#প্রেমানন্দোল-৮,৯
#তাসনিম_তামান্না
৮
সূর্য মেঘের লুকোচুরির খেলা কখনো কাঠ ফাটা রোদ তো কখনো নীল আকাশ কালো মেঘে ছেড়ে যাচ্ছে। আকাশের মতোই মৃধার মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে কখনো ভালো কখনো বা খারাপ। মৃধা নিজের ওপরেই বিরক্ত কিছু ভালো লাগছে না ওর দ্বিধার সাথেও কথা হয় নি। একবার মৃধা ফোন দেয় তো দ্বিধা ধরে না আবার দ্বিধা ফোন দিলে মৃধা ধরে না আজব কান্ড। ক্লাসে মন বসছে না দেখে মৃধা বাড়ি যাওয়ার জন্য উদাত্ত হলো। হালিমা, আঁখি, বিথি অন্য অন্য ডিপার্টমেন্টে। দ্বিধা আর মৃধায় এক ডিপার্টমেন্টে। দু’জন বেস্ট ফেন্ড ও। মৃধা তীব্র মন খারাপ নিয়ে কলেজ থেকে বেড়িয়ে হাঁটতে লাগলো নিজ মনে। মৃধা ইউনিভার্সিটি ছাড়া তেমন বাইরে বের হওয়া হয় না। মৃধা জল্পনা কল্পনা করতে করতে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে আসলো। পায়ের ব্যথা অনুভব করলো। একটা রিকশা করে বাড়ির পথে রওনা দিলো। কিন্তু ঘটলো আরেক বিপত্তি একটা বাইক এসে সজোরে ধা’ক্কা দিলো রিকশাটাকে। মৃধা ছিঁটকে পড়লো পিচের রাস্তায়। হাত ছিলে মাথায় ফেটে রক্তাক্ত হলো ব্যথায় মৃধার নিউরনগুলো টনটন করে উঠলো চোখ মুখ কুচকে পড়ে রইলো। রিকশাওয়ালা মামা মাঠির ওপরে পড়েছে। তার তেমন কিছু হয় নি। লোকজন রাস্তায় জড়ো হয়ে গেলো। মৃধাকে কয়েকটা মেয়ে টেনে তুললো। রিকশাওয়ালা মামা কেউ কয়েকজন তুললো। মৃধা এবার সামনের দিকে তাকালো একটা হেলমেট পড়া ছেলেকে তুললো কয়েকটা লোক ছেলেটার কোনো ক্ষতি হয় নি। মৃধাকে পাশের দোকানের বেঞ্চে বসানো হলো। পানি খেলো। হাতে মাথার কা’টা জায়গায় জ্বালা করছে। মৃধা হাতে ফুঁ দিতে লাগলো।
” তুমি আমার সাথে হসপিটালে চলো তোমার মাথা হাত থেকে রক্ত পড়ছে ”
হঠাৎ চেনা না জানা না অপরিচিত মুখ থেকে ‘তুমি’ ডাক শুনে মৃধা মাথা তুলে তাকিয়ে কালকের ছেলেটাকে দেখে মৃধার ভ্রু কুঁচকে গেলো। এই লোকটার সাথে এক্সিডেন্ট টা হলো। মৃধা চোখ মুখ কুচকে বলল
” নো নিড আমি একাই যেতে পারবো ”
কিছু লোকজন বলতে লাগলো ” যান ওনার সাথে আপনার যা অবস্থা আপনি একা যেতে পারবেন না ”
মৃধা বিরক্ত হলো। ঝামোলা না বাড়িয়ে বলল ” চলুন ”
স্বচ্ছ আর দেরি না করে একটা সিএনজি ডেকে মৃধাকে উঠিয়ে নিজেও উঠলো। সিএনজিতে উঠে একজনকে ফোন দিয়ে বলল ” বাইকটা নিয়ে যা *** এখান টায় আছে ”
মৃধা স্বচ্ছের থেকে দূরত্ব নিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। যেনো স্বচ্ছের গায়ে এক বিন্দু স্পর্শ না লাগে। স্পর্শ লাগলেই যে বিপদ… সর্বনাশ। স্বচ্ছ মৃধার দিকে আড়চোখে তাকাছে মৃধার অবস্থা দেখে কষ্ট হচ্ছে আবার হাসিও পাচ্ছে।
” তোমার কি বেশি কষ্ট হচ্ছে? ”
