প্রেমাচ্ছন্ন সেই বিকেল #ফারহানা চৌধুরী #শেষপর্ব

0
20

#প্রেমাচ্ছন্ন সেই বিকেল
#ফারহানা চৌধুরী
#শেষপর্ব [কামিনী ফুল….]

প্রিয় অয়ন,

কিছু কথা বলি। ‘ভালোবাসা’ শব্দটার উপর আমার বিশ্বাস অনেক আগেই উঠে গিয়েছিল। কেন? কারণটা আপনিও জানেন। বাবা-মায়ের সম্পর্কের পরিণতি দেখে আমি না ভয় পাই। খুব ভয় পাই। এজন্য কখনও কোনো সম্পর্কে আমি জড়াইনি। প্রেমের সম্পর্কের উপর ভয়টাও আমার বাড়ে যখন আমি আমার বন্ধুদের সম্পর্কে অবস্থা দেখি। ইউ নো টুয়েন্টি টুয়েন্টি ফোর লাভ! এই জেনারেশনের প্রেম না প্রেমময়ের চেয়ে টক্সিক বেশি। আমার ফ্রেন্ডরাই রেফারেন্স হিসেবে পারফেক্ট। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম আমি কোনোদিন আসল ভালোবাসাটা পাবো না। পাবো কিভাবে? আসল ভালোবাসা কি আদেও আছে? তবে খুব নিদারুণভাবে আমি ভুল প্রমানিত হলাম। আপনি করলেন। আমি জানিনা কিভাবে যেন আমি আপনার প্রেমে পড়ার সাহসটা করেই ফেললাম। আপনার কেয়ারিং সাইড, আপনার কথার ধরন এভ্রিথিং! সব ভালো লাগলো আমার। অয়ন আমি বোধহয় আপনার প্রেমে এবার সত্যিই মরলাম! সামনাসামনি বলার সাহসটা করতে চেয়েছিলাম অনেকবার। পারলাম না। তাই এভাবে বললাম। অয়ন। আপনাকে ধন্যবাদ। আমার সাদাকালো জীবনে রঙিন আলো ফোটানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমাকে ভালোবাসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমাকে বিয়ে নিয়ে, ভালোবাসা নিয়ে ভুল ধারণা ভাঙানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ অয়ন।

ইতি,
আপনার কামিনী ফুল।

অয়ন অবাক হয়ে চিঠিটা শেষ করলো। চোখ জ্বালা করছে। কান্না পাচ্ছে কেন আজ এত? অনেক আকাঙ্খিত ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই কি এত আনন্দ? কামিনী তাকে এভাবে কনফেস করবে সেটা আসা করেনি। ও একটা শাল নিয়ে রুমের বাইরে এলো। ছাদে গেলো।

কামিনী দাড়িয়ে আছে। পিছন থেকে গিয়ে ওর গায়ে শাল জড়িয়ে দিলো। কামিনী তাকালো। চোখ সরিয়ে আবার সামনে তাকালো। অয়ন ডাকলো,
-“কামিনী।”

কামিনী হাসলো একটু। তাকালো না। অয়ন আরো একটু পাশ ঘেসে দাড়ালো। মাথা চুলকে ঘাড়ের পেছনে হাত রাখলো। এরপর সোজা দাড়ালো কামিনীর সামনে। কামিনী এবার তাকালো। অয়নের চোখে। সেই বাদামী মণিতে। যা তাকে বরাবর আকর্ষণ করতে সক্ষম। অয়ন নজর গাঢ় করলো। হালকা কন্ঠে বলল,
-“ভালোবাসো আমায়?”

কামিনী চোখ সরালো। বলল,
-“কে জানে।”
-“এই মেয়ে! নিজের কথা নিজে জানো না?”
-“জানি তো।”
-“তো বলো।”
-“কি বলবো?”
-“বলো, ভালোবাসি।”
-“আচ্ছা।”
-“কি আচ্ছা?”
-“চা খাবে?”
-“এখানে চায়ের কথা বলছো কেন?”
-“কারণ, চা আমার পছন্দ!”

