#প্রেমালয়,পর্বঃ_৬,৭
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
#পর্বঃ_৬
শিশিরকে বাড়ি পৌছে দিয়ে চলে গেলো মুগ্ধ। কলিং বেল বাজতেই, মাহিমা এসে দরজা খুলে দিলো।
– কোথায় গিয়েছিলি তুই?
– কোথায় আবার বাইরে,,,
– বাইরে নাকি মুগ্ধর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি?
– দেখা করতে যাইনি, মুগ্ধ ভাইয়া এসেছিলো। আর আমায় নিচে ডাকলো, আমি যাস্ট কথা বলেই চলে আসলাম।
– কেন ডেকেছিলো?
– ওই যে কলেজে আজ একটা ঝামেলা হলো না, ওটার বেপারে জিজ্ঞেস করতে এসেছিলো।
– সত্যি তো?
– আরে বাবা আমি মিথ্যে কেন বলবো তোর কাছে?
– তো মুগ্ধ ভাইয়া ডাকছে তা আমার থেকে লুকানোর কি ছিলো, আমিও যেতাম তোর সাথে?
– আচ্ছা বাবা, সরি,,,,,
– আচ্ছা একটা কথা বলতো, মুগ্ধ তোকে এতো ডাকে কেন? মানে বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছে বুঝতে পারছিস? আমার মনে হয় মুগ্ধ ভাই তোকে লাইক করে।
– আরে ধুর, তোর মনে এইসব উল্টা পাল্টা জিনিসই আসে। এটা কি ভালো কিছু আসার মাথা?
,
,
পরদিন কলেজের মাঠে আড্ডা দিচ্ছিলো শিশির ও মাহিমা। সেকেন্ট ইয়ারের একটা ছেলে এসে শিশিরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– এই যে আপু, আপনাকে ভাইয়া ডাকছে।
মুগ্ধ ছারা এভাবে আর কেও তাকে ডাকার কথা না। তাই ছেলেটাকে শিশির প্রশ্ন করে,
– কোথায়?
– ওই যে হৃদয় ভাইয়া,,,
শিশির দেখলো কয়েকটা ছেলের মাঝখানে দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে হৃদয়। আর হাতে একটা ফুল নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
হৃদয়কে দেখেই রাগটা বেড়ে গেলো তার। ছেলেটাকে বললো,
– আপনার ভাইকে গিয়ে বলে দিন, আমি যেতে পারবো না। আর এসব ছ্যাছড়ামি না করে সিনিয়র সিনিয়রের মতো থাকতে।
ছেলেটা চলে গেলো। শিশির মাহিমাকে বললো,
– তোর ফোন টা একটু দে তো।
– কেন?
– ভাইয়াকে কল দিতে, আমার ফোনের ব্যালেন্স শেষ।
– কোন ভাইয়া? মুগ্ধ?
– না, আমার খালাতো ভাই, সুশান্ত ভাইয়া। এই জেলাতেই থাকে। গাড়ি নিয়ে আসলে এখান থেকে ১ ঘন্টার রাস্তা।
– তার মানে ভাইয়াকে ডাকবি এখানে? দেখ ছেলেগুলো খুব খারাপ। আর ওর সাথে অনেক গুলো ছেলে। অজথা ঝামেলা করিস না। এসব ইগনোর করাই ভালো।
– তুই দে তো,
শিশির ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন দেওয়ার আগেই হৃদয় এসে ছোঁ মেরে ফোন টা নিয়ে নিলো। শিশিরের চার পাশে ঘুরতে ঘুরতে বললো,
– মাংস নেই এক কিলো, শরিরে কতো দেমাগ। যদিও সুন্দরি মেয়েদের গেমাগ একটু থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে, অতি কোনো কিছুই ভালো নয়।
এর পর দুই আঙুল দিয়ে শিশিরের গাল টিপে ধরে বলে,
– তোমাকে হাসি মুখেই ভালো মানাবে, দেমাগে নয়, বুঝলে সুন্দরি?
শিশির একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে দুড়ে গিয়ে দাড়ালো। চার পাশের স্টুডেন্ট রা তখন তামাশা দেখতে ব্যাস্ত। কেউ কেউ অলরেডি ভিডিও করতে শুরু করে দিয়েছে।
হাত ছারিয়ে নেওয়ায় হৃদয় চোখ বন্ধ করে জোড়ে একটা শ্বাস নিয়ে রাগ প্রকাশ করলো। এর পর এক টানে শিশিরে ওড়নাটা নিয়ে নিলো সে। ওড়নার গ্রান নিয়ে নিজের গলায় পেচিয়ে নিলো হৃদয়।
– আজ দেখবো তোমার কতো দেমাগ, যতই দেমাগ দেখাবে ততই একটা একটা খুলতে থাকবো সবার সামনে।
