প্রেমপিপাসা❤
পর্ব – ১১,১২
writer_শিফা_আফরিন_মিম
পর্ব – ১১
?
ভার্সিটি ছুটির পর রেহান কুহুকে বাইকে করে বাসায় পৌঁছে দেয়।
আজ রেহানের সাথে আসতে কুহুর এতোটাও অস্বস্তি হয়নি বরং কিছুটা ভালোলাগছে!
রেহান কুহুকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
কুহু বাসায় ঢুকতেই দেখে জেরিন বসে আছে। মেয়েটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেচারি অনেক টেনশনে আছে।
কুহুকে দেখেই দৌড়ে কুহুর কাছে আসে।
জেরিন – হাই আপি… আজ সারা দিন কেমন কাটলো গো?
কুহু জেরিনের কথায় রেগে যায়। কতো টা অসভ্য মেয়ে! নিজেই বিপদে ফেলে নিজেই জিগ্যেস করছে আজ সারাদিন কেমন কাটলো! কুহু রেগে গেলেও তার রাগটা প্রকাশ করে না।
কুহু – ভালোই কাটলো (মুখ গোমড়া করে)
জেরিনকে আর কিছু বলতে না দিয়েই কুহু রুমে চলে যায়।
জেরিন – যাহহ বাবা কিছুই তো বুঝলাম না। এমন ভাবে উত্তর দিলো যে দুটানায় পড়ে গেলাম। না ভালো না খারাপ!
জেরিন কিছুক্ষণ বিরবির করে নিজের রুমে চলে যায়। গিয়েই তিশান (হিয়ার বয়ফ্রেন্ড) কে ফোন দেয়।
— হ্যালো
জেরিন – হ্যা ভাইয়া কাজ টা হয়েছে তো। আই মিন রেহান বিশ্বাস করেছে তো?
— জ্বী আপু।
জেরিন – ওকে ধন্যবাদ ভাইয়া।
জেরিন ফোন টা কেটে দেয়। এই মূহুর্তে জেরিনের ইচ্ছে করছে নাচতে!
জেরিন – তার মানে রেহান সত্যি বিশ্বাস করে নিলো তিশান নামের কেউ আপির বয়ফ্রেন্ড!
আহারে ভাবতেই কেমন খুশিখুশি লাগছে আমার।
এদিকে কুহু ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে যায়।
খাওয়া শেষ করে এসে ফোন টা হাতে নিয়ে এফবিতে ঢুকে।
অনেক খুঁজে রেহানের আইডিটা পেয়ে যায়। অবশ্য রেহান আগে থেকেই কুহুকে রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে রেখেছে।
কুহু কিছু একটা ভেবে একসেপ্ট করে। কিছুক্ষণ পরই রেহানের আইডি থেকে ম্যাসেজ আসে…
— জানপাখি এতো দিন আমাকে ঝুলিয়ে রেখে আজ একসেপ্ট করার সময় হলো?
কুহু তো অবাক! রেহান জানলো কি করে এটা কুহুর আইডি! ধুরর কোথায় ভেবেছিলো রেহান কে একটু পরিক্ষা করবে তা না বেটা তো সব জেনেই গেলো।
রেহান – কি হলো? কথা বলছো না যে?
কুহু – আপনি জানলেন কি করে এটা যে আমার আইডি?
রেহান – ওহ তাই বলো! তোমার ফ্রেন্ড সানিয়া ওর আইডিটা পেয়েছিলাম ওর কাছ থেকেই তোমার টা নিলাম। বাই দ্যা ওয়ে… তুমি ফেইক একাউন্ট ইউজ করো কেনো?
কুহু – এমনিই।
রেহান – ওহহ ওকে। খেয়েছো?
কুহু – হুম। আপনি?
রেহান – হ্যাঁ। ফোন নাম্বার টা দাও।
কুহু – কার?
রেহান – আমার বাবার!
কুহু – মানে?
