#প্রেমাচ্ছন্ন সেই বিকেল
#ফারহানা চৌধুরী
#পর্বঃ৭ [চা নাকি তুমি??]
সকালের নাস্তা শেষে কামিনী রুমে এসে বসেছে। অয়নও তখন এলো। কামিনীকে জিজ্ঞেস করল,
-“বিকেলে ঘুরতে যাবেন?”
-“উমম্ ওকে।”
অয়ন হেসে বলল,
-“রেডি থাকবেন তাহলে।”
____
বিকেলে তারা ঘুরতে বেরোলো। কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে, একটা নদীর পাড়ে বসলো ওরা। অয়ন কামিনীকে বসিয়ে কোথায় যেন গেলো। কিছু সময় বাদে ফিরে এলো দুকাপ চা হাতে। মাটির ভাঁড়ে চা। কামিনীর পাশে বসে তার দিকে একটা চায়ের ভাঁড় বাড়িয়ে বলল,
-“চা?”
কামিনী নিলো সেটা। দুজনে চুপ। সময় গড়ালো। এক সেকেন্ড, এক মিনিট। প্রায় তিন মিনিটের মাথায় অয়ন জিজ্ঞেস করল,
-“কেমন লাগছে?”
-“কোনটার কোথা জিজ্ঞেস করলেন? চা নাকি পরিবেশ?”
অয়ন নিজের মাথা সামান্য কামিনীর দিকে হেলিয়ে বলল,
-“চা, পরিবেশ সাথে আপনার পাশে বসে থাকা আপনার বরটাকেও। কেমন লাগছে?”
কামিনী তাকালো অয়নের দিকে। সে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। কামিনী হাসলো,
-“ভালো। স্পেসালি চা-টা খুব ভালো। খু–উ–ব।”
টেনে টেনে শেষের শব্দটা বলল কামিনী। অয়ন বড়ো দুঃখী ভাব দেখিয়ে বললো,
-“ভাবলাম আপনার বেচারা বরটাকেও কমপ্লিমেন্ট দিবেন, তা আর দিলেন না!”
থামলো অয়ন। হেসে ফেললো। আবার বললো,
-“তবে যাই বলুন। চা-টা সত্যিই ভালো। যতই হোক মাটির ভাঁড়ে চা! চা হচ্ছে আমাদের বাঙালির ইমোশন বুঝলেন?”
-“তা ঠিক।”
-“আমি নিজের সম্পত্তির ভাগ দিতে পারলেও, নিজের চায়ের ভাগ কাউকে দিতে পারবো না।”
দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল অয়ন। কামিনী অবাক হয়ে বলল,
-“আপনার তো দেখছি সম্পত্তির চেয়ে চায়ের প্রতি ভালোবাসা বেশি মশাই।”
-“অবশ্যই!”
একটু থেমে আবারো কামিনীর দিকে হালকা ঝুকে বলল,
-“তবে আপনি চাইলে আমার চায়ের দু-তিন সিপ আমি আপনার জন্য বরাদ্দ করতে পারি। দেখুন কারোর জন্য আমি নিজের চায়ে ভাগ দিতে না পারলেও, ফর ইউ আই ক্যান স্যাক্রিফাইস মাই বিলাভড্ টি!”
হাসলো অয়ন। পরপর চায়ের কাপে চুমুক দিলো। কামিনী ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকিয়ে আছে। তা দেখে অয়নের হাসির মাত্রা বাড়লো।
_____
-“কি করেন?”
আচমকা অয়নের প্রশ্নে পিছু ফিরলো কামিনী। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো সে। চাঁদ দেখছিলো। চাঁদ দেখতে তার ভালো লাগে। শীতে যেন একটু বেশিই ভালো লাগে। অয়নকে দেখে বলল,
-“কি আর করবো বলুন!”
অয়ন বারান্দায় ঢুকলো। ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কামিনী বলল,
-“ভালো লাগছে না কিছু। আবার ঘুমও আসছে না যে ঘুমাবো।”
-“মুভি দেখবেন?”
উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল অয়ন। কামিনী রাজি হলো,
-“দেখা যায়।”
____
অয়ন নিজের ল্যাপটপ কামিনীর কাছে দিয়ে মুভি খুজঁতে বলে রুমের বাইরে গেলো। পপকর্ন ভাজতে।
রান্না ঘরে শব্দ পেয়ে কবিতা সেখানে গিয়ে দেখলো অয়নকে। অবাক হলেন তিনি। এত রাতে এখানে কি করে ছেলে?
