প্রেমবিভ্রাট ১২ তানভীর তুহিন

0
568

প্রেমবিভ্রাট
১২
তানভীর তুহিন

তুহিন ও দীপ্তির মাঝে হুলুস্থুল ঝগড়া চলছে গা টেপা নিয়ে। তুহিন করুণ স্বরে বলল,” পুরো শরীর ম্যাজম্যাজ করছে। ”

দীপ্তি প্রস্তাব প্রদানের গলায় বলল, ” মালিশ করে দেব? ”

তুহিন বেশ খুশি মনে রাজি হয়ে গেল। কে না চাইবে শরীরের এই বেহাল দশায় একটু নরম হাতের মালিশ? কিন্তু তারপরেই বাধল এই হুলুস্থুল কান্ড। দীপ্তি বলছে, আমারো শরীর ম্যাজম্যাজ করছে আগে আমায় মালিশ করে দিন। তুহিন বলছে, আমি আগে বলেছি। আমায় আগে দাও। মোদ্দাকথা দুজন ঝগড়া লেগেই শরীরের ম্যাজম্যাজ ভাবটা অর্ধেকটা কাটিয়ে ফেলল। যদিও তুহিনই আগে দীপ্তির শরীর মালিশ করে দিলো। তারপর তুহিন উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলো, দীপ্তি তুহিনের পিঠের ওপরে বসে ঘাড় টিপে দিচ্ছিল। এভাবেই রাতে ঘুমিয়ে পড়ল দুজনে।

হানিমুনের পুরো দশদিন খুব ভালোভাবেই পার করেছে ওরা। রিশপের ভ্রমনযোগ্য সব জায়গাগুলোতে ঘুরেছে ওরা। যেমন : লাভা, লোলেগাও, কালিম্পং, সিলেরী গ্রাম, তিফন্দরা, পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের জঙ্গল সীমানার পাহাড়, ঋষিনদি। এসব জায়গায় পুরো দশদিন ঘুরে হানিমুন শেষ করল ওরা। পুরো হানিমুনে রোমান্সের ছিটেফোঁটা না থাকলেও। ছিলো ওদের ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং, বন্ডিং এবং তুহিনের মনে প্রেম জন্মানোর পূর্বাভাস। তুহিন হানিমুনের একয়দিনে বেশ ভালভাবে আবিষ্কার করে নিয়েছে দীপ্তিকে এবং প্রেমেও পড়েছে দীপ্তির। দীপ্তির যেন তুহিনের প্রতি প্রেম একদম মনকলসির কানায় কানায় ভর্তি হয়ে উপচে পড়ছে পড়ছে অবস্থা।

হানিমুন থেকে ফেরার প্রায় ১৫ দিন পর।

সকাল প্রায় দশটা। গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে তুহিন। খানিক বাদে বাদে দীপ্তিকে দেখছে। দীপ্তি পাশের সিটে বসে বইয়ে মুখ গুঁজে আছে। পড়াশোনায় খুব ব্যস্ত সে। ভার্সিটিতে নাকি আজ কোন সাবজেক্টের ক্লাসটেষ্ট আছে। দীপ্তি শুধু বইয়ের দিকে তাকিয়েই আছে। পড়ার কোন লক্ষণই নেই দীপ্তির মধ্যে। সে বামহাতে বই ধরে, ডানহাত দিয়ে কুট কুট করে চকলেটে কামড় বসাচ্ছে। একটু পর পর গাড়ির সাউন্ড সিস্টেমের গান পাল্টে নিচ্ছে। তুহিন এসব দেখে দীপ্তিকে জিজ্ঞেস করল, ” তুমি কী আদৌ বই পড়ছো নাকি বইয়ের মধ্যে থাকা ছবিগুলো দেখছো? ”

দীপ্তি ভ্রু কুঁচকে তুহিনের দিকে তাকিয়ে মুখে থাকা চকলেটটুকু চুষে গিলে ফেলে বলল, ” আমাকে কী বাচ্চা মনে হয় আপনার? যে বইয়ের ছবি দেখব? পড়ছিলাম আমি। গতকাল রাতেই তো বললাম আজ ক্লাসটেষ্ট আছে। ”
– ” চকলেট খেয়ে, গান শুনে শুনে কীভাবে পড়া হয়? এই পড়া ক্লাসে মনে থাকবে? ”
– ” কেন থাকবে না? অবশ্যই থাকবে। ”
– ” তুমি এভাবেই পড়ো? ”
– ” উঁহু! চকলেট খেতে খেতে গান শুনতে মন চাচ্ছিল। তাই এভাবে পড়ছি। ”

