#প্রেমানন্দোল-২,৩
#তাসনিম_তামান্না
২
“আমার বাদ দেওয়া রিজক্ট ** শেষে তুই কি-না তাকে বিয়ে করলি?”
স্বাধীন রেগে বলল
“মাইন্ড ইউর লাঙ্গগুয়েজ”
“আরে আমাকে ধম’কিয়ে কি হবে? যেটা সত্যি আমি সেটাই বলছি”
“আমি তোর কাছে শুনতে চাইছি কিছু?”
“শুনতে চাস নি তবুও আমারও তো একটা দায়িত্ব আছে না-কি?”
“দায়িত্ব? বাহ! দায়িত্ব কি সেটা তুই জানিস?”
স্বচ্ছের কথা শুনে দ্বিধার না চাইতেও চোখ দিয়ে অবাধ্য নোনাপানি গড়িয়ে পড়লো। কানে শুধু স্বচ্ছের কথাগুলো বাজাচ্ছে। বিয়ের প্রথম দিনই এমন হতে হলো? বাকি দিন গুলো কেমন যাবে? স্বাধীন আর স্বচ্ছের কথার মাঝে দ্বিধা আর দাঁড়ালো না দ্রুত পায়ে রুমে চলে গেলো।
দ্বিধার যাওয়ার দিকে স্বচ্ছ তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল
“একটা শোন তোর বউয়ের সাথে প্রেম করার সময় আমাদের গভীর থেকে গভীর একটা সম্পর্ক ছিল আই মিন কি বলছিস বুঝতে পারছিস তো? অবশ্য তোকে কিছু বলা লাগে না তুই তো ইনটেলিজেন্ট তুই সবই জানিস”
নিজের বউয়ের সম্পর্কে এমন কথা শুনে কার না মাথার তার কেটে যাবে। স্বাধীন রেগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো। স্বচ্ছ সেটা দেখতে পেয়ে হেসে স্বাধীনের কলার ঠিক করতে করতে বলল
“ইশশ কষ্ট হচ্ছে আফসোস হচ্ছে? ব্যাপার না ডিভোর্স দিয়ে এবার ভালো একটা মেয়েকে বিয়ে করিস তোর দ্বিতীয় বিয়ের দায়িত্ব আমি নিজে হাতে নিবো টেনশন করিস না”
স্বাধীন স্বচ্ছকে ধাক্কা দিলো। স্বচ্ছ দুপা পিছনে গেলো। স্বাধীন বলল
“নো নিড। স্বাধীন কারোর দয়ায় বাঁচে না আর স্বাধীন যা করে বা করেছে বা করবে সবটা ভেবেই করে।”
“তুই ভাংগবি তবু মচকাবি না”
স্বাধীন বাঁকা হেসে বলল
“তুই এতো কিছু বললি আর এটা বললি না তো যে দ্বিধাকে কুপ্রস্তাব দেওয়ায় দ্বিধা তোকে রাস্তার সকলের সামনে চ’ড় মেরেছে। মেয়েটার সাহস আছে তাই না বল”
স্বচ্ছ ভাবড়ে গেলো। স্বাধীন স্বচ্ছের ভাঙ্গাচুরা দুঃখ ভরা মুখটা দেখে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেলো।
দ্বিধা পাশ ফিরে বালিশে মুখ চেপে কাঁদছে। কাঁধে কারোর হাতের ছোঁয়া পেতে চমকে উঠল দ্বিধা। চোখমুখ মুছে মাথা তুলে স্বাধীনকে দেখলো নাক টানতে টানতে বলল
“ক্লান্ত আমি ঘুমাতে দিন”
“কাঁদছেন কেনো? মিথ্যা অপবাদ নিলেন কেনো? প্রতিবাদ করতে পারলেন না? যে অপরাধ করে আর যে আপরান সহয় দুজনই সমান অপরাধী। তাহলে আপনিও অপরাধী আপনাকে তাহলে কি শাস্তি দেওয়া উচিত”
“ডিভোর্স! আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই নি সবটা জেনেই কিন্তু কি এমন হলো যে আপনাকেই আমার বিয়ে করতে হলো?”
