প্রেমবিভ্রাট ১৪ তানভীর তুহিন

0
605

প্রেমবিভ্রাট
১৪
তানভীর তুহিন

তুহিন একদৃষ্টে বাইরে তাকিয়ে বাইরের থমথমে পরিবেশ দেখছে। পুরো বাইরেটা কেমন যেন নিস্তব্ধ। কেবল বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ ও আকাশ গর্জানোর শব্দ হচ্ছে। তুহিনের মনের মধ্যে শুধু একটাই প্রশ্ন বারংবার তীব্রভাবে গর্জে উঠছে, ” দীপ্তিকে কীভাবে বলব যে আমি ও-কে ভালোবাসি? ” না এভাবে আর থাকা যাচ্ছে না। কী একটা অবস্থা! স্বাভাবিক জীবনটাকেই আমি অস্থির থেকেও অস্থিরতম বানিয়ে তুলছি এই ভালোবাসি বলার চক্করে। আজ এই মাতাল আবহাওয়ায় সব প্রকাশ করেই দেব। তাতে আমার মাতালই হতে হোক না কেন। কিন্তু কীভাবে বলব? শুধু মুখে বললে তো আর হবে না। একদমই আবেগহীন পানসে লাগবে। দীপ্তির নিশ্চয়ই একটু শখ, আহ্লাদ আছে যে তার স্বামী তাকে এভাবে প্রোপোজ করবে। আসলে দীপ্তি কী চায় যে আমি ও-কে ভালোবাসি? ও আমায় ভালোবাসে? উফফফ! কী প্রেশার ভাইরে ভাই। এসব ভেবে ভেবে নিজের মাথা নিজেই চিবোচ্ছে তুহিন। হঠাৎ তুহিনের সুন্দরী তরুণী সহায়িকা মৌ কোলে একটা বাচ্চা নিয়ে দরজায় নক করল, ” মে আই কাম ইন স্যার? ”

তুহিন বলল, ” হু আসো না। কোলে এই পুচকুটা কে? ”
– ” ভাইপো স্যার। একদম কিউটের কারখানা না? ”
তুহিন জানালার থাই এর পাশে দাঁড়িয়ে থেকেই মুখ গুছিয়ে বলল, ” হুম কিউট অনেক। ”

মৌ হাসল, সাথে তুহিন ও পুচকুটাও হাসল। তুহিন মৌকে জিজ্ঞেস করল, ” নাম কী ওর? ”
মৌ জবাব দিলো, ” লুতুপুতু, স্যার। ”

তুহিন ভ্রু কুঁচকে তাকাল। মৌ ও তুহিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। তুহিন নাক, চোখ, মুখ সব কপালে তুলে বলল, ” লুতুপুতু আবার নাম হয় নাকি? কে রেখেছে এই বিদ্ধস্তকারী নাম? ”

মৌ সাথে সাথেই পুচকুটার গাল, নাক, মুখ সব একসাথে টিপে দিয়ে বলল, ” আমি রেখেছি স্যার। এই ছোটটাকে যে দেখে সেই ওর প্রেমে পড়ে যায়। আর দেখছেন না ও বেশ নাদুসনুদুস তাই ওর নাম দিয়েছি লুতুপুতু। ” বলেই মৌ বাচ্চাটার নাকে নাক ঘষে বলল, ” আমাল লুটুপুটু আপ্পাটা! ” তুহিন একটু হাসল।