চার পাশের ছেলে গুলো যেনো আরো অধিক আগ্রহে বিনোদন নিতে লাগলো। এইসব সহ্য করতে না পেরে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কেঁদে দিলো শিশির। চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে, আর কিছুই করতে পারছে না সে। কারণ এখানে কেউই হৃদয়কে কিছু বলছেনা। শুধু ফ্রিতে বিনোদন নিচ্ছে সবাই।
হুট করেই সকলের হাসাহাসি অফ হয়ে গেলো। হৃদয়ের সাথে যেই কয়েকজন ছেলে ছিলো সবাই দৌড়ে চলে গেছে সেখান থেকে।
অন্য দিকে মুগ্ধ ও তার বন্ধুরা আসলো সেখানে। মুগ্ধ বাইক থেকে নেমে জ্যাকেট টা খুলে শিশিরের গায়ে জড়িয়ে দিলো মুগ্ধ। হাতে একটা হকস্টিক তার। হৃদয়ের দিকে ঘুরেই বুক বরাবর এক লাথি মারতেই ছিটকে কিছুটা দুরে পরে গেলো সে। উঠার সুজুগ না দিয়ে হকস্টিক দিয়ে হৃদয়ের উপর সব রাগ ঝাড়লো। আশে পাশে কেউ মুগ্ধকে থামাতে আসেনি। কারণ তারা সবাই মুগ্ধর রাগ সম্পর্কে অবগত৷ এতোক্ষন যেই ছেলে গুলো মজা নিচ্ছিলো, তারাই এখন ভয়ার্ত মুখ নিয়ে চেয়ে আছে নিচের দিকে। মুখ হাত সব দিক দিয়েই রক্ত ঝড়ছে হৃদয়ের।
মুগ্ধ সকলের উদ্দেশ্যে বলে,
– এটা তো ইভতেজারের আড্ডা খানা নয়। এটা একটা ভার্সিটি। এখানে কোনো স্টুডেন্ট কে রেগিং করার অধিকার কারো নেই।
মুগ্ধ গিয়ে শিশিরের পাশে দাড়ায়, শিশিরকে একহাতে নিজের সাথে ধরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– আর এই মেয়েটার বিষয়ে যেনে এই মুহুর্তের পর থেকে আমি আর কারো মুখে যেনো কিছু না শুনি। সোজা কথা আজ থেকে শিশিরের দিকে কোনো ছেলে চোখ তুলে তাকাবে তো, তার চোখ উপ্রে ফেলবো। কথাটা মাথায় ঢুকিনাও সবাই।
বলেই শিশিরের হাত ধরে সবার সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে, মুগ্ধ। সামনে থাকা সব ছেলে মেয়ে গুলো, সরে জায়গা করে দিলো তাদের।
ক্লাসে নিরবে কেঁদে চলছে শিশির। আর পাশে বসে আছে মুগ্ধ। শিশির কাঁদু কাদু গলায় বললো,
– আমায় একটা হ্যাল্প করবেন?
– হুম, কি?
– আমি আর এই কলেজে পড়বো না, আমায় টিসির ব্যাবস্থা করে দিতে পারবেন? অন্য কোনো বেসরকারি কলেজে চলে যাবো আমি।
– কোথাও যেতে হবেনা তোমার, এই কলেজেই থাকবে তুমি। কেউ তোমার দিকে চোখ তুলে তাকানোর দুঃসাহস দেখাবে না আজকে থেকে।
কিছু না বলে চুপ করে আছে শিশির।
– কিচ্ছু ভালো লাগছে না আমার।
– চলে আজ তোমায় নিয়ে একটা জায়গায় যাবো। ওখানে গেলেই মন ভালো হয়ে যাবে তোমার।
– ইচ্ছে করছে না, আমায় বাসায় দিয়ে আসবেন?
শিশিরের হাত ধরে বেড়িয়ে এলো মুগ্ধ। বাইকের হেলমেট টা শিশিরের মাথায় পড়িয়ে দিয়ে বললো, পেছনে উঠে বসতে।
আশে পাশের সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কারণ আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েকে মুগ্ধ বাইকে বা গাড়িতে নিয়ে ঘুরতে কেউ দেখেনি।
মুগ্ধ আর হৃদয় দুজনই স্টুডেন্ট পলিটিক্স করে। দুজনই সামনে ভিপি নির্বাচন করবে। সব জায়গায় মুগ্ধর পপুলারিটি, ও ক্ষমতা দুটুই বেশি। কলেজের সকল স্টুডেন্টই মুগ্ধকে পছন্দ করে। সবাই বলে, মুগ্ধই ভিপি হবে এই কলেজের।
,
,
মাথায় ও হাতে বেন্ডেজ করা হৃদয়ের। পশে থাকা একটা ছেলে বললো,
– মেয়েটা মগ্ধ ভাইয়ের জিএফ হয়, ওইদিনও আমি তাদেরকে একসাথে রেস্টুরেন্টে দেখেছি।
হৃদয় রাগে অন্য হাত দিয়ে ছেলেটার গালে চর বসিয়ে দেয়।
– এই কথাটা আগে বললে কি হতো, যে ওটা মুগ্ধর সম্পত্তি।
– ভাই আমি তো আর জানতাম না, এতো কিছু হয়ে যাবে। তাছারা মুগ্ধ ভাই সব দিক দিয়ে আপনার থেকে এগিয়ে,
– ওটা ছিলো, এবার থেকে মুগ্ধর স্থান আমার থেকে পিছিয়ে থাকবে।
– কিভাবে সম্ভব এটা?
