#প্রেমমানিশা-২৮,২৯
(২৮)
‘ মামা ইচ্ছে মত কাচা মরিচ,শুকনা মরিচ দিয়ে ঝাল ঝাল করে ফুচকা দিন তো। ‘
সানাহ্ ফুচকাওয়ালাকে তার ফুচকার অর্ডার দিয়ে এসে একটা খালি চেয়ার টেবিলে বসলো। সময়টা এখন শেষ বিকেল। গৌধুলি লগ্নের শেষ সোনালী আবরণ সানার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। সানাহ্কে দিচ্ছে অপার আনন্দ। সানাহ্ শুধু চোখ দুটো বন্ধ করে অনুভব করছে চোখ মুখের উপর আছড়ে পড়া সোনালী উষ্ণ রোদ। হঠাৎ সানার মনে হলো ক্যামেরা নিয়ে আসলে ভালো হতো। যখন ক্যামেরার সবথেকে বেশি প্রয়োজন থাকে তখনই সানার মনে থাকে না আনার কথা।
মিনিট দশেক পর ফুচকাওয়ালা সানার দেওয়া স্পেশাল ফুচকার অর্ডার দিতে এসে টেবিলে প্লেট রেখেই সানাহ্কে দেখে চমকে গেলেন। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘ আফা আপনি আইজও এখানে আইসেন ? ‘
‘ কেন আমার কি এখানে আসা মানা ? ‘ সানাহ্ তীব্র ঝাল দেওয়া ফুচকা একটা মুখে তুলে বললো। ইতিমধ্যে অত্যাধিক ঝালে সানার চোখ মুখ লাল হয়ে আসছে তবে সানাহ্ নির্বিকার। সানার রাগ কমানো আর মন খারাপ মিটানোর দুইমাত্র উপায় তো এটাই। কাজেই ঝাল লাগলেও সানাহ্কে খেতে হবে।
‘ না মানে..… হ্যাঁ আফা আপনি আর আইয়েন না এখানে। আপনি দয়া কইরা আমার কাছে আর খাইবার আইয়েন না। ‘ ফুচকাওয়ালা মামা বিনীত সুরে বললেন।
‘ কেন ? আমি কি দোষ করলাম ? দুনিয়া শুদ্ধ মানুষ আপনার কাছে খেতে আসতে পারবে আর আমিই পারবো না। আমার মত একলা নারীর সঙ্গে এই অন্যায় কেন ? ‘ খোশ মেজাজে বললো সানাহ্। তার নাক, চোখ, মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া পানি তার মন খারাপ আস্তে আস্তে মিটিয়ে দিচ্ছে।
‘ আপনি প্রত্যেকবার আইয়েন আর আমার এখান থেইকা ইচ্ছামত ঝাল দিয়া ফুচকা খাইয়া যান। ঝালে আপনার নাক,চোখ মুখ দিয়ে পানি পরে তবুও আপনি খান। আপনার লাল মুখখানা দেখলে আমার ডর করে। আপনি আর আমার এখান থেইকা খাইয়েন না। আপনার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি নিজেরে মুখ দেখামু কেমনে ? ‘ ফুচকাওয়ালা ভীত গলায় বললেন।
‘ হ্যাঁ আমি তো ঝাল দিয়ে খাওয়ার জন্যই আপনার এখানে আসি। ঝাল দিয়ে আপনার বানানো ফুচকা খেতে আমার দারুন লাগে। আর ভয় পাওয়ার কি আছে ? আমি আপনাকে টাকা দেই আর আপনি আমাকে ফুচকা বানিয়ে দেন। এখন সেই ঝাল ফুচকা খেয়ে যদি আমার কিছু হয় তাহলে তার সম্পূর্ণ দায়ভার আমার। ‘
ফুচকাওয়ালা বুঝলেন সানার সঙ্গে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। এই মেয়ে তার অনুরোধ রাখবে না । বরং এখন এখান থেকে সরে পড়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কথায় কথা বাড়ে। দরকার কি কথা বাড়ানোর ? ফুচকাওয়ালা সানার কাছ থেকে ফুচকার দাম নিয়ে নিজের জায়গায় ফিরে গেলেন।
আঁধার ঘনিয়ে এসেছে কিছুক্ষণ আগেই। সানাহ্ রিক্সায় উঠে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছে। তার মেজাজ এখন ফুরফুরে। ঝাল ঝাল ফুচকা তার ভিতরের সব রাগ জেদকে টেনে হিচড়ে বের করে এনেছে। মনে হচ্ছে বাড়ি গিয়ে ওর মায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
