প্রেমবিভ্রাট ১৭ তানভীর তুহিন

0
594

প্রেমবিভ্রাট
১৭
তানভীর তুহিন

সকাল প্রায় ৭ টা বাজে। দীপ্তির ঘুম ভেঙেছে। তুহিন বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। দীপ্তি সজাগ হয়েই উপলব্ধি করলো দীপ্তির কপালটা তুহিনের থুতুনিতে ঠেকে আছে। দীপ্তির বেশ ফুরফুরে লাগে। গতকাল রাতের কথা মনে পড়তেই খানিক লজ্বা পায় দীপ্তি। দীপ্তি উঠে বসে নিজের মুখটা তুহিনের মুখের কাছে নিয়ে বলে, ” অবশেষে তাহলে বলেই দিলি, না? আমার খরগোশের বাচ্চাটা। ” দীপ্তি আলতো করে তুহিনের কপালে একটা চুমু খায়। তুহিন ঘুমোচ্ছে তবুও চুমু দেবার পরে মরন লজ্বা অনুভব করে দীপ্তি। বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায় দীপ্তি। নিচে গিয়েই দেখে আসাদ সাহেব পত্রিকা পড়ছে আর শায়লা বেগম বুয়ার সাথে রান্না করছে। দীপ্তি অর্ধেক সিড়ি নামতেই শায়েলা বেগম দীপ্তিকে বলে, ” এই দীপ্তি নামিস না। আয়েশাকে ডেকে নিয়ে আয়। আজ তোর রান্না শেখার কথা না? তোর সাথে আয়েশাও শিখবে। ”
– ” আচ্ছা। ”

দীপ্তি আবার সিড়ি বেয়ে উপড়ে উঠে আয়েশার রুমে চলে যায়।
শায়েলা বেগম একা একা বিড়বিড় করতে থাকে, ” আজকালকার মেয়েদের একদম ফ্যাশন হয়ে গেছে যে রান্না শিখবে না। রান্না শিখবি না কেনো রে? রান্নার চেয়ে এক্সপেরিমেন্টাল আর কিছু হয় নাকি? মেয়েরা তো এই রান্নার কারনেই জন্মসূত্রে বিজ্ঞানি। কতই না মজা রাধতে। কতই না মজা কুকিং এক্সপেরিমেন্টে। না আলহাদি ঢং দেখিয়ে রান্না করবে না। আধুনিকতার দোহাই দেখিয়ে যত্তসব সস্তা আদিক্ষেতা। ”

কিছুক্ষন থেমে যায় শায়লা বেগম। তারপর আবার বলে, ” স্বামির মনে যাওয়ার যায়গা তো পেট থেকেই শুরু হয় নাকি? তা ভালো রান্না করেই যদি স্বামিকে না খাওয়াতে পারিস তাহলে স্বামির মনে ঢুকবি কী করে? ” আপনমনে এসব বিড়বিড় করছিলো শায়লা বেগম। তখনই চিৎকার দিয়ে নাকিকান্না কাঁদতে কাদঁতে নিচে নামে আয়েশা। ড্রয়িংরুমে এসেই হুংকার দিয়ে বলে, ” মা আমি কতদিন বলেছি, আমি এসব রান্না-বান্না শিখবো না। কেনো জ্বালাচ্ছো তুমি? ”
– ” একদম এখান থেকে তোমার থোতায় খুন্তি ছুড়ে মারবো। বজ্জাত কোথাকার। যা মুখ ধুয়ে দীপ্তির সাথে এখানে এসে দাড়া। ”

