#প্রেমনগরে_প্রশান্তির_ভেলা,২৬,২৭
#আফসানা_মিমি
| ছাব্বিশ তম পর্ব |
সকলের মধ্যে বোমা ফাটানো কথা বলে নিজেই বোকা বনে গেলো নাদিফ। রুপ কানে হাত দিয়ে রেখেছে যেন পাল্টা কারোর কোন কথা কানে না আসে। রুপ লজ্জায় শেষ হয়ে যাবে নয়তো।
আজাদ সাহেব ছেলের পিঠে চাপড় দিয়ে বললেন,
” আগে বিয়েটা করে নে বাপ! তারপর না হয় বাচ্চার বাপ হোস।”
আজাদ সাহেব দাঁড়ালেন না, চলে গেলেন ঘরের বাহিরে। এখানে উপস্থিত থাকলে দেখা যাবে ছেলের জন্য নিজেই লজ্জা পাবে। কেননা ছেলেটা তো আজাদ সাহেবের’ই। স্বভাবের দিক দিয়েও আর কথার দিক দিয়েও বাবার মতো।
আয়েশা আজাদ এসে ছেলের কান মলে দিলেন,
” ওরে পাজি ছেলে! বাবা-মা যে ঘরে আছে দেখিসনি? মুখ এতো চলে কেন শুনি?”
” আহ মা ছাড়ো। তোমরা তো আমার জান প্রাণ। তোমাদের সামনে সবই বলা যায়। এই যে এই মেয়েকে যে ভালোবেসে ফেলেছি তাও বলে দিলাম। নতুন অতিথির আগমনের সাথে আমারও একটা ব্যবস্থা করে দাও এই আবদার করলাম।”
আয়েশা আজাদ ছেলের কথা শুনে কপালে হাত। স্বামীকে সংবাদ দিতে চলে গেলেন ঘরের বাহিরে। যাবার আগে অবশ্য সকলের উদ্দেশ্যে বলতে ভুললেন না যে, সন্ধ্যায় ছোট করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে সকলে যেন উপস্থিত থাকে।
আয়েশা আজাদ চলে যেতেই ফাহিমা এবার মুখ খুলল,
” ছোট ভাইয়া তুমি এতো খারাপ আগে জানতাম না। ছিহ্ তোমার মনে এসব চলে! রুপকে বিয়ের আগেই গর্ভবতী বানিয়ে দিলে? রুপকে এখন কে বিয়ে করবে।”
নাদিফ আজ অনেক খুশি। ফাহিমার কথাতেও কোন প্রভাব ফেলেনি নাদিফের উপর। নাদিফ লজ্জায় ফাহিমার মাথার পাশে এসে বসলো। ভাবির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
” বিয়ে তো আমি করলে অপরুপকে’ই করবো। আর বাচ্চা! সেটা তো খুশিতে বলে ফেলেছি। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে না! আমি চাচ্চু হবো। আমি তো আজ’ই মসজিদে মিষ্টি বিতরণ করবো।”
নাদিফ খুশিতে চলে যাচ্ছিলো ঘর থেকে। কিন্তু পর মুহূর্তে থেমে যায় রুপকে দেখে। রুপ কানে হাত রেখে বিড়বিড় করে কি যেন বলছে। নাদিফ মুচকি হাসে রুপের কান্ডে। ফাহিমার উদ্দেশ্যে বলে,
” ভাবি! দুই মিনিটের জন্য চোখ,কান,নাক, মুখ বন্ধ করে রাখো তো! ”
নাদিফের কথা শুনে বোকা ফাহিমা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর কিছু একটা বুঝে চোখ বন্ধ করে রইলো।
নাদিফ রুপের মুখে হালকা ফুঁ দিয়ে দিলো। রুপের চোখ আগে থেকে আরো বুঝে গেলো। এবার চোখ বন্ধ করা অবস্থায় শব্দ করে নাদিফের উদ্দেশ্যে বলল,
” একদম কথা বলবেন না ঠোঁট কাঁ’টা বদ লোক। আপনার জন্য আমার মান সম্মান সব শেষ। দূরে যান।”
রুপের কথা শেষ হতেই রুপ নিজের অধর কয়েক সেকেন্ডের জন্য অন্যের আয়ত্তে চলে যায় তা অনুভব করলো। রুপের শরীর কাঁপছে। অনুভূতিরা চোখ বন্ধ করা অবস্থায় জানান দিচ্ছে রুপের সামনে নাদিফ দাঁড়ানো অবস্থায় আছে। এবং দাঁত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছে। রুপ চোখ আস্তে করে খুললো। পিটপিট করে নাদিফের ঠোঁটের দুষ্টু হাসি রেখা। রুপের চোখ খোলা মাত্র’ই নাদিফ শব্দ করে রুপের নাকে চুমু এঁকে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। এদিকে রুপ নাদিফকে ইচ্ছে মতো বকে যাচ্ছে এরুপ কান্ডের কারণে,
