প্রেমবিভ্রাট ৩৪ তানভীর তুহিন

0
622

প্রেমবিভ্রাট
৩৪
তানভীর তুহিন

তারিন, তুহিনের দূরসম্পর্কের মামাতো বোন। পেশায় মনোবিজ্ঞানি। তুহিন তারিনের থেকে দুই বছরের বড়। তবুও তারিন তুহিনকে তুই করেই বলে। এতক্ষন তারিনের ফোন রিং হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু তারিন রিসিভ করছিলো না। তারিন ফোন রিসিভ করতেই তুহিন জিজ্ঞেস করে, ” কীরে পচাতার কেমন আছিস? ”

বেশ চনমনে মেজাজে ফোন রিসিভ করে তারিন। কিন্তু তুহিনের মুখে ‘পচাতার’ নামটা শুনেই তারিনের মেজাজ গরম হয়ে যায়। তবুও মেজাজ নিয়ন্ত্রন করে বলে, ” হ্যা ভাইজান বলুন! ”
– ” কীরে এতো ভদ্রতা? ”
– ” ভদ্রতা দেখালাম তুই ভদ্রতার যোগ্য না সেটা বোঝানোর জন্য। দেখছিস ভদ্র ব্যাবহার শুনে কেমন পিলে চমকে উঠলো তোর। গায়ে জ্বালা শুরু হয়ে গেলো তোর। ” বলেই গড়াগড়ি রকম অবস্থায় হাসলো তারিন।

