প্রেমবিভ্রাট
১৫
তানভীর তুহিন
প্রায় পৌনে একঘণ্টা লেগে যায় তুহিনের বাসায় পৌঁছাতে। রাস্তায় একদম প্রত্যেক মিটার বাদে বাদে জ্যাম লেগে আছে। তুহিনের বেশ অস্থির আর নার্ভাস লাগছে। কেমন যেনো এক বোকা বোকা ফিলিংস হচ্ছে তুহিনের। খানিক বাদে বাদেই তুহিন বুকের মধ্যে সুড়সুড়ি অনুভব করছে। কিন্তু এই সুড়সুড়ি দিচ্ছে কে আর কেনই বা দিচ্ছে তা তুহিনের জানা নেই। তুহিন তীব্র অস্থিরতা আর নার্ভাসনেস নিয়ে রুমে ঢুকলো। রুমে ঢোকার সময় তুহিনের মনে হচ্ছিলো ও নিজের রুমে না বরং কোনো পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকছে। এতোটাই নার্ভাস লাগছিলো তুহিনের। তুহিন রুমে ঢুকেই দেখে দীপ্তি খাটে উবু হয়ে শুয়ে টিভি দেখছে আর পপকর্ন খাচ্ছে। একদম মনোযোগ সহকারে টিভি দেখছে দীপ্তি। তুহিন রুমে ঢুকতেই দীপ্তি মুখে থাকা পপকর্ন গিলে ভ্রু কুঁচকে তুহিনকে জিজ্ঞেস করে, ” শরীর খারাপ নাকি আপনার? ”
তুহিনের আজ দীপ্তির সাথে কথা বলতে কেমন যেনো অপ্রস্তুত অপ্রস্তুত লাগছে। তুহিন আমতা আমতা করে বলে, ” না তো। কেনো? ”
দীপ্তি দেয়ালঘড়ির দিকে একপলক তাকিয়ে সময় দেখে নিয়ে বলে, ” মাত্র ৭ টা বাজে। আপনিতো নয়টার আগে বাসায় আসেন না। আজ এতো আর্লি? ”
– ” এমনিই ভালো লাগছিলো না। আর ক্লিনিকে তেমন কোনো কাজও ছিলো না। ”
– ” ওহ আচ্ছা। ফ্রেশ হয়ে আসুন। তা ক্লিনিকে নাস্তা করেছেন? ”
তুহিন মাথা নেড়ে না বলে।
দীপ্তি জিজ্ঞেস করে, ” তা কী খাবেন? পুরি নাকি নুডুলস? ”
– ” কিছুই খাবো না! ”
– ” কেনো? ”
– ” এমনিই খেতে ইচ্ছে করছে না। ”
দীপ্তি চোখ বাকিয়ে ন্যাকা স্বরে বলে, ” কেনো আজ দুই লেডি এসিস্টেন্ট এর সাথে ঝগড়া হলো নাকি? ”
তুহিন কাধ থেকে ব্যাগ নামাতে নামাতে বলে, ” ওরা যাস্ট আমার কলিগ। ওদের সাথে ঝগড়া করে খাওয়া বন্ধ করতে যাবো কোন আলহাদে? ”
– ” শুধু কলিগ না। বলুন সুন্দরি যুবতি কলিগ। ”
তুহিন কপাল ভাজ করে জিজ্ঞেস করে, ” কলিগদের সুন্দরি হওয়াটা কী দোষের নাকি? ”
– ” না, দোষের না। কিন্তু ঘরে বউ থাকা সত্তেও চরিত্রহীন হওয়াটা দোষের! ”
তুহিন আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে দীপ্তির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সামনে হাতদুটো বেধে ভ্রু কুঁচকে বলে, ” বিয়ে হলো তো বেশ কয়েকমাস হলো। এই কয় মাসে আমি কী তোমায় একবারও সেভাবে স্পর্ষ করেছি? নাকি তোমার উপরে জোর করে স্বামিত্ব ফলাতে গেছি? করেছি এমন কিছু? ”
দীপ্তি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলে, ” না করেননি। ”
– ” তাহলে তুমি কীসের প্রেক্ষিতে আমায় চরিত্রহীনের অপবাদ দাও? ”
– ” এই যে অধিকার ফলান না সে প্রেক্ষিতে। ”
– ” মানে? ”
– ” মানে হলো ঘরে বউ থাকতেও যে মানুষ বউয়ের দিকে ফিরে তাকায় না নিশ্চই তার বাইরে কোনো চক্কর আছে! ”
– ” আমার কোনো চক্কর-ফক্কর নেই। আর আমাদের সম্পর্কে তেমন স্বাভাবিকতা কী আছে? যে, আমি অধিকার ফলাবো? তাছাড়াও আমার নিজের ওপর যথেষ্ট কন্ট্রোল আছে। ”
