প্রেমবিভ্রাট ৩৩ তানভীর তুহিন

0
691

প্রেমবিভ্রাট
৩৩
তানভীর তুহিন

দীপ্তি তুহিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তুহিনের বেশ আরাম লাগছে। সে আরাম গভীরভাবে উপভোগের জন্য চোখ বন্ধ করে রেখেছে সে। দীপ্তির বাম হাতটা তুহিনের বুকে রাখা যেটা তুহিন তার দুহাত দিয়ে নিজের বুকে চেপে রেখেছে। আজ কোনো স্টেথোস্কোপ ছাড়াই তুহিনের বুকের ঢিপঢিপানি অনুভব করছে দীপ্তি। দীপ্তি একদৃষ্টে তুহিনের মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎই কী একটা ভেবে তুহিনকে প্রশ্ন করে দীপ্তি, ” এতোদিন এভাবে কষ্ট দিলে তার কোনো শাস্তি ভোগ করবে না? ”
তুহিন চোখ বন্ধ রেখেই উত্তর দেয়, ” বলো কী শাস্তি দিতে চাও? যা বলবে তাই মানবো। ”
দীপ্তি বলে, ” আমায় কোলে নিয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকো। ”

মুচকি হেসে চোখ মেলে তাকায় তুহিন। তারপর দীপ্তির থুতুনিটা ধরে নাড়িয়ে বলে, ” এটা শাস্তি হলো কোথায়? তোমার আমার কোলে উঠতে মন চাচ্ছে সেটা বললেই তো হয়। ”
– ” হ্যা মন চাচ্ছে। তবে তুমি এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। ”
– ” আচ্ছা চেষ্টা করবো। নামো। ” বলেই তুহিন খাট ছেড়ে নেমে যায়। দীপ্তি খাট থেকে নেমে দাড়াতেই দীপ্তিকে আড়কোলে তুলে নেয় তুহিন। তারপর একটা পা হালকা উঁচু করে নেয়। এভাবে ভার রাখাটা মুশকিল। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছে তুহিন। দীপ্তি শাস্তি দিয়েছে বলে কথা। যে অন্যায় সে করেছে তারকাছে এ নামমাত্র শাস্তি অতিনস্যি। তুহিন ভার রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। কেমন যেনো নড়ছে দীপ্তিকে কোলে নিয়ে। অথচ দীপ্তি কিন্তু তেমন ভারী না। দীপ্তি মিটিমিটি হাসছে তুহিনের হাল দেখে। দীপ্তির মুখের হাসিটা তুহিনকে এক পৃথিবী প্রশান্তি দিচ্ছে। বুকের ভেতরটা একদম ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে শান্তিতে। তুহিন দীপ্তির সঙ্গে রসিকতা করে বলে, ” আচ্ছা এতো ঝগড়া কষ্টের মধ্যে তুমি প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলে কীভাবে? ”
দীপ্তির মুখের হাসিটা বিলীন হয়ে যায়। কোথাও একটা উধাও হয়ে যায় হাসিটা। তুহিনের প্রশ্নটা মোটেও পছন্দ হয়নি তার। কেনো পছন্দ হয়নি তার কারন দীপ্তি জানে না। দীপ্তি জোরপূর্বক একটা চওড়া হাসি দেয়। তারপর তুহিনের টি-শার্টের কলারটা গুছিয়ে দিয়ে বলে, ” ধরে নাও না অন্য কোনো প্রেমিক জুটিয়ে নিয়েছিলাম। আমার তো আবার পুরুষ মানুষের শরীর ভালো লাগে নাকি। চরিত্রের দোষ আছে তো আমার। ” কথাগুলো বলে অভিমানি দৃষ্টিতে তাকায় দীপ্তি। তুহিনের কাছে প্রত্যুত্তর দেবার মতো কোনো কথা নেই। এসব তো সে নিজেই বলেছিলো। তুহিন দীপ্তিকে কোল থেকে নামিয়ে বারান্দায় চলে যায়। একটা সিগারেট ধরিয়ে জোরে টান দিয়ে ধোয়া ভিতরে নিতে থাকে তুহিন। সিগারেটটা কেমন যেনো অভ্যাস হয়ে গেছে তার। কয়েকদিন সময় লাগবে ছাড়তে।

