প্রেমালয় ২,পর্বঃ_২,৩

0
779

#প্রেমালয় ২,পর্বঃ_২,৩
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
#পর্বঃ_২

– না, এখন আর আপনাকে আমি ভালোবাসি না। আমি সুশান্তকে ভালোবাসি। He is a lucky person in my life,,,,
প্রতি উত্তরে কিছু বললো না মুগ্ধ। কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে শান্ত গলায় বললো,
– তোমরা কিভাবে পারো, একটা মানুষকে হাজারও স্বপ্ন দেখিয়ে দিন শেষে অন্য কারো হাত ধরে চলে যেতে?
আজ যেনো শিশিরেরও চিৎকার করে মুগ্ধকে বলতে ইচ্ছে করছে,
‘সেম প্রশ্নটা তো আমিও আপনাকে করতে পারি? আমার আর আপনার মাঝে না হয় একটু দুরুত্ব সৃষ্টি হয়েছিলো, তখন আপনি কিভাবে পারলেন আমাকে রেখে মাহিমার সাথে জড়িয়ে যেতে?
কিন্তু এই ব্যাপারে কিছু না বলে শিশির বললো,
– হ্যা আমি পারি। কারণ আমি যানি আমি খুব খারাপ, খুব সার্থপর। তো এখন বলেন, আমার মতো খারাপ মানুষকে নিয়ে আপনি কি করবেন? আপনি আপনার মতো ভালো থাকুন না। আমি না হয় সুশান্তকে নিয়েই থাকবো।
মুগ্ধ উঠে দাড়ালো, শিশিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কিছুই করবো না। আবার মুক্তিও দেবো না। না অন্য কারো হতে দিবো, আর না শান্তিতে থাকতে দিবো। আমাকে দেওয়া প্রতিটা কষ্ট তুমি দ্বিগুন করে পাবে শিশির।
বলেই রুমের বাইরের দিকে হাটা ধরে মুগ্ধ।
– প্লিজ আমায় যেতে দিন,,, আর কতো পোড়াবেন আমাকে? একবারও কি জানতে চেয়েছেন, আমি কতোটা ভালো ছিলাম? আপনি নিজেই তো সব এলোমেলো করে দিলেন।
বলেই কেঁদে ফেললো শিশির। কিন্তু সেগুলো মুগ্ধর কান অব্দি গেলো না। ততোক্ষনে দরজা বন্ধ করে সেখান থেকে চলে গেলো মুগ্ধ।
,
,
চিরেকুট টা দুই হাতের মাঝখানে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেললো সুশান্ত। চোখ দুটু লাল হয়ে আছে খুব। আশে পাশে সব কিছু যেনো টুকরো টুকরো করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে আজ। তীসার কথা মনে উঠতেই রাগটা আরো চরে বসে। নির্ঘাত এই মেয়েটা শিশিরকে পালাতে সাহাজ্য করেছে। যাতে শিশিরের সাথে বিয়েটা না হয়।
সুশান্ত টুকরো টুকরে চিরেকুট টা মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে, দুই হাত রাগন্মিত ভাবে বলে উঠে,
– তীসার বাচ্চা,,,, তোর ভালোবাসা,,,,, মাই পুট,,,

নিচে সোফায় বসে আছে সবাই। সুশান্ত নিচে এসে শান্ত ভাবে বললো,
– এতো অতিথি নিয়ে বিয়ে করতে এসেছি, বৌ নিয়েই বাড়ি ফিরবো।
তৌফিক আহমের একটু আশার আলো দেখতে পেয়ে উঠে দাড়িয়ে বললো,
– তার মানে শিশির কোথায় জানতে পেরেছো?
– না আঙ্কেল, সে আর আসবে না। সে চলে গেছে তার প্রাক্তন প্রেমিকের কাছে। যাওয়ার আগে আবার একটা চিরেকুটও রেখে গেছে।
আবার ধপাস করে সোফায় বসে গেলো তিনি। পাশ থেকে বাবাকে ধরলো তীসা।
সুশান্ত তীসার দিকে তাকিয়ে বলে,
– আর বিয়ে আমি তীসাকেই করবো। এতো আত্মিয় স্বজনের কাছে আমি ও আমার ফ্যামিলিকে ছোট হতে দিবো না আমি।

