প্রেমবিভ্রাট ০১ তানভীর তুহিন

0
2191

ভারী বেনারসি পড়ে খাটে বসে ঝিমোচ্ছে দীপ্তি। ঘুমে ঢলে পড়ছে। এমনিতে দীপ্তি ভোররাত করেই ঘুমোয়। তবে আজকের ধকল এবং এই বেনারসির ভারে প্রচণ্ড ক্লান্ত বোধ করছে সে। রাত প্রায় দেড়টা। এখনো তুহিন বাসর ঘরে আসছে না। কেন আসছে না?

বেনারসি নামক পাথরের বস্তাটা খুলতে হবে; অন্তর্মনে ভাবল দীপ্তি। খুক! খুক! শব্দে কেশে রুমে ঢুকল তুহিন। তুহিনকে দেখেই মেজাজ বিগড়ে গেল দীপ্তির। আজ যদি প্রথমা বিবাহ রজনী না হতো তাহলে ঠিকই দীপ্তি তুহিন ব্যাটার কলার টেনে, চেপে জিজ্ঞেস করত, ” এই ব্যাটা এত দেরি কেন হয়েছে তোর? ” কিন্তু আজ প্রথমরাত বলে কথা। দীপ্তি নিজেই নিজের বিগড়ে যাওয়া মেজাজে জল ঢালল।

তুহিন রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে পায়চারি করছে। অনবরত পায়চারি করছে। দীপ্তি পিটপিটে চোখে তুহিনের দিকে তাকিয়ে ঢুলছে। বাসররাতে তুহিনের পা ছুঁয়ে সালাম করতে হবে। তুহিন ঘরে ঢোকা মাত্রই ওর পা ছুঁয়ে সালাম করবি। ভুলে যাস না যেন। হঠাৎ মায়ের বলা কথা মনে পড়তেই দীপ্তি ক্লান্তিকে পাশে বসিয়ে খাট ছেড়ে নেমে দাঁড়াল। হেটে গেল তুহিনের সামনে। তুহিন পায়চারি থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। দীপ্তি বসে তুহিনের পায়ে হাত দিতে যাবে, তখনই তুহিন নিজের পা সরিরে অপ্রস্তুত মৃদু হেসে বলল, ” আরে কোন প্রয়োজন নেই এসবের। ”

দীপ্তি মুখ কুঁচকে বিরক্ত দৃষ্টে তাকাল তুহিনের দিকে। তুহিন অপ্রস্তুত হাসিটাকে পেটে টেনে নিল। দীপ্তি খানিক সামনে এগিয়ে তুহিনের পা ছুঁয়ে সালাম করল। তুহিন নিজের ডান হাতটা অপ্রস্তুতভাবে দীপ্তির মাথার উপরে রেখে আবার সরিয়ে নিল। দীপ্তি তুহিনের দিকে একবার তাকিয়ে যথারীতি পুতুলের মতো গিয়ে খাটে বসে পড়ল। দীপ্তির ক্লান্তিতে কান্না চলে আসছে। এভাবে ঘুম আটকে রেখে সঙ এর মতো বসে থাকা যায় নাকি?

তুহিন পায়চারি করছে আর ভাবছে, কী বলে বাসর শুরু করবে? তার অতীব হারামজাদা বন্ধুদল তার হাতে কয়েক প্যাকেট প্রোটেকশন ধরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কেউই বলে দেয়নি যে বাসর ঘরে ঢুকে কী বলে কথা শুরু করতে হবে। অবশেষে তুহিন কুল-কিনারা না পেয়ে বাসররাতে করা সবচেয়ে অদ্ভুত আর অষ্টম আশ্চর্য জনক প্রশ্নটি করেই ফেলল দীপ্তিকে। দীপ্তির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হালকা কাশলো তুহিন। দীপ্তি তুহিনের দিকে তাকাতেই তুহিন মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করল, ” তোমার নামটা কী? আমি তোমার নাম জানি না। তুমি করেই বললাম। কারণ তুমি আশুর বয়সি। আশুর বেষ্টফ্রেন্ড, তাই। ” তুহিনের মুখে এই প্রশ্ন শুনে দীপ্তি যেন সপ্তম আসমান থেকে নিচে পড়ল। মানে কী খাটাস ব্যাটা? এটা কোন ধরনের অপমান? তুই আমার নামধাম না জেনেই আমায় বিয়ে করে ফেললি? ছি! ছি! মান-ইজ্জ্বত বলতে আর কিছুই রইলো না। মনে মনে এসব ভাবল দীপ্তি। তুহিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে, মুখ বিকৃত করে তীব্র বিরক্তি এবং ক্রোধ প্রকাশ করল দীপ্তি। তারপর তুহিনের উদ্দেশ্যে নাটকীয় হাসি ছূড়ে বলল, ” আমার নাম দীপ্তি। তা আপনি আমায় বিয়ে করলেন। আমার নামটা কাউকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনবোধ করেননি বুঝি? ”
– ” আমার তোমায় কিছু বলার আছে। ”

