প্রিয়জন Part-09

0
3386

প্রিয়জন Part-09
Writer-Moon Hossain

আমি মোমের ভার্সিটি যাচ্ছিলাম। তখন দেখলাম রাস্তায় মোমের গাড়ি।
হ্যাঁ এটাই তো চকলেট কালারের টকটকে গাড়িটা।
পাশে অন্য একটা গাড়ি দেখলাম। কিছু ছেলে একটা মেয়েকে তাদের গাড়িতে তুলছে।মেয়েটা যে আমার প্রিয়তমা সেটা বুঝতে বেশি লেট হলো না।
আমার মাথায় প্রচন্ড লেভেলের ব্লাড উঠানামা করছে। আমি কোন কথা না বলেই ছেলেদের সামনে গেলেম।
ছেলে গুলো বলল….হ্যালো ব্রাদার রাস্তা ছাড়ুন।
-ছাড়াচ্ছি রাস্তা তোদের।
আগুন কথা গুলো বলেই বেল্ট খুলতে লাগল। তারপর আচমকা বেল্ট দিয়ে সবাইকে মারতে লাগল। মেরে মেরে একেকজন কে তক্তা বানালো।
ছেলে গুলো শুধু বলছিল… হ্যালো ব্রাদার কি করছেন? মারছেন কেনো?
ছেলেগুলো কে আগুন মেরে পুলিশ কমিশনার কে ফোন করল তারপর মোমের কাছে গেলো।
মোমের জামা কাপড় ছিড়ে গেছে অনেকাংশে।
আগুন মোমকে কোলে তুলে নিলো।
২য় বারের মতো আগুন মোমের এতো কাছে। আগুন মোমকে তার গাড়িতে বসালো তারপর কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো মোমের দিকে।
মোমকে দেখলে আগুন সবকিছু ভুলে যায়।
মনে হয় সে মৃত্যু আর জীবনের কাছাকাছি রয়েছে।
.
.
.
আগুন তার দৃষ্টি অনিচ্ছা সত্বেও নিচে নামিয়ে ফেললো।
আগুন নিজের ব্লেজারটা খুলে মোমের গায়ে দিলো।
মোমের জ্ঞান ফেরার আগে পর্যন্ত আগুন মোমের হাত ধরে বসে ছিলো।
মোমের জ্ঞান ফিরেছে।
মাথা এমন ব্যাথা করছে যে মনে হচ্ছে ব্লাস্ট হয়ে যাবে।
মোম আগুনকে দেখে চমকে উঠে নিজেকে ঢাকার প্রাণ পণ চেষ্টা করল।
আগুন বলল…রিলেক্স। শান্ত হও। তোমার কিছুই হয়নি। সময় মতো আল্লাহ আমাকে পাঠিয়ে ছিল তার নেক বান্দিকে বাঁচাতে।
.
.
মোম চোখ বন্ধ করে কি হয়েছে সেটা ভাবতে শুরু করলো।
না আরকিছুই ভাবতেই পাচ্ছে না মোম।
খুব কষ্ট হচ্ছে এখন।
মনে হচ্ছে নারী হয়ে জন্ম না নিলে এমনটা হতো না কখনোই।
এমন জঘন্য ঘটনায় একটা মেয়ের অন্তর আত্মা কি বলে সেটা একটা মেয়েই বুঝতে পারে।
মোমের চোখে পানি পড়ছে।
আগুনের কাছ থেকে পানি লুকানোর চেষ্টা করছে মোম।
মোম কম্বল জড়িয়ে ওপাশ ফিরে কাঁদছে।
আগুন কি করবে বুঝতে পাচ্ছেনা।
চোখের সামনে মোম কান্না করছে।
মোমের কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছেনা কিন্তু আগুনের মন শুনতে পাচ্ছে মোমের কান্না।।
.
.
আগুন বলল…মোম।
কোন সারা শব্দ নেই।
আগুন কয়েকবার মোম ডাকার পর মোম তার অশ্রু ভেজা নয়নে একবার এপাশ ফিরে আগুনকে দেখেই আবার ওপাশ ফিরে কাঁদতে লাগল।
.
.
