প্রেমালয়,পর্বঃ_৩,৪

0
718

#প্রেমালয়,পর্বঃ_৩,৪
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
#পর্বঃ_৩

শিশির ভয় মিশ্রিত চোখে মুগ্ধর দিকে তাকালো। ঠোট ফুলিয়ে বললো,
– আচ্ছা থাকুন। আপনার ফোন টা একটু দেওয়া যাবে?
– সরি, ফোন নাম্বার নাও এর পর ফোন দিয়ে ফ্রেন্ডশিপ করো, কথা বলো, ইম্প্রেস করার চেষ্টা করো, এক সময় সাক্সেস হয়ে জুটিয়ে প্রেম করো, আমাকে দিয়ে এইসব হবে না বোন। কাল সকাল অব্দিই আছি। এর পর তোমার রাস্তায় তুমি আর আমার রাস্তায় আমি। ওকে?
– এক্সকিউজ মি. আমি শুধু ফোন টা চেয়েছি, আমার ফ্রেন্ডকে কল দেওয়ার জন্য। ফোন নাম্বার না। কি ভাবেন নিজেকে?
– ওয়েট ওয়েট, আপনি কিন্তু রেগে যাচ্ছেন। কথায় আছে না, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন? এখন এখানে আমার হ্যাল্প ছারা আপনি শুন্য।
– হেল্প করে আবার খোটা দিচ্ছেন আমায়?
– এই না না, একধম না। আপনাদের মেয়েদের একটাই দোষ, বুঝাই একটা আর বুঝেন একটা। আচ্ছা যাই হোক, ঝগড়া করবেন না। ইটস আই ডোন্ট লাইক। টেইক ইট।
মুগ্ধর হাত থেকে ফোন টা নিয়ে মাহিমাকে ফোন দিলো শিশির।
– হ্যালো, মাহিমা আমি শিশির।
– এই কোথায় তুই?
– আমি হসপিটালে।
– হসপিটালে মানে? কি হয়েছে তোর? আর কিভাবে কি হলো?
– তোকে বাসায় এসে সব বলবো।
– কোন হসপিটালে, আর কে আছে তোর সাথে? কিছু চিনিস এখানে?
– একটা ভাইয়া আছে সাথে, সে ই আমায় এখানে নিয়ে এসেছে। তুই টেনশন নিস না। খেয়েছিস?
– তোর টেনশনেই শেষ আবার খাওয়া।
– আচ্ছা খেয়ে ঘুমিয়ে পর, আমি ভালো আছি, বায়।

মুগ্ধর দিকে ফোন টা বাড়িয়ে দিলো শিশির। মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে ববলো,
– একটা প্রশ্ন করি?
– হুম,
– আপনার ফোনের ওয়েল পেপারে যে,,,,,,
– হুম, আমার ফ্যামিলি ফটো।
– ওহ্,,
– আপনার নাম টাই তো জানা হলো না।
– জ্বি শিশির,,,
– কি করেন আপনি?
– স্টাডি, এবার অনার্সে ভর্তি হলাম। আপনি?
– আমি মুগ্ধ।
– সরি, মুগ্ধ মানে বুঝলাম না।
– আমার নাম।
– ওহ্,, বলেই একটু হেসে দিলো শিশির।
– তো রাস্তায় গাড়ির নিচে কোন দুঃখে এসেছিলেন? সুইসাইড করার প্ল্যান আছে নাকি?
শিশির হেসে দিলো,
– হা হা, ডিম নিতে বেড় হয়েছিলাম।
– তার মানে সন্ধায় ও কিছু খান নি? ইশ আমার তো খেয়াল ই নেই বিষয় টা। আপনি একটু বসুন আমি বাইরে গিয়ে দেখি কিছু পাই কি না।
– আরে না না, দরকার,,,,

