#প্রেমালয় ২,পর্ব-০৪,০৫
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৪.
অন্ধকার একটা ঘরে এভাবে বেধে রাখায় ভয়টা গাড় হতে থাকে শিশিরের। মনে হচ্ছে চার পাশে কে যেন হাটা চলা করছে। সারা শরির কাপছে প্রচুর। ধিরে ধিরে চোখ দুটু বন্ধ হয়ে আসার পর আর কিছু মনে নেই তার।
সকালে উঠে নিজেকে বিছায় আবিষ্কার করলো শিশির। তবে সে একা নয়। মুগ্ধর বুকে শুয়ে আছে সে। আর তাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে মুগ্ধও।
চার পাশ টা নিস্তব্দ পরিবেশ। সবে মাত্র সকাল হচ্ছে। ভোরের পাখি গুলোও কিচির মিচির গান পাইছে। এটাই তো সময় এই বাড়ি থেকে বের হওয়ার।
নিজের থেকে মুগ্ধর হাত টা ধিরে ধিরে সরিয়ে নিলো সে। এর পর চুপিচুপি হেটে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় শিশির। দরজা দিয়ে আরেক বার উকি দিয়ে দেখে নেয়, না মুগ্ধ ঘুমাচ্ছে। এখন চাইলেই এই বাসা থেকে বের হওয়া যাবে। সারা রাত চেয়ারের সাথে বেধে রাখায় ঘুম হয়নি শিশিরের। শেষ রাতে অজ্ঞান হওয়ার পর মুগ্ধ শিশিরকে নিয়ে খাটে শুইয়ে দেয়।
ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি পুরোপুরি। মনে হচ্ছে এখানে সুয়ে পরলে এখনই ঘুম চলে আসবে তার। কিন্তু এতো সকাল সকাল এমন সুজুগ হয়তো আর পাবে না সে। সবার এখনো ঘুম ঘুম রেশ কাটেনি। যা করার খুব তারাতারিই করতে হবে।
কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধাহয়। দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে নামতেই পা পিছলে পরে যায় শিশির। কারো চিৎকার কানে আসতে আচমকাই ঘুম ভেঙে যায় মুগ্ধর। খাট থেকে নেমে দৌড়ে শিড়ির গোড়ায় আসতেই দেখে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে শিশির। আর মাথা থেকে রক্ত ঝরছে তার।
,
ওদিকে রাতে কাঁদতে কাঁদতে রুমের এক কোনে পরে ঘুমিয়ে ছিলো তীসা। সুশান্ত উঠে দেখে ফ্লোড়ে গুটি সুটি মেরে শুয়ে আছে তীসা। কেমন যেনো একটা মায়া জন্মে উঠলো সুশান্তের মনে। তীসার পাশে দিয়ে বসে সে। তীসার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে তার মুখের উপর পরে আছে। এমন একটা সকালের অপেক্ষায় ছিলো সুশান্ত। সকালে ঘুম ভাঙতেই বৌ এর মায়াবি চেহারাটা সামনে আসবে, আর ওই মুখের উপর এসে ভির জমাবে তার এলোমেলো চুল গুলো। হাত দিয়ে চুল সরিয়ে আলতো করে চুমু এঁকে দিবে তার মুখে। কিন্তু স্বপ্নটা পূর্ন হয়েও অপূর্ণ রয়ে গেলো। কারণ যাকে চেয়েছে সে কোথায় সেটাও জানেনা সে।
তীসাকে দুই একবার ডাকতেই উঠে গেলো তীসা। সকাল সকাল সুশান্তের মুখ টা দেখে একটু ঘাবড়ে গেলো সে। উঠে বসে ভয়ার্ত চেহারায় চুল গুলো কানের পিছনে গুজে নেয় তীসা।
তীসার দিকে চেয়ে সুশান্ত বললো,
– এভাবে ফ্লোরে সুয়ে ছিলি কেন সারা রাত?
– আপনিই তো কালকে বললেন বিছানায় না ঘুমাতে, তাহলে আর কোথায় ঘুমাবো?