রেহান – মানে তোমার কাছে যেহেতু চাইছি তাহলে নিশ্চয় তোমার নাম্বারটাই চাইছি।
কুহু – আচ্ছা দিচ্ছি। (কুহুর নাম্বার টা দিয়ে দেয়)
রেহান – ওকে এখন বাই। রেস্ট করো তুমি।
কুহু – আচ্ছা।
তারপর রেহান কুহুকে অনেক গুলো কিস ইমুজি দিয়ে অফলাইনে চলে যায়।
কুহু ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
বিকেলে…
কুহু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কফি বানাতে চলে যায়।
পেছন থেকে জেরিন ডেকে উঠে।
জেরিন – আপি
কুহু – হ্যা বল
জেরিন – ছাঁদে যাবে?
কুহু – চল যাই।
জেরিন – ওকে আসো। আমি কফি বানিয়ে নিই।
কুহু – তুই যা। আমিই বানিয়ে আনছি।
জেরিন ছাদে চলে যায়। আর কুহু অনিচ্ছা স্বত্তেও কফি নিয়ে ছাদে আসে।
জেরিন কে একটা মগ দিয়ে আরেক টা নিজে রাখে।
অনেকখন দুজন কফি খাচ্ছে আর গল্প করছে। হটাৎ কুহু নিচে তাকাতেই দেখে রেহান বাইক নিয়ে চলে যাচ্ছে ।
তার মানে রেহান এখানে এসেছিলো? কিন্তু চলেই বা যাচ্ছে কেনো? কুহু চিন্তায় পড়ে যায়।
রাতে সবাই একসাথে বসে ডিনার করে নেয়। কুহু নিজের রুমে চলে আসে। কুহু ভাবছে রেহানকে কি একটা ফোন দিবে? ভাবতে ভাবতেই কারো ফোন আসে।
কুহু মোবাইলের স্কিনে তাকাতেই দেখে রেহানের নাম্বার। কুহু ভয়ে ভয়ে ফোন টা রিসিভ করে।
রেহান – ছাঁদে আসো।
কুহু – কিহহহহ!
রেহান – কানে কম শুনতে পাও কবে থেকে?
কুহু – কম শুনবো কেনো?
রেহান – তাহলে কি বললাম কানে গেলো না? (দাঁতে দাঁত চেপে)
কুহু – না মানে… এতো রাতে ছাঁদে গিয়ে কি করবো?
রেহান – আমার সাথে প্রেম করবা ডেম এট…
কুহু রেহানের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
কুহু – ছাঁদে আপনার সাথে প্রেম করবো মানে?
রেহান – তুমি যে বোকা আমি জানতাম কিন্তু সেই লেভেলের বোকা সেটা তো জানতাম না।
কুহু – দেখুন বেশি বলে ফেলছেন কিন্তু।
রেহান – পকপক বন্ধ করে ছাঁদে আসো। আমি ছাঁদে আছি অনেকখন হলো।
কুহু – আপনি আমাদের ছাঁদে?
রেহান – না আমার বাসার ছাঁদে!
কুহু – (এই অসভ্য ছেলেটার মুখে মধু দেয় নাই ক্যান! কথায় কথায় রেগে যায়)
রেহান – আসো ফাস্ট।
কুহু – আচ্ছা ঠিক আছে।
রেহান ফোন কেটে দিলে কুহু চুপিচুপি ঘর থেকে বের হয়ে দেখে সবার দরজা বন্ধ। হয়তো সবাই ঘুমিয়ে গেছে।
কুহু মেইন দরজা টা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে।
এতো রাতে ছাঁদে যেতে অবশ্য কুহুর অনেক টা ভয়ও করছে। কিন্তু না গিয়েও উপায় নেই।
কুহু ছাদে আসতেই কেউ কুহুকে একটানে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে।
ভয়ে কুহুর প্রানখানা উড়াল দিবে এমন অবস্থা!
কুহু তাকিয়ে দেখে রেহান!
কুহু – আপনি এতো রাতে এখানে এলেন কী করে?