আয়েশা আবার নাকিকান্না করতে করতে বলে, ” আমি শিখবো না। ঘুম পাচ্ছে আমার। ”
– ” ঘুম পাবে না? সারারাত বসে বসে বাড়ির চোর পাহাড়া দাও তো তুমি। আজ দীপ্তি রান্না শিখছে ওর সাথে তুই ও শিখবি। তুই শিখবি না তোর বাপও শিখবে। ”
পাশ থেকে আসাদ সাহেব হো হো করে হেসে উঠে বলে, ” তুমি বরং আমায়’ই শিখিয়ে দাও। এই রান্নার কাজ তোমার মেয়ে কখনই শিখবে না। ”
শায়লা বেগম গর্জে ওঠে, ” তুমি একদম আস্কারা দেবে না। শিখবে না মানে কী? যতই মডার্ন হোক না কেনো মেয়ে হিসেবে টুকটাক রান্না তো শিখতেই হবে নাকি? আর ও শিখবে না কেনো? দীপ্তি কেমন লক্ষ্মী মেয়ের মতো নিজের ইচ্ছায় শিখছে। ওরও শিখতে হবে। আর না শিখলে আজ সারাদিন খাবার তো পাবেই না সাথে কঠিন মাইরও আছে এই শয়তানির কপালে। ও যদি আজ রান্না না শিখতে আসে, তাহলে আমি ওকে ফ্লোরে ফেলে লাথানো শুরু করবো। এই বদ যতক্ষন নড়বে, আমি ওকে ততক্ষন লাথাবো। ”

আসাদ সাহেব জানে ঠিক কী করলে আয়েশা রান্না শিখবে। আসাদ সাহেব বলে, ” আরে তুমি কার সাথে কার তুলনা করছো? দীপ্তি আম্মু তো শিখবেই। ওর শেখার ইচ্ছা আছে। আয়েশা তো কান্দুনি বুড়ি ও এসব শিখবে নাকি। ”

দীপ্তি মিটিমিটি হাসছে। আয়েশা হুংকার দিয়ে বলে, ” হয়েছে হয়েছে আর এতো জানুর প্রশংসা করতে হবে না। আমিও রান্না শিখবো মুখ ধুয়ে আসছি। ধুর! ভাল্লাগেনা। ”

আয়েশা রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

আয়েশা ফ্রেশ হয়ে কিচেনে আসতেই শায়লা বেগম আয়েশা আর দীপ্তিকে টুকটাক রান্না শেখানো শুরু করে। প্রায় আটটার দিকে শায়লা বেগম দীপ্তিকে বলে, ” নাস্তা হয়ে গেছে যা তুহিনকে ডেকে নিয়ে আয়। ”
দীপ্তি রুমে গিয়ে তুহিনকে ডাকা শুরু করে। তুহিন বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। দীপ্তি ডাকছে আর তুহিন শুধু উত্তরে হু! হা! করছে। দীপ্তির ধীরে ধীরে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। এভাবে কতক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে একজনকে ডাকা যায়? এবার দীপ্তি তুহিনকে না ডেকে সোজা হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো। তুহিন বসেও ঘুমোচ্ছে। দীপ্তি তুহিনকে বসিয়ে জোরগলায় ডাকা শুরু করলো, ” শুনছেন? উঠুন। আম্মু খেতে ডাকছে। ক্লিনিকে যাবেন না? উফফফ!! আটটা বাজে তো। ”
এবার তুহিন হালকা গুঙিয়ে বললো, ” ধুর আরেকটু ঘুমাতে দাও না। ” বলেই তুহিন আবার শুয়ে পড়লো।