– ” স্বাভাবিকতা নেই মানে? আমরা যথেষ্ট ফ্রি। আর তাছাড়া কথায় কথায় আপনি আমার নিজের উপর কন্ট্রোল আছে, কন্ট্রোল আছে মারাবেন না তো। এমন ভাবে বলেন মনে হয় যেনো আমি একদম আপনার গায়ে গিয়ে পড়ি। আমারও নিজের ওপর যথেষ্ট কন্ট্রোল আছে। আর আমি মোটেই আপনাকে সুযোগ দেই না সেজন্য আপনি কিছু করতে পারেন না। ওসব কন্ট্রোল-ফন্ট্রোল সব অযুহাত আর ভং। ”
তুহিন আর কথা না বাড়িয়ে কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায়।
দীপ্তি মুখ ভেংচে বিড়বিড়িয়ে বলে, ” আসছে আমার চরিত্রবান। আমি জানি তো তোর বাইরে কোনো চক্কর নেই। থাকতেই পারে না। কিন্তু আমি যে তোকে এতো ফুসলাই যে আমার প্রেমে পড়! প্রেমে পড়! কিন্তু না তোর কোনো নড়চড়ই নেই। উঠতে, বসতে, শুতে, খেতে তোকে পটানোর ট্রাই করি। আজও পটলি না নিরামিষ পান্ডা। এভাবেই চালিয়ে যা। আর দিনের পর দিন বলতে থাক যে আমার নিজের উপর যথেষ্ট কন্ট্রোল আছে। খাটাস কোথাকার। ধুরর! ”
দীপ্তি বিড়বিড়ানো শেষ করে টিভি দেখায় মনোযোগ দেয়। তুহিন ফ্রেশ হয়ে বের হয় খাটের পাশে পায়চারি করছে আর প্রোপোজ প্র্যাকটিস করছে। তুহিন বারবার তাকাচ্ছে দীপ্তির দিকে। দীপ্তিও আড়চোখে দেখছে তুহিনকে। তুহিনের এমন অস্থির আচরন দীপ্তির কাছে অচেনা আর অস্বাভাবিক লাগে। দীপ্তি তুহিনকে জিজ্ঞেস করে, ” এমন করছেন কেনো? ”
তুহিন অপ্রস্তুত কন্ঠে জবাব দেয়, ” কেমন? ”
– ” আপনি কী কিছু বলবেন? ”
– ” না। কী বলবো? ”
দীপ্তি কিছুক্ষন কপাল কুঁচকে তুহিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর আবার টিভি দেখায় মনোযোগ দেয়।
তুহিন এভাবে অস্থিরতা নিয়েই ডিনার টেবিলে যায়। তুহিনের এমন অস্থির আর আনমনা আচরন সবার কাছে অস্বাভাবিক লাগে। আসাদ সাহেব জিজ্ঞেস করে, ” কীরে তুহিন এতো ডিস্টার্বড লাগছে কেনো তোকে? কোনো সমস্যা? ”
তুহিন কোনোমতে আমতা আমতা করে না বলে। শায়লা বেগম দীপ্তিকে জিজ্ঞেস করে, ” কিরে তুহিনকে এতো অস্থির লাগছে কেনো? তোদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে নাকি? ”
– ” কই না তো। ”
দীপ্তির উত্তর দেওয়া শেষ হতে না হতেই আয়েশা তুহিনকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে, ” কিরে ভাইয়া আজকে জানুর হাতে মার খেলি নাকি? মুখটা একদম কাচুমাচু হয়ে আছে কেনো তোর? ”
আয়েশার কথায় আসাদ সাহেব আর শায়লা বেগম হো হো করে হেসে ওঠে। তুহিন আর দীপ্তি অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় আয়েশার দিকে।
খাওয়া শেষে রুমে এসে দীপ্তি আবার তুহিনকে জিজ্ঞেস করে এই অস্থিরতার কারন কী? তুহিন না বলে এড়িয়ে যায়। দীপ্তিও জোর করে না। দীপ্তির জোরাজুরি তেমন পছন্দ না। দীপ্তি বিরক্তি নিয়ে বই নিয়ে বসেছে। বাইরে এখনো ঝুম বৃষ্টি। দীপ্তি বিরক্তি নিয়ে জোর করে বইয়ের পাতায় চোখ বুলাচ্ছে আর ভাবছে, আহ! বাইরে কী রোমান্টিক আবহাওয়া। কবে এই ছ্যামড়া এসব ওয়েদার এর মর্ম বুঝবে? কবে এই মূর্খ ছেলে এসব আবহাওয়ার কদর করবে?