তুহিন আর কিছু না বলে গাড়ি চালানোতে মনযোগ দিলো। কারণ দীপ্তি অনেকটা সার্চ ইঞ্জিনের মতো। তাকে যেকোন প্রশ্নই করা হোক না কেন তার কোন না কোন উত্তর বা যুক্তি তার কাছে থাকবেই। তাই তুহিন আর কথা বাড়াল না।

ভার্সিটির সামনে চলে এসেছে ওরা। দীপ্তি গাড়ি থেকে নামার আগে নিজের অর্ধেক খাওয়া চকলেটটা তুহিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ” এটা খেতে খেতে ক্লিনিকে চলে যান। ”

তুহিন চুপচাপ চকলেটটা হাতে নিলো। দীপ্তি তুহিনকে জিজ্ঞেস করল, ” গতকাল শুনছিলাম আব্বু বলছিল, এখন নাকি ক্লিনিকে প্রেশার কম? বিকেলে ফ্রি আপনি? ”

তুহিন চোখ কোণার দিকে উপরে তুলে কয়েকমুহূর্ত ভেবে বলল, ” হ্যা ফ্রি, কেন? ”
– ” তাহলে মুভি দেখতে যাওয়া যেত। ”
– ” আচ্ছা তাহলে ভার্সিটি শেষে আমায় ফোন দিও। আমি ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি পাঠালে ক্লিনিকে চলে এসো। ওখান থেকে সিনেপ্লেক্সে চলে যাব। ”
– ” আচ্ছা ঠিক আছে। ”
– ” আচ্ছা যাও। ”
দীপ্তি মুচকি হেসে চলে গেল। তুহিনও ক্লিনিকে এসে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

দুপুর প্রায় দেড়টার দিকে দীপ্তি ভার্সিটি থেকে বের হয়ে তুহিনকে ফোন করল। তুহিন ড্রাইভারকে গাড়ি নিয়ে দীপ্তির ভার্সিটিতে পাঠাল। তুহিন চেম্বারে ফাইলপত্র ঘাটছে। তার দুপাশে দুজন লেডি জুনিয়র ডাক্তার দাঁড়ানো। দুজনই তুহিনের অ্যাসিস্টেন্ট। তুহিন পেশাদারিত্বে বিশ্বাসি লোক। তাই ওদের দিকে কখনও অন্য নজরে তাকায়নি। ওরা তুহিনের বিয়ের আগে একটু আধটু ফ্লার্ট করত। কিন্তু বিয়ের পরে তা বন্ধ হয়ে গেছে। দীপ্তি ক্লিনিকে ঢুকে তুহিনের চেম্বারের দরজা খুলতেই দেখল তুহিন ফাইলে মুখ গুঁজে আছে। তুহিনের দুপাশে দুজন টগবগে জোয়ান সুন্দরি। স্বামীর দুপাশে দুজন মেয়ে দেখে দীপ্তির মেজাজ চটে গেল। দীপ্তির মেজাজ গরম তাপ ছাড়া শুরু করল। মেয়ে দুটো বেশ সুন্দরি। আশেপাশে এরকম সুন্দরি মেয়ে থাকলে কখন দুর্বল হয়ে যায় কে জানে। এই ব্যাটা তো বাসায় আমায় ছুঁয়েও দেখে না। তাই ওদের প্রতি এট্রাকশন ও তো বেশি কাজ করে বোধহয়। কপাল কুঁচকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে এসব নিয়ে নিজ মনে আপন যুক্তিতর্ক করছিল দীপ্তি। দীপ্তির দিকে চোখ পড়তেই তুহিন ডাকল, ” আরে দীপ্তি বাইরে কেন? ভেতরে এসো। ”

ভেতরে ঢুকতেই তুহিন দীপ্তির সাথে ওর সহায়িকাদের পরিচয় করিয়ে দিলো। দীপ্তি যান্ত্রিক মুচকি হাসি দিয়ে কুষল বিনিময় করল ওদের সাথে। তুহিন ওর সহায়িকাদের উদ্দেশ্যে বলল, ” তোমরা এখন যাও। আমি বাকি রিপোর্টগুলো স্টাডি করে বের হব। হ্যা আজ যে সার্জারিটা করেছি ওই পেশেন্টের কোন প্রকার শারিরীক সমস্যা হলে আমায় ইনফর্ম করবে। ”
– ” জ্বী স্যার। ” সহায়িকা দুজনে একসাথে বলল।