এতো রাতে প্রায় সব দোকান পার্ট ই বন্ধ। তবুও কিছু দুরে বড় রেস্টুরেন্ট গুলো মাঝে মাঝে দু একটা খোলা দেখা যাচ্ছে। একটা সস্থির নিশ্বাস ফেললো মুগ্ধ। এবার খাবার পাওয়া গেলেই হলো।
দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে মুগ্ধ। শিশির তখন বেডের সাথে আধ সোয়া হয়ে বসে আছে। হাত আর মাথা বেন্জেজ করা।
মুগ্ধ খাবার টা শিশিরের পাশে রেখে বললো,
– এতো রাতে এতোগুলো রেস্টুরেন্ট ঘুরে একটাতেই পেলাম খাবার। তারাতারি খেয়ে নিন। এর পর ঔষধ নিয়ে শুয়ে পরবেন।

শিশির কিছু বলছে না। চুপ করে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা কেমন সন্দেহ জনক। প্রথম পরিচয়েই এতো কিছু করছে। আচ্ছা এই খাবারে আবার কিছু মেশানো নেই তো?

মুগ্ধ খেয়াল করলো শিশিরের হাত বেন্ডেজ করা। যতই ‘ধরি মাছ না ছুই পানি’ এভাবেই বাচতে চায়, ততোই যত পানিতে নামে ততোই ভিজে যাচ্ছে সে।
– ক্যান আই হ্যাল্প ইউ?
– নো থ্যাংক্স, আমি খাবো না।
– ভয় পাবেন না কিছু মেশাইনি।
একটু অবাক হলো শিশির, কথা গুলো সে শুনে ফেলেনি তো?