আগুন বিছানায় বসতেই মোম চমকে উঠে একটু সরে পড়ল।
আগুন তৎক্ষনাৎ বিছানা থেকে উঠে পড়ল।
আগুন -রিলেক্স। জাস্ট রিলেক্স। আমি তোমার কাছে আসছিনা।
তোমার আচরণ স্বাভাবিক।
মোম নিচু স্বরে বলল…একা থাকতে দিন।
-হ্যাঁ চলে যাচ্ছি আমি।
তোমার কিছুটা একা থাকা প্রয়োজন।
শুধু দুটো কথা বলব।
তুমি এখন আমাদের অন্য একটা বাসায় আছো। তোমার যে সিচুয়েশন ছিল তাতে তোমাদের বা আমাদের বাসায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিলো না।
মোম নিজের দিকে একটু তাকলো। লম্বা শার্ট পড়ে আছে।
মোম যথাক্রমে নিজেকে আরোও আষ্টেপৃষ্টে কম্বল দিয়ে জরিয়ে নিলো।
মোম কিছু বলবে তার আগুন বলল… এখানে আমি দুই দিন এসেছিলাম তাই আমার কিছু পোষাক ছিলো।
এখানে একটা মেয়ে সার্ভেন্ট আছে । সে তোমাকে আমার পোষাক পড়িয়ে দিয়েছে।
ভয়ের কিছুই নেই।
আগুন একেবারে বাহিরে চলে গেলো না।
বেলকুনিতে গেলো। মোম কে একেবারে একা রেখে যাওয়া অসম্ভব। বাঙালি মেয়ে বলে কথা।
বাঙালি মেয়েরা যেমন কঠোর তেমনি নরম।
একটুতেই ভেঙে পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
.
.
আগুন বেলকুনিতে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে টেনশনে সিগারেট বের করলো। মাঝে মাঝে স্মোক করাও অভ্যাস আছে তার।
মোম অনেক ক্ষণ ঘুমিয়ে রইল।
মোমের ঘুমটা বেশ ভালো হয়েছে।
ঘুমের মধ্যে মোম একটা সপ্ন দেখে ফেলল।
আগুন তারদিকে রোমান্টিক মুড নিয়ে তাকিয়ে বলল…আমার শার্ট দাও।
-এখুনি?
-হ্যাঁ এখুনি। রাইট নাও।
-কিন্তু আমি তাহলে পড়ব কি?
– কিছুই পরার দরকার নেই। আমি তোমার স্বামী। আমরা আমরাই তো তাইনা।
কি আজব কথা!ভাবা যায়।
সপ্নটা দেখে মোম চমকে চমকে উঠছিলো ঘুমের ভেতরেই।
মোমের চোখের পাতা নড়ছে। আগুন বুঝতে পাচ্ছে মোম সপ্ন দেখেছে।
আগুন কিছুক্ষণ মোমের মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
মোমের ঘুম ভাঙলো প্রচন্ড হাসির আওয়াজে।
মোম কম্বল জড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে সোজা জানালা দিয়ে বেলকুনির দিকে তাকালো।
দুটো ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আগুনকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে আর আগুন বেবিদের মতো হাসছে।
এই প্রথম আগুন মন খুলে হাসছে।
হঠাৎ আগুনের চোখে চোখ পড়তেই মোম বিছানায় গিয়ে বসলো।
আগুন ভেতরে এসে বলল… এখন কেমন লাগছে?
-ভালো। মাথা নিচু করে বলল মোম।
-আগুনের দিকে আরেকবার চোখ পড়তেই মোম লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো। মোমের মনে হচ্ছে আগুন সব বুঝে ফেলেছে সপ্নের কথা।
আগুন মোম কে কিছু না বলেই চলে গেলো রুম থেকে।
একটু পরেই ফিরে এলো হাতে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে।
আগুন বলল…এই নাও ।
-কি এগুলো?
