প্রেমপিপাসা❤
পর্ব – ৯,১০
writer_শিফা_আফরিন_মিম
পর্ব – ৯
?
রেহান – আমার সন্দেহ টাই যদি সত্যি হয় তাহলে তুমি পাড় পাবে না। এর মাশুল তোমাকে দিতেই হবে!
এদিকে জেরিন বাসায় এসে ভাবতে থাকে কি করবে? কোথ থেকে নাম্বার জোগাড় করবে। আর তিশান নামের কাউকে পাবেই বা কী করে?
হাজারো চিন্তা জেরিনের মাথায়।
জেরিন রুমে গিয়ে সোজা দরজা বন্ধ করে ভাবতে থাকে কী করা যায়।
জেরিন ওর বন্ধবী দের কাছে ফোন দিয়ে সব বলে। সবারই একটা কথা তারা এই বিষয়ে কোনো সাহায্য করতে পারবে না।
হটাৎ জেরিনের মাথায় আসে হিয়ার কথা হিয়া দেশেই থাকে। হিয়ার সাথে জেরিনের পরিচয় হয় ফেইসবুকে। যদিও ওরা ফেইসবুক ফ্রেন্ড তাও অনেক ক্লোজ।
জেরিন হিয়ার ফোন নাম্বার বের করে হিয়াকে কল করে।
কয়েকবার রিং হতেই হিয়া কল টা রিসিভ করে।
— হ্যালো.. আমার কথা মনে আছে নাকি তোর?
জেরিন – ইয়াপ বেইবি মনে আছে নিশ্চয়ই না হলে কি ফোন দিতাম বল?
হিয়া – হ্যা তা ভালো করেই জানি। এখন বল কেমন আছিস? কেমন দিন কাটছে বাংলাদেশে?
জেরিন – ভালো না রে! অনেক বড় একটা সমস্যায় পড়েছি।
হিয়া – বলিস কী? দেশে আসতে না আসতেই সমস্যা! তা কী সমস্যা জানতে পারি?
জেরিন – হ্যা অবশ্যই। তোর কাছে হেল্প চাইবো বলেই তো ফোন করা।
হিয়া – হ্যা বল। আমি যতোটা পারি তোকে হেল্প করবো।
জেরিন হিয়াকে রেহানের ব্যাপারে সব বলে।
হিয়া – বুঝলাম তুই ছেলেটাকে চাস। কিন্তু সে কি তোকে চায়? আই মিন তোকে ভালোবাসবে? নাকি অন্য কেউ আছে তার?
জেরিন – হ্যা আছে।
হিয়া – তাহলে তো আর কথাই নেই। যেহেতু ওর গার্লফ্রেন্ড আছে।
জেরিন – গার্লফ্রেন্ড না। ও আমার কুহু আপিকে বোধহয় ভালোবাসে। কিন্তু আপি ওকে একসেপ্ট করছে না। ইভেন অনেকবার আপিকে বলেছে ও তাও আপি রাজি হয় নি।
হিয়া – হ্যা তো? একসেপ্ট করেনি কী হয়েছে? করে নেবে।
জেরিন – কিন্তু আমি তো তা চাই না। আমি চাই একসেপ্ট করার আগেই জেনো রেহান আপি কে ভুল বুঝে।
হিয়া – মানে? কী বলছিস তুই? তুই কি চাস না তোর আপির রিলেশন টা হোক।
জেরিন – আমি ওকে ভালোবাসি আর আমি চাইবো ওর সাথে অন্য কারো রিলেশন হোক! আর ইউ ক্রেজি?
হিয়া – তুই আসলে কী করতে চাইছিস বল তো?
