প্রেমাচ্ছন্ন সেই বিকেল #ফারহানা চৌধুরী #পর্বঃ৩ [প্রতিশ্রুতি!]

0
26

#প্রেমাচ্ছন্ন_সেই_বিকেল
#ফারহানা_চৌধুরী
#পর্বঃ৩ [প্রতিশ্রুতি!]

-“লাইফ তেজপাতা বানান বা নিমপাতা। বিয়ে আমি আপনাকেই করছি কামিনী।”

বলল অয়ন। কামিনী শুনলো। বিরক্ত হয়ে খট করে ফোন কেটে দিলো।অয়ন ফোন মুখের সামনে তুললো।
কিছু একটা ভাবলো সে। কামিনীকে মেসেজ করলো,
-“কালকে বিকেলে দেখা করতে পারবেন কামিনী?”

তৎক্ষনাৎ ওপাশ থেকে জবাব এলো,
-“না।”

অয়ন হেসে ফেললো। লিখলো,
-“প্লিজ। কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো।”

মিনিট বাদে জবাব এলো,
-“আপনি এমন কেনো?
-“কেমন?”
-“কেমন যেনো। যাই হোক, আমি আসবো না।”
-“কামিনী। প্লিজ।”

মেসেজটা সিন হলো না। অয়ন অস্থির হলো। মেয়েটা এমন কেনো?

____
একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে অয়ন ও কামিনী। কামিনী বারবার না করলেও এসেছে। মায়ের কারণে। সকালে অয়ন ফোন করে দেখা করার কথা বললে, কামিনী সোজা আবারও না করে দেয়। এরপর অয়ন আয়েশাকে ফোন করে। তাকে বললে তিনি জোর করেন কামিনীকে আসার জন্য। অয়ন যেন বিশ্বজয়ের হাসি দিলো। কামিনী বিরক্ত হয়ে বলল,
-“ক্লোজআপের এড দেখাতে ডেকেছেন?”
-“না তো। গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে ডেকেছি।”
-“তো বলুন। তাড়াতাড়ি।”
-“আপনার ১ঘন্টা সময় আমার জনয় বরাদ্দ করুন।”

কামিনী অয়নের দিকে তাকালো। ফোন টা তুলে টাইমার সেট করে অয়নের সামনে ধরলো। বলল,
-“হ্যাপি?”

অয়ন অবাক হয়ে ফোনের স্কিনে তাকালো, তারপর কামিনীর দিকে তাকালো,
-“আপনি টাইমার পর্যন্ত সেট করে নিলেন!?”
-“টাইম চলে যাচ্ছে, যা বলার বলুন।”

অয়ন হতাশ হলো। এরপর কিছু সময় নরমাল কথা বলল। তারপর প্রশ্ন করলো,
-“কামিনী। সত্যি বলুন না, কেনো আমার সাথে বিয়ে নিয়ে এত্ত ঝামেলা আপনার?”

কামিনী দমে গেলো। অয়ন তা দেখে বলল,
-“আপনি আমায় বলেছিলেন, আপনার বিবাহভীতি আছে। কিন্ত কেন? কি কারণে সেটা বলেননি। আজ কারণটা জানতে চাই।”

কামিনী লম্বা শ্বাস ফেলল। কেনো যেনো লোকটাকে ভরসা করতে ইচ্ছা হলো। নিজের বিষাক্ত জিবনের সকল কথা জানাতে মন চাইলো। কামিনী বলল,
-“বাবা-মায়ের প্রেমের বিয়ে ছিলো। বাবার বারি থেকে মানেনি। আলাদা একটা বাসায় থাকা শুরু করেছিলো ওনারা।প্রথমে নাকি সব ঠিক ছিলো। তবে হঠাৎ নাকি বাবা পালটে যায়। বাজে ব্যবহার শুরু করে মার সাথে। কারণ মা নাকি ছেলে জন্ম দিতে পারেনি তাই। এসব আমায় আমার মামা বলেছে। যদিও আমি মোটামুটি বড় হওয়ার পর থেকে দেখেছি বাবা সবসময় মাকে মারধর করতো। যেকোনো সময় হুটহাট। কারণ-অকারনে মেরেছে এমন। মা সব সহ্য করতো। কেন? সে নাকি ভালোবাসে বাবাকে। হাহ! ভালোবাসা!”

