প্রেমপিপাসা❤ পর্বঃ-৩,৪

0
1636

প্রেমপিপাসা❤
পর্বঃ-৩,৪
writer_শিফা_আফরিন
পর্বঃ- ৩

?
কুহু রেহানের পিক গুলো দেখছে…
হটাৎ করেই কালকের কথা মনে হতেই কুহু রেহানের টাইমলাইন থেকে বের হয়ে যায়।
কুহু – যত্তসব ফাজিল কোথাকার… এইটা তো আমার ক্রাশ হয়ে পারে না এইটা একটা বাঁশ!
এদিকে জেরিন বেচারি রেহানের আইডি খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত।
বিকেলে….
কুহু – আম্মু….
কুহুর মা – হ্যা বল…
কুহু – আব্বু কোথায়?
কুহুর মা – তোর বাবা তো মনে হই বাহিরে গেছে। তোর টাকা দিয়ে গেছে আমার কাছে। নিয়ে যা আয়…..
কুহু টাকা নিয়ে জেরিনের কাছে যায়…
কুহু – মহারানি রেডি তো আপনি?
জেরিন – হ্যা আপি। চল…
কুহু জেরিন কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
শপিং এ গিয়ে দু’জন সব কেনা কাটা করতে প্রায় সন্ধা হয়ে যায়।
জেরিন – আপি আমার অনেক ক্ষুদা লাগছে। চলো না কিছু খেয়ে নিই।
কুহু – হ্যা খেতেই পারি। চল…
কুহু আর জেরিন একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে নেয়।
কুহু – এইরে অনেক রাত হয়ে গেলো তো… ফোনের ও চার্জ শেষ বাসায় তো জানাতেও পারবো না নিশ্চয় আম্মু আব্বু টেনশন করছে। এবার কি করি…
জেরিন – আমারও তো একি প্রবলেম।
কুহু – দেখছিস একটা রিকশাও পাচ্ছি না। এতো রাতে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে অসহ্য লাগছে রে।
জেরিন – আকাশের অবস্থা ও তো ভালো না।
কুহু – এই আকাশ টা আবার কে রে? (ভ্রু কুঁচকে)
জেরিন – আরে আপি আবহাওয়া ভালো না যেকোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে।
কুহু – হ্যা সেটাই তো।
কুহু আর জেরিন অনেকক্ষন দাড়িয়ে থেকেও কোনো রিকশা পায় না তারপর বাধ্য হয়েই দু’জন হাটা ধরে…
কিছু দূর যেতেই শুরু হয় বৃষ্টি। কুহুর কেঁদে দিতে ইচ্ছে করছে কেনো যে এতো লেট করলো!
জেরিন – আপি চলো কোথাও গিয়ে দাড়াই।
কুহু – বাজে কথা কম বল। এখন গিয়ে দাড়িয়ে থাকলে কাল সকালে বাসায় ফিরতে হবে বুঝেছিস।
তার চেয়ে বরং হেটেই চল।
এমনিও ভিজতেই হবে।
কুহু আর জেরিন হেটেই যাচ্ছে হটাৎ ওদের সামনে একটা গাড়ি ব্রেক কষে….কুহু অনেক টা ভয় পেয়ে যায়। সাথে জেরিন ও।
কুহু – এই কানা টা আবার কে রে? মরার আর জায়গা পায়না নাকি… যত্তসব!
গ্লাস সরিয়ে মুখটা বের করতেই কুহু আর জেরিন চমকে উঠে…
কুহু – আপনিইই!!!
কুহুর সাথে জেরিনও অবাক হয়ে বলে উঠে…
জেরিন – আমার হিরো…..!
জেরিন কথা শুনে রেহান ভ্রু কুঁচকে জেরিনের দিকে তাকায় সাথে কুহু ও।
রেহান – সরি! কে হিরো?
জেরিন – আপনি! (আনমনে)
রেহান জেরিনের কথা শুনে মুচকি হাসে।
রেহান – ওহো!! আমি যদি হিরোই হই তবে একজনের হিরোই হতে চাই। অন্য কারো না। (কুহুর দিকে তাকিয়ে)
জেরিন – মানে!,
রেহান – মানে তোমার না বুঝলেও চলবে। বাই দ্য ওয়ে এতো রাতে তোমরা বাহিরে কি করছো? সাথে কাউকে আনো নি কেনো?