জেরিন – দেখ একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা কর। আপি যেহেতু রেহান কে একসেপ্ট করছে না তাহলে নিশ্চয় কোনো কারন আছে। যদিও সত্যি টা হলো কোনো কারন নেই কিন্তু আমি রেহান কে বলেছি যে আপির তিশান নামে একজনের সাথে রিলেশন আছে। ইভেন রেহান সেটা বিশ্বাসও করে নিয়েছে। সে ভাবছে আপির সত্যিই তিশানের সাথে রিলেশন আছে। তাই আপি ওকে একসেপ্ট করছে না।
হিয়া – তারপর?
জেরিন – রেহান আমার কাছে ঐ তিশানের এডড্রেস আর ফোন নাম্বার চাইছে। এখন প্রবলেম হলো আমি তো এই নামে কাউকে চিনিই না। তাহলে এইসব কিভাবে জোগাড় করবো?
তাছাড়া এখানকার কারো সাথে আমার তেমন কোনো যোগাযোগ ও হয়না। এখন তুই পারিস আমাকে হেল্প করতে।
তোর কোনো ছেলে ফ্রেন্ড থাকলে ম্যানেজ করে দে প্লিজ। যেভাবেই হোক তিশান নামের কাউকে আমার চাই।
হিয়া – তুই কি পাগল হয়েছিস? তুই না বলেছিস কুহু আপি আর তার বাবা মা তোকে নিজের করে দেখে। তাহলে? এঔ সব কেনো করতে চাইছিস? তাছাড়া এটা তো অন্যায়।
জেরিন – হ্যা মানছি ওরা আমাকে অনেক ভালোবাসে তাই বলে কি আমি যাকে ভালোবেসে ফেলেছি তাকে হারাতে দিবো। আর রইলো অন্যায়ের কথা! ন্যায় অন্যায় বিবেচনা করার টাইম নেই আমার সত্যি বলছি। আমার রেহান কে চাই ই চাই।
তুই আমার এইটুকু সাহায্য কর প্লিজ।
হিয়া – আচ্ছা ঠিক আছে। তোর যা ভালো মনে হই তুই তাই করিস। আমি ম্যানেজ করবো।
জেরিন – অনেক অনেক ধন্যবাদ ডিয়ার। আর হ্যা একটা কথা টাকা নিয়ে বলবি টেনশন না করতে যতো টাকা চায় আমি দিবো সমস্যা নেই।
হিয়া – ওকে। ম্যানেজ করে আমি তোকে জানাবো।
জেরিন – ওকে বাই।
হিয়া – বাই।
জেরিন ফোন টা কেটে দিয়ে খুশিতে মোবাইল টাকে একটা চুমু দেয়….
জেরিন – এখন কিভাবে বিশ্বাস না করে থাকতে পারো আমিও দেখে নিবো মিস্টার রেহান!
আপি কে অবিশ্বাস করা ছাড়া তোমার কাছে আর কোনো রাস্থা নেই।
বিকেলে…
কুহু ঘুম থেকে উঠে ছাদে চলে আসে। অনেকক্ষণ ছাদের গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে। হটাৎ নিচে তাকাতেই দেখে গাড়ি করে কেউ কুহুদের বাসায় এসেছে।
মানুষ দুজন কে দেখেকুহুর চোখ আটকে যায়।
কুহু এক দৌড়ে নিচে নেমে আসে। দরজা খুলেই ফুপিইইই বলে জড়িয়ে ধরে।
কুহুর ফুপি আর ফুপা মানে জেরিনের মা বাবা এসেছে।
জেরিন ও দৌড়ে এসে তার মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে।
জেরিনের মা – কেমন আছো আম্মুনিরা?
জেরিন কুহু দু’জনই উত্তর দেয় – ভালো আছি। তাদের উত্ততে পার্থক্য এতটুকুই জেরিন আম্মু বলেছে আর কুহু ফুপি।
জেরিনের বাবা – দেখলে তোমাকে পেয়ে আমার দুই মেয়ে আমাকেই ভুলে গেছে।
কুহু – তোমাকে ভুলবো? অসম্ভব!