রেহান কুহুর কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে কুহুর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।
কুহু রেহানের কাজে বেশ অবাক হয়ে যায়। এমন কিছু করবে রেহান তা ভাবতেও পারেনি।
কুহু রেহান কে ছাড়াতে চেষ্টা করে রেহান কুহুকে আরও চেঁপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
অনেকখন পর রেহান কুহুকে ছেড়ে একটু দূরে সরে দাড়ায়।
রেহান – সরি জানপাখি
কুহু – কেনো? (অবাক হয়ে)
রেহান – তোমার পারমিশন ছাড়াই তোমাকে কিস করেছি।
কুহু – আচ্ছা। এখন বলুন এখানে আসলেন কী করে? আর আমাদের ছাঁদের দরজা টা তো বন্ধ থাকে। তাহলে?
রেহান – আমি তো খুলাই পেলাম। আমি জানতাম না বন্ধ থাকে তাও এসে খুলা পেয়েছি বলেই তোমাকে কল করলাম।
কুহু – আর বন্ধ থাকলে নিশ্চয় আবার বাড়ি ফিরে যেতেন?
রেহান – উহুম…তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো। যেভাবে হোক দেখা করেই যেতাম।
বন্ধ থাকলে ফোন করে তোমাকে নিচে ডাকতাম।
কুহু – যদি না আসতাম তো?
রেহান – তোমার ঘরেই চলে যেতাম। কেউ দেখলে দেখতো আই ডোন্ট কেয়ার! (ভাব নিয়ে)
কুহু – হুহহহ হয়ছে।
রেহান – ইয়াপ জানপাখি। সত্যিই ভয় পাবো না৷ কিন্তু আমি এখন এতোটাও বোকামি করবো না। কারন আমি চাই না তোমার ঐ গুনধর বোন আমাদের ব্যাপার টা জানুক।
কুহু – আচ্ছা জানলে সমস্যা টা কী বলুন তো?
রেহান – ওকে সারপ্রাইজ দিবো!
কুহু – এ আবার কেমন সারপ্রাইজ?
রেহান – সময় হলেই বুঝবে।
কুহু – হুম। ঐ সময় চলে গেলেন যে?
রেহান – তুমি দেখে নিয়েছো?
কুহু – হ্যা।
রেহান – তোমার সাথে দেখা করতেই এসেছিলাম। দেখলাম তুমি ছাঁদে আর তোমার সাথে আরও একজন আছে। থাকলে তো জেরিনই থাকতো। তাই চলে গিয়েছিলাম।
কুহু – ওহহ। বুঝেছি। আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে এবার বাড়ি যান।
রেহান – পরে যাই।
কুহু – না যান তো। কাল ভার্সিটি আছে আমার।
রেহান – আমারও তো আছে। তাতে কি?
কুহু – আপনার কিছু না কিন্তু আমার অনেক কিছু। আমি এখন ঘুমাবো। বুঝেছেন?
রেহান – ওকে। রেহান কুহুর দিকে একটু এগুতেই কুহু ভয়ে পিছিয়ে যায়। রেহান কুহুর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে…
রেহান – গুড নাইট। —- বলেই কুহুর কানের নিচে চুমু দেয়।
কুহু কেঁপে উঠে। গুড নাইট কথাটাও এভাবে বলতে হই? আজিব!
রেহান চলে গেলে কুহুও নিজের রুমে চলে যায়।
কুহু রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই জেরিন রুম থেকে বেরিয়ে আসে….
জেরিন – এতো রাতে আপি কোথায় গিয়েছিলো?
জেরিন মাথায় হাজারটা চিন্তা নিয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে কুহু ঘুম থেকে উঠে ফোনের রিংটোন এর শব্দ শুনে রিসিভ করতেই কারো মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসে….
— গুড মর্নিং জানপাখি….
কুহু মুচকি হাসে।
— ভার্সিটিতে আসবে না?
কুহু – হ্যা।
— ওকে ফ্রেশ হও।
কুহু – ওকে।
ফোন কেটে দিতেই কুহু ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে আসে।
কুহুর মা – কিরে আজ এতো তারাতারি?
কুহু – হুম।
কুহুর মা – কোনো কাজ আছে?
কুহু – না এমনিই। সব সময় তো দেরি করেই যাই। তাই আজ একটু তারাতারি যাবো।
জেরিন – (কিছু একটা ভেবে) আপি আমিও আজ তোমার সাথে ভার্সিটি যাবো।
কুহু – তুই আবার কবে ভার্সিটিতে ভর্তি হলি? তাও আমাদের ভার্সিটিতে?