দীপ্তির এবার মেজাজ তুঙ্গে চড়লো। সোজা বাথরুম থেকে একটা গামছা ভিজিয়ে চুপচুপে করে এনে সেটা তুহিনের মুখের উপর নিগড়ে দিলো। তুহিন একলাফে সোজা শোয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। তুহিন চুপচাপ তাকিয়ে আছে দীপ্তির দিকে। চোখে-মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ। তুহিন মনে মনে গালাগাল দিচ্ছে দীপ্তিকে। কিন্তু সেগুলো মুখে এনে দিলে আরেকটু বেশি স্বস্তি পেতো। তুহিন একদৃষ্টে মেজাজ খিটিয়ে তাকিয়ে আছে দীপ্তির দিকে। দীপ্তিও ঠোট উল্টে তাকিয়ে আছে তুহিনের দিকে। দীপ্তি বেশ বুঝতে পারছে কাজটা ঠিক হয়নি। মোটেও ঠিক হয়নি। কাজ অনুচিত হয়েছে। তুহিন বেশ রেগে গেছে। দীপ্তি মোটেই তুহিনের রাগের তোয়াক্কা করে না। রাগুক! তাতে আমার কী? যখন ডাকছিলাম আর উঠছিলো না তখন তো আমারও তো রাগ হচ্ছিলো নাকি। তুহিনের যেনো রাগ গরম পানির মতো উতলে উতলে উঠছে। তুহিনকে এভাবে রেগে তাকিয়ে থাকতে দেখে দীপ্তি নিজেই হালকা কাপাস্বরে বলে, ” আপনি ঘুম থেকে উঠছিলেন না সেজন্যই এভাবে উঠিয়েছি। যদি ডাকশুনে উঠে যেতেন তাহলে কী আর এরকম করতাম নাকি? ” বলেই দীপ্তি চুপ হয়ে যায়। তুহিন এখন নিশ্চুপ ভাবে রেগে রক্তবর্ন হয়ে তাকিয়ে আছে। দীপ্তি আবার বলে। এবার দীপ্তির কণ্ঠস্বর একটু বেশিই কাপছিলো আর দীপ্তি হালকা তোতলাচ্ছিলো, ” দেখুন আমিও তো ঘুম কাতুরে কিন্তু আমি তো চাইলেই জলদি উঠতে পারি তাইনা? এইতো আজকেই ৭ টা বাজে উঠেছি। আপনি আমার চেয়ে প্রায় ১ ঘন্টা বেশি ঘুমালেন। তারপরেও যদি ঘুম থেকে উঠানোর জন্য এভাবে রেগে যান তাহলে সে রাগ একদমই অনর্থক। ”
তুহিন এখনও চুপ। এবার দীপ্তি তুহিনের রাগকে উপেক্ষা করে নিজে রাগ দেখিয়ে বলে,” একদম এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না। আমি শুধু আপনাকে ঘুম থেকে উঠিয়েছি। কোনো খুন-ফুন করিনি যে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন। এভাবে তাকাবেন না। চোখ নামান। আমার অস্বস্তি হচ্ছে।” তুহিন এখনও চুপ। তুহিন আসলে ভাবছে এর শোধ নেবে ঠিক কীভাবে। তুহিন সাধারনত সকালে গোসল করেই বের হয়। তুহিন ভেবে নিলো ঠিক কীভাবে দীপ্তিকে শায়েস্তা করবে। তুহিন চুপচাপ গিয়ে রুমের মেইনডোর লক করলো। তুহিনকে এভাবে মেইনডোর লক করতে দেখে দীপ্তি ভ্রু কুঁচকালো। ঠিক কী করতে চাচ্ছেন উনি? মুহুর্তেই দীপ্তির কপালের ভাজ উধাও হয়ে গেলো এই ভেবে যে, মারবে-টারবে নাকি ভাই? না উনি মোটেই ঐ প্রকৃতির না যে নিজের রাগ নিবারনের জন্য অন্যায় ভাবে নিজের বউকে মারবে। এতোদিন তো আমার কত্তো কত্তো জ্বালাতন সহ্য করেছে। সবসময়ই সহ্য করেছে। কিন্তু আজ কী হলো? দীপ্তি এসবই মনে মনে আওড়াচ্ছিলো। তখনই তুহিন এসে দীপ্তিকে কোলে তুলে নেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় দীপ্তির হৃদস্পন্দন যেনো শূন্যে উঠে গেছে। নিজের হার্টবিট নিজেই বেশ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে দীপ্তি। তুহিন দীপ্তিকে বাথরুমে ঝরনার নিচে নামিয়ে দিয়ে ঝরনাটা ছেড়ে দিয়ে নিজে একটু দূরে সরে দাঁড়ায় যাতে নিজে না ভিজে যায়। দীপ্তি আহাম্মক বনে ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক মুহুর্তের ব্যাবধানে দীপ্তি নিজেই ঐ গামছাটার ন্যায় ভিজে চুপচুপে হয়ে গেছে। দীপ্তি রাগবে, কাঁদবে নাকি অবাক হবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। তুহিন ঝরনাটা অফ করে হো হো করে হেসে দিয়ে বলে, ” তুমি আমায় ভয়ও পাও। তা আজ জানলাম আমি। ”
দীপ্তি কিছু বলছে না। শুধু ঠোট উল্টে দাঁড়িয়ে আছে। এবার তুহিন বাথরুমে ঢুকে বাথরুমের দড়জা লাগিয়ে দেয়। দীপ্তি এবার অবাক হবার শেষ সীমানা অতিক্রম করে ফেলে। কী করতে চাচ্ছে উনি? এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দীপ্তির মাথায়। তুহিন নিজের ব্রাশে পেষ্ট মাখাতে মাখাতে বলে, ” এতো ভয় পেয়ে ঢং দেখাতে হবে না। আমি যতক্ষন গোসল করবো তুমি শুধু এখানে ভিজে অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকবে ব্যাস শেষ। আমি গোসল করে বের হয়ে গেলে। দ্যান তুমিও গোসল করে নিও! ”

