#প্রেমাচ্ছন্ন সেই বিকেল
#ফারহানা চৌধুরী
#পর্বঃ৮ [ফুল….]
-“তুমি!”
লোকটা এগিয়ে এলো কামিনীর দিকে। ক্রোধ নিয়ে বলল,
-“তোর জন্য! তোর জন্য আয়েশার থেকে আমি আলাদা হয়েছি।”
কামিনী তীব্রবেগে মাথা নাড়লো। বলল,
-“না! আমার জন্য না। তুমি নিজেই মাকে কত কষ্ট দিতে। এখানে আমার দোষ কোথায়?”
লোকটা যেন এবার ক্রোধে ফেটে পড়লো,
-“তুই যদি সেদিন আয়েশাকে নিয়ে ওর ভাইয়ের বাড়ি না যেতি, আজ আমারা এক থাকতাম!”
-“আমার দোষ নেই এখানে, তোমার সব দোষ। তুমি মাকে মারতে, কষ্ট দিতে। তোমার দোষ সব।”
বিরবির করতে করতে আচমকা ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে কামিনী। ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে গেছে। শব্দ পেয়ে অয়নের ঘুম ভেঙে গেলো। কামিনীকে এভাবে দেখে অবাক হলো। হাত বাড়িয়ে টেবিল-ল্যাম্পটা জ্বালালো। উঠে বসে, কামিনীকে দেখলো। জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে মেয়েটা। অয়ন বলল,
-“খারাপ সপ্ন দেখেছো কামিনী? ঠিক আছো?”
কামিনী অয়নের দিকে তাকালো। মাথা নাড়ালো। অয়ন পাশের টেবিলের উপরের পানির গ্লাসটা নিলো। কামিনীকে দিলো। কামিনী পুরো পানিটা খেলো। অয়ন কামিনীর মাথায় হাত রেখে বলল,
-“ঘুমিয়ে পড়ো। এভ্রিথিং ইজ ফাইন।”
কামিনী শুয়ে পড়লো। ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে গেলো। অয়ন কামিনীর ঘুমিয়ে পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলো। তারপর নিজেও ঘুমালো।
____
কামিনী চা বানাতে এলো সকালে নিজের জন্য। কবিতা মাত্র গুম থেকে উঠে নিচে নেমেছে। কামিনীকে রান্নাঘরে দেখে এগিয়ে এলো,
-“কি করো কামিনী?”
-“এইতো চা বানাচ্ছি।”
-“তুমি কেন বানাচ্ছ? বুয়াকে বলতে বানিয়ে দিতো। তুমি যাও বসো, আমি বলছি তোমায় চা দিতে। যাও।”
কামিনী কিছু বলতে গিয়েও বলল না।
____
চা নিয়ে ছাদে দাড়িয়ে আছে কামিনী। আচমকা পিছন থেকে কেউ গায়ে শাল জড়িয়ে দিলো। কামিনী তাকালো সেদিকে। অয়ন দাড়িয়ে বলল,
-“ছাদে আসছো ভালো কথা। শীতের মধ্যে শাল আনবে না? ঠান্ডা লাগবে তো পরে।”
বলে নিজের হাতের চায়ের কাপে চুমুক দিলো। কামিনী কিছুসময় চুপ থাকলো। এরপর বলল,
-“অয়ন, বেশি এটাচড্ হবেন না আমার সাথে। পরে পস্তাবেন।”
অয়ন হাসলো। কামিনীর দিকে এগিয়ে এসে বলল,
-“কামিনী। ওয়াইফ হোন আমার। আপনার সাথে মাত্রাতিরিক্ত এটাচড্ হলেও কোনো ক্ষতি আমি দেখছি না। তাই আমায় ওয়ার্ন করে লাভ নেই। আমি শুধরাবো না।”
অয়ন আরেকটু এগিয়ে এলো। তাদের মধ্যকার দুরত্ব খুবই কম। হঠাৎ ছেলেটাকে নিজের এতো কাছে দেখে কামিনী ভরকে গেলো। সরে যেতে গেলে অয়ন রেলিঙের উপর হাত রেখে তাকে বন্দি করলো দুহাতের মাঝে। কামিনী অয়নের চোখের দিকে তাকালো। সেই বাদামী মনির দিকে তাকালো। কত সুন্দর এই চোখ! এই চোখের মানুষটাকে তার মন দিতে ভয় হয়। খুব ভয় হয়! ছেলেটার দৃষ্টি দেখে কামিনীর কিছু একটা হলো।
-“ওভাবে তাকাবেন না।”
মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল কামিনী। অয়ন আরো গভীর দৃষ্টি ফেললো কামিনীর চোখে। বরাবরের মতো নিজের সম্মোহনী গলায় জিজ্ঞেস করল,
-“কিভাবে?”
