প্রেমবিভ্রাট
২২
তানভীর তুহিন
গোসল সেরে তৈরী হয়ে নেয় তুহিন। তারপর এওয়ার্ডটা নিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামে। আসাদ সাহেব আর শায়লা বেগম ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে। খুব মনযোগ সহকারে টিভি দেখছে তারা। গতকাল রাতের এওয়ার্ড শো টা রিটেলিকাষ্ট হচ্ছে টিভিতে। তুহিন অর্ধেক সিড়ি বেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক পলক টিভি দেখছে আরেক পলক নিজের বাবাকে দেখছে।
টিভিতে গতকাল রাতে তুহিনের এওয়ার্ড নেবার মুহুর্তটা রিটেলিকাষ্ট হচ্ছে, ” দ্যা মোস্ট কোয়ালিফাইড হার্ট সার্জন ইন এশিয়ান মেডিকাল ফোরাম গোস টু তুহিন ইশতিয়াক। গীভ হিম এ বিগ রাউন্ড অফ এপ্লাউস.! ”
তুহিন স্টেজে উঠে গিয়ে হাসিমুখে এওয়ার্ডটা হাতে তুলে নিয়ে বলে, ” আ’ম ডেডিকেটিং দিস এওয়ার্ড টু আসাদ ইশতিয়াক, মাই ফাদার, মাই সুপারহিরো। আজ আমি যা সবটাই আমার বাবার জন্য। আমার সাফল্যে সবচেয়ে বড় অবদান আমার বাবার। সারাজীবনে আমি আমার জীবনের কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমার জীবনের সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমার বাবা। আমি সম্মান জানিয়েছি আমার বাবার প্রত্যেকটা সিদ্ধান্তে। কারন আমি জানি, আমার বাবার প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত নিখুঁত এবং নির্ভুল। তাই আমার সাফল্যের পেছনে আমার থেকেও বড় অবদান আমার বাবার। এই সাফল্যের কৃতিত্ব আমার না, আমার বাবার। উনি না থাকলে কখনই সামান্য ছাপোষা ছেলেটা তুহিন ইশতিয়াক নামক মেডিকেল ব্রান্ডে পরিনত হতো না। তোমার ঋন জীবনেও শোধ করতে পারবো না আব্বু। আসলে আমি শোধ করতেই চাই না তোমার এই ঋন। এই ঋন কাধে নিয়েই আমি আরো সফল হবো আর প্রত্যেকবার, প্রত্যেকক্ষেত্রে, প্রত্যেক মঞ্চে আমার সফলতার কারন হিসেবে বলবো তোমার নাম। থ্যাংকস এ লট এভরিওয়ান। ”
তুহিন সিড়িতে দাঁড়িয়ে টিভিতে ক্লিপিংস গুলো দেখছিলো আর নিজের বাবাকে দেখছিলো। আসাদ সাহেবের চোখে পানি। কেঁদে দিয়েছে একদম। কত কষ্ট করেছে ছেলেটাকে মানুষ করার জন্য। আজ তার সমস্ত কষ্ট সার্থক। তার সমস্ত কষ্ট তুচ্ছ তুহিনের এই মহান কথার কাছে। পাশে শায়লা বেগমের চোখেও আনন্দ অশ্রু। তুহিনেরও চোখ ভিজে উঠেছে খানিক। তুহিন নিচে নেমেই আসাদ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” এই নাও বাবা তোমার এওয়ার্ড। রাতে ইন্টারভিউর কারনে আমি লেট করে এসেছিলাম। তোমরা ইভেন্ট থেকে এসে ঘুমিয়ে গিয়েছিলে। সেজন্য আর ডাকিনি তোমায়। এই নাও ধরো। ”
আসাদ সাহেব চোখ মুছতে মুছতে বলে, ” আমার এওয়ার্ড মানে? এটা অন্তত নিজের কাছে রাখ। এ অবধি যা এওয়ার্ড পেলি সব তো আমাকেই দিয়ে দিলি। ”
– ” ভবিষ্যতে যা পাবো তাও তোমার। এসব এওয়ার্ডের আসল হকদার তুমি। তুমি না থাকলে আমি কখনই এই অবস্থানে পৌঁছাতে পারতাম না। আজ আমার পাওয়ার হয়েছে, পজিশন হয়েছে, নিজের আইডেন্টিটি হয়েছে, খ্যাতি হয়েছে, যশ হয়েছে যার সব কৃতিত্ব তোমার। একদম সব কৃতিত্ব তোমার। এখানে আমার অবদান একদমই অল্প। ”
আসাদ সাহেব আর কান্না থামিয়ে রাখতে পারে না। কেঁদে জড়িয়ে ধরে তুহিনকে। আসাদ সাহেব বলে, ” তোর মতা ছেলে যাতে সবার ভাগ্যে জোটে রে বাপ! ”
– ” তোমার মতো বাবা না থাকলে কখনই আমার মতো ছেলে তৈরী হবে না। তোমার শিক্ষায় আমি এমন হয়েছি। তোমার আদর্শে এমন হয়েছি। তুমি আমার অনুপ্রেরনা। ”
