প্রেমনগর
পর্বঃ১১ +১২
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
তুলি ভর্য়াত চোখে রাফির দিকে তাকিয়ে আছে। রাফি তুলিকে খেতে বললো। তুলির হাতে পাউরুটি। তুলি কাচুমাচু হয়ে বাস স্টপের একটি বেঞ্চে বসে পাউরুটির দিকে তাকালো। সারাদিন এক ফোঁটা দানাও পেটে পরেনি। একটা রাস্তার মোড়ের কাছে এসে শুধু ট্যাপের পানিটুকু খেয়ে নিয়েছিলো। টাকা পয়সা সাথে কিছুই নেই। পরনে লাল বেনারসি শাড়ি। কপালে লাল টিপ। মাথার চুল গুলো খোলা। দুই হাত ভর্তি কাচের লাল চুড়ি আর এক জোড়া সোনার বালা।
.
পাউরুটিতে কামড় দিতেই তুলির চোখ দিয়ে টপ টিপ করে পানি পরতে শুরু করলো।
রাফিঃ এই মেয়ে কাদঁছো কেন? খাও। আর ভয় নেই।
পানি ভর্তি চোখ নিয়ে তুলি উপরের দিকে তাকালো। ভয়ে মুখ দিয়ে কথাও বের হচ্ছে না।
রাফির ফোন বাজতে থাকে। রৌদ্র ফোন দিয়েছে।
রাফিঃ দোস্ত আমি মোড়ের কাছে দইঘর দোকানটার সামনে আছি । মেয়েটি আমার সাথেই আছে। তুই সামনে এগোতে থাক।
.
হঠাৎ তুলির হাত থেকে পাউরুটিটা মাটিতে পরে গেলো। রেয়াকত আলীর দলবল এদিকেই ছুটে আসছে। বেঞ্চ থেকে উঠে তুলি ছুটতে শুরু করলো। ক্ষুধার্ত পেটে দৌড়াবার শক্তিও নেই। কিছুদূর যেতেই হোচট খেয়ে মাটিতে পরে যায়৷ রাফিও তুলিকে থামানোর জন্য পিছন পিছন ছুটে আসছে। তুলিকে দেখার সাথেই রৌদ্র বাইক থামিয়ে বাইক থেকে নামলো। মাটিতে পরে যাওয়া তুলিকে তোলার জন্য ওর এক হাত ধরতেই তুলি কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে, ছাড়েন.. ছাড়েন আমারে…..
রৌদ্র হেলমেট খুলতেই তুলি রৌদ্রকে দেখে চিনতে পেরে বলে উঠলো, আপনে!
রৌদ্রঃ হ্যাঁ… এভাবে দৌড়াচ্ছিলে কেন!
.
তুলি এক বার পিছন ফিরে তাকিয়ে তারপর তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ালো আর হাফাতে হাফাতে বলছে, ওরা আমারে দেইখা ফালাইছে, আমারে এহন ধরে লইয়া যাইবো! আমি যামু না!
রাফিও এখানে এসে দাড়ালো, ওরা কারা?
.
রেয়াকত আলীর দলের একজন ওদের দিকে তাকিয়ে তারপর রেয়াকত আলীকে ফোন করলো, বস এবার পাইয়া গেছি। চইলা আসেন৷
.
রৌদ্র রাফির দিকে তাকিয়ে বললো, এখন এতো কিছু জানার সময় নেই। তুলি তুমি বাইকে উঠে বসো। রাফি তুইও আয়।
রৌদ্র বাইকে উঠে বসে। তুলি বাইকের পাশে এসে দাঁড়ালো।
রৌদ্রঃ কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন! উঠে বসো।
তুলি আশেপাশে তাকিয়ে আর কোনো উপায় না পেয়ে রৌদ্রকেই এখন ভরসা করছে। যেভাবে হোক রেয়াকত আলীর দলের হাত থেকে আগে বাঁচতে হবে।
.
রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা এসে ঘিরে ধরলো, ওদের মধ্য থেকে সাদ্দাম নামের একজন চেচিয়ে ওঠে, ওরে লইয়া কইজান, কেডা আপনে!
রৌদ্র ওদের কথায় পাত্তা না দিয়ে তুলির হাত ধরলো, তোমাকে বসে বলেছি!
