#প্রেমাচ্ছন্ন_সেই_বিকেল
#ফারহানা_চৌধুরী
#পর্বঃ৪ [কামিনী ফুল..]
কামিনী বাড়ি এলো সন্ধ্যায়। এসে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। আয়েশা অবাক হলেন। কি হলো মেয়ের?
কামিনী দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আফসোস হচ্ছে। চরম আফসোস! কেন সে এতকিছু অয়নকে বলতে গেলো? ছেলেটাকে সে কদিন চেনে? বড়জোর দুসপ্তাহ! এরমধ্যে নিজের ব্যক্তিগত কথা ঐ লোকটাকে কেন বলতে গেলো সে? এবার যদি অয়নও তাকে সিমপেথি দেখায়? সিমপেথি দেখানোটা মোটেও পছন্দ না ওর। ওটাওতো এক ধরনের করুণা। তাই না? মাথা ধরে যাচ্ছে এসব ভাবতে ভাবতে। ঘুরে ফিরে এক কথাই মাথায় আসছে, “কেন বলতে গেলাম ওগুলো?”
_____
দরজার ঠকঠক আওয়াজে ঘুম ভাঙে অয়নের। দরজা খুললে মাকে দেখতে পেলো। কিছু বলার আগে কবিতা বেগম ধমক দিলেন ছেলেকে,
-“এত সময় লাগে দরজা খুলতে।”
বলতে বলতে ভিতরে ঢুকলেন তিনি। অয়ন দরজার কাছ থেকে সরে এসে বলল,
-“ঘুমাচ্ছিলাম মা। কেন কি হয়েছে? ”
-“ডেট কেমন গেলো? হু?”
মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন কবিতা। অয়ন লজ্জা পেলো। বলল,
-“মা!”
-“কি মা? বল।”
-“ভালো।”
লজ্জা পেয়ে জবাব দিলো অয়ন। কবিতা হেসে ফেললেন। কিছু একটা ভেবে অয়ন মার পাশে বসলো বিছানায়। বলল,
-“মা কিছু কথা বলার আছে।”
-“বল।”
অয়ন ধীরে ধীরে কামিনীর ব্যাপারে সব খুলে বলল। কবিতার কেমন যেন খারাপ লাগলো। উনি বললেন,
-“কামিনী তবে তোকে এই জন্য বিয়ে করতে চায়নি! দেখ, ওর ভয়টা ভুল না। ছোট থেকে ভায়োলেন্স সহ্য করেছে, দেখেছে। এমন ভয় স্বাভাবিক।”
-“হু।”
কবিতা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে হাসলেন। বললেন,
-“তুই ওর ভয় কাটাবি আস্তে ধীরে। ওকে তোর পাশে কম্ফোরটেবল ফিল করাবি। প্রথমে ওর ভালো বন্ধু হবি। ওকে বুঝতে চাইবি। হাসবেন্ড নাহয় পরে হলি?”
অয়ন মাথা নাড়লো। সায় দিলো। কবিতা বলল,
-“মেয়েটাকে সময় দে। সব ঠিকঠাক হবে।”
কিছু সময় থেমে উনি আবার বললেন,
-“কাল বিয়ের কেনা কাটা করতে যাবো। কামিনীদেরও ডেকে নে। ওর সাথে সময় কাটাতে পারবি ভালো।”
ছেলেটা মাথা চুলকে হাসলো। ইশ কি লজ্জা!
______
কর্কশ আওয়াজে ফোন বাজলো। কামিনী তাকালো সেদিকে। অয়ন! উফ! ছেলেটা কি ওর পিছু ছাড়বেনা? বিরক্তি চেপে ফোন তুলল কামিনী। কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে চঞ্চল কন্ঠ শোনা গেলো,
-“কামিনী! মিস করছি আপনাকে।”
কামিনী হতবাক হয়ে গেলো। “কে”,”কেমন আছেন” না জিজ্ঞেস করে এই ছেলে মিস করার কথা বলে! কামিনী ধীর কন্ঠে বলল,
-“আমি কি আপনার প্রেমিকা?”
-“না। আপনি আমার না হওয়া বউ।”
কামিনী বিরক্তির শ্বাস ফেলল,
-“এতরাতে ফোন করার কারণ?”
-“বললাম না? মিস করছি?”
-“হুম। বুঝলাম?”
-“কি বুঝলেন?”
-“আপনার একটা বউ দরকার। অতি শীঘ্রই।”
-“অবশেষে বুঝলেন আপনি? যাক ভালো। তবে একটা কাজ করি কামিনী?”
-“কি কাজ?”
-“বিয়ের ডেট পালটে দুসপ্তাহর মধ্যে আনি?”
কামিনী অবাক হয়ে শুধালো,
-“কেনো?”
-“আমার কামিনী ফুলকে ছাড়া যে বড্ড একা লাগছে। তাকে বউ সাজে দেখতে চাই আমি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এখন আপনি বলুন, আমার কামিনী ফুলকে বউ সাজে দেখার অনুমতি পাবো কি?”
কামিনী খট করে ফোন কেটে দিলো। টেবিলের উপর ফোন রেখে দিলো। ধীরে ধীরে বুকের বা পাশ চেপে ধরলো হাত দিয়ে। বুকের ভেতর ধরাস ধরাস করছে। ছেলেটার কথায় কি আছে? কামিনী দূর্বল হচ্ছে ছেলেটার প্রতি প্রচন্ড ভাবে। ছেলেটা এভাবে কেন কথা বলে? সে কি জানেনা, তার কথায় কামিনী মরে যায়? তার কথা কামিনীকে দূর্বল করে দিচ্ছে প্রবলভাবে? জানেনা?
____
কামিনীর হুট করে ফোন কাটায় অয়ন অবাক হলো। কামিনী ফোন এভাবে কেনো কেটে দিলো? মুখের সামনে ফোন ধরলো। কামিনীকে মেসেজ করলো,
-“কামিনী, কিছু হয়েছে? ফোন কেটে দিলেন এভাবে?”
মেসেজ সিন হলো না। অয়নের অস্থিরতা বাড়লো ক্রমশ। মেয়েটা এমন কেনো? তাকে পাগল করে দিচ্ছে। কখনো পাত্তা দেয় তো কখনো একদমই না? কি শুরু করলো মেয়েটা?
চিন্তায় অস্থির অয়ন বুঝতেই পারলো না, সে তার সম্মোহনী কথার মাধ্যমে অপর পাশের ব্যক্তিকে অস্থির করে তুলেছে তীব্রভাবে!
চলবে,,,