মৃধা এবার তেতে উঠে বলল ” এই আপনি আগে তুমি তুমি করা বন্ধ করেন কত আল্লাদ না চেনা নেই জানা নেই তুমি তুমি করে কথা বলছেন? আমি আপনার বউ লাগি না-কি ইচ্ছা মতো ডেকে যাচ্ছেন? আপনি বলে সমদ্ধন করলে করেন না হলে দরকার নাই এক দম তুমি তুমি বলবেন না ”
একটা মেয়ের মুখে ধমকানো কথা শুনে স্বচ্ছ মজিয়ে গেলো যেনো শান্ত কন্ঠে বলল
” ওকে ওকে ঝাঁজেররাণী ”
” এই কি বললেন আপনি? ”
” ক কই কখন কি বললাম? ”
” কল মি ‘মৃধা’ ওকে একদম উল্টো পাল্টা নামে ডাকলে গাড়ি থেকে ধাক্কা মে’রে ফেলে দিবো ”
স্বচ্ছ মৃধার কথার প্রতিত্তর করলো না। স্বচ্ছ মনে মনে ‘মৃধা’ নামটা আওড়ালো। কোথাও শুনেছে মনে হলো।
হসপিটালের এসে মৃধাকে ব্যন্ডেজ করানো হলো মাথায় তেমন গুরুতর কিছু হয় নি। ডক্টর কয়েকটা মেডিসিন লিখে দিলো। স্বচ্ছ মেডিসিন গুলো কিনে দিয়ে বলল ” চলুন আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি ”
মৃধা ঔষধ আর প্রেশকিপশনটা নিয়ে বলল
” নো নিট যথেষ্ট করেছেন। আপনার সাথে এখানেও আসতাম না কিন্তু অনিচ্ছা থাকার সত্বেও আসতে হলো কি আর করার… ”
আরো কিছু বলার আগে মৃধার ফোন আসলো। ফোন হাতে নিয়ে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো ফোন ধরে কানে দিয়ে ঝাড়ি দিয়ে বলল ” ঔ ছেমরি ঔ কই তুই আমাকে ছাড়া একা একা বিয়ে করে নিলি এমন মীরজাফর গিরি করতে তোর কোথাও বাদলো না আবার ফোন দি ফোন ধরোস না একবার সামনে পাই চুল ছিড়ে হাতে ধড়িয়ে দিবো বিয়াদপ আর আমার কাছে ফোন দিসিস কেনো যা তোর বরের কোলে উঠে বসে থাক… ”
মৃধার ঝাড়ি শুনে স্বচ্ছের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। মৃধা কথা বলতে বলতে সিএনজিতে উঠে গেলো স্বচ্ছ হাফ ছেড়ে বাচলো। বিরবির করে বলল ” কি মেয়ে রে বাবা ঝাঁজেররাণী ”
বলে হেসে মাথা চুলকে চলে গেলো নিজের কাজে।
দ্বিধা মৃধাকে থামিয়ে বলল ” জানি খেপে আছিস জানি না কিভাবে কি করে জানি বিয়েটা হয়ে গেলো ”
” এই থাক একদম ইমোশনাল হলে আমাকে ইমোশনাল করতে আসবি না আমাকে চিনিস -ই তো ”
” হ্যা চিনি আপনার নাম মৃধা না? ”
” একদম ফাজলামো করিস না জানিস আমি কতটা আপসেট একা একা ক্লাস করতে ভালো লাগে না ”
” আমি ক্লাস করতে আসবো তো ”
” সত্যি কবে থেকে? ”
__________________________________
রাতের খাবার খাওয়া শেষ করে দ্বিধা আগেই ওপরে চলে এসেছে। স্বাধীন ওপরে এসে দ্বিধাকে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল
” দ্বিধা কি হয়েছে আপনার? মন খারাপ? ”
দ্বিধা তাচ্ছিল্য করে উত্তর দিলো
” মন থাকলে তো খারাপ হবে? ”
স্বাধীন ভ্রু কুঁচকে গেলো বলল
” এভাবে কথা বলছেন কেনো আপনি? ”
দ্বিধা এবার স্বাধীনের দিকে তাকিয়ে বলল
” কি ভাবে কথা বললাম আমি? আর আমার কাছ থেকে কি রকম ভাবে কথা বলা ডিজাভ করেন? ”
স্বাধীন চুপ থেকে কিছুক্ষণ ভেবে বলল
” আপনি কি আমার কোনো কথায় কষ্ট পেয়েছেন? ”
” আমার কষ্ট পাওয়ায় আপনার কি যায় আসে? ”