জেরিন – না মানে এমনিই ঘুরে দেখতে যাবো আরকি।
কুহু – ভার্সিটি নিশ্চয় পার্ক নয় যে তুই ঘুরে দেখবি। তাছাড়া আমাদের ভার্সিটিতে বাহিরের কাউকে এলাউ করে না।
জেরিন – ওহহ আচ্ছা।
কুহু ব্রেকফাস্ট শেষ করে উঠে চলে যায়।
কুহু বাড়ি থেকে বের হয়ে রিকশা করে ভার্সিটিতে চলে আসে।
এতো তারাতারি এসেও বেচারি ঝামেলায় পড়লো। না সানিয়া আর রিহা এসেছে না রেহান!
একা একা অস্বস্তি ফিল করছে। কিছুক্ষন এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করতেই দেখে রিহা আর সানিয়া আসছে। ওদের দেখে কুহুর যেনো প্রান ফিরে পেলো।
কুহু – এতো খনে আসার সময় হলো? (ওদের কাছে এগিয়ে গিয়)
সানিয়া – আরেব্বাস! এ আমি কাকে দেখছি?
কুহু – নিশ্চয় তোর শাশুড়ি কে না! আমাকেই দেখছিস।
রিহা – সেটাই তো! তুই এতো তারাতারি?
কুহু – এমনিই ভালো লাগছিলো না বাসায় তাই চলে আসলাম।
সানিয়া – বাহ উন্নতি হচ্ছে দেখছি!
কুহু – আরে আজিব! তারাতারি আসলে বুঝি উন্নতি হয়?
রিহা – সে তুমি বুঝবে না খুকি। এবার চলো।
কুহু – হু চল।
কুহু ওদের সাথে হাটছে আর বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
সানিয়া – কেউ বোধহয় আসেনি আজ! আহারে যার জন্য এতো কষ্ট সেই মিসিং!
কুহু ভ্রু কুঁচকে সানিয়ার দিকে তাকায় সাথে সাথেই সানিয়া চোখ টিপ মারে।
এদিকে রেহান ঘুম থেকে উঠতে অনেক টা লেট করে ফেলে। কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে চলে আসে।
রেহানের বাবা – আজ ভার্সিটিতে যাবে?
রেহান – হ্যা বাবা।
রেহানের বাবা – তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।
রেহান – হ্যা বলো না। ব্রেকফাস্ট করতে করতেই শুনে ফেলি।
রেহানের মা – থাক না। রাতে বললে হয় না।
রেহানের বাবা – না এখন বলবো। সারা দিন ও ভেবে নিবে রাতে আমাকে জানাবে ব্যাস।
রেহানের বাবার কথা শুনে রেহান কিছুটা অবাক হয়ে যায়। এমন ভাবে কথা বলছে কেনো বাবা?
কী এমন কথা যে সারা দিন ভাবতে হবে।
চলবে……..
#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ১২
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
.
.
?
রেহান – কী কথা বাবা?
রেহানের বাবা – আমরা তোমার বিয়ের কথা ভাবছিলাম। দেখতেই পারছো আমার শরীর টা বেশি ভালো যাচ্ছে না। তাই দেরি করতে চাইছি না।
রেহান – হোয়াট? বিয়ে?
রেহানের বাবা – হ্যা ঠিকই শুনেছো।
রেহান – কিন্তু বাবা আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না। আর আমার পড়াশুনা ও শেষ হয়নি।
রেহানের বাবা – এটা কোনো সমস্যা না। কিছুদিন পর আমি আর অফিস যেতে পারবো না তোমাকেই সব সামলাতে হবে। আর হ্যা আমি যা বলেছি তাই হবে আমার কথার উপর কোনো কথা পছন্দ করি না।
রেহান কিছু না বলে উঠে চলে যায়।
রেহানের মা – দিলে তো ছেলেটাকে রাগিয়ে। কিছু খেতেও পারলো না।
রেহানের বাবা – যাই করোক। আমি রাতে হ্যা কথাটা শুনতে চাই।
রেহান ভার্সিটিতে চলে আসে। এসেই এদিক ওদিক খুঁজে কিন্তু কুহুকে কোথাও পায়নি।
রেহান – বোধহয় ক্লাসে চলে গেছে৷ ধুরর কতোটা দেরি করে ফেললাম আজ।
রেহান ও ক্লাসে চলে যায়।
ছুটির সময় রেহান ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে আছে।
হটাৎ কুহুকে দেখতেই মুখে হাসি ফুটে উঠে। কুহু কাছে আসতেই বলে…
রেহান – একটু ওয়েট ও করতে পারলে না?