রাফিঃ এই আপনারা কারা! এখানে এসে অভদ্রের মতো চেচাচ্ছেন কেন।
সাদ্দামঃ ওই মিয়া গলার আওয়াজ নিচে নামান! বাঁশের কঞ্চির কোবানি খাইয়েছ কোনোদিন!
রাফিঃ হোয়াট ননসেন্স!
সাদ্দামঃ ভাগেন ভাগেন! জলদি এইহান থেইকা ভাগেন।
.
ভয়ে তুলি হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিয়েছে।
রৌদ্রঃ দেখুন আপনারা এরকম করতে পারেন না।
সাদ্দামঃ ওই মিয়া আপনে কেডা!
রৌদ্রঃ আমি কে সেটা বড় বিষয় নয়। ও আপনাদের সাথে যেতে চায় না। ওকে আপনারা জোর করে নিয়ে যেতে পারেন না৷
সাদ্দামঃ এত কথার কাম নাই। জলদি ভাগেন।
রৌদ্রঃ ও আমার সাথে যাবে৷ তুলি এসো।
সাদ্দায়ঃ আপনে ভালো কথার লোক না…কোপ না খাইয়া আপনেরাও যাইবেন না দেখি!
.
রাগে রৌদ্র এবার সাদ্দামের গালে এলোপাথাড়ি থাপ্পড় দিতে শুরু করলো। আর এক হাতে সাদ্দামের শার্টের কালার চেপে ধরে আছে। দলের লোকেরা এসে আটকাতে শুরু করলে ওদেরও হেলমেট দিয়ে মেরে আহত করে দিলো রাফি। এরইমধ্যে রেয়াকত আলী এখানে এসে উপস্থিত হয়। তুলি এখনো কান্না করেই যাচ্ছে৷ ভয়ে তার পুরো শরীর কাঁপছে।
.
রেয়াকত আলী তুলিকে দেখার সাথেই মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো, বহুত জ্বালালি জ্বালাইছোস ,সারাদিন মেলা খাটুনি করাইছোস এহন তোর খবর আছে, চল বাড়িত চল! বজ্জাত মাইয়া! বিয়া আসর থেইকা পালাইছোস!!
.
তুলি কাঁপতে কাঁপতে পিছিয়ে গিয়ে রৌদ্রের এক হাত ধরলো। রৌদ্র এদিকে ফিরে রেয়াকত আলীকে দেখে ভ্রু কুচকায়।
তুলিকে রৌদ্রের হাত ধরতে দেখে রেয়াকত আলী আরও তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।
রেয়াকত আলীঃ ওই ওই…এই পোলা কেডা…তুই ওর হাত ধরসোছ ক্যা…! হ্যাহ??
.
সাদ্দাম এগিয়ে এসে বলা শুরু করে, ওই পোলা তো ওরে লইয়া ভাইগা যাইতাছিলো। আমি ধরতেই আমারে মারছে।
রেয়াকত আলীর মাথা গরম হয়ে গেছে। রেয়াকত আলী রৌদ্রের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ গুলো এখোনি কোটর থেকে বেড়িয়ে আসবে। খুবই ভয়ংকর লাগছে দেখতে।
রেয়াকত আলী দাতেঁ দাঁত চেপে বলছে, আমার বউরে লইয়া ভাইগা যাইবো কেডা…! দাঁ দিয়া তার কাল্লা ফালাই দিমু।
তারপর তুলির দিকে তাকিয়ে রেয়াকত আলী বললো, আমি আজই তোরে বিয়া করুম..! কেউ আটকাইবার পারবো না..!
.
রৌদ্রও চোখ গরম করে রেয়াকত আলীর দিকে তাকায়।
রৌদ্রঃ তুলি বাইকে উঠে বসো..!
রেয়াকত আলী এগিয়ে এসে তুলির আরেক হাত টেনে ধরতেই রৌদ্র হেলমেট দিয়ে রেয়াকত আলীর মাথায় বারি দেয়। রেয়াকত আলীর মাথা ফেটে রক্ত বেড়িয়ে আসে।
রেয়াকত আলী আরও ক্ষেপে গেলো। কপালে এক হাত দিয়ে হাতে রক্ত দেখেই হুংকার দিয়ে উঠলো,,ওই তোরা দা কুড়াল লইয়া আয়…রক্তারক্তি আজ এইহানেই হইবো….