উত্তর দিতে পারলোনা কামিনী। কথাগুলো যেন গলায় আটকে গিয়েছে। কেমন যেন অনুভূত হচ্ছে। নিজের অদ্ভুত অনুভূতিকে দমালো কামিনী। মৃদু ধাক্কা দিয়ে অয়নকে সরালো। তারপর নিচে চলে গেলো ছাদ থেকে। অয়ন হাসলো। মেয়েটা এমন না!
____
অফিস থেকে বেরিয়ে ফুলের মার্কেটে দাড়িয়ে আছে কামিনী। সেদিন ছাঁদের ঘটনার পর প্রায় এক মাস কেটেছে। বেশ উন্নতি হয়েছে তাদের সম্পর্কের। এমন সময় পাশে কেউ দাড়ালো। কামিনী চোখ তুলে তাকালো। লোকটা তাকে দেখে চমৎকার করে হাসলো। কামিনী বলল,
-“রিয়াদ। তুই!”
রিয়াদ কামিনীর বন্ধু। বেশ কয়েকদিন দেখা হয়নি তাদের। আজকে হঠাৎ দেখে অবাক হয়েছে কামিনী। রিয়াদ বলল,
-“এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম, তোকে দেখলাম। তাই এলাম।”
বেশ কিছু সময় কথা বলল ওরা। কামিনী একটা গাজরা কিনতো চাইলো। খুচরো না থাকায় রিয়াদ টাকাটা দিয়ে দিলো। কামিনী সুতো বাঁধতে পারছে না দেখে হাতে পড়িয়েও দিলো রিয়াদ।
আরো কিছুক্ষণ গল্প করে বাড়ির দিকে রওনা দিলো কামিনী।
____
অয়ন অফিস থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে ছিলো। কামিনীর ফেরার অপেক্ষা করছিলো। কিছু সময় পর কামিনী এলো। অয়ন ওকে দেখে উঠে বসলো,
-“কামিনী এসেছো!”
কামিনী এগিয়ে এসে কাঁধের ব্যাগ টেবিলে রাখলো। অয়ন কামিনীর হাতের ফুলগুলো দেখলো। কামিনীর কাছে গিয়ে ওকেজিজ্ঞেস করল,
-“ফুল কিনেছো আসার সময়?”
কামিনী উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল,
-“আমার ফ্রেন্ড রিয়াদের সাথে অনেকদিন পর আজ দেখা হয়েছিলো। আমি ফুল কিনছিলাম বাট খুচরো ছিলো না তাই রিয়াদ টাকা দিয়ে দিয়েছে। ”
অয়নের মুখভঙ্গি পাল্টে গেলো। ও শান্ত স্বরে বললো,
-“তার মানে এটা রিয়াদ কিনে দিয়েছে?”
-“হ্যাঁ অমনি।”
অয়ন কামিনীর হাত ধরলো। গাজরাটা খুললো হাত থেকে। তারপর টেনে ছিঁড়ে ফেললো ওটা। এরপর ওটা ডাস্টবিনে ফেলে দিলো। কামিনী হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“এটা কি করলে অয়ন?!”
অয়ন এগিয়ে বলল,
-“তোমার হাতে নোংরা লেগে ছিলো। সেটা ফেললাম শুধু।”
-“নোংরা!”
-“হু। ফুল লাগবে জান? ওয়েট।”
টেবিলের ওপর থেকে একটা ডার্করেড গোলাপ ফুলের বুকে তুলে কামিনীকে দিলো অয়ন। কামিনী ফ্যালফ্যাল করে অয়নের কাজকর্ম দেখলো শুধু। অয়ন কামিনীর কপালে চুমু খেলো,
-“আমার কামিনী ফুল। এটা তোমার জন্য। ভুলেও অন্য কারো কাছ থেকে ফুল নেওয়ার কথা ভাববে না। ঠিক আছে জান?”
চলবে,,,,