জেরিনের বাবা – হ্যা হ্যা বুঝেছি পাকনি বুড়ি। তা জেরিন মামুনি কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো তোমার?
জেরিন – একদম না আব্বু। আমি অলওয়েজ ফাইন।
কুহুর মা – আপা অনেক গল্প হয়েছে এবার তো ভিতরে এসে বসুন। ভাইজান ভেতরে আসুন।
জেরিনের বাবা মা ভেতরে এসে বসে।
কুহু – ফুপি তোমরা আসবে আমাকে কেউ বলে নি কেনো?
জেরিন – আমারও তো একি প্রশ্ন!
জেরিনের মা – আমিই না করেছি ভাবিকে(কুহুর মাকে) তোদের জেনো না জানায়। কেমন লাগলো সারপ্রাইজ? (হেসে)
কুহু – সে আর বলতে হয়!
কুহুর বাবা – পথে কোনো সমস্যা হয়নি তো তোদের?
জেরিনের মা – না ভাই একদম না।
কুহুর বাবা – কুহু তুমি তোমার ফুপা ফুপি কে রুমে নিয়ে যাও কিছুক্ষন রেস্ট করুক। অনেক জার্নি করেছে।
কুহু – চলো ফুপি।
কুহুর মা – আপা কিছুর প্রয়োজন হলে ডাকবেন আমায় কেমন?
জেরিনের মা – এতো ব্যাস্ত হবেন না। তাছাড়া এই বাড়িতে কি আমি নতুন নাকি হ্যা? কোনো সমস্যা নেই বুঝলেন। (হেসে)
কুহু একটা রুম খুলে দেয়।
কুহু – ফুপি তোমরা রেস্ট করো। কোনো সমস্যা হলে আমাকে ডেকো কেমন? আমি পাশের রুমেই আছি।
জেরিনের মা – ঠিক আছে আম্মুনি।
জেরিন – মা ভাইয়া আসেনি কেনো?
জেরিনের মা – তুই তো জানিস তোর ভাইয়া কেমন। যা বলে তাই করে। বলেছে ওর একটা কাজ আছে আসতে পারবে না। এতো বার করে বলার পরও আসলো না ও নিজের কাজ নিয়েই ব্যাস্ত।
জেরিন – ওহো… ভাইয়া আসলে তো আরও ভালো হতো। (মন খারাপ করে)
জেরিনের মা – মন খারাপ করেনা। কাজ শেষ হলে আমি বলবো চলে আসতে।
কুহু – ফুপি এবার কিন্তু তারাতারি চলে যেতে দিবো না বলে দিলাম।
জেরিনের মা – এবার ৪ মাস থাকবো! খুশি তো?
কুহু – অন্নেক খুশি। (জেরিনের মাকে জড়িয়ে ধরে) আচ্ছা তোমরা রেস্ট নাও কেমন।
কুহু আর জেরিন চলে আসে। জেরিন নিজের রুমে চলে যায়। তার বাবা মা আসাতে এতোটাও খুশি হয়নি।
জেরিন – ধুরর মা বাবা আসার এখনি সময় হলো? কিছুদিন পরও তো আসতে পারতো। যদি আমার প্লান টা জানতে পেরে যায় তাহলে তো আমাকে মেরেই ফেলবে। ওফফফ এতো টেনশন আর ভালো লাগছে না। যা করার সাবধানে করতে হবে।
জেরিন ফোন টা হাতে নিতেই দেখে হিয়ার মিসডকল। ওর মা বাবার সাথে কথা বলার সময় হয়তো ফোন দিয়েছে। তাই রিসিভ করা হয়নি।
জেরিন তারাতারি করে হিয়ার কল ব্যাক করে…
হিয়া – কিরে কোথায় ছিলি? ফোনে পেলাম না যে?
জেরিন – মা বাবা এসেছে। তাই কথা বলছিলাম।
হিয়া – বলিস কি! খুশির খবর তো!