” দ্বিধা আপনি এমন আজীব বিহেভিয়ার কেনো করছেন? ”
” আমার ইচ্ছে ”
স্বাধীন এবার নরম শান্ত কন্ঠে বলল
” বলুন আমাকে না বললে বুঝবো কিভাবে? ”
” আপনার বোঝা লাগবে না আপনি তো শুধু পারেন আপনার ইচ্ছেগুলো আমার ওপরে চাপিয়ে দিতে কখনো আমার কাছে জিজ্ঞাসা করেছে? এই বিয়েটা আমি করতে চাই কি না? আবার রিসিভশন করছেন আমার কাছ থেকে আমার মতামত টুকু নিয়েছে? কি মনে হয় আমাকে আমি মানুষ না? আমার কোনো ইচ্ছে নেই আপনি যা বলবেন যা করবেন আমার সবটা মেনে নিতে হবে? কেনো? আপনি আমার হাসবেন্ড বলে? সবটা মেনে নিতে হবে ”
স্বাধীন দ্বিধার পুরো কথা মন দিয়ে শুনলো টুঁশব্দ করলো না। স্বাধীন কিছুক্ষভ নিরব থেকে বলল
” মানছি আমার ভুল হয়েছে আমার দোষ। বলুন আপনি কি চান ”
” আমি কিছু চাই না। নিজেই তো সব ডিসিশন নিয়ে নিয়েছেন আবার আমার কি দরকার ”
আবারও নিরবতা গ্রাস করলো কিছুক্ষণ স্বাধীন অনুতপ্ত গলায় বলল
” দ্বিধা আ’ম সরি। মানছি ভুল হয়েছে। কিন্তু জানি আপনি বিয়েটা করতে চান নি তাই এভাবে বিয়েটা করতে হলো আর রিসিভশনের বিষয়টা আপনার সাথে আমার ডিসকাস করা উচিত ছিল আমি মানছি ”
চলবে ইনশাআল্লাহ
#প্রেমানন্দোল-৯
#তাসনিম_তামান্না
” আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না দ্বিধা? ”
দ্বিধা তখনো চুপ।
” আপনি কথা বলুন না হলে বুঝবো কি ভাবে? ”
” আপনাকে বুঝতে হবে না ঘুমিয়ে পড়ুন রাত হয়েছে ”
কথাটা বলে দ্বিধা চলে যেতে চাইছিল। স্বাধীন দ্বিধার বাহু চেপে ধরলো। দ্বিধা চোখ তুলে তাকাতেই স্বাধীন বলল
” আমি তো আমার দোষ শিকার করছি ”
” আমি সবটা জানতে চায় কেনো বিয়ে করলেন আমাকে? ”
দ্বিধার চোখে চোখ রেখে স্বাধীন বলল
” প্রিয় মানুষটিকে হারাতে চাই না বলে ”
দ্বিধা একটু ভরকালো অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলল
” আমি আপনার প্রিয় হলাম কবে? ”
” প্রিয় হতে গেলে তার একটা সাধারণের মধ্য অসাধারণ কাজই যথেষ্ট ”
” তো আমি কি অসাধারণ কাজটাই বা করলাম? ”
” জানেন না যেদিন আপনি আমাকে আপনার সবটা দিয়ে ভালোবাসবেন। সেদিন বলবো ”
কথাটা বলে স্বাধীন চললে গেলো। দ্বিধা থমকে দাঁড়িয়ে থাকলো। কানে স্বাধীনের কথা গুলো বাজচ্ছে।
———————————————–
মৃধা বাসায় আসা থেকে বিছানায় শুয়ে-বসে কাটাচ্ছে। মায়ের এতো ভালোবাসা আদর সহ্য হচ্ছে না। মায়ের ঝারি না খেলে শান্তি হয় না ওর। কিন্তু মা ঝারি দিচ্ছে না। মেয়ের হাতে মাথায় ব্যন্ডেজ দেখে তিনি গলে গেছেন মাঝে মাঝে ফেসচফেসচ করে কাঁদছে। মৃধার মাথায় হাত বুলিয়ে কিছুক্ষণ পর পর এসে জিজ্ঞেসা করছে কি খাবে। মৃধা এতে বড্ড বিরক্ত আবার মায়ের পাগলামি দেখেও তার হাসি পাচ্ছে।