– শক্তি দিয়ে নয়, ব্রেইন দিয়ে খেলাটাই রাজনিতির কৌশল। দুর্বল জায়গায় আঘাত করলে বাঘের মতো শিকারিও বিড়াল হয়ে বাধ্য হয়, আর সে তো মানুষ।
,
,
সন্ধা পেড়িয়ে আধার নেমে এলো। বিষণ্ন মনে বেলকনিতে বসে আছে শিশির। বাইরে তাকিয়ে দেখে রাস্তায় কয়েকটা ছেলে। হৃদয়ের সাথে যাদের দেখতো ওই ছেলে গুলো, নিচে হাটাহাটি করছে। ভয়ে বুকের বা-পাশ টায় ধুপ ধুপ শব্দটা ক্রমশ বেড়েই চলছে।
,
,
দুই দিন আর কলেজে যায় নি শিশির। সন্ধার পর ছাদে গিয়ে মুগ্ধকে দেখে অবাক হলো সে। মুগ্ধ এখানে কিভাবে আসলো, একটা প্রশ্ন গুর পাক খাচ্ছে। মুগ্ধকে দেখলেই যেনো এক অদ্ভুত সাহস জন্ম হয় তার মাঝে। মনে হয় কেউ আর তার কিচ্ছু করতে পারবে না।
২য় তলার ভারাটিয়া রা কয়েকদিন আগে চলে গেছে। খালি পেয়ে ২য় তলাতেই নাকি উঠলো মুগ্ধ। কারণ শিশিরকে খুব কাছে রাখতে চায়, যেন কেউ তার কিচ্ছু করতে না পারে।
মুগ্ধর হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ ছিলো ওই দিন। লাল টকটকে তাজা গোলাফ।
,
,
,
বেশ কয়েকদিন এমনই কেটে গেলো। এখন আর কেউ ঝামেলা করেনা আগের মতো। সব ঠিক ঠাক।
ভার্সিটিতেও মুগ্ধ আর হৃদয়ের ভিপি নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আর দুি একদিন আছে বাকি। সবাই মুগ্ধকেই সাপোর্ট করছে। সারা বছর চিন্তা থাকলেও, আজ হৃদয়ের মুখে নেই কোনো দুঃশ্চিন্তার ছাপ। সে যেনো এই দিন টার অপেক্ষায়।
ঠিক আগের দিন রাতে মুগ্ধর কাছে একটা ফোন এলো।
মুগ্ধ দ্রুত বাড়ি ফিরে ৩য় তলায় চলে যায়, দেখে দরজা খোলা। আর ভেতরে অচেতন হয়ে পরে আছে মাহিমা। আর শিশিরকে কোথাও খুজে পেলো না। এই একটা কারণেই হৃদয়ের কাছে হেরে যায় সে। পাশে থাকা কাচের জগ টা ফ্লোড়ে ছুরে মারতেই তা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। আজ এই রাগ শান্ত হওয়ার মতো না।
হৃদয়কে ফোন দেয় মুগ্ধ।
– দেখ ভাই, তোর সব কথা আমি মেনে নিবো? তবুও প্লিজ শিশিরকে কিছু করিস না। ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে।
হৃদয় হা হা করে হেসে উঠে, তার পর বললো,
– দেখ ভাই, আমি যতই খারাপ হই না কেন, তবুও আমার উপর এই বিশ্বাস টা রাখতে পারিস যে, আমি তোর শিশিরের গায়ে একটা ফুলের টোকাও দিবো না, যদি তুই নিজের নাম কাটিয়ে নিয়ে আমার বিজয় করে দিস। আর তা করলে তোর শিশিরের মুখও আর তুই কখনো দেখতে পাবি না। এবার ডিসিশন তোর, কাকে চাস তুই? শিশির নাকি পুরো ভার্সিটির ক্ষমতা। যে কোনো একটাই বেছে নিতে হবে তোকে।
বলেই ফোন কেটে দেয় হৃদয়।
পর দিন বিয়া প্রতিপক্ষ ছারাই জিতে গেলো হৃদয়। সারা কলেজ পিনপতন নিরবতা। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, মুগ্ধ কেন নিজের নাম সরিয়ে নিলো?
সন্ধায় একটা গাড়ি এসে মুগ্ধর গাড়ির সামনে শিশিরকে নামিয়ে দিয়ে গেলো। শিরিরের দিকে কিঢ়ুক্ষন আহত চোখে তাকিয়ে থেকেই তারে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মুগ্ধ।
,
,
পরদিন সকাল বেলায় কলিং বেল বাজতেই দরজা খোলে শিশির। দেখে বাইরে সুশান্ত ভাইয়া দাড়িয়ে। তার মানে ভাইয়া সব জেনে গেছে। শিশির ভালোই বুঝলো এখানে আর থাকতে দিবে না তাকে।
শিশিরকে নিয়ে একটা মহিলা হোস্টেলে বর্তি করিয়ে দেয় সুশান্ত। তার সাথে মাহিমাকে বললেও সে যায় না ওখানে। মাহিমা কেন না বললো, তা সেদিন বুঝতে পারলো না সে। এবার কিছুটা দুরুত্ব বেড়ে যায় মুগ্ধ আর শিশিরের মাঝে।
এদিকে মুগ্ধর মাস্টার্স এক্সামও শেষ। একন মাহিমার থেকেই শিশিরের খোজ খবর নিতে হয় তার। সাপ্তাহেও একবার দেখা করতে কষ্ট হয় তাদের। শিশিরের জন্য কিছু নিলেও তা মাহিমাকে দিয়ে শিশিরের কাছে পাঠাতো সে। কিন্তু তা শিশিরের কাছে কতটুকু পৌছাতো তা আর জানতো না সে।
শিশিরের বিষয়ে মুগ্ধকে মাহিমা হেল্প করলেই তাকে ট্রিট দিতে হবে। বেপারটা মুগ্ধ এতো সিরিয়াস ভাবে নেয় না। রেস্টুরেন্টে মাহিমাকে ট্রিট দেওয়ার পর শিশিরের বিষয়ে হ্যাল্প করতো মাহিমা, এইটুকুই জানে মুগ্ধ। বাট মুগ্ধর সাথে তোলা পিক গুলো প্রায়ই শিশিরকে দেখাতো মাহিমা। মাহিমার সাথে রেস্টুরেন্টে মুগ্ধ। এগুলো অসস্থি লাগতো শিশিরের কাছে। শিশিরের পোনও নেই। সুশান্ত নিয়ে গেছে। দুই দিন পর পর এসে খোজ খবর নেয় সুশান্ত। মুগ্ধ শিশিরের জন্য ফোন নিলেও তা নিলো না শিশির। কারণ শিশিরের ধারণা এখন মাহিমার সাথে জড়িয়ে গেছে সে। মাহিমাও তাকে তাই বলে।