কথাটা শুনেই যেনো আকাশ থেকে পরলো তীসা। এক মুহুর্তের জন্য হলেও যেন সারা শরির কাপুনি দিয়ে উঠলো তার। সুশান্ত ভাইয়া হটাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন নিল, তা ভেবেই পাচ্ছে না সে। শিশিরকে তো খুব ভালোবাসতো ভাইয়া, তাহলে হুট করে এমন সিদ্ধান্ত কেন নিলো? তাও আবার সবার সামনে এভাবে এক নিশ্বাসে কোনো সঙ্কোচ ছারাই বলে দিলো? রাগের মাথায় সুশান্তের হুট হাট এই সিদ্ধান্ত, আমার ভবিষ্যৎ টা কোথায় নিয়ে দাড় করাবে?
এর মাঝে শিশিরের বাবা তৌফিক আহমেদ দাড়িয়ে সোজাসুজি একটা কথা বলে দেয়, আজ থেকে তার মেয়ে একটা। আর ছোট মেয়ে মারা গেছে কিছুক্ষন আগে। শিশিরের জন্য এই বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ। তীসার দিকে চেয়ে বললো,
– আশা করি আমার মান ইজ্জত টা তুমি ক্ষুন্ন করবে না। বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নাও।
ছোট বেলা থেকেই মা বাবার মুখের উপর কথা বলার সাহস নেই তীসার। অধিকাংশ ফ্যামিলিতেই বাড়ির বড় মেয়ে গুলো একটু বোকা টাইপের হয়। তীসাও ঠিক তেমন।
তবে আজ কিছুই ভেবে পাচ্ছে না তীসা। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,
“তোমরা তোমাদের ইজ্জত বাচাতে আমাকে এভাবে বলি দিতে পারো না।

ওদিকে মুগ্ধ চলে যাওয়ার পর কয়েকবার চিৎকার করে মুগ্ধকে ডেকে উঠে শিশির। কোনো সারা না পেয়ে নিরবে কান্নায় ভেঙে পরে সে। আজ তার বিয়ে। হয়তো এই মুহুর্তে বৌ সেজে সুশান্তের পাশে বসে থাকতো সে। অথচ বিয়ের আসর ছেরে অন্যের ঘরে এভাবে বন্ধি হয়ে পরে আছে। সুশান্তের জন্যও খুব কষ্ট হচ্ছে আজ। শিশিরে জন্য ছোট থেকেই বাবা মায়ের পর একজন সাপোর্টার ছিলো সুশান্ত।
কিন্তু মাঝ পথে মুগ্ধর সাথে সম্পর্কে জড়ানো এর পর আবার কতোকিছুই ঘটে গেলো। সুশান্ত ভাইয়া চাইলে তো সেদিনও আমার থেকে দুরে চলে যেতে পারতো। কিন্তু যায় নি। আমার দুঃসময়েও আমার পাশে থেকে সাপোর্ট দিয়েছে আমায়। নতুন করে বাচার অনুপ্রেরনা জুগিয়েছে। আমার প্রতি তার ভালোবাসা টুকু একটুও কমেনি। অথচ আজ আমি তাকে এভাবে ঠকাচ্ছি?
মুগ্ধ একটা ঝড় হয়ে আমার জীবনে এসেছিলো। আবার ঝড় হয়েই সব এলোমেলো করে দিয়ে গেলো। সেই এলোমেলো চলার পথ গুলো সুশান্ত খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছিলো। আর আজ মুগ্ধ নামক ঝড়টা এসে আবার সব এলোমেলো করে দিলো। যতই আমি সুখ কে কাছ থেকে ছুতে যাই, ততই সেই সুখ দুরে সরে গিয়ে আমার জীবনে দুঃখ হয়ে ফিরে আসে।

ওদিকে হালকা সাজে বো বেশে সুশান্তের পাশে বসে আছে তীসা। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে আজ। কেন সে সবার কাছে মুখ ফুটিয়ে নিজের ইচ্ছে গুলো বলতে পারে না? কেন শুরু থেকেই তার জীবন পরিবারের সিদ্ধান্তের উপরই নির্ভর করে?

