#প্রেমাচ্ছন্ন_সেই_বিকেল
#ফারহানা_চৌধুরী
#পর্বঃ২
-“তো কি হয়েছে মানে? ওনারা বিয়েতে রাজি, কাল আংটি পরাতে আসবে আর বিয়ের ডেট ফাইনাল হবে।”
-“মানে?! ওদের পছন্দ কিভাবে হলো? ”
কামিনী ঘুম যেন আকাশে পালালো। আয়েশা বললেন,
-“পছন্দ না হওয়ার কি আছে? আমার মেয়ে কোনদিকে কম?”
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন তিনি। এরপর কিছুসময় কথা বলে নিজের রুমে ঘুমোতে চলে গেলেন। কামিনী দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসে। ও মাথা চেপে ধরলো রাগে। ও তো অয়নকে বিয়েতে না করেছিলো, তবে?
____
পরদিন সন্ধ্যায় অয়ন ও তার পরিবার এলো কামিনীর বাড়িতে। কিছুসময় কথাবার্তা হওয়ার পর আংটি পড়ানো হলো কামিনীকে। এখন বিয়ের ডেট ফাইনাল করার কথা হবে। তাই কামিনীর বোন কেয়া মায়ের কথামতো কামিনী ও অয়নকে ছাদে নিয়ে যায় নিজেদের মধ্যে কথা বলাতে।
কেয়া নিচে নেমে যেতেই কামিনী সরাসরি অয়নকে প্রশ্ন করে,
-” আমি বলেছিলাম আমি বিয়ে করতে চাই না আপনাকে, তারপরও আপনি বিয়েতে হ্যাঁ কেন বলেছেন?”
অয়ন বলল,
-“আপনাকেও আমি বলেছিলাম কামিনী আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই, তাই হ্যাঁ বলেছি।”
-“কিন্তু কেন?”
-“আমার চাওয়াটা কি কারণ হতে পারে না?”
-“আমার নিজেরও চাওয়া আছে।”
অয়ন তৎক্ষনাৎ কিছু বলল না। নিজের চোখের চশমাটা হালকা হাতে ঠিক করে তারপর বলল,
-“আপনি কি বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন কামিনী?”
কামিনী আকাশের দিকে তাকালো,
-“হ্যাঁ পাচ্ছি।”
-“কিন্তু কেন?”
কামিনী অয়নের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“পুরুষমানুষের প্রতি আমার বিন্দুমাত্র ঝোঁক নেই অয়ন।”
অয়ন অদ্ভুত চোখে কামিনীর মুখের দিকে চাইলো। কামিনী হয়তো ওই চাহনির মানে বুঝলো। তাইতো না চাইতেও হেসে ফেলল। এরপর বলল,
-“যেমনটা ভাবছেন তেমন কিছুইনা।”
অয়ন চোখ সরালো। বলল,
-“তাহলে?”
-“ব্যাপারটা কিছুটা ব্যাক্তিগত। বলতে চাইছি না।”
অয়ন কামিনীর দিকে সামান্য ঝুঁকে বলল,
-“ঠিক আছে। তবে এটা জেনে রাখুন বিয়েটা হবে কামিনী। আপনার সাথেই হবে!”
এরপর সরে এলো। পা বাড়িয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো। কামিনী ভ্রু কুঁচকে ওর যাওয়ার দিকে তাকালো।
_____
অয়ন ও কামিনীর বিয়ে ঠিক করা হলো সামনের মাসের ২৫ তারিখ। বিষয়টা শোনার পর থেকে কামিনী আরও রুষ্ট। মাকে বারবার বলছে তবুও আয়েশা মানছে না। তার কথা। ছেলে ভালো, পরিবার ভালো তবে সমস্যাটা কোথায়? কামিনী অতিষ্ঠ হয়ে আবারও একি কথা তুলল,
-“আমি চাইনা আমার ভাগ্য তোমার মতো হোক মা। তুমি জানো ছেলেদের আমি বিন্দুমাত্রও বিশ্বাস করি না।”
আয়েশা রাগলেন এবার,
-“তো কি বলতে চাইছো? সারাজিবন একা থাকবে? তুমি বাচ্চা নও কামিনী। এটা তুমি ভালো করেই জানো সব ছেলে-পুরুষ এক না। তাহলে পৃথিবীতে অন্যরা সংসার করতে পারতো না!”
আয়েশা নিজের ঘরে চলে গেলেন। কামিনীর রাগ এতো বাড়লো যে নিজের সামনে থাকা খালি গ্লাসটা নিচে ছুঁড়ে মারলো। কেয়া হঠাৎ কাচ ভাঙার আওয়াজে কেঁপে উঠল।
____
রাতে ফোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় অয়নের। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো নাম্বারটা। চিনলো না। বিরক্তি নিয়ে ফোন ধরলো অয়ন,
-“কে?”
-“আপনি যেই বিয়ে করার জন্য নৃত্য করছেন, সেই বিয়ের কনে আমি। চিনেছেন?”
কাঠকাঠ কন্ঠস্বর শুনে অয়নের ঘুম ঘুম ভাব কেটে গেলো তৎক্ষনাৎ। ও উঠে বসলো,
-“কামিনী?”
-“চিনেছেন? ভালো।”
-“আপনি এত রাতে?”
কামিনী দাঁতে দাঁত পিষলো,
-“প্রেমালাপ করবো বলে।”
অয়ন হাসলো,
-“আচ্ছা তাই?”
-“শুনুন অয়ন, আপনাকে লাস্টবার বলছি। বিয়েটা ভেঙে দিন।”
-“আপনি আন্টিকে কেন বলছেন না?”
-“মা শুনলে তো আর আপনাকে বলতাম না?”
অয়ন আবারো হাসলো। বলল,
-“দেখুন, আন্টিরও আমাকে পছন্দ হয়েছে। এজন্য আপনার কথা মানছেন না।”
-“আপনি বিয়ে ভাঙবেন কিনা?”
-“কতবার বলবো কামিনী? না না না।
রাগের তাড়নায় দাঁত দ্বারা ঠোঁট পিষে কামিনী বলল,
-“আই স্যয়ার অয়ন, আমাকে বিয়ে করলে আপনার লাইফ আমি তেজপাতা বানিয়ে ছাড়বো।”
-“লাইফ তেজপাতা বানান বা নিমপাতা। বিয়ে আমি আপনাকেই করছি।”
চলবে,,,