কুহু – আপনাকে কৈফিয়ত দিতে আমরা নিশ্চয় বাধ্য নই।
রেহান – জাস্ট সাট আপ!
রেহানের ধমক শুনে কুহু জেরিন দু’জনই ভয় পেয়ে যায়।
রেহান – তোমাদের কোনো কমন সেন্স নেই? এতো রাতে দুইটা মেয়ে একটা রাস্থায় বের হয়েছো তাও বৃষ্টিতে। যদি খারাপ কিছু হয়ে যায় তো?
কুহু – আমরা নিজেদের সামলাতে পারবো ওকে। এই সব নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে — বলেই জেরিনের হাত ধরে হাটতে নেয়…
রেহান – স্টপ… সোজা গাড়িতে এসে বসো। আমি ড্রপ করে দিবো।
কুহু – তার কোনো প্রয়োজন নেই। আর আপনাকে চিনি না জানি না আপনার গাড়িতে কেনো উঠবো বলুন তো?
জেরিন – আপি চল না প্লিজ না করিস না। দেখ আমার কাছে সব কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে! আমি আমার ক্রাশের গাড়িতে করে যাবো সত্যিই ভাবতেও পারছি না। (কুহুর কানে ফিসফিসিয়ে বলে)
কুহু জেরিনের দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকাতেই জেরিন চুপ করে যায়।
রেহান – কি হলো কথা কানে ঢুকছে না? বসতে বলছি
কুহু মনে মনে ভাবছে এখন না বসেও উপায় নেই আর। কোনো রিকশা ও পাচ্ছে না তার চেয়ে বরং উঠেই যাক।
কুহু গিয়ে পেছনের সিটে বসে পড়ে আর জেরিন এসে সামনে রেহানের সাথে বসে।
জেরিন তো বেচারি মহা খুশি। আর এদিকে রেহান রাগে ফুলছে!
রেহান – এতোবড় সাহস তোমার? পিছনে বসছো তোমার এই লুচু বোন টাকে সামনে পাঠাই দিছো!!
রেহান রেগে কটমট করে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
কিছুক্ষণ পরই কুহুর বাড়ির সামনে গাড়ি দাড় করায়…
কুহু আর জেরিন দুজনই নেমে পড়ে…
জেরিন – আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি না থাকলে যে কি হতো আজ!! (ঢ্যং করে)
কুহু – কি হতো? তোকে কি গুন্ডা ধরছিলো যে উনি এসে বাঁচিয়েছে? (রেগে কটমট করে)
জেরিন – না মানে রিকশা তো পাচ্ছিলাম না তাই আরকি। (মাথা নিচু করে)
কুহু – এতো বকবক না করে চল।
রেহান – তুমি ভেতরে যাও। তোমার আপুর সাথে আমার একটা কথা আছে। ও আসছে তুমি যাও। (জেরিন কে উদ্দেশ্য করে)
জেরিন – কী কথা? (অবাক হয়ে)
রেহান – কি কথা সেটা না হয় তোমার বোনই শুনবে। তোমাকে যেতে বলেছি। (দাঁতে দাঁত চেঁপে)
জেরিন কিছু না বলে রেগে ভেতরে চলে আসে। কুহু অবাক হয়ে যায় রেহানের ব্যবহারে।
কুহু – আপনি ওকে ধমকানোর সাহস পেয়েছেন কোথায়?
রেহান – আমি তোমার ফালতু কথার উত্তর দিতে ওকে ভেতরে পাঠাইনি। তোমার সাথে কথা আছে আমার।
কুহু – আপনার সাথে তো আমার কোনো কথা নেই। সো আমি এখন আসছি। — বলেই কুহু বাড়ির ভেতরে চলে যেতে নেয়। রেহান কুহুর হাত ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে….
কুহু – আহহহ আমার হাতে লাগছে। হাত ছাড়ুন।
রেহান – একটা কথা বলবে তো হাত টা মুচড়ে ভেঙে দিবো। বলছিলাম না কথা আছে৷ না শুনেই চলে যাচ্ছো কেনো?
আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার সাহস পাও কোথায় তুমি? (রেগে)
কুহু – আপনাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সাহস লাগবে নাকি? আপনি কে?
