প্রেমবিভ্রাট ১৮ তানভীর তুহিন

0
628

প্রেমবিভ্রাট
১৮
তানভীর তুহিন

– ” মা..মানে? ”

তুহিন দীপ্তির কোমড় ধরে টেনে কাছে নিয়ে আসে। দীপ্তির হৃদস্পন্দন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। দীপ্তির দেহে কাপন ধরে যায়। এক অজানা লজ্বার কারনে তুহিনের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না দীপ্তি। লজ্বায় মরে যাচ্ছে দীপ্তি। দীপ্তি নিজেও তো চাচ্ছিলো এসব হোক। এই মুহুর্তগুলোর জন্য কত প্রহর গুনেছে সে। অথচ আজ লজ্বায় কেপে মরে যাচ্ছে। তুহিন ঝরনাটা বাড়িয়ে দেয়। দুজনে একসাথে ভিজছে। দীপ্তির চুলগুলো ঘাড়ের পেছনে লেপটে গেছে একদম। পানিগুলো গড়িয়ে গিয়ে যেনো দীপ্তির ঠোট দুটোকে এক অপরুপ জীবন্ত ঝরনায় পরিনত করেছে। গলার নিচে বুকের খালি অংশুটুকুতে বিন্দু বিন্দু পানি জমছে। দীপ্তি চোখ বন্ধ করে তুহিনকে আখড়ে ধরে কাপছে। দীপ্তির কাপন তীব্রভাবে বাড়ছে। তুহিন আর পারছে না নিজেকে আটকে রাখতে। দীপ্তির কোমড়টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, এক হাত দিয়ে দীপ্তির ঘাড় উচু করে দীপ্তির ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দেয় তুহিন। দীপ্তির কাপন আরো কয়েকশগুন বেড়ে যায়। দীপ্তির নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। দীপ্তি যেনো কেপে কেপেই অজ্ঞান হয়ে যাবে। দীপ্তি নিজের টাল সামলাতে শক্ত করে তুহিনের খালি পিঠে খামচে ধরে আছে। আর তুহিন স্বাদ নিচ্ছে দীপ্তির ঠোটের। যে ঠোট তুহিনের কাছে জীবন্ত ঝরনা। দীপ্তি আর পারছে না দম আটকে আসছে। তুহিন ছাড়ছেই না, ক্রমাগত গভীর হচ্ছে তুহিনের স্পর্ষ। দীপ্তি কোনোমতে ঠোট সরিয়ে নেয়। দীপ্তি কাপছে। তুহিনও হালকা কাপছে তবে তা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু দীপ্তির কাপনরোগ স্পষ্ট । দীপ্তির কাপন দেখে তুহিন আর কিছু করে না। মুচকি হেসে দীপ্তির কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায় বাথরুম ছেড়ে।

দীপ্তি দাঁড়িয়ে আছে। এখনও কাপনরোগ স্বাভাবিক হয়নি তার। অজান্তেই মুচকি মুচকি হাসছে দীপ্তি। নিজের ঠোট দুটো স্পর্ষ করে যেনো লজ্বায় ডুবে মরছে। ইশ! কতদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এলো এই মুহুর্ত। দীপ্তি স্বাভাবিক হয়ে দড়জা দিয়ে উকি দিয়ে বলে, ” আলমারি থেকে জামাকাপড় দিন। জামাকাপড় ছাড়বো। ”

তুহিন ভেজা অবস্থায় রুমে এসেই তোয়ালে জড়িয়ে নিয়েছে। দীপ্তি জামাকাপড় চাইতেই তুহিন আলমারি থেকে জামাকাপড় নিয়ে দীপ্তিকে বলে, ” দিবো তার আগে আপনি আজ্ঞে ছেড়ে তুমিতে আসো। আপনি শুনতে কেমন কেমন যেনো লাগে। ”