কামিনীর গলা ধরে আসছে। চোখটা জ্বলছে। অয়ন বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে। কামিনী আবার বলল,
-“বাবা কোনো কাজ করতো না, মা সংসার চালাতো। একদিন কাজের জন্য আর জ্যামে আটকা পরে মায়ের আসতে লেট হয়। সেদিন বাবা অনেক গালিগালাজ করছিলো। নোংরা কথা বলছিলো। আরে কাজ করে তো। তোমার মতো তো বেকার না। এটা বলতেই, হি স্ল্যাপড্ হার। তারপরও মা কিচ্ছু বলেনি। আমি রেগে যেতাম কিছু বলেনা কেনো মহিলা! সেদিন মাকে নিয়ে জোর করে মামার বাড়ি যাই। মামাকে সব বলি। উনি বলেন আইনত স্টেপ নিবেন।”

-“আগে কেনো আইনত স্টেপ নেননি? অয়ন দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন করে। কামিনী হাসে,
-“মায়ের জন্য! মা কোনোদিন পুলিশ অবদি ব্যাপারটা টানতে চাইছিলো না। সেদিনও অনেক বারণ করেন। তবে মামা শোনেনা। পরেরদিন থানায় যাবে ঠিক করে, আমিও যাবো মামার সাথে। বাট পরেরদিন বাসায় গিয়ে জানতে পারি বাবা মারা গেছে। ঘুমের মাঝে হার্ট অ্যাটাক হয়েছিলো।”

অয়ন নির্মিশেষ চেয়ে রইলো। কি বলবে বুঝতে পারছে না। কামিনী হাসলো,
-“জানেন, আমরা সেদিন না কাঁদলেও মা অনেক কেঁদেছিলো। অনেক! সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো ২বার।”

-“কামিনী। আন্টি অনেক ভালোবাসতো আঙ্কেলকে। উনি সেটা বুঝলো না।”
-“আমার আফসোস হয়। মার জন্য না। ওই লোকটার জন্য। এত্ত ভালোবাসা পেয়েও হারালো৷”

কামিনী আবারো হাসলো। বলল,
-“এইটাই মেইন রিসন বিয়ে না করতে চাওয়ার। আমি চাইনা আমার জীবন মার মতো হোক। বুঝলেন এবার আমার বিবাহভীতির কারণ?”
-“বুঝলাম।”

ধীর কন্ঠে থেমে থেমে বলল অয়ন। আস্তে করে টেবিলের উপর রাখা কামিনীর হাতটা ধরলো। সম্মোহনী কন্ঠে বলল,
-“আমি আপনার ভয়টা বুঝতে পারছি। তবে আমি আপনাকে কথা দিতে পারি কামিনী, যেই কারনে আপনি বিয়ে করতে এতো ভয় পাচ্ছেন। যা আপনার মার সাথে হয়েছে তা কোনোদিন আপনার সাথে হবে না। আমি হতে দিবো না।”

শেষের কথাটা বলে কামিনীর হাতে মৃদু চাপ দিলো অয়ন। কামিনী চেয়ে আছে অয়নের দিকে। অয়নের চোখের দিকে। খুব করে অয়নের কথাটা বিশ্বাস করতে মন চাইছে। তবুও একটা ভয় মনের মধ্যে তাকে গ্রাস করছে তীব্রভাবে। তার মাও তো ভালোবেসেছিলো, পরিবর্তে কি পেলো? কষ্ট, যন্ত্রণা, লাঞ্ছনা, অবহেলা এগুলোই তো। তাই না? কামিনীর সাথেও যদি এমন হয়। “সকল ছেলে-পুরুষ এক!” তার কথা যদি মিলে যায়? তখন কি হবে?

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here