প্রেমাচ্ছন্ন সেই বিকেল #ফারহানা চৌধুরী #পর্বঃ৬ [বিয়ে….]

0
25

#প্রেমাচ্ছন্ন সেই বিকেল
#ফারহানা চৌধুরী
#পর্বঃ৬ [বিয়ে….]

আজ কামিনী ও অয়নের বিয়ে। এখন সন্ধ্যা। কামিনীকে সাজানো হচ্ছে। সাদা বেনারসি শাড়ি, গায়ে সোনার হালকা গহনা। পিঠ সমান চুল ছেড়ে দেওয়া, মাথায় লাল দোপাট্টা। মুখে হালকা সাজ। সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। বাইরে গুঞ্জন শোনা গেলো,
-“বর এসেছে, বর এসেছে।”

সকলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। বধু সাজে আয়নার সামনে বসে থাকা মেয়েটি নিজেকে আয়নায় দেখলো। এরপর জানালার দিকে তাকালো। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। এখনতো শীতকাল। তারপরও বৃষ্টি। কামিনী বাইরে চেয়ে রইলো। একটু পর বিয়ে হয়ে যাবে। ভয় হচ্ছে ওর। ভাগ্যটা যদি মায়ের মতো হয়? আশা রাখে না কামিনী কখনোই। বেশিরভাগ সময় যেই জিনিস নিয়ে আমরা বেশি আশা রাখি তা নেগেটিভ রেজাল্ট দেখায়। এইভয়ে আশা রাখার পারদ একদম নিচে নেমে গেছে কামিনীর। তার মাও তো কত আশা নিয়ে বিয়ে করেছিলো। ভালোবাসা পাবার আশায়। পেলো কি? না। তার সাথেও এমন হবে না তার নিশ্চয়তা কি? ভেবে পেলো না। শেষ সময়ে এসে ভয় বেড়ে গেছে কয়েক গুন। গলা শুকিয়ে আসছে। সেন্টার টেবিলের থেকে গ্লাস নিয়ে পানি খেলো ও।

_____
ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে হবে। কামিনীর আয়োজনে বিয়ে পছন্দ না। কারণ আছে যদিও। তার কথা, এতো আয়োজন করে অনুষ্ঠান হবে। বাইরের লোকজনদেরকে দাওয়াত দিবে। তারা সামনে যতই ভালো বলুক, পিছনে নিন্দা করা ছাড়বেনা। উপরন্ত তারা বিয়েতে আসে এমন সাজে যেন বিয়েটা তাদের। তখন লোকজনের আকর্ষণ কনের থেকে তাদের উপর বেশি যায়। এটা কামিনীর আরো অপছন্দ। কেন? কনের নিজের স্পেশাল দিনে সে সব আকর্ষণ ডিজার্ভ করে। অন্যরা না।
এরচেয়ে খুব কাছের কয়েকজন আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করা সবচেয়ে বেটার।

এত সকল যুক্তির কাছে হেরে আয়েশা কবিতার সাথে কথা বলেন, ভেবেছিলেন কবিতা নারাজ হবেন। আশ্চর্যজনক ভাবে কবিতা নিজেও কামিনীর সাথে একমত হন। ফলস্বরূপ ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে হবে।

____
কামিনী ও অয়নকে পাশাপাশি বসানো হয়। বিয়ে পড়ানো শুরু হয়। কামিনীকে কবুল বলতে বলা হলো। কিছুটা সময় নিলো ও। মায়ের দিকে তাকালো। আয়শা টলমলে চোখে মাথা নাড়লেন। চোখের ইশারায় আশ্বাস দিলেন। কামিনী চোখ সরালো। বুকটা কেমন কাঁপছে। ভয়ে, উত্তেজনায়। অয়ন কি বুঝলো তা? কে জানে। তবে পাশ থেকে আড়ালে কামিনীর হাতে হাত রাখলো আলতো করে। সেই স্পর্শে যেন বলা আছে,
-“আমি আছি তো কামিনী ফুল।”

