প্রেমাচ্ছন্ন সেই বিকেল #ফারহানা চৌধুরী #পর্বঃ৫ [এ কেমন অসুখ..!]

0
26

#প্রেমাচ্ছন্ন সেই বিকেল
#ফারহানা চৌধুরী
#পর্বঃ৫ [এ কেমন অসুখ..!]

পরেরদিন কামিনী ও অয়নের দেখা হলো শপিংমলে। কবিতা নিজে ফোন করে কামিনীকে বলেছে কেনাকাটা করতে যাবার কথা। প্রথমে কামিনী কিছু কাজের ছুতো দেখে এড়িয়ে যেতে চাইলেও আয়েশা ও কবিতা একদম যেন চেপে ধরে তাকে। বাধ্য হয়ে এলো সে।

অন্যরা যখন শপিং-এর কাজে ব্যস্ত কামিনী তখন সবার শেষে একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলো একা। শপিং করাটা ওর কাছু অনেক পীড়াদায়ক। ভীড় অপছন্দ করে ও। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা হয়ে যায় তবে, কোনোকিছু পছন্দ হয় না। এই কারণে আরও বেশি পছন্দ।

ধীর পায়ে এগিয়ে এসে কামিনীর পাশে দাঁড়ায় অয়ন। কামিনী টের পেলো। তাকালো না৷ একটু সরে দাঁড়ালো। অয়ন তা দেখে ডেকে উঠলো,
-“কামিনী।”

আশ্চর্য! এত গম্ভীর কেন ছেলেটার গলা? কামিনী অবাক হলেও প্রতিক্রিয়া দেখাতে নারাজ বলে, চেপে গেলে। আস্তে করে শুধু জবাব দিলো,
-“হু?”

এবার অয়ন কামিনীর দিকে তাকালো। স্বরের পরিবর্তন ঘটলো না। একই স্বরে কামিনীর নিকট প্রশ্ন ভেসে এলো,
-“কাল ফোন কেন কেটে দিয়েছিলেন ওমন করে?”

ব্যাস! চোখ-মুখ খিঁচে ফেললো কামিনী।
ভয় সত্যি হলো তবে। এই প্রশ্নের স্বীকার হবে না বলে এখানে না আসার জন্য মিথ্যা বাহানা দিলো। বাধ্য হয়ে এসেও অয়নকে এড়িয়ে চললো। তারপরও প্রশ্নটা শুনতেই হলো। স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
-“এমনি।”
-“এমনি?”
-“হু।”

অয়ন কথা কাটালো,
-“এখানে কেনো? সামনে চলুন।”
-“হুম চলুন।”

____
অয়ন নিজে পছন্দ করে কিনেছে বিয়ের শাড়ি কামিনীর জন্য। কামিনী মনে মনে অয়নের পছন্দের তারিফও করলো। অয়ন কামিনীর দিকে হালকা ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,
-“এবার আপনি আমার পাঞ্জাবি ঠিক করবেন।”

কামিনী অবাক হয়ে বলল,
-“আমি কেনো? আপনার পাঞ্জাবি আপনি পছন্দ করেন।”
-“উফ কামিনী! একটু তো রোমান্টিক হোন। ওয়াইফ হাজবেন্ডের পাঞ্জাবি চুজ করবে এতে প্রবলেম কই?”

হতবাক হয়ে গেলো কামিনী। কি বলে এই লোক? পাগল হলো নাকি? ও বলল,
-“বিয়েটা এখনো হয়নি।”
-“হবে তো!”

অয়ন সামনে হেঁটে গেলো। কামিনীও গেলো।

_____
১৪তারিখ আজ। গায়ে হলুদ কামিনী আর অয়নের। ঘরোয়া আয়োজন করা হয়েছে। ছাঁদে কামিনীকে নিয়ে বসানো হয়েছে। এখানে হলুদ মাখানো হবে। মেয়েটার পরনে কাঁচা হলদে শাড়ি, হলুদ গোলাপের গহনা। মুখে হালকা প্রসাধনীর ব্যবহার। না, ভালোই লাগছে তাকে দেখতে। হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য মানানসই সাজ।

কেয়া কামিনীর বেশ কয়েকটা ছবি তুলল। এরপর বেছে বেছে কয়েকটা ছবি অয়নকে পাঠালো। অয়ন তাকে আগেই বলে রেখেছিলো, গায়ে হলুদের ছবি যেন কেয়া তাকে পাঠায়৷ অবশ্য এটা কামিনীর অগোচরেি রইলো। তার মোটেও পছন্দ না অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা বা কাউকে পাঠানো। কারোর কাছে নিজের ছবি থাকলে কেন যেন মনের ভেতর খচখচ করে। এইজন্য ব্যাপারটা গোপন করলো কেয়া। জানতে পারলে কামিনী লঙ্কাকাণ্ড বাঁধাতও দ্বিধা করবে না।

