প্রেমপিপাসা❤ পর্ব – ৫,৬

0
1390

প্রেমপিপাসা❤
পর্ব – ৫,৬
writer_শিফা_আফরিন
পর্ব – ৫
?
কুহু – ফালতু কথা বলবি তো এক চরে দাঁত ফেলে দিবো। ফেলে দিবে কেনো শুনি? ওর এতো সাহস আছে নাকি? মুখে মুখেই যতো গুন্ডামি কথা।
সানিয়া – আচ্ছা বাবা হয়েছে। এবার ক্লাস কর মন দিয়ে।
ক্লাস শেষে..
সানিয়া – কুহু বাড়ি যাবি? নাকি থাকবি কিছুখন?
কুহু – একটু পরে যাই।
সানিয়া – ওকে।
রিহা – ফুচকা খেতে যাবি?
সানিয়া – হ্যা যাওয়াই যায়।
কুহু – চল।
তিন জন ভার্সিটির পাশেই ফুচকা খেতে চলে যায়।
এদিকে রেহান কুহুকে সারা ভার্সিটি খুঁজছে।
রেহান – গেলো কোথায় মেয়েটা? ওর সাহস আছে বটে। আমি এতো বার করে বলার পরও চলে গেলো!
রেহান প্রচন্ড রেগে যায়। রাতে রেহানের মুখ লাল বর্ণ ধারন করছে। রেহান কুহুকে এদিক সেদিক খুঁজে বেরাচ্ছে।
আর কুহু বেচারি মন মতো ফুচকা খেয়েই যাচ্ছে।
কুহু – মামা লাস্ট আরেক প্লেট বানান তবে হ্যা ঝাল দিবেন বেশি করে।
রেহান কুহুকে খুঁজতে খুঁজতে গেইটের বাহিরে চলে আসে।
বাহিরে আসতেই রেহান দেখে কুহু ওর বান্ধবী দের সাথে ফুচকা খাওয়ায় ব্যাস্ত। রেহানের রাগ টা আরও বেরে যায়। সারা ভার্সিটি খুঁজে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে আর এই মেয়ে এখানে ফুচকা খাচ্ছে! খাওয়াচ্ছি তোমার ফুচকা দাড়াও!!
রেহান রেগে কুহুর পাশে গিয়ে দাড়ায় সানিয়া আর রিহা রেহান কে দেখে অনেক টা ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু কুহুর কোনো খবরই নাই বেচারি ফুচকা খাওয়ায় ব্যাস্ত।
রেহান রেগে কুহুর হাত চেঁপে ধরে টানতে টানতে ভার্সিটির ভেতরে নিয়ে আসে। কুহু রেহানের কাজে ভয় পেলেও প্রকাশ করে না বরং কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে…
কুহু – আপনার সমস্যা টা কী বলুন তো? সব সময় আমার পিছন পড়ে থাকেন কেনো? আমার কি কোনো পার্সোনালিটি নেই নাকি? এভাবে রাস্থায় সবার সামনে হাত ধরে নিয়ে এলেন কেনো?
রেহান কুহুর কথায় কোনো জবাব দেয় নি বরং রাগি চোখে কুহুর দিকে একপলক তাকিয়ে আবার টানতে টানতে একটা ক্লাসরুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকে।
কুহু এবার খেয়াল করে অনেক খন আগেই ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে৷ এখন তো পুরো ভার্সিটি ফাঁকা।
কুহু – (এই ছেলে আমাকে ক্লাসরুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে কেনো? এমনিতেই তো ভার্সিটি ছুটি হয়েছে অনেক খন আগে। এখন নিশ্চয় কেউ নেই। তাহলে!!
আল্লাহ এই গুন্ডার হাত থেকে রক্ষা করো আমায়!! মনে মনে)
রেহান কুহুকে একটা ক্লাসরুমে এনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে…
রেহান – বলেছিলাম না ছুটির পর থাকতে? আমি বাসায় পৌঁছে দিবো। বলেছিলাম কি না? (ধমক দিয়ে)
রেহানের ধমকে কুহু কেঁপে উঠে..