ইতিমধ্যে চোখ মুখ লাল টমেটোর মতো হয়ে গেছে তবে বিকেলে প্যারাসিটামল খাওয়ায় জ্বর নেমে গেছে। সানার আবার জ্বর নেমে গেলেই মাথায় চেপে থাকা ভুতও নেমে যায়। তাইতো সে এখন অনুতপ্ত নিজের কাজে। সকালে মুখে যা এসেছে তাই শুনিয়ে দিয়েছে মাকে। অথচ একবারও ভাবেনি এই মাই তাকে কত ভালোবেসে, আদর দিয়ে বড় করেছে। আসলে সে সন্তান নামের কলঙ্ক। তার মতো সন্তান থাকলে সব মায়েরাই কষ্টে থাকবে।
‘ সানাহ্ তুই কি তোর মায়ের সঙ্গে আবার কোনো দাঙ্গা বাঁধিয়েছিস ? ‘
বাড়িতে পা রাখতে না রাখতেই প্রশ্নের মুখে সানাহ্। হঠাৎ আচমকা ওর বাবাকে এই ভোর সন্ধ্যায় বাড়িতে দেখে চমকে গেলো। ওর বাবা সচরাচর এই সময় বাড়িতে থাকে না। সে ব্যস্ত থাকে তার ব্যবসায়ের কাজে ‘ Flora ‘ তে । মাঝে মাঝে বাবার সঙ্গে মাও অফিসে যায় কিন্তু সেটা হঠাৎ হঠাৎ। মা বেশিরভাগ সময় মেয়েদের সময় দিবে বলে বাড়ি থেকেই কাজ করে।
‘ কেন বাবা ? ‘ নিজেকে সামলে দ্রুত বাবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিল সানাহ্।
মেয়ের এহেন বোকামিতে মিস্টার কবির বিরক্ত হলেন। ভ্রু কুচকে বললেন ‘ তোমাকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম কিন্তু তুমি উত্তর না দিয়ে উল্টো আমাকেই প্রশ্ন করছো। তুমি কি জানো তোমার মা বিকাল বেলা কাউকে না বলে হুট করে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে গেছে ? যাওয়ার সময় বলে গেছে সে আর ফিরবে না।
বাড়িতে অতসী ছিল। ও আমাকে ফোন করে জানানোর পর আমি আশাকে ফোন করলাম। আশা বললো কায়নাত ওর বাড়িতেই আছে আর কান্নাকাটি করছে। উল্টাপাল্টা কি বিলাপ বকছে সেটা আশা নিজেই বুঝতে পারছে না। তুমি আবার কি ঝামেলা করেছো যে কায়নাত এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে ? ও কিন্তু বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার মানুষ না। ‘
এবার সানার মুখটা দেখার মত ছিল। মিস্টার কবিরের কথা শুনা মাত্র ওর মুখটা চুপসে গেলো। অপরাধী সুরে বললো ‘ সকালে মায়ের সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছিল আর আমি অনেক বাজে..… ‘
সানাহ্কে বাকি কথাটুকু আর বলতে দিলেন না মিস্টার কবির। তার আগেই সানাহ্কে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বললেন ‘ আমি আর কিছু শুনতে চাচ্ছি না। আমি জানিনা তোমাদের মা মেয়ের মধ্যে কি ঝামেলা হয়েছে আর আমি জানতে চাইছিও না। আই থিঙ্ক তুমি জানো তোমার এখন কি করা উচিত । ‘
মিস্টার কবিরের কথা শুনে সানাহ্ এবার মুখ উঠিয়ে তার দিকে তাকালো। ধীর গলায় বললো ‘ আমি জানি আমার এখন কি করা উচিৎ বাবা। আমি যাচ্ছি মাকে আনতে। ‘
‘ বাবা আমি কি আপাইয়ের সঙ্গে যাবো ? ‘ সানাহ্ যখন তার কথা বলেই সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো তখন অতসী মিস্টার কবিরের উদ্দেশ্যে কথাটা বললো।
‘ নাহ্ যার সমস্যা তাকেই মিটাতে দাও। তোমার আমার মাঝখানে বেগড়া দেওয়ার দরকার নেই। ‘ বরফ শীতল কন্ঠে বললেন মিস্টার কবির। উনার কথার বিপরীতে কেউ আর কিছু বলার সাহস পেলো না। সানাহ্ নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলো। মেইন রাস্তায় উঠে ফারহানের বাড়ির উদ্দেশ্যে রিকশা নিলো।
‘ আর কত কান্নাকাটি করবি কায়নাত ? আমাকে বল কি হয়েছে। সেই থেকে তো কান্নাকাটিই করে যাচ্ছিস। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে কান্না করিস। কেন হয়েছে জিজ্ঞেস করলে কান্না করিস। তোকে তো এভাবে কান্না করতে আগে কখনও দেখিনি। সানার সঙ্গে কি আবার ঝামেলা হয়েছে ? ‘ মিসেস কায়নাতের কান্নাকাটি দেখে এবার এক প্রকার বিরক্ত হয়েই কথাগুলো বললেন মিসেস আশা। প্রিয় বান্ধবীর মুখের দিকে তাকাতে পারছেন না উনি। বান্ধবীকে আগে কখনো এভাবে কাদতে দেখেননি।