দীপ্তি খুব ভালো করেই জানে তুহিন কী বলতে চাচ্ছে। এ ব্যাপারে তুহিনের মা শায়লা বেগম এবং তুহিনের ছোট বোন মানে দীপ্তির বেষ্টফ্রেন্ড আয়েশা পূর্বে হুশিয়ার করে দিয়েছিল দীপ্তিকে। তুহিন ঘ্যানঘ্যান শুরু করার আগেই দীপ্তি তুহিনকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ” আমি আপনার স্বমন্ধে সবকিছুই জানি। কিছু বলতে হবে না আপনার। ”
– ” মানে আসলেই পুরোটা জানো? পুরোটা জেনেই কী বিয়েটা করেছ? ”
– ” আরে আজব তো! একটা ছেলের সম্পর্কে সব না জেনেশুনে দুম করেই তাকে বিয়ে করে ফেলব নাকি? এরকম কাহিনি হিন্দি সিরিয়ালে হয়। আমাদের বিয়েটা কোন হিন্দি সিরিয়ালের বিয়ে নয়। এমনকি আমি বা আপনি কেউই হিন্দি সিরিয়ালের নায়ক কিংবা নায়িকা নই। ”

তুহিন আড়ষ্ট হাসল। তুহিন বলল, ” তুমি বোধহয় রেগে যাচ্ছ দীপ্তি। ”
– ” আমার রেগে যাওয়াটা কী আদৌ বেমানান তুহিন সাহেব? মানে এটা কী ধরনের অপমান? ”
– ” অপমান.. কীসের অপমান? ” ভ্রু কুঁচকে গেল তুহিনের।
– ” আপনি বাসররাতে আমায় জিজ্ঞেস করবেন, আমার নাম কী? এটা অপমান না? এর দ্বারা কী বোঝালেন, জানেন? বোঝালেন যে, আমি ভেসে আসা কচুরিপানা, হেলাফেলার জিনিস এমন কিছু। আমি কে? আপনার কার সাথে বিয়ে হয়েছে সে ব্যাপারে আপনার কোনো মাথাব্যাথাই নেই। তাই তো? আমি ফেলনা; তাই না? ”
– ” আশ্চর্য! আমি তোমার নাম জানতাম না। তো সেটা জিজ্ঞেস করব না? আর আমি কোনভাবেই তোমায় অপমান করে কিছু বলিনি। আমি অহেতুক কেন তোমায় অপমান করতে যাব? যেখানে আমি তোমায় ভালো করে চিনিই না। ”

দীপ্তির পায়ের রক্ত ভোঁ দৌড়ে তার মাথায় পৌছাল। আবার অপমান? আবার বলে আমায় চেনে না। এই শালা না চিনে বিয়ে করেছিস কেন? দীপ্তি মনে মনে এসব ভেবে দাঁতখিটে তাকাল তুহিনের দিকে। তুহিন অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে দীপ্তির সামনে। মনে হচ্ছে দীপ্তি জেলার আর তুহিন কারাগারের কয়েদী।

দীপ্তি ঘাড়টা হালকা বাকিয়ে ক্রোধমিশ্রিত হাসি হাসল। দীপ্তি নাটকীয় বিদ্রুপের সুর ধরে বলল, ” তা আপনার কী উচিৎ ছিল না বিয়ের আগে যাকে বিয়ে করবেন তার নাম জানা, তার সম্বন্ধে বিস্তারিত খবরাখবর নেয়া, বিয়ের আগে তার কোন প্রেম বা এ্যাফেয়ার ছিল কি-না সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া? ”
– ” তার মানে.. তোমার অন্যকারো সাথে এ্যাফেয়ার আছে? ”