“বিয়ে পবিত্র বন্ধন এই বন্ধন থেকে আপনার মুক্তি মিলবে না দ্বিধা সে আপনি যতই চেষ্টা করুন না কেনো”
“কেনো মিলবে না? আমি এই বিয়ে মানি না! আর আপনার সাথে সংসার করতে গেলে আপনার একটা সময় মনে হবে আপনি ভুল করছেন।”
“সেটা আপনাকে না ভাবলেও চলবে”
“না চলবে না। ব্যাপারটা যখন আমি জড়িয়ে আছি তখন অবশ্যই বিয়ের আগে আপনার উচিত ছিল আমার সাথে আলাদা করে এক বার কথা বলা উচিত। আর আপনি নিশ্চয়ই কিছু কারসাজী করছেন না হলে আমার একটা না বলায় আব্বু কখনোই হ্যাঁ বলবে না”
“ইনটেলিজেন্ট মেয়ে গুড। বলতে পারেন ফিলমি স্টাইলে কিছু করছি”
“কি করছেন”
“আজ না অন্য একদিন শুনবেন এখন ঘুমান আপনি না ক্লান্ত”
“হ্যাঁ আমি খুব ক্লান্ত। ক্লান্তির কারণ আপনি! আজ আমার চোখের পানির কারণ ও আপনি। না আজ আপনি আমাকে বিয়ে করতেন আর না ঔ ঘৃণিত লোকটা আমায় নিয়ে বাজে কথা বলত আপনাদের মাঝে আমাকে কেনো টানলেন কি দোষ আমার”
“আপনার কোনো দোষ নেই। আমার মনে হয়েছে আমার লাইফপাটনার হিসেবে আপনি পারফেক্ট”
“এটা মনে হওয়ার কারণ? আমি মিস ওয়ার্ল্ড নয়”
“আপনার সোজাসাপটা উত্তর গুলা যে আছে ওগুলায়”
“মানে?”
“কিছু তো একটা হবে”
“আপনি অদ্ভুত ভাবে কথা বলছেন কেনো?”
“মুড নাই তাই”
দ্বিধা চুপ হয়ে গেলো। বুঝে গেছে ঘাড় ত্যাড়া লোকটার সাথে কথা বলে আর যায় হোক মেজাজটা আগে খারাপ হবে তার আগে রাগ সামলে চুপ হয়ে যাওয়ায় ভালো। ক্লান্তিতে দুচোখ ছাপিয়ে ঘুম নেমে আসলো।
দুপুরে আর খেলো না দ্বিধা। ঘুম থেকে উঠে স্বাধীনকে আর দেখতে পেলো না সারাবাড়িটা সাদিয়ার সাথে ঘুরে ঘুরে দেখলো। বিকালে বসে দুই শাশুড়ী বউমা মিলে গল্প করছিল ইতিমধ্যে দুজনে ফ্রি হয়ে গেছে।
“তুমি বসো আমি চা বানিয়ে আনি”
“আমি চা বানিয়ে আনি আম্মু”
“আজ নয় নতুন কেবল আজই এ বাড়িতে আসছ আর কয়দিন যাক তারপর তোমার হাতের চা কেনো রান্না ও খাবো।”
প্রতিত্তোরে দ্বিধা হাসলো। সাদিয়া চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর হুট করে কোথা থেকে স্বচ্ছ এসে দ্বিধার গা ঘেষে বসে পড়ল। দ্বিধা চমকে উঠে দাঁড়ালো কিন্তু কোথাও যেতে পারলো না। তার আগেই দ্বিধার হাত স্বচ্ছের হাতের মুঠোয় বন্দি হয়ে গেলো। দ্বিধা হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো তবুও ছাড়াতে পাড়লো না হাতে ব্যথায় চোখে পানি চলে আসলো। এদিকে স্বচ্ছ শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল
“এতো লোভ তোর? শেষে কি-না এই বাড়ির ছেলেকে ফুসলিয়ে বিয়ে করে নিলি আসলেই তোর বুদ্ধি আছে বলতে হবে। পাকা খেলোয়াড় তুই”
দ্বিধা রেগে গেলো
“স্বচ্ছ মুখ সামলে কথা বলুন তুই তোকারি করছেন কেনো?”
“ওহ মাই গড এতো চেজ্ঞ? তুমি থেকে আপনি? তাহলে আমিও তুমি থেকে তুই এ আসতেই পারি”
“স্বচ্ছ ভুলে যাবেন না আমি আপনার সম্পর্কে কে হই?”