জেরিন – ধুরর খুশি না ছাই! এখন আমি আর নিজের প্লান মতো কাজ করতে পারবো না। যদি মা বাবা জানতে পারে তো আমাকে মেরেই ফেলবে।
হিয়া – তাহলে কি সব ক্যান্সেল?
জেরিন – আরে না। তুই ম্যানেজ করতে পেরেছিস তো?
হিয়া – দেখ আমার কোনো ফ্রেন্ড রাজি হয়নি। উপায় না পেয়ে আমার বফ কে বললাম। জানিস তো বেচারা আমি যা বলি তাই করে। তো ওকে সব টা বললাম। প্রথমে রাজি না হলেও আমার জন্য রাজি হয়ে যায়।
জেরিন – আরে নো প্রবলেম তোর বফ হোক বা বরই হোক আমি তো নিয়ে যাচ্ছি না। শুধু এক্টিং করবে ব্যাস।
হিয়া – ওকে। আমি ওর ফোন নাম্বার দিচ্ছি। সাথে এডড্রেস ও।
জেরিন – এই শোন শোন…. ওর বাবা মা?
হিয়া – ওর বাবা মা এখানে থাকে না। ও এখানে থেকে পড়াশুনা করছে বুঝেছিস।
জেরিন – ওহহ ওকে।
হিয়া – হুম। আমি তোকে ম্যাসেজ করে দিচ্ছি।
হিয়া ফোন টা কেটে দেয়। জেরিনের খুশি আর দেখে কে? জেরিন তো পারলে ড্যান্স করে!
রাতে…
সবাই একসাথে খেতে বসে। জেরিন আর কুহুর খাওয়া শেষ হলে ওরা রুমে চলে যায়।
আর বাকিরা ড্রয়িং রুমেই বসে কথা বলে।
এদিকে জেরিন নিজের রুমে এসে ভালো করে দরজাটা আটকে দেয়।
খাটে বসে মোবাইল টা হাতে নিয়ে রেহান কে কল করে….
চলবে……
#প্রেমপিপাসা❤
#পর্ব – ১০
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
.
.
?
জেরিন ফোন টা হাতে নিয়ে রেহান কে কল করে।
২ বার কল দেয়ার পরও রেহান কল রিসিভ করে নি।
জেরিন – হলো টা কী? ফোন তুলছে না কেনো? আরেকবার দিয়ে দেখি…
ভাবতে ভাবতেই জেরিন আবার রেহান কে কল করে। এবার রেহান সাথে সাথেই ফোন টা রিসিভ করে নেয়।
রেহান – হ্যা বলো…
জেরিন – তিশান ভাইয়ার ফোন নাম্বার আর এডড্রেস টা পেয়েছি।
রেহান – ওকে ম্যাসেজ করে দাও।
জেরিন – ওকে। — রেহান ফোন কেটে দিতেই জেরিন নাম্বার আর এডড্রেস টা পাঠিয়ে দেয়।
রেহান নাম্বার টা পেয়ে সাথে সাথেই নাম্বারে ফোন দেয়।
— হ্যালো… কে?
রেহান – আমি কে সেটা পরে জানতে পারবে। তুমি নিশ্চয় তিশান?
— হ্যা।
রেহান – গুড। ফ্রি আছো আজ?
তিশান – হ্যা আছি। কিন্তু কেনো?
রেহান – মিট করবো তাই।
তিশান – কিন্তু আমি আপনার সাথে মিট করবো কেনো?
রেহান – এতে তোমারই ভালো হবে।
তিশান – ওকে কোথায় আসবো বলুন।
রেহান তিশানকে একটা ঠিকানা ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দেয়। আর বলে আগামিকাল সকাল ৯ টায় চলে আসতে।
পরের দিন….
জেরিন আজ খুব খুশি নিশ্চয় তার মনের মতো কিছু ঘটবে আজ!