রেহান – কথা বলছো না কেনো? কে বলেছিলো রাস্তায় দাড়িয়ে ফুচকা খেতে? আমি বলেছিলাম? খুব সখ না ছেলেদের সামনে দাড়িয়ে ফুচকা খেতে? (দাঁতে দাঁত চেপে)
কুহু – আমি কি করবো না করবো সেটা কি আপনার কাছ থেকে জেনে নিতে হবে নাকি? এতো অধিকার খাটাচ্ছেন কেনো? আপনি কি আমার ভাই? নাকি আমার বর?
রেহান কুহুর কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায়….
রেহান – বর। কেনো সন্দেহ আছে নাকি?
কুহু – এইসব ফালতু কথা বলবেন না একদম! আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আপনার মতো অসভ্য লোক কে বর বানাবো।
রেহান – তোমার বানাতে হবে না কোকিল পাখি। আমিই বানাবো।
কুহু রেগে রেহান কে ধাক্কা মারে কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয় আরকি। বেচারি রেহান কে এক ইঞ্চি ও সরাতে পারেনি৷
রেহান – আমার মতো বডি বিল্ডারের কাছে তোমার মতো পুঁচকি মেয়ের সামান্য শক্তি কিছুই না। বুঝলে? (বাঁকা হেসে)
কুহু – বডি বিল্ডার না বলুন হাতি হাতি!!
রেহান কুহুর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকায়….
রেহান – সিরিয়াসলি হাতি!!
কুহু – অবশ্যই!!
রেহান – হাতি বলো আর গন্ডার বলো তোমারই তো বর তাইনা। (মুচকি হেসে)
কুহু – বাজে কথা রাখুন আর আমাকে যেতে দিন।
রেহান – হুম চলো।
কুহু – আমি একাই যেতে পারবো।
রেহান – তুমি কি চাইছো তোমাকে আমি কোলে করে নিয়ে যাই।
কুহু রেহানের কথা শুনে রেগে যায়। তাও শান্ত ভাব নিয়ে বলে…
কুহু – না… চলুন যাচ্ছি।
রেহান মুচকি হেসে কুহুর হাত ধরে।
কুহু – হাত ধরলেন কেনো?
রেহান – পারমিশন নিতে হবে নাকি? (দাঁতে দাঁত চেপে)
কুহু – না ঠিক আছে৷ (অসভ্য ছেলে কোথাকার। ইচ্ছে করে দাঁত গুলো ভেঙে দিই)
রেহান কুহুকে বাইকের পেছনে বসিয়ে নিজেও উঠে বসে।
কুহু – এইভাবে যাবো নাকি?
রেহান – তো? উড়োজাহাজ ভাড়া করবো নাকি? (রেগে)
কুহু – না চলুন। (এই ছেলের মুখে কি মিষ্টি কথা নেই নাকি৷ মনে হয় জন্মের সময় মুখে মধু না দিয়ে নিমপাতার রস দিয়েছিলো…. মনে মনে)
রেহান বাইক স্টার্ট দেয়।
রেহান – ধরে বসো নয়তো পড়ে ব্যাথা পাবে।
কুহু – ঠিক আছি আমি। ( তোকে ধরতে যাবো কোন দুঃখে)
রেহান কুহুর কথায় কিছুটা রেগে যায়। তাও প্রকাশ করে না। রেহান ইচ্ছে করেই বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দেয়। কুহু কয়েক বার পড়ে যেতে নিলেও রেহান কে খামচে ধরে বাঁচে। তাই বাধ্য হয়ে রেহানকে ধরে বসে।
কুহু ধরা মাত্রই রেহান বাইকের স্পিড কমিয়ে দেয়।
কুহু – (এ তো দেখি আস্ত একটা শয়তান!! ইচ্ছে করে এতোখন স্পিডে চালিয়েছে!! মনে মনে)
কিছুক্ষণের মধ্যেই রেহান কুহুকে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়।
কুহু সোজা বাড়িতে ঢুকতে গেলেই রেহান পেছন থেকে ডাক দেয়…
রেহান – কেউ হেল্প করলে যে তাকে থ্যাংকস্ বলতে হয় শিখোনি?
কুহু রেহানের কথা শুনে দাড়িয়ে যায়। কিছুটা রেগে রেহানের দিকে তাকায়…
কুহু – থ্যাংকস্। এবার শান্তি?
