-“আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাই না।”
স্বাভাবিক কন্ঠে বলল কামিনী। অয়ন অবাক হলো। তারা এখন একটা ক্যাফেতে বসে আছে। অয়ন বলল,
-“চান না যখন তাহলে এখানে কেনো এসেছেন?”
-“মায়ের জোরাজোরিতে।”
-“-“আমায় বিয়ে না করতে চাওয়ার কারণ?”
বিভ্রান্ত কন্ঠে অয়ন প্রশ্ন করলো। কামিনী হাসলো। জিজ্ঞেস করল,
-“বিবাহভীতি বোঝেন? আমার বিবাহভীতি আছে।”
-“বিবাহভীতি?”
অবাক সুরে শুধালো অয়ন। কামিনী মলিন গলায় বলল,
-“বিয়ে মানে আমার কাছে নরক, মারধর, ভায়োলেন্স।”
অয়ন অবাক হয়ে কামিনীর চোখের দিকে চেয়ে রইলো। মেয়েটার চোখের কোণ চিকচিক করছে। কেন? কৌতুহল গ্রাস করলো অয়নকে। তবুও প্রশ্ন করতে দ্বিধা হচ্ছে। অয়ন বলল,
-“তবে আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।”
-“কিন্তু আমি চাই না।”
বলে চেয়ার থকে উঠে দাড়ালো কামিনী। আশেপাশে তাকালো। টেবিলে হালকা ঝুকলো। বলল,
-“আমার বাসায় ফোন করে বলবেন আপনার আমাকে পছন্দ হয়নি। হু?”
উত্তরে অপেক্ষা না করে কামিনী বেরিয়ে গেলো ক্যাফে থেকে। অয়ন হা করে চেয়ে আছে এখনও। মেয়েটার নাকি বিবাহভীতি আছে। অথচ কেন তা বলল না। আজব!
_____
-“ছেলে কেমন লাগলো?”
বাড়িতে সবে মাত্র ঢুকলো কামিনী। তখনই মায়ের গলা পেলো সে। বিরক্ত হলো, তবুও সেটা আড়াল করে মার কাছে এসে সোফায় বসলো। নিভু কন্ঠে বলল,
-“মা আমি বিয়ে করব না, কতবার বলব তোমায়?”
আয়শা নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলালেন। আদর মাখা গলায় বললেন,
-“তা বললে হয়? কতদিন একা থাকবি? এবার তো কাউকে দরকার, সারাজীবনতো একা কাটাতে পারিসনা না?”
-“হ্যাঁ আমি বিয়ে করি তারপর তোমার মতো অবস্থা হোক আমার তাইতো?”
আয়শার মুখের উৎফুল্ল উজ্জ্বলতা কেমন নিভে গেলো। নিজের বিভৎস অতিত এখনো তাকে কুঁড়ে খায়। নিজেকে সামলান তিনি। কামিনীকে বললেন,
-“আমার সাথে যা হয়েছে তা তোর সাথেও যে হবে তা কে বলেছে? সবাই কি এক মা?”
কামিনী মায়ের হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে বলল,
-“হতে কতক্ষন মা? ওই লোকটা নাকি বিয়ের প্রথম তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করতো? কদিন যেতেই আসল রুপ বেড়িয়ে এসেছিলো।”
আয়শার বুকে কথাটা যেন তীক্ষ্ণভাবে বিধঁলো। উনি তবুও কপট রাগ দেখালেন,
-“লোকটা কিরে? তোর বাবা হয়।”
-“সিরিয়াসলি মা? এখনো তুমি লোকটাকে ডিফেন্ড করে কথা বলবে?”
আয়শা প্রসংগ পালটালেন,
-“ছেলে কেমন লেগেছে সেটা বল?
-“ভালো, তবে ছেলের আমাকে পছন্দ হয়নি।”
আয়শা অবাক হলেন,
-“সেকি! ছেলে বলেছে তোকে?”
-“না তবে সোটা তার মুখ দেখেই বোঝা গেছে, দেখো কিছু সময় পর হয়তো ফোন করে না করে দেবেন।”
কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল কামিনী। এরপর নিজের রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো, এবং তার মুখে হানলো এক বক্র হাসি।
_____
রাতে খাবার খেয়ে কামিনী ঘুমাতে গিয়েছিলো। কিছুসময় পর তার দরজা ধাক্কানোর শব্দ হলো। কামিনী ঘুমু ঘুমু চোখে দরজা খুললো। আয়শা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। উনি ভিতরে ঢুকলেন।কামিনী ঘড়ির দিকে তাকালো। ১২ঃ৩৭ বাজে। কাঁচা ঘুম ভাঙায় বিরক্ত হলো সে। মায়ের দিকে চাইলে, আয়শা উৎফুল্ল হয়ে বলেন,
-“অয়নের মা ফোন করেছিলো একটু আগে।
কামিনীর বিরক্তি যেন বাড়লো,
-“তো কি হয়েছে?”
-“তো কি হয়েছে মানে? ওনারা বিয়েতে রাজি, কাল আংটি পরাতে আসবে আর বিয়ের ডেট ফাইনাল হবে।”
চলবে??
#প্রেমাচ্ছন্ন_সেই_বিকেল
#ফারহানা_চৌধুরী
#পর্বঃ১