স্বাভাবিক ভাবেই বিয়েটা শেষ হলো তাদের। কাপা হাতে সাইন করে দিলো তীসাও। সাইন করেই প্রথমে আড় চোখে সুশান্তের দিকে তাকালো। এই লোক টা এখন তার সাদ্য বিয়ে করা স্বামি। এতোদিন বাবার পরিচয় থাকলেও এই মুহুর্তে তিন বার কবুল ও একটা সাইনে অন্য একজনের সম্পত্বি হয়ে গেছে সে। যেই মানুষটার পরিচয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে হবে তার। তবে সে এটাও বুঝতে পারছে না, এই মানুষটার সাথে তার বাকি জীবনটা কতটুকু যাবে? কোথায় গিয়ে দাড়াবো তার এই পথ চলা।
সুশান্তের চোখ দুটু রক্তিম বর্ণ ধারন করে আছে সেই শুরু থেকে। টলমলে অশ্রু কনা বার বার চোখের বাধ ভেঙে গড়িয়ে পড়তে চাইছে। কিন্তু ওই যে, কোনো এক অলিখিত সংবিধানে ছেলেদের প্রকাশ্যে কান্না নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সব কিছু কমপ্লিট করতে প্রায় রাত ১০ টা বেজে গেছে। একে একে সবাই চলে যেতে শুরু করেছে। বরপক্ষও এখন বৌ নিয়ে রওনা দিবে বাড়ির উদ্দেশ্যে।
তীসার ভাবতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছে যে, বাবা মাকে ছেরে সে আজ চলে যাচ্ছে অন্যের ঘরে। তাও আবার এভাবে। যেই বাড়িতে গত ২০ টা বছর কাটিয়েছে সেই বাড়িতেই আজকের পর থেকে অতিথি হয়ে আসবে সে। ইশ, আমরাও যদি ছেলেদের মতো সারা জীবন বাবা মায়ের পাশে থাকতে পারতাম?

বিদায় দেওয়ার মুহুর্তে তার মা তার পাশে ছিলো। কিছু বলছে না সে। শুধু অস্রুশিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। তার এই অস্রু শিক্ত চোখও যেনো আজ বলতে চাইছে,
‘আমাদের মেয়েদের লাইফ নিয়ে কি আমরা কখনোই সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না মা? বার বার কেন তোমাদের সিদ্ধান্তের কাছে হার মানতে হবে আমাদের?
তবে কিছু বলছে না সে। তারা দুই বোন এমনই, দুঃখ কষ্ট টা যতই গারো হোক, বুকটা ফেটে গেলেও মুখ ফুটে না কখনো।
শিরিনা বেগম মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
– ভাগ্যের লিখন কখনো মুছে ফেলা যায় না রে মা। হয়তো এর পেছনেও রয়েছে আল্লাহ্ উত্তম পরিকল্পনা। খুব সুখি হবি তুই। এহ দোয়াই করি। সুশান্ত খুব ভালো ছেলে, নিজের সংসার টা ঘুচিয়ে নিস মা।

To be continue……

#প্রেমালয় ২
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

৩.

মা কতো সুন্দরেই বলে দিলো সংসার টা ঘুচিয়ে নিস। অথচ এই সংসার টা হওয়ার কথা ছিলো শিশিরের। ভাগ্য আমার কথায় নিয়ে দাড় করাবে কে জানে?
তীসাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে বিদায় দিয়ে দিলো সবাই। চেনা মুখ গুলোকেও বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে আজ।
গাড়ির কাচ নামিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে সুশান্ত। এখানে আশার সময়টা আর এখন যাওয়ার সময়টার ফিল পুরোপুরিই আলাদা। সারপ্রাইজ টা এতো বড় হবে তা হয়তো ভাবতেও পারেনি কখনো।
তীসার মনের ভেতর কেমন কুহু কুহু ডাকছে। সুশান্তের নিরবতায় যেন তার ভয়টা গাড় করে তুলছে। কিছু মুহুর্তে নিরবতাই বলে দেয় আঘাত টা কতো গভির ছিলো। একটা প্রশ্ন বার বার ভাবিয়ে তুলছে তীসাকে। কারণ, সুশান্ত তো শিশির কে ভালোবাসে, তাহলে শিশির চলে যাওয়ায় হুট করে আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলো কেন? প্রশ্ন টা তার কাছে খুবই রহস্য জনক।
.

