#প্রেমমানিশা-১৬,১৭
(১৬)
রাতের আঁধারকে ছাপিয়ে গেছে আসন্ন পূর্ণিমার রাতের নতুন চাঁদ। চাঁদের আলো আলোকিত করেছে নিস্তব্ধ প্রকৃতিকে। প্রকৃতিতে মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। চারপাশে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। সেই ডাক নিঃশব্দে শুনছে সানাহ্। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শুনে তার যেন প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। অন্য দিনের চেয়ে আজকে যেন নদীর তীর আরও বেশি নিশ্চুপ। কোনো সাড়া শব্দ নেই। এই দিকটায় আজ মানুষের সমাগমও কম। অবশ্য সানার এরকম নিস্তব্ধ প্রকৃতিই পছন্দ।
সানাহ্ নিবিড় হয়ে প্রকৃতির ডাক শুনছে। হালকা মৃদু মন্দ বাতাসে তার খোলা চুল উড়ছে। রাতের আকাশে স্পষ্ট জ্বলজ্বল করছে কিছু তারা। সানাহ্ তাও দেখছে। সানাহ্ এখন জাফলং নদীর উচুঁ টিলার উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। তার বাতাসে উড়া চুলগুলো টিলার গায়ে ছুঁই ছুঁই অবস্থা। রাতের এই স্নিগ্ধ পরিবেশে সানাহ্কে প্রকৃতি কন্যার চেয়ে কোনো অংশে কম মনে হচ্ছে।
প্রকৃতির মাঝে ডুবে থাকা অবস্থাতেই হঠাৎ সানার কানে এলো সূক্ষ্ম এক আওয়াজ। মনে হচ্ছে জাফলং নদীর থেকে খানিকটা দূরে কেউ গাড়ি থামিয়েছে। সানার হঠাৎ মনে হলো এই সময়ে তো কোনো গাড়ি এই দিকে আসে না তাহলে আজ কি মনে করে এলো ? ঘটনার সত্যতা যাচাই আর নিজের কৌতূহল দমাতে উঠে দাঁড়ালো সানাহ্। যেই দিক থেকে আওয়াজটা এসেছিল সেই দিকে এগিয়ে গেলো। খানিকটা এগোতেই সানাহ্ তার সামনে যাকে দেখলো তারপর সানাহ্ তার চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।
মানুষটাকে দেখে সানাহ্ ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেনা যে সে এখানে আসতে পারে। সানাহ্ তার চোখ দুটো বন্ধ করে মানুষটার উপস্থিতি অনুভব করতে লাগলো। হঠাৎ ঘাড়ের উপর কারোর উষ্ণ নিশ্বাস আছড়ে পড়তেই নিজেকে কারোর উষ্ণ বন্ধনে আবদ্ধ অনুভব করলো। মানুষটার সান্নিধ্য পেয়ে সানার শরীরে এক শিরশিরে অনুভুতি হানা দিল। সর্বাঙ্গ জুড়ে এক শীতল স্রোত বয়ে গেলো।
আচমকা মানুষটা সানাহ্কে ছেড়ে দিয়ে সানার হাত জোরে চেপে ধরলো আর সানাহ্কে টানতে টানতে নদীর তীরে নিয়ে এসে সানার হাত ছেড়ে দিলো। সানাহ্ আচমকা মানুষটার এহেন আচরণে ঘাবড়ে গেল। হালকা শুকনো ঢোক গিলে খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে টিলার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো। জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে ভয় মিশ্রিত গলায় বললো ‘ আপনি এখানে কি করছেন কবি সাহেব ? ‘
‘ খবরদার আমাকে ওই নামে ডাকবে না। ওই নামে ডাকার অধিকার তুমি খুইয়েছ। তুমি কি পেয়েছ আমাকে ? যখন ইচ্ছা করবে তখন আমাকে জোর করে বিয়ে করতে চাইবে আর যখন ইচ্ছা করবে তখন আমাকে ছুঁড়ে ফেলে চলে যাবে ? হাউ ডেয়ার ইউ ? তোমার সাহস কি করে হলো আমার মনে তোমার প্রতি অনুভুতি তৈরি করে এভাবে কাপুরুষের মতো পালিয়ে যাওয়ার ? ‘ প্রকৃতির নিস্তব্ধতা কাটিয়ে গর্জে উঠে এগিয়ে এসে সানাহ্কে পাথরের গায়ে চেপে ধরে কথাগুলো বললো ফারহান।