” ভেবেছিলাম আজ আপনার মনের বাসনা পূরণ করবো। কিন্তু আপনি যে আস্তো বদ লোক! আপনাকে ভালোবাসি বলবো না না না। ”
” বালে দাও আমার একমাত্র জা! আমি তোমাকে সাহায্য করবো।”
————-
মধ্যাহ্নভোজের পর নাদিফ নিজের ঘরে চলে আসলো। কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে বাহিরে যাবে বলে। বিছানায় বসে জরুরী কাগজপত্র ঠিকঠাক করছিলো ঠিক সেই সময়ে নজর যায় টেবিলের উপর রাখা কাপড়ের উপর। নাদিফ ভ্রু যুগল কুঁচকে টেবিলের দিকে এগিয়ে আসে। শুভ্র রঙের পাঞ্জাবীর উপর ছোট্ট চিরকুট। নাদিফ ভীষণ অবাক হলো। প্রেম নীড়ে পাদিফের অবর্তমানে কেউ নাদিফের ঘরে প্রবেশ করে না। আর পাঞ্জাবী রেখে যাওয়া দূরের কথা।
অনেক কৌতূহলী হয়ে চিরকুট খুলে কালো কালি দিয়ে গোটা অক্ষরের লিখা চার লাইন কথা পড়া শুরু করল,
” সায়াহ্নের শেষ সময়ে, সূর্য অস্তমিত হয়ে যাবার পর মুহূর্তে অপেক্ষা করবো আপনার জন্য ঠিক সেই চিলেকোঠার ঘরে যেখানে আপনার নজরে আমি প্রথমে এসেছিলাম। আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট উপহার। আমি চাই শুভ্র রঙে রাঙিয়ে তুলুন আপনার দেহ। যেন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারি। আপনাকে ছুঁয়ে দিতে পারি।”
নাদিফ চিঠিখানা শক্ত করে বক্ষঃস্থলে মিশিয়ে নিলো। পাঞ্জাবীর উপর হাত বুলিয়ে আলমারিতে উঠিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।
——-
” আমি নৌকায় বিয়ে করবো এবং নৌকায় চড়ে শ্বশুর বাড়ি যাবো। কোন গাড়িতে চড়ে শ্বশুর বাড়ি যাবো না।”
ফোনে আকাশ রাইসার কথোপকথন হচ্ছে। ঘরে বসে বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে রাইসা প্রেম করে যাচ্ছে। রুপ আয়নার সামনে বসে আছে। রাইসার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে রাইসার পানে।
অপর প্রান্তে আকাশের মাথায় হাত রাইসার অসাধ্য কথা শুনে। ইট পাটকেল দ্বারা তৈরি শহরে নৌকা পাবে কই আকাশ তা চিন্তা করছে। কয়েক মিনিট চিন্তা করার পর আকাশ চট করে বুদ্ধি বের করে বসে। রাইসার কথার প্রেক্ষিতে বলে,
” শহরে নদী পাবো কোথায়? ডোবা আছে, চলবে তো? তুমি বললে ডোবা পথে আসবো। যেখান থেকে ফুলের সুবাসের বিপরীতে ডোবার ময়লার গন্ধ বের হবে। ব্যাপারটা কেমন আনন্দময় কষ্টদায়ক বুঝতে পারছো!”
আকাশের কথায় রাইসা ওয়াক ওয়াক করতে শুরু করলো। রুপ দৌঁড়ে এসে রাইসাকে ধরে বাথরুম পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেলো। রাইসাকে ইচ্ছে মতো বকছে রুপ। কি এমন শুনেছে যার জন্য বমি করছে!
আকাশ এতক্ষণে ফোন কেঁ’টে দিয়েছে নয়তো দেখা যাবে আকাশের পিচ্ছি হবু বউ ফোনের ঐপাশ থেকে তেড়ে এসে দুরুম দারুম কিল বসাচ্ছে পিঠে।
” কি হয়েছে তোমার? বমি করলে কেন? পেটে গ্যাস হয়েছে কি? ঔষধ আনবো?”
রুপের হাজার প্রশ্নে রাইসার উওর দিতে বাধ্য হয়,
” পেট ঠিক আছে আমার। গ্রাস-ট্যাস কিছুই হয় নি। ঐ আমার একটা ত্যাড়া হবু বর আছে না! তাকে আমার মনের সুপ্ত ইচ্ছের কথা বলেছিলাম। বিনিময়ে সে আমাকে এমন উওর দিয়েছে যে আমার অবস্থা এই হয়েছে।”
” তোমার ইচ্ছে টা কি শুনি?”