– তাই বলে ফ্লোড়ে ঘুমাবি? সোফায়ও তো ঘুমাতে পারতি।
– আমি সোফায় ঘুমাতে পারি না। আর আমাকে নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে। লাইফে তো সবই এলোমেলো হয়ে গেছে। এতটুকু আর বাকি থাকতো কেন?
সুশান্ত আর কিছু বললো না। তার আগেই দরজায় নক দিচ্ছিলো কেও। হয়তো মা এসেছে। সুশান্ত তীসাকে উঠেয়ে বললো,
– তুই এখন আমার বিয়ে করা বৌ। আমার আর তোর মাঝে সম্পর্ক টা যেমনই হোক বািরে মেহমানদের কাছে আমরা স্বামী-স্ত্রী। স্বাভাবিক ভাবেই আচরণ করবি।
এর মাঝে তীসা সুশান্তকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– কোথায় কেমন ব্যবহার করতে হবে, সেটা আপনার আমাকে শিখিয়ে দিতে হবে না। আমি এতোটাও অশিক্ষিত নই। চিন্তা করবেন না, আপনাদের সম্মান বাচাতেই তো আমাকে এনেছেন। তো এতটুকু নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আমার কারণে আপনাদের সম্মানে কোনো আঘাত আসবে না।
সুশান্ত স্থির হয়ে কিছুক্ষন তীসার দিকে চেয়ে আছে। মেয়েটাকে যতটা বোকা ভেবেছিলো এতোটাও বোকা নয়।
কিছু না বলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো সুশান্ত।
তীসা গিয়ে রুমের দরজা খুলতেই খালাকে দেখতে পায় একটা শারি হাতি দাড়িয়ে আছে। ওহ্ সরি, এখন তো আর খালা মনি বললে ভুল হবে। এটা তো এখন সম্পর্কে তার শাশুড়ি হয়।
ভেতরে এসে তীসাকে বললো,
– কি রে তীসা এখনো ফ্রেশ হও নি?
– না খালা মনি, মাত্র উঠলাম।
– আচ্ছা, এই নাও ফ্রেশ হয়ে শারিটা পড়ে নিবে। এর পর আমার সাথে নিচে যাবে। অনেক মেহমান বসে আছে নিচে।
– খালামনি, আমার কেমন জানি ভয় লাগছে এখানে।
– আরে ধুর ওটা ভয় না, হালকা একটু নার্ভাস। এমনটা সবার ক্ষেত্রই হয়। আর শুনো তুমি এখন এই বাড়ির একমাত্র বৌ। পেছনের সব ভুলে আজ থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু করতে হবে। শিশিরকে যেমন আমার ছেলে পছন্দ করেছিলো, ঠিক তেমন তোমাকে পছন্দ করেই নিজের মতে বিয়ে করেছে সে। আরেকটা কথা, এখন থেকে খালা মনি ডাকবে না। আমার একটাই ছেলে আর একটা মাত্র ছেলের বৌ, খালা মনি শুনতে ভালো লাগবে বল? মা ডাকার অভ্যাস করবে ধিরে ধিরে।
,
কিছুক্ষন আগে ডাক্তার এসে মাথায় বেন্ডেজ করে ঔষধ দিয়ে গেলো শিশিরকে। সিড়ি থেকে পড়ে মাথায় চোট লেগেছিলো খুব। অজ্ঞান হওয়া পর ডাক্তারকে ফোন দেয় মুগ্ধ।
একটু রেস্টে থাকতে বলেছে ডাক্তার। শিশিরের মাথার পাশে বসে আছে মুগ্ধ। মায়াবি চেহারাটায় চেয়ে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
এর মাঝেই বাবার ফোন এলো। ফোন রিসিভ করে বেলকনিতে চলে যায় মুগ্ধ।
– গত কাল থেকে বাসায় আসছো না কেন? কোথায় ছিলে রাতে?