রেহান – ইয়াহ… (মুচকি হেসে)
কুহু রেগে হনহন করে বাসায় চলে যায়। রেহান কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে নিজেও চলে আসে।
বিকেলে…
কুহু পড়ে ঘুমাচ্ছে এর মধ্যেই জেরিন রুমে আসে…
জেরিন – আপি…আর কতো ঘুমাবে? উঠো তো।
কুহু – ডাকছিস কেনো? (ঘুমের ঘোরে)
জেরিন – আরে আপি আরেকটু পরই সন্ধা হয়ে যাবে। এই টাইমে কেউ ঘুমায় নাকি! উঠো ছাদে যাই চলো ভালো লাগবে।
কুহু উঠে বসে।
কুহু – হ্যা ঠিকই বলেছিস। শোন না তুই দু কাপ কফি বানিয়ে ছাদে চলে যা। আমিও ফ্রেশ হয়ে আসছি।
জেরিন – ওকে আপি তারাতারি এসো।
জেরিন কফি বানিয়ে ছাদে যায়। কুহু ফ্রেশ হয়ে নেয়।
জেরিন কফি গুলো হাতে নিয়ে ছাদের এক কোণে গিয়ে দাড়াতেই চমকে উঠে..!
একি! এ আমি কাকে দেখছি??
আমার হিরো!!
জেরিনের ইচ্ছে করছিলো এক লাফে তার হিরোর কাছে পৌঁছে যেতে কিন্তু এটা তো সম্ভব না। বেচারি এক বালতি দুঃখ নিয়ে রেহান কে ইশারা করতে থাকে। কিন্তু রেহানের দৃষ্টি কুহুর ঘরের জানলার দিকেই স্থির।
এর মাঝেই কুহু ছাদে চলে আসে।
জেরিন – ( এই রে কেনো যে আপিকে আজ ছাদে আসতে বললাম কে জানে! ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় কফি টা ঢেলে দিই। এখন তো নিশ্চিত আপিকে দেখে ফেলবে আমার হিরো টা!)
কুহু – সরি রে অনেক খন ওয়েট করতে হলো তোকে।
জেরিন – আ…আপি চলো না ঘরেই চলে যাই। আমার এখানে ভালো লাগছে না।
কুহু – কেনো? (ভ্রু কুঁচকে)
জেরিন – এমনিই চলো। (জেরিন বার বার নিচে তাকাচ্ছে)
কুহু কিছু একটা ভেবে নিচে তাকায়।
কুহু – একি! এই গুন্ডা টা এখানে কি করছে? (রেগে)
জেরিন – এই যাহহ! দেখেই নিলো।
কুহু – এই ছেলের জন্য তুই ছাদ থেকে চলে যেতে চাইছিস তাই না। কেনো রে? ও কি ছাদে এসে উঁকি মেরে দেখবে আমাদের?
জেরিন – না। এমনিতেই। জেরিন বার বার নিচে তাকাচ্ছে।
রেহান – ধুর বাবা এতোখন ধরে দাড়িয়ে আছি একবারও আসার নাম নেই। ওর ঘরে যে জানলা আছে সেটা ও যানে তো!! আমার তো মনে হই জানেই না। না হলে এতোখনে একবার অন্তত আসার কথা ছিলো।
রেহান এদিক ওদিক তাকিয়ে হটাৎ ছাদে তাকাতেই চমকে উঠে।
রেহান – ছাদে এরা কে? মনে তো হচ্ছে কুহুর বোন। সাথের টা কে?
কুহু – জেরিন তুই কি উঁকি মেরেই থাকবি নাকি বসবি কোথাও? (রেগে)
জেরিন – এইতো আমার হিরো তাকিয়েছে। জেরিন বেচারি তো মহা খুশি। বার বার চুল ঠিক করছে। কত রকমের স্টাইল করছে। কিন্তু রেহান এসব দেখায় ব্যাস্ত না। জেরিনের সাথে কে আছে দেখার চেষ্টায় আছে সে।
কুহু – জেরিন চল তো। এই বাদর টাকে কি দেখছিস এতো। (কুহু নিচে তাকাতেই রেহানের মুখে হাসি ফুটে উঠে। রেহান বুঝতে পারে জেরিনের সাথে কুহুই ছিলো)
রেহান কুহুকে ইশারা করে ফোন দেখায়।
কুহু – বজ্জাতের হাড্ডি টা কি দেখাচ্ছে রে?