রেহান কুহুর হাত টা আরও শক্ত করে মুচড়ে ধরে….
রেহান – আর কোনো দিন যদি রাতে বের হতে দেখি তাহলে আমি কে হারে হারে বুঝাবো তোমায়।
বলেই হনহন করে চলে আসে।
কুহুর ইচ্ছে করছিলো রেহান কে তুলে একটা আছাড় মারতে। কুহু রেগে বাসায় চলে আসে।
জেরিন – আপি ও কি বললো?
কুহু – আমার মুন্ডু। (বলেই রুমে চলে আসে)
কুহুর প্রচুর রাগ উঠছে। ইচ্ছে করছে সব ভেঙে ফেলতে।
এর মধ্যেই রিহা ফোন করে…
রিহা – কিরে সব রেডি তো?
কুহু – হ্যা।
রিহা – শাড়ি ম্যানেজ করেছিস?
কুহু – পাইনি শেষে শপিং থেকে এনেছি।
রিহা – দ্যাটস গুড৷ ওকে তাহলে রাখি কাল দেখা হচ্ছে।
কুহু – ওকে বাই।
পরের দিন সকালে….
কুহু শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নেয়। জেরিন কুহুকে দেখে অবাক হয়ে যায়…
জেরিন – আপি তুমি কি শাড়ি পড়ে ভার্সিটি যাবে নাকি?
কুহু – ইয়েস বেপি। ভালো লাগছে না আমায়?
জেরিন – হ্যা। (এইরে আজ যদি আমার হিরোর সাথে আপুর দেখা হয় আমার হিরো তো পাগল হয়ে যাবে।)
কুহু সবাই কে বলে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে। ভার্সিটিতে এসেও রেহান কে দেখে কুহুর মেজাজ টা খারাপ হয়ে যায়।)
কুহু সানিয়া আর রিহাকে সব বলে…
সানিয়া – ওহোহহ এই কথা! তবে যাই বলিস ছেলেটা কিন্তু অতটা ও খারাপ না। তোদের এতো রাতে বৃষ্টির মধ্যে বাসায় পৌঁছে দিলো কোনো অসভ্যতামি করেনি। আমার মনে হই ছেলেটা ভালোই।
রিহা – আমারও একি কথা। মনে হয়না ছেলেটা খারাপ।
কুহু ওদের কথা শুনে রেগে যায়….
কুহু – তোরা কি পাগল? ঐ ছেলেটা অসভ্য নয়? ও আমাকে টাচ করার অধিকার পেলো কোথায়? এটাকি অসভ্যতা না?
সানিয়া – যাই হোক বাদ দে তো এসব।
রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে বাসায় চল।
তারপর তিনজনই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়৷
সানিয়া আর রিহা এক রিকশা করে চলে যায়। আর কুহু অন্য রিকশা করে বাসায় চলে আসে।
বাসায় আসতেই জেরিনের আগমন।
জেরিন – আপি? আজকে কি আমার হিরোর সাথে তোমার দেখা হয়েছিলো?
কুহু – হ্যা দেখা হয়ছে আমায় কোলে নিয়ে নাচছে ও তোর সমস্যা? (রেগে)
জেরিন – বলো কি!!
কুহু জেরিন কে ধমক দিয়ে হনহন করে রুমে চলে আসে।
রুমে এসে চেঞ্জ করে নেয়।
কুহুর মা এসে খেতে ডাকলেও কুহু যায়নি।
কুহু – মা খেয়ে এসেছি আমি এখন ঘুমাবো একটু। রাতে খেয়ে নিবো৷
কুহুর মা – ঠিক আছে ঘুমা তুই।
রাতে…
জেরিন নিজের রুমে বসে কেঁদে কেঁদে সাগর বানাচ্ছে।
কুহু জেরিনের রুমে গিয়ে খেতে ডাকে…
জেরিন – আমি খাবো না তুমি যাও।
কুহু – কী হয়েছে তোর? এই ভাবে কথা বলছিস যে?
জেরিন – কিছু হয়নি। যাও তুমি।
কুহু বুঝতে পারছে না মেয়েটার হলো কী?
কুহু আর কিছু না বলে চলে আসে জেরিনের রুম থেকে।
কুহু এসেই খেতে বসে যায়…
কুহুর মা – কিরে জেরিন কই? ও আসলো না কেনো খেতে?