তুহিন সারা সন্ধ্যা অনুশীলন করেছে। প্রেম প্রস্তাবনার অনুশীলন। এবার অনুশীলন মাঠে নামানোর পালা। তুহিন ব্যাগ থেকে স্টেথোস্কোপটা বের করে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে, নিজেকে নিজে সাহস দেবার জন্য বলে, ” তুহিন কত বড় বড় সেমিনার লীড করিস তুই। এটা তেমন কিছু না। জাস্ট থিংক এটাও একটা মেডিকেল সেমিনার। আর সেমিনারটা এক্সট্রিমড ইম্পর্ট্যান্ট। তোকে জাস্ট কনফিডেন্ট থাকতে হবে। দ্যাটস ইট! ”
দীপ্তি হাত কপালে ঠেস দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে পড়ছে। তুহিন গিয়ে দীপ্তির চেয়ারটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে দীপ্তির সামনে হাটুগেড়ে বসে পড়ে। তুহিনের হৃদস্পন্দন মাতাল গতিতে ছোটা শুরু করেছে। মুহুর্তেই যেনো গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। দীপ্তি কিছুই বুঝতে পারছে না। চোখ বড় বড় করে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে তুহিনের দিকে। তুহিন নীলনকশা মাফিক স্টেথোস্কোপের ইয়ারটিপস দুটো দীপ্তির কানে গুজে দেয়। ইয়ারটিপস দুটো যখন দীপ্তির কানের কাছে নিচ্ছিলো তুহিনের হাত কাপছিলো। যেটা দীপ্তি বেশ লক্ষ্য করে। দীপ্তি বেয়াক্কেল বনে বসে আছে। ডাক্তার উনি আর স্টেথোস্কোপ দিচ্ছে আমার কানে? পাগল-টাগল হলো নাকি?
তুহিন মৃদু কাপাস্বরে বলে, ” দীপ্তি! ” আবার থেমে যায় তুহিন। কিছু একটা তো হচ্ছে তুহিনের যার কারনে সে ঠিকমতো কথাটুকু অবধি বলতে পারছে না। দীপ্তি এতোক্ষন অবাক হলেও তুহিনের এই কাপাস্বরে অনুভুতি খুজে পায়। দীপ্তি আশাভরা চোখ নিয়ে তাকায় তুহিনের দিকে। তুহিন কাপাহাতে স্টেথোস্কোপটা নিজের বুকের বা পাশে চেপে ধরে। মুহুর্তের মধ্যেই দীপ্তি তুহিনের বুকের উত্তাল ধ্বনি শুনতে পায়। শুব্দ শুনেই বোঝা যাচ্ছে তুহিনের হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে। দীপ্তির ও হৃদস্পন্দন মাতাল পথের দিকে ছুটছে। স্পন্দন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। দীপ্তির শ্বাস ঘন হয়ে আসছে। সাথে শরীরেও কেমন এক অদ্ভুত ঠান্ডা গরমের মিশেল প্রবাহ অনুভব করছে। দীপ্তি ঠিক যে মাতাল মুহুর্তের জন্য এতোটাদিন অপেক্ষা করছিলো সে মুহুর্তই এ মুহুর্ত তার পূর্বাভাস দীপ্তি পেয়ে গেছে।
তুহিন কথা বলা শুরে করে, ” দীপ্তি আমার কোনো ইচ্ছে ছিলো না আবার কোনো মেয়ের প্রেমে পড়ার। আমি একদমই প্রেম এড়িয়ে চলতাম। নিজেকে এমনভাবে তৈরী করে নিয়েছিলাম যে ভেবেছিলাম কাউকে ভালো না বেসে অনায়াসেই জীবনটা একা কাটিয়ে দেবো। কারন নীল আমায় অকারনে মাঝপথে ছেড়ে যাবার পরে আমি বাজেভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলাম। একদম প্রেম, ভালোবাসা, অনুভুতি, স্বম্পর্ক এসবের ওপর থেকে বিশ্বাসই উঠে গিয়েছিলো আমার। নীল ছেড়ে যাবার পরে আমি আমাকে আর ভালোবাসার সুযোগ দেইনি। কিন্তু তুমি আজান্তেই আমায় বাধ্য করে ফেলোছো তোমার প্রেমে উন্মাদ হয়ে যেতে। ”