শিশিরের মুখে খাবার তুলে দিতে লাগলো মুগ্ধ। যাই হোক ঔষধ তো খাওয়াতে হবে। শিশির প্রথমে আপত্তি করলেও, পরে কিছু বলেনি। খিদেও পেয়েছে প্রচুর। এখন এটাই শেষ ভরসা।
,
,
পর দিন শিশিরকে বাসায় নামিয়ে দেয় মুগ্ধ। মাহিমাকে ঔষধ গুলো বুঝিয়ে দিলো সে।
মুগ্ধর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিলো মাহিমা। মাহিমার দিকে হাতের তুড়ি মেয়ে মুগ্ধ বলে উঠে,
– হ্যালো, বুঝলেন?
– হুম,
– কি বুঝলেন?
– আপনি যা যা বুঝালেন?
– আচ্ছা গুড, এখন ওকে নিয়ে ভেতরে যান, আর মেডিসিন গুলো টাইমলি দিবেন।
বলেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো মুগ্ধ। মাহিমা শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
– ছেলেটা কে রে?
– ওই যে রাতে তোকে যার কথা বললাম?
– তুই সারা রাত ওর সাথে ছিলি?
– কি সব আবোল তাবোল বকছিস? ওর সাথে থাকবো কেনো? ও এক জায়গায় ছিলো, আর আমি আরেক জায়গায়।
– ওহ্ তাহলে ঠিক আছে,,,, আচ্ছা ওর নাম কি?
– মুগ্ধ,,,,,
মাহিমা গালে হাত দিয়ে বলে,
– আমিও মুগ্ধ,,,
– মানে?
– মানে কিছু না ভেতরে চল।
,
,
ফোনটা বেজে উঠলো। শিশির ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে, ফোনের স্কিনে সুশান্তের নাম্বার। ফোন টা রিসিভ করে কানে নেয় শিশির।
– হ্যালো ভাইয়া?
– হুম, কি করিস?
– এইতো বসে আছি তুমি?
– এইতো অফিসে। খেয়েছিস?
– হুম, খালা খালু কেমন আছে?
– ভালো আছে তারা। তোর আম্মু ফোন দিয়েছিলো, বললো গত কাল বিকেল থেকেই নাকি তোকে ফোনে পায়নি। কি হয়েছে তোর?
– ফোনে চার্জ ছিলো না, চার্জে দিতে ভুলে গেলাম তাই।
– কি এমন কাজ ছিলো যে, ফোন চার্জে দিতে ভুলে গেলি?
– একটু বিজি ছিলাম তাই।
– কি এমন বিজি ছিলি, শুনি?
– তুমি কি আমায় জেরা করছো?
– জেরা কই করছি, এমন জানতে ইচ্ছে হলো তাই বললাম।
– নতুন ভার্সিটি ভর্তি হলাম তাই পড়াশুনার চাপ বেশি।
ফোনের ওপাশ থেকে হেসে দিলো সুশান্ত।
– ওরে আমার বিদ্যা সাগর রে,, সে এখন পড়াশুনায় এতোই বিজি যে, ফোনটাও চার্জে দিতে ভুলে যায়। অথচ আগে এই ফোন টিপার অভিযোগেই বখা খেতো সে।
– ভাইয়া, সময় কি আর এক থাকে?
– আচ্ছা গুড। মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করবি। আর একটা কথা মনে রাখবি। ওখানে কোনো ছেলে ফ্রেন্ড বানাবি না। পড়াশুনার বাইরে যেনো কিচ্ছু না শুনি। আর কিছু প্রয়োজন হলে বলবি।
– আচ্ছা, এখন রাখি বায়, পরে কথা হবে।
– হুম, আর শুন,
– কি?
– খালাম্মাকে ফোন দিয়ে কথা বল। টেনশনে আছে তারা।
– আচ্ছা।
বলেই ফোন রেখে দিলো শিশির। মনে মনে বকতে থাকে সুশান্তকে।
‘শালা আমার ছেলে ফ্রেন্ড থাকুক আর না থাকুক, আমি যাই করি তোর কি রে? এমন ভাবে জেরা শুরু করে আর উপদেশ দেয়, মনে হয় আমি তার মায়ের পেটের আপন বোন।
,
,
সন্ধার পর পড়তে পড়তে মুগ্ধর কথা ভাবছে শিশির। গত কাল এই সময়টাই মুগ্ধর পাশে ছিলো সে। ছেলেটা সত্যি খুব কিউট। খুব ভালোও।
পড়ায় মন বসছে না। বোরিং ফিল হচ্ছে তার। তৃতীয় তলায় একটা ফ্লাটে থাকে তারা। বেলকনিতে গিয়ে বসলো সে। একটু শীতল ভাব বিস্তার করে আছে প্রকৃতি জু্রে। আকাশটাও আজ মেঘ জমে খুট খুটে অন্ধকারে ঘেরা।
ভেতর থেকে মাহিমার ডাক শুনা যাচ্ছে।
– শিশির তারাতারি খেয়ে নে। বাইরে মেঘ করছে হয়তো কারেন্ট চলে যাবে।
খাওয়ার কথা শুনেও মনে পরলো, কালকে মুগ্ধ কতো সুন্দর করেই খাইয়ে দিলো তাকে। ছেলেটা একটু অদ্ভুত টাইফের। আবার কেয়ারিং ও। বেলকনির গ্রিল ধরে বাইরের দিকে তাকালো শিশির। লেম্প পোষ্টের আলোয় সারা শহর আলোকিত। রাস্তায় একটা লেম্পপোষ্টের নিচে চোখ পড়তেই চক্ষু ছড়ক গাছ তার। দেখে কালো রঙের একটা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে মুগ্ধ। তবুও শিশির একটু ভালো ভাবে লক্ষ করলো এটা কি মুগ্ধ নাকি অন্য কেও?
না এটা তো মুগ্ধই। শিশিরকে দেখেই হাত নাড়লো মুগ্ধ। শিশির উল্টো দিকে ঘুরে গেলো।
‘ কি সাংঘাতিক একদিন না যেতেই পিছু নিয়ে নিলো?
শিশির রুমের দিকে উকি দিয়ে চুপিচুপি মাহিমাকে ডাক দিলো। মাহিমা তার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
– কি রে কি হয়েছে খেতে ডাকলাম, না গিয়ে আবার এখানে ডাকলি কেন?
– মুগ্ধ,,,
– মুগ্ধ? কি দেখে মুগ্ধ হলি?
– আরে পেছনে মুগ্ধ, রাস্তায়।
মাহিমা যেনো আর একটুও দেড়ি না করে উকি দিয়ে চার পাশ টা চেক করতে লাগলো। কিন্তু কোথাও মুগ্ধকে দেখতে পেলো না সে।
– কি রে কোথায়?
শিশির এবার পেছনে তাকিয়ে দেখে মুগ্ধর নাম গন্ধও নেই নিচে। ওই জায়গায় একটা সি’এন’জি দাড়ালো। মাহিমাকে বলে উঠে,
– আরে আমি নিজ চোখে মুগ্ধকে ওখানে দেখলাম।
– কোথায়?
– ওই যে সি’এন’জি টার জায়গাতেই মুগ্ধ গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। আমাকে দেখে হাতও নারিয়েছে।
মাহিমা আর শিশির দুজনই সি’এন’জি টার দিকে তাকালে। দেখে ওখানে সি’এন’জি র সাথে জামা কাপড় ছেড়া একটা পাগল দাড়িয়ে বিড়ি টানছে। শিশির ও মাহিমার দিকে তাকিয়ে, বিড়ির ধোয়া ছেড়ে দাত বের করে বড় একটা ভেটকি দিয়ে হাত নাড়িয়ে বললো,
~ হায়,,,,,,,,