মৌ আবার বলল, ” এমনিতে ওর ভালো নাম আয়ান। ”
তুহিন আর কিছু বলল না। মৌ তুহিনের টেবিলের সামনের পেশেন্ট চেয়ারে বসে আয়ানকে নিয়ে খেলছে। তুহিন আবার বাইরে তাকাল। আবার ডুব দিলো নিজের ধ্যানে। আবার শুরু করল গবেষণা। কীভাবে প্রোপোজ করব দীপ্তিকে? কীভাবে প্রোপোজ করলে আমি আমার ফিলিংসগুলো একদম প্রোপারলি এক্সপ্রেস করতে পারব? গোলাপ দিয়ে হাটু গেড়ে বসে বলে দেই আমি তোমায় ভালোবাসি দীপ্তি? উঁহু! গোলাপ দিয়ে প্রোপোজ করা তো বাঙালিদের জাতীয় প্রোপোজ প্রক্রিয়া। আলাদা কী করা যায়? রিং দিয়ে বলে দেই সবটা না-কি? উঁহু! এটা আবার একদম ফর্মাল ফিল্মি স্টাইল। তাহলে কী ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে নিয়ে গিয়ে মোমোর আলোতে বলব সবটা। ধুর! ওটাও তো কেমন যেন যান্ত্রিক মার্কা পরিবেশ। তাহলে করবটা কী? দীপ্তির তো বেশ বৃষ্টি পছন্দ। আজও তো বৃষ্টি হচ্ছে. এখনই বাসায় গিয়ে ও-কে ছাদে টেনে নিয়ে গিয়ে ভিজতে ভিজতে সবটা বলে দেব? একদমই না। ওভাবে আরেক মহাবিপদ। বৃষ্টিতে ভিজলে দীপ্তিকে যা লাগে আমি ঠিকই চরিত্র খুইয়ে বসবো। তখন আবার আরেক ঝামেলা। অন্যকিছু ভাবতে হবে। দীপ্তি তো শাড়ি পরতে বেশ পছন্দ করে। একটা ভালো দামী শাড়ি দিয়ে প্রোপোজ করব নাকি? তুই তুহিন না আসলে একটা আস্তাকুঁড়ের ঢেঁকি। তুই নিজের বউকে কীভাবে প্রোপোজ করবি সে বিষয়ে তোর কোনো ইফেক্টিভ আইডিয়াই নেই। শাড়ি দিবি মানে কী? বেচারিকে কী ঘুষ দিয়ে ভালোবাসতে বাধ্য করবি? ওর কাছে শাড়ির গোডাউন পড়ে আছে এক্সপ্রেসিভ ও ইফেক্টিভ কোন আইডিয়া ভাব। তুহিন এসব ভাবছিল ও অনবরত পায়চারি করছিল। একদম চরম পায়চারি যাকে বলে। তুহিনকে দেখে মনে হচ্ছিলো ওর খুব জোর টয়লেট পেয়েছে। ও পাবলিক টয়লেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ভেতরের মানুষ বের হবার অপেক্ষা করছে। মেঝের দিকে তাকিয়ে পায়চারি করতে করতে হঠাৎ তুহিন এক পলক মৌ এর দিকে তাকাল। ফের চোখটা সরিয়ে মেঝেতেই নিয়ে এলো। তৎক্ষণাৎ তুহিন আবার মৌ এর দিকে তাকাল।

তুহিনের স্টেথোস্কোপ দিয়ে আয়ান মৌ এর হার্টরেট মাপছে। হয়তো স্টেথোস্কোপ এর ইয়ারপিসে এ আসা মৌ এর বুকের ধুকপুকানি শুনে খিলখিল করে হাসছে। এবার মৌ ও স্টেথোস্কোপ এর ইয়ারপিস দুটো নিজের কানে নিয়ে আয়ান এর হার্টরেট মাপছে ও দুজনেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। আয়ানের হাসি, সে যে কী প্রাপ্তির হাসি। মনে হচ্ছে কী না কী গুপ্তধন পেয়ে গেছে সে। মৌ ও অনেকটা বাচ্চা হয়ে গেছে। তুহিন ওদের এই কাণ্ডকারখানা দেখছে আর হাসছে। হঠাৎ তুহিনের মাথায় প্রবল বেগে একখানা ইউরেকা আছড়ে পড়ল। তুহিন অন্তর্মনে বিড়বিড়িয়ে উঠল, আমি ফুল, বৃষ্টি, শাড়ি এসব নিয়ে কেন পড়েছিলাম? যেখানে আমার কাছে স্টেথোস্কোপ ছিলো। দীপ্তিকে কথাগুলো বলার সময় ও আমার হৃদস্পন্দন শুনতে পারবে। ও আমার উত্তাল হৃদস্পন্দকে বুঝতে পারবে। ও অনুভব করতে পারবে আমার অনুভুতির সত্যতা ও দৃঢ়তা। যাচাই করে নিতে পারবে আমার প্রেমের শুভ্রতা। তেমনি আমিও ওর উত্তর শোনার সময় ওর হৃদস্পন্দন অনুভব করতে পারব। এর চেয়ে এক্সপ্রেসিভ ও ইফেক্টিভ আইডিয়া হতেই পারে না।