ডাকলেন উনি,
-“এত রাতে তুই পপকর্ন কেন ভাজছিস?”
মায়ের ডাকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো অয়ন। হেসে বলল,
-“মুভি দেখবো মা। শুধু শুধু বসে মুভি দেখতে মজা নেই। ইউ নো না?”
কবিতা হাসলেন। সামান্য কেশে দুষ্টুমির ছলে বললেন,
-“এহেম এহেম! মুভি নাইট উইদ ইউর ওয়াইফ? হুম?”
-“হুম।”
অয়নও হেসে বললো৷ কবিতা বলল,
-“গুড! স্পেন্ড মোর টাইম উইদ হার। ওর ভয় কাটবে। এন্ড আই বিলিভ, তুই ওর ভয়কে ভুল প্রমান করবি।”
-“আ’ম ট্রায়িং মা। গড নোস আমি ওর কতটা ভয় কাটাতে পারবো বাট লেটস্ সি।”
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন কবিতা। কোনো বাচ্চাদের সামনেই ভায়োলেন্স ইউজ করা উচিত না। বাবা-মা ঝগড়া করছে, একে অন্যকে গালিগালাজ করছে। এগুলো করা প্রথমত উচিত না। দ্বিতীয়ত বাচ্চাদের সামনে করা তো মোটেও উচিত না। তারা ছোটবেলা থেকে এগুলো দেখবে, তখন তাদের কাছে এটা নরমাল লাগবে। অথচ এটা নরমাল না। কোনো বাবা-মায়ের উচিত না বাচ্চাদের সামনে গালিগালাজ করা, সেটা যাকেই হোক। নিজের ওয়াইফকে মারাও উচিত না, যেটা অনেক পুরুষ নিজের পুরুষত্বের দোহাই দিয়ে করে। এসব থেকে সকলের বিরত থাকা উচিত!
____
অয়ন রুমে এলো পপকর্ন ও চিপস্ নিয়ে। কামিনী অনেক খুঁজে একটা মুভি বের করলো। অয়ন পাশে বসলো। মুভি শুরু হলো। প্রায় একঘন্টা মুভি চলার পর এমন কিছু সিন আসে যা দেখে কামিনী অস্বস্তিতে পড়ে৷ অয়ন স্ক্রিন পজ করে। কামিনীর দিকে তাকায় আড় চোখে। মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে কেমন। অয়ন অস্বস্তি বোধ করে। বলে,
-“অন্য কোনো মুভি দেই?”
কামিনী তড়িঘড়ি করে মাথা নাড়ে। অয়ন মুভি চেঞ্জ করে। কিছু সময় যাওয়ার পর অয়ন কামিনীর দিকে তাকালো। যাহ! মেয়েটা ঘুমিয়ে গেলো?! হেড-বোর্ডে হেলান দিয়ে কামিনী ঘুমিয়ে আছে। অয়ন ল্যাপটপ বন্ধ করে। আস্তে করে সব গুছিয়ে ফেলে। শব্দ না করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। মেয়েটার ঘুম ভেঙে যেতে পারে।
____
সব গুছিয়ে অয়ন বিছানার অন্য পাশে বসলো। কামিনী ঘাড়ের নিচ থেকে হাত গলিয়ে কাঁধ আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। আস্তে করে তাকে বালিশে শুয়িয়ে দিলো। কামিনী নড়েচড়ে উঠলো। তারপর অয়নের হাত জড়িয়ে ধরলো ঘুমের মধ্যে। যার ফলে সে কামিনীর দিকে খানিকটা ঝুঁকে গেলো। হাত চাইলেও সরাতে পারছে না। নিজেকে সামলালো ও। সেভাবেই শুয়ে পড়লো। মেয়েটাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। বারকয়েক কামিনী নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। অয়ন কামিনীর কপালে গাঢ় চুমু খেলো। কামিনীর ঘুম পাতলা হচ্ছে দেখে সরে এলো। চোখ বন্ধ করলো। নাহ! মেয়েটা প্রচন্ড জ্বালাচ্ছে তাকে। শান্তি দিচ্ছে না একদম।
কিছুসময় পর কামিনী চোখ খুললো। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। বালিশ ভিজলো সে জলে। ছেলেটা এমন কেন?
চলবে।