সানাহ্ ফারহানের এহেন গর্জন শুনে নিমেষেই চুপসে গেল। ভয়ে পাথরের গায়ে আরও সিটিয়ে গেলো। ফারহান সানাহ্কে ভয় পেতে দেখে যেন আরও তেতে গেলো। সানার কোমল কাধ দুটো নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো ‘ কি হলো ? কথা বলছো না কেন ? ভয় লাগছে ? তাহলে আমাকে ছেড়ে চলে আসার আগে ভাবলে না কেন তোমাকে হাতে পেলে আমি কি করবো ? আমি বলেছিলাম না আমার মানিয়ে নিতে সময় লাগবে ? আমি তো বলেছিলাম আমি অ্যাডজাস্ট করে নিবো তাহলে কেন এতকিছু করলে ? ‘
সানাহ্ রীতিমত ঘামতে শুরু করেছে ফারহানের কথায়। ফারহানের কথা শুনে সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে ফারহান খুব রেগে আছে। ফারহান সচরাচর রাগে না। অন্তত সানাহ্ তো কোনওদিন দেখেনি রাগতে। আর সেটাই তো সানার আসল ভয়ের কারণ। যাদের হুটহাট রেগে যাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের রাগও খুব তাড়াতাড়ি পড়ে যায়। কিন্তু যেই মানুষ হুটহাট রাগে না সে যদি একবার রেগে যায় তাহলে সেই রাগ ভাঙ্গানো সহজ সাধ্য ব্যাপার না।
আচমকা সানার কাধে চিনচিনে ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো। ফারহানের শক্তি লাগিয়ে কাধ চেপে ধরাই সেই ব্যথার কারণ। ব্যথার প্রভাবে সানার চোখ ফেটে কান্না আসতে চাইছে কিন্তু সানাহ্ তার মূল্যবান অশ্রু গড়িয়ে পড়তে দিল না। সানাহ্ আপ্রাণ চেষ্টা করলো তার অশ্রু আটকে রাখার আর তাতে সফলও হলো। সানাহ্ এবার ব্যাথাতুর গলায় বলল ‘ আমার হাতটা ছাড়ুন কবি সাহেব। আমার ব্যথা করছে…. ‘
এবার যেন সানার কোমল গলায় বলা কথা আর রক্ত লাল দৃষ্টিও ফারহানকে টলাতে পারল না। ফারহান আবারও গমগমে সুরে বলল ‘ লাগুক ব্যথা..… ব্যথা পাওয়ার জন্যই এভাবে চেপে ধরেছি। এই ব্যথা তুমি সহ্য করতে পারছ না আর তুমি ভাবছো তোমার দেওয়া ব্যথা আমি সহ্য করে নিবো ? আমাকে কি তোমার মানুষ মনে হয়না ? আমি কি রোবট ? জানো কতদিন ধরে আমার চাকরিবাকরি ছেড়ে হন্যে হয়ে খুঁজছি তোমাকে ? ‘
হঠাৎ সানার অজান্তেই সানার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দু ফোঁটা দুর্বোধ্য অশ্রু। সানার সেই অশ্রুজল চাঁদের আলোয় হীরের ন্যায় চিকচিক করে ধরা পড়লো ফারহানের চোখে। সানার চোখে অশ্রু দেখে এবার যেন ফারহানের সম্বিত ফিরে এলো। ঝট করে সানার হাত ছেড়ে খানিকটা দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। ভেবে পেলনা এতক্ষণ ও কি করতে যাচ্ছিল । সানার উপর খবরদারি করছিল ? কিন্তু কোন অধিকারে ? সানাহ্ তো তাকে সেই অধিকার দেয়নি। তার সঙ্গে তো সানার বিয়েই হয়নি।
পরক্ষনেই ফারহানের বিবেক যেন এক কঠিন ধমক লাগলো ফারহানকে। রাগী গলায় বললো ‘ এতে অধিকারের কি আছে ? অধিকার কি দিতে হয় ? অধিকার তো আদায় করে নেওয়ার জিনিস। বিয়ে হয়নি তো কি হয়েছে..…হতে কতক্ষন ? আর সানাহ্ যা করেছে তারপরও কি এরকম করাটা অস্বাভাবিক ? ‘
আবার বিবেককে ধমক লাগিয়ে মন বললো ‘ মন কি এত বাঁধা মানে ? মন তো শুধু ভালোবাসা বুঝে। সানাহ্ যা করেছে তা নিঃসন্দেহে শাস্তি যোগ্য কিন্তু ফারহানের পক্ষে কি সম্ভব তার ভালোবাসার মানুষের উপর এভাবে রাগারাগি করা ? ফারহান তো শুধু ভালোবাসা বোঝে। ভালোবাসার কাঙাল সে…… ‘
বিবেক আর মনের দ্বন্ধে ভুগে ফারহান মনকেই বেছে নিলো। ভীত সানার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার কোমল হাত টেনে তাকে জড়িয়ে নিলো নিজের বুকে। মেলে ধরলো তার ভালবাসা পূর্ণ অন্তঃকরণ। ফারহানের বন্ধন আরও নিবিড় হলো। সানাহ্ নিশ্চুপ হয়ে ফারহানের বুকের ধুক পুকানি শুনতে লাগলো। আওয়াজটা শুনতে সানার বেশ ভালই লাগছে। মনে হচ্ছে ফারহানের প্রত্যেকটা হার্ট বিট শুধুই সানাহ্ সানাহ্ করছে।
একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কতক্ষন পেরিয়ে গেলো তার কোনো ইয়ত্তা নেই সানাহ্ আর ফারহানের। তারা এখন ব্যস্ত নিজেদের এত দিন না দেখার খায়েশ মেটাতে। তাদের পক্ষে সম্ভব হলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সারাদিন বসে থাকতো। কিন্তু বিবেক জেগে উঠতেই সেটা আর সম্ভব হলো না। ফারহানের বিবেক তাকে জোরসে ধমক লাগিয়ে বললো ‘ এটা তুই কি করছিস ফারহান ? সানাহ্কে এভাবে ধরে রেখেছিস ? মনে আছে তো তোদের বিয়ে হয়নি ? বিয়ে ছাড়া এসব করে তুই সানাহ্কে অপবিত্র করছিস..… ‘
ফারহান তার বিবেকের দংশনে দংশিত হয়ে সানাহ্কে ছেড়ে সরে দাড়ালো। সানাহ্ও ফারহানকে ছেড়ে খানিকটা দূরে গিয়ে পাথরের টিলার উপর পা ঝুলিয়ে বসলো। কিছু মুহূর্ত কেটে গেলো এভাবেই নীরবে। কিছুক্ষণ পর ফারহান এসে সানার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে আরেক পাথরের টিলায় নিজেও পা ঝুলিয়ে বসলো।
‘ আপনি এখানে কেন এসেছেন ? ‘
আচমকা সানার নীরবতা ভাঙ্গা গলা শুনে অবাক হলো না ফারহান। সানার দিকে এক মুহুর্ত তাকিয়ে আবারও দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো রাতের নিকষ কালো আকাশের দিকে। নিরস গলায় বললো ‘ আমার সম্পদ ফিরিয়ে নিতে…. ‘
এবার যেন সানাহ্ আরও অবাক হলো। আজ ফারহানের ব্যবহার তার কাছে কেমন অদ্ভুত লাগছে। এরকম উদভ্রান্তের মতো কথাবার্তা বলতে কখনও শুনেনি ফারহানকে। সানার জানা মতে ফারহান বেশ গোছালো ধরনের মানুষ যে নিজের মনের কথাগুলো গুছিয়ে সবার সামনে প্রেজেন্ট করতে ভালোবাসে এবং খুব মেপে মেপেও কথা বলে। এমনকি সানাহ্কে যে বিয়ে করতে চায়না সেই কথাটাও সে বেশ গুছিয়েই বলেছিল।
তবে ফারহানের এহেন অগোছালো কথাবার্তার অর্থ যে সানাহ্ বুঝেনি তা না। তবে সে চায়না এই সম্পর্ক দ্বিতীয় সুযোগ পাক। সে নিজেকে ফারহানের উপর কিছুতেই চাপিয়ে দিতে চায় না। তাই সে ফারহানকে উদ্দেশ্য করে বললো ‘ যেটা নিজের সম্পদ বলে দাবি করছেন সেটা আদৌ আপনার সম্পদ তো ? ‘
‘ ফারহান ইমতিয়াজ আন্দাজে কোনো কথা বলে না। যাকে নিজের বলে দাবি করছি সে আমার বলেই তাকে দাবি করছি। অযাচিত অধিকার আমি দেখাই না..… ‘ ফারহান ঠান্ডা গলায় বললো।
‘ কিন্তু আপনি যাকে দাবি করছেন সে আপনার হতে রাজি নয়। ‘
‘ রাজি না থাকলে কিছু করার নেই। আজ আমায় কেউ আটকাতে পারবে না। আমার যা তা আমি ছিনিয়ে নিবো তবুও নিজের অধিকার ছাড়বো না। এত বছর জেনে বুঝে নিজের অধিকার ছেড়েছি কিন্তু এখন আর ছাড়বো না। এখন যেটা আমার সেটা আমারই। প্রয়োজনে ছিনিয়ে নিবো…. ‘
ফারহানের শক্ত কথার ধরণেও সানাহ্ কেমন শিউরে উঠলো। ফারহানের কথায় খানিকটা উষ্ণতা অনুভব করলো। নিজে থেকেই কুকড়ে গেলো। তবুও নিজেকে সামলে বললো ‘ আপনি চাইলেই সবকিছু পেয়ে যাবেন না। সবকিছু জোর করে আদায় করা যায় না। অন্তত ভালোবাসা তো নয়ই।আপনি যাকে চান সে আপনাকে চায় না তাহলে কি করবেন ? ‘
আচমকা কি থেকে কি ঘটে গেলো সেটা বুঝতে পারলো না সানাহ্ । সানাহ্ এখন ফারহানের উষ্ণ বন্ধনে আবদ্ধ। ফারহানের গরম নিশ্বাস তার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। সানার নিশ্বাস যেন এতেই আটকে যাচ্ছে। সানাহ্ কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। সে কি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেবে ফারহানকে ? কিন্তু সেটা করার ক্ষমতাও তো তার নেই। সানাহ্ কি করবে বুঝতে না পেরে চুপ করে ওভাবেই ফারহানের বুকে সিটিয়ে দাড়িয়ে রইলো।