কুহু রেডি হয়ে ভার্সিটিতে চলে যায়। গেইটে ঢুকতেই কেউ কুহুর হাত চেপে ধরে। কুহু তাকিয়ে দেখে রেহান।
কুহু – হাত ধরলেন কেনো?
রেহান – ওহহ আমি ধরলেই যতো সমস্যা! আর তিশান ধরলে বুঝি খুব ভালো লাগে তোমার? (রাগি লুক নিয়ে)
কুহু – বাজে কথা কম বলুন। কে তিশান? আমি কোনো তিশান কে চিনি না আর কতো বার বলবো বলুন তো?
রেহান – এইসব নাটক করতে হবে না আর। তোমার তিশান আসছে তখন সামনাসামনি না হয় বলে দিও তুমি ওকে চিনো না। (বাঁকা হেসে)
কুহু এবার বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। কি হচ্ছে এসব! কে তিশান? যাকে আমি চিনিই না নামও জানিনা সে সামনে আসলেই কি বা না আসলেই কি আজিব!
রেহান কুহুর হাত আগের মতোই চেপে ধরে আছে।
গেইটের সামনে কেউ এসে অনেক খন ধরেই কাউকে খুঁজছে। ফোন টা হাতে নিয়ে কল দিতেই রেহানের ফোন না বেজে উঠে।
রেহান – চলে এসেছো?
— হ্যা। আমি তো ভার্সিটির গেইটের সামনেই আছি। আপনি কোথায়?
রেহান গেইটের সামনে তাকাতেই একটা ছেলেকে দেখতে পায় কানে ফোন নিয়ে দাড়িয়ে আছে। রেহান কুহুর হাত টা ধরে রেখেই ছেলেটার কাছে যায়।
রেহান – হ্যালো তিশান!
— ওহহ হাই। আপনিই রেহান?
রেহান – হুমম।
— তা কেনো ডেকেছেন?
রেহান – এভাবে রাস্তায় কথা না বলে আমার মনে হই কোনো কফিশপ বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে কথা বলা যাক।
— এজ ইউর উইশ।
কুহুর মাথায় কিছুই ঢুকছে না কে এই ছেলে? সে তো স্বপ্নেও এই ছেলে কে দেখেনি বাস্তবে দূরে থাক!
রেহান কুহুর হাত টা আগের মতোই ধরে আছে।
রেহান কুহু আর ছেলেটা একটা কফিশপে যায়।
রেহান – তা তিশান তুমি কোন বর্ষে?
ছেলেটা – জ্বী আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়া
রেহান – ওহহ গুড।
ছেলেটা রেহান কে দেখেই কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। কারন রেহানের চোখ গুলো ভয়ংকর রকমের হয়ে আছে। তাছাড়া রেহান ওর সিনিয়র।
ছেলেটা – আচ্ছা আপনার সাথে উনি কে? নিশ্চয় আপনার গার্লফ্রেন্ড?
এবার কুহু বড়সড় শক খেলেও রেহান যেনো একদমই স্বাভাবিক আছে। কুহু রেহানের দিকে তাকিয়ে দেখে রেহানের কোনো রিয়াকশন নেই।
এটা কিভাবে সম্ভব! তিশান নাকি আমার বফ! অথচ আমি তাকে চিনতাম না। এখন তো দেখছি এই তিশান ও আমাকে চেনে না!!
তাহলে উনি বার বার কেনো বলে যাচ্ছেন তিশানের সাথে আমার রিলেশন আছে!
ওহহ আল্লাহ এতো কনফিউশন আর ভালো লাগছে না!
রেহান – সেকি! তুমি তোমার গার্লফ্রেন্ড কে চিনতে পারছো না! হাউ ফানি! (বাঁকা হেসে)
রেহানের কথা শুনে মিস্টার তিশান পুরাই হাম্বা বলদ টাইপ হয়ে গেছে!