কুহু – জানিনা আম্মু। ও আসছে না কেনো? ও বোধহয় রেগে আছে।
কুহুর মা – সেকি! মেয়েটা রাগলো কেনো আবার?
কুহুর বাবা – তুই কিছু বলেছিস ওকে?
কুহু – আমি তো কিছু বলিনি আব্বু।
কুহুর মা – আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ওর রুমে খাবার দিয়ে আসবো নি। তোমরা খেয়ে নাও।
কুহু – হ্যা তাই করো। আমার ক্ষিদে পেয়েছে খুব।
খাওয়া শেষ করে কুহু নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। অমনি সানিয়ার ফোন আসে…
কুহু – হ্যা বল…
সানিয়া – কী করছিস?
কুহু – শুয়ে আছি।
সানিয়া – কাল ভার্সিটি তে আসবি তো?
কুহু – হুম। তুই?
সানিয়া – হ্যা আসবো। আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ ঘুমিয়ে পড় তুই।
কুহু – ঠিক আছে।
সকালে….
কুহু ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে ৮ টা বাজে।
উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
কুহুর মা – ভার্সিটিতে যাবি না?
কুহু – যাবো আম্মু। আমি রেডি হয়ে আসছি।
কুহুর মা চলে যায়। কুহু রেডি হয়ে নিচে আসে।
কুহুর বাবা – গুড মর্নিং মা।
কুহু – গুড মর্নিং আব্বু।
কুহুর বাবা – দুপুরে কিন্তু বাড়িতে এসে খাবে। বুঝেছো?
কুহু – ওকে।
কুহু খেয়ে ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে পড়ে। রিকশা করেই চলে আসে।
কুহু – সানিয়া কি আসেনি এখনো?
রিহা – এই কুহু দাড়া।
কুহু – তুই চলে এসেছিস সানিয়া কোথায়?
নিহা – আমিও তো খুঁজছিলাম। আসেনি এখনো। চল আমরা ওদিকে গিয়ে বসি। সানিয়া আসলে একসাথে ক্লাসে চলে যাবো।
কুহু – হ্যা চল।
কুহু আর নিহা গিয়ে একটা গাছের নিচে বসে গল্প করতে থাকে। হটাৎ ভার্সিটিতে একটা ছেলে আসে বাইকে করে।
কুহু তো হা করে ছেলেটার দিক তাকিয়ে আছে।
বাবাহ ব্লু কালার শার্ট সাথে ব্ল্যাক জিন্স, হাতে ঘড়ি, আবার চোখে সানগ্লাস ও। এ তো দেখি পুরাই ক্রাশ।

চলবে………

#প্রেমপিপাসা❤
#পর্বঃ- ৪
#writer_শিফা_আফরিন
.
.
?
কুহু খেয়াল করে দেখে ছেলেটা ওদের দিকেই আসছে।
কুহু – এই রিহা.. এই ছেলে টা কে রে? এদিকে আসছে।
রিহা কুহুর ডাকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বেচারিও ক্রাশ খায়।
রিহা – ছেলেটা তো পুরাই জোস।
কুহু রেগে রিহার দিকে তাকায়…
কুহু – অমনি না!! ছেলে দেখলি আর শুরু হয়ে গেলো তোর লুচুগিরি।
রিহা – আরেহহ কথা কম বল। ছেলেটা এদিকে কেনো আসছে সেটা ভাব।
এরি মাঝে ছেলেটা কুহুর কাছে এসে চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে কুহুকে চোখ মারে।
কুহু বেচারি সাথে সাথে চিৎকার করে উঠে….
কুহু – নাআআআ…….. এ আমি কাকে দেখছি!!
রিহা – তুই উনাকে চিনিস? (ভ্রু কুঁচকে)
কুহু কিছু বলার আগেই ছেলেটা বলে উঠে….
— চিনবে না মানে! নিজের বর কে কেউ ভুলে যেতে পারে বলুন তো?
কুহু এবার ১০০০ বোল্ডের শক খায়।
কুহু – বররর!!!
রিহা – বর!! কুহু তুই বিয়ে করে ফেললি একবার জানালিও না? আমরা কি এতোই পর ছিলাম?