ফারহান কিছুক্ষণ পর বলতে শুরু করলো ‘ আপনি কেন এতকিছু করেছেন তা আমি জানতে চাইব না। সময় হলে আপনি নিজেই বলবেন। এখন বাড়ি চলুন…. আপনার জন্য এক নতুন সংসার অপেক্ষা করছে। বিয়ের তো আর দুই সপ্তাহ বাকি। ‘
ফারহানের কথা শুনে এবার ফারহানকে ছেড়ে দূরে সরে যেতে চাইলো সানাহ্। তবে ফারহান তার জোর খাটিয়ে সানাহ্কে নিজের সঙ্গে চেপে ধরলো। সানাহ্ বাধ্য হয়ে হাফ ছেড়ে দিয়ে বললো ‘ আপনি কেন এমন অবুঝের মত কাজ করছেন বলুন তো ? আমি তো বলেছি আমি যেতে চাচ্ছি না আপনার সঙ্গে। আমি আমার চিঠিতে আগেই বলে দিয়েছি আমার বিয়ে না করার পিছনে কারণ কি। আপনি কি সেই চিঠি পড়েন নি ? ‘
‘ পড়েছি তবে কারণগুলো নিতান্তই আমার এক্সকিউজ মনে হয়েছে। আপনি আসলে আমাকে বিয়ে না করার জন্য এক্সকিউজ দেখাচ্ছেন। আপনি যেরকম ধরনের মেয়ে তাতে আমার মত সামান্য কবিকে বিয়ে করা আপনাকে মানায় না। আপনার রেজাল্ট,আপনার ব্যক্তিত্ব সব আর্মি মেজর, ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে আপনার জুটি করেছে। সেখানে আমাকে বিয়ে করলে তো আপনি কাউকে মুখ দেখাতে পারবেন না। আমাকে বিয়ে করলে আপনাদের কোটি কোটি টাকার বাড়ি ছেড়ে আমার সামান্য দোতলা বাড়িতে এসে থাকতে হবে। তাই আপনি সেই ভয়ে বিয়ে করতে চাইছেন না। ‘
এবার যেন ফারহানের কথায় সানার মাথায় আগুন ধরে গেল। দপ করে উঠলো সানার রক্তিম চোখ জোড়া। রাগে ফারহানের বুকে তার কোমল হাত দিয়ে কিল বসাতে বসাতে বললো ‘ কি বললি ? তোর কি আমাকে এরকম চিপ মেন্টালিটির সস্তা মেয়ে মনে হয় ? তোর এত বড় সাহস ? তুই আমাকে এই চিনলি ? এই জন্য তুই এত জার্নি করে সিলেট এসেছিস আমাকে নিতে ? আজ তোকে আমি মেরেই ফেলবো..… ‘
সানাহ্কে এভাবে রেগে মারামারি করতে দেখে ফারহান উচ্চস্বরে হেসে উঠে সানাহ্কে জড়িয়ে নিলো নিজের বুকে। সানাহ্কে আবেশে জড়িয়ে ধরে তার মাথায় নিজের হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল ‘ আপনার যদি নিজেকে প্রমাণ করতে হয় তাহলে আমাকে বিয়ে করে দেখান। তখন আমি মানব আপনার সাহস আছে আমার মত সামান্য কবিকে বিয়ে করে গরীবের জীবনের দুঃখ সহ্য করার। ‘
‘ দরকার পড়লে তাই করবো কিন্তু তোকে জিততে দিবো না । কত বড় সাহস আমাকে বলে আমি নাকি তাকে বিয়ে করতে চাইনা বলে চলে এসেছি। নিজে যে আমাকে ফোন করে বললো সে বিয়ে করতে চায়না। তোর ওই কথার কারণেই তো আমার এই অবস্খা। আমি অসুস্থ হয়েছি তোর জন্য। এত বছর আমার এই অসুস্থতা আমার মা বাবা ফেস করেছে, এখন থেকে তুই করবি। ‘ বলে সানাহ্ আরও দু চারটা কিল বসালো ফারহানের বুকে।
ফারহান এবার মুচকি হেসে সানার থুতনিতে হাত রেখে তার মুখটা উচুঁ করে ধরলো। এক মুহূর্তের জন্য সানাহ্ থমকে গেলো কারণ ফারহান তার দিকে এগিয়ে আসছে। সানাহ্ অচঞ্চল চোখে তাকিয়ে রইলো ফারহানের দিকে। ফারহান মুচকি হেসে সানাহ্কে আবারও জড়িয়ে ধরে বলল ‘ আমি তো তার অপেক্ষাতেই আছি ‘। সানাহ্ সেই পরস অনুভব করতে করতেই চোখ দুটো আবেশে বুজে নিলো।
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্..…
#প্রেমমানিশা(১৭)