তুহিন বলে, ” আচ্ছা শোন না। একটা হেল্প লাগবে আমার। ”
– ” কীসের হেল্প? ”
– ” আসলে আমি দীপ্তির মেন্টাল কন্ডিশন নিয়ে একটু ডিসকাস করতে চাচ্ছি তোর সাথে। তুই ফ্রি? ”
– ” দীপ্তি মানে? তোর ওয়াইফ না? ”
– ” হ্যা! হ্যা! ফ্রি আছিস তুই? ”
– ” হ্যা ফ্রি আছি। তুই বিন্দাস বল! ”
তুহিন সেরাত থেকে শুরু করে এই অবধি পুরোটা বলে তারিনের কাছে। দীপ্তির বর্তমান পরিস্থিতিও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে তারিনের কাছে। সবটা মনযোগ দিয়ে শুনে তারিন বলে, ” আসলে তুই যেটা বলছিস সেটা অনেকটা ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনের লক্ষন। মানসিক অশান্তি আর একাকিত্ববোধ থেকে হয় এটা। এখন তুই নিজেই ভালোভাবে বুঝতে পারছিস যে দীপ্তি ডিপ্রেশন, মেন্টাল প্রেশার, লোনলিনেস ঠিক কতটা হার্ডভাবে ফেইস করেছে। মুলত ওর পরিস্থিতিটা এখন এমন হয়ে গেছে যে ওর মস্তিষ্ক তো তোকে ক্ষমা করে দিয়েছে। কিন্তু মনটা পুরোপুরিভাবে তোকে ক্ষমা করতে পারেনি। যার কারনে ধীরে ধীরে দীপ্তির মধ্যে এক অন্য সত্তার সৃষ্টি হচ্ছে। যে সত্তার কাছে তুই শুধুমাত্র একটা অপরাধী চরিত্র যে দীপ্তিকে শুধু কষ্টই দিয়েছে। আসলে খুব ডিপ্রেশনের পরে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েই থাকে। আর এটা তেমন মারাত্মক কিছু না। মানুষের মনের জন্য একদমই স্বাভাবিক একটা পরিস্থিতি। এটা অনেকটা মুড সুইং এর মতো শুধু পার্থক্য হলো মুড সুইংয়ের সময় মানুষের যে মুড টা ক্রিয়েট হয় সেটা এমনি এমনি চলে যায়। কিন্তু এই স্টেজে এটা কিন্তু এমনি এমনি যাবে না। এরজন্য মুলত যেটা করতে হবে সেটা হলো যে ভিকটিম আরকি তোর ওয়াইফ দীপ্তি ওকে একদমই একা রাখবি না। সবসময় ওর সাথে থাকবি। এতটাই সাথে থাকবি যাতে অতীতের ঐ একাকিত্বটা একদম ওর মন মস্তিষ্ক সবকিছু থেকে জাস্ট মুছে যায়। বেশি করে খুশি রাখার ট্রাই কর। আর হ্যা তুই আগে যেমন ওর সাথে বিহ্যাভ করতি ঠিক তেমন ভাবেই বিহ্যাভ করবি। আগে বলতে বোঝাচ্ছি তোদের ভুল বোঝাবুঝি’র আগের সময়টাতে আরকি। ওকে এমন ভাবে ট্রিট করবি যাতে ও এই দুইটা মাস জাস্ট ভুলে যায়। আর ও তো এখন প্রেগন্যান্ট। তো তোর রেসপন্সিবিলিটি’স ও একটু বেশি। এর মধ্যে ওর প্রেগন্যান্সিতে কম্পিলিকেশন’স তৈরী হয়ে গেছে কীনা তা জানি না। তবে তুই যেভাবে বলছিলি আমার মনে হয় এই মেন্টাল প্রেশারের ফলে কিছু কম্পিলিকেশন’স তৈরী হয়েছে। তুই ওর উইকলি চেকাপ শুরু কর প্রেগন্যান্সির। আর তোর এই সময়টায় খুবই স্ট্রং থাকতে হবে। বী স্ট্রং! নিজে শক্ত থেকে ওর ঐ সত্তাটাকে জাস্ট ধুয়ে-মুছে সাফ করে ফেল। নাহয় যদি ঐ সত্তাটা দীপ্তির প্রকৃত সত্তাটাকে ছাপিয়ে যায়। তাহলে তোদের ম্যারেড লাইফ জাস্ট হেল হয়ে যাবে। সো সবটাই এখন তোর হাতে। দীপ্তির কী ভালো লাগে, দীপ্তি তোকে কীভাবে চায়, কীভাবে সবটা হলে ও এই পরিস্থিতিটা থেকে বের হতে পারবে সেটা আমার থেকে তুই বেটার জানবি। সেভাবেই কর। আর এনিথিং, যেকোনো সমস্যা হলে আমায় আপডেট করবি। শুধু মনে রাখবি তুই যত স্বাভাবিক থাকবি ও ততো স্বাভাবিক হবে। ও তোকে আঘাত করে কথা বললেও তুই আহত হবি না। তুই আহত হলেই দীপ্তির ঐ সত্তাটা দীপ্তিকে আরো চেপে ধরবে। বুঝছিস সবটা? ”

তুহিন এতক্ষন গভীর মনোযোগে তারিনের কথাগুলো শুনছিলো। তুহিন অনেকটা এমন কিছুই আন্দাজ করেছিলো। কিন্তু নিশ্চিত ছিলো না। আজ তারিনের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে নিলো। তুহিন তারিনকে বলে, ” হ্য বুঝেছি। তুই যেগুলো বললি ওগুলো মেনেই সবটা সামলে নেবো। থ্যাংকস রে! ”

– ” আরে ধুর এসব ফর্মালিটি-র গুষ্টি কিলা। তুই আমায় দীপ্তির আপডেট জানাতে থাকিস। বেশি না কয়েক মাসেই ঠিক হয়ে যাবে সবটা। এই ধর ৮-১০ সপ্তাহের মধ্যে। আর তোর তো এখন লাইসেন্স ক্যান্সেল। ক্লিনিকে নিশ্চয়ই যাস না। একদিক থেকে তোর লাইসেন্স ক্যান্সেল হয়ে ভালোই হয়েছে, আই থিংক। কারন তুই এখন দীপ্তিকে ভালো করে সময় দিতে পারবি। উপরওয়ালা সবসময় যা করেন, ভালোর জন্যই করেন। ”
– ” হ্যা ঠিক বলেছিস একদম। আচ্ছা আমি তোকে সিচুয়েশনের আপডেট জানাতে থাকবো। রাখছি। ”
– ” ওকে টাটা। ”