দীপ্তি কিচেন থেকে বের হয়ে বলে, ” আব্বু নাস্তা করতে আসো। তোমার ছেলে আরো এওয়ার্ড পাবে বাকি জড়িয়ে ধরা তখন জড়িয়ে ধরো। ”
শায়লে পাশ থেকে চোখ মুছতে মুছতে বলে, ” আসলেই ডাইনিং এ চলো। আজ দীপ্তি নিজে নাস্তা বানিয়েছে। ”
তুহিন ডাইনিং টেবিলে বসতে বসতে দীপ্তিকে বলে, ” কী নাস্তা বানিয়েছো? ”
দীপ্তি বলে, ” নুডুলস। ”
তুহিন হেসে দিয়ে বলে, ” তুমি এই নুডুলস বানানো ছাড়া আর কিছু পারো না? ”
দীপ্তি অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তুহিনের দিকে। আসাদ সাহেব বলে, ” আরে দীপ্তির নুডুলস খারাপ কোথায়? ও এই একটা ডিশ-ই ভালো বানাতে পারে। ওর এই একটা ডিশই ভালো লাগে। বাকিগুলো আরো শিখতে হবে। আস্তে আস্তে শিখে যাবে। ”
সবাই ডাইনিং টেবিলে আছে শুধু আয়েশা ছাড়া। তুহিন শায়লা বেগমকে জিজ্ঞেস করে, ” আশু কোথায় আম্মু? ”
শায়লা বেগম বলে, ” গতকাল রাত থেকেই কেমন যেনো মনমরা। রাতেও না খেয়ে ঘুমিয়েছে এখনও নামলো না তো। ঘুমোচ্ছে বোধহয়। ”
– ” কই কাল ইভেন্টে তো বেশ হাসিখুশিই ছিলো! ”
– ” বাসায় আসার পর থেকেই কেমন যেনো মনমরা। ”
– ” আচ্ছা আমি গিয়ে ডেকে নিয়ে আসি। ”
শায়লা বেগম তুহিনকে আটকে দিয়ে বলে, ” না তুই খেয়ে ক্লিনিকে যা। একটু পরে আমিই ডেকে কিছু খাইয়ে দেবো। ”
তুহিনও আর মাথা ঘামায় না।
তুহিন রুমে এসে ব্যাগ গুছিয়ে। চুল আর শার্টের হাতা ঠিক করছে। দীপ্তি রুমে ঢুকতেই তুহিনের হ্যাচকা টান। তুহিন দীপ্তিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে। দীপ্তি পিছন ফিরে তুহিনকে বলে, ” আম্মু এখন এদিক থেকে আয়েশাকে ডাকতে যাবে। দড়জা খোলা। ছাড়ো, দড়জাটা দিয়ে আসি। ”
তুহিন দীপ্তিকে একটু উচু করে হেটে দরজার সামনে নিয়ে যায়। তারপর বলে, ” এই নাও দরজা বন্ধ করো। ”
দীপ্তি তুহিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয়।
তুহিন দীপ্তিকে হাসতে দেখে বলে, ” তুমি কী মনে করেছো আমি বুঝি না? আমি ছেড়ে দেই আর তুমি দৌড়ে পালাও নাকি? ”
দীপ্তি দড়জার ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে বলে, ” পালাতে যাবো কেনো? ”
তুহিন কিছু না বলে দীপ্তির গলায় নাক ঘষা শুরু করে। দীপ্তি আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। তুহিন ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখে প্রায় ১০ টা বেজে গেছে। ক্লিনিকে কাজ আছে। দেরি হয়ে যাচ্ছে। তুহিন দীপ্তিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দীপ্তির ঠোটে একটা গভীর চুমু দিয়ে ঠোটে একটা আলতো কামড় দেয়। তারপর কপালে চুমু দিয়ে বলে, ” টাটা। লেট হয়ে যাচ্ছে আমার। ”
দীপ্তি তুহিনের শার্টের ইনের কোচকানো ভাবটা ঠিক করে দিয়ে, শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলে, ” রাতে ঝলদি এসো। আজ আমি, তুমি আর আশু আইস্ক্রিম খেতে বের হবো নে। বহুদিন আইস্ক্রিম খেতে বের হওয়া হয়না। ”
– ” হুম আচ্ছা। ”
দীপ্তি উঁচু হয়ে তুহিনের পায়ের উপড় দাঁড়িয়ে তুহিনের গালে চুমু খায়; আলতো করে ঠোটে চুমু খায়, তারপর কপালে চুমু খেয়ে বলে, ” টাটা। গাড়ি সাবধানে চালিও। ”
– ” আচ্ছা। ”
তুহিন তাড়াহুড়ো করে গাড়িয়ে নিয়ে ক্লিনিকের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে যায়। খুব বেশিই দেরি হয়ে গেছে আজ।
চলবে!
#thetanvirtuhin
প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ►
” Tanvir’s Writings “