প্রথমে রাতের বেলাই বাড়ি ফেরার প্ল্যান থাকলেও ফারহান পরমুহূর্তেই তার মত পাল্টে নিলো। এত রাতে সানাহ্কে নিয়ে জার্নি করা সেফ না। তার থেকে বরং কাল সকালে উঠে আস্তে ধীরে খাওয়া দাওয়া করে যাওয়া যাবে। এসব ভেবেই ফারহান বললো ‘ সানাহ্ আজ এত রাতে ফেরা ঠিক হবে না। তারচেয়ে আমাদের এখন আপনি যেই ফ্ল্যাটে উঠেছেন সেখানে ওঠা উচিত। তারপর কাল সকালে নাহয় আস্তে ধীরে খেয়ে দেয়ে যাওয়া যাবে। ‘
ফারহানের কথায় সানাহ্ নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সায় দিল কারণ ফারহান ভুল কিছু বলেনি। আজকাল কি হয় বলা যায় না। রাতের আঁধারে কতকিছুই না হয়। এই আঁধারই তো অপরাধীদের সবথেকে বড় অস্ত্র।
‘ তাহলে চলুন….যাওয়া যাক ‘ বলে ফারহান সানার হাত ধরে এগোতে লাগলো। সানাহ্ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারহানের ধরা হাতের দিকে। তার কাছে সবকিছুই যেন অবিশ্বাস্য ঠেকছে। কোনওদিন যে সেও ফারহানকে ছুঁতে পারবে তা সে স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। তবে আজ এই অবিশ্বাস্য স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আর সেই আনন্দে সানার মন কিছুক্ষণ পরপরই নেচে উঠছে। সানাহ্ কিছু না বলে খানিকটা এগিয়ে এসে ফারহানের হাতে মাথা রেখে ফারহানের হাত জড়িয়ে ধরলো নিজের দুই হাত দিয়ে। ফারহান সেটা দেখেও কিছু না বলে নিঃশব্দে হাসলো।
আবেগে ভেসে ফারহানকে একসঙ্গে থাকতে তো বলে দিলো কিন্তু দুজনে ঘুমাবে কোথায় ? এ তো টিভি সিরিয়াল না যে দুজনে এক বিছানায় ঘুমোবে তাও আবার ডিসটেন্স মেইনটেইন করে। তাহলে কি করা উচিত এখন ? ভেবেই সানার মাথা গরম হচ্ছে। ইদানিং খুব তাড়াতাড়ি মাথা গরম হয় সানার। অথচ আগে নিজেকে সে নিজের কন্ট্রোলে রাখতো। এর ফলে মেজাজ থাকতো সবসময় ফুরফুরে। তাহলে কি ফারহান তার অজান্তে সানার উপর নিজের সম্পদের ট্যাগ বসিয়ে দিয়েছে ?
সানাহ্ যখন কোথায় শুবে সেই চিন্তায় মগ্ন তখন ফারহান তার ভাবনার সমাধান করে দিয়ে বললো ‘ এক কাজ করুন। আপনি আমাকে চাদর আর বালিশ দিন। আমি নিচে শুয়ে পড়ছি। আপনি বিছানায় শোন। ‘
ফারহানের কথা শুনে সানাহ্ চমকে উঠে বললো ‘ সেটা কি করে হয় ? আপনি আমার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন আর আমি আপনাকে নিচে শুতে বলবো ? ইমপসিবল, আপনি খাটে শোন। আমি নিচে শুচ্ছি, অদ্ভুত সব মানুষজনের পাল্লায় পড়ছি। তার ঠান্ডার ধাত আছে জেনেও নিচে শুতে চাচ্ছে। ‘
কথাগুলো বলতে বলতে ক্লোজেট থেকে একটা চাদর আর বালিশ নামালো সানাহ্। জিনিসগুলো নামিয়ে সানাহ্ কাজে লেগে পড়লো। বিছানা ঠিক করে ঘর ছেড়ে বের হলো। ফারহানের জন্য চা আর নিজের জন্য কফি করে আনলো। রাতে খালি পেটে কিছু না খেয়ে থাকা যাবে না। চা এনে ফারহানের হাতে দিয়ে বললো ‘ সরি ফর দিস কাইন্ড অফ বিহেভিয়ার। আজকে দুপুরে বাড়িতে খাওয়ার পর বাজার শেষ হয়ে গেছিলো। সন্ধ্যে বেলা জয়িতা বৌদির সঙ্গে এক জায়গায় গিয়েছিলাম বলে সেখান থেকে খেয়ে আসায় রাতে আর খাওয়ার চিন্তা ছিলো না। সেই সুবাদে বাজার আর করা হয়নি। ঘরে খাওয়ার মত কিছু নেই শুধুমাত্র চা কফি ছাড়া। ‘
‘ আমার ঠান্ডার ধাত আছে কি করে জানলেন ? আর আমি যে চা খাই সেটাই বা কি করে জানলেন আপনি ? ‘ ফারহান চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল।
‘ আশা আন্টি বলেছে। ছোটবেলায় আপনার কিছু হলেই ঠান্ডা লেগে যেত আর সেই ঠান্ডার থেকেই জ্বর। ‘ সানাহ্ বললো।
‘ এতকিছু জানেন অথচ আমি যখন অসুস্থ হয়ে পড়তাম তখন আমায় দেখতে যেতেন না কেন ? ‘ ফারহান ভ্রু কুচকে বললো।