জেরিন – আপি বোধহয় ফোন নাম্বার চাইছে!
কুহু জেরিনের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায়!
এতো বড় সাহস আমার বাড়ির সামনে এসে আমারই ফোন নাম্বার চাইছে!!
কুহু কিছু না বলে দ্রুত সিড়ি বেয়ে নামতে থাকে।
জেরিন ও সাথে সাথে নামে।
কুহু বাসার সামনে যেতেই রেহান কুহুর কাছে আসে।
রেহান – ও বাবাহ! আমার বউ টার দেখি অনেক টান আমার জন্য! যেই দেখলো আমি দাড়িয়ে আছি অমনি নিচে নেমে এসেছে।
কুহু – বাজে কথা বন্ধ করুন। আর এখানে কেনো এসেছেন আপনি?
এসেছেন তাও আবার ছাদে ইশারা করছেন লোকে দেখলে কি ভাববে বলুন তো?
রেহান – কি ইশারা করছিলাম বুঝতে পারো নি?
ফোন নাম্বার দাও।
কুহু – হোয়াট? আপনাকে ফোন নাম্বার দিবো তাই না!
রেহান রেগে কুহুর দিকে তেড়ে আসতেই কুহু এক দৌড়ে বাড়ির ভেতর চলে যায়।
রেহান – পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। কাল এসো ভার্সিটিতে পরে বুঝতে পারবা পালানোর মজা।
রেহান চলে যেতে নিলে কেউ পেছন থেকে ডাক দেয়। রেহান পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে জেরিন।
জেরিন – হাই আমি জেরিন।
রেহান – তোমার সাথে হাই হ্যালো করার সময় নেই। যদি পারো তো কুহুর ফোন নাম্বার টা দাও।
রেহানের কথায় জেরিন মারাত্মক রেগে যায়। তার মতো এতো সুন্দরী মেয়েকে কতো কতো ছেলে পটাতে চেয়েছে কেউ সাকসেস হতে পারে নি। আর এই ছেলে কিনা তাকে এভাবে ইনসাল্ট করেছে!
জেরিন নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে হাতে থাকা একটা কাগজের টুকরো রেহানের দিকে এগিয়ে দেয়।
রেহান – কী এটা? (ভ্রু কুঁচকে)
জেরিন – আপনি যেটা চাইছিলেন সেটাই।
রেহান – আর ইউ শিওর?
জেরিন – একদম!
রেহান – ওকে থ্যাংকস্ — বলেই কাগজের টুকরো টা হাতে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।
জেরিন তো মনে মনে নাগিন ড্যান্স দিচ্ছে। যাক এতোদিনে তার মনের আশা পূরণ হলো!
জেরিন বাসায় চলে আসতেই দেখে কুহু দাড়িয়ে আছে।
কুহু – তুই ঐ ছেলের সাথে কী কথা বলছিলি?
জেরিন – এমনি কিছুনা।
কুহু – দেখ জেরি ছেলেটা ভালো না। যদি ভালো হতো আমিই তো তোকে হেল্প করতাম বল। আমি তো চাইবো না জেনে শুনে আমার বোন কে একটা বখাটে ছেলের পাল্লায় ফেলতে।
জেরিন – আপি আমি কারো পাল্লায় পড়ি নি। — বলেই চলে আসে।
কুহু – ( তুই যে কেনো বুঝতে পারছিস না। ছেলেটা সত্যিই তোর জন্য পারফেক্ট না রে। আস্ত বখাটে ছেলে ও।)
এদিকে রেহান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নাম্বার টা হাতে নেয়।
রেহান – একবার ফোন করে দেখবো? হুম দেখি। নিশ্চয় অবাক হয়ে যাবে আমার কোকিল পাখিটা। ওর বোন টা হেল্প না করলে তো মহারানির ফোন নাম্বার টাই পেতাম না।
ভাবতে ভাবতেই রেহান নাম্বার টা দিয়ে ফোন দেয়….