দীপ্তির ক্রোধ গগন স্পর্শ করল। দীপ্তি দুহাত মুঠো করে মাথার দুপাশে তুলে শরীর খিচুনি দিয়ে তেঁতে উঠল, ” আজব! আজব! আজব! আমি কখন বললাম যে আমার এ্যাফেয়ার আছে? ”
– ” এই না বললে, এ্যাফেয়ার সম্বন্ধে খোঁজখবর নেবার প্রয়োজন ছিল। তাই আন্দাজ করলাম যে, তোমার হয়তো অন্য কারো সাথে এ্যাফেয়ার আছে। ”

দীপ্তি দাঁত খিটে; চোখ রাঙিয়ে, চিবিয়ে বলল, ” আমি শুধুমাত্র আপনাকে আপনার বিয়ের আগেকার সাধারণ দায়িত্বগুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলাম। আমার কোনপ্রকার এ্যাফেয়ার কখনও ছিল না। সোজা বিয়ে হয়েছে আপনার সাথে। আমি একদম কমলার বনবাসের কমলার মতো সতী-সাবিত্রী। কোনোপ্রকার সন্দেহ থাকলে আপনার বোনকে জিজ্ঞেস করে নিয়েন। ”
– ” কমলার বনবাস.. সেটা কী? আর কমলা কে? ” কথা শেষে কোঁচকান ভ্রু ছাড়ল তুহিন।

দীপ্তি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। তুহিনের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে সজোরে দরজা বন্ধ করল দীপ্তি। দীপ্তির বাথরুমে যাবার সুযোগটাকে কাজে লাগাল তুহিন। সে তার ছোট বোন আয়েশাকে কল করল। আয়েশা গভীর ঘুমের কানে কষিয়ে চড় মেরে ফোনটাকে নিজের কানের কাছে নিয়ে ঘুমজড়ানো গলায় আওড়াল, ” হ্যালো.. ”

তুহিন তাপযুক্ত গলায় বলল, ” এই! তোর বান্ধবি এত মেজাজ দেখাচ্ছে কেন? ও কিন্তু আমার মেজাজ জানেনা। আশ্চর্য! আমি নাম জিজ্ঞেস করেছি আর ও কতগুলা কথা শুনিয়ে দিল আমায়। নাম জিজ্ঞেস করা কোন ক্রাইম নাকি? স্ট্রেঞ্জ! ”

এতোরাতে বড় ভাইয়ের ফোন তা-ও আবার আজ তার ভাইয়ের বাসররাত। আয়েশা বিস্ময়ের অন্তিম প্রান্তে। ” ভাইয়া তুই তোর বাসর ফেলে এত রাতে আমায় ফোন দিয়েছিস কেন? ”
– ” আশ্চর্য তো! এবার বাকি মেজাজটা তুই খারাপ করবি নাকি? ”
– ” কীসের মেজাজ খারাপ করব তোর? তুই নিশ্চয়ই ওর সাথে কিছু করেছিস। নাহয় আমার জানু একদমই পিওর হার্টেড প্রোডাক্ট। ”
– ” এই শোন, একজন হার্ট সার্জনকে তুই পিওর হার্ট আর ভেজাল হার্ট শেখাতে আসিস না। ”
– ” তুই ওর নাম জিজ্ঞেস করবি আর ও রাগবে না? এটা তো ওর জন্য চরম অপমান। ”
– ” তুই ও অপমান টেনে আনছিস? আমি কেন অহেতুক ওকে অপমান করতে যাব? যেখানে আমি ওকে চিনিই না। ”

” এই! ” তুহিনকে ধমকে উঠল আয়েশা। ” চিনিস না মানে কী? তোকে আমি আর মা কয় কোটিবার বলেছিলাম যে, আব্বু এবার তোর বিয়েটা দিয়েই দেবে। তুই একটু তোর হবু বউ সম্পর্কে আমাদের থেকে জেনে নে, হবু বউয়ের নাম্বার নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বল, ওর সঙ্গে দেখা কর, ওর সঙ্গে একদিন ডিনার বা লাঞ্চে যা। তোর কাছে তো বিয়ের আগে দিন পনের সময় ছিল ওর সাথে কথা বলার, ওকে জানার, ওকে বোঝার। বাবা তো তোকে সময় দিয়েছিল না-কি? কিন্তু তুই কী করেছিলি? ক্লিনিক, সার্জারি, ওটি আর কনফারেন্স নিয়ে মরে ছিলি। আর এখন গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করছিস? আমি ওর যায়গায় হলে তো তোকে পিষে, পিটিয়ে ভর্তা বানিয়ে ফেলতাম। আহারে আমার জানুটা কত কষ্টই না পেয়েছে। ”