দীপ্তি খাটে বসে আছে উদাসীনভাবে। সে কেনো বললো কথাটা? সে তো বলতে চায়নি এসব। সে তো তাদের বর্তমানে টানতে চায়নি অতীত। শুধুই তুহিন কষ্ট পেলো। কিন্তু সে তো তুহিনকে আঘাত করে এসব বলতে চায়নি। দীপ্তি খাট থেকে উঠে বারান্দায় যায়। তুহিন বারান্দার কার্নিশ ঘেষে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে আর ধোয়া বিনিময় করছে। ধোয়াগুলো তুহিনের মুখ থেকে বেড়িয়ে বাতাসে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। চাদের আবছা আলোতে স্পষ্ট ধোয়াগুলোর অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা দেখছে দীপ্তি। কিছুক্ষন এভাবে দাঁড়িয়েই তুহিনের সিগারেট খাওয়ার দৃশ্যটা দেখে দীপ্তি। হঠাৎ ই বুঝতে পারে ধোয়াগুলোয় কেমন যেনো কষ্ট হচ্ছে তার। দম আটকে আসছে একদম। কই এতক্ষন তো এমন হচ্ছিলো না। হয়তো এতক্ষন কোনো ঘোরে ছিলো সে। সিগারেটের ধোয়াটা সহ্যই হচ্ছে না দীপ্তির। কিছু না বলেই তুহিনের হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় দীপ্তি। তুহিন স্বাভাবিক কন্ঠে বলে, ” বেশ কিছুদিন ধরে নিয়মিত খাচ্ছিলাম তো। তাই অভ্যাস হয়ে গেছে। কয়েকটাদিন সময় দাও, ছেড়ে দেবো। ”
দীপ্তি কিছু না বলে কার্নিশ ঘেষে তুহিনের পাশে দাঁড়িয়ে তুহিনের হাত জড়িয়ে ধরে বলে, ” কথাগুলো গায়ে লেগেছে বুঝি? ”
– ” গায়ে লাগানোর জন্যই তো বলেছিলে। তবে আমার গায়ে লাগেনি। এসব নোংরা অপবাদগুলো তো আমিই দিয়েছিলাম। তাই তোমার ওভাবে বলাটা মোটেই অনুচিত বা অন্যায় কিছু না। ”
– ” আমি তোমায় আঘাত করতে চাইনি। কিন্তু হঠাৎই কীভেবে যেনো মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেলো কথাগুলো। ”

তুহিন কিছুই বলে না। বলার মতো কোনো কথাই যে নেই তার ঝুলিতে। দীপ্তি তুহিনের বাহুতে ছোট ছোট চিমটি কাটতে কাটতে বলে, ” রুমে চলো। ”

তুহিন দীপ্তিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তারপর দীপ্তির ঠোটের উদ্দেশ্যে নিজের ঠোট বাড়ায়। দীপ্তি ঠোট সরিয়ে নিয়ে বলে, ” উম্ম.. মুখে সিগারেটের বাজে গন্ধ। যাও। গিয়ে ব্রাশ করে আসো। ”

দীপ্তির কথায় হেসে ফেলে তুহিন। তারপর ব্রাশ করতে বাথরুমে চলে যায়। দীপ্তি খাটে বসে তুহিনের ফোন ঘাটছে। তুহিন বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসে দীপ্তিকে খাটে শুইয়ে দিয়ে দীপ্তির ঠোটে চুমু খাওয়া শুরু করে। দীপ্তিও পারদর্শিতার সঙ্গে তাল মেলাতে থাকে। তুহিন দীপ্তির গলায় ছোট ছোট চুমু খাচ্ছে। অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে দীপ্তির গলা, গাল, ঠোট। হঠাৎ দীপ্তি বলে, ” আজ কামড়াচ্ছো না কেনো? ”

তুহিন থমকে যায়। দীপ্তির চোখের দিকে তাকায় তুহিন। না দীপ্তির মুখে সেই লজ্বামাখা আভাটা নেই। দীপ্তি তুহিনকে আবার জিজ্ঞেস করে, ” আর দিন তো কামড়ে কামড়ে অতিষ্ট করে তোলো। আজ কামড়াচ্ছো না কেনো? ”

তুহিন অবাক হচ্ছে দীপ্তির পরাপর প্রশ্নে। কেমন যেনো অচেনা লাগছে দীপ্তিকে। তুহিন অবাক হলেও স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দেয়, ” এমনি চুমু খেতেই ইচ্ছে করছিলো। তাই কামড়াচ্ছি না। ”

দীপ্তি চুপ করে আছে। তুহিনও নিশ্চুপ ভাবে তাকিয়ে আছে দীপ্তির দিকে। দীপ্তি মাথা উঁচু করে তুহিনের ঠোটে আলতো করে ঠোট ছোয়ায়। দীপ্তি বলে, ” তোমার কামড় খেতে ইচ্ছে করছে খুব। কিছুক্ষন আগের মতো এলোপাথাড়ি কামড়াও। ”

তুহিন দীপ্তিকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। দীপ্তির আচরন কেমন যেনো বিচিত্র ধরনের লাগছে তার কাছে। দীপ্তি ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছে তুহিনের দিকে। তুহিন একটু কৃত্রিম চওড়া হাসি হেসে বলে, ” তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। আব্বুর সাথে একটু কথা আছে। আব্বুর কাছে যাবো। ”
দীপ্তি উদাসীনভাবে প্রশ্ন করে তুহিনকে, ” কামড়াবে না? ”
তুহিন কিছু একটা আন্দাজ করতে পারছে দীপ্তির ব্যাবহারে। তবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত না সে। নিশ্চিত হবার জন্য আরো কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করতে হবে দীপ্তির আচরন। তুহিন দীপ্তির নাক টিপে বলে, ” আগে তো কামড়ানির জন্য চিল্লাচিল্লি করতে। আজ এতো কামড় খাওয়ার শখ হচ্ছে? ”
দীপ্তি কিছু বলে না। তুহিনই আবার বলে, ” বাবার সাথে একটু ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে। কথা সেড়ে এসেই ইচ্ছেমতো কামড়াবো। দীপ্তি একটু মুচকি হাসে এবার। তুহিন রুম ছেড়ে বেড়িয়ে সোজা আসাদ সাহেবের রুমে চলে যায়। আসাদ সাহেব ফাইলপত্র ঘাটছিলেন। আসাদ সাহেব তুহিনকে দেখে ফাইল রেখে তুহিনকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” কিরে কিছু বলবি? ”