তুহিনের এই কথা শুনে যেনো দীপ্তির প্রান ঠান্ডা হয়ে গেলো। হ্যা এই কথাটাই তো এই মানুষটার মুখে শোনার জন্য এতোদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো দীপ্তি। আজ অবশেষে সে অপেক্ষা খোজ পেলো অবসানের। আজ যেনো মহাপ্রাপ্তির মাহেন্দ্রক্ষণ। তুহিনের বলা প্রত্যেকটা অক্ষরের সত্যতা প্রমান করছে ওর হৃদস্পন্দন। একদম সত্য, মহাসত্য প্রত্যেকটা কথা। দীপ্তির কাছে তুহিনের প্রত্যেকটা কথা যেনো একেকটা জীবন্ত দলিল।
তুহিন বলছে, ” তোমার জন্য আমি যেভাবে অনুভব করি সেভাবে আমি নীলের জন্যও অনুভব করতাম না। তোমার জন্য সৃষ্টি হওয়া প্রত্যেকটা অনুভুতি আমায় বারংবার বলে যে তুমি আমার প্রথম প্রেম। সে প্রত্যেকটা অনুভুতি লাগে একদম অচেনা এবং সতেজ। ” তুহিন থেমে যায়।
তুহিন আবার বলে, ” হুমায়ুন আজাদের ভাষ্যমতে দিত্বীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম। তুমিই আমার প্রথম প্রেম দীপ্তি কারন আমি তোমার প্রেমে পড়েছি। একদম আমার সব ভাবনা ভুলে তোমার প্রেমে পড়েছি। আমি ইদানিং তোমায় নিয়ে ভাবা ছাড়া থাকতে পারি না। ইদানিং নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগে একদম অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রেমিকদের মতো লাগে। যখন তোমায় নিয়ে ভাবি মনে হয় আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখদায়ক কাজটা করছি, যখনই তুমি আমার ভাবনায় থাকো হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। মনে হয় কেউ ভেতর থেকে মনে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। একদমই অদ্ভুত আর অপ্রকাশ্য এই অনুভুতি। আমি জানি না তুমি আমার জন্য এভাবে ফীল করো কিনা বা করবে কিনা। কিন্তু আমি চাই তুমিও ঠিক আমার মতো ফীল করো। যাতে তুমি বুঝতে পারো আমি আসলে ঠিক কতটা ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। প্রেমের দিক থেকে আমি হুমায়ুনের হিমু হয়ে গিয়েছিলাম। গাঢ় হিমু। তোমার প্রেম আমার হিমুত্ব ভেঙে ফেলেছে দীপ্তি। যবে থেকে আবিষ্কার করেছি যে আমি তোমার প্রেমে পড়েছি তবে থেকে আমি আমার ম্যাচিউরিটি খুইয়ে ফেলেছি। নিজেকে একদমই কেমন হাবা হাবা লাগে। আমি একয়দিন শুধু ভেবেছি তোমাকে কীভাবে কথাগুলো বলবো। কীভাবে বলবো। অবশেষে এই স্টেথোস্কোপের কথাটা মাথায় আসে। আমি চাই তুমি অনুভব করো যে আমি ঠিক কতটা সত্যি বলছি। আমি জানি না আমি ঠিক কী বলছি। আদৌ নিজের অনুভুতিগুলো তোমার কাছে গুছিয়ে সাজিয়ে প্রকাশ করতে পারছি কীনা তাও জানি না। তাই গুছিয়ে শুধু একটা কথা বলতে চাই ‘ভালোবাসি’। তুমি বলেছিলে না দীপ্তি, যে