রাইসা আকাককে বলা কথাগুলো রুপকে সুন্দরভাবে শুনালো। রুপ হাসছে দুইজনের কথন শুনে। রুপ রাইসাকে জড়িয়ে ধরে নেয় মাথায় আদরী স্পর্শ করে বলে,
” ছোট বেলায় তুমি আমাকে ছাড়া কিছুই করতে না। তুমি জানো! ছোটবেলায় তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করার জন্য বড়োরা চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তুমি যাবে না বলে খুব কান্না করেছিলে। এতো কান্না করেছিলে যে তোমার একশত তিন ডিগ্রি জ্বর এসে গিয়েছিলো। জ্বরের ঘোরে তুমি শধু আমার নাম ধরে ডেকেছো। কেউ তোমার কাছে আসতে পারে নি। আমি সারারাত তোমার পাশে ছিলাম। এরপর থেকে কেউ আমাদের আলাদা করতে চায়নি। ছোট থেকে এই পর্যন্ত আমরা একসাথে। সেই ছোট্ট কাঁদুনে মেয়েটা এখন চুটিয়ে প্রেম করছে বরের সাথে। আমাকে ছাড়া দিব্যি চলতে শিখে গিয়েছে সে।”
রুপের কান্না মিশ্রিত কন্ঠস্বর। রাইসাও কাঁদছে। রুপের উদ্দেশ্যে বলছে,
” আমি কোথাও যাবো না রুপ! তোমার কাছেই থাকবো। ঐ ছেলে তো পটিয়ে আমাকে তোমার কাছ থেকে আলাদা করতে চাইছে।”
রুপ কান্নার মাঝেও হেসে উঠে রাইসার কথা শুনে। মেয়েদের জীবন যে এমনিই। মেয়েদের স্বামীর ঘরে যেতেই হবে।
————
সন্ধ্যা নেমেছে ধরণীতে কিছুক্ষণ পূর্বে। প্রেম নীড় আজ নীরব নয় বরঞ্চ মানুষে গমগম। রুপ সাধারণভাবে প্রতিদিনের ন্যায় পরিপাটি হয়ে আয়েশা আজাদকে সাহায্য করছেন কাজে। ফাহিমার বাবার বাড়ি থেকে বড়ো ভাই ভাবি এসেছেন। সোফার ঘরে ফাহিমার সাথে কথা বলছেন। এদিকে পাড়া প্রতিবেশীরাও আমন্ত্রণ পেয়ে ছুটে এসেছে ফাহিমাকে দেখবে বলে। পুরো বাড়িতে খাবারের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে চারাপাশ। হাসি-মজার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে অনবরত। আয়েশা আজাদ ক্ষণে রান্না ঘরে আসছেন তো ক্ষণে সোফার ঘরে যাচ্ছেন সকলের সাথে কথা বলতে। কাজ শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে। রুপ রান্না ঘর থেকে বের হয়নি একবারের জন্যও। লোকে কি বলবে তা ভেবে ঘাপটি মেরে বসে আছে। রুপের ইচ্ছে, মানুষজন কিছু সংখ্যক চলে গেলে বের হয়ে ঘরে চলে যাবে। রুপের যে অনেক কাজ বাকী।
” রুপ! অনেক কাজ করেছো। যাও তৈরি হয়ে আসো।”
আজাদ সাহেবের গম্ভীর স্বরে রুপ ভয় পেয়ে যায়। এই প্রথম আজাদ সাহেব রুপের সাথে এতো কঠিনস্বরে কথা বলছে। রুপ মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছিলো আজাদ সাহেবের কথায় দাঁড়িয়ে রইলো,
” আমার ছেলেকে মানুষ বানানোর জন্য ধন্যবাদ মা! তুমি জানো না কি উপকার করেছো তুমি আজ। এভাবেই আমার ছেলের পাশে থেকো সবসময় এই দোয়া করি।”
আজাদ সাহেব চলে গেলেন। রুপ ভাবতে লাগলো এমন কি করেছে যার কারণে ধন্যবাদ জানালো। রুপ ধীরেপায়ে উপরে চলে গেলো। এখন যে তৈরি হতে হবে রুপকে নাদিফের জন্য।
—–—–
হালকা হেলানো বাতাস বইছে চারপাশে। হালকা বাতাসে চিলেকোঠা ঘরের সদ্য লাগানো সাদা পর্দা উড়ছে। রাতের আঁধারে চিলেকোঠা ঘর গাঢ় অন্ধকার হয়ে আছে। নাদিফ রুপের দেখা পায়নি আজ সারাদিন। নাদিফের কাছ থেকে এক প্রকার পালিয়ে বেড়িয়েছে। নাদিফদের আজ সারাদিন অস্থিরতায় কেটেছে। কখন সন্ধ্যা আসবে সেই অপেক্ষায় ছিলো যেন। কাঙ্খিত সময় এসে গিয়েছে। ঘর ভর্তি মানুষজন সকলের অগোচরে নাদিফ আস্তে পায়ে ছাদে চলে আসে।
চিলেকোঠা ঘর গাঢ় অন্ধকার। নাদিফ প্রবেশ করতে দখিনা বাতাস গা ছুঁয়ে দিলো। টেবিলের উপর ছোট ছোট মোমবাতি জ্বালানো। মাঝখানে চকলেট কেক যার উপর লিখা ‘ভালোবাসি’। নাদিফ চোখ বন্ধ করে হাসলো। আশেপাশে কাতর চোখ খুঁজে চলছে রুপকে। নাদিফ অপরুপ বলে একবার হাক ছাড়লো।
চারপাশ স্তব্ধ পরিবেশ। কিছু সময় পর নাদিফের কর্ণধারে নুপুরের রিনিঝিনি আওয়াজ আসে। নাদিফ মুচকি হাসে। নাদিফ জানে রুপ তার আশেপাশেই আছে। নাদিফ রুপের উদ্দেশ্যে উঁচু আওয়াজে বলে,
” অপরুপ! ভালোবাসি বলে লুকিয়ে আছো কেন? আমি কিন্তু চাইলে তোমাকে খুঁজে বের করতে পারি। তুমি কি চাও আমি এমন কাজ করি! সত্যি বলছি এমন কিছু যদি চাও তাহলে তোমাকে যেখানে পাবো সেখানেই চুমু খাবো।”
রুপের নুপুরের রিনিঝিনি আওয়াজ এবার স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। অন্ধকারে রুপ নাদিফের সামনে এসে দাঁড়ালো হাতে বড়ো মোমবাতি যার আলোতে স্পষ্ট রুপকে দেখা যাচ্ছে। নাদিফ অপলক দৃষ্টিতে রুপকে দেখছে। চশমাবিহীন চোখে গাঢ় কাজল এঁকেছে রুপ। ঠোঁট হালকা গোলাপি জেল যা মোমবাতির আলোতে চিকচিক করছে লতার মতো কেশব খোলা হালকা বাতাসে যা উঠছে, পরিধানে নাদিফের দেয়া লাল জামাটা। নাদিফ মাতাল দৃষ্টিতে অপরুপকে দেখছে। রুপ লজ্জায় নাদিফের পানে তাকাচ্ছে না এক ধ্যানে মোমবাতির দিকে তাকিয়ে আছে।
” এসব আয়োজন কেন?”