-কিছু পোষাক আর কিছু বোরখা।
আগুন মাথা নিচু করে বলল তোমার তো জামাকাপড় সব ছিড়ে ফেলেছে ঐ জানোয়ার গুলো আর বোরখাটাও ছিড়ে ফেলে দিয়েছে রাস্তায়।
মোমের চোখের পানি দেখার আগেই আগুন ঘর ত্যাগ করলো।
মোম কিছু না বলেই পোষাক গুলো দেখল।
মনে হচ্ছে পুরো শপিং মল তুলে আনা হয়েছে তার জন্য।
মোম ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই ধপ করে পড়ে গেলো।
এতোক্ষণ খেয়াল করেনি। মোমের পা অনেকটা ছিলে গেছে। এজন্যই সে হাটতে পাচ্ছিল না।
আগুন আওয়াজ শুনে মোমের কাছে এলো।
মোমের কাছে গিয়ে হেল্প করতে চাইলে মোম আপত্তি করলো।
আগুন স্টেচু হয়ে দাড়িয়ে রইল।
মোম আবারও পড়ে গেলো আর আগুনকে মানা করলো তাকে টাচ করতে।
মোম হাল ছেড়ে দিয়েছে।
উঠতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তার।
আগুনের চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি বের হলো মোমের অসহায়তা দেখে।
মোমের কষ্ট তার সহ্য হচ্ছে না।
মোমের কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে তার কেউ নেই।
হঠাৎ আগুন মোমকে কোলে তুলে নিলো। মোম আর আগুনের হ্রদ স্পন্দন বেড়ে হার্ট অ্যাটাকের উপক্রম হলো দুজনের।
মোম মুখ খুলতেই আগুন মোমের ঠোঁটে আঙুল দিলো।
মোমের সারা শরীর কেঁপে উঠলো আগুনের ছোঁয়াা পেয়ে।
আগুন মোমকে ওয়াশরুমে নামিয়ে দিয়ে বলল…একটু ওয়েট করো। ফুলি কে পাঠাচ্ছি তোমাকে হেল্প করতে। তুমি তো আমার হেল্প নেবেনা আমি তো বেগানা পুরুষ তোমার কাছে। আগুনের অভিমান ভরা কথা গুলো মোমের বুঝতে অসুবিধা হলো না।
আগুন ওড়না আনতে ভুলে গিয়েছে। বিদেশে কেউ ওড়না পরেনা তাই তার খেয়াল ছিলো না। এদিকে মোম ওড়না ছাড়া বের হতে
পাচ্ছেনা লজ্জায়। ফুলি জানাতেই আগুন বৃষ্টিতে আবার ওড়না আনতে গেলো। মোমকে সবুজ সালোয়ার কামিজে খুব সুন্দর লাগছে। আগুনের চোখে তাক লেগে আছে। আগুন মোমকে দেখে প্রচন্ড তৃষ্ণা অনুভব করলো। আগুন মোমের কাছে যেতেই মোম অন্যপাশে তাকালো।
মোম ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসে আছে।
করিডর থেকে ফিস ফিস আওয়াজ আসছে।
মোম একটু এগিয়ে গেলো খুব কষ্টে।
আগুন একটা পুতুল হাতে নিয়ে নিজে নিজেই কথা বলছে…. জানো তোমার মা তোমার বাবাকে কষ্ট দেয় শুধু। সব সময় দূরে সরিয়ে রাখে। একটুও কাছে আসতে দেয়না। সব সময় এমন ভাবে তাকায় যেনো আমি অন্য লোক। আগে না হয় জানতো না কিছু বাট এখন তো তোমার মা জানে আমি তোমার মায়ের….. আগুন পুরো কথা না বলেই থেমে গেলো মোমকে দেখে।
মোম আগুনের অভিমান ভরা কথা শুনে মনে মনে কেনো যেনো খুশি হলো।
আগুনের হাতের পুতুলটা মোমের ছোট বেলার হাড়ি যাওয়া পুতুল।
যেটা আগুন মোমের অজান্তে নিয়ে গিয়েছিলো।
.
.
.
আগুন মোমের জন্য কিছু খাবার নিয়ে এলো।
মোমের হাতেও কিছুটা চোট লেগেছে যার কারণে চামিচ ধরতে পাচ্ছেনা।
-আমি হেল্প করব?
-না, ধন্যবাদ। আমি পারব।
মোম পুরো ত্রিশ মিনিট ট্রাই করেও কিছু পারলো না। আগুনের মোমের অসহায় অবস্থা সহ্য হচ্ছেনা।
আগুন এবার রেগে খাবারের প্লেট নিয়ে ফ্লোরের দিকে ছূরে ফেলবে তখনই মোম বলল…কি করছেন আপনি? পাপ লাগবে। একটা দানার হিসেব দিতে হবে অপচয়ের। আর আপনি তো খাদ্যের অসম্মান করছেন। জানেন প্রতিদিন পৃথিবীতে কত লোক না খেয়ে থাকে?