দীপ্তির চক্ষু বৃত্তের ব্যাস বেড়ে গেছে। দীপ্তি তোতলানো কন্ঠে বলে, ” মানে কী এসবের? আমার অকওয়ার্ড লাগছে। আর আপনি কী আমার সামনে চেঞ্জ করবেন নাকি? ”
– ” অকওয়ার্ড এর কী আছে? আমি তোমার হাজবেন্ড। আর তাছাড়া এমন তো না যে তুমি আমায় ভালোবাসো না বা এমন কিছু। গতকাল রাতেই তো নিজে কতকিছু করলে। চুমু খেলে,জড়িয়ে ধরলে। ”
– ” হু হু হয়েছে। চুপ করে তাড়াতাড়ি গোসল সারুন। যতসন অসভ্যের মতো কান্ডকীর্তি! ”
– ” অসভ্যতামি তখন হতো যখন আমি তোমায় আমার সাথে একসাথে গোসল করতে বলতাম। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি আমাকে একসাথে গোসল করার জন্যই উস্কাচ্ছো! ”
দীপ্তি মনে মনে বলে, কর না একসাথে গোসল। আমার কী? আমি উস্কাচ্ছিই তো। ইশ! কতদিনের শখ ছিলো ভেজা অবস্থায় দেখবো খরগোশটাকে। আজ ফাইনালি শখটা ফুলফিল হবে।

তুহিন দাতব্রাশ সেরে ঝরনা ছেড়ে দেয়। তারপর টি-শার্ট টা খুলে ফ্লোরে ফেলে দেয়। দীপ্তির সামনে এখন উন্মুক্ত ওর সেই লোভ জড়ানো লোমশ বুকটা। মন চাচ্ছে এখনই গিয়ে কামড়ে দিতে। তুহিন এতোক্ষন ঠিক করে দীপ্তিকে লক্ষ্য করেনি। দীপ্তির দিকে চোখ যেতেই তুহিন এক মাতাল আভা অনুভব করে। চোখ সরাতে পারছে না তুহিন। কিছু একটা তো টানছে তুহিনকে। তুহিন চাইলেও চোখ সরিয়ে নিতে পারছে না। তুহিন ভাবলো, চোখ সরিয়েই বা নেবো কেনো? আমরা দুজনেই তো আমাদের ফিলিংস কনফেসড করেছি। তাহলে আবার সরিয়ে নেবো কেনো?

তুহিন ঝরনাটা হালকা কমিয়ে দিয়ে দীপ্তিকে বলে, ” দীপ্তি তুমি আমায় চরিত্রহীন বলো না? ”

দীপ্তি কিছুই বলছে না ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে তুহিনের দিকে। কারন দীপ্তি স্পষ্ট তুহিনের চোখে অজানা কিছুর ছাপ দেখতে পাচ্ছে। তুহিন আবার বলে, ” তুমি তো আমায় আনরোমান্টিকও বলো নাকি? চলো আজ তাহলে তোমায় একটু রোমান্টিকতার টিজার দেখিয়ে দেই। ”

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ►
” Tanvir’s Writings “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here