কুহু – আরে আমার কথা টা তো শুন! আমি এই অসভ্যকে বিয়ে করতে যাবো কেনো বল তো? এ তো ঐ অসভ্য ছেলেটা তোদের না কাল সব বললাম।
রিহা – ওওহহ!! উনি? তবে যাই বলিস ছেলেটা সত্যিই কিউট (কুহুর কানে ফিসফিসিয়ে বলে)
কুহু রেগে রিহার দিকে তাকায়…
রেহান – তো মিস কোকিল পাখি কাল যেনো কি বলছিলে…?
কুহু – হোয়াট কোকিল পাখি? আমি কুহু ওকে।
রেহান – সে যাই হোক। কাল কি বলছিলে তুমি? আমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিবে ভার্সিটি থেকে তাই তো? ঢুকতে দিয়েছে কে আমাকে তাই না? (দাঁতে দাঁত চেঁপে)
কুহু – হ্যা বলেছি। তো?
রেহান রেগে কুহুর দিকে তেড়ে যায়। কুহু ভয় পেয়ে পিছু ফিরে গাছের সাথে আটকে যায়।
কুহু আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সবাই ওদের দেখছে।
কুহু – আপনার সাহস দেখে আমি বরাবরই অবাক হচ্ছি। আপনি আমার সাথে এমন আচরণ করার সাহস পান কোথায়? (রেগে)
রেহান চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আশেপাশের সবাই সরে যায়।
কুহু অবাক হয়ে যায়। হচ্ছে টা কী? এই ছেলেকে এত ভয় পাওয়ার কী আছে আজিব!
রেহান এবার রিহার দিকে তাকায়। রেহানের তাকানো দেখেই রিহার আত্না উড়ে যায়।
রেহান – আপনাকেও কি আলাদা করে বলতে হবে? (দাঁতে দাঁত চেঁপে)
রিহা – মা.. মানে?
রেহান – মানে বুঝতে পারো নি? এখান থেকে কেটে পরো। (ঝারি মেরে)
রেহানের ঝাড়ি শুনে রিহা সেখান থেকে সাথে সাথে কেটে পড়ে।
রিহা চলে যাওয়াতে কুহু ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে থাকে।
রেহান রেগে গিয়ে কুহুর গাল চেপে ধরে…
রেহান – এতো বড়বড় কথা বলার সাহস পাও কই তুমি? আর তোমাকে কিছু বলতে গেলে আমার সাহস লাগবে নাকি? কি মনে করো নিজেকে? দুইদিনের পুঁচকি মেয়ে আমাকে আসছে সাহস দেখাতে? আর কাল বলেছিলে না আমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিবে কিন্তু তোমার ভাগ্য খারাপ জানো তো! আমি এই ভার্সিটির সিনিয়র। সো আমার উপর কারো কথা বলারও সাহস হয় না। আর সেখানে তুমি বলছো আমাকে দারোয়ান দিয়ে ঘাড় ধরে বার করে দিবে তাই না!!
কুহু রেহানের কথা শুনে বেহুঁশ হয়ে যাওয়ার অবস্থা।
রেহান – আজকের পর থেকে আর আমার মুখে মুখে তর্ক করবা তো তোমার বারোটা বাজাবো আমি মাইন্ড ইট। (রেগে)
রেহান কুহুর গাল ছেড়ে দিয়ে কুহুর কপালে চুমু দিয়ে সেখান থেকে হনহন করে চলে আসে।
কুহু রেহানের কাজে আরও রেগে যায়। বার বার কপাল মুছছে। ইচ্ছে করছে গাছের সাথে কপাল ঘষা দিতে যাতে করে ঐ অসভ্যর ছোঁয়া না থাকে!
কুহু রেগে ক্লাসরুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে রিহা আর সানিয়া একসাথে বসে কথা বলছে।
কুহু – তোরা কখন আসলি?
সানিয়া – এই মাত্র আসলাম। তুই এতো লেট করলি কেনো?
কুহু – লেট কি সাধে করেছি? ঐ ছেলের জন্য মনে হই এই ভার্সিটিতে থাকা হবে না।
সানিয়া – ঐ ছেলে? ঐ হারামী টা আমার আসছে? ওরে বের করে দিলি না ক্যন? আমাদের ভার্সিটিতে বার বার আসার সাহস পায় কোথায় ও?