To be continue…..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরুধ রইলো।?

#প্রেমালয়
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

#পর্বঃ_৪

হালকা শীতল ভাব, ধিরে ধিরে আলোকিতো হচ্ছে পুরো শহর। গাছে গাছে পাখিদের মন মুগ্ধকর কিচির মিচির ডাক। হালকা জ্বলে উঠা প্রভাতি আলোয় অন্য রকম দেখায় ব্যস্ত শহরটাকে। তবে সবাই এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে না। কারণ, আমরা মানব জাতি বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত। কেউ বিলাশি জীবন নিয়ে চলছে, তাদের সকাল হয় ১০ টার পরে। যখন সূর্য প্রায়ই তেজস্ব হয়ে উঠে।
আবার কেউ জিবিকা নির্বাহের জন্য বেড়িয়ে পড়তে ব্যাস্ত। তাদের এতো সময় নেই সৌন্দর্যকে উপভোগ করার। আবার ইয়াং জেনারেশনের ক্ষেত্রে বলতে গেলে, রাত ভর চ্যাটিং করে, সকাল টা পার করে দেয় ঘুমিয়ে।
এক কথায় বলতে গেলে তুমি প্রকৃতির মাঝে মুগ্ধতা খুজতে গেলে তোমাকে আগে প্রকৃতি প্রমি হয়ে উঠতে হবে।

সকালের নাস্তা শেষ করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো শিশির ও মাহিমা। একটা রিক্সা ডেকে উঠে গেলো তারা। ভার্সিটি বেশি দুরে না। এখান থেকে ২০ টাকার ভাড়া মাত্র।
ভর্তি হওয়ার পর আজকে ফাস্ট ক্লাস। রিক্সা এসে নামিয়ে দিলো কলেজের গেটের সামনে। ঘড়ির কাটা তখন ৮ঃ৪৫ মিনিট। প্রথম দিন অন্তত একটু আগে আসা উচিৎ ছিলো। নিজ ডিপার্টমেন্ট খুজতে হবে। তার পর ক্লাস, কতো প্যারা। রিক্সা ওয়ালাকে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ব্যাগ নিয়ে দ্রুত পায়ে হাটা ধরলো শিশির ও মাহিমা। কলেজ গেট ক্রস করে ভেতরে ঢুকতেই একটা ছেলের সাথে ধাক্কা। ফোনে কার সাথে কথা বলতে বলতে খুব তাড়াহুরো করে বের হচ্ছিলো ছেলেটা। হুট করে ধাক্কা খাওয়ায় হাত থেকে ফোন টা নিচে পরে গেলো ছেলেটার। শিশির সরি বলে আবার হাটা ধরলো।
পেছন থেকে ছেলেটা বলে উঠে,
– এই যে মিস, এটা কি হলো?
পাশ থেকে মাহিমা বললো,
– সরি ভাইয়া, ও আসলে খেয়াল করেনি।
– আপনার বান্ধবি চোখ কি কপালে নিয়ে ঘুরে? নাকি ভার্সিটির সুদর্শন ছেলে চোখে পরলেই গায়ের উপর ধাক্কা মারতে উড়ে যাওয়ার অভ্যেস আছে? কোন টা?
শিশির এবার একটু রেগে গিয়ে বললো,
– এইবার কি একটু বেশি হচ্ছে না ভাইয়া? সরি তো বললাম ই। এবার কি পায়ে ধরেও মাপ চাইতে হবে?
পাশ থেকে একটা ছেলে এসে বললো,
– কি হয়েছে হৃদয়? এই মেয়ে, তুমি কার সাথে কথা বলছো যানো?
– সরি ভাইয়া এতো জানার ইচ্ছে নেই।
বলেই মাহিমার হাত ধরে হাটা ধরে শিশির।
হৃদয় নিচ থেকে ফোন টা উঠিয়ে পাশের ছেলেটাকে বললো,
– মেয়েটা কে?
– জানিনা, আজ প্রথম দেখলাম। হয়তো নতুন ভর্তি হয়েছে।
– ওর সব ইনফরমেশন আমি চাই।
– কেন ভাই, পছন্দ হয়েছে নাকি?
– মজা করবি না, নতুন হয়েও তার এতো তেজ। আমার সাথে ত্যারা কথা বলার স্বাধ আমি মিটাবো।
বলেই সান গ্লাস টা পড়ে সেখান থেকে চলে গেলো হৃদয়।