মিসেস আশার কথা শুনেও কিছুই বললেন না। বরং মুখে হাত চেপে নিজের কান্না সংবরণ করার চেষ্টা করলেন। মিসেস কায়নাতের ব্যর্থ চেষ্টা দেখে তপ্ত নিশ্বাস ফেললেন মিসেস আশা। প্রিয় বান্ধবীর চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তে দেখলেও মিসেস আশার দম বন্ধকর অনুভূতি হয়। মনে হয় এই কান্না নিজ চোখে সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই।
হঠাৎ মিসেস আশার চোখে পড়লো বাড়ির মেইন গেটের বাহিরে কেউ রিকশা থেকে তাকে হাত নেড়ে নেড়ে ডাকছে। মানুষটা কে নিকষ কালো অন্ধকারেও চিনতে ভুল হলো না মিসেস আশার। উনি হাত উঠিয়ে মিসেস কায়নাতের নজর এড়িয়ে দাড়িয়ে থাকার ইশারা করে মিসেস কায়নাতকে বললেন ‘ তুই এখানেই বস… আমি নীচ থেকে আসছি। কেঁদেকেটে তো গলা শুকিয়ে ফেলেছিস। আমি তোর জন্য পানি নিয়ে আসি যাতে পানি খেয়ে আবারও কাদতে পারিস। ‘
মিসেস আশার কথার জবাবে কিছুই বললেন না মিসেস কায়নাত। শুধু এক দৃষ্টিতে বাড়ির মেইন গেটের বাহিরে দাড়িয়ে থাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন ছায়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন। উনার বান্ধবী মনে করেছেন মানুষটাকে মিসেস কায়নাত খেয়াল করেননি। কিন্তু আসলে তো উনিই সবার আগে খেয়াল করেছেন। তবে নিজে থেকে কিছু বলার ইচ্ছা হলো না বলে নীরব রইলেন।
মিসেস কায়নাতকে নীরব দেখে মিসেস আশা আর কিছু বললেন না। ধীর পায়ে নিচে চলে এলেন। নিচে এসে আগে সদর দরজা খুলে দিলেন। দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে ঢুকলো সানাহ্। সানাহ্ মিসেস আশাকে দেখে বললেন ‘ মা কোথায় ? কি অবস্থা ? ‘
‘ ভালো হয়েছে তুমি এসেছ। এসে থেকে আমার ঘরের বারান্দায় বসে কান্নাকাটি করছে। জিজ্ঞেস করছি কান্না কেন করছে কিন্তু কিছুই বলছে না। তুমি জিজ্ঞেস করলে যদি কিছু বলে। ‘
‘ আচ্ছা আমি দেখছি ‘ বলে সানাহ্ আর মিসেস আশার উত্তরের অপেক্ষা করল না। দ্রুত পায়ে সিড়ি দিয়ে উঠে গেলো। মিসেস আশা সানার যাওয়ার পথে এক পলক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। দুই দিন পরপর এরা মা মেয়ে ঝগড়া করে আর মাঝে উনি ফেঁসে যান। এইদিকে দুই মা মেয়েকে সামলানো অন্যদিকে বান্ধবীর অভিমান। অনুভূতির যাঁতাকলে পড়ে উনার চ্যাপ্টা হওয়ার জোগাড়।
তবে এই প্রথম এরকম হলো যে ঝগড়া করে কায়নাত তার বাড়ি ছেড়েই চলে এসেছে। এর আগে কখনো এমন হয়নি। কায়নাত বরাবর অন্তর্মুখী স্বভাবের। নিজেদের বাড়ির ঝামেলা বাহিরে যেতে দেয় না।
বারান্দায় বসে বসে সন্ধ্যা বিলাস করছেন মিসেস কায়নাত। মনে পড়ছে পুরনো স্মৃতি। যখন উনার দিদি বেচেঁ ছিলেন তখন এভাবেই দুই বোন সন্ধ্যা বিলাস করতেন। সঙ্গে দুই কাপ ধোঁয়া উঠা চা যেন সন্ধ্যার আড্ডা জমিয়ে দিত। এই আড্ডা চলতো রাত বারোটা পর্যন্ত। এর মাঝে মিস্টার আফজাল আর মিস্টার কবিরও এসে যোগ দিতেন। আনন্দের ছিল সেই দিনগুলি।