দীপ্তি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। কাপনরোগটাও সেরেছে অনেকটা। লজ্বাভাবটাও কমে গেছে। দীপ্তি কপাল কুচকে ভেংচি কেটে বলে, ” আমার আপনি বলতেই বেশি ভালো লাগে। আর তাছাড়া আপনি আমার থেকে প্রায় ৮ বছরের বড়। তুমি বলতে গেলে, আমার মুখ ছুটে তুই বেড় হয়ে যাবে। আমি শিওর। ”
– ” আরে আ’ম ইওর হাসবেন্ড। এখানে বয়স কম্পেয়ার করছো কেনো? আর তাছাড়া আমি তো বলছি তুমি করে বলতে। ”
– ” আচ্ছা, আস্তে আস্তে ট্রাই করবো। এখন জামাকাপড় দিন। ”
– ” উহু আস্তে আস্তে ট্রাই করা লাগবে না। এখনই জোরে জোরে ট্রাই করে বলো, ওগো জামাকাপড় দিয়ে যাও। ”

লজ্বা পেয়ে হেসে দেয় দীপ্তি।

তুহিনও মুচকি হেসে বলে, ” তুমি না বললে আমিও দিচ্ছি না। ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকো। ”

দীপ্তির যে কেনো এতো হঠাৎ আর অকারন লজ্বা চলে আসে তা নিয়ে দীপ্তিও সন্দিহান। দীপ্তি লজ্বা পেয়ে মাথা নামিয়ে বলে, ” জামাকাপড় দিয়ে যাও। ”
– ” উহু! উহু! হয় নাই। বলো, ওগো জামাকাপড় দিয়ে যাও। ”
– ” আমি ওগো-ফোগো বলতে পারবো না! ”
– ” তাহলে আমিও দিচ্ছি না। দাঁড়িয়ে থাকো। ”
দীপ্তি খানিক কৃত্রিম রেগে বাধ্য হয়েই বলে, ” ওগো সোয়ামি জামাকাপড় গুলো দিয়ে আমায় উদ্ধার করে যাও। ”
তুহিন হো হো করে হেসে ওঠে। তুহিন বলে, ” আহ! গো বধু আমার মার ডালোগি ক্যায়া? ”

দীপ্তিও হেসে ফেলে। তুহিন গিয়ে দীপ্তিকে জামাকাপড় দিয়ে দেয়। তারপর নিজেও ট্রাউজার আর টি-শার্ট পড়ে নেয়।

দীপ্তি বাথরুম থেকে বের হবার পরে তুহিন আর দীপ্তি একসাথে নাস্তা করতে নিচে নামে। সবাই টেবিলে বসে যে যার মতো করে নাস্তা সাড়ছে। কিন্তু দীপ্তি স্বস্তিতে নাস্তা করতে পারছে না। তুহিন টেবিলের নিচ দিয়ে নিজের পা দিয়ে দীপ্তির পা ঘষছে। তুহিন এক পা দিয়ে দীপ্তির পা চেপে ধরে রেখেছে। আরেক পা দিয়ে দীপ্তির পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। দীপ্তি না পারছে পা সড়িয়ে নিতে না পাড়ছে এভাবে পা রাখতে। একে তো গায়ে সুড়সুড়ি লাগছে তারউপরে আবার বুকের ভেতরেও কেমন যেনো সুড়সুড়ি লাগছে দীপ্তির। এভাবে খাবার গেলা যায় নাকি ঠিকমতো? দীপ্তি বারবার তুহিনের দিকে তাকিয়ে ইশারায় তুহিনকে বুঝিয়েছে পা ছাড়ার জন্য। কিন্তু তুহিন নাছোড়বান্দা। তুহিন পা ছাড়ছেই না। মিটিমিটি হাসছে আর পা ঘষেই যাচ্ছে। তুহিনের যেনো প্রেম একদম উপচে গড়িয়ে পড়ছে দীপ্তির জন্য। দীপ্তির বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। খেতেই পারছে না। ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো আয়েশা। আয়েশা চোখ পিটপিট করে জিজ্ঞেস করে, ” কীরে জানু তুই খাচ্ছিস না কেনো? ”