তুহিন চোখ বুজে কপালের বাপাশটা ডলে নিয়ে চোখা মুখে শ্বাস ছাড়ল। আক্ষেপের সুরে বলল, ” আজ অবাক হতে, হতে আমি তুহিন ইশতিয়াক থেকে অবাক ইশতিয়াক হয়ে গেলাম। মানে কী এসবের? ”
– ” তুই এতক্ষন ফোনে কথা বলছিস.. ও কোথায়? ”
– ” রেগে কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেছে। মেইবি ফ্রেশ হচ্ছে। ”
– ” ওহ! তাহলে ফোন রাখ জলদি। জানু বের হয়ে যদি দেখে, তুই বাসররাতে নিজের বউ সম্বন্ধে নিজের ছোটবোনের কাছ থেকে খবরাখবর নিচ্ছিস। তাহলে তোকে ডাল বানিয়ে ভাতের সাথে মেখে খেয়ে ফেলবে ও। আর তুই শুধু সকালে রুম থেকে বেরো। আমি যদি আম্মুকে দিয়ে তোকে মার না খাইয়েছি তারপর বলিস। ইরেসপন্সিবল! গবেট কোথাকারের! ”
– ” ধুর রেডিওর বাচ্চা রেডিও। ফোন রাখ। ”

কল কেটে দেয় তুহিন। তুহিন কল কেটে ফোন পকেটে রাখার পরক্ষণেই দীপ্তি বাথরুম ছেড়ে বেরোয়। দীপ্তিকে দেখে অবাক হয়ে যায় তুহিন। মেয়েটা ফ্রেশ হয়নি। তাহলে কাপড় নিয়ে বাথরুমে গিয়েছিল কেন? ” যান গিয়ে ওজু করে আসুন। ” কাঠ গলায় বলল দীপ্তি।

তুহিন দীপ্তিকে দেখছিল। দীপ্তি দেখতে অসম্ভব সুন্দর। যেকোন ছেলের কাছে এরুপ সুন্দর বউ পাওয়াটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। তুহিন দীপ্তির মুখের দিকে তাকাল। দীপ্তির মুখ ভেজা। কিন্তু ওকে আগের চেয়ে কালো দেখাচ্ছে না। বরং আরো ফর্সা লাগছে। তারমানে এটাই দীপ্তির একচুয়াল স্কীনটোন? আমি তো মেকাপ ডিপেন্ডেন্ট ভেবেছিলাম। অন্তর্মনে এসব ভাবছিল আর আগাগোড়া দীপ্তিকে পরখে দেখছিল তুহিন। দীপ্তি তুহিনের মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল ” এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গিলতে হবে না আমায়। আমি আপনার বিয়ে করা বউ। সারাজীবন পাবেন আমায় গেলার জন্য। অনেক সুযোগ পড়ে আছে আপনার, আমায় মন ভরে দেখার জন্য। এখন একটু ওজু করে এসে উদ্ধার করুন আমায়। ”

দীপ্তির ঠোঁটকাটা সাপ্টা কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল তুহিন। কোনমতে নিজের লজ্বা আর অপমানবোধকে সামলে নিয়ে ইতস্তত গলায় বলল, ” ওজু কেন? ”
– ” আম্মু আপনার সাথে একসঙ্গে নফল নামাজ পড়ে তারপর ঘুমোতে বলেছে, তাই। ”
– ” ওহ আচ্ছা। তা তুমি এই ভারী শাড়িটা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে আসতে পারতে তো। ”
– ” না এটা পড়েই নামাজ পড়তে বলেছে। প্লিজ ওজু করতে যান তো। আর কথা বাড়াবেন না। আমার ভীষণ টায়ার্ড লাগছে, মাথাব্যাথা করছে, আর ঘুমও পাচ্ছে প্রচুর। ”
– ” আচ্ছা, আচ্ছা, যাচ্ছি। ”