আচমকা মনে হলো নরম একটা বিড়ালছানা এসে মিসেস কায়নাতের কোলে গুটিসুটি মেরে তার হালকা মেদবহুল পেট জড়িয়ে ধরে জাপটে ধরে বসেছে। মিসেস কায়নাত নীরবে বিড়ালছানা রুপি সানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। মায়ের স্পর্শে অভিমানী সানাহ্ ডুকরে কেঁদে উঠলো। হেচকি তুলে কাদতে কাদতে বললো ‘ আই অ্যাম সরি মা…আমাকে মাফ করে দাও। এরকম ভুল আর করবো না। ওই সর্বনাশা জ্বর বরাবরই আমার সর্বনাশ করেছে।। আজও করলো… তোমার সঙ্গে আমাকে খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য করলো।
কিন্তু বিশ্বাস করো মা আমি অতগুলো টাকা কোনো খারাপ কাজে ব্যবহার করেনি। এমন কিছু করিনি যেটা তোমার আর বাবার সম্মান ডুবাবে। আমি যদি কারণ বলতে পারতাম তাহলে অবশ্যই বলতাম। কিন্তু আই প্রমিজ মা, আর এরকম রাগারাগি করবো না। তোমাকে বাজে কথা বলবো না। আই সয়ের মা… ‘
‘ তোর জ্বর এসেছে আর আমাকে বললি না ? একবার বললে কি আজ এত বড় ঝামেলা হতো ? তোর আর আমার মধ্যে এত বড় দাঙ্গা হতই না। ‘ সানার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন মিসেস কায়নাত।
‘ তুমি সবসময়ই আমাকে নিয়ে টেনশনে থাকো। এখন আবার নতুন করে আমার বিয়ের টেনশন। কয়েকদিনের মধ্যেই মামা মামী ওরা আসবে। ওদের সবাইকে দেখাশুনা করার টেনশন। তাই আর নতুন করে জ্বরের কথা বলে তোমাকে টেনশনে ফেলতে চাইনি। আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি মা… অনেক। ইউ ক্যান্ট ইভেন ইমাজিন হাউ মাচ আই লাভ ইউ। ‘ সানাহ্ মিসেস কায়নাতকে আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো।
‘ সবসময় জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না সানাহ্। মা এমন একজন মানুষ যে সন্তানকে জন্ম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু কষ্টে সন্তানকে বড়ও করে। দিদি তোর জন্মদাত্রী মা কিন্তু আমি তোর পালনকর্তা মা। দিদি তোকে জন্ম দিলেও আমি কিন্তু তোকে বড় করেছি। আবার আমি তোকে বড় করলেও দিদি তোকে জন্ম দিয়েছে। তাই তোর জীবনে আমাদের দুজনেরই মূল্য সমান হওয়া উচিত। দিদি তোর জন্মদাত্রী মা বলে আমাকে তোর মাসী বলে মা হওয়ার অধিকার থেকে অবহেলা করতে পারিস না।
দিদি তোর কাছে যেরকম মা হওয়ার দাবিদার তেমনই আমিও। আর মায়ের কাছেও সন্তানের থেকে বড় কেউ না।।আমার মাথায় যতই অন্য কিছু নিয়ে টেনশন থাকুক না কেন আমার ফার্স্ট প্রায়ওরিটি সবসময় তুই আর অতসী। তোরা দুজনেই আমার সন্তান। কিন্তু তুই আমার বড় সন্তান…আমার বড় মেয়ে। কাজেই তোর কাছে আমার এক্সপেক্টেশন বেশি। তোর প্রতি আমার ভালবাসার প্রকাশও বেশি। আমি কোনোদিনই চাইবো না আমার কোনো সন্তান তাদের ভুলে বিপদে পড়ুক। ‘ এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে যেন নিজেকে ভারমুক্ত মনে করলেন মিসেস কায়নাত। অনেক দিনের বোঝা নেমে গেছে উনার বুক থেকে।
‘ আই নো মা। আই অ্যাম ভেরি ভেরি সরি ফর হার্টিং ইউ। প্লিজ ফর্গিভ মি ফর দিস টাইম,প্লিজ। আই উইল নট হার্ট ইউ নেক্সট টাইম। আই সয়ের মা। প্লিজ বাড়ি চলো মা…… বাবা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে, অতসী অপেক্ষা করছে আর……আর আমি অপেক্ষা করছি মা। ‘ শেষের কথাগুলো খানিকটা থেমেই বললো সানাহ্।
সানার কথা শুনে মুচকি হাসলেন মিসেস কায়নাত। মুখ নত করে সানার আলগোছে বেধে থাকা চুলে ঠোঁট বুলিয়ে দিলেন। তারপর আবার সানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।এবার উনি নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরবেন..…নিজের বাড়িতে।
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….