তুহিন এখনও পা সরাচ্ছে না। তুহিন ভাবলেশহীন ভাবে খেয়েই যাচ্ছে। কেউই দেখে বুঝবেনা যে তুহিনের কারনে দীপ্তির খেতে অসুবিধা হচ্ছে। দীপ্তি যথেষ্ট স্বাভাবিক ভাবে বলার চেষ্টা করে, ” কই খাচ্ছি তো। ”
আয়েশা দীপ্তির প্লেটের দিকে তাকায়। খাবার তেমন কমেনি। আয়েশা কিছুক্ষন চুপ থেকে হেসে একটা মাঝারি চিৎকার দিয়ে বলে, ” কীরে তোর খেতে অরুচি লাগছে নাকি? এই ধর বমি বমি ভাব, শরীরে আনচান ভাব, তুই প্রেগনেন্ট নাকি রে জানু? ”

তুহিন বেচারা পানি খাচ্ছিলো। আয়েশার কথা শুনে মহাবিশম খেলো। কাশতে কাশতে দম বের হয়ে যায় যায় অবস্থা তুহিনের। দীপ্তি ঠোট উল্টে অসহায় দৃষ্টিতে একবার আয়েশার দিকে তাকাচ্ছে একবার তুহিনের দিকে তাকাচ্ছে। ওদের কাণ্ডকারখানা দেখে আসাদ সাহেব আর শায়লা বেগম হাসিতে ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে। তুহিনের বিশম কাটতেই তুহিন দীপ্তির পা ছেড়ে দেয়। শায়েলা বেগম দীপ্তিকে বলে, ” কিরে আম্মু সেরকম কিছু নাকি? সেরকম কিছু হলে কিন্তু এবার তোর গ্র‍্যাজুয়েশন কম্পলিট হবে না। এই তো আর একমাস বাকি এক্সামের। সেরকম কিছু হলে কিন্তু আমি তোকে একদমই এক্সাম দিতে দিবো না। পরীক্ষার চিন্তা করে করে আমার নাতির হেলথ খারাপ করবি, তা আমি মোটেই মেনে নেবো না। ”

দীপ্তি বেচারা পড়েছে মহাবিপদে। মনে মনে বলছে, কীসের নাতি? তোমার সুপুত্তুর শুধু হাগ আর কিস করেছে। তা দিয়ে কী প্রেগনেন্ট হওয়া যায় নাকি? দীপ্তি একটু তাতালো নজরে তাকায় তুহিনের দিকে। তারপর শায়লা বেগমকে বলে, ” আরে আম্মু তুমিও না কী আয়েশার মতো শুরু করলে। আমি একদম ঠিক আছি। সেরকম কিছুই না। ”

শায়লা বেগম বলে, ” তাহলে বাবা ঠিক আছে। তবে ফাইনাল টার্ম শেষ হবার পরপরই বাচ্চা নিয়ে ফেলিস কিন্তু। আমার একটা নাতির খুব শখ হচ্ছে। ”

দীপ্তি কিছুই বলে না। ওপাশ থেকে আসাদ সাহেব হেসে বলে, ” ওদের ফ্যামিলি প্ল্যানিং নিয়ে ওদের মাথা ব্যাথা করতে দাও না। তুমি একদম টাইম ডেট ফিক্সড করে দিচ্ছো বাচ্চা নেওয়ার। এসব কী শালু? ”
– ” তুমি আবার ফোঁড়ন কাটতে এসো না তো। ওদের কী প্রেশার দিচ্ছি নাকি আমি? আমি তো শুধু আমার শখের কথা বললাম। ”

এরমধ্যে তুহিনের খাওয়া শেষ হয়ে যায়। তুহিন চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে তখন আয়েশা বলে, ” কিরে ভাইয়া উঠে যাচ্ছিস যে? লজ্বা পেয়েছিস নাকি? ” বলেই খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে আয়েশা। তুহিন উঠে গিয়ে আয়েশার চেয়ারের পেছনে গিয়ে আয়েশার চুল টেনে দিয়ে বলে, ” একদম ওপেন হার্ট সার্জারি করে দেবো তোর। ”