” আপনার জন্য।”
” আমি কি রেগে আছি! আমার রাগ ভাঙাতে এসব করেছো?”
রুপ হাসছে। রুপ জানে নাদিফ ইচ্ছে করেই এসব বকছে যেন রুপ মুখ ফসকে মনের কথা বলে ফেলে।
” কিছু বলো অপরুপ!”
নাদিফের মাতাল স্বরে রুপের শরীরে আলাদা শিহরণ বইয়ে যাচ্ছে। রুপ কাঁপা কাঁপা কন্ঠস্বরে বলল,
” চোখ বন্ধ করুন নাদিফ! আপনার চাহনি সহ্য হচ্ছে না।”
নাদিফ হাসছে শব্দ করে। রুপের কাছে এসে রুপের কোমড় চেপে ধরে নিজের কাছে এনে বলল,
” চোখের কি দোষ! চোখের সামনে অপরুপকে দেখলে তো নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাই।”
রুপ একহাতে নাদিফের ঠোঁট চেপে ধরে বলল,
” সবসময় লাগামহীন কথাবার্তা। আপনি খুব নির্লজ্জ, নির্দয়। আমাকে সমসময় লজ্জায় ফেলতে মজা পান। চুপচাপ আমার কথা শুনুন। কথার মাঝে কোন টু শব্দ করবেন না।”
নাদিফ হাসছে রুপের অস্থিরতা দেখে। নাদিফ আজ রুপের সব কথা শুনবে। যেভাবে রুপ বলতে চাইছে সব বুঝবে। নাদিফ মাথায় সায় জানিয়ে দেয়। রুপ এবার বলতে শুরু করে,
” আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি নাদিফ! আপনার ভালোবাসার কাছে আমি আত্মসমর্পণ করেছি। আপনার পাগলামিতে সায় দিচ্ছি। আপনার বাবা-মার কাছ থেকে আদর ভাগ করে নিচ্ছি। আপনার সকল কিছুতে ভাগ বসাতে চাইছি। অনুমতি দিবেন আমায়?”
নাদিফ হাসছে। তৃপ্তির হাসি। অন্তরের গহ্বরে শীতল হাওয়া বইছে। নাদিফ রুপকে ছেড়ে দিয়ে শব্দ করে রুপের ললাটে অধর ছুঁয়ে দিলো। রুপের চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। নাদিফ শক্ত করে রুপকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আজ দুজনের মুখে তৃপ্তির হাসি। নাদিফ এতো খুশি হয়েছে যে রুপের সারা মুখে অধর ছুঁয়ে দিয়ে আবারও জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে,
” তুমি জানো না আজ আমাকে কতোটা আনন্দিত করেছো অপরুপ! আমি আজ পাগল হয়ে যাচ্ছি খুশিতে। তোমার এই কথা শোনার জন্য কতোটা ব্যাকুল হয়েছিলাম বুঝাতে পারব না। ভালোবাসি রুপ, অনেক বেশিই ভালোবাসি। থাকতে পারব না তুমি হীনা। আমার সকল প্রশান্তি যে তোমাতেই খুঁজি।”
রুপ হাসছে সাথে যেন সকল কিছুই হাসছে। রুপ নাদিফের বক্ষঃস্থলে মিশে মিনমিন কন্ঠস্বরে বলে,
” আমিও খুব ভালোবাসি আপনাকে।”
রুপ নাদিফকে ছেড়ে দেয়। নাদিফকে টেনে হাসিমুখে টেবিলের কাছে নিয়ে যায়। একসাথে দুজন কেক কেঁটে একে অপরকে খাইয়ে দেয়।
রুপ নাদিফ বর্তমানে চিলেকোঠা ঘরের দখিনা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে হালকা বাতাস বইছে। রুপ নাদিফ তা অনুভব করছে।
আচমকা নাদিফ রুপের হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে নেয়। রুপ কিছু বলে না একবার হাতের দিকে দৃষ্টিপাত করে আবার বাহিরে মনোনিবেশ করে। কিছুক্ষণ পর রুপ অনুভব করে নাদিফ স্ব-যত্নে রুপের হাতে কিছু পরিয়ে দিচ্ছে। রুপ আবারো হাতের দিকে দৃষ্টিপাত করে। টিমটিম আলোতে স্পষ্ট লাল রেশমি চুড়ি দেখা যাচ্ছে রুপের হাতে। রুপ অবাক চোখে নাদিফকে দেখছে,
” আসলামপুরের বাজারে দেখেছিলাম এক দোকানে চুড়িগুলো। তোমাকে কাপড় দিয়েছি কিন্তু অলংকার দেইনি। আসলামপুরে থাকতেই পরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু সুযোগ পাইনি। আজ সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করতে পারলাম না।”
রুপ হাতের চুড়ি নেড়েচেড়ে দেখছে। চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজের তালে তালে রুপও হাসছে। রুপের হাসিতে নাদিফ আবারও ঘায়েল হচ্ছে। নাদিফ রুপের আনন্দের মাঝে আরেকটা সু সংবাদ যোগ করল,
” আমার চাকরি হয়েছে অপরুপ! এক বছর বাহিরে কাজ করে বাবার অফিস সামলাবো।”
রুপ বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাদিফের পানে। রুপ ভাবছে আজাদ সাহেবের কথা। আজাদ সাহেব কি এই কারণেই রুপকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলো!