“সেখানেই তো আমার প্রবলেম আমার পাখি অন্য কেউ নিয়ে চলে গেলো সেটা মেনে নিতে পারছি না”
“স্বচ্ছ হাত ছাড়ুন আমি কিন্তু চিৎকার দিবো”
“হ্যাঁ তো চিৎকার দিবি তো আমি কি করবো দে চিৎকার এসে দেখুক সবাই দেবরের সাথে নষ্টামি করছিস”
“ছিঃ আপনি কতটা নিচ আপনার মুখের ভাষায় সেগুলো প্রকাশ পায় পদে পদে। এখন আমার ভাবতেই নিজের ওপরে ঘৃণা লাগে কি করে আপনার মতো মুখোশ ধারী মানুষটাকে আমি একটা সময় ভালোবেসে ছিলাম”
“ইশ আর আমার পাখি অন্য কেউ নিজে ভাগ বসালো সেটাতে আমার আফসোস হচ্ছে”
“কি হচ্ছে এখানে?”
স্বচ্ছ, দ্বিধা দুজনে চমকে গেলো। স্বচ্ছ দ্বিধার হাত ছেড়ে দিলো। দ্বিধা অন্য হাত দিয়ে হাত মালিশ করতে লাগলো। দ্বিধা পাশ ফিরে স্বাধীনকে দেখতে পেলো। মটেও তার ভয় লাগছে না। যে যা ভাবয়ার ভাবুন ভয় নিয়ে জীবন চলে না। দ্বিধা দৃঢ় প্রতিবাদী গলায় চোখ মুখ শক্ত করে বলল
“আপনার ভাই আমার হাত ধরে ছিল”
স্বাধীন তাকিয়ে রইলো ওদের দুজনের দিকে। তার মনের কি চলছে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। স্বচ্ছ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে। স্বাধীন দ্বিধা হাত আলত হাতে ধরে বলল
“ওপরে চলুন”
দ্বিধা চমকালো। বিস্ময় চোখে স্বাধীন আর তার ধরে রাখা হাতের দিকে তাকালো।
রুমে এসে খাটে বসিয়ে ওয়াসরুম থেকে বালতিতে করে পানি আর সাবান আনলো। সাবান পানি দিয়ে দ্বিধার হাত ধুতে লাগলো। দ্বিধা চুপচাপ দেখতে লাগলো। যখন দেখলো স্বাধীন বার বার দ্বিধার হাত ধুয়ে দিচ্ছে তখন দ্বিধা বলল
“কি করছেন? বার বার হাত ধুচ্ছেন কেনো?”
“আমি চাই না আমার জিনিসে অন্যর স্পর্শ লাগুক যেটা আমার সেটা পুরোটায় আমার একটু ও অন্যর নয়। যেমনঃ- আপনি। আপনি শরীর মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু আমার বসবাস থাকবে অন্য কারোর হস্তক্ষেপ আমি সহ্য করবো না।
চলবে ইনশাআল্লাহ
#প্রেমানন্দোল-৩
#তাসনিম_তামান্না
একরাতে স্বাধীনের পরিবর্তনের কারণ চোখে লাগছে। হাইলাইটস হয়ে আছে। স্বচ্ছের ব্যাপারটা বার বার করে ভাবাচ্ছে। স্বাধীনের শান্ত স্বভাব মেনে নিতে পাচ্ছে না যেনো। স্বাধীন শান্ত মানে ঝড়ের পূর্বাভাস। স্বচ্ছ সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে স্বাধীনের রুমের দিকে তাকিয়ে ভাবুক হয়ে বিরবির করে বলল
” স্বাধীন আবার কি নতুন গেম শুরু করছে? না-কি গেম উল্টে দিতে চাইছে? ”
” তুমি এখানে দ্বিধা কই? ”
সাদিয়ার কথায় স্বচ্ছের ভাবনার সুতো কাটলো। একপলক সাদিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে বলল
” স্বাধীন ওপরে নিয়ে গেছেন”
কথাটা শুনে চলে যেতে গিয়েও ফিরে এসে বলল
” একটা কথা রাখবে আমার? ”
স্বচ্ছ ফ্লোরে দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বলল
” কি? ”
” আর যায় করো আমার ছেলের সংসারে আ-গু-ন লাগিয়ে ও না। এটা আমার আদেশ ভেবে ভুল করো না এটা একটা মায়ের অনুরোধ ”