ক্লাসের দিকে যেতে যেতে মাহিমা বললো,
– এভাবে কেন কথা বললি? দোষ টা তো তারও ছিলো না।
– দোষ নিয়ে বলিনি আমি। সে পরের কথাটা কি বললো? সু-দর্শন ছেলে দেখলে নাকি ইচ্ছে করে গায়ের উপর পরি। সুন্দর্য যতটুকু নেই, ভব তার চেয়ে বেশি।
– তবুও ওসব সিনিয়র ছেলেদের সাথে তর্কে না জড়ানোই ভালো।

ক্লাস খুজতে এতো দেড়ি হলো না তাদের। ক্লাসের সামনে যেতেই দেখলো ৫ মিনিট অতিরিক্ত। স্যার অলরেডি চলে এসেছে।
– মে আই কাম ইন স্যার?
স্যার ঘরির দিয়ে চেয়ে বললো,
– ইয়েস কাম ইন,, নেক্সট টাইম টাইমলি আসবে।
– জ্বি স্যার।
– নাম কি তোমাদের?
– স্যার আমি শিশির আর ও হলো আমার বান্ধবি মাহিমা।
– ওকে, গো টু সিট।

শিশির ও মাহিমা একসাথে সিটে এসে বসলো। স্যার টা সুবিধার মনে হচ্ছে না। আজ প্রথম দিন, তাও মুখে কোনো হাসি নেই। বয়স তো প্রায় ৪৫ ঘনাবে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে একটু রাগি প্রকৃতির।

স্যার এর ক্লাস শেষে এলো এক ম্যাম। ম্যামটা একটু ভালোই মনে হলো। প্রথমেই হাসি মুখে সবার সাথে পরিচিত হলো। এর পর ক্লাস শুরু করলো।
হুট করে একটা ছেলে দরজার সামনে এসে বললো,
– এক্সকিউজ মি ম্যাম, মে আই কাম ইন?
– ইয়েস।
ছেলেটি ম্যাম এর কাছে গিয়ে বললো,
– একটা মেয়েকে ডাকছে নিচে।
– এখন ক্লাস টাইম কেউ বাইরে যাবে না।
– ম্যাম, আড়জেন্ট। মুগ্ধ ভাইয়া পাঠিয়েছে।
মুগ্ধর নাম শুনে ম্যাম বললো,
– আচ্ছা ঠিক আছে, কোন মেয়ে?
– ম্যাম শিশির।