অয়ন হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কামিনী হাসতে হাসতে চলে গেলো। অয়ন মাথায় হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বিরবির করলো,
-‘এই মেয়ে শুধরানোর না।”

____
বারান্দায় বসে ছিলো। অয়ন এলো পাশে বসলো। গলা খাঁকারি দিলো। কামিনী তাকালো। বলল,
-“কি?”
-“ঘুরতে যাবা?”
-“যাওয়া যায়।”

____
বিকেলে পার্কে বসেছিলো কামিনী। ঘুরতে এসেছে। অয়ন আইসক্রিম নিয়ে এলো। কামিনীর হাতে দিলো একটা, নিজে নিলো একটা। কামিনী বলল,
-“আচ্ছা অয়ন। আমাকে কেন বিয়ে করতে চেয়েছিলে তুমি? আমি এতবার না করার পরেও।”

-“আমি নিজেও জানিনা। তবে তোমার প্রতি আমার কিউরিসিটি ছিলো। যখন বলেছিলে তোমার বিবাহভীতি আছে, তখন আই ওয়ান্টেড টু নো কেন তোমার এই ভয়। এই আগ্রহ থেকেই মেবি আই সার্টেড টু ফল ফর ইউ।”

কামিনী বোঝার মত মাথা নাড়ালো। খেতে গিয়ে কিছুটা আইসক্রিম মুখে লাগলো কামিনীর। অয়ন মুছে দিলো সেটা টিস্যু দিয়ে। কামিনী হেসে ফেললো। এইজন্য ছেলেটাকে ভালোলাগে। এত কেয়ারিং!

____
সময় গড়ালো নিজের মতো। একবছর পেরিয়েছে। আজ ১৫ জুলাই। একবছর আগে ঠিক এইদিনে কামিনী-অয়নের বিয়ে হয়ছিলো। অয়ন নিজের কামিনী ফুলকে পেয়েছিলো তার জিবনে। নিজের স্ত্রী রুপে।

___
রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে বারান্দায় বসেছিলো কামিনী। চা খাবে বলেছিলো অয়নকে, অয়ন চা বানাচ্ছে। চা নিয়ে একটুপর অয়ন এলো। পাশে বসলো কামিনীর। চা দিলো ওর হাতে। কামিনী নিলো সেটা। চায়ে চুমুক দিলো। প্রশংসা করলো অয়নের। ও সত্যিই চা টা বেশ বানায়। চা ভক্ত মানুষ বলে কথা, চা বানাতে পারা তার জন্য মাস্ট! কামিনী কথাটা ভেবে হেসে ফেললো। অয়ন কামিনীর হাত ধরলো। আঙুলের মাঝে আঙুল ছোঁয়ালো। হাসলো একটু। দুজন আকাশ দেখছে। আজ বোধহয় পূর্ণিমা। চাঁদ পুরো উঠেছে। মেঘের আড়াল থেকে উকি দিচ্ছে। এত সুন্দর দেখতে চাঁদ! কামিনী মুগ্ধ হতে বাধ্য। অয়নকে উৎফুল্ল হয়ে বলল,
-“দেখো চাঁদটা৷ কতো সুন্দর তাই না?”
-“হ্যাঁ সুন্দর। ”

অয়ন কামিনীর দিকে তাকালো। হালকা ওর দিকে ঝুঁকে হেসে কানে ফিসফিস করে বলল,
-“তবে আমার কামিনী ফুলের থেকে না। আমার কামিনী ফুল আমার জীবনের চাঁদ।”

কামিনী ছলছল চোখে তাকালো। অয়ন হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে সম্মোহনী গলায় বলল,
-“চাঁদের তুলনা করা যায়, আমার কামিনী ফুলের না। চাঁদ পরনির্ভরশীল তবে আমার কামিনী না। আমার কামিনী ফুল সুন্দর, সে মিষ্টি।”

~~সমাপ্ত~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here