চলবে…….

#প্রেমপিপাসা❤
#পর্বঃ-৬
#writer_শিফা_আফরিন
.
.
?
ভাবতে ভাবতেই রেহান নাম্বারটায় ফোন দেয়। রিং হতে না হতেই ওপাশ থেকে ফোন টা রিসিভ করে…
রেহান – বাবাহ আমার ফোনের জন্য ওয়েট করছিলে বুঝি? না হলে এতো তারাতারি ফোন রিসিভ করতে না নিশ্চয়?
— আমি তো সবসময়ই আপনার জন্য ওয়েট করে থাকি। সারাক্ষন শুধু আপনাকে নিয়েই ভাবি। জানেন? আমার অনেক ইচ্ছে ছিলো যদি আপনাকে আরেক বার সামনাসামনি দেখতে পারতাম! আল্লাহ আমার ইচ্ছে পূরণ করেছে। এমনকি আপনার সাথে কথাও বলতে পারছি। সত্যি সব কিছুই কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে!
আজ আমি সত্যিই অনেক অনেক খুশি।
রেহান – (কি হলো এটা! এতো দেখছি ভুতের মুখে রাম রাম! যে কিনা আমাকে সহ্যই করতে পারতো না সে এখন বলছে আমার সাথে কথা বলতে পেরে খুশি! আশ্চর্য!
আর গলার স্বর টাও কেমন কেমন লাগছে! কি জানি কুহুর সাথে তো কোনো দিন ফোনে কথা হয়নি। ফোনে তো সবার স্বরই পালটে যায়। হতেই পারে এমন। কিন্তু ও হটাৎ এমন বিহেভ করছে কেনো? পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি?…. মনে মনে)
— এইযে মিস্টার… কথা বলছেন না কেনো?
রেহান – হ্যা বলুন.. না মানে বলো…
— নিশ্চয় খুব অবাক হচ্ছেন? আমার মুখ থেকে এসব কথা শুনে? আসলে কি জানেন? অনেক মেয়েরা তো কখনো মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। কাউকে ভালোবাসার কথা তো না ই। আমিও সেরকমই একজন।
আপনাকে প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু আমার বিহেইভিয়ার দিয়ে বুঝাই নি ইভেন আপনাকে মুখেও বলি নি। তাই হয়তো আপনার অবাক লাগছে। কি তাই তো?
রেহান – আর ইউ ওকে কুহু?
— কেনো আমার আবার কী হবে? আপনার কি মনে হয় আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে?
রেহান – না তা না। বাই দ্যা ওয়ে তুমি কে?
— আপনি কার কাছে ফোন করেছেন?
রেহান – ফোন কাকে করেছি তা জানিনা তবে আমি কুহুর সাথেই কথা বলতে চাই অন্য কারো সাথে না।
— আচ্ছা এতো কুহু কুহু করার কী মানে হই বলুন তো? ও তো আপনাকে পাত্তা ও দেয় না। তাহলে আপনি কেনো ওর জন্য ওয়েট করে আছেন?
রেহান – হোয়াট!! তুমি তার মানে কুহু না?
— না আমি কুহু না। আপনার কি মনে হয় কুহু এরকম বিহেভ করবে আপনার সাথে? ও তো আপনাকে সহ্যই করতে পারে না।
রেহান – জাস্ট সাট আপ ডেম এট তোমার সাহস তো কম না। তুমি কুহুর নামে এতো বাজে কথা বলছো কোন সাহসে? তুমি নিশ্চয় কুহুর বোন?
— হ্যা আমি জেরিন।
রেহান – ইউউ… তোমাকে যদি এখন কাছে পেতাম না কষে দুইটা থাপ্পড় মারতাম। লজ্জা করে না তোমার? নিজের বোনের বফের সাথে প্রেমের আলাপ করছো?
জেরিন – বোনের বফ?
রেহান – ইয়াপ.. আজ না হই কাল কুহু আমাকে ঠিকই মেনে নিবে। তখন তো আমাকে দুলাভাই ডাকবে তুমি !!