ছেলেটা – ( তার মনে এই কুহু! এর জন্যই হিয়া আমকে রাজি করিয়েছিলো? কিন্তু আমিই বা কি করবো আমি তো এই মেয়েকে কখনো দেখিই নি। ঐ হিয়ার বাচ্চা হিয়াও তো আমাকে কোনো পিক দেয়নি। এখন কি করি? ধরা তো পরে গেলাম!…মনে মনে)
রেহান – কি হলো মিস্টার তিশান? আপনি এতো ঘামছেন কেনো? বেশি গরম লাগছে? (দাঁতে দাঁত চেঁপে)
ছেলেটা – জ্বী…. না মানে আমি ঠিক আছি। আপনি কেনো ডেকেছেন বললেন না তো?
রেহান – কতো পেয়েছিস? (রাগি কন্ঠে)
রেহানের রাগ দেখে কুহুর হাত পা রীতিমত কাঁপছে।
আর সাজানো তিশান তো ভয়ে চুপসে গেছে।
ছেলেটা – (এখন কি করি? ধরা পরে গেলাম! কিন্তু হিয়া তো বলেছে সাকসেস হতে না পারলে আমাকে ব্রেকাপ করে দিবে! ধুরর করলে করুক আগে নিজে বাঁচি। এই ছেলে যা রাগি। মেরে আমাকে মাটির নিচে পাঠিয়ে দিবে মনে হচ্ছে। বেঁচে থাকলে কতো গার্লফ্রেন্ড পাবো!!… মনে মনে)
রেহান – কত টাকা পেয়েছিস বল? (কিছুটা চিৎকার করে)
রেহানের চিৎকার শুনে আশেপাশের সব মানুষ ওদের দিকে তাকায়।
রেহানের এমন ভয়ংকর রুপ দেখে ছেলেটা সাথে সাথে রেহানকে হাত জোর করে বলতে থাকে…
ছেলেটা – ভাইয়া আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ। আমার কোনো দোষ নেই বিশ্বাস করুন আমি প্রথমে রাজি ছিলাম না। কিন্তু হিয়া আমাকে ব্রেকাপ করার কথা বলায় রাজি হয়েছিলাম। (কেঁদে দিয়ে)
রেহান – হিয়া টা কে?
ছেলেটা – আমার গার্লফ্রেন্ড। জেরিন নামে ওর ফ্রন্ড আছে৷ সেই ওকে বলেছে ওর কোনো ফ্রেন্ডকে তিশান সাজিয়ে দিতে। তাই ও আমাকে দিয়ে এই সব করিয়েছে। আমায় মাফ করে দিন ভাইয়া।
রেহান – ওকে তুমি যাও। —- বলেই কুহুর হাত ধরে হাটা শুরু করে।
রেহান কুহুকে নিয়ে ভার্সিটির ছাঁদে চলে আসে।
কুহু একপাশে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে আরেকপাশে রেহান।
রেহানকে দেখতে শান্ত মনে হলেও এই মূহুর্তে কুহুর অনেক ভয় করছে। কারন রেহানের এই চুপ থাকার পেছনে কি পরিমাণ রাগ লুকিয়ে আছে তা বুঝার ক্ষমতা হয়তো কুহুর নেই।
কুহুর এটা ভেবেই খারাপ লাগছে জেরিন এই কাজটা করেছে! যাকে কিনা নিজের আপন বোনের মতো ভালোবাসতো! কুহুর চোখ বেয়ে দু ফুটা পানি বেরিয়ে আসে।
হটাৎ রেহান কুহুর কাছে এসে কুহুকে জড়িয়ে ধরে…
রেহান – আমায় মাফ করে দিও সোনা। সত্যিই যখন শুনেছি তুমি রিলেশন এ আছো আমার মাথা ঠিক ছিলো না। হ্যাঁ মানলাম রিলেশন থাকতেই পারে তোমার। কিন্তু আমি যে তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তোমাকে ছাড়া থাকতেও পারবো না। তাই তোমাকে পাওয়ার ইচ্ছা টা এতোটা তীব্র হয়েছে।
কুহু – কে বলেছিলো আমি রিলেশন করি?