সানিয়া বক বক করেই যাচ্ছে কুহু আর রিহা ঢোক গিলছে কারন পিছনে যে রেহান রাগি লুক নিয়ে দাড়িয়ে আছে!
সানিয়া – তুই না আসলেই বোকা কিছু করতে পারলি না? আমি হলে তো সিরিয়াসলি ঘাড় ধরে বের করে দিয়ে আসতাম।
রেহান – ওহ সিরিয়াসলি!!
সানিয়া – হ্যা….. এই কুহু এটা কার কন্ঠ রে?
কুহু ইশারা করে সানিয়াকে পেছন তাকাতে বলে। সানিয়া পেছনে তাকিয়ে দেখে রেহান দু’হাত পকেটে গুঁজে রাগি লুক নিয়ে সানিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
সানিয়া বেশ ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু রেহানের কাছে কিছুতেই প্রকাশ করতে চাইছে না।
সানিয়া – আপনার এতবড় সাহস? এখানে আসলেন কিভাবে?
রেহান – সিনিয়র দের সাহস লাগেনা। তারা যখন যেখানে ইচ্ছে থাকতে পারে। বুঝলে??
সানিয়া – সি..সি…সিনিয়র!!
রিহা – হ্যা রে উনি আমাদের সিনিয়র। তুই তখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছিস। এতো করে ইশারা করলাম থাম থাম তাও থামলি না। এবার মজা বুঝ।
রেহান – আমার বিষয়ে আর কারো কিছু জানার আছে? (ধমক দিয়ে)
সানিয়া – ন..না না.
রিহা – না ভাইয়া কিছু জানার নেই আর।
রেহান – ভাইয়া না দুলাভাই আমি তোমাদের। অবশ্য এখনকার দিনে দুলাভাই এর থেকে ভাইয়া ডাকা টাই ভালো মেবি।
সানিয়া – জ্বী দুলাভাই না মানে ভাই…. (ভয়ে ভয়ে)
রেহান সানিয়া আর রিহার অবস্থা দেখে হেসে দেয়। সাথে ক্লাসের কয়েক জনও বেশ ভয় পায়।
রেহান ইশারা করে যার যার কাজে মন দিতে বলে। সবাই রেহানের কথা মতো নিজের মতো ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
রেহান – কুহু আমার সাথে চলো!!
কুহু – নেভার!
রেহান কিছুটা রেগে যায়… তারও নিজের রাগ কনট্রোলে এনে বলে..
রেহান – কুহু চলো। এক কথা বার বার বলতে পছন্দ করি না আমি।
কুহু – আপনি পছন্দ করেন বা না করেন তাতে আমার কি? আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না দ্যাটস ফাইনাল।
রেহান এবার প্রচন্ড রেগে কুহুকে কোলে তুলে নেয়। সানিয়া আর রিহা কিছু বলতে গিয়েও রেহানের ভয়ে বলেনি।
কুহু- ছাড়ুন আমায় কি হচ্ছে টা কি? ছাড়ুন….
কুহু নিজের মতো করে বলেই যাচ্ছে কিন্তু রেহানের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। রেহান কুহুকে সোজা ছাঁদে নিয়ে আসে।
কুহু এবার একটু ভয় পেয়ে যায়। ছাদে কেনো আনলো এই ছেলেটা? ছাদ থেকে ফেলে দেবে না তো?
রেহান কুহুকে ছাদের এক পাশে দাড় করায়।
কুহু – আমাকে এখানে আনার মানে কী?
রেহান – অনেক মানে আছে।
কুহু – ফাজলামি বাদ দিন। এখানে কেনো আনলেন আমায়? আর আপনি আমার পিছু কেনো পড়ে আছেন শুনি? (রেগে)
রেহান – জাস্ট সাট আপ ওকে। আমি তোমার পিছু পড়ে থাকবো কেনো? হোয়াই? রেহান ওয়াহিদ কখনো কারো পিছু ঘুরঘুর করে না। কোনো মেয়ের পিছু তো নয় ই। আর হ্যা… আমি তোমার পিছু নেই নি। তোমাকে ভালো লেগেছে তোমাকে আমার চাই ব্যাস আর কিছু না।
কুহু – তোমাকে আমার চাই!! হাসালেন! আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন আমি কোনো দ্রব্য না যে চাইলেই পেয়ে যাবেন। আমি মানুষ। আমার নিজেরও পছন্দ অপছন্দ আছে।
আর আপনার মতো অসভ্য, বাজে লোক কে আমি কোনো দিনও একসেপ্ট করতে পারবো না বুঝতে পেরেছেন?