.
রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা ছুটে গেল। বাকিরা লাঠি নিয়ে এসেছে। রাফি কয়েকটাকে ধরে চড় থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। রৌদ্র ইচ্ছে মতো রেয়াকত আলীর পেট পাছায় লাথি দিচ্ছে। দলের লোকেরা আটকানোর জন্য এগিয়ে আসতেই তাদেরও বুক পেটে কিল বসিয়ে দিচ্ছে।
.
রাম দা, কুড়াল নিয়ে রাস্তা দিয়ে ছুটে আসছে রেয়াকত আলীর দলবল। রাফি ওদিকে তাকিয়েই চিৎকার দিয়ে উঠলো, রৌদ্র দেখ! সর্বনাশ!! এখন কি করবি?
রৌদ্রঃ ও মাই গড!
.
রৌদ্র তাড়াতাড়ি তুলির হাত টেনে ধরে তুলিকে বাইকের সামনে বসিয়ে দিলো। তুলিকে উঠেই রৌদ্র বাইক স্টার্ট দিয়ে দেয়। রাফিও বাইকের পিছনে উঠে পরলো।
রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা দা কুড়াল নিয়ে বাইকের পিছনে দৌঁড়াতে থাকে৷
মাটিতে পরে থাকা ভুড়ি ওয়ালা রেয়াকত চেচিয়ে বলতে থাকে, আমার বউরে লইয়া ভাউগা যাইতাছে…ওরা যেন যাইবার না পারে…ধর হেগো…বিয়া আমি আজই করুম!
.
কিছুদুর দৌড়েই রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা বাইকের সাথে আর দৌড়ে পারলো না। ভয়ে আর ক্ষুধায় তুলি অচেতন হয়ে গেছে। বাইক নিয়ে রৌদ্র অনেক দূর পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন তারা শহরের ভিতর। রৌদ্র তুলিকে নিয়ে একটি রেস্তোরাঁর ভিতরে গিয়ে বসলো। সঙ্গে রাফিও আছে। এরকম ভয়ংকর অভিজ্ঞতা রাফির আগে কখনো হয়নি। ভয়ে গলা তার শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো তাই সামনে থাকা পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে গিলতে শুরু করে।
.
এদিকে রেয়াকত আলী এখনো হাল ছাড়েনি। সে ওই রাস্তা ধরেই দলবল সঙ্গে করে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরেছে। তুলিকে তার আজ রাতেই পেতে হবে৷ মাথায় বেন্ডেজ করে প্রচন্ড রকমের ব্যথা নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়ির ড্রাইভারের পাশে সামনের সিটে বসেছে সে।
.
রৌদ্র তুলির মুখে কয়েকবার পানি ছিটিয়ে দিতেই তুলি চোখ খুললো আর চোখ খুলে সামনে হঠাৎ করে রঙিন রঙিন আলো গুলো দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে।
.
চলবে….
.
#প্রেমনগর
পর্বঃ১২
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা
.
চিৎকার দিয়ে তুলি আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বলছে, আমি কই আছি! ও আল্লাহ! আমি কই আছি!
রৌদ্রঃ এই মেয়ে চুপ! এভাবে চেচিও না। মানুষজন ভাববে আমরা তোমাকে কিডন্যাপ করে এনেছি।
তুলি এবার রৌদ্রের মুখের দিকে তাকালো। তুলির মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট, আপনে আমারে কই লইয়া আইছেন?
রৌদ্রঃ ভয় নেই। তুমি আমাদের সাথে আছো। তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেব।
.
তুলি এবার কান্না শুরু করে দিলো,আমি বাড়ি যামু না। বাড়ি গেলে আমার বিয়া দিয়া দিবো!
রৌদ্রঃ আহা এখানে এভাবে কেঁদো না। আমরা ফেসে যাবো তো। তোমাকে তোমার বোনের কাছে নিয়ে যাব। ওখানে থাকতো তোমার কোনো অসুবিধা নেই তো?
তুলি কান্না করতে করতেই বলছে, না অসুবিধা নাই?
রৌদ্রঃ তাহলে এবার কান্না থামাও।
.
রাফিঃ দোস্ত থাক আমি এবার আসি। আমাকে আবার যেতে হবে।
রৌদ্রঃ এখনি যাবি?