যে মানুষটাকে সেদিন রাগের বশে চরম অপমান করেছিলো তুহিন। সে মানুষটাই আজ সবটা ভুলে গিয়ে স্বাভাবিক আচরন করছে তুহিনের সাথে। সব বাবারাই কী এমন হয়? নাকি তুহিনের বাবাই এমন? সে ব্যাপারে জানা নেই তুহিনের। তবে তুহিনের কাছে তুহিনের আদর্শ তার বাবাই। তুহিন রুমে ঢুকে আসাদ সাহেবকে জিজ্ঞেস করে, ” কেমন আছো আব্বু? ”
আসাদ সাহেব হালকা মুচকি হেসে বলে, ” তুই যা বলতে এসেছিস সেসব কিছুই বলার প্রয়োজন নেই। তোর গিল্টি ফিলিং হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি আমি। তবে তার জন্য সৌজন্যতা করতে হবে না। আমি বুঝি তো তোকে, আমি চিনি তো তোকে। সেটাই তোর সব অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত। আমি জানি তুই রাগের বশে বলেছিস সবটা। তুই যে কখনই আমাকে আঘাত করতে পারিস না সেটা আমি জানি রে আব্বু। এখন ওসব ভেবে আর কষ্ট পাবার দরকার নেই। নিজে আব্বু হতে যাচ্ছিস দীপ্তির টেককেয়ার কর সব। সব ভুলে, গুছিয়ে নে অগোছালো সব। ”

তুহিন কিছু না বলে আসাদ সাহেবকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। আসলেই সে ভাগ্যবান যে, সে আসাদ সাহেবের মতো মহৎ ব্যাক্তির সন্তান। আসলেই সে ভাগ্যবান যে, সে দীপ্তির মতো উদারমনা নারীর স্বামি। আসাদ সাহেবেরও চোখ ভিজে গেছে। আসাদ সাহেব তুহিনের পিঠে চাপড় মেরে বলে, ” আরে সব ঠিক হয়ে গেছো তো। এখন আর কান্নাকাটি করিস না। ”

তুহিন কাঁদতে কাঁদতে বলে, ” আমি ইচ্ছে করে কিছু বলিনি আব্বু। আমি জানি তুমি কষ্ট পেয়েছো। অনেক কষ্ট পেয়েছো। কিন্তু রাগে আমার মাথার ঠিক ছিলো না…। ”

আসাদ সাহেব তুহিনকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিজে বলে, ” আরে যা গেছে, তা গেছে। অতীত নিয়ে এতো ভাবতে হয় না। বর্তমান আর ভবিষ্যত নিয়ে ভাব। পিছনের এসব রাগ, অভিমান কান্না বাদ দে। ”

তুহিন কিছুক্ষন আসাদ সাহেবের সাথে কথা বলে রুমে চলে আসে। রুমে ঢুকে দেখে দীপ্তি ঘুমিয়ে গেছে। তুহিন দীপ্তির কপালে চুমু খেয়ে দীপ্তিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। আজ অনেকদিন পরে শান্তির ঘুম ঘুমাবে দুজনে। সব দুঃখের গ্লানি যেনো আজ স্বপ্নের সাথে মুছে যাবে।

সপ্তাহখানেক পরে।

ইদানিং দীপ্তির আচরন মোটেই স্বাভাবিক লাগছে না তুহিনের কাছে। কিছু একটা যেনো দীপ্তিকে ভেতরে ভেতরে শেষ করে দিচ্ছে। দীপ্তি চাচ্ছে তুহিনকে আখড়ে ধরতে কিন্তু নিজের ভেতরের কিছু একটাই তাকে আবার আটকে দিচ্ছে। যেটার কারনে দীপ্তি চাইতেও পারছে না তুহিনকে উজাড় করে ভালোবাসতে। তুহিন বেশিকিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছে ব্যাপারটা। দীপ্তি কেমন যেনো আনমনা থাকে সারাক্ষন। ঠেস মেরে, খোটা দিয়ে কথা বলে। সবসময় অতীতের কথা টেনে এনে তুহিনকে অপরাধী সাজিয়ে তোলে। ব্যাপারগুলো খুব ভাবাচ্ছে তুহিনকে। ভাবনা দূর করার জন্য তুহিন তারিনকে ফোন করে।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ►
” Tanvir’s Writings “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here