#প্রেমমানিশা(২৯)
‘ তুই না বলেছিলি বাড়ি ফিরবি না ? তাহলে এখন আবার বাড়ি যাওয়ার জন্য পাগল হয়েছিস কেন ? এত তাড়াতাড়ি কান্নাকাটি বন্ধ ? আমি ভেবেছিলাম তুই আরও কিছুক্ষণ কাদবি… ‘ মিসেস আশা হতবাক হয়ে হাস্যরত মিসেস কায়নাতকে দেখে বললেন কথাগুলো।
মিসেস আশার কথা শুনে মিটমিটিয়ে হাসলেন মিসেস কায়নাত। ধীর গলায় বললেন ‘ মা মেয়ের সিক্রেট… তুই বুঝবি না ‘।
মিসেস কায়নাতের কথা শুনে মিসেস আশা কপট রাগ দেখিয়ে বললেন ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ এখন তো এটা বলবিই… বিয়ের পর যখন আমার মেয়েকে আমি বাড়ি আনবো তখন আমাদেরও সিক্রেট কথা থাকবে। তখন তোকে ওই কথা বলবো না। ‘
মিসেস আশার কথা শুনে মিসেস কায়নাত বললেন ‘ বলিস না.. আমি তোদের সিক্রেট কথা শুনতে চাইবো না। ‘
ব্যাস ঘটে গেলো পিনপতন নীরবতা। দুই বান্ধবীর কেউই যেন কথা বলার শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না। অবশেষে কথা বলার জন্য কোনো উপযুক্ত বিষয় খুজে না পেয়ে দুজনেই কুলুপ এঁটে দাড়িয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর সানাহ্কে বাড়ির বড় লোহার গেট পেরিয়ে ভিতরে আসতে দেখা গেলো। সে বেরিয়েছিল বাড়ি ফেরার জন্য রিকশা ঠিক করতে।
মেয়ের অপেক্ষায় ঠাকুর বাড়ির সদর দরজর বাইরে উচুঁ জায়গায় দাড়িয়েছিলেন মিসেস কায়নাত। মেয়েকে আসতে দেখে এগিয়ে গেলেন। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন ‘ রিকশা পেয়েছিস ? ‘
‘ হ্যাঁ মা পেয়েছি..…তুমি গিয়ে উঠো। আমি আন্টির সঙ্গে কথা বলে আসছি। ‘
মিসেস কায়নাত আর মেয়ের কথায় দ্বিমত করলেন না। ধীর লয়ে এগিয়ে গেলেন। মিসেস কায়নাত প্রস্থান করতেই সানাহ্ মিসেস আশার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার সুরে বলল ‘ থ্যাংক ইউ আন্টি মাকে সামলানোর জন্য। তুমি ছিলে বলেই মা এত দ্রুত রাজি হয়ে গেল। সত্যি বলতে তুমি যা করলে তারপর তোমাকে ধন্যবাদ বললেও তোমাকে ছোটো করা হয়। তোমাকে ভাষায় ধন্যবাদ জানানোর ভাষা জ্ঞান আমার নেই। বাট আই অ্যাম রিয়েলি অউফুল টু ইউ ‘
সানার কথা শুনে আলতো হাসলেন মিসেস আশা। সানার নরম হাত জোড়া নিজের দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন ‘ সানাহ্ আমি জানি তুমি ইন্টেলিজেন্ট। সবকিছু মাথা খাটিয়ে বোঝাতে তুমি এক্সপার্ট। তাই তোমাকে বলছি। কথার তীর আর ধনুকের তীর একবার ছুঁড়ে দিলে সেটা আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। তাই নিজের বিপরীতে থাকা মানুষটাকে কিছু বলার আগে হাজারবার ভেবেচিন্তে তারপর বলবে। কায়নাত তোমার মা, মাসী নয়। সে তোমার ভালো চায়… তার মতো ভালোবাসতে তোমাকে আর কেউ পারবে না। আমি কি আমার কথা তোমাকে বুঝাতে পেরেছি ? ‘
মিসেস আশার কথায় সানাহ্ আলতো করে মাথা নেড়ে সায় দিল যেন সে মিসেস আশার কথার মানে বুঝতে পেরেছে। অতঃপর মিসেস আশার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মায়ের সঙ্গে রিকশায় করে বেরিয়ে পড়লো। হঠাৎ মিসেস কায়নাত বলে উঠলেন ‘ সানাহ্ উনাকে বল রিকশা ঘুরাতে ‘
মায়ের কথার মানে বুঝতে না পেরে সানাহ্ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো ‘ কেন মা ? ‘
