#প্রেমাচ্ছন্ন সেই বিকেল
#ফারহানা চৌধুরী
#পর্বঃ৯
২৬আগস্ট আজ। কিছুটা শান্তি ও কিছুটা দুঃখের দিন আজ কামিনীর জন্য। কেন? আজ তার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। কামিনী নিজের বাড়িতে এসেছে একটু আগে। অয়ন আছে সাথে। মায়ের রুমে গেলো। বাবার ছবি হাতে বসে আছেন আয়েশা। কামিনী ভিতরে ঢুকলো। মায়ের কাছে বসলো। আয়েশা বললেন,
-“সেদিন ওকে রেখে না গেলেই কি হতো না?”
এটা প্রত্যেকবার আয়েশা বলেন। তিনি কিছুটা হলেও ভাবেন সেদিন তাদের ওভাবে চলে যাওয়ায় কোনো ভাবে কষ্ট পয়েছিলেন কাদের, অর্থাৎ কামিনীর বাবা। সেই কষ্ট সহ্য করতে পারেননি তিনি, তাই এভাবে ইহলোক ত্যাগ করলেন তিনি। কামিনী বোঝাতে চািলেও যখন তিনি বুঝতে চান না। তখন একবার হলেও তাদের ভিতরে ঝগড়া হতো। তীব্রভাবে!
কামিনী বলল,
-“এখনো এটাই ভাববে মা?”
-“তো কি ভাববো? এটা অস্বীকার আমি কখনোই করি না, তোর বাবার মৃত্যুতে আমরা কিছুটা হলেও দায়ী।”
-“কিভাবে দায়ি মা? বলো?”
আয়েশা বলতে নিলে কামিনী থামিয়ে বলে,
-“ঐ ফালতু লজিক দিবা না মা।”
-“তোর যে বাবা মারা গেছে তোর কি কষৃট হয় না?”
-“না।”
আসলেই কি তার কষ্ট হয় না? হয় বোধহয়। তবে প্রকাশ করতে চায় না সেটা ও। আয়েশা রেগে বললেন চেঁচালেন আচমকা,
-“কেমন মেয়ে তুই?! নিজের বাবার মৃত্যুতে কষ্ট পাস না?”
-“বাবা না জানোয়ার ছিলো উনি!”
পাল্টা চেঁচিয়ে উঠলো কামিনী। আচমকা থাপ্পড়ের শব্দে কেঁপে উঠল অয়ন।আয়েশা চড় মেরেছে কামিনীকে। অয়ন কামিনীকে সরালো ওখান থেকে। ড্রইংরুমে নিয়ে এলো। কামিনী মায়ের কাছে যেতে চাইলেও অয়ন দিলো না। বলল,
-“ওনাকে স্পেস দাও। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
ঘরের ভিতর থেকে আয়েশার চেচাঁমেচি শোনা গেলো। কেয়া থামালো তাকে। অয়ন কামিনীকে নিয়ে চলে এলো বিকেলের দিকে। ওখানে এতটা সময় থাকা দরকার ছিলো। আয়েশা কথা বলেননি কামিনীর সাথে। কামিনী চেষ্টাও করলো না। এইটা ভেবে “শি নিডস্ সাম স্পেস”।
____
ছাঁদে বসে ছিলো কামিনী। অয়ন এলো সেখানে। আকাশের দিকে তাকালো। মেঘ করছে অনেক। বৃষ্টি নামবে যখন তখন। অয়ন বলল,
-” নিচে চলো, বৃষ্টি নামতে পারে। ঠান্ডা লাগবে ভিজলে। চলো।”
কামিনী নড়লোও না। বসে রইলো। এবার অয়নও বসে পড়লো তার পাশে। মেয়েটা স্বাভাবিক ব্যবহারই করছে। তবে তা অস্বাভাবিক লাগছে অয়নের কাছে। কষ্ট হচ্ছে না মেয়েটার? তবে?
কামিনী নিজের ধ্যানে কথা বলছে। মাঝে মাঝে হাসছে। তবে হাসিটা মাত্রাতিরিক্ত। কেন এমন করছে মেয়েটা? অয়ন কামিনীর হাত ধরলো আলতো করে। বলল,
-“কামিনী ফুল। কাদঁতে চাইলে কাঁদো। কান্না আটকাতে এত হাসার অভিনয় দরকার নেই। কাঁদো। জাস্ট গো ফর ইট।”
ছেলেটার কথা এমন কেন? এতো ভালো লাগে কামিনীর! হ্যাঁ তার কান্না পাচ্ছে। প্রচন্ড পরিমানে কান্না পাচ্ছে। কারণ অজানা, তারপরও পাচ্ছে। সহ্যের বাধ ভেঙে কেঁদে উঠলো ও। কান্নার গতি ধীরে ধীরে বাড়ছে। অয়ন জড়িয়ে নিলো মেয়েটাকে নিজের সাথে। মাথা রাখলো থুতনিতে। কামিনী কাদঁছে। কান্নার তোপে শরীর কাঁপছে।
আস্তে-ধীরে কান্না থামলো। অয়ন নিজের থেকে মেয়েটাকে ছাড়ালো। চোখ মুছিয়ে দিলো হাতের তালু দিয়ে। আবারো জল গড়ালো চোখ দিয়ে। সেটাও মুছে দিলো অয়ন। মেয়েটার কপালে চুমু খেলো। হালকা কন্ঠে বলল,
-“এখন কেমন লাগছে?”
-“ভালো। আ,,অয়ন।”
-“বলো।”
কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো কামিনী। “কিছু না” বলে কথা কাটালো। আদেও কি কিছু না? উহু। অনেক কিছু! তবে কিছু সময় অনেক কিছু বলতে চেয়েও থেমে যেতে হয়। কেউ কি বোঝে? সেই “কিছু না” কথার মাঝেও কত অব্যক্ত কথা রয়েছে?
চলবে,,,