ম্যাম সকলের উদ্দেশ্য করে বললো,
– এখানে শিশির কে?
ভয়ে ঘাবড়ে গেলো শিশির। মাথায় একটা চিন্তা ঢুকে গেলো, সকালের ছেলেটা কোনো ঝামেলা করছে না তো? ভয়ে প্রান যায় যায় অবস্থা শিশিরের। ম্যাম আরেকবার বলতেই উঠে দাড়ায় শিশির।
শিশিরকে উদ্দেশ্য করে ম্যাম বললো,
– তোমাকে বাইরে ডাকছে, দেখে এসো।
এইবার বুকটা কাপতে শুরু করলো শিশিরের। ভয়ার্ত চেহারায় মাহিমার দিকে তাকালো। মাহিমার মুখেও দুশ্চিন্তার ছাপ। তারও ধারণা হয়তো সকালের সেই হৃদয় নামের ছেলেটা কোনো ঝামেলা করবে।
শিশির ম্যাম এর দিকে চেয়ে বললো,
– ম্যাম অনুমতি দিলে আমি মাহিমাকেও সাথে নিয়ে যেতে চাই।
এর মাঝেই ছেলেটা বললো,
– না, শুধু আপনাকেই ডাকা হয়েছে।

শিশির ভয়ে গুটি গুটি পায়ে ছেলেটার পেছন পেছন গেলো। ছেলেটা হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলো, ওইযে ভাইয়া।
এবার যেনো কলিজায় পানি এলো শিশিরের। এতোক্ষনে গড়ে উঠা ভয় টা এবার একটু একটু কমতে লাগলো মুগ্ধকে দেখে। একটা বাইকের উপর বসে আছে মুগ্ধ৷ হাতে ফোন নিয়ে গুন গুন করে কি যেনো বলছে।
মুগ্ধর কাছে এগিয়ে গেলো শিশির। মুগ্ধ ফোন টা পকেটে নিয়ে বলে,
– কেমন আছেন মিস শিশির আহমেদ।
– জ্বা আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তবে আপনি এখানে?
– আমি তো এখানেই পড়ি, মাস্টার্সে। আপনিও তাহলে এখানেই ভর্তি হলেন?
– হুম, আচ্ছা আপনি কি করে জানলেন আমি এখানে ভর্তি হয়েছি, আর কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ি তাও? মানে এই কলেজে আমি ভর্তি হয়েছি এটা আপনি জানলেন কি করে।
– প্রথম ক্লাসে আপনার ডিপার্টমেন্টের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আপনাকে চোখে পরলো, তাই জানলাম।
– আমাকে চিনলেন কি ভাবে? হুম?
– আমি কাউকে ভুলি না। আর যাকে একটি রাত পাহারে দিলাম তাকে ভুলে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। আপনি আমায় চিনেছেন?
– হুম অবশ্যই,
– তাহলে আমি চিনবো না কেন?
– হিহিহি, বুঝলাম।
– আপনার হাসিটা সুন্দর।
শিশির এবার হাসি থামিয়ে মুগ্ধর দিকে তাকালো,
– কেন ডেকেছেন বলুন,
– এমনি ইচ্ছে হলো ডাকলাম, কেন কোনো সমস্যা?
– না না, এমনি জানতে ইচ্ছে হলো।
– আচ্ছা এখন ক্লাসে যান। আছেন যেহেতু দেখা তো প্রতিদিনই হবে।
– হুম তা হয়তো হবে। তবে প্রতিদিন কি এভাবে ডেকে আনবেন?
– হুহ্, আমার তো বয়েই গেছে প্রতিদিন আপনাকে এখানে ডেকে এনে কথা বলার। আমার তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।
– হিহিহি, এমনি মজা করে বললাম।
– হুম এখন ক্লাসে যান।
– আচ্ছা,,,,
– আর শুনুন,
– হুম,
– কোনো সমস্যা হলে, বা কোনো প্রব্লেমে পরলে আমাকে বলতে পারেন।
শিশির, মাথা কাত করে হাসি মুখে বললো,
– আচ্ছা,,,
মুগ্ধ একটা মুগ্ধতার হাসি হাসলো। তার পর বাইক নিয়ে চলে গেলো বাইরে। হয়তো আজকে আর ক্লাস করবে না।

To be continue……..

~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরুধ রইলো?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here