মুহূর্তের মধ্যেই তুহিনের মুখে ফুটে উঠল এক লম্বা বিজয়ের হাসি। তুহিন দৌড়ে গিয়ে মৌ এর কোল থেকে আয়ানকে কোলে নিয়ে আয়ানের গালে চুমু দিয়ে বলল, ” থ্যাংকস জনাব লুতুপুতু। ”

আয়ান ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে তুহিনের দিকে। সে তো এতক্ষণ তার ফুপুকে নিজের হার্টবিট শোনাচ্ছিল। তাহলে এই ব্যাটা কে যে ওখান থেকে দৌড়ে এসে আমায় কোলে নিয়ে চুমু খেয়ে আবার থ্যাংকস বলল? আয়ান ঠোঁট উল্টে মুখ কুঁচকে আছে। চোখ টলমল করছে আয়ানের। তুহিন আর মৌ ও ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। তুহিন ” কী হয়েছে জনাব লুতুপুতু? ” জিজ্ঞেস করতেই ” ভ্যাএএ.. ” একদম কান কর্তাল ফাটিয়ে কান্না জুড়ে দিলো আয়ান। সঙ্গে সঙ্গে তুহিন আয়ানকে মৌয়ের কোলে হস্তান্তর করল। তুহিন বাচ্চা খুব বেশিই পছন্দ করে। কিন্তু বাচ্চাদের দুটো জিনিস ওর পছন্দ না। এক হলো কান্নাকাটি করা, দুই হলো অসভ্যের মতো কোলে উঠে মুত্রবিয়োগ করা। তুহিন আয়ানকে মৌ এর কোলে হস্তান্তর করে দিয়েই স্টেথোস্কোপটা নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে, ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে, ছাতাটা হাতে নিয়ে বেরোবার জন্য তৈরী হয়ে গেল। মৌ ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কী হচ্ছে কিছুই বুঝছে না। এই স্যার সিরিয়াস মুডে পায়চারি করছিল। হঠাৎ এলো, আয়ানকে কোলে নিলো, চুমু খেলো, আবার আয়ানকে থ্যাংকসও বলল। আয়ান আবার থ্যাংকস পাবার মতো কী করলো? এসব ভেবে ভেবে তুহিনের দিকে তাকিয়ে আছে মৌ। তুহিন মৌ কে বলল, ” শোনো আমি বাসায় যাচ্ছি। মেইক শিওর তেমন কোনো ক্রিটিকাল সিচুয়েশন ক্রিয়েট না হলে আমায় যাতে ক্লিনিক থেকে ফোন না করা হয়। ”
– ” কিন্তু স্যার হঠাৎ কী হলো যে বাসায় চলে যাচ্ছেন? আপনিতো নরমালি ৮ টার আগে বের হন না। ”
– ” আরে খুব জরুরী একটা কাজ আছে। ” বলেই তুহিন হালকা দৌড় দিয়ে সোজা চেম্বার থেকে বের হয়ে যায়। লিফট দিয়ে সুরসুর করে নিচে নেমে পার্কিং থেকে গাড়ি বের করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাসায় যেতে প্রায় ২৫ মিনিট লাগবে। আর এই বৃষ্টিতে জ্যাম থাকলে বড়জোর ৪০ মিনিটের মতো লাগবে। তার বেশি নয়।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ►
” Tanvir’s Writings “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here