রাফিঃ হ্যাঁ রে। একটু কাজ আছে। লেট হয়ে গেল। পরে আবার আসবো।
রৌদ্রঃ থ্যাংকস রে। তুই ছিলি বলেই…
রাফিঃ আরে.. কেউ না কেউ তো ওকে খুঁজে পেতোই। আল্লাহ চেয়েছে তাই আমি আগে পেয়েছি।
রাফি রৌদ্রের পিঠ চাপড়ে দিলো। তারপর তুলির দিকে তাকিয়ে বললো, উ আর সো সুইট। লাল শাড়িতে তোমায় খুব সুন্দর লাগছে। সি উ এগেইন।
তুলি কৌতুহল ভরা চোখ নিয়ে রাফির দিকে তাকালো।
রাফিঃ আসি?
তুলি কথা বলতেই চায় না। সে জোর করে মুখ থেকে বের করলো, জি আচ্ছা।
.
রাফি সমানে এগিয়ে যাওয়ার সময়ও পিছনে ফিরে বার বার তুলির দিকে তাকাচ্ছিলো। সিনেমার নায়িকার মতো তুলির বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আসা তারপর এমন একটা ঘটনার সমুক্ষীন হওয়া। এসব দেখে রাফির মনের মধ্যে প্রেমের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। সে তুলির প্রেমে পরে গেছে। এবং নিজেকে নায়ক ভাবতেও শুরু করেছে। রেস্তোরাঁর দরজার কাছে এসেও আরেকবার পিছনে ফিরে তাকালো। দেখলো তুলিও এদিকে চেয়ে আছে। মায়া ভরা দুটি চোখ। কপালে লাল টিপ। সব কিছু যেন রাফিকে পাগল করে দিচ্ছে। এভাবেই হুটহাট করে আজানা অচেনা মেয়ের প্রেমে পরে গেল সে। ভাবতেই তুলির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রেস্তোরাঁ থেকে বেড়িয়ে গেল।
.
তুলি হা করে ওদিকে তাকিয়ে আছে। রৌদ্র তুলির সামনে হাত দিয়ে তুরি বাজাতেই তুলি চোখ এদিকে ঘোরালো। খাবারের অর্ডার দেওয়া হয়েছিলো। খাবার এসে গেছে। চোখের সামনে অচেনা অদ্ভুত অদ্ভুত খাবার গুলো দেখে তুলি চোখ বড় বড় করে ফেললো, এই গুলান আবার কি। কেডা খাইবো?
রৌদ্রঃ তুমি খাবে! নাও শুরু করো। শুকনো চেহারাটা দেখে মনে হচ্ছে সারাদিন কিছু খাও নি।
তুলিঃ এই গুলান কি। আমি ভাত খামু।
রৌদ্রঃ মহা মুশকিলে তো পরা গেল!
রৌদ্র তখন রেস্তোরাঁর ম্যানেজারকে বলে বিরিয়ানীর ব্যবস্থা করতে বললো।
.
মেঘ বাড়ি ফেরার সাহস পাচ্ছে না। পুলিশের কথা শুনেই হওয়া হয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। লুকিয়ে বাড়িতে ফোন করে জানলো এখনো নাকি বাড়িতে পুলিশ পা দেয়নি। পুলিশের ধারণা নীলার বাড়িতে পানি ঢেলে কোনো একটা অকাজ করতে চেয়েছিলো মেঘ। তাই তারা তাকে ধরার চেষ্টা করছে। পুলিশের ফোন পাওয়া মাত্রই মেঘ এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে রয়েছে।
ওদিকে ওসি সাহেব রাস্তা ভুল করে ওখান থেকে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
.
তুলি বিরিয়ানীর প্লেটে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করছে। নাড়তে নাড়তে খাবার গুলো প্লেটের চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়ে মাঝখানের জায়গাটুকু ফাঁকা করলো।
রৌদ্র ওর খাওয়া দেখে তাকিয়ে আছে।
রৌদ্রঃ তোমাকে আমি প্লেটে আর্ট করতে বলি নি। খেতে বলেছি!
