথে নিজেও খাচ্ছে। মোম মোজা খুলে খেতে চাইলে আগুন মানা করে -প্রিয়তমা শুধু নেকাব খুললেই চলবে। কষ্ট করে মোজা খুলতে হবেনা।
আমি থাকতে তোমার নিজ হাতে খেতে হবেনা কখনো।
আমাদের সংসার শুরু হওয়ার পর তোমাকে কখনো নিজ হাতে খেতে দেব না। আমি তোমাকে খাইয়ে দেব। নাও হা করো তো? এই তো সাবাস !!!
আগুনের অজান্তে মোমের চোখে এক ফোটা পানি পড়ে গেলো।
.
.
দুই দিন ধরে আগুনের সাথে মোমের দেখা নেই। তবুও মোমের মনে হচ্ছে আগুন তার আশেপাশেই আছে। মোম দুপুরে নামাজ পড়ে কিছু ক্ষণ কোরআন তেলওয়াত করলো। কিছুটা অস্থিরতা দূর হল তার। মোম গাড়ি করে লাইব্রেরিতে যাচ্ছিল হঠাৎ একটা ব্ল্যাক কার এসে পথ আগলে দাড়ালো। আগুনকে দেখা যাচ্ছে। আগুন মোমের কাছে এসে বলল-তোমাকে কিডন্যাপ করতে এসেছি।
-মানে?
কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?
আগুন সানগ্লাস খুলে বলল- বাসর ঘরে নিয়ে যাচ্ছি তোমাকে।
মোম ঢোক গিলে বলল-জি?
আগুন চোখ লাল করে ডেবিল হাসি দিয়ে বলল – ইয়েস বাসরে যাচ্ছি মাই ডিয়ার প্রিয়তমা।
মোম হতভম্ব! কি সর্বনাশের কথা!!!
.
.
.
চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here