রেহান কুহুকে হালকা ছেড়ে দিয়ে দাড়ায়।
রেহান – তোমার আদরের বোন জেরিন।
কুহু ভাবতেও পারছে না জেরিন এতোটা নিচ।
কুহু – আপনিও বিশ্বাস করে নিলেন? (করুন ভাবে)
রেহান – আমি বিশ্বাস করলে নিশ্চয় এই প্লান টা করতাম না।
কুহু – মানে? (অবাক হয়ে)
রেহান – মানে জেরিনের কথাটা আমি ঠিকঠাক ভাবে বিশ্বাস করতে পেরেছিলাম না।
আমার প্রথমই সন্দেহ হয় কেনো জানো?,
ঐ দিন ছাদে ইশারা করে আমি তোনার ফোন নাম্বার টা চেয়েছিলাম। তুমি বাসায় চলে যাওয়ার পর জেরিন নিচে এসে ওর নিজের ফোন নাম্বার টা দেয়।
আমি চেয়েছিলাম তোমার নাম্বার কিন্তু ও মিথ্যা বলে নিজের নাম্বার টা তোমার বলে আমাকে দিয়ে দেয়। আমিও ভেবেছিলাম নাম্বার টা হয়তো তোমারই। কিন্তু ফোন দিয়ে বুঝতে পারি নাম্বার টা জেরিনের।
আর তখনই বুঝলাম তোমার এই বোন মিথ্যে বলার জন্য একদিন নিশ্চয় নোবেল পাবে!
তাই ওর বলা কথা গুলো বিশ্বাস করি নি। তাছাছা ওর সাথে মিট করার সময় ওর হাবভাব দেখেও আমি বুঝেছি ও মিথ্যা বলছিলো।
কুহু – তাহলে আমাকে এতো কথা শুনালেন কেনো? (কিছুটা রেগে)
রেহান – জানপাখি সবই যদি প্রথমে বলে দিতাম তাহলে বিষয় টা ঝাপসা থাকতো। আমি প্রমান ছাড়া কিছু করতে পারি না। তাই তোমাকে কষ্ট দিয়েছি।
কুহু – তাই বলে এই রকম বিহেভ? (অভিমান করে)
রেহান – আহারে কতো কষ্ট পাইছে আমার জানপাখি টা। বাই দ্য ওয়ে তুমি কি আমার প্রেমে পড়ে গেলা নাকি? আমি তো জানতাম তুমি আমাকে সহ্যই করতে পারো না। এখন তো দেখছি সামথিং সামথিং! (চোখ মেরে)
কুহু – হুহহ বয়েই গেছে (মাথা নিচু করে)
রেহান – প্রেমে না পড়লে এতো লজ্জা পেতে না বুঝলে?
মুখে না বললেও আমি কিন্তু ঠিকই বুঝতে পেরেছি।
কুহু – হয়েছে এবার চলুন এখান থেকে। কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হয়ে যাবে।
রেহান – কুহু আমার একটা কথা রাখবে?
কুহু – বলুন…
রেহান – তুমি জেরিন কে কিছুই বলবে না। যা বলার আমিই বলবো। আমি যে সত্যি টা জানতে পেরেছি তা যেনো জেরিন বুঝতে না পারে।
কুহু – কিন্তু কেনো?
রেহান – কারন আছে তাই। বেশি প্রশ্ন করো না।
কুহু – আচ্ছা ঠিক আছে। চলুন এবার।
কুহু চলে যেতে নিলে রেহন কুহুর হাত ধরে কাছে আনে
কুহু -আবার কি হলো?
রেহান কিছু না বলে কুহুর কপালে চুমু দেয়।
রেহান – ব্যাস… এবার চলো।
কুহু মুচকি হাসে সাথে রেহানও!
চলবে…….