প্রেমালয়,পর্বঃ_৮(প্রথম খন্ড সমাপ্ত)

0
1308

#প্রেমালয়,পর্বঃ_৮(প্রথম খন্ড সমাপ্ত)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

নিজের বেষ্ট ফ্রেন্ডের বেঈমানি দেখেছি আমি। যাকে নিজের বোন বলে সম্বোধন করেছিলাম,,

সেদিন অচেতন অবস্থায় পরে ছিলো শিশির। হাত থেকে রক্ত ঝড়তে ঝড়তে অনেকটা ফ্লোর লাল হয়ে আছে। ধিরে ধিরে চোখ দুটু বন্ধ হয়ে গেলো তার।

শিশিরের ডান হাত টা সুশান্তর দুই হাতের মাঝে আবদ্ধ। শিশিরের হাতটা শক্ত করে ধরে পাশে বসে আছে সুশান্ত।
গত দুই দিন ধরে এখান থেকে কোথাও যায় নি সে। কারন তার শিশির পরী যে গত দুই দিন ধরে ঘুমিয়ে আছে। গতকাল রাতে একবার জ্ঞান ফিরেছিলো। এর পর আবার ঘুমিয়ে গেলো। এখন সকাল ৮ টা।
‘ কেনো এমন করলি তুই? কেন অন্য কারো সাথে নিজেকে জড়াতে গেলি? তুই কখনোই বুঝতে পারিস নি যে, আমি তোকে কতোটা ভালোবাসি? আমার ভালোবাসায় কি এমন কমতি ছিলো যে, তুই অন্য খাচায় উড়ে চলে গেলি? আর এখন নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস? একবার ভালো হ শুধু তোকে কোথাও হারাতে দিবো না আর।”

শিশিরের সুস্থ হতে প্রায় কয়েকদিন লেগেছিলো। এই সময় টা নিজের বাড়িতেই ছিলো সে। দুই দিন পর এক্সাম। দেওয়ার কোনো বিন্দু মাত্রও ইচ্ছে নেই তার। গড়ে তোলা স্বপ্নটাই তো ভেঙে গেছে। তার কাছে এই স্বপ্নটা তো তুচ্ছ,,,,,
,
,
,
(ফিরে আসা যাক মুল গল্পে)
তিসা আপুকে পছন্দ হয়েছে তাদের। মুগ্ধর বাবা রাতেই ফোন দিয়ে জানিয়েছিলো এটা। পর দিনই বিয়ের দিন খন ঠিক করে ফেলতে চায় মুগ্ধর বাবা। কারণ ছেলেটা অনেক কষ্টের পর বিয়েতে নিজে থেকে সম্মতি দিলো। এখন তারাতারি বিয়েটা হয়ে গেলেই হয়।