কামিনী নিজেকে শান্ত করলো। ধীর কন্ঠে থেমে থেমে বলল,
-“কবুল, কবুল, কবুল।”

‘আলহামদুলিল্লাহ’ শব্দে চারপাশ মুখরিত হলো। অয়ন মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করলো। আলতো হাসলো। আড়চোখে কামিনী তা দেখলো। হাসলো। তবুও ভয় যেন যাচ্ছে না।

অয়নকে কবুল বলতে বলা হলো। সেও আস্তে করে থেমে থেমে বলল,
-“আলহামদুলিল্লাহ কবুল, আলহামদুলিল্লাহ কবুল, আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”

আবারও ‘আলহামদুলিল্লাহ’ শব্দে চারপাশ মুখরিত হলো। মোনাজাত শুরু করলেন কাজি। মোনাজাত শেষ হলে, কবিতা মিষ্টি খাওয়ালেন আয়শাকে। কেয়া কামিনী ও অয়নকে মিষ্টি খাওয়ালো।

____
কনে বিদায়ের পালা এখন। আয়শা কাঁদছে, কেয়াও কান্না করছে। অস্বাভাবিক কিছু না। এতদিন যত্ন করে বড় করা মেয়েকে বিয়ে দিতে কষ্ট হবে পরিবারের তা স্বাভাবিক। কামিনী জড়িয়ে ধরলো তাঁদের। কান্না করতে বারণ করলো। আশ্চর্যজনক ভাবে সে কান্না করছে না। কেন? জানার আগ্রহ হলো অয়নের। সব মেয়েরাই কান্না করে তো, তাহলে কামিনী কেন কান্না করছে না?

____
কিছু সময়পর গাড়িতে উঠলো কামিনীরা। বর কনের জন্য আলাদা গাড়ি। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। বেশ কিছু সময় পার হলো। অয়ন ঘড়ি চেক করলো। ৯ঃ৫৫ বাজে। কামিনীর দিকে চাইলো একবার। ডাকলো,
-“কামিনী।”

কামিনী তাকালো। অয়ন বলল,
-“ক্লান্ত লাগছে?”
-“কিছুটা।”

অয়ন কামিনীর হাত ধরলো। আঙুলের সাথে আঙুল ছোঁয়ালো। বলল,
-“ভয় পাবেন না কামিনী। আমি আপনাকে কথা দিয়েছিলাম, আপনার সাথে তেমন কিছুই হবে না। আমি আমার কথা রাখতে জানি।”

কামিনী অয়নের দিকে তাকালো। ছেলেটা চোখে আশ্বাস দিলো। অয়ন হাতের বাঁধন শক্ত করলো। কামিনীর দিকে তাকিয়ে চোখে হাসলো।

____
বিছানায় কামিনী বসে আছে। দরজা খোলার শব্দ হলো। অয়ন
এলো। দরজা আটকালো। বলল,
-“ফ্রেশ হননি কেন?”
-“ফ্রেশ?”
-“হু। ক্লান্ত লাগছে আপনাকে। ফ্রেশ হয়ে নিন। ”

মাথা নাড়লো কামিনী। লাগেজ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। বেড়িয়ে এসে অয়নকে দেখলো না। ড্রেসিং-টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল খুলল। হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিলো। বিছানায় এসে বসতেই অয়ন এলো। বলল,
-“ঘুমিয়ে পড়ুন। রাত হচ্ছে অনেক।”
-“হু।”

বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লো দুজন। কামিনীর ভয় কিন্তু কাটেনি। অয়নকে এখনো পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি ও। অয়ন কি কিছু বুঝলো? মনে হয়। ডাকলো,
-“কামিনী।”
-“হু।”
-“ভয় পাচ্ছেন? বিশ্বাস হচ্ছে না আমায়?”

কামিনী চমকালো,
-“না তেমন না।”
-“ভয় পাবেন না কামিনী ফুল। একটু বিশ্বাস করতেই পারেন। হতাশ হবেন না।”

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here