সানাহ্ ফারহানের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলো না তাই নীরব রইলো। সানার নীরবতা ফারহানকে বুঝিয়ে দিল সানাহ্ তার প্রশ্নের উত্তর দিবে না। অগত্যা ফারহানও নীরবতা মেনে চুপ রইলো। কফি খেয়ে সানাহ্ ফারহানের কাছ থেকে চায়ের কাপ নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। থালাবাসন টুকটাক যা ছিল সেগুলো ধুয়ে ড্রয়িং রুমের লাইট নিভিয়ে ঘরে এলো। ঘরের জানালা খুলে দিয়ে ফারহানকে বললো ‘ আপনি এই কাপড়ে ঘুমোতে পারবেন ? ‘
‘ না পারলেও তো কিছু করার নেই। পরিস্থিতি যেমন সেভাবেই অ্যাডজাস্ট করতে হবে। ‘
‘ যদি না পারেন তাহলে বলুন আমি হরি দার পাঞ্জাবি ধুতি নিয়ে আসছি বৌদির কাছ থেকে। ‘ আমতা আমতা করে বলল সানাহ্।
‘ ইসস..… একদম না। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। এত রাতে কারোর ঘুম ভাঙ্গানোর কোনো মানে হয় না । তাছাড়া আমি যে এখানে আছি সেটা কোনো দাদা বৌদিকে বলতে হবে না। জানলে তারা খারাপ ভাববে। আমি এভাবেই অ্যাডজাস্ট করে নিবো। ‘
ফারহানের ফিসফিস করে বলা কথাগুলো সানার কাছে মাদকের নেশার মত লাগলো। মনে হলো সানার মাথা ঝিমঝিম ধরেছে। এখনই সে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাবে। নাহ যে করেই হোক তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে এই রাত পার করতে হবে। তাই সানাহ্ ফারহানকে বললো ‘ আপনি শুয়ে পড়ুন, আমিও শুচ্ছি ‘
‘ আপনার সাথে আমার কথা ছিল ‘
‘ যা কথা হওয়ার সেটা কাল সকালে হবে। এখন আপনি ঘুমান। আমার ভালো লাগছে না কিছু ‘ সানাহ্ বিরক্ত হয়ে তাড়াহুড়ো করে বললো।
‘ ভয় পাচ্ছেন আপনি ? ‘ ফারহান সানাহ্কে এহেন তাড়াহুড়ো করতে দেখে বললো।
আচমকা ফারহানের কথা শুনে সানার ব্যস্ত হাত জোড়া থেমে গেলো। অপ্রস্তুত হয়ে বললো ‘ মানে ? ‘
‘ মানে এটাই যে আপনি এই অন্ধকার ঘরে নিজেকে ভয় পাচ্ছেন। আপনার মনে হচ্ছে এই পরিবেশে আপনি আত্ম নিয়ন্ত্রণ হারাবেন আর কোনো অঘটন ঘটবে। নিজের উপর কন্ট্রোল নেই আপনার ? ‘ ফারহান স্মিত হেসে বললো।
‘ মোটেই না…. আমি ভয় পাবো কেন ? আমার নিজের উপর অবশ্যই কন্ট্রোল আছে। বরং আমার মনে হয় আপনার নিজের কন্ট্রোল নেই তাই আপনি আপনার দোষ আমার উপর চাপাচ্ছেন। ‘ ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো সানাহ্।
সানার কথা শুনে ফারহান নিঃশব্দে হাসলো। কিছুক্ষণ এভাবেই আপন মনে হেসে তারপর সানাহ্কে বললো ‘ আচ্ছা আমি বুঝেছি এটা আমার দোষ। আমার নিজের উপর কন্ট্রোল নেই। আমি যদি কন্ট্রোললেস হই তাহলে আপনি কি দুধে ধোঁয়া তুলসী পাতা ? এত ঝগড়া করা কোথা থেকে শিখলেন ? আগে তো কোনওদিন দেখিনি ঝগড়া করতে। ‘
‘ জানিনা বলে ‘ সানাহ্ তার গায়ে চাদর টেনে ফারহানের দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়লো যাতে ফারহান তার চেহারা দেখতে না পারে। সানার কান্ড দেখে ফারহান অবাক না হয়ে পারল না। সানাহ্কে এতটা ডেসপারেট সে আগে দেখেনি। সানাহ্ বরাবরই শান্ত স্বভাবের মেয়ে । হ্যাঁ যদিও এটা ঠিক যে ফারহান সানাহ্কে কোনওদিন সামনে থেকে দেখেনি,সবসময় আড়ালে থেকেই দেখেছে। তবে একেবারেই দেখেনি কথাটা ভুল।
কিছু মুহূর্ত কেটেছে এভাবেই নীরবতায়। ফারহান মাথার নিচে হাত রেখে সোজা হয়ে সিলিংয়ের দিকে মুখ করে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করার পর ফারহান বললো ‘ মিস সানাহ্, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ? অনেস্ট উত্তর দিবেন…. ‘