-যেমন বর্তমানে তুমি না খেয়ে আছো।
পাপ লাগলে আমার লাগবে তাতে কার বাবার কি?
আমি কারও কেউ না।
-আপনি রাগ করেছেন??
-না আমি তোমার উপর কখনো রাগ করে থাকতে পারিনা।
আচ্ছা মোম আমি কি এতোটাই বাজে অপদার্থ যে আমার হেল্প নিতে তোমার সমস্যা হচ্ছে?
আমার হাতে খেলে কি তোমার পাপ লাগবে?
আমি খুব জঘন্য তোমার কাছে?
মোম মাথা নিচু করে আছে।
মোম কি বলবে ভেবে পেলো না।
আগুন মোমের সিচুয়েশন বুঝতে পেরে মোমের মুখে স্যুপ তুলে দিলো। মোম খাচ্ছে কোন কথা বলছেনা।
আগুন মনে মনে ভাবছে আমাকে একটুও বলছেনা আমি কি খেয়েছি নাকি।
ওর অসুস্থতার খবর শুনে আমার কি হাল হয়েছিল তা ও জানেনা।
ও অসুস্থতার কারণে খাইনি। এজন্য আমিও খাইনি। ও অসুস্থ, খেতে পারেনা আর আমি বুঝি ড্যাং ড্যাং করে খাব।
.
.
.
মোমের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে আগুন খেয়েছে কিনা।
কিন্তু লজ্জা করছে বলতে।
-কিছু বলবে?
-না
-তোমার চোখ দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলবে।
মোম নিশ্চুপ।
আগুনের হাতে খেয়ে মোমের জিহ্বার তেঁতো স্বাদ চলে গেছে। খুব ভালো লাগছে খেতে। এটা কে কি বলে মোম জানেনা।

.
.
আগুন পকেট থেকে ছোট পুতুলটা বের করলো।
মোম বলে উঠলো… আমার পুতুল।
-কি প্রুফ? এক রকম জিনিস থাকতে পারেনা। এটা আমার সাথে ছিলো বিদেশে থাকাকালীন। ওকে আমি খুব ভালোবাসি এবং আদর করি। আগুন মোমের দিকে তাকিয়ে পুতুলে একটা চুমু খেলো ডীপ। মোম লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে গেলো।
হঠাৎ আগুন বলল….আমি কিছু খাইনি এই কয়দিন।
আগুনের মুখে একটু স্যুপ তুলে দিলো মোম।
আগুন স্যুপ মুখে নিতে যাবে তখনই স্যুপের চামিচ নিচে পড়ে গেলো।
আগুন ভেবেছে মোম আবার তুলে দেবে কিন্তু মোম এটা করলো না। একটু নিচু হয়ে মোম ফ্লোরের স্যুপটা পরিষ্কার করে সোজা খুড়িয়ে খুড়িয়ে বেডে গেলো।
আগুনের প্রচন্ড অভিমান হলো।
অভিমান করে সে রুম থেকে চলে গেলো।
মোম ঘুমচ্ছিল হঠাৎ আগুন এসে বলল…রেডি হও। তোমাকে বাসায় দিয়ে আসব। মোম লক্ষ্য করলো আগুনের হাত থেকে রক্ত পড়ছে প্রচন্ড লেভেলের।
-আপনার হাতে রক্ত কিসের? কিভাবে এমন হলো?
ব্যান্ডেজ করান এখুনি। আগুন কোন কথা না বলে চলে গেলো। মোমের মনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। খুব খারাপ লাগছে তার।
মোম বোরখা পড়ে নিলো। আগুনের দেওয়া অনেকে গুলো পোশাক আর বোরখা থেকে একটা পোশাক আর একটা বোরখা নিলো।
আগুন ড্রাইভ করছে কথা না বলে। এদিকে আগুনের হাত থেকে রক্ত পড়ছে।
মোম বলল…আপনি ব্যান্ডেজ করুন।
আগুন ড্রাইভ থামিয়ে জোরে একটা ধমক দিলো মোম কে।
-তোমাকে বলতে হবেনা।
এ নিয়ে একটাও কথা বললে তুমি দেখবে আগুন কতটা হিংস্র হতে পারে।
আমি ব্যান্ডেজ করব না। আমার শরীরের সব ব্লাড বেরিয়ে গেলেও না। Do you understand?
.
.
.
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here