জেরিন রেহানের কথা শুনে প্রচন্ড রেগে যায়।
জেরিন – দুলাভাই মাই ফুট… দেখুন না আপি আপনাকে মেনে নেয় কিনা। কোনো দিনও মানবে না বুঝলেন কারন আপি শুধু তিশান ভাইয়াকে ভালোবাসে। আপির মনে তিশান ভাইয়ার জায়গা টা কেউ নিতে পারে নি আর পারবে ও না। আপনি তো কখনো না!!
রেহান – তিশান কে?
জেরিন – সেটা না হয় আপনার না জানাই থাক। না জেনেই যেহেতু ভালোবেসেছেন না জানাই থাকুক।
রেহান – তিশান কে? আন্সার মি….(চেচিয়ে)
রেহানের ধমক শুনে জেরিন কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
জেরিন – আপির বয়ফ্রেন্ড। ৩ বছরের ডিপ রিলেশন তাদের। জানেন? আপি তিশান ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসে ইভেন নিজের থেকেও বেশি। এই জন্যই হয়তো আপনাকে মেনে নিতে পারছে না।
রেহান জেরিনের কথা শুনে কিছু না বলে ফোন টা কেটে দেয়। রেহানের এমন চুপ থাকার মধ্যেও তার ভয়াবহ রাগই প্রকাশ পায়।
রাগে রেহানের কপালের রগ টা ফুলে উঠেছে। হাত দু’টো মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। অনেক খন ধরে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে রেহান। আর এরকম করার একটাই কারন নিজের রাগ কনট্রোল করার চেষ্টা করছে সে।
রেহান – তোমার তিশান কে ভালোবাসো তাই না? তিশান!
ভালো তো তুমি আমাকেই বাসবে। তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করেছি বলে টের পাওনি তাই না? রেহানের ভালো রুপ টাই চোখে পড়েছে তাই এড়িয়ে গেছো কাল থেকে ভয়ংকর রুপটা দেখবে! জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ্!
রেহান রেগে হাতের কাছে থাকা ফুলদানি টা তুলে আাছাড় মেরে ভেঙে ফেলে।
মাথায় দু’হাত দিয়ে চেঁপে ধরে বসে থাকে।
এদিকে কুহু ফোন নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে। অনেক খন বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিয়ে অফলাইনে চলে যায়। কিছুক্ষন পরই কুহুর মা আসে…
কুহুর মা – খেয়ে আয় কুহু।
কুহু – ওকে মা আসছি।
কুহু খাবার টেবিলে গিয়ে বসে। জেরিন ও আগে থেকেই বসা ছিলো।
জেরিন কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে অনেক খুশি!
কুহু – কিরে এতো খুশি খুশি! কোনো গুড নিউজ আছে নাকি?
জেরিন – (গুড নিউজ তো বটেই আপি! কিন্তু সরি গো…. তোমাকে তো বলা যাবে না!)
না না আপি গুড নিউজ কিসের আবার। এমনিতেই ভালো লাগছে আজ।
কুহু – ওহহ আচ্ছা খাওয়া শুরু কর।
জেরিন – হুম।
সবাই খাওয়া শুরু করে। কুহুর খাওয়া শেষ হতেই সে নিজের রুমে চলে যায়।
জেরিনও নিজের রুমে যায়। গিয়েই ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে রেহান ফোন দিয়েছে কিনা?
কিন্তা না! রেহানের কোনো ফোন বা ম্যাসেজ কিছুই আসেনি।
জেরিন – হুহহহ দেমাক কতো ছেলেটার! যাকগে আমিই ফোন দিয়ে দেখি।
জেরিন রেহান কে ফোন দেয় কিন্তু রেহানের ফোন অফ। জেরিন একটু পর পরই রেহান কে ফোন দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু রেহানের ফোন অফ।
জেরিন রেহান কে একটা ম্যাসেজ পাঠায় যাতে লিখা ছিলো….