” আপনি কি রেগে আছেন অমার উপরে?”
” না তো! কেন?”
” এমনি মনে হচ্ছে।”
রুপ নাদিফের প্রেমালপনের মাঝে কারোর আগমন ঘটে। আর সে হচ্ছে ফাহিমা। রুপ নাদিফকে পাশাপাশি দাঁড়ানো অবস্থায় দেখে চিৎকার করে বলে উঠে,
” ও শ্বশুর গো! শাশুড়ি আম্মা গো দেখে যাও তোমার ছেলের মতিগতি! মেয়েটাকে আজ মেরেই ফেলবে মনে হচ্ছে! ও ছোট ভাইয়া, তুমি এতো খারাপ হলে কবে থেকে? মেয়েটাকে কি বিয়ে ছাড়া গর্ভবতী বানিয়ে দিবে বলে ভেবেছ?”
রুপ নাদিফ একে অপরের থেকে দূরে সরে গেলো। নাদিফের কপালে হাত। তার ভাবি যে এমন তীর মারবে কে জানতো! নাদিফ তো মনে মনে রুপকে বকে যাচ্ছে। না রুপ আজ ভালোবাসি বলতো! না এতো কিছু হতো!
আজ মনে হয় এদের বিয়ে দিয়েই ছাড়বে আজাদ সাহেব আর আয়েশা আজাদ।
কি বলেন সবাই! ফাহিমাকে কি বলবেন সবাই?
চলবে………..
#প্রেমনগরে_প্রশান্তির_ভেলা
#আফসানা_মিমি
|সাতাশ তম পর্ব |
” বলো মা আলহামদুলিল্লাহ, কবুল!”
সারা ঘরে পিনপতন নীরবতা। উপস্থিত মানুষজনের কেউ কেউ একে অপরের কানে ফিসফিসিয়ে কিছু বলছে তো কিছু মানুষের মুখে আনন্দের হাসি দেখা যাচ্ছে। প্রেম নীড়ে মধ্যরাতে বিয়ে হচ্ছে। বিয়ের পাত্র আজাদ সাহেবের ছোট ছেলে নিবরাজ নাদিফ এবং পাত্রী রিনিঝিনি রুপ। পাত্র-পাত্রী দুজনকে একসাথে বসানো হয়েছে সোফার ঘরে। উপস্থিত আছেন অনুষ্ঠানের আগমনকৃত সকলেই। নতুন করে শুধু দুইজন এসেছে এই রাতে। ফয়সাল, ফাল্গুনী। ফয়সাল ফাল্গুনী দুজনের চোখে বিস্ময়। আপাতত দুজন হা করে রুপ, নাদিফকে দেখে যাচ্ছে। রুপ নিশ্চুপ, কবুল বলছে না। বিয়ে নামক বন্ধনের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না আজ, এই মুহূর্তে। অপরদিকে নাদিফের মাথা নত লজ্জায়। নাদিফের বড্ড আফসোস হচ্ছে এই ভেবে যে, আজ’ই রুপ ভালোবাসার কথা বলেছে আর আজ’ই বিয়ে হতে হচ্ছে! কোথায় নাদিফ ভেবেছিলো কিছু মাস চুটিয়ে, লুকিয়ে প্রেম করবে! তা আর হলো না। শুধুমাত্র ফাহিমার জন্য।
সময় গড়িয়ে পড়ছে। রুপের কোন নড়াচড়া নেই। শরীর, হাত কাঁপছে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। উপস্থিত সকলে রুপের কাজে কানাঘুষো করছে। আয়েশা আজাদ হয়তো রুপের মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন। রুপের পাশে বসে হাতের উপর ভরসার হাত রাখলেন। রূপ আয়েশা আজাদকে পাশে পেয়ে যেন ভরসা পেলো। আস্তে করে কন্ঠনালী দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ কবুল’ উচ্চারণ করলো।
তিনবার আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলে শরীয়ত মোতাবেক নাদিফের স্ত্রী রুপে নতুনভাবে প্রেম নীড়ে নিজের জায়গা করে নিলো অপরুপ। নাদিফের কবুল বলার পর মুনাজাতের মাধ্যমে বিবাহের পর্যায় শেষ হয়।
এখন আসি আমাদের ভোলা ভালা ফাহিমা ভাবির দিকে। ফাহিমা সবার থেকে আলাদা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সোফার ঘরের এক কোণে। ফাহিমার সামনে অগ্নিরুপ ধারণ করে কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে নাবিল।
” আমি তো শুধু বলেছি বাচ্চার কথা, আর বেশি কিছু বলেছি?”