তুলিঃ ওমা,এইডা কি করলাম।
রৌদ্রঃ আরে মেয়ে ঠিকঠাক ভাবে খাও।
তুলি এক লোকমা খাবার মুখে নিয়েছে। গালের এক পাশে খাবারের দলা। আর রৌদ্র অর্ডার দেওয়া খাবার গুলো খাচ্ছে। তুলি খাবার গেলার চেষ্টা করছে।
তুলিঃ আমি খাইবার পারতাছিনা। গলা দিয়া খাবার নামতাছে না।
রৌদ্রঃ খাও। যে শুকনো মার্কা শরীর। পরে আবার মাথা ঘুরে পরে যাবে।
.
অহনা রুমের লাইট অফ করে ডিম লাইট দিয়ে রুমের ভিতর পায়চারি করছে। আকাশ বিছানায় অর্ধেক শোয়া আর অর্ধেক বসা অবস্থায়। আকাশ অহনার দিকে ঘার ঘোরালো।
আকাশঃ জান আর কতক্ষণ?
অহনাঃ বললাম তো আমি ঘুমাবো না। তুমি ঘুমাও। বোনের জন্য আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। আমাকে চিন্তা করতে দাও। বিরক্ত করো না তো!
আকাশঃ কিন্তু না ঘুমালে যে তোমার শরীর খারাপ করবে। মাথাটা আরও খারাপ হয়ে যাবে।
অহনা আকাশের দিকে ঘার ঘুরালো।
আকাশঃ কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
.
হঠাৎ বুঝে ওঠার আগেই আক্রমণ। অহনা এগিয়ে এসে বিছানার বালিশ নিয়ে আকাশকে মারতে শুরু করলো। অহনা আকশকে বারি দিতে দিতে বলছে, আমার মাথা খারাপ? মাথা খারাপ? মাথা খারাপের গুষ্টি কিলাই।
আকাশ হাত দিয়ে বালিশ আটকাচ্ছে আর অহনার কোমরটা ধরে ফেলতেই অহনা আকাশের ওপর পরে যায়।
অহনাঃ আহ! ছাড়ো।
আকাশঃ সার্কাস দেখবে? এই দেখো সার্কাস! হাহাহা…
.
আকাশ অহনাকে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো আর তারপর অহনাকে দুই হাতে উপরে তুলে ঘোরা শুরু করে। ভয়ে অহনা দুই হাতে আকাশের গলাটা জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
অহনাঃ আ…আ…ভয় লাগছে..পরে যাবো..পরে যাবো… নামাও..
আকাশঃ আর এরকম করবে?
অহনাঃ না..না আর করবো না।
আকাশঃ পাগল টাইট দিয়েছি। হাহাহা
বলতে বলতেই অহনা আকাশের গালে গলায় কামড়াতে শুরু করে।
আকাশঃ আরে…আরে এসব কি….কি করছো!
.
অহনার ফোন বাজে উঠলো। আকাশ অহনাকে নামিয়ে দিতেই অহনা তাড়াতাড়ি বেজে ওঠা ফোনটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করলো। ওপর পাশ থেকে রৌদ্রের কন্ঠস্বর শোনা যায়, ভাবী তুলিকে পাওয়া গেছে। ও আমার সাথে আছে।
অহনা চিল্লিয়ে বলছে, কি তুলিকে পাওয়া গেছে? কিভাবে কখন কোথায় পেলে ওকে তুমি??
রৌদ্রঃ পরে সব বলবো ভাবী। এখন রাখি।
.
অহনা বড় করে দম ছেড়ে ফোনটা রেখে আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ চোখ গরম করে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে। সাথে সাথে অহনার মনে পরে গেল তখন আকাশেকে ও কামড়ে দিয়েছিলো। অহনা ঢোক গিললো। ভয়ের একটা শিহরণ বয়ে গেল অহনার শরীর বেয়ে। তবুও আকাশের দিকে আবারও ঘার ঘুরিয়ে তাকালো। আকাশ এখনো এক দৃষ্টিতে চোখ গরম করে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে। অহনা আবারও ঢোক গিললো। মুখে ভয়ের ছাপ থাকা শর্তেও ঠোঁটে জোর করে একটু হাসি এনে দাঁত বের করলো তারপর বললো, এই কি হলো শুনছো.. তুলিকে পাওয়া গেছে!
.