” কাল আমার সাথে একবার দেখা করবেন প্লিজ? কিছু কথা ছিলো। ”
ম্যাসেজ টা দিয়েই জেরিন ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে…
রেহান ঘুম থেকে উঠে দেখে ৮ টা বাজে। রেহান একলাফে উঠে বসে পড়ে।
ভার্সিটির দেরি হয়ে যাবে তাই রেহান দ্রুত উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।
রেহান ফ্রেশ হয়ে আসতেই তার মা রুমে আসে…
রেহানের মা – আজ এতো বেলা অব্দি ঘুমালি যে?
রেহান – হ্যা। তুমি ডাকলে না যে?
রেহানের মা – তোকে কতো বার ডাকতে এসেছি আমি নিজেও জানিনা। তোর ঘুম ভাঙ্গলে তো?
রেহান – ঠিক আছে ব্রেকফাস্ট রেডি করো আমি আসছি।
রেহানের মা – হ্যা আয় তারাতারি।
রেহান ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। রেহান সবাইকে গুড মর্নিং জানায়।
রেহানের বাবা – রাতে কি ঘুম হয়নি?
রেহান – না। তাই তো সকালে উঠতে পারি নি।
রেহানের বাবা – হুম বুঝলাম। ভার্সিটিতে যাবে না?
রেহান – হ্যা যাবো বাবা। ( যেতে তো আজ হবেই!)
রেহানের বাবা – ওকে খেয়ে নাও তারাতারি।
রুপসা ( রেহানের ছোট বোন) – ভাইয়া আজ কিন্তু আমার পাওনা টা চাই।
রেহান – তোর আবার কিসের পাওনা শুনি? (ভ্রু কুঁচকে)
রুপসা – ঐযে আমার আইসক্রিম।
রেহান – ওরে বাবা! এখনো মনে আছে তোর। আমি তো ভেবেছিলাম তোর মাথায় গোবর ভরা কিছু মাথায় রাখতে পারিস না।
রুপসা – ভাইয়াআআআ……বেশি বলছো না তুমি?
রেহান – ওকে বাবা সরি। এই কান ধরছি (কান ধরার ভান করে)
রুপসা – হবে না। আইসক্রিম চাই।
রেহান – ঠিক আছে বাবা আনবে আনবো।
রেহানের বাবা – আচ্ছা ঠিক আছে এবার খেয়ে নে।
রেহান খাওয়া শেষ করে উঠে পরে।
রেহান ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরে।
ভার্সিটি তে আসার পর অনেকক্ষণ ধরে রেহান কারো জন্য ওয়েট করছে।
এদিকে কুহু সানিয়া আর রিহার সাথেই ভার্সিটি তে ঢুকে।
ভার্সিটিতে আসার পরই কুহুর চোখ আটকে যায়।
তার ব্ল্যাক কিং!
বাহ আবার সেই আগের মতোই তবে আজ একটু ব্যাতিক্রম লাগছে!
সাদা শার্ট হাতা ফোল্ড করা, কালো জিন্স, চোখে সানগ্লাস, চুল গুলো বার বার অবাধ্য হয়ে চোখে পড়ছে।
কুহু একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।
সানিয়া – কিরে… প্রেমে পড়লি নাকি?
রিহা – আমার তো মনে হচ্ছে সামথিং সামথিং!
সানিয়া – আরে এবার তো চোখ নামা। বেচারার নজর লেগে যাবে তো!
রিহা আর সানিয়ার হাসাহাসিতে কুহু ধ্যান ভাঙে।
কুহু – কি হয়েছে এভাবে হাসছিস কেনো?
সানিয়া – যাহ বাবা! দেখায় এতোটাই ব্যাস্ত ছিলি যে আমরা এতোখন কি বললাম কিছুই শুনলি না!
কুহু – বাজে কথা বন্ধ করে ক্লাসে চল।
সানিয়া – এখনো ও ক্লাস শুরুই হয়নি। তাছাড়া মনে হই ক্লাসে কেউ যায়ও নি। একটু পরে যাই?
কুহু – এখনি চল। কেউ যায়নি তো কি হলো? আমরা গিয়ে আড্ডা দিবো কিছুক্ষন।
রিহা – ওকে চল।
কুহু চলে যাওয়ার সময় একপলক রেহানের দিকে তাকায়। কুহু বেশ বুঝতে পারছে রেহান রেগে আছে। কিন্তু কেনো রেগে আছে তার কারন টা কুহুর অজানা।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here