ফাহিমার নিরীহ মুখখানা দেখে নাবিল প্রায় গলেই যাচ্ছিলো কিন্তু পর মুহূর্তে ফাহিমার করা কাজের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় আবার শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নাবিল। নাবিলের ভাবগতির কোন পরিবর্তন না পেয়ে ফাহিমা এবার কান্না করে দিয়ে বলে,
” তুমি আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না। তোমার আরেকটা বউ আছে তাকেই ভালোবাসো। এখন তো আমি তোমার বাচ্চার মা এখন তো অন্যদের দিকে না তাকাও! আমার কি দোষ বলো! আমি চাই ভালো কিছু করতে হয়ে যায় তার উল্টো।”
নাবিল পড়েছে মহা বিপদে। তাঁর বোকা বউটা যে এভাবে কান্না করবে ভাবতে পারেনি। সকলের অগোচরে ফাহিমার মুখ চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে,
” কান্না করে না আমার ফামু! বাবুও কান্না করবে তোমার কান্না দেখে। চলো তোমাকে আচার দেই। আর যা করেছো তো করেছো’ই। এখন থেকে আমি তোমার আশেপ্শে থাকবো সর্বদা যেন আর উল্টা পাল্টা কিছু বলতে না পারো। ”
ফাহিমার মুখে জয়ী হাসি। নাবিলকে নিয়ে চলে গেলো রান্না ঘরে। এদিকে নাবিল ভাবছে কয়েকঘন্টার আগের কথা।
কয়েকঘন্টা আগে,
নাবিল মাত্র বাসায় প্রবেশ করেছে। নাদিফের ফোন পেয়ে শুধু পারেনি হেলিকপ্টারে চড়ে উড়ে আসতে প্রেম নীড়ে। প্রেম নীড়ে আসতেই ফাহিমার কণ্ঠস্বর নাবিলার কর্ণধার আসে। মুহুর্তেই নোবেলের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়। সোফার রুমে থাকা উপস্থিত সকলের মাঝখানে গুঞ্জন শোনা যায় ইতিমধ্যে। নাবিল এতে ভয় পেয়ে যায়। প্রেম নীড়ের সম্মানহানী যেন না হয় এজন্য সকলের উদ্দেশ্যে হেসে বলে,
” আসলে আপনাদের দুইটি কারণে এখানে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। একটি হচ্ছে আমার স্ত্রী গর্ভবতী এই খুশিতে। আরেকটি হচ্ছে, আমরা আমাদের ছোট ভাই নাদিফের বিয়ে আয়োজন করেছি ঘরোয়াভাবে। আপনাদের জন্য এই সংবাদ সারপ্রাইজ ছিলো। আমার স্ত্রী একটু দুষ্টুমি করছে আর কি। কিছু মনে করবেন না। আপনারা বসুন খাওয়া-দাওয়া করুন। আমরা সকল কিছুর ব্যবস্থা করে আসছি।”
আজাদ সাহেব এবং আয়েশা আজাদ তখন নিজ ঘরে ছিলেন। ফাহিমাকে কি উপহার দিবেন তা আলোচনা করছিলেন। আসলামপুরে থাকা অবস্থায় ফাহিমা আয়েশা আজাদের কাছে কোমরের বিছার আবদার করেছিলেন আয়েশা আজাদ সে আবদার পূরণ করার জন্য কোমরের বিছা অর্ডার করেছেন এবং সেটা আগামীকাল হাতে আসবে। এসব কিছু আজাদ সাহেবের সাথে আলোচনা করছিলেন। ফাহিমার কথা তখনও তাদের কর্ণধারা পৌঁছায়নি।
এদিকে নাবিল দৌঁড়ে ছাদে চলে আসে। ফাহিমা অপরাধীর ন্যায় নাদিফের পানে তাকিয়ে আছে। রুপ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নীচু করে। নাদিফ এপাশ-ওপাশ পায়চারি করছে। কারণ এতক্ষণে নাদিফ বুঝে গিয়েছে যে ফাহিমার এ কথা অনুষ্ঠানে চলে আসা সকল অতিথিরা জেনে গেছে। এদিকে ফাহিমা নিজের কথায় নিজেই অনুশোচনা বোধ করছে। বারবার দেবরের কাছে ক্ষমা চেয়েছে।
” তোমার কি আক্কেল জ্ঞান বলতে কিছুই নেই? এভাবে কেউ বোম ফাটায় নাকি? এখন কি হবে! ভাই রে আজ তোকে বিয়ে করতে হবে রুপকে। কোথায় চেয়েছিলাম ছোট ভাইয়ের বিয়েতে আনন্দ ফুর্তি করবো, নাচ গান করবো তা আর হলো না। তোমার জন্য সব ভেস্তে গেল ফাহিমা।”
ফাহিম স্বামীর কথার উপর কোন কথা বলেনি। ফাহিমা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। এদিকে নাদিফ প্রেম করতে এসে নিজেই জালে ফেঁসে গিয়েছে।
” কিরে ছোট! কি করবি এখন? বিয়ে তো করতেই হবে। আমি নিজে বলেছি না হলে প্রেম নীড়ের মান সম্মান সব শেষ। আমার বউয়ের কথার জন্য তুদের কাছে ক্ষমা চাইছি।”
নাবিলের কথা শুনে রূপের মাথায় হাত। নাদিফ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে বড়ো ভাইয়ের পানে। এর মধ্যে আয়েশা আজাদ এবং আজাদ সাহেব উপস্থিত হয় ছাদে। সকলকে একসাথে দেখে প্রশ্ন করেন কি হয়েছে। নাবিলের মুখে সব ঘটনা শুনে আজাদ সাহেব হেসে বললেন,
” আলহামদুলিল্লাহ এতদিনে আমার ছেলের বউ একটা কাজের কাজ করেছে। এই কে কোথায় আছিস ঢাক ঢোল বাজা। আমার ছোট ছেলের বিয়ে হবে আজ!”