মৃধার বাবার ভালোবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি বাবার কোলে উঠা হয় নি বাবাকে কখনো ছুয়ে দেখা হয় নি। মৃধা যখন রিদির পেটে ৫ মাস তখন মৃধার বাবা হার্টঅ্যাটাক এ মারা যায়। তখন আত্মীয় স্বজনরা মুখে মুখে পাশে থাকলেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি। আস্তে আস্তে জমানো টাকা ফুরিয়ে যেতে লাগলো। রিদি তখন দিশাহারা ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় যাবে? কি খাওয়াবে? এদিকে তার এই অবস্থা। মৃধার বড় বোন নেহা তখন বুঝতে শিখেছে ক্লাস নাইনে পড়ে পড়ালেখায় ভালো হওয়ায় টিউশনি শুরু করলো ওয়ান, টুর বাচ্চাদের। মৃধার মা রিদি গার্মেন্টসে যোগ দিলো। জাহিদ তখন ছোট ফোরে পড়ে। আস্তে আস্তে সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে লাগলো।
মৃধা শুয়ে শুয়ে নিউজ ফিড ঘাটছিল। তখন মৃধার মা রিদি এসে বলল
” ঘুমনোর আগে এই এক গ্লাস দুধ খেয়ে ঘুমা মা ”
” ওফ্ফ আম্মু কি শুরু করলে বলো তো ভালো লাগে না খেতে ”
” এই বেশি না বকে চুপচাপ খা ভালো মুখ দিচ্ছি বলে মাথায় উঠে বসেছিস ”
” শোন আম্মু আমি তোমাকে ভালো মুখ দিতে বলি নাই আমি জানি তুমি খ্যাটখ্যাটে ”
” কি বললি তুই ”
রিদির রাগী গলার কন্ঠ শুনে মৃধা একটু ভয় পেলো তুতলিয়ে বলল
” ক কই কি বললাম? তুমি না আজ কাল বেশি শুনছ ”
রিদি রাগী চোখে তাকিয়ে রইলো মৃধা কথা ঘুরি বলল
” আ আম্মু তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি। ”
রিদি রাগী গলায় বলল
” কি কথা? ”
” ঔ যে আমার ফেন্ড আছে না দ্বিধা ওর বিয়ে হয়ে গেছে ”
রিদি অবাক গলায় বলল
” কি? কবে? ”
” হুট করেই। আমিও জানতাম না দেখতে আসলো আর বিয়ে হয়ে গেলো ”
” ওমা তাই না-কি ছেলে কেমন? কি করে? ”
” ছেলে ভালো। শুনেছি এডভোকেট ঔ যে স্বাধীন আহমেদ সবাই এক ডাকে চিনে ”
” যাক আলহামদুল্লিলাহ। দেখছিস মেয়েটার কত ভাগ্য ছেলেটা ভালো আমিও দেখেছি টিভি তে। তোর যে কি হবে এই টেনশনে আমার ঘুম হয় না… ”
” ওফ্ফ আম্মু কি শুরু করলে যাও তো আমি ঘুমাবো ”
” তুমি ঘুমাবা না-কি ফোন টিপবা আমার জানা আছে ”
★
বাড়িতে বিয়ের দুম লাগছে। স্বপ্না একাই হইচই করে বাড়ি মাথায় করে রাখছে। আত্মীয় স্বজনরা অনেকে চলে এসেছে। দ্বিধা নতুন বউয়ের মতো লাল রঙের শাড়ি পড়ে বসে আছে। লোকজন আসছে কথা বলছে। স্বাধীনের মামির প্রশ্নে দ্বিধা হোটচ খাচ্ছে বার বার। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করছে। এই যেমন একটু আগে প্রশ্ন করলো “তোমাদের কি প্রেমের বিয়ে? এভাবে লুকোচুরি করে বিয়ে করলে ”
দ্বিধা দ্বিধায় পড়ে যায় কি উত্তর দিবে বুঝতে পারলো না। চুপ করে রইলো। তখনি স্বাধীনের মামি দ্বিধার খুদ ধরে বলল
“কেমন বিয়াদপ বউ এনেছ আপা গুরুজনেদের কথার উত্তর দেয় না ”
দ্বিধা মাথা নিচু করে বলল
” সরি মামি আসলে আমি বুঝতে পারছিলাম না কি উত্তর দিবো ”
” দ্বিধা তুমি থামো। আর তোমাকেও বলি হারি ভাবি আসা থেকে মেয়েটাকে প্রশ্নের উপরে রেখেছ। আর কি সব প্রশ্ন করছ হ্যাঁ? ওদের প্রেমের বিয়ে নয় আমি তো তোমাকে বললাম ”