,
,
মেয়েটা বড্ড অভিমানি। মুগ্ধর সাথে যোগাযোগ টা আগের তুলনায় কমিয়ে নেয়। কিন্তু মুগ্ধকে এই ব্যপারে কিছু বলে না সে। আর বলতেও চায় না। ভালো থাকুক সে। এদিকে মাহিমার মুখেও একটি বিজয়ি হাসি। শিশির দুরে সরে গেলেই নিজের সাথে জড়িয়ে নিবে মুগ্ধকে। কারণ মুগ্ধকে তো সে সেই প্রথম দিনই ভালোবেসে ফেলেছিলো।
মুগ্ধকে শিশিরের কথা বলে ডেকে এনে মাহিমা। ঐ দিকে মাহিমাকে বলে, আজ আমরা মিট করছি। বিষয়টা ছিলো এমনই।
এসব বিশ্বাস করে ধিরে ধিরে মুগ্ধর প্রতি ভালোবাসা টা মরে যেতে থাকে তার। একটা মানুষ কতোটা খারাপ হলে। আমার বান্ধবির সাথেও রিলেশনে যেতে পারে।
এভাবেি কাটতে থাকে দিন। মুগ্ধ এখন দেকা করতে চাইলেই ব্যস্ততা দেখায় শিশির। কারণ সে চায় না মাহিমাও তার মতো ঠকে যাক। সে না হয় মাহিমাকে নিয়েই ভালো থাক।
,
,
মুগ্ধর বাবা মুগ্ধকে নিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া৷ সব চেয়ে বেশি দুরুত্ব বাড়ে এই থেকে। মুগ্ধ প্রায়ই হোস্টেলের সামনে দাড়িয়ে থাকতো। বাট শিশির দেখা দিতো না।
এদিকে মাহিমা প্রায়ই মুগ্ধকে মোটিভেশন কথা শুনাতো যে, সবাই সত্যিকারে ভালোবাসার দাম দিতে যানে না। আর শিশির হয়তো তাকে আর নিজের জীবনে রাখতে চায় না তাই এমন টা করে।
মুগ্ধ চলে যাওয়ার আগের দিন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না শিশির। ছুটে যায় মুগ্ধকে একবার দেখার জন্য।
গিয়ে দেখে মাহিমা জড়িয়ে ধরে আছে মুগ্ধকে। দুর থেকে তাদের কথা গুলো শুনতে পেলো না শিশির। শিশিরের মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষন এখানে দাড়িয়ে থাকলে চিৎকার করে কেঁদে দিবে সে। তাই চোখ মুছতে মুছতে সেখান থেকে চলে গেলো শিশির।
ঐদিকে মাহিমাকে ছারিয়ে একটু দুরে গিয়ে দাড়ায় মুগ্ধ।
– এসব কি মাহিমা, তোমার সাথে কি আমার এি সম্পর্ক? তোমাকে আমি যাস্ট বোনের চোখেই দেখি।
মাহিমা বলে,
– আপনি আমাদের ছেরে চলে যাবেন তাই না ভাইয়া? আর কবে দেখা হবে তা তো আর জানিনা।
মুগ্ধ আর কিছু বললো না। হয়তো আবেগে এমনটা করেছে সে। আর মাহিমা তো তার ছোট বোনের মতোই।
মাহিমা আবার বলে,
– দেকছেন, শিশির আজও আপনাকে একটিবারের জন্য বিদায় দিতে আসলো না।
মুগ্ধ কিছু বললো না। একটা দির্ঘশ্বাস নিলো। তার পর মাহিমার হাতে একটা ডায়রি দিয়ে বললো। এটা শিশিরের কাছে পৌছে দিও।
মাহিমা ওটা হাতে নিয়ে বললো,
– আচ্ছা ভাইয়া। আপনার প্লাইট কখন?
– আগামি কাল সকালে।
– সাবধানে যাবেন, আর নিজের যত্ন নিবেন।
– হুম, আর এই ডায়রি টা তুমি শিশিরকে দিবে। এখানে অনেক কিছুই লেখা আছে। আমার বিশ্বাস শিশির কখনো আমায় দুরে ঠেলে দিতে পারে না।
মুগ্ধ চলে গেলো। মাহিমা ডায়রিটা খুলে একটা হাসি দিলো। ইশ এতো কিছুর পর এখনো শিশিরের জন্য, কতো ভালোবাসা তার।
মাহিমা মুগ্ধর মতো করে একটা চিরেকুট লিখলো। আর তা শিশিরের কাছে পৌছে দিলো সে।
যেখানে অনেক কিছুই লিখা ছিলো। আর মুল টপিক টা ছিলো,
‘ আমায় মাপ করে দিও শিশির। কখন যে মাহিমাকে ভালোবেসে ফেলেছি তা নিজেও বুঝতে পারিনি। আমি চলে যাচ্ছি। ফিরে এসেই মাহিমাকে বিয়ে করবো আমি। আশা করি আমাদের পথের কাটা হবে না তুমি। নিজেকে ঘুচিয়ে নিও। অনেক ভালো কাউকে পাবে তুমি। আমায় ক্ষমা করে দিও শিশির।
সেদিন খুব কেঁদেছে শিশির। পাগলের মতো কেঁদেছিলো শিশির। বালিশের মাঝে মুক গুজে কেঁদেছিলো। এতো দিনের সম্পর্ক টা মুগ্ধ কিভাবে পারলো শেষ করে দিতে? তাও আবার তারই বান্ধবি মাহিমার জন্য। যাকে শিশির নিজের বোনের চেয়েও বেশি কিছু ভেবেছিলো।
কয়দেক দিন পর অনার্স ফাইনাল এক্সাম তার। আর এখন গভির রাতে বালিসে মুখ গুজে কান্না করছে সে।
সব শেষে নিজেকে একটু শান্ত করলো সে। তখন প্রায় রাত শেষের দিকে।
হাতে একটা ব্লেড নিয়ে চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে কয়েকটা শ্বাস নিলো সে।
যদিও রাগ ও ডিপ্রেশনের মাঝে কিছু করা ঠিক না।
To be continue……….