রুমের দরজা খোলার শব্দে কেঁপে উঠলো শিশির। তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে এসেছে রুমে। বয়স খুব একটা বেশি না। তার ছোট বা সমবয়সি এই টাইপের। হাতে খাবার নিয়ে এসেছে। খাবার টা এক সাইডে রেখে শিশিরের হাতের বাধন খুলে দিলো মেয়েটা। অনেক্ষন এভাবে বেধে রাখায় হাত টা জ্বলছে খুব। এখান থেকে বের হওয়ার বুদ্ধি খুজছিলো শিশির। মেয়েটাকে দেখে মাথায় একটা বুদ্ধি চেপে বসে তার।
মেয়েটাকে তার পাশে বসিয়ে বলে,
– তোমার নাম কি?
– আপু, চারু।
– তুমি কতদিন ধরে এই বাসায় আছো?
– জ্বি না আপু, আজই আসলাম। স্যার আপনার টেক কেয়ারের জন্য রেখেছে আমায়?
– তোমার স্যার তোমাকে কত টাকা দিবে?
– সেটা স্যার জানে, কিছু বলেনি। বলে ছে শুধু আপনাকে দেখে রাখতে।
– আমাকে একটা হেল্প করলে তুমি এক রাতেই পাবে, ১ লক্ষ। আমাকে শুধু এই বাসা থেকে বের হতে সাহায্য করবে, ব্যস এতটুকুই।
– সরি আপু, এই বাসায় প্রতিটা কর্নারেই ক্যামেরা লাগানো আছে। আর বাইরে বেস কয়েকজন সিকিউরিটি রেখেছে। আপনি চাইলেও এখান থেকে বের হতে পারবেন না, যদি স্যার না চায়।
.

ফুলে সাজানো একটা ঘরে এসে বসিয়ে রেখে গেছে তীসাকে। চার দিকে কোলাহল পূর্ন পরিবেশ। নতুন বৌ দেখতে আসছে অনেকেই। হাতে গনা কয়েক জন ছারা আর সব অচেনা মুখ। চেনা বাড়িটাও আজ বড্ড অচেনা লাগছে। নিরংশু দৃষ্টিতে চোখ বুলাচ্ছে চার দিকে। খুব সুন্দর করেই সাজিয়েছে ঘরটা। তবে তার জন্য না, শিশিরের জন্য সাজানো হয়েছিলো। বিছানার মাঝে বড় করে একটা লাভের মাঝখানে লেখা (S+S)..
একটা দির্ঘশ্বাস ফেললো। খুব ভয় করছে তার। ফোন বের করে মাকে ফোন দিলো সে। ফোন রিসিভ করতেই কেঁদে দিলো তীসা।
– আমার খুব ভয় করছে মা,,,,,

রুমে কারো আশার শব্দ শুনে ফোন রেখে দিলো তীসা। সুশান্তকে দেখে লুকিয়ে চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে সে।
সুশান্ত সামনে এসে সোজাসুজি ভাবেই বললো,
– যদি ভাবিস কেঁদে কেঁটে আমায় ইম্প্রেস করে নিবি, তাহলে তুই বোকার স্বর্গে বাস করছিস। আমার জীবন টা এলোমেলো করে দিয়েছিস তোরা দুই বোন মিলে। সোজা কথা কান খুলে শুনে রাখ, বৌ হয়ে এই বাড়িতে এসেছিস, কখনো বৌ এর অধিকার ফলাতে আসবি না।
বলেই একটা টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো সুশান্ত।
তীসা কিছু বলছে না, চুপচাপ নিচের দিকে চেয়ে আছে। এটাই তো হওয়ার ছিলো। আজকের এই রাতটা নিয়ে ছোট বেলা থেকে স্বপ্নটা বোধ হয় একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিলো।

বেলকনিতে একটা চেয়ারে বসে চোখ বুজে আছে তৌফিক আহমেদ। মেহমানরা অনেকেই চলে গেছে। যে কয়েকজন আছে তারাও ঘুমিয়ে গেছে এতোক্ষনে। চার পাশে কোলাহল পূর্ণ পরিবেশটাও নিস্তব্দ হয়ে গেছে। শিরিনা আহমেদ পাশে এসে বসলো।
– অনেক রাত হয়েছে, এখানে বসে আছেন কেন? কালকে তো আবার ওদের বাড়ি যেতে হবে ভেতরে চলেন।
তৌফিক আহমেদ একটা দির্ঘশ্বাস ফেললো,
– আমি কখনো ভাবতেও পারিনি ছোট মেয়েটা আমার মান সম্মান এভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিবে। রাগের মাথায় হুট হাট ডিসিশনে তীসার সাথেও অন্যায় করে ফেললাম খুব। অন্তত মেয়েটার মত নেওয়া উচিৎ ছিলো।
– এখন ওসব চিন্তা বাদ দিন, এইসব নিয়ে পরেও ভাবা যাবে। এখন নিজেকে একটু বিশ্রামে নিন।
– শিশিরের জন্য এই বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ।
,