তুহিন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের হাতা ভাজ করছে। দীপ্তি নাস্তা সেড়ে এসে রুমে ঢুকেছে। নাস্তা সেড়েছে বললে ভুল হবে কোনোমতে খাবার গিলে উঠে এসেছে। দীপ্তির বেশ অপ্রস্তুত লাগছিলো খাবার টেবিলে। রুমে ঢুকেই কোমড়ে হাত রেখে রাগে ফুসছে দীপ্তি। তুহিন দীপ্তির দিকে একপলক তাকিয়ে ব্যাস্তভঙ্গিতে শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে বলে, ” সুস্থমতো খেতে পারো না তুমি? ”
দীপ্তি কিছুই বলছে না। তুহিনও উত্তর না পেয়ে চুপ হয়ে শার্টের অন্য হাতা ভাজ করছে। দিপ্তি দাঁত খিটিমিটি দিয়ে বলে, ” আসলেই তো আপনি একটা অসভ্য লোক। ”

তুহিন চুপচাপ ভ্রু কুঁচকে তাকালো দীপ্তির দিকে।

দীপ্তি আবার বললো, ” কই এতোদিন তো এতো প্রেম উতলে পড়ে নাই আপনার। আজ কী হলো যে, প্রেম একদম ভেতরে রাখতেই পারছেন না? কতবার ইশারায় বললাম পা টা সরান, পা টা সরান, না কথা কানেই তুললো না। কী এক অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়তে হলো। শেষে কীনা প্রেগনেন্ট….”
দীপ্তি আর কিছু বলার আগেই তুহিন দীপ্তিকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ” এমনিতে তো আমার উপর সারাদিন ছড়ি ঘোরাও। আমি কীভাবে বুঝবো যে তোমার মধ্যে মাল্টিটাস্কিং মুড নেই? ”
– ” এখানে মাল্টিটাস্কিং মুড এলো কোত্থেকে? ”
– ” সামান্য পায়ের সুড়সুড়িতে যার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তার মধ্যে কী আদৌ মাল্টিটাস্কিং মুড আছে? ”
– ” হ্যা নেই। আপনারই বা কেনো খাবার টেবিলের নিচ দিয়ে ওভাবে অসভ্যের মতো পায়ে সুড়সুড়ি দিতে হবে? ”
– ” আমার দিতে ভালো লাগছিলো তাই দিয়েছি। আর এখন থেকে প্রতিনিয়তই দিবো। অভ্যাস করে নাও। ”
– ” হু দেওয়াবো। কাল থেকে আর আমি ডাইনিং এ আপনার পাশেই বসবো না! ”
– ” তুমি না বসো আমি তোমার পাশেই বসবো। ”
দীপ্তি মৃদুহেসে বলে, ” অসভ্য কোথাকার। ”
তুহিন সঙ্গে সঙ্গেই দীপ্তিকে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে, ” শুধু-শুধু অসভ্য! অসভ্য! বলে জিকির করবে না। এখনও অসভ্যতামির কিছুই করিনি। আমার অসভ্য কাজ এখনো দেখোনি তুমি। ”
দীপ্তি মাথা নিচে নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগের মতো গা না কাঁপলেও কেমন যেনো অস্থির লাগছে দীপ্তির। শ্বাস উত্তপ্ত আর ঘন হয়ে আসছে। তুহিন দীপ্তির থুতুনিতে আঙুল ঠেকিয়ে দীপ্তির মাথা উচু করে। দীপ্তি চোখ বন্ধ করে নেয়। আলতো করে দীপ্তির ঠোটে ঠোট স্পর্ষ করে। তারপর দীপ্তির গালে আর কপালে চুমু খায়। তুহিনের প্রত্যেকটা আলিঙ্গনে কেপে উঠছিলো দীপ্তি। তুহিন আবার দীপ্তির ঠোটে একটা আলতো করে চুমু খেয়ে বলে, ” টাটা। ”
দীপ্তি চোখ খুলে মুচকি হাসে। দীপ্তির মুখ লজ্বায় লালচে হয়ে গেছে। তুহিন হেসে দিয়ে বলে, ” সারাদিন তুমি করে বলার প্র‍্যাক্টিস করবে। আর লজ্বা কমানোর জন্য কোনো টনিক বা জড়িবুটি সেবন করবে। ”
দীপ্তি কিছুই বলে না। আরো বেশি লজ্বা পেয়ে যায় দীপ্তি। তুহিন দীপ্তির কপালে আবার চুমু খেয়ে বলে, ” টাটা। ”

তুহিন ক্লিনিকের উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ►
” Tanvir’s Writings “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here