– বাবা আমার এক ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টি ছিলো।
– তুমি কি ভেবেছো, আমি তোমার খোজ খবর না নিয়েই তোমায় ফোন দিয়েছি? একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, যেই বাড়িতে আমি অপমানিত লাঞ্চিত হয়েছি, ওই বাড়ির মেয়েকে আমি কখনোই পূত্র বধু হিসেবে স্বীকৃতি দিবো না।
মুগ্ধ কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দেয় তার বাবা। রুমে এসে শিশিরের দিকে চেয়ে আছে মুগ্ধ। আচ্ছা শিশির কি আমায় সত্যিই ভালোবাসে না? আমি এমন পাগলামি করেই কি ওর ভালোবাসা আদায় করতে পারবো। আচ্ছা ধরলাম সে আমায় ভালোবাসে, তাহলে বাবাকেই বা কিভাবে মানাবো? আমি আদৌ বুঝতে পারছি না আমার ভালোবাসা টা কতটুকু পূর্ণতা পাবে?
অফিসে যেতে হবে তাকে। বাবার পর এখন সেই সব সামলায়। কিন্তু শিশিরকে এভাবে একা ফেলে যাওয়াটাও কি ঠিক হবে? চারু মেয়েটাও আসছে না।
কিছুক্ষন পর চারু মেয়েটা আসলো। শিশিরের দেখা শুনার জন্য আজ থেকে এই বাসায়ই থাকবে সে। চারুকে বলল, শিশিরের খেয়াল রাখতে আর কোনো প্রব্লেম হলেই তাকে ইনফর্ম করতে।
চারু কিচেনে গিয়ে গোচগাচ করছে সব। সব এলোমেলো হয়ে আছে।
মুগ্ধ রেডি হয়ে নিলো অফিসে যাওয়ার জন্য। শিশিরের পাশে বসে আলতো করে কপালে চুমু এঁকে দিলো শিশিরের। এর পর উঠে আসার সময় মুগ্ধ অনুভব করে শিশির তার হাত টা শক্ত করে ধরে আছে। মুগ্ধ আবারও শিশিরের পাশে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। শিশির মুগ্ধর কোলে মাথা রেখে বললো,
– কোথায় যাচ্ছেন আপনি? বারবার আমার থেকে দুরে সরে যান কেন? আমি আপনাকে যতই কাছে টানতে চেয়েছি আপনি ততোই দুরে সরে গেলেন। একবারও বুঝতে চাইলেন না আমি কতটুকু ভালোবাসি আপনাকে। আপনি আমায় অবহেলা করলেন। এর পর যখন আমি নিজে থেকেই দুরে সরে গেলাম, তখন আবার আমার লাইফে আসলেন। কেন এতো কষ্ট দেন আমায়? এতোই যখন ভালোবাসেন, তাহলে কেন ওইদিন চিটিতে লিখেছিলেন,
আপনাকে ক্ষমা করে দিতে আমায় চান না,,
আমি আপনার আবেগ ছিলাম মাত্র, ভালোবাসা না।
আর কিছু বলেনি শিশির, আবার চোখ বুজে আছে। একটু অবাক হলো মুগ্ধ। শিশির কি অসুস্ততায় আবোল তাবোল বকলো? নাকি কিছু একটা মেসেজ দিলো তাকে? কিসের চিঠির কথা বললো সে?
,
সুশান্ত রুমে এসে দেখলো একটা নীল শারি পড়ে আয়নার সামনে বসে আছে তীসা। চুল গুলো খোলা, পিঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আয়নার সামনে বসে সাজছে তীসা। একটু পর মা এসে নিচে নিয়ে যাবে তাকে। সুশান্তর চোখ আটকে রইলো তীসার দিকে। অদ্ভুত এক আকর্শন। কিন্তু বেশিক্ষন তাকালো না সে। কারন শারি পড়া কোনো সুন্দরি মেয়ে মানেই, স্পষ্ট মায়াজাল।
সুশান্তের ঘোর কাটলো ফোনের টুংটাং শব্দে। অচেনা একটা নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো,
” শিশিরকে হয়তো আপনারা সবাই ভুল বুজে আছেন। সে পালিয়ে যায় নি, তাকে কিডনাপ করা হয়েছে। মুগ্ধ তার একটা বাংলোতে বন্ধি করে রেখেছে আপনার শিশির পরীকে।
To be continue…..