তুহিন ওজু সেড়ে এলে তুহিন এবং দীপ্তি একত্রে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিল। মোনাজাত শেষে দীপ্তি উঠে আলমারি থেকে তুহিনকে একটা ট্রাউজার আর একটা টি-শার্ট দিয়ে বলল, ” আমি চেঞ্জ করে বেরোবার পরে আপনি ঢুকবেন। ” তুহিন ঘাড় একপাশ কাত করে সায় জানাল।

দীপ্তি ট্রাউজার এবং টি-শার্ট পড়ে বাথরুম ছেড়ে বেরোল। তুহিন এবার দীপ্তির হাত দুটো স্পষ্ট দেখতে পেল। আসলেই দীপ্তি বেশ ফর্সা এবং রূপবতী। তুহিনকে তাকিয়ে থাকতে দেখে দীপ্তি বলল, ” দেখুন আমার এসব পড়ে না ঘুমোলে ঘুম হয় না। তাই আপনার অসুবিধা থাকলেও আমি এসব পড়েই ঘুমোবো। ”

তুহিন সৌজন্যসুল হাসি হেসে বলল, ” আমার কোন অবজেকশন নেই। তুমি তোমার কম্ফোর্ট অনুযায়ি কাপড় পড়ে ঘুমোতে পারো। ”

দীপ্তি ভাবলেশহীন রুক্ষ গলায় বলল, ” থাকলেও আমি তা মেনে নিতাম না। এবার গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। ওই টি-টেবিলে দুধ রাখা আছে। খেয়ে শোবেন প্লিজ। ”

তুহিন হা করছিল কিছু বলার জন্য, তার আগেই দীপ্তি বলল, ” জানি, আপনি দুধ খান না। গন্ধের কারণে। আমিও খাই না। তবুও ফর্মালিটি রক্ষার্থে এক চুমুক খেয়ে নিয়েন। ”
– ” সারাদিন অনেক ধকল গেছে তোমার উপড় দিয়ে। যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো, আমি ফ্রেশ হয়ে দুধ খেয়ে শুয়ে পড়ব। ডোন্ট ওরি! ”
– ” থ্যাংকস! ” বলেই বিছানায় গিয়ে ধুপ করে শুয়ে পড়ল দীপ্তি।

তুহিন ফ্রেশ হয়ে এসে নাক চেপে দু-তিন চুমুক দুধ খেয়ে দুধের গ্লাসটা টি-টেবিলে রাখল। গ্লাস রেখে খাটের দিকে তাকাতেই দ্বিধায় পড়ে গেল তুহিন। সে শোবে কোথায়? ধুর মেয়েটা মাত্রই তো শুলো। এখন আবার জাগাব? খাটেই শুয়ে পড়ি? না সোফায় শুয়ে পড়ি? তুহিন আর সাতপাঁচ না ভেবে সোজা গিয়ে দীপ্তিকে জাগাল। দীপ্তি নিভুনিভু করে চোখ খুলল।

তুহিন দ্বিধাযুক্ত গলায় প্রশ্ন করল, ” আমি কী সোফায় শোব? ”

দীপ্তি কপাল কুঁচকে কয়েক পলক তুহিনকে দেখে নিল। তারপর একবার চোখ টেনে অতিবিরক্ত গলায় বলল, ” উফফ! সোফায় শুতে যাবেন কোন দুঃখে? আমাদের কী ঝগড়া হয়েছে নাকি? খাটেই শুয়ে পড়ুন। আর হ্যা রাতে ঘুমের ঘোরে আমি আপনার গায়ে পা তুলে দিলে, পা সড়াতে গিয়ে আমার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাবেন না কিন্তু। ”

না কেন সরাব? তোমার পা গলায় জড়িয়ে ধরে ঘুমোব। গলায় বেধে রাখব তোমার পা। এসব ভাবতে ভাবতে খাটের অপর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল তুহিন। তুহিন খাটে শুয়ে ভাবতে থাকল, সবাই তো বলে, বাসররাতে নাকি বিড়াল মারতে হয়। কিন্তু আমি নিজেই তো বিড়াল বনে ঘুমিয়ে যাচ্ছি। কী হবে আমার সংসারজীবনের? এসব ভাবতে ভাবতেই নিদ্রায় তলাল তুহিন।

চলবে…
#thetanvirtuhin

প্রেমবিভ্রাট
০১
তানভীর তুহিন

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ❤️
” Tanvir’s Writings “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here