স্বচ্ছ সাদিয়ার মুখের দিকে তাকালো কিন্তু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না দৃষ্টি সরালো। সাদিয়ার মুখের দিকে তাকে স্বচ্ছ নিঃপাপ হয়ে যেতে ইচ্ছে হয় আদর পেতে ইচ্ছে হয় মায়ের আদর। স্বচ্ছ প্রতিত্তোর করতে ভুলে গেলো। চুপ করে রইলো। এর উওর তার জানা নেই। তবুও সে জানতে চাই না এর উওর। কিছু জিনিসের উত্তর অজানা থাকা ভালো। সাদিয়া বেগম উত্তরের অপেক্ষা করলেন কিছুক্ষণ উত্তর না পাওয়ায় আশাহত হয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। ধীর পায়ে প্রস্থান করলো। সাদিয়ার যাওয়ার দিকে আড়চোখে তাকালো স্বচ্ছ। ফোন বাজলো স্বচ্ছের ফোন রিসিভ করে কানে ধরে বলল ” আসছি ”
বসে না থেকে উঠে চলে গেলো নিজ কাজে।
রাতে খাবার টেবিলে শাহাদাত হোসেন স্বাধীনকে প্রশ্ন করলেন
” বিয়ে করেছ শুনলাম ”
বাবার ওপরের রাগ থাকলেও স্বাধীন শান্ত গম্ভীর হয়ে বলল
” ঠিক শুনেছেন ”
” মেয়েটার ব্যাগ্রাউন্ড তার ফ্যামেলি কেমন? আমাদের ফ্যামেলির সাথে যায় তো? ”
” আমি তার ফ্যামেলিকে বিয়ে করছি না তাই তার ফ্যামেলি সম্পর্কে কোনো ইন্টারেস্ট নাই সে কেমন এটা জানলেও চলবে ”
” তারমানে কি না জেনে বিয়ে করে নিলে? স্ট্যাটাস, সোসাইটি বলে একটা ব্যাপার আছে না-কি? ”
” আপনি আমার পারসোনাল ব্যাপারে ইটারফেয়ার না করলে খুশি হবো ”
শাহাদাত হোসেন চুপ হয়ে গেলেন ছেলের কথার ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছে রেগে যাচ্ছে স্বাধীন এখন না ঘেটায় শ্রেয়। ছেলেকে ভয় পায় এমন না ছেলের রাগটাকে ভয় পায়।
স্বাধীনকে একা দেখে সাদিয়া বেগম প্রশ্ন ছুঁড়লেন
” তুই একা কেনো? দ্বিধা কই? ”
স্বাধীন গম্ভীর কন্ঠে বলল
” জ্বর আসছে ”
” সে-কি? ওতো বিকালে ঠিক ছিল। হুট করে জ্বর আসলো কি করে। তোরা খা আমি দেখে আসি মেয়েটাকে ”
সাদিয়াকে বাঁধা দিয়ে বলল
” দ্বিধা ঘুমাচ্ছে আম্মু এতো ব্যাস্ত হওয়ার কিছু নেই। আগে খেয়ে নাও তারপর যেও ”
” মেয়েটা সারারাত না খেয়ে থাকবে?তুই আমাকে আগে জানালি না কেনো? ”
স্বাধীন গা ছাড়া ভাবে উত্তর দিলো
” এমনি ”
সাদিয়া রেগে গেলো।
” এমনি? এমনি মানে কি? আমাকে তোরা কেউ মূল্য দিস না। ”
” ওফ্ফ আম্মু কি শুরু করছ খেতে দাও খুদা লাগছে আর টেনশন করো না ঠিক হয়ে যাবে ”
” তাই বলে আমাকে একটি বার জানাবি না? ”
” আচ্ছা এরপর থেকে জানাবো ”
সাদিয়া রেগে জোরে জোরে শ্বাস ছেলে খাবার সার্ভ করে দিলো। স্বাধীন খাবার খুব একটা খেতে পারলো না। উঠে চলে গেলো সাদিয়া বেগম দেখেও কিছু বলল না। ছেলে তার খুব চাপা স্বাভবের। কেউ না বুঝুক তিনি তো মা সব বুঝেন। রুমে যাওয়ার আগে সাদিয়াকে বলল
” আম্মু ওপরে আসার সময় সুপ নিয়ে এসো তো ”
ছেলের কথায় মুচকি হাসলেন সাদিয়া। শাহাদাত হোসেন বসে বসটা অবলোকন করে কুঞ্চিত ভ্রু নিয়ে প্রশ্ন করলো
” মেয়েটাকে বাসায় আনতে না আনতেই মাথায় উঠিয়ে ফেলছ দেখছি ”
সাদিয়া বেগম স্বামীর কথায় পাত্তা না দিয়ে উঠে গিয়ে সুপ বানানো শুরু করলো।
রুমে এসে স্বাধীন দ্বিধার কপালে হাতের উল্টো পিট দিয়ে টেমপরেজর দেখে দ্বিধাকে দু একবার ডাকলো।
” দ্বিধা! দ্বিধা? শুনছেন? ”
দ্বিধা পিটপিট করে চোখ খুলে স্বাধীনকে দেখে বলল
” হুম? ”
” কিছু খাবেন? ”
” উহুম ”