কুহু – একটু? (ভ্রু কুঁচকে)
রেহান – তো? (মুখ গোমড়া করে)
কুহু – আপনার জন্য ১ ঘন্টা ওয়েট করেছি বুঝলেন?
রেহান – তার মানে তুমি আজ তারাতারি চলে এসেছো?
কুহু – জ্বী।
রেহান – শীটট আমিই আজ দেরি করলাম?
আগে আসলে তো কতো রোমান্স করতে পারতাম।
কুহু – কিহহহ?
রেহান – কিছুনা চলো বাসায় পৌঁছে দিই।
কুহু রেহানের কথা শুনে কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে রেহানের মন ভালো না।
কুহু কিছু জিগ্যেস করতে গিয়েও করে না। রেহান বাইকে বসে কুহুকেও ইশারা করে বসতে। কুহু চুপচাপ বসে পড়ে।
রেহান কুহুকে বাসার সামনে পৌঁছে দিয়ে নিজেও নামে। কুহু ভ্রু কুঁচকে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। উনিও নামছেন কেনো? আমার বাসায় যাবেন নাকি?
কুহুকে চমকে দিয়ে রেহান কুহুর কপালে কিস করে আবার বাইকে এসে বসে পড়ে। কুহু রেহানের দিকে তাকাতেই রেহান মুচকি হেসে চলে আসে।
বাসায় এসেই রেহান নিজের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে খাটে বসে থাকে। রেহানের ভিতর ভিতর ওর বাবার বলা কথাটার জন্য খুব ভয় হচ্ছে। উনি যা বলে তাই করেন।
কুহুকে হারাতে হবে না তো!
হাজারো চিন্তা রেহানের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
রেহানের মার ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে।
রেহানের মা – খেতে যাবি না?
রেহান – না মা আমার ক্ষিদে নেয়।
রেহানের মা – সকালেও তো খাস নি। এখনও বলছিস ক্ষিদে নেয়।
রেহান – হ্যা। তোমরা খেয়ে নাও।
রেহানের মা – মন খারাপ করিস না তোর বাবা তো তোর ভালোর জন্যই বলছে। কোনো ক্ষতি তো করছে না তোর।
রেহান – মা তুমি যাও খেয়ে নাও। আমি ঘুমাবো কিছুক্ষণ।
রেহানের মা বেশ বুঝতে পারছে রেহান কিছুক্ষণ একা থাকতে চাইছে। তাই কথা না বারিয়ে উনি চলে আসেন।
এদিকে কুহু বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ছাদে আসে। অনেক খন নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু রেহান কে দেখতে পায় না। তার মানে রেহান আজ আসেনি?
কুহু মন খারাপ করে রুমে চলে আসে। ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে রেহান ফোন করেছে কি না। কিন্তু না!