‘ আজ দুই মা মেয়ে রাতের ঢাকা শহর ঘুরে দেখবো। তুই ঘুরতে চাস না আমার সঙ্গে ? ‘
সানাহ্ ওর মায়ের কথায় মুচকি হাসলো। রিকশাওয়ালাকে ডেকে বললো রিকশা ঘুরিয়ে নিতে। তারপর সানাহ্ আদুরে বিড়ালের মতো মিসেস কায়নাতের বাম হাত জড়িয়ে তার কাধে মাথা রাখলো। অন্ধকারে মিসেস কায়নাত নিঃশব্দে হাসলেন।
—-
এত বড় ঘরের মাঝেও দ্রুত পা চালাতে গিয়ে বারবার হোচট খাচ্ছে সানাহ্। তবে তবুও তার শিক্ষা নেই। দ্রুত পায়ে যেন ঘরে ছুটছে না দৌড়চ্ছে। সানার এত তাড়াহুড়ো করার পিছনে কারণ আছে। আজ টানা পাঁচদিন ক্লাস স্কিপ করার পর আবারও ভার্সিটি যাচ্ছে। এতদিন তো জ্বরের প্রকোপেই যেতে পারলো না। এতদিন পর যখন যাচ্ছে তখন তো লেট হয়ে গেলে সমস্যা।
এমনিতেই বাড়িতে ঝামেলার শেষ নেই। কাল আবার সানার বড় মামা,মেঝ মামা, মেঝ মামী আর ছোটো মামা এসেছে। শায়খ আসার পর সানাহ্কে আর পায় কে। ফারহান হাজার ফোন দেওয়ার পরও দুদন্ড ফারহানের ফোন ধরার সময় পায়নি শুধুমাত্র তার প্রিয় মামার সঙ্গে কথা বলবে বলে। এ নিয়ে অবশ্য ফারহান এক চোট রাগারাগিও করেছে কিন্তু কাল শেষ রাতে সানাহ্ তাকে ফোন করে ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে রাগ ভাঙিয়ে নিয়েছে। আবার এটাও বুঝিয়ে দিয়েছে তার জীবনে তার মামার জায়গা কোথায়।
সানাহ্ তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। সানাহ্কে বের হতে দেখে মিসেস কায়নাত বললেন ‘ সানাহ্ দুই মিনিট দাড়া..… ব্রেকফাস্ট করে যা। ‘
‘ না মা আজ সময় নেই। আমি ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিবো..… ক্লাসে যেতে লেট হলে আমার এথিক্স রুল ব্রেক করবে। ‘ সানাহ্ দ্রুত পায়ে সদর দরজার দিকে যেতে যেতে বলল।
‘ এই দাড়া..… রিকশায় খুঁজতে গেলে দেরী হবে। আমি তোকে গাড়ি করে দিয়ে আসছি ‘ বলে শায়খ তার হাতে থাকা ফোনটা জিন্সের পকেটে ঢুকিয়ে পা চালাল।
শায়খের কথা শুনে সানাহ্ একবার বাম হাতের কব্জিতে থাকা কালো ঘড়ির ডায়ালে চোখ বুলিয়ে নিলো। নাহ্ এখনও বেশি দেরী হয়নি তবে সানাহ্ কৌশলে বলল ‘ তাড়াতাড়ি করো মামা…. দেরী হলে সমস্যা হয়ে যাবে। ‘
‘ সানাহ্ বাড়ি ফিরতে সময় একেবারে ফারহানের সঙ্গে বিয়ের শপিংটা করে ফিরিস। তোদের বিয়ের আর মাত্র তিনদিন বাকি। আজ শপিং না করলে আর সময় হয়ে উঠবে না। কাল আবার টগরের মেয়ের(আশা আর কায়নাতের ছোটবেলার বান্ধবীর মেয়ে) বিয়েতে যেতে হবে। পরশু তোর আর ফারহানের এনগেজমেন্ট। হাতে একেবারেই সময় নেই। ‘ সানাহ্ আর শায়খকে বের হতে দেখে এগিয়ে এসে বললেন মিসেস কায়নাত।
সানাহ্ তার মায়ের কথায় দ্বিমত করলো না। নীরবে মাথা নেড়ে ওর ছোটো মামার সঙ্গে বেরিয়ে গেল। বর্তমানে ওরা গাড়িতে। গাড়ি যাচ্ছে ঢাকা ইউনিভার্সিটির দিকে।
‘ বিয়ের পরই তো অনার্স ফাইনাল। অনার্সের পর কি করার ইচ্ছা আছে ? মাস্টার্স কি শেষ করবি ? ‘
সানাহ্ নীরবে জানালার পাশে সিটের গাঁয়ে হেলান দিয়ে জানালার বাহিরের দৃশ্য দেখছিল।সবকিছু যেন তাদের অদৃশ্য গতি পেয়েছে। নিজেদের মতো ছুটে চলেছে। স্থির জিনিসও গতিশীল হয়েছে।