শুরু হয়ে গেছে ড্রামা পরিবারের ড্রামা। আয়েশা আজাদ স্বামীর কথা প্রতুত্তরে বললেন,
” বিয়ে হবে তা তো বুঝলাম। কিন্তু কথা হচ্ছে এত রাতে তুমি ঢাক ঢোল কোথায় পাবে? আমি বলি কি! রুপ নাদিফের বরঞ্চ শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে পরিয়ে দাও। দুই সপ্তাহ পর ঢাক ঢোল পিটিয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান করবো।”
স্ত্রীর কথাটা আজাদ সাহেবের খুবই পছন্দ হলো। সকলে একসাথে নিচে নেমে গেল।
এদিকে আয়েশা আজাদ রূপকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। আয়েশা আজাদের একটি সুতির শাড়ি পড়িয়ে দিলেন রুপকে। রুপের সাজগোজ আগেরটাই শুধু ঠোঁট একটু গাঢ় লাল রং লাগিয়ে দিয়েছেন আয়েশা আজাদ। এইটুকুতেই রুপকে অপরুপ লাগছে।
এরপর কাজী সাহেব বাসায় আসতেই রুপকে নিয়ে সোফার ঘরে বসিয়ে দিলেন নাদিফের পাশে।
বর্তমান,
বাড়ির সকল মেহমান বিদায় নিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। বাকি রয়েছে কাজী সাহেব। উনাকে পাওনা বুঝিয়ে বিদায় করবেন নাবিল। এখন রাত দুইটা বাজে ত্রিশ মিনিট। শহরে রাতে বিয়েটা সাধারণ বিষয়। মানুষ আসা-যাওয়া চলতেই থাকে শহরের বিয়েতে।
” বলছিলাম কি ম্যাডাম আমাদের একটা ব্যবস্থা করে দিন না আজকে। মানে হয়েছে কি আপনার বিয়ে দেখে আমাদের ইচ্ছে করছে বিয়ে করতে। এখন এই বয়সে পরিবারকে তো বলতে পারিনা তাই আপনাকে বললাম।”
এই প্রথম ফয়সাল রুপের সাথে চোখে চোখ মিলিয়ে কথা বলছে। এতদিন রুপ ছিল ফয়সালদের ম্যাডাম সাথে নাদিফের পছন্দ করা মানুষ। কিন্তু এখন হয়ে গিয়েছে নাদিফের বিবাহিতা স্ত্রী। এখন উল্টাপাল্টা কিছু বললে কেউ কিছু বলবে না। আর যদি নাদিফ কিছু বলতে আসে তাহলে ফয়সাল বলবে ভাবির সাথে মজা করছে।
ফাল্গুনের চোখ বড়ো হয়ে যায় ফয়সালার কথা শুনে। ছেলেটার মাথা সত্যিই গিয়েছে। ফাল্গুনী তো রাজি নয় এই ছেলের গলায় ঝুলতে। সারাদিনে যে কতবার এই ছেলে ফাল্গুনীকে ভালোবাসি বলে তার হিসেব নেই কিন্তু ফাল্গুনে তো পাত্তা দেয় না। কারণ ফাল্গুনের জানা আছে এই ছেলে দুই দিন পর অন্য কোনো মেয়েকে দেখলে ওই মেয়ের পিছনে ঘুরবে। তাই ফাল্গুনী এই ফয়সালের ফাঁদে পা দেবে না কখনো।
এদিকে ফয়সালার কথা শেষ হতেই নাদিফ বলে উঠে,
” বাচ্চারা এসব বলে না। বাচ্চাদের মুখে এসব কথা শোভা পায় না। আগে বড়ো হও। বড়ো ভাইয়ের মতো সুদর্শন হও। উঁচু লম্বা হও মোটাতাজা হও তারপর বিয়ে করিও।”
নাদিফের কথা ফয়সাল বুঝতে পেরেছে কিনা জানা নেই। কিন্তু ফাল্গুনী না বুঝে দৌঁড়ে চলে যায় রুপের ঘরে। আর ফয়সাল চলে যায় নাদিফের ঘরে।
এদিকে রাইসা আকাশ প্রেম আলাপে ব্যস্ত। রাইসা শুধুমাত্র রুপের কবুল বলার সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। আর বাকিটা সময় প্রেম নীড়ের পেছনের বারান্দায় একে অপরের হাতে হাত রেখে প্রেম আলাপ করতে ব্যস্ত তারা।
মেহমানদের খাবার খাওয়া হলেও প্রেম নীড়ের পরিবারের সদস্যদের কারো খাওয়া হয়নি এ পর্যন্ত। আয়েশা আজাদ রাইসার নাম ধরে হাঁক ছাড়লেন।রাইসা চটজলদি আকাশের হাত ছেড়ে চলে আসে আয়েশা আজাদের কাছে। এরপর ফাল্গুনীকে সাথে নিয়ে তিনজন খাবারের টেবিলে খাবার সাজায়।
ফাহিমা এই এক ঘন্টার ভেতরে এক ঘুম দিয়ে উঠেছে। নাবিল টানতে টানতে ফাহিমাকে নিয়ে আসে খাবার টেবিলে। এই অবস্থায় খাবার খেতে হবে। না হলে মা সন্তানের ক্ষতি হবে।
” আজ তোমার কি হবে অপরূপ?”