কিছু কথাঃ অনেকদিন পর গল্প লেখায় গল্পটা ঠিক ভাবে সাজাতে পারিনি। শুরুতেই একটু এলোমেলো হয়ে গেছে। তাই গল্প টা দুই পার্ট করে ফেলছি। প্রথম পার্টে শুধু অতিতে কি হয়েছে তা ই দেখানো হবে। আর মুল গল্প টা শুরু হবে ২য় পার্ট থেকে। আগামি পর্বে হয়তো গল্পটার প্রথম পার্ট শেষ। এর পর মুল গল্প টা ২য় পার্ট থেকে শুরু করবো।
শিশিরকে বাড়ি পৌছে দিয়ে চলে গেলো মুগ্ধ। কলিং বেল বাজাতেই, মাহিমা এসে দরজা খুলে দিলো।
– কোথায় গিয়েছিলি তুই?
– কোথায় আবার বাইরে,,,
– বাইরে নাকি মুগ্ধর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি?
– দেখা করতে যাইনি, মুগ্ধ ভাইয়া এসেছিলো। আর আমায় নিচে ডাকলো, আমি যাস্ট কথা বলেই চলে আসলাম।
– কেন ডেকেছিলো?
– ওই যে কলেজে আজ একটা ঝামেলা হলো না, ওটার বেপারে জিজ্ঞেস করতে এসেছিলো।
– সত্যি তো?
– আরে বাবা আমি মিথ্যে কেন বলবো তোর কাছে?
– তো মুগ্ধ ভাইয়া ডাকছে তা আমার থেকে লুকানোর কি ছিলো, আমিও যেতাম তোর সাথে?
– আচ্ছা বাবা, সরি,,,,,
– আচ্ছা একটা কথা বলতো, মুগ্ধ তোকে এতো ডাকে কেন? মানে বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছে বুঝতে পারছিস? আমার মনে হয় মুগ্ধ ভাই তোকে লাইক করে।
– আরে ধুর, তোর মনে এইসব উল্টা পাল্টা জিনিসই আসে। এটা কি ভালো কিছু আসার মাথা?
,
,
পরদিন কলেজের মাঠে আড্ডা দিচ্ছিলো শিশির ও মাহিমা। সেকেন্ট ইয়ারের একটা ছেলে এসে শিশিরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– এই যে আপু, আপনতে ভাইয়া ডাকছে।
মুগ্ধ ছারা এভাবে আর কেও তাকে ডাকার কথা না। তাি ছেলেটাকে শিশির প্রশ্ন করে,
– কোথায়?
– ওই যে হৃদয় ভাইয়া,,,
শিশির দেখলো কয়েকটা ছেলের মাঝখানে দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে হৃদয়। আর হাতে একটা ফুল নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
হৃদয়কে দেখেই রাগটা বেড়ে গেলো তার। ছেলেটাকে বললো,
– আপনার ভাইকে গিয়ে বলে দিন, আমি যেতে পারবো না। আর এসব ছ্যাছড়ামি না করে সিনিয়র সিনিয়রের মতো থাকতে।
ছেলেটা চলে গেলো। শিশির মাহিমাকে বললো,
– তোর ফোন টা একটু দে তো।
– কেন?
– ভাইয়াকে কল দিতে, আমার ফোনের ব্যালেন্স শেষ।
– কোন ভাইয়া? মুগ্ধ?
– না, আমার খালাতো ভাই, সুশান্ত ভাইয়া। এই জেলাতেই থাকে। গাড়ি নিয়ে আসলে এখান থেকে ১ ঘন্টার রাস্তা।
– তার মানে ভাইয়াকে ডাকবি এখানে? দেখ ছেলেগুলো খুব খারাপ। আর ওর সাথে অনেক গুলো ছেলে। অজথা ঝামেলা করিস না। এসব ইগনোর করাই ভালো।
– তুই দে তো,
শিশির ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন দেওয়ার আগেই হৃদয় এসে ছো মেরে ফোন টা নিয়ে নিলো। শিশিরের চার পাশে ঘুরতে ঘুরতে বললো,
– মাংস নেই এক কিলো, শরিরে কতো দেমাগ। যদিও সুন্দরি মেয়েদের গেমাগ একটু থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে, অতি কোনো কিছুই ভালো নয়।
এর পর দুি আঙুল দিয়ে শিশিরের গাল টিপে ধরে বলে,
– তোমাকে হাসি মুখেই ভালো মানাবে, দেমাগে নয়, বুঝলে সুন্দরি?