সানাহ্ ছোটবেলায় গাড়ি করে বের হওয়ার সময় জানালার বাইরের দৃশ্য দেখে এটাই ভাবত যে সে গাড়িতে উঠলেই সবকিছু জাদুবলে তার অদৃশ্য গতি ফিরে পায়। আর ছোটবেলার সেই ধারণা এখনও সানার মনে রয়ে গেছে। এখনও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ হওয়ার পরও মাঝে মাঝে এসব মনে পড়ে।
হঠাৎ শায়খের কথা শুনে তার দিকে ফিরে বসলো সানাহ্। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো ‘ অনার্স শেষ করার পর আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতেই মাস্টার্স করে নিবো। ‘
‘ তাহলে তোর ফরেইন ভিসার কি হবে ? তুই না ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়াতে এপ্লাই করেছিস ? ‘ শায়খ ড্রাইভ করতে করতেই অবাক হয়ে বললো।
‘ ভিসা এপ্লাই করলেই যে ভিসা পেয়ে যাবো কে বললো ? সবাই কি ভিসার জন্য এপ্লাই করলেই ভিসা পায় ? কই মেঝ মামা যে এপ্লাই করলো সে তো পায়নি । তাহলে আমিও যে পাবো তার কোনো গ্যারান্টি নেই। ‘
‘ আরে তার ব্যাপার তো আলাদা। মেঝ দাদু (মিস্টার আমান) এপ্লাই করেছিল কিন্তু দাদু তখন ম্যারিড ছিল আর পাসপোর্ট ছিল যখন সে আনম্যারিড ছিল তখনকার। তাই হয়নি তাছাড়া মেঝ দাদুর তো প্রবল ইচ্ছাশক্তি ছিলনা। তোর তো আর এইসব প্রবলেম নেই। তোর পাসপোর্ট ঠিক করতে দেওয়া হয়েছে বিয়ের কারণে। তাছাড়া তোর তো ইচ্ছা ছিল ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়াতে পড়ার তাইনা ? ‘
‘ মানুষ পরিস্থিতির শিকার। পরিস্থিতির যাঁতাকলে পড়ে মানুষ নিজের আপনজনদের প্রতি মায়া বিসর্জন দিতে পারে আর আমি তো শুধু স্বপ্ন বিসর্জন দিবো। আমি ফারহানকে আর আন্টিকে ছেড়ে যেতে চাই না। ‘ সানাহ্ শান্ত গলায় বললো।
‘ আমি জানিনা তুই এসব কি বলছিস কিন্তু আমি তোর অমতে কিছুই বলবো না। এটা তোর লাইফ তাই তোর রুলস। তোর ক্যারিয়ার তাই তুই যেটা চাইবি তাই হবে। আর কয়েকদিন পর তোদের বিয়ে তাই এসব নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। ‘ শায়খ মৃদু হেসে স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বললো।
—-
‘ এই অতস!!! কি হয়েছে ? আজকাল এত অ্যাবসেন্ট মাইন্ডেড কেন থাকিস ? তোর সমস্যা কি ? ‘ জানালার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা অতসীর গাঁয়ে জোরে ঠেলা দিয়ে বললো আসাদ।
‘ ঠিক বলেছিস তুই। আজকাল প্রায়ই ওকে ক্লাসে ঘুমোতে দেখি। এই অতস তোর কি হয়েছে বল তো ? ‘ অবনি বললো।
আসাদের ধাক্কায় অতসী তার ভাবনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে এলো। আড়মোড়া ভেঙে খানিকটা নড়েচড়ে বসলো। আসাদ আর অবনির কথা শুনে ওদের দেখিয়ে হাত ঝাড়ি দিয়ে বললো ‘ কি হবে ? কিছুই হয়নি….বাড়িতে আপাইয়ের বিয়ের ধুম লেগেছে। দিনরাত মা ছুটাছুটি করছে। একমাত্র বোনের বিয়ে তাই আমারও কাজ করতে হচ্ছে। আবার মামা মামী ওরাও এসেছে। মূলত আড্ডা,কাজ এসবের কারণেই ঘুম হচ্ছে না। ও সিরিয়াস কিছু না…. ‘
‘ তোর আপাইয়ের বিয়ের আর কয়দিন বাকি রে ? আমরা যেতে পারবো তো নাকি ? আমাদের দেখলে সানাহ্ আপু যেভাবে লাফিয়ে উঠে। দেখলেই তো আমার মনটা লাফালাফি করে। ইস তোর আপুটা তোর বড় না হয়ে ছোটো হলে কত ভালো হতো বলতো। আমার এই তেইশ বছরের জীবনে ওয়ান অ্যান্ড অনলি ক্রাশ অথচ ওরও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ‘ আসাদ আফসোসের সুরে বলল।