আজ সুশান্ত আসছে এখানে। তিসা আপুর বিয়েতে সব কিছু তাকেই করতে হবে। কারণ তিসার কোনো বড় ভাই নেই।
বিকেলের দিকে এসেছে সুশান্ত। সন্ধার পর ছাদে গিয়ে দেখলো ছাদের এক কোনে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে শিশির। চার পাশ টা নিরিবিলি। সুশান্ত একটা মৃদ হাসি দিয়ে শিশিরের পাশে গিয়ে দাড়ায়।
শিশিরের দুই গালে হাত রেখে বললো,
– মন খারাপ কেন আমার শিশির পরীটার?
– এমনি ভালো লাগছিলো না তাই।
– দেখ আমি বুঝতেই পারছি তোর কিছু একটা হয়েছে। আমার কাছে একধম লুকাবি না।
শিশির একটা শ্বাস নিলো, চোখের কোনে জমা পানি টুকু এক হাত দিয়ে মুছে নিলো,,,
– যা ভুলে থাকতে চাই তা বার বার কেন আমার সামনে এসে দাড়ায় ভাইয়া, বলতে পারো?
– চুপ, একধম কাঁদবি না। তোকে বললাম না, এসব ভেবে তুই একটুও কষ্ট পাবি না। যা হয় তা ভালোর জন্যই হয়। আর আমার সামনে কখনো কাঁদবি না তুই। জানিস না, তোর কান্না আমার সহ্য হয় না?
শিশির এবার সোজা হয়ে দাড়িয়ে চোখের পানি মুছে বললো,
– আপুর বিয়ে কার সাথে ঠিক হয়েছে, তুমি চিনো তাকে?
– না, খালার মুখেই শুনলাম। কয়দিন আগে নাকি অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে। এখন বাবার বিজনেস এর হাল ধরবে। তবে ছবি দেখেছি, দেখতেও মাশা আল্লাহ্,,, সুখেই থাকবে আমাদের তিসা।
– আচ্ছা তুমি, সেই মুগ্ধকে চিনো?
– না, আর চিনতেও চাই না। যার জন্য তুই এতো কষ্ট পেয়েছিস তাকে চিনার কোনো প্রয়োজন নেই আমার।
শিশির ফোনে মুগ্ধর একটা ছবি নিয়ে সুশান্তকে দেখায়।
– এটাই হলো সেই মুগ্ধ।
সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে সুশান্ত। তাকিয়ে আছে মুগ্ধর ছবিটার দিকে। শিশির ও মুগ্ধ একই ছবিতে। ছবিটা অনেক আগের। যখন তাদের পরিচয় হয়েছিলো তখনকার পিক।
,
,
,
মুগ্ধর বাবা-মাকে ডেকে এনে অপমান করে শিশিরের বাবা। এটাও জানিয়ে দেয়, এই রকম চরিত্রহিন একটা ছেলের সাথে কিছুতেই বিয়ে দিবে না তার মেয়েকে।
তিসাও ওইদিন প্রথম ফোন দেয় মুগ্ধকে। নিজের কান্না চেপে রেখে শান্ত ভাবে একটা প্রশ্ন করে,
– আপনি এতোটা নিচু কিভাবে হলেন মুগ্ধ? আমার ছোট বোনের সাথে এমন করে কিনা আবার,,,,,,,,
মুগ্ধ কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো।
,
,
তিসাকে জড়িয়ে ধরে শিশির বলে,
– আমার সাথেই কেন এমন হয় আপু? আমি যতই ভুলে থাকতে চাই ততই কেনো বার বার কষ্ট আমার সামনে এসে দাড়ায়?
তিসাও কিছু বলছে না। কিছু বলার ভাষা নেই তার। সে কি এখন নিজেকে বুঝাবে, নাকি শিশিরকে শান্তনা দিবে ওটাও বুঝতে পারছে না।

সুশান্ত আর কোনো যামেলা চায় না। এই মুগ্ধর প্রতি পাওয়া শিশিরের কষ্টটা ভুলাতে অনেক কষ্ট হয়েছে তার। শিশির আর কষ্ট পাক এটা চায় না সে।
তাই যত তারাতারি সম্ভব শিশির আর তার বিয়ের দিন খন ঠিক করতে বলে তার মা কে। কারণ একবার শিশিরকে হারিয়ে হারানোর কষ্ট টা উপলব্দি করতে পেরেছে সে। আর হারাতে চায় না তার শিশির পরীকে।
,
,
ওদিকে মুগ্ধর চেহারাও আর দেখতে চায় না শিশির। সুশান্তের সাথে বিয়ের কথা চলছে তার। শিশিরও নিজ থেকেই সম্মতি দিলো। কারণ এতো যন্ত্রনা আর নিতে পারছে না সে। কারণ এই অতিত বরাবরই কুড়ে খায় তাকে। আপনাকে আমি কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না মুগ্ধ।

সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে মুগ্ধর। বেলকনিতে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে সে। তিসা দুরে থাক, শিশিরের কথাও শুনতে চায় না তার বাবা। ওই বাড়ি থেকে অপমানিত হওয়ার পরই জানায়, ওই বাড়ির মেয়েকেই নিজের পূত্র বধু হিসেবে স্বীকৃতি দিবে না সে। কিন্তু মুগ্ধ পারবেনা থাকতে। যে কোনো কিছুর বিনিময়েই শিশিরকে চায় সে। হুট করে শিশিরের এমন বদলে যাওয়ার কারণ টা শিশিরের মুখ থেকে শুনতে চায়। শিশির তো আর এমনি এমনি মুগ্ধর থেকে সরে যায় নি। কারণ টা জানতেই চায় মুগ্ধ। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে তার শিশিরকে চায় সে।
,
,
~~ সমাপ্ত (প্রথম খন্ড)

~~ মুল গল্প টা ২য় খন্ড থেকে শুরু হবে। অনেক দিন পর লেখালেখি শুরু করায় গল্পটা শুরুতেই এলোমেলো হয়ে গেছে। তাই দুই খন্ড করে নিলাম গল্পটাকে। ১ম খন্ডে অতিত টা শেষ করে দিয়ে মুল গল্প টা ২য় খন্ডের জন্য রেখে দিলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here