তুহিন ছাদে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো তারিনের সঙ্গে। বিকাল প্রায় পাচটা বাজে। ঠান্ডা বাতাসে চারপাশটা শীতল হয়ে আসছে। হঠাৎই দীপ্তির গলা শুনতে পায় তুহিন। ছাদে ওঠার সিড়িটার গোড়ায় দাঁড়িয়ে তুহিনকে ডাকছে দীপ্তি। তুহিন সিড়ির কাছে যেতেই দীপ্তি হালকা হাপিয়ে ওঠা স্বরে বলে, ” সিড়ি বেয়ে উঠতে কেমন যেনো কষ্ট হচ্ছে। একটু ধরে ছাদে নিয়ে যাও না। একটু ছাদে উঠতে ইচ্ছে করছে। ”

তুহিন সিড়ি বেয়ে নেমে দীপ্তিকে কোলে তুলে ছাদে নিয়ে আসে। দীপ্তিকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে, দীপ্তিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তুহিন। দীপ্তি হাত পেছনের দিকে নিয়ে তুহিনের ঘাড় ধরে। তারপর একসাথে দুজনে মিলে উপভোগ করতে থাকে স্নিগ্ধ বিকেলের হিমেল হাওয়া। তুহিন হঠাৎ করে দীপ্তির কানে আলতো কামড় দিয়ে বলে, ” যা হয় ভালোর জন্যই হয় তাই না? ”

দীপ্তি একপলক পেছন ফিরে তুহিনের দিকে তাকায়।

তারপর বলে, ” হুম ভালোর জন্যই হয়। তা তুমি কীসের প্রেক্ষিতে বললে এটা? ”
– ” এই যেমন ধরো ছয় মাসের জন্য আমার ডাক্তারি লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেলো। আমি এর কোনো কারনই খুজে পাচ্ছিলাম না। আমিতো একটা মানুষের প্রান বাঁচানোর জন্যই সার্জারিটা করেছিলাম। মানুষটা বেঁচেও গিয়েছিলো। তারপরেও আমার লাইসেন্সটা বাতিল হয়ে গেলো। ঐ মানুষটার সাথে ভালো হলো কিন্তু আমার সাথে খারাপ হলো। তখন আসলেই এর কোনো মানে খুজে পাইনি। এর মাধ্যমে যে খোদাতায়ালা আমার কী ভালো করতে চাচ্ছেন সেটাও বুঝিনি তখন। কিন্তু এখন একদম স্পষ্ট বুঝতে পারছি সবটা। আসলে আল্লাহ চাচ্ছিলেন তোমার প্রেগন্যান্সির পুরো সময়টা যাতে আমি তোমার সাথে থাকি, তোমার পাশে থাকি। সেজন্যই এসব করেছে। যা হয়েছে একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। তাই না? ”
– ” হুম। আর ভবিষ্যতে যা হবে, তাও ভালো হবে। ইন শা আল্লাহ! ”

চারদিকে মাগরিবের আজান পড়ছে। দীপ্তি তড়িঘড়ি করে তুহিনকে বলে, ” রুমে চলো। রুমে চলো। প্রেগনেন্ট অবস্থায় এরকম ভরসন্ধ্যা বেলায় বাইরে থাকতে হয় না নাকি। ”

তুহিন দীপ্তিকে কোলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে রুমে চলে যায়।

চলবে!
#thetanvirtuhin

প্রিয় গল্পপ্রেমিরা যুক্ত হয়ে যান পরিবারে ►
” Tanvir’s Writings “

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here