খাবার গুলো ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। প্লেট টাও টুকরো টুকরো হয়ে আছে। দরজার এক পাশে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে চারু।
তখনই রুমে আসলো মুগ্ধ। শিশিরের এমন কান্ড দেখে চুপচাপ শিশিরের সামনে এসে বসলো সে। শিশির রাগটা টগবগ করছে খুব। মনে হচ্ছে এই মুগ্ধকে খুন করতে পারলেই এই রাগটা কমবে তার।
– কি চান আপনি? আর কত কষ্ট দিবেন আমাকে?
– যতটা কষ্ট আমি পেয়েছি, ঠিক ততটা।
– লাভ কি? সুশান্ত ঠিকই আমায় এখান থেকে নিয়ে যাবে।
শিশিরের কাছে এসে শিশিরের গাল টিপে ধরলো মুগ্ধ। রক্তিম চোখে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
– এই নামটা শুনতে শুনতে কান পচে গেল আমার? সুশান্ত কেন, তোমার আশা পাশে থাকা মানুষ গুলোর মাঝে একটারও শক্তি নেই যে মুগ্ধর কাছ থেকে তোমাকে নিয়ে যাবে। কারণ, হয়তো তুমি আমার, নয়তো অন্য কারো না।
শিশিরকে ছেরে সোজা হয়ে দাড়ালো মুগ্ধ। শিশির মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো,
– এসব করে কি আপনার ভালোবাসার প্রমান দিতে চাইছেন? ভালোবাসা এতোটা সস্থা না। ভালোবাসায় বিশ্বাস, গুরুত্ব, সম্মান সবই থাকতে হয়।
– ওহ্ রিয়েলি? তাহলে একজন মানুষের সাথে এতো টা সময় রিলেশনে থাকার সত্বেও অন্য কারো জন্য নিজের ভালোবাসাম মানুষটা কে দুড়ে ঠেলে দেওয়া টা ভালোবাসায় কতোটা সম্মানের পরিচয় দেয়?
– সেটা আপনাকে নতুন করে বুঝাতে হবে না। আমার থেকে আপনিই ভালো জানেন এটা। নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন।
– আচ্ছা বুঝলাম, তবে সুশান্ত তোমায় কতোটা ভালোবাসে?
– ভালোবাসা পরিমাপ করা যায় না। তবে ভালোবাসার দিক দিয়ে আপনি তার নখের যোগ্যও না।
মুগ্ধ হাটু গড়ে শিশিরের পাশে বসলো,
– আমি বুঝতে পারছি না শিশির আমার দোষ টা কোথায়? অন্তত তুমি তো জানতে আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসি। তবুও কেন এমন করছো? তুমিই তো সব সময় বলতে, আমায় কখনো ছেড়ে যাবে না।
– সেটা আপনি নিজেকেই প্রশ্ন করে দেখুন। আশা করি উত্তর পেয়ে যাবেন।
,
,
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সুশান্ত দেখে খাটের এক পাশে গুটি শুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে তীসা। তীসার ঘুম দেখে মাথায় রাগ উঠে গেলো সুশান্তর। কত শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে আমার ঘুম হারাম করে।
সুশান্ত বিছানার কাছে এসে তীসার হাত ধরে টেনে খাট থেকে নিচে ফেলে দেয় তাকে। আচমকাই এমন হওয়ায় ভয়ে সুশান্তের দিকে চেয়ে আছে তীসা। সুশান্ত রাগি চোখে বলতে শুরু করে,
– এই তোকে বলছি না, এক সাথে ঘুমানো তো দুরে থাক, কখনো স্ত্রীর অধিকারও চাইতে আসবি না। আরেক বার এই বিছানায় এক সাথে থাকতে চাইবি তো, ঘুমানোর স্বাধ জন্মের মতো মিটিয়ে দিব।

রাত তখন ১ টা পেরিয়ে গেলো। এক দিকে মুগ্ধর সাথে খারাপ ব্যাবহার করার একই ভাবে চেয়ারের সাথে বেধে রেখে গেছে শিশিরকে।
আর অন্য দিকে আজ বাবা মাকে ছেরে অন্যের ঘরে রাত পার করছে তীসা।
আজ তার বাসর রাত। অথচ রুমের এক কোনে বসে বসে নিরবে কাঁদছে সে।

To be continue,,,,,

~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরুধ রইলো।?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here