শিশির একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে দুড়ে গিয়ে দাড়ালো। চার পাশের স্টুডেন্ট রা তখন তামাশা দেখতে ব্যাস্ত। কেউ কেউ অলরেডি ভিডিও করতে শুরু করে দিয়েছে।
হাত ছারিয়ে নেওয়ায় হৃদয় চোখ বন্ধ করে জোড়ে একটা শ্বাস নিয়ে রাগ প্রকাশ করলো। এর পর এক টানে শিশিরে ওড়নাটা নিয়ে নিলো সে। ওড়নার গ্রান নিয়ে নিজের গলায় পেচিয়ে নিলো হৃদয়।
– আজ দেখবো তোমার কতো দেমাগ, যতই দেমাগ দেখাবে ততই একটা একটা খুলতে থাকবো সবার সামনে।
চার পাশের ছেলে গুলো যেনো আরো অধিক আগ্রহে বিনোদন নিতে লাগলো। এইসব সহ্য করতে না পেরে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কেঁদে দিলো শিশির। চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে, আর কিছুি করতে পারছে না সে। কারণ এখানে কেউই হৃদয়কে কিছু বলছেনা। শুধু ফ্রিতে বিনোদন নিচ্ছে সবাই।
হুট করেই সকলের হাসাহাসি অফ হয়ে গেলো। হৃদয়ের সাথে যেই কয়েকজন ছেলে ছিলো সবাই দৌড়ে চলে গেছে সেখান থেকে।
অন্য দিকে মুগ্ধ ও তার বন্ধুরা আসলো সেখানে। মুগ্ধ বাইক থেকে নেমে জ্যাকেট টা খুলে শিশিরের গায়ে জড়িয়ে দিলো মুগ্ধ। হাতে একটা হকস্টিক তার। হৃদয়ের দিকে ঘুরেই বুক বরাবর এক লাথি মারতেই ছিটকে কিছুটা দুরে পরে গেলো সে। উঠার সুজুগ না দিয়ে হকস্টিক দিয়ে হৃদয়ের উপর সব রাগ ঝাড়লো। আশে পাশে কেউ মুগ্ধকে থামাতে আসেনি। কারণ তারা সবাি মুগ্ধর রাগ সম্পর্কে অবগত৷ এতোক্ষন যেই ছেলে গুলো মজা নিচ্ছিলো, তারাই এখন ভয়ার্ত মুখ নিয়ে চেয়ে আছে নিচের দিকে। মুখ হাত সব দিক দিয়েই রক্ত ঝড়ছে হৃদয়ের।
মুগ্ধ সকলের উদ্দেশ্যে বলে,
– এটা তো ইভতেজারের আড্ডা খানা নয়। এটা একটা ভার্সিটি। এখানে কোনো স্টুডেন্ট কে রেগিং করার অধিকার কারো নেই।
মুগ্ধ গিয়ে শিশিরের পাশে দাড়ায়, শিশিরকে একহাতে নিজের সাথে ধরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– আর এই মেয়েটার বিষয়ে যেনে এই মুহুর্তের পর থেকে আমি আর কারো মুখে যেনো কিছু না শুনি। সোজা কথা আজ থেকে শিশিরের দিকে কোনো ছেলে চোখ তুলে তাকাবে তো, তার চোখ উপ্রে ফেলবো। কথাটা মাথায় ঢুকিনাও সবাই। বলেই শিশিরের হাত ধরে সবার সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে, মুগ্ধ। সামনে থাকা সব ছেলে মেয়ে গুলো, সরে জায়গা করে দিলো তাদের।
ক্লাসে নিরবে কেঁদে চলছে শিশির। আর পাশে বসে আছে মুগ্ধ। শিশির কাঁদু কাদু গলায় বললো,
– আমায় একটা হ্যাল্প করবেন?
– হুম, কি?
– আমি আর এই কলেজে পড়বো না, আমায় টিসির ব্যাবস্থা করে দিতে পারবেন? অন্য কোনো বেসরকারি কলেজে চলে যাবো আমি।
– কোথাও যেতে হবেনা তোমার, এই কলেজেই থাকবে তুমি। কেউ তোমার দিকে চোখ তুলে তাকানোর দুঃসাহস দেখাবে না আজকে থেকে।
কিছু না বলে চুপ করে আছে শিশির।
– কিচ্ছু ভালো লাগছে না আমার।
– চলে আজ তোমায় নিয়ে একটা জায়গায় যাবো। ওখানে গেলেই মন ভালো হয়ে যাবে তোমার।
– ইচ্ছে করছে না, আমায় বাসায় দিয়ে আসবেন?
শিশিরের হাত ধরে বেড়িয়ে এলো মুগ্ধ। বাইকের হেলমেট টা শিশিরের মাথায় পড়িয়ে দিয়ে বললো, পেছনে উঠে বসতে।
আশে পাশের সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কারণ আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েকে মুগ্ধ বাইকে বা গাড়িতে নিয়ে ঘুরতে কেউ দেখেনি।
মুগ্ধ আর হৃদয় দুজনই স্টুডেন্ট পলিটিক্স করে। দুজনই সামনে ভিপি নির্বাচন করবে। সব জায়গায় মুগ্ধর পপুলারিটি, ও ক্ষমতা দুটুই বেশি। কলেজের সকল স্টুডেন্টই মুগ্ধকে পছন্দ করে। সবাই বলে, মুগ্ধই ভিপি হবে এই কলেজের।
,
,
মাথায় ও হাতে বেন্ডেজ করা হৃদয়ের। পশে থাকা একটা ছেলে বললো,
– মেয়েটা মগ্ধ ভাইয়ের জিএফ হয়, ওইদিনও আমি তাদেরকে একসাথে রেস্টুরেন্টে দেখেছি।
হৃদয় রাগে অন্য হাত দিয়ে ছেলেটার গালে চর বসিয়ে দেয়।
– এই কথাটা আগে বললে কি হতো, যে ওটা মুগ্ধর সম্পত্তি।
– ভাই আমি তো আর জানতাম না, এতো কিছু হয়ে যাবে। তাছারা মুগ্ধ ভাই সব দিক দিয়ে আপনার থেকে এগিয়ে,
– ওটা ছিলো, এবার থেকে মুগ্ধর স্থান আমার থেকে পিছিয়ে থাকবে।
– কিভাবে সম্ভব এটা?