আকাশ এখনো একই ভাবে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে আর কামড়ের জায়গা গুলোতে হাত দিয়ে ডলছে। অহনা আকাশের কাছে এগিয়ে গিয়ে গা ঘেসে দাঁড়ালো তারপর আকাশের গালে হাত দিয়ে বলছে, বাবু তোমার কি লেগেছে?
হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আকাশ অহনাকে কোলে তুলে দিয়ে বিছানায় ঝাপিয়ে পরলো।
অহনাঃ আহ আহ ছাড়ো!
অহনা আকাশের দুই হাতের মাঝে বন্দী।
আকাশঃ কামড়ের বদলে কামড়!
অহনা এবার চিৎকার দিতেই আকাশ অহনার মুখ চেপে ধরলো। আকাশও এবার অহনার গালে গলায় চুমু দিচ্ছে সাথে আবার কামড়িয়েও দিচ্ছে।
.
রৌদ্রঃ কি ব্যাপার এটা খাওয়া?
তুলিঃ কি করুম। খাইবার পারতাছিনা।
রৌদ্রঃ এতো শুকনো শরীরে খাবার না খেলে চলবে? দেখি চোখ বন্ধ করে হা করো৷
রৌদ্র তুলির প্লেট থেকে খাবার হাতে নিলো৷
তুলিঃ কি করতাছেন? কেউ দেইখা ফালাইবো তো?
রৌদ্রঃ হা করতে বলেছি। চুপচাপ হা করো।
রৌদ্র তুলিকে প্লেটের সব খাবার খায়িয়ে দিলো।
.
পানি খাবার পর তুলির ঠোঁটে কোনে অল্প একটু পানি ভরে থাকতে দেখে রৌদ্র টিস্যু দিয়ে তুলির ঠোঁটের কোনটা মুছে দিলো। মুছে দেয়ার সময় তুলি বার বার পিছিয়ে যাচ্ছিলো।
রৌদ্রঃ মুখটা একবার ধুয়ে ফেললে ভালো হতো কেমন যেন তেলতেলে লাগছে।
রৌদ্র তুলিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। তুলি মুখ ধুতেই কপাল থেকে লাল টিপ খুলে পরে গেল।
আয়নার ভিতরে টিপ খুলে পরে যেতে দেখেই অস্থির হয়ে তুলি আমার টিপ! আমার টিপ! বলতে বলতে বেসিনে হাত দিতে ধরলো। তখনই রৌদ্র তুলির হাত ধরে ফেললো।
রৌদ্রঃ ওটা আর নিতে হবে না।
তুলিঃ কিন্তু আমার টিপ?
রৌদ্রঃ উফ চলো তো।
.
রৌদ্র তুলিকে নিয়ে রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে বাইকে উঠলো। তখনই রাস্তার ওপর পাশ থেকে রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা চেচিয়ে ওঠে, বস ওই তো, বস!
রৌদ্র বাইক স্টার্ট দিতে যাবে তখনই ওরা পিছন থেকে একটা কুড়াল ছুড়ে দিলো। সেটা রৌদ্রের হাতে এসে লাগে। সাথে সাথে রৌদ্রের ডান হাত থেকে গল গল করে রক্ত বেড়িয়ে আসতে শুরু করে। রক্তে রৌদ্রের শার্ট ভিজে যাচ্ছে।
তুলি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো। রেয়াকত আলী এসে তুলির এক হাত টেনে ধরতেই রৌদ্র তুলিকে টান দিয়ে অন্য পাশে নিয়ে গেলো।
দলের লোকেরা রৌদ্রকে সরানোর চেষ্টা করছে। রৌদ্র বা হাতে তুলির এক হাত ধরে রয়েছে। তার ডান হাত থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরন হচ্ছে। টপ টপ করে রক্তের ফোঁটা রাস্তায় পরতে শরু করলো। তুলিকে নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। রৌদ্র এবার চোখে ঝাপসা আর অন্ধকার দেখতে শুরু করলো। তুলির হাতটা ছেড়ে দিয়ে রাস্তার ওপর লুটিয়ে পরলো রৌদ্র। বাইকটাও পরে রয়েছে ওর পাশেই। অনেক জোরে চিৎকার তুলি তুলি। রেয়াকত আলী রৌদ্রের পেটে ছুড়ি বসিয়ে দিয়েছে।
.
চলবে….
( ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ☺)