রেহান – তোমাকে একসেপ্ট করতে কে বললো?
আমি নিজেই নিজের টা আদায় করে নিবো বুঝছো? তোমাকে ভালোও বাসতে হবে না পছন্দও করতে হবেনা।
কুহু – আপনার এই গুন্ডামি টাইপ কথা গুলো অন্য মেয়েদের গিয়ে বলুন ওকে। আমি আপনার এইসব ফালতু কথায় কান দিবো না। আপনার যা ইচ্ছে করুন গিয়ে। আপনাকে আর আশেপাশে আসাও সহ্য করতে পারবো না। মনে রাখবেন কথাটা।
কুহু রেগে চলে যেতে নিলে রেহান কুহুর হাত ধরে ফেলে। কুহু কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান একটানে কুহুকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে…
রেহান – অনেক বড়বড় কথা বলেছো! তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না তাইনা? সহ্য করতে হবেও না। আমার থেকে দূরে কোনো দিনও যেতে পারবে না। যতো কিছুই করো আমার কাছেই থাকতে হবে তোমার।
কুহু রেহানের চাহনি দেখে ভয় পেয়ে যায়। রেহান মারাত্মক রেগে আছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। দেখতে কেমন হিংস্র লাগছে। কুহুর গলা শুকিয়ে যায়।
কুহু – ক্লাস শুরু হয়ে গেছে আমায় যেতে দিন। (ভয়ে ভয়ে)
রেহান বুঝতে পারে কুহু বোধহয় রেহান কে ভয় পাচ্ছে।
রেহান কিছুনা শান্ত হয়ে বলে…
রেহান – ভার্সিটি ছুটির পর ওয়েট করো আমি বাসায় পৌঁছে দিবো ওকে।
কুহুর রাগে রেহান কে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে….
কুহু – ঠিক আছে।
রেহান কুহুর দু গালে হাত রেখে কুহুর কিছুটা কাছে যায়। রেহানের কাছে আসাতে কুহু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। রেহান মুচকি হেসে কুহুর ঠোঁটে চুমু দিয়ে কুহুকে ছেড়ে দেয়।
রেহান – যাও। আর হ্যা কোনো ছেলের সাথে যেনো কথা বলতে না দেখি ওকে।
কুহু রেগে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মূহুর্তে এতোটাই রাগ হচ্ছে বেচারির ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজে টানতে।
কুহু – (যদি তোকে এই ছাদ থেকে ফেলে দিতে পারতাম আমার থেকে বেশি খুশি আর কেউ হতো না। মনে মনে)
রেহান – কি হলো? কি ভাবছো এতো? ক্লাসে যেতে বললাম না? আর হ্যা ছুটির পর দাড়িয়ে থাকবা যতো খন আমি না আসি।
কুহু রেহানের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বরং চোখ গরম করে রেহানের দিকে তাকিয়ে চলে আসে ছাদ থেকে।
রেহান কুহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
রেহান – আই নৌ ডিয়ার… তুমি আমার উপর মারাত্মক রেগে গেছো বাট মুখে কিছুই বলতে পারো নি। বলতে পারবেও না। (বাঁকা হেসে)
কুহু রেগে ক্লাসরুমে গিয়ে দেখে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। কুহু ভয়ে ভয়ে টিচারের পারমিশন নিয়ে ক্লাসে ঢুকে।
রিহা – কিরে এতোখন কোথায় ছিলি? কোথায় নিয়ে গিয়েছিলো তোকে? (ফিসফিসিয়ে)
কুহু – ছাদে!
সানিয়া – কিহহহ! ভাগ্যিস ছাদ দেখে ফেলে টেলে দেয় নি। না হলে তের বাবা মার কাছে কী জবাব দিতাম আমরা বল তো?
কুহু – ফালতু কথা বলবি তো এক চরে দাঁত সব ফেলে দিবো। ফেলে দিবে কেনো শুনি? ওর এতো বড় সাহস আছে নাকি? মুখে মুখেই যতো গুন্ডামি কথা!

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here