_____
অয়ন ছবিগুলো দেখলো। মুগ্ধ হলো মেয়েটার রুপে। এত সুন্দর কেন মেয়েটা? একবার দেখলে বারবার দেখতে কেন মন চায়?? উত্তর হাতড়িয়ে উত্তরের দেখা মিললো না। নাহ! মেয়েটা সত্যি তাকে পাগল বানাচ্ছে। এভাবে পারা যায়? ভেতর থেকে ক্রমশ অস্থির হচ্ছে সে। পাঞ্জাবির উপরের দুটো বোতাম খুলে, টেবিল হাতড়ে এসির রিমোট নিলো। পাওয়ার কমিয়ে দিলো। কি যে হচ্ছে তার সাথে!!

_____
কামিনী অনুষ্ঠান শেষে ফ্রেশ হয়ে রুমে এলো। বিছানায় বসলো। ফোন বেজে উঠলো। বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে ঘড়ির দিকে তাকালো। ১ঃ২৩বাজে। অনুষ্ঠান শেষ হতে দেরী হয়েছে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমাবে ভেবেছিলো। কথা বলতে মন চাইছে না আার, এমনিতেও ফটো তুলতে হাসি দিতে দিতে চোয়াল ব্যথা হয়ে গেছে। ফোন তুলল। চুপ থাকলো। অপাশ থেকে নরম স্বরে শোনা গেলো,
-“কামিনী ফুল।”

উফ! এই স্বর, এই কন্ঠ, এই মানুষটা ওকে মেরে ফেলবে! এত সুন্দর করে কেউ কিভাবে ডাকে? না ছেলেটাকে বারণ করতে হবে এভাবে যেন না ডাকে। মরে যাবেনা কামিনী?

অয়ন আবারও ডাকলো,
-“কামিনী।”
-“বলুন।”
-“ঘুমিয়ে গেছো?”
-“নাহ।”
-“জানালাটা খুলবে?”

কামিনী বিমূঢ় হয়ে গেলো। জানালা খুলবে মানে! অয়ন কি এত রাতে এখানে? ছেলেটা কি পাগল হলো?

কামিনী দরজা খুললো দ্রুত হাতে। সত্যিই! অয়ন এসেছে। বাইরে দাড়িয়ে। ল্যাম্পোস্টের আলোয় তার মুখায়ব স্পষ্ট। কামিনী অবাক হয়ে অয়নকে দেখলো। ফোন কানে লাগিয়েই বলল,
-“আপনি এত রাতে এখানে কেন?”
-“এই এদিকে এসেছিলাম বন্ধুর কাছে।”

অয়ন কি সত্যি বলল? একদম না। মিথ্যে বলেছে। সে তো তার কামিনী ফুলকে দেখতে এসেছে। নয়ত কি রাত১ঃ২৩ না ১ঃ২৪মিনিটে ফোন করে বলে জানালা খুলতে? কামিনী কি বোঝে না তা? খুব বোঝে। তাইতো হেসে ফেললো ও। বলল,
-“পাগলামিটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না?”

অয়ন মাথা চুলকে হেসে ফেললো। মেয়েটা বুঝে ফেললো তবে! অয়ন বললো,
-“তা একটু হচ্ছে। ”
-“যাক বুঝেছেন তবে, তো এখন পাগলামিটা তাহলে বন্ধ করুন?”

অয়ন কামিনীর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো। বলল,
-“এভাবে তো পাগলামি যাবে না কামিনী। আমার ঔষধ দরকার।”

-“তবে ঔষধ নিন।”

-“সেটাই তো বলছি। আমার ঔষধ দরকার। আর এটা তো নরমাল ঔষধ না, এটা হচ্ছে মানবঔষধ! আর সেই মানবঔষধের নাম কি জানেন?”

-“কি?”

অয়ন দূর থেকে জানালায় দাড়িয়ে থাকা কামিনীকে দেখলো। দোতলার সেই জানালায় দাড়িয়ে থাকা আকর্ষণীয় সুন্দর রমনীর উদ্দেশ্যে ফোনে বাণী ছুঁড়লো,
-“কামিনী ফুল।”

সেই মাধুর্যপূর্ণ কথায় কিছু একটা হলো। কি হলো? জানা নেই। তবে, কামিনী সহসাই থমকালো। ছেলেটা কি এবার সত্যি তাকে জানে মারার পরিকল্পনা করলো?

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here