রেহান ফোন ও দেয় নি। কুহুর মন টা আরও খারাপ হয়ে যায়। কুহুর এবার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সারা দিন চলে গেলো একটা ফোনও দেয়নি দেখা ও করে নি।
অথচ ভার্সিটি ছুটির পরও রেহান কুহুকে বাসায় পৌঁছে দেয় কিন্তু বেচারির মনে হচ্ছে সারা দিন ধরেই রেহানের সাথো যোগাযোগ নেই।
এভাবেই সন্ধ্যা হয়ে যায় তাও রেহানের কোনো খবর নেই।
রাতে কুহু না খেয়েই শুয়ে পড়ে। কুহুর মা অনেক বার ডাকার পরও খেতে যায়নি।
অনেকক্ষন রেহানের ফোনের জন্য ওয়েট করে রেহানের ফোন না পেয়ে কুহু নিজেই ফোন দেয় কিন্তু রেহানের ফোন বন্ধ।
এভাবে প্রায় ২ ঘন্টা যাবৎ কুহু রেহানের ফোনে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফেন বন্ধই।
কুহু এবার কেঁদে দেয়। অনেক অসহায় লাগছে ওর। এখন তো রেহানের বাসায় যাওয়া ও সম্ভব না। রেহানের বাসাও তো চিনে না। কাঁদতে কাঁদতেই বেচারি ঘুমিয়ে পড়ে।
এদিকে রেহানের ফোন বন্ধ থাকারও কারন আছে।
রাতে রেহানের মা আর বাবা রেহানের রুমে আসে।
রেহানের বাবা – রেহান শোনো আমার একজন চেনা ক্লাইন্ট আছে উনার মেয়ের সাথে তোমার বিয়েটা ঠিক করতে চাই। বলতে পারো আমার বন্ধু। আমি ওর সাথে কথা বলেছি। কাল যাবো ওদের বাসায়। তুমি রেডি থেকো৷ আশা করি মেয়ে তোমার অপছন্দ হবে না।
রেহানের বাবা কথা গুলো বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রেহান অসহায় ভাবে রেহানের মার দিকে তাকায়।
রেহান – মা এই সব কী?
রেহানের মা – দেখ তোর বাবা বুঝেই করছে। আর মেয়ে তোর পছন্দ হবেই। তুই গিয়ে দেখ।
রেহান – তাই বলে? মা আজই তোমরা আমাকে জানালে আর কালই মেয়ে দেখতে চলে যাবো? আমাকে কি মনে হই? কয়েকটা দিন সময় দেয়া যেতো না?
রেহানের মা – রেহান তোর বাবা শুনলে দুঃখ পাবে। তুই কোনো চিন্তা করিস না মেয়ে তোর পছন্দ হবেই দেখিস।
রেহানের মা ও চলে যায় রেহান ধুপ করে খাটে বসে থাকে। রাগে রেহানের সারা শরীর কাঁপছে। হাতের কাছের ফুলদানি টা আাছাড় মেরে ফেলে দেয়। আরেক হাতে মোবাইল ছিলো ওটাও আছাড় মারে। মোবাইল টাও কয়েকটা টুকরো হয়ে ভেঙে যায়।
রেহানের এবার আরও রাগ হচ্ছে এতো রাতে মোবাইল ম্যানেজ করবে কি ভাবে। কুহুর সাথে তো কথাও বলা হয়নি। রেহানের চোখে ঘুম আসে না। সারা রাত ছটফট করে কাটায়।
পরের দিন….
রেহান আজ ভার্সিটিতে যেতে পারবে না। ফোন টাও নেই যে কুহুকে জানিয়ে দিবে। মেয়েটা নিশ্চয় খুঁজবে!
অন্য কাউকে কুহুর জায়গা টা দিতে হবে ভাবতেই রেহানের বুকটায় চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। আজ রেহানের অনেক বেশিই কষ্ট হচ্ছে। কাউকে ভালোবেসে তার জায়গা টা অন্য কাউকে দেয়া সত্যিই অনেক যন্ত্রনাদায়ক!
কুহু নিশ্চয় আমায় ভুল বুঝবে! ও হয়তো ভাববে আমি ওর সাথে প্রতারণা করেছি! কিন্তু ও তো জানেনা আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি ওকে! কোনো দিনও পারবো না ভুলতে। যা করতে হচ্ছে সবকিছুই বাবা মার ইচ্ছে তে। কুহুকে বোধহয় হারিয়ে ফেললাম আমি! ভাবতে ভাবতেই রেহানের গাল বেয়ে দু’ফোটা অশ্রু ঝড়ে পরে।
আত্নহত্যা যে মহাপাপ! না হলে বোধহয় কাল রাতেই রেহান সব কষ্ট থেকে নিজেকে মুক্তি দিয়ে দিতো।
দুপুরে….
রেহানের মা – রেহান… কই তুই?