উত্তর দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো দ্বিধা। স্বাধীন দ্বিধার লাল হয়ে যাওয়া হাতে ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলো। তখন স্বাধীনের কথা শুনে দ্বিধা চুপ হয়ে অদ্ভুত চোখে স্বাধীনের দিকে তাকিয়ে ছিল। ক্লিন সেভ করা শ্যামমানবের গম্ভীর মুখে কিছুতো একটা ছিল যার জন্য একটা টান অনুভব হচ্ছিল। একটা মায়া কাজ করছিল।
স্বাধীন বার বার দ্বিধার এক জায়গায় হাত ধৌয়ার ফলে ওখানটায় লাল হয়ে যায়। দ্বিধা একটু ঠান্ডা কাতুরে একটুতেই ঠান্ডা লেগে যায়। দ্বিধার হাঁশির শব্দে স্বাধীন থেমে গিয়ে এরইমধ্যে দ্বিধার ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকালো। স্বাধীনের তাকানোতে দ্বিধা নাক টেনে হেসে বলল
” অন্যর স্পর্শ উঠেছে? ”
“আপনার ঠান্ডা লাগছে? ”
” সমস্যা নাই ”
” আপনি আমাকে আগে বলবেন না? ”
দ্বিধা উত্তর দিলো না চোখে পানি এসে জমছে বার বার। নাকেও সর্দি চলে আসলো। স্বাধীন তারাতাড়ি সাবান পানি রেখে ঔষধ খাইয়ে শুয়ে দিলো দ্বিধাকে।
দরজায় ঠকঠক আওয়াজ তুলে সাদিয়া বেগমের ডাকে স্বাধীনের ভাবনায় ছেদ ঘটল। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। সাদিয়া এসে দ্বিধার মাথায় হাত রেখে বলল
“এতো জ্বর কি ভাবে আসলো?”
“জানি না আম্মু ”
স্বাধীনের নিজে অপরাধী মনে হচ্ছে। আজ প্রথম বারের মতো তার মনে হচ্ছে সে একটু বেশি বাড়া বাড়ি করে ফেলছে এমন না না করলে দ্বিধার এতো কষ্ট পেতে হতো না। শাহাদাতের ডাক দেওয়ায় স্বাধীন বলল
” আম্মু তুমি যাও আমি ওর খেয়াল রাখছি টেনশন করো না রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো ”
” আচ্ছা কিছু লাগলে আমাকে ডাক দিস ”
” আচ্ছা ”
সাদিয়া চলে যেতেই স্বাধীন দ্বিধাকে ডাকলো
” দ্বিধা উঠুন খেয়ে নিন! দ্বিধা? ”
দ্বিধা ঘুম জড়ানো গলায় বলল
” উহুম আমি খাবো না মিস্টার স্বাধীন! ”
দ্বিধার মুখে স্বাধীনের প্রথম নাম শুনে স্বাধীনের মনে মিশ্র অনুভূতি গুলো দলা পাকিয়ে গেলো। পরক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে দ্বিধাকে ডাকলো আরো কয়েক বার
” দ্বিধা উঠুন না খেলে শরীর আরো খারাপ করবে ”
দ্বিধা না উঠায় স্বাধীন দ্বিধাকে উঠিয়ে জোর করে খাইয়ে দিলো। খওয়া শেষ হতে না হতেই দ্বিধা বমি করে সব খাবার বের করে দিলো। বমি সব স্বাধীনের গায়ে। স্বাধীন অসহায় মুখে তাকালো দ্বিধার ক্লান্ত মুখে। স্বাধীন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দ্বিধাকে পরিষ্কার করে দিয়ে নিয়েও সাওয়ার নি এসে দেখলো। দ্বিধা পিটপিট করে চোখ খুলে আছে স্বাধীন সেটা দেখে বলল
” কিছু লাগবে আপনার? ”
” আপনাকে খুব কষ্ট দিচ্ছি বলুন? ”
” না এটা আমার দায়িত্ব। আপনি অসুস্থ হলে আমি সেবা করে সুস্থ করা এবং আমি অসুস্থ হলে আপনার সেবা করা এটাই নিয়ম। এটাতে ভালোবাসা, দায়িত্ব, মায়া, টান বাড়ে বুঝলেন? ”
দ্বিধা বুঝলো কি না স্বাধীন বুঝতে পারলো না দ্বিধা ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। স্বাধীন ভেবে নিলো দ্বিধা ভুল বকছে।
চলবে ইনশাআল্লাহ