ওরা যেতেই তুহিন নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে গেল। উঠে গিয়ে দীপ্তিকে নিজের চেয়ারে বসতে বলল। দীপ্তি চুপচাপ নাক সিটকে গিয়ে বসে পড়ল। গা-পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে তার। ছেলে ডাক্তাররা কী কাজ পারে না? ঘরে সুন্দরি বউ থাকতেও দু-দুটো লেডি অ্যাসিস্টেন্ট রাখতে হবে কেন তোকে? লুচ্চা ব্যাটা!

দীপ্তিকে চুপচাপ দেখে তুহিন জিজ্ঞেস করল, ” মুড অফ কেন? ক্লাসটেষ্ট খারাপ হয়েছে? ”

দীপ্তি ছোটখাটো হুংকার দিয়ে বলল, ” না, ভালোই হয়েছে। ”
তুহিন ফাইলে চোখ রেখে বলল, ” মেজাজ খিটখিটে কেন? ”
দীপ্তি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, ” যে মেয়ের স্বামীর চরিত্রে দোষ থাকে। সে মেয়ের মেজাজ কী আর ফুরফুরে থাকে? ”

দীপ্তির এমন উদ্ভট কথায় তুহিনের কাজের মনযোগ উবে গেল। তুহিন হাতে থাকা ফাইলটা টেবিলে রাখতে রাখতে বলল, ” কীসের দোষ? ”
– ” একটু আগে চেম্বার থেকে যে ফুল দুটো বের হলো। ওই ফুল দুটো কে? ”

তুহিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে দীপ্তির দিকে। দীপ্তি ফের বলল, ” ফুল কেন বলছি? আগুন বলতে হবে আগুন! ঘরে সুন্দরি বউয়ের দিকে তো কখনো তাকালেনও না। কিন্তু ক্লিনিকে দু-দুটো লেডি অ্যাসিস্টেন্ট। বাহ, চমেতকার ব্যাপার স্যাপার! ”
– ” আশ্চর্য! ওরা ইন্টার্নিশিপ করছে এখানে। আর আমি ওদের সাথে যথেষ্ট প্রোফেশনাল। ”
– ” কীসের প্রোফেশনাল? আপনার চরিত্রে দোষ আছে সেটা বলুন। নাহয় কেউ দু-দুটো লেডি অ্যাসিস্টেন্ট রাখে নাকি? কী মনে করেন আমি কিছু বুঝিনা? সব বুঝি আমি। আপনি গাছেরও খেতে চাচ্ছেন, তলারও কুড়াতে চাচ্ছেন। তাইনা? ”

তুহিন চেয়ারের হাতল ধরে টেনে দীপ্তিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঝুঁকে বলল, ” যদি আমার চরিত্রের দোষ থাকত। তাহলে এতদিনে তোমায় প্রেগন্যান্ট করে ছাড়তাম। ”

তুহিনের কথায় দীপ্তির রাগ মিলিয়ে গেল। আকস্মিক লজ্বায় মরে যাচ্ছে সে। মুখ লাল হয়ে গেছে দীপ্তির। দীপ্তি লজ্বা কাটিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ” আমি সুযোগ দেইনি তাই পারেননি। নাহয় আপনার যে চোখ ভালো না সেটা আমি জানি। একটু হলেই তো চোখ দিয়ে গিলে খাওয়া শুরু করেন আমায়। ”

তুহিন যুক্তি খাটাল, ” এই বলছো, চোখ দিয়ে গিলে খাই। একটু আগে বললে, আমি নাকি তোমার দিকে ফিরেও তাকাইনা। যা বলবে একটা বলো। ”

দীপ্তি থতমত খেয়ে গেল, ” হুঁ হয়েছে। আপনার কাজ শেষ হয়নি? খিদে পেয়েছে আমার। ”
– ” হ্যা শেষ। চলো। ”

তুহিন ও দীপ্তি ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে বাইরে দুপুরের খাবার খেয়ে, মুভি দেখে রাতে বাসায় ফিরল।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ►
Tanvir’s Writings

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here