রেহান বেলকনিতে দাড়িয়ে ছিলো। মায়ের ডাকটা আদৌ তার কানে পৌঁছালো কিনা কে জানে! সে আগের মতোই একদৃষ্টিতে আকাশপানে তাকিয়ে আছে।
রেহানের মা বুঝতে পারে ছেলের মন মরা হয়ে থাকার কারন। বেলকনিতে গিয়ে রেহানের কাঁধে হাত রাখতেই রেহান পেছনে ফিরে তাকায়।
রেহান – মা তুমি? কিছু বলবে?
রেহানের মা – রেডি হয়ে নে।
রেহান তার মাকে অনেক কিছু বলতে চাইছে বুঝাতে চাইছে কিন্তু মুখ ফুটে বলা হয়নি।
রেহানের মা চলে গেলে রেহান টাওয়েল টা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। অনেকক্ষন পর রেহান রেডি হয়ে নিচে আসে।
রেহান নিচে এসে দেখে রেহানের বড় কাকা আর কাকিমা ও এসেছে।
রেহান কে দেখা মাত্রই ওর কাকিমা বলে উঠে…
— একি রেহান তোর মুখটা এমন লাগছে কেনো?
রেহান – কিছুনা কাকিমা। আমি ঠিক আছি।
— দেখে তো মনে হচ্ছে না তুই ঠিক আছিস!
রেহান – ওসব কিছুনা বসো তোমরা।
— হুম বুঝলাম মন খারাপ নিশ্চয়! টেনশন করিস না ভাইয়ের (রেহানের বাবার) কাছে শুনলাম মেয়েটা দেখতে নাকি অনেক মিষ্টি। তোর ও পছন্দ হবে দেখে নিস।
রেহান অনিচ্ছা স্বত্তেও শুকনো হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।
সবাই মেয়ের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। রেহানের ইচ্ছে করছিলো সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসতে কিন্তু উপায় নেই। তার বাবার রাগের কাছে তাকে হার মানতেই হবে।
বেল বাজাতেই একজন লোক এসে দরজা খুলে দেয় রেহানের পরিবারের লোকদের দেখেই হাসি মুখে ভেতরে আসতে বলে। কিন্তু রেহানের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে কখন থেকেই মাথা নিচু করে আনমনা হয়ে আছে। সিড়ি বেয়ে উঠার সময় কয়েকবার হোচট ও খেয়েছে। তা দেখে রেহানের বাবা রেগে গিয়ে বলে…
— মেয়েদের মতো মাথা নিচু করে হাটা ধরলে কেনো? তুমি কি নতুন বউ? আর হাটাচলার সময় মন কোথায় থাকে তোমার? এখনি তো পড়ে যেতে।
এতো কথা বলার পরও রেহানের বিন্দু মাত্র পরিবর্তন নেই। কোনো কিছুই দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই তার।
রেহান একটা সোফায় বসে মাথা নিচু করে আছে। আর অপর পাশে রেহানের পরিবারের সবাই।
মেয়ের বাবা – ভাইজান পথে কোনো অসুবিধে হয়নি তো?
রেহানের বাবা – একদম না।
মেয়ের বাবা – রেহান… বাবা তোমার কি অসুবিধে হচ্ছে?
রেহান মুখ তুলে একবার লোকটার দিকে তাকায়।
তারপর মাথা নাড়িয়ে ” না ” বুঝায়।
রেহানের বাবা – আসলে ওর সকাল থেকে মাথা ধরে আছে তাই। আপনি ব্যাস্ত হবেন না। ও ঠিক আছে।
সবাই কথা বলছে শুধু রেহান আনমনা হয়ে তার কুহুকে নিয়েই ভেবে যাচ্ছে। হটাৎ করেই এমন একটা মূহুর্ত চলে আসবে সে ভাবতেও পারেনি।
কিছুক্ষণ পরই মেয়েকে নিয়ে এসে রেহানের পাশাপাশি বসায়। মেয়েকেও মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে রেহানের কাকিমা বলে উঠে…
মেয়েও দেখি আমাদের ছেলের মতো লজ্জা পাচ্ছে!
রেহানের মা মেয়ের মুখটা একটু উঁচু করে দেখে বলে…
” মাশআল্লাহ ”
চলবে……