– শক্তি দিয়ে নয়, ব্রেইন দিয়ে খেলাটাই রাজনিতির কৌশল। দুর্বল জায়গায় আঘাত করলে বাঘের মতো শিকারিও বিড়াল হয়ে বাধ্য হয়, আর সে তো মানুষ।
,
,
সন্ধা পেড়িয়ে আধার নেমে এলো। বিষণ্ন মনে বেলকনিতে বসে আছে শিশির। বাইরে তাকিয়ে দেখে রাস্তায় কয়েকটা ছেলে। হৃদয়ের সাথে যাদের দেখতো ওই ছেলে গুলো, নিচে হাটাহাটি করছে। ভয়ে বুকের বা-পাশ টায় ধুপ ধুপ শব্দটা ক্রমশ বেড়েই চলছে।
,
,
দুই দিন আর কলেজে যায় নি শিশির। সন্ধার পর ছাদে গিয়ে মুগ্ধকে দেখে অবাক হলো সে। মুগ্ধ এখানে কিভাবে আসলো, একটা প্রশ্ন গুর পাক খাচ্ছে। মুগ্ধকে দেখলেই যেনো এক অদ্ভুত সাহস জন্ম হয় তার মাঝে। মনে হয় কেউ আর তার কিচ্ছু করতে পারবে না।
২য় তলার ভারাটিয়া রা কয়েকদিন আগে চলে গেছে। খালি পেয়ে ২য় তলাতেই নাকি উঠলো মুগ্ধ। কারণ শিশিরকে খুব কাছে রাখতে চায়, যেন কেউ তার কিচ্ছু করতে না পারে।
মুগ্ধর হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ ছিলো ওই দিন। লাল টকটকে তাজা গোলাফ।
,
,
,
বেশ কয়েকদিন এমনই কেটে গেলো। এখন আর কেউ ঝামেলা করেনা আগের মতো। সব ঠিক ঠাক।
ভার্সিটিতেও মুগ্ধ আর হৃদয়ের ভিপি নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আর দুি একদিন আছে বাকি। সবাই মুগ্ধকেই সাপোর্ট করছে। সারা বছর চিন্তা থাকলেও, আজ হৃদয়ের মুখে নেই কোনো দুঃশ্চিন্তার ছাপ। সে যেনো এই দিন টার অপেক্ষায়।
ঠিক আগের দিন রাতে মুগ্ধর কাছে একটা ফোন এলো।
মুগ্ধ দ্রুত বাড়ি ফিরে ৩য় তলায় চলে যায়, দেখে দরজা খোলা। আর ভেতরে অচেতন হয়ে পরে আছে মাহিমা। আর শিশিরকে কোথাও খুজে পেলো না। এই একটা কারণেই হৃদয়ের কাছে হেরে যায় সে। পাশে থাকা কাচের জগ টা ফ্লোড়ে ছুরে মারতেই তা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। আজ এই রাগ শান্ত হওয়ার মতো না।
হৃদয়কে ফোন দেয় মুগ্ধ।
– দেখ ভাই, তোর সব কথা আমি মেনে নিবো? তবুও প্লিজ শিশিরকে কিছু করিস না। ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে।
হৃদয় হা হা করে হেসে উঠে, তার পর বললো,
– দেখ ভাই, আমি যতই খারাপ হই না কেন, তবুও আমার উপর এই বিশ্বাস টা রাখতে পারিস যে, আমি তোর শিশিরের গায়ে একটা ফুলের টোকাও দিবো না, যদি তুই নিজের নাম কাটিয়ে নিয়ে আমার বিজয় করে দিস। আর তা করলে তোর শিশিরের মুখও আর তুই কখনো দেখতে পাবি না। এবার ডিসিশন তোর, কাকে চাস তুই? শিশির নাকি পুরো ভার্সিটির ক্ষমতা। যে কোনো একটাই বেছে নিতে হবে তোকে।
বলেই ফোন কেটে দেয় হৃদয়।
পর দিন বিয়া প্রতিপক্ষ ছারাই জিতে গেলো হৃদয়। সারা কলেজ পিনপতন নিরবতা। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, মুগ্ধ কেন নিজের নাম সরিয়ে নিলো?
সন্ধায় একটা গাড়ি এসে মুগ্ধর গাড়ির সামনে শিশিরকে নামিয়ে দিয়ে গেলো। শিরিরের দিকে কিঢ়ুক্ষন আহত চোখে তাকিয়ে থেকেই তারে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মুগ্ধ।
,
,
পরদিন সকাল বেলায় কলিং বেল বাজতেই দরজা খোলে শিশির। দেখে বাইরে সুশান্ত ভাইয়া দাড়িয়ে। তার মানে ভাইয়া সব জেনে গেছে। শিশির ভালোই বুঝলো এখানে আর থাকতে দিবে না তাকে।
শিশিরকে নিয়ে একটা মহিলা হোস্টেলে বর্তি করিয়ে দেয় সুশান্ত। তার সাথে মাহিমাকে বললেও সে যায় না ওখানে। মাহিমা কেন না বললো, তা সেদিন বুঝতে পারলো না সে। এবার কিছুটা দুরুত্ব বেড়ে যায় মুগ্ধ আর শিশিরের মাঝে।
এদিকে মুগ্ধর মাস্টার্স এক্সামও শেষ। একন মাহিমার থেকেই শিশিরের খোজ খবর নিতে হয় তার। সাপ্তাহেও একবার দেখা করতে কষ্ট হয় তাদের। শিশিরের জন্য কিছু নিলেও তা মাহিমাকে দিয়ে শিশিরের কাছে পাঠাতো সে। কিন্তু তা শিশিরের কাছে কতটুকু পৌছাতো তা আর জানতো না সে।
শিশিরের বিষয়ে মুগ্ধকে মাহিমা হেল্প করলেই তাকে ট্রিট দিতে হবে। বেপারটা মুগ্ধ এতো সিরিয়াস ভাবে নেয় না। রেস্টুরেন্টে মাহিমাকে ট্রিট দেওয়ার পর শিশিরের বিষয়ে হ্যাল্প করতো মাহিমা, এইটুকুই জানে মুগ্ধ। বাট মুগ্ধর সাথে তোলা পিক গুলো প্রায়ই শিশিরকে দেখাতো মাহিমা। মাহিমার সাথে রেস্টুরেন্টে মুগ্ধ। এগুলো অসস্থি লাগতো শিশিরের কাছে। শিশিরের পোনও নেই। সুশান্ত নিয়ে গেছে। দুই দিন পর পর এসে খোজ খবর নেয় সুশান্ত। মুগ্ধ শিশিরের জন্য ফোন নিলেও তা নিলো না শিশির। কারণ শিশিরের ধারণা এখন মাহিমার সাথে জড়িয়ে গেছে সে। মাহিমাও তাকে তাই বলে।