সানাহ্ জেগেই ছিল। এতক্ষণে তার মাথা ঘোরা কমেছে আর পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়েছে। পরিবেশ প্রতিকূল দেখে সানাহ্ বললো ‘ বলুন ‘
‘ ডু ইউ লাভ মি ? ‘
একটা সিঙ্গেল প্রশ্ন অথচ এর প্রভাব কতটা তাইনা ? উত্তর এফার্মেটিভ হলে জগৎ সংসার সুখী আর নেগেটিভ হলে চারদিকে শুধু বিরহ আর বিরহ। সানাহ্ তার কথা মত অনেস্ট উত্তরই দিল। এই উত্তর শোনার পর ফারহানের মনে হলো এই প্রশ্নটা না করলেই ভালো হতো। সানাহ্ ফারহানের প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ কিংবা না কোনোটাই বলেনি। বরং বলেছে ‘ আই হেট ইউ…. ‘
সানার কথা শুনে ফারহানের মনে হলো সানাহ্ কি মজা করছে নাকি ও সিরিয়াস ? মজা করার মেয়ে সানাহ্ নয় তাহলে সিরিয়াসলি কেন বললো ? সে যদি ফারহানকে ঘৃণাই করে থাকে তাহলে তাকে বিয়ে করছে কোন দুঃখে ? আর ভাবতে পারল না ফারহান। তার আগেই ওর চোখ দুটো সারাদিনের ক্লান্তি আর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে বুজে এলো।
সানাহ্ ঘুম থেকে উঠেই সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিল। উদ্দেশ্য আজ বাইরে থেকে নাস্তা এনে খাবে কারণ এক বেলার জন্য বাজার করার কোনো মানেই হয়না। সেই ভেবে সানাহ্ দোকান থেকে পরোটা আর ভাজি নিয়ে বাসার দিকে হাঁটা দিলো।
সানাহ্ যখন কঠিন শিলাময় পথ পেরিয়ে বাসার দিকে যেতে ব্যস্ত তখন তার ফোনের রিংটোনে তার হাঁটার পথে ব্যাঘাত ঘটলো। সকাল সকাল ফোন কলের রিংটোন শোনা সানার কাছে বড়ই বিরক্তিকর তাই সে বিরক্তিতে ‘ চ ‘ শব্দ করে ট্রাউজার পকেটের হাত গলে ফোন বের করলো। ফোনের কলার আইডি না দেখেই পর্বত সমান বিরক্তি ভাব নিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে দিয়ে বললো ‘ হুজ স্পিকিং ? ‘
‘ সানাহ্ আপু,আমি ফারাইরা। চিনতে পারছো ? ‘ ফোনের ওপার থেকে ফারাইরা বললো।
‘ এতবার দেখা হওয়ার পর যদি না চিনি তাহলে তো ব্যাপারটা অস্বাভাবিক । আমার কি ডাক্তার দেখানো দরকার ? ‘ সকাল সকাল হুট করে ফোন করায় সানাহ্ বেশ বিরক্ত। বরাবরই তার ফোনে কথা বলতে বিরক্ত লাগে সে যেই হোক না কেন।
‘ আপু তুমি কি রাগ করলে ? আমি কি তোমাকে বিরক্ত করছি ? ‘
মেয়েটার অসহায় কণ্ঠ শুনে সানার মায়া হলো। আহা মেয়েটা ওর এত সাহায্য করলো অথচ ও বিরক্ত হচ্ছে। সানাহ্ তার বিরক্তি দূরে ঠেলে দিয়ে কোমল গলায় হাঁটতে হাঁটতে বললো ‘ নাহ বিরক্তি হইনি। তুমি কি কিছু বলবে ? ‘
‘ হ্যাঁ আপু বলার জন্যই ফোন দিলাম। জাপান বললো আজ আমাকে নিয়ে আপনার ওখানে যাবে। আপনি আপনার সুবিধা মতো একটা সময় বলুন, কখন আপনি ফ্রী থাকবেন। আমরা তখন যাবো। ‘
‘ না না তোমাদের আসার দরকার নেই। জাপান ভাইকে বলে দাও তার আর কষ্ট করে এসে কাজ নেই। আমি ঢাকা ফিরে যাচ্ছি আমার পরিবারের কাছে। ‘ সানাহ্ বললো।
‘ হঠাৎ কি হলো আপু ? আপনার কি মন খারাপ ? গলা কেমন শুনাচ্ছে ? আপনাকে কি জোর করা হচ্ছে ঢাকায় ফেরার জন্য ? ‘ ফারাইরা উদ্বিগ্ন গলায় বললো।
‘ নাহ্ মন খারাপ কেন হবে ? আমার মন খারাপ না। সবারই নিজস্ব একটা জায়গা থাকে যেখানে তাকে দিনশেষে ফিরতে হয়। সেই জায়গার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হলে তাদের সঙ্গে জড়িত সবার সঙ্গেও সম্পর্ক শেষ করে দিতে হয়। কিন্তু আমি তো কারোর সঙ্গেই সম্পর্ক শেষ করিনি তাই সেই সম্পর্কের টানে আমি আবারও নিজের নীড়ে ফিরে যাচ্ছি। যেখানে আমার জায়গা সেখানেই যাচ্ছি। তুমি ভাইয়াকে বলে দিও আর আমার কথা চিন্তা করতে হবে না। ‘ সানাহ্ আলতো হেসে বললো।