‘ হুম তোর ক্রাশের কাথায় আগুন। ও তোর ছোটো হলেও তোর সঙ্গে ওর মিল হতো না। ফারহান ভাই আর আপাই একে অপরের ভূমিতব্য। ওরা একে অপরের ভাগ্যে ছিল তাই ওরা এক হচ্ছে। এখানে তোর,আমার কিছু করার নেই। ‘ অতসী আসাদকে ভেংচি কেটে বললো।
‘ হয়েছে হয়েছে বুঝেছি। তুই আসলে বন্ধু রুপি শত্রু তাই বন্ধুর সুখ তোর সহ্য হয়না। এই তোর নজর লেগেই সানাহ্ আপু আমার হলো না। ‘ আসাদও অতসীকে মুখ ভেংচি বললো।
‘ এ্যাহ যেই না চেহারা, নাম রাখছে পেয়ারা। একদিকে আপু ডাকছে আরেক দিকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখছে। আহ্ শখ কত সিনিয়র আপুকে বিয়ে করবে!! ইহ সর সর। আমার আপাই কি তোর মত পিচ্ছি পোলারে বিয়ে করবো ? ইমপসিবল…… ‘ অতসী শূন্যে মুখ ভেংচিয়ে বললো।
‘ হয়েছে আর বলা লাগবে না। কি জিজ্ঞেস করেছিলাম আর কি বলছে । তা মহারানী আমার ক্রাশ থুড়ি বাঁশের বিয়ে আর কয়দিন পরে জানতে পারি কি ? আসলে আমি আমার ক্রাশ থুড়ি বাঁশকে বিয়েতে বউ সাজে দেখতে চাইছি। সেই কোন আমলে তোর ওরিয়েন্টেশনে দেখেছিলাম একটু শাড়ি পড়ে। মহিলা শাড়ি পড়ে আমার মন চুরি করে পালিয়েছে। ‘
‘ আর তিনদিন বাকি আছে। পরশু আপাই আর ফারহান ভাইয়ের এনগেজমেন্ট আর এর একদিন পরেই বিয়ে তারপর এক সপ্তাহের মধ্যেই অনুষ্ঠান। তোরা আসিস আপাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে। আপাই খুশি হবে। আপাই তো অবর সঙ্গে দেখা করতে আসতে চেয়েছিল কিন্তু ওই জ্বরের কারণে এতটা উইক হয়েছে যে বলার বাইরে। এই তো দুই দিন আগেও আবার জ্বর এসেছিল। আপাইয়ের এই জ্বর আমাদের নাকে দম করে রেখেছে। এখন দুলাভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে। আল্লাহ জানে ভাইয়ার কি অবস্থা হবে..… ‘
‘ ওরে অতস রে অতস এইডা তুই কি শুনাইলি ? তোর আপাই আমরা গেলে খুশি হবে ? এটা শোনার পর তো এই পৃথিবীকেও স্বর্গ মনে হচ্ছে। আমি তো অবশ্যই যাবো সানাহ্ আপুর বিয়ের… ‘
অবনি তার কথা আর শেষ করতে পারলো না কারণ ততক্ষনে ক্লাসে প্রণয় ঢুকে গেছে । প্রণয় ক্লাসে ঢুকতেই প্রথমে অতসীর দিকে নজর দিল। প্রণয়কে দেখে অতসী দৌড়ে এসে নিজের নির্ধারিত সিটে বসলো। আজ অতসীর পরনে গ্রে কুর্তি অ্যান্ড ব্ল্যাক জিন্স। সঙ্গে গাঁয়ে জড়ানো সেই ডেনিম জ্যাকেট যেটা প্রণয় তার মিস ইন্ডিয়ার গাঁয়ে প্রথমবার দেখেছিল। আর গলায় গ্রেইশ ব্লু রঙের স্কার্ফ।
এক মুহূর্তের জন্য যেন প্রণয়ের চোখ সেখানেই আটকে গেলো । প্রণয় তার কথা বলার ভাষা হারিয়েছে। স্থানুর মত জায়গাতেই দাড়িয়ে আছে। প্রণয়কে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একজন স্টুডেন্ট দাড়িয়ে প্রণয়কে ডাক দিল। প্রণয় এবার চোয়াল শক্ত করে নিজের ডেস্কের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অতসীর দিকে শীতল দৃষ্টি ছুঁড়ে দিলো। অতসী প্রণয়ের দৃষ্টির মানে বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল তবে প্রণয় ওর সেই দৃষ্টিকে পাত্তা দিল না। রাগী মেজাজে ক্লাসে মন দিলো।
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….