,
,
মেয়েটা বড্ড অভিমানি। মুগ্ধর সাথে যোগাযোগ টা আগের তুলনায় কমিয়ে নেয়। কিন্তু মুগ্ধকে এই ব্যপারে কিছু বলে না সে। আর বলতেও চায় না। ভালো থাকুক সে। এদিকে মাহিমার মুখেও একটি বিজয়ি হাসি। শিশির দুরে সরে গেলেই নিজের সাথে জড়িয়ে নিবে মুগ্ধকে। কারণ মুগ্ধকে তো সে সেই প্রথম দিনই ভালোবেসে ফেলেছিলো।
মুগ্ধকে শিশিরের কথা বলে ডেকে এনে মাহিমা। ঐ দিকে মাহিমাকে বলে, আজ আমরা মিট করছি। বিষয়টা ছিলো এমনই।
এসব বিশ্বাস করে ধিরে ধিরে মুগ্ধর প্রতি ভালোবাসা টা মরে যেতে থাকে তার। একটা মানুষ কতোটা খারাপ হলে। আমার বান্ধবির সাথেও রিলেশনে যেতে পারে।
এভাবেি কাটতে থাকে দিন। মুগ্ধ এখন দেকা করতে চাইলেই ব্যস্ততা দেখায় শিশির। কারণ সে চায় না মাহিমাও তার মতো ঠকে যাক। সে না হয় মাহিমাকে নিয়েই ভালো থাক।
,
,
মুগ্ধর বাবা মুগ্ধকে নিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া৷ সব চেয়ে বেশি দুরুত্ব বাড়ে এই থেকে। মুগ্ধ প্রায়ই হোস্টেলের সামনে দাড়িয়ে থাকতো। বাট শিশির দেখা দিতো না।
এদিকে মাহিমা প্রায়ই মুগ্ধকে মোটিভেশন কথা শুনাতো যে, সবাই সত্যিকারে ভালোবাসার দাম দিতে যানে না। আর শিশির হয়তো তাকে আর নিজের জীবনে রাখতে চায় না তাই এমন টা করে।
মুগ্ধ চলে যাওয়ার আগের দিন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না শিশির। ছুটে যায় মুগ্ধকে একবার দেখার জন্য।
গিয়ে দেখে মাহিমা জড়িয়ে ধরে আছে মুগ্ধকে। দুর থেকে তাদের কথা গুলো শুনতে পেলো না শিশির। শিশিরের মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষন এখানে দাড়িয়ে থাকলে চিৎকার করে কেঁদে দিবে সে। তাই চোখ মুছতে মুছতে সেখান থেকে চলে গেলো শিশির।
ঐদিকে মাহিমাকে ছারিয়ে একটু দুরে গিয়ে দাড়ায় মুগ্ধ।
– এসব কি মাহিমা, তোমার সাথে কি আমার এি সম্পর্ক? তোমাকে আমি যাস্ট বোনের চোখেই দেখি।
মাহিমা বলে,
– আপনি আমাদের ছেরে চলে যাবেন তাই না ভাইয়া? আর কবে দেখা হবে তা তো আর জানিনা।
মুগ্ধ আর কিছু বললো না। হয়তো আবেগে এমনটা করেছে সে। আর মাহিমা তো তার ছোট বোনের মতোই।
মাহিমা আবার বলে,
– দেকছেন, শিশির আজও আপনাকে একটিবারের জন্য বিদায় দিতে আসলো না।
মুগ্ধ কিছু বললো না। একটা দির্ঘশ্বাস নিলো। তার পর মাহিমার হাতে একটা ডায়রি দিয়ে বললো। এটা শিশিরের কাছে পৌছে দিও।
মাহিমা ওটা হাতে নিয়ে বললো,
– আচ্ছা ভাইয়া। আপনার প্লাইট কখন?
– আগামি কাল সকালে।
– সাবধানে যাবেন, আর নিজের যত্ন নিবেন।
– হুম, আর এই ডায়রি টা তুমি শিশিরকে দিবে। এখানে অনেক কিছুই লেখা আছে। আমার বিশ্বাস শিশির কখনো আমায় দুরে ঠেলে দিতে পারে না।
মুগ্ধ চলে গেলো। মাহিমা ডায়রিটা খুলে একটা হাসি দিলো। ইশ এতো কিছুর পর এখনো শিশিরের জন্য, কতো ভালোবাসা তার।
মাহিমা মুগ্ধর মতো করে একটা চিরেকুট লিখলো। আর তা শিশিরের কাছে পৌছে দিলো সে।
যেখানে অনেক কিছুই লিখা ছিলো। আর মুল টপিক টা ছিলো,
‘ আমায় মাপ করে দিও শিশির। কখন যে মাহিমাকে ভালোবেসে ফেলেছি তা নিজেও বুঝতে পারিনি। আমি চলে যাচ্ছি। ফিরে এসেই মাহিমাকে বিয়ে করবো আমি। আশা করি আমাদের পথের কাটা হবে না তুমি। নিজেকে ঘুচিয়ে নিও। অনেক ভালো কাউকে পাবে তুমি। আমায় ক্ষমা করে দিও শিশির।
সেদিন খুব কেঁদেছে শিশির। পাগলের মতো কেঁদেছিলো শিশির। বালিশের মাঝে মুক গুজে কেঁদেছিলো। এতো দিনের সম্পর্ক টা মুগ্ধ কিভাবে পারলো শেষ করে দিতে? তাও আবার তারই বান্ধবি মাহিমার জন্য। যাকে শিশির নিজের বোনের চেয়েও বেশি কিছু ভেবেছিলো।
কয়দেক দিন পর অনার্স ফাইনাল এক্সাম তার। আর এখন গভির রাতে বালিসে মুখ গুজে কান্না করছে সে।
সব শেষে নিজেকে একটু শান্ত করলো সে। তখন প্রায় রাত শেষের দিকে।
হাতে একটা ব্লেড নিয়ে চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে কয়েকটা শ্বাস নিলো সে।
যদিও রাগ ও ডিপ্রেশনের মাঝে কিছু করা ঠিক না।
To be continue……….