” আপা তুমি এই ছেলের বউয়ের জন্য আমার সাথে এই ভাবে কথা বলছ দেখবো ছেলের বউ কেমন দেখে ”
” আচ্ছা দেখো এখান রান্না ঘরে এসো ”
সাদিয়া টেনে নিয়ে গেলো। দ্বিধার হুট করে মন খারাপ হয়ে গেলো সোফা ছেড়ে রুমে চলে আসলো মিথ্যা অজুহাত দিয়ে। রুমে এসে জানালা ধরে মেঘলা আকাশে দিকে তাকিয়ে নিজ মনে বলল
” সংসারে নানা মানুষ ভিন্ন ভিন্ন তাদে চিন্তা ধারা সকলের। সংসারের সকলের মন জুগিয়ে চলা যায় না এটা তো পসিবেল ও না। তবুও কেনো আমার মন খারাপ হচ্ছে? ”
দ্বিধা বেশিক্ষণ একা থাকতে পারলো না। স্বপ্না সহ আরো কাজিনরা ওপরে এসে দ্বিধাকে ঘিরে বসলো। কে কি রংয়ের জামা পড়বে না-কি শাড়ি পড়বে। কে কেমন মেহেদী দিবে। এসব নিয়ে আলোচনায় বসলো।
আজ সন্ধ্যায় সকলে মিলে শপিংয়ে গেলো। স্বাধীন সারাদিন বাসা ছিল না কাজে ব্যস্ত ছিলো। সন্ধ্যায় স্বাধীনের ক্লান্ত মুখ দেখে দ্বিধার খুব মায়া হলো তার পরও সারাদিন পর স্বাধীনকে দেখে মুখে হাসি। স্বাধীন দ্বিধার পাশাপাশি এসে দাড়াতেই দ্বিধা সুযোগ বুঝে বলল
” আপনার কষ্ট হচ্ছে? আসার দরকার ছিলো না ”
স্বাধীন ক্লান্ত মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল
” উহুম কারোর হাসি মুখ দেখে আমার ক্লান্তি চলে গেছে ”
দ্বিধা বুজলো তার কথা বলছে। লজ্জা পেলো। মনে মনে নিজেকে গালি দিলো। দ্বিধার শপিংয়ে সব জিনিস পত্র কেনা হলো স্বাধীনের পছন্দে। দ্বিধার সাথে মিলিয়ে স্বাধীন ও কিনলো। কেনা কাটা করতে করতে সকলে ক্লান্ত হয়ে রেস্টুরেন্টে ডুকলো। এতো ক্লান্তির পর দ্বিধার খেতে ইচ্ছে না হলেও জোর করে খেলো। ফলস্বরূপ গাড়িতে বাড়িতে যাওয়ার জন্য উদাত্ত হতেই বেশকিছু দূর গিয়ে দ্বিধা বলল
” গাড়ি থামান ”
হুট করে গাড়ি থামাতে বলায় স্বাধীন বলল
” কেনো ”
” থামান প্লিজ ”
স্বাধীন ফাঁকা জায়গা দেখে গাড়ি থামালো। দ্বিধা দেরি না করে গাড়ি থেকে নেমে দূরে গিয়ে বমি করে দিলো। স্বাধীন দ্বিধাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো। পানি দিলো। গাড়ি থেকে কাজিনরা নেমে এসে বলল
” ভাবির কি হলো? ”
” প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলো না-কি এতো তারাতাড়ি ”
স্বাধীন ধমক দিয়ে উঠলো। দ্বিধার এদিকে খেয়াল নেই। বাসাতের মতো খবর ছড়িয়ে পড়লো দ্বিধা প্রেগন্যান্ট। স্বাধীনের মামি আবারও কথা বলার সুযোগ পেয়ে বলল
” আমি আগেই বলছিলাম এটা প্রেমের বিয়ে আকাম করে লুকিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে ”
” মামি আপনার ফালতু কথা আমার সামনে বলবেন না মানুষ কি শুধু প্রেগন্যান্ট হলেই বমি করে? গ্যাস্টিকের জন্যও করে তাই মূর্খের মতো কথা বলবেন না ”
মামির মুখ থমথমে হয়ে গেলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