‘ এভাবে বলছো কেন আপু ? আমরা তো তোমার আপনজনই। আমরা তোমার কথা চিন্তা করবো নাতো কে করবে ? আমরা তোমাকে ভালোবাসী বলেই তোমার জন্য চিন্তা করি। ‘ ফারাইরা মন খারাপ করে বললো।
‘ আমি তোমাদের ভালোবাসার তীব্রতা জানি তাই তার ক্লারিফিকেশন দিতে হবে না । এখন তুমি সুন্দর করে ভাইয়াকে আমার ফিরে যাওয়ার কথাটা জানাও। আমার হাতে সময় বেশি নেই। জিনিস গোছগাছ করতে হবে তাই ফোন দিয়ে বলা সম্ভব না। ‘ সানাহ্ বললো।
‘ আচ্ছা, ঠিকাছে আপু। আমি ওকে ফোন করে বলছি। তাহলে তুমি ভালো করে প্রিপারেশন নাও। পুরো সংসারই তো উঠিয়ে এনেছিলে তাই নিতে সময় লাগবে। আমি তাহলে রাখি। খোদা হাফেজ…. ‘ ফারাইরা বললো।
‘ আচ্ছা রাখো। খোদা হাফেজ ‘
ফোন রেখে সানাহ্ এবার বিল্ডিংয়ের কেচিগেট খুলে ভিতরে ঢুকলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠে এসে ফ্ল্যাটের লক খুলে ভিতরে ঢুকলো। ভিতরে ঢুকতেই দেখলো ফারহান উঠে গেছে। বাথরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। তারমানে বাথরুমে ঢুকেছে। সানাহ্ বাথরুমের দিকে এক পলক তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। রান্নাঘর থেকে প্লেট বাটি এনে মেঝেতে রাখলো। মেঝেতে পাটি বিছিয়ে তার উপর প্লেট বাটি আর খাবারের প্যাকেট রাখলো। পলিথিন দাত দিয়ে ছিঁড়ে একটা মাঝারি সাইজের বাটিতে ডাল ভাজি মিক্স করে রাখলো। তারপর প্লেট দুটোতে দুটো করে চারটা পরোটা রেখে আরেকটা পরোটা অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ করে দুটো প্লেটেই রাখলো।
সানাহ্ খাবার সাজাতে সাজাতে ফারহান বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ লাগছে। গায়ে সেই কাল রাতের জামা কাপড়ই। সানাহ্কে খাবার সাজাতে দেখে এগিয়ে এসে পাটিতে বসলো। সানার কাজের ধরন দেখে মুচকি হেসে বলল ‘ আমার মনে হয় আমাদের বিয়ের পর বাড়ি কলেজ, বাড়ি কলেজ করতে আপনার সমস্যা হবে না। আপনি তো একাই দশভূজা। মা মনে হয় তার ছেলের বউয়ের কাজের দক্ষতা দেখে প্রেমেই পড়ে যাবে। ‘
‘ এক্সট্রা পাম কম মারুন। বাটারিং এ আমি গলি না। অন্য কোনো টেকনিক এপ্লাই করুন। ‘ সানাহ্ পলিথিনগুলো মুড়িয়ে নিয়ে রান্নাঘরে ফেলে দিয়ে সিঙ্ক থেকে হাত ধুয়ে এলো। তারপর ফারহানের মুখোমুখী বসে বললো ‘ নিন খাওয়া শুরু করুন। তাড়াতাড়ি খান। আমাদের বের হতে হবে। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। জয়িতা বৌদি আর হরি দাকেও বলে যেতে হবে। ‘
‘ আপনি যে এভাবে নিচে বসে খাচ্ছেন আপনার কষ্ট হচ্ছে না ? আপনার তো চেয়ার টেবিলে খেয়ে অভ্যাস। আপনি তো বিদেশি আদব কায়দায় বড় হয়েছেন আর বিদেশে তো মাটিতে বসে খায় না। ‘ সানাহ্কে মাটিতে বসে উশখুশ করে খেতে দেখে ফারহান বলল ।
‘ মানুষ অভ্যাসের দাস। আমি বিদেশী কায়দায় অভ্যস্ত হলেও কিছুদিন নিচে বসে খেলে আমার দেশী কায়দাও আয়ত্তে চলে আসতো। মেইন কথা হলো মানুষ যেই পরিবেশে থাকে তাকে সেই পরিবেশ অনুযায়ী মানিয়ে নিতে হয়। ‘ সানাহ্ খেতে খেতেই বললো।
‘ বুঝাই যাচ্ছে আপনার আর আমার ম্যারিড লাইফ নিঃসন্দেহে নিরঝঞ্জাট পূর্ণ হবে। ‘ ফারহান বিড়বিড় করে বললো যাতে সানার কানে না যায়।
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্..