যেদিন আমি তোমায় হারানোর ভয় করবো সেদিন বুঝবো যে আমি তোমায় ভালোবাসি। সবকিছু উপলব্ধি করে বলছি দীপ্তি ভালোবাসি। ভালোবাসি তোমায়! ” থেমে যায় তুহিন। তুহিন হালকা কাঁপছে। স্টেথোস্কোপের ইয়ারপিস দুটো দীপ্তির কান থেকে খুলে নিজের কানে গুজে নেয় তুহিন। তারপর স্টেথোস্কোপটা চেপে ধরে দীপ্তির বুকের বা পাশে। দীপ্তি চোখ বন্ধ করে কেপে ওঠে। দীপ্তির খুশিতে চোখটা অজান্তেই ভিজে গেছে। দীপ্তির বাকশক্তি যেনো অনুভুতি চাপা পড়ে গেছে। মুখ থেকে কিছুই বলতে পারছে না। চোখ দিয়ে সবটা বলে দিতে চাচ্ছে তুহিনকে। দীপ্তি অস্ফুট কাপাস্বরে বলে, ” আপনি ঠিক যে অনুভুতি গুলোর ব্যাখ্যা করেছেন ঠিক সেরকম অনুভুতি আমার কলেজ জীবন থেকে আপনার জন্য অনুভব করছি আমি। আমি আপনাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসি। এতোদিন না বলে শুধু আপনার বলার অপেক্ষা করছিলাম। আমি আপনার মুখে এই কথাগুলা শোনার জন্য সেই কলেজ জীবন থেকে মুখিয়ে ছিলাম। বিয়ের পরে এই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে দিন গুনছিলাম। কবে আসবে যেদিন আপনি আমায় ভালোবাসি কথাটা বলবেন। আমি আপনাকে শুধু ভালোবাসি বললে ভুল হবে। যদি ভালোবাসির চেয়েও বড় কোনো শব্দ থাকতো তাহলে আমি ঠিক সে শব্দটা এখন শোনাতাম আপনাকে। আমিও ভালোবাসি আপনাকে। অনেক! অনেক! অনেক! ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি। ”
এক নিঃশ্বাসে পুরোটা বলে একদম নিস্তব্ধ হয়ে যায় দীপ্তি। ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে দীপ্তি। তীব্রভাবে গা কাঁপছে তার। মনে হচ্ছে এখনই যেনো কেপে কেপে মরে যাবে সে। পুরো শরীরে যেনো অধিক মাত্রায় এক অকারন ভুমিকম্পের সৃষ্টি হয়েছে।
তুহিন এর চেয়ে খুশি আর কখনও হয়নি। কেমন যেনো এক সার্থকতা অনুভব করছে তুহিন। দুজনই মাতাল নজরে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। দীপ্তির খুব অসুবিধে হচ্ছে আজ তুহিনের ওই চোখ দুটোর দিকে তাকাতে। না পারছে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে না পারছে চোখ সরিয়ে নিতে। এই অনুভুতি যেনো আজ দীপ্তির প্রান নিয়েই ছাড়বে। দুজন চোখের মাধ্যমে ভাব বিনিময় করছে। দুজনের চোখের ভাষায় স্পষ্ট তারা এখন শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে চাচ্ছে একে অপরকে। দুজনের অকারন অপেক্ষার অবসান ঘটবে এই জড়িয়ে ধরার মাধ্যমে। দুজন এই ভাবনায় মাতাল থেকে উন্মাদ হয়ে উঠছে। তলিয়ে যাচ্ছে অনুভুতির গহিন অতলে। ঠিক তখনই তীব্র জোরে দড়জা ধাক্কানোর শব্দ হয়। মুহুর্তেই দুজনের ঘোর কেটে যায়। তুহিন নিজেকে স্বাভাবিক করে উঠে গিয়ে দড়জা খুলে দেয়।
চলবে!
#thetanvirtuhin
প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ►
” Tanvir’s Writings “