খাবারের টেবিলে রুপ নাদিফ পাশাপাশি বসেছে। সকলের অগোচরে নাদিফ রূপের কানে ফিসফিসিয়ে কথাটা বলল। নাদিফের কথা শুনে রুপের কান গরম হয়ে আসে। রুপ ভাবছে,
” আগে তো ঠোঁট কাটা প্রেমিক পুরুষ ছিলো মানুষটা। কিন্তু এখন হয়ে গিয়েছে বিবাহিত পুরুষ। এখন তো এই লোকটার ঠোঁট চলতেই থাকবে। একদম লাগামহীন হয়ে যাবে। যখন তখন কথার মাধ্যমে আক্রমণ করা শুরু করবে। এই যে এখন শুরু হয়েছে তার লাগামহীন কথাবার্তা! আমার কি হবে!”
রুপ ভাবনা থেকে বেরিয়ে নাদিফের কথার প্রত্যুওরে বলল,
” আজ কিছুই হবে না। চুপচাপ খান আর ঘরে গিয়ে ঘুমান।”
নাদিফ হাসছে রুপের কথা শুনে। এদিকে ফাহিমা রুপ নাদিফকে দেখছে
ফাহিমার চোখে রুপ নাদিফকে অনেক সুন্দর মানিয়েছে। ফাহিমা গালে হাত দিয়ে জোরে বলে উঠে,
” তোমাদের দেখে এখন আমার আবার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। জামাই রাজি হয়ে যাও। চলো আবার বিয়ে করি।”
পরমুহুর্তে শ্বশুরের উদ্দেশ্যে ফাহিমা বলে উঠে,
” ও শ্বশুর আব্বা আপনার ইচ্ছে করছে না বিয়ে করতে!”
ফাহিমার বোম ফাটানো কথা শেষ হবার আগেই আজাদ সাহেব কেশে উঠেন। এই বয়সে বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় ফেটে পড়েন। লজ্জায় দাড়ির আড়ালে আজাদ সাহেবের গাল দুটো লাল টমেটো হয়ে গিয়েছে।
আয়েশা আজাদ চোখ রাঙিয়ে পুত্রবধূর দিকে তাকালেন। এই মেয়েটার উদ্ভট কথা কবে বন্ধ হবে কে জানে!
সকলের মুখের ভাবগতি দেখে ফাহিমা আবার বলে উঠল,
” আরে সবাই এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে? আমি তো বলতে চাইছি যে, প্রেম নীড়ে একসাথে তিন জনের বিয়ে হোক। মানে আমার আর নাবিলের, বাবা-মার আবারও বিয়ে হোক। নাদিফ রুপের নতুন করে বিয়ে হোক। আমার কথা শেষ হলো না আর সবাই আমাকে বকছো। আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাচ্ছো। যাও খাবো না আমি।”
ফাহিমা খাবার রেখে রাগ করে গিয়ে বসলো সোফায়। ফাহিমার পিছু কিছু নাবিল চলে গেলো খাবার হাতে নিয়ে। এই রাতে ফাহিমাকে এক টুকরো রুটি হলেও খাওয়াতে হবে, নয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বে।
সকলের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ঘুমোতে যাচ্ছে যার যার ঘরে। এখন বাজে রাত তিনটা পঁচিশ মিনিট। একসাথে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে সবাই। সবার পিছনে ফাহিমা আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। আয়েশা আজাদ এবং আজাদ সাহেব একটু আগে নির্দেশ দিয়েছেন সবকিছু নিয়ে যেন নাবিল নিচে চলে আসে। এই অবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা ভীষণ রিক্স।
আর পাঁচটা বিয়ের মতো রুপ নাদিফের বিয়ের পর যে স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকবে সেটা বিষয় না। রুপ নাদিফ নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিয়েছে যে তারা আগের মতই থাকবে যার যার ঘরে। যেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে আবারো কাগজে-কলমে বিয়ে পড়ানো হবে সেদিন একসাথে থাকবে। খাবার টেবিলে সকলেই রুপ নাদিফের কথায় মত দিয়েছে।
এদিকে উপরের তলায় পর পর এক সিরিয়ালে আজাদ সাহেব তারপর ফাহিমা তারপর রুপ এবং সর্বশেষে নাদিফের কামরা বিদ্যমান। যে যার যার ঘরে প্রবেশ করছে। আয়েশা আজাদ, আজাদ সাহেব মাত্র ঘরে প্রবেশ করলেন এমন সময় ফাহিমার কথা সকলের কর্ণধারা আবারো পৌঁছায়,
” আরে রুপ, তুমি নিজের ঘরে প্রবেশ করছো কেন? ছোট ভাইয়ার ঘরে যাবে না? আজ না তোমাদের বাসর রাত! এই রাতে আলাদা থাকে নাকি?”
ফাহিমার কথা শুনে আজাদ সাহেব শব্দ করে ঘরের দরজা আটকে দিলেন। রাইসা লজ্জায় অনেক আগেই ভেতরে চলে গিয়েছে। রুপ নাদিফ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাহিরে। এদিকে নাবিল ফাহিমার মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে টেনে ঘরে নিয়ে চলে গিয়েছে।
রুপ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে বাহিরে। শরীর কাঁপছে ভয়ে, লজ্জায়। নাদিফ আর ঘরে প্রবেশ করলো না। এগিয়ে আসছে রুপের কাছে। আজ রুপকে লজ্জায় রাঙা করে দিবে নাদিফ। নাদিফের মুখে দুষ্টু হাসির রেখা। রুপের কাছাকাছি এসে ফিসফিসিয়ে বলল,
” কি ম্যাডাম! বাসর করবেন না?”
চলবে…….