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরুধ রইলো।?
#প্রেমালয় ২
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
৫.
তীসাকে নিচে নিয়ে গেলো। দেখে সুশান্তের দাদি ও কয়েকজন মেহমান বসে আছে সেখানে। দাদি সোফায় হেলান দিয়ে বললো, এইতো আমার সতিন চলে এলো।
এক এক করে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো তীসাকে। এর পর দাদির পাশে বসলো। দাদি পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। বুড়ি হলেও এখনো পুরোপুরি টনটনে। তীসার কাধে রাত রেখে বললো,
– হাই ইয়াং লেডি, সব ঠিকঠাক?
তীসা অবাক হলো না। কারণ দাদি প্রাচিন কালের মানুষ হলেও আধুনিকতার ছোয়ায় চকচক করে।
তীসা মাথা নাড়িয়ে হ্যা সুচক সম্মতি জানালো। দাদি হেসে উঠে বললো,
– এভাবে মোচড়া মুচড়ি করছিস কেন? তুই কি এই বাসায় আজ নতুন নাকি? এর আগেও তো অনেক বারই এসেছিস। যদিও আজকের বিষয় টা অন্য কথা, তবে শুন স্বামীর আদেশ মেনে চলবি সব সময়। এই পরিবারটা আজ থেকে তোরই। এতোদিন বৌ মা সামলে আসছে এবার তোর পালা। গুরুজনের কথা শুনবি।এর পর কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো, আর স্বামীকে আূর করবি বেশি বেশি। যখন কাছে ডাকবে যাবি। স্বামীর মনে কষ্ট দিবি না, বুঝলি?
এই মুহুর্তে তীসা হাসবে না কাঁদবে ওটাও বুজে উঠতে পারছে না। দাদি এমন ভাব করছে মনে হয় সব কিছু স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে।
এর পর দাদি আবার বলতে শুরু করলো,
– জানিস আমি মনে মনে কত দোয়া করেছি। যাতে ছোট টা না হয়ে তোকে আমার নাত বৌ বানায়৷ আল্লাহ্ মনে হয় আমার দোয়া শুনেছিলো। আরে ছোট টা তো আস্ত বান্দর। ওইটার লগে আমার মিলতো না। এখন তুই আইসছ, আমি একটা সঙ্গি পাইলাম। ইংরেজি তে যাকে বলে, ইয়ে,, ফেরেন্ড আর কি।
তীসা সৌজন্য মুলক একটা হাসি দিলো। দাদি এবার ফোন টা বের করে বললো,
– এটা কি বলে, এই ফেসবুক চালাস না তুই?
তীসা মাতা নারালো যার অর্থ সে চালায়। এবার দাদি বললো,
– তাইলে এক কাম কর, আমার আইডিটাও এড কর। রাতে তো আর তোরে কাছে পামু না, নাতির লগে হুইয়া থাকবি। তখন কথা কমু নে।
তীসা একটু অবাক হয়ে বললো,
– তুমিও ফেসবুক চালাও দাদি?
– ওমা চালামু না? জানস, আমার ফেসবুকে ১ হাজার ফলোয়ার। কতো সুন্দর সুন্দর পোলায় আমারে মেসেজ দেয়। হাই, হ্যালো,, হাই, হ্যালো।
তীসা হেসে বললো,
– আচ্ছা তোমার আইডির নাম বলো।
– ইয়ে কি যেন নাম, ওহ্ হ্যা, অচিন দেশের রাজকন্যা।
তীসা যেন আর হাসি থামাতে পারলো না। শব্দ করে হেসে উঠে। কি বলে এই বুড়ি? আশেপাশের ব্যস্ত মানুষ গুলো তীসার দিকে তাকালো। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো তীসা।
সুশান্ত সিড়ি দিয়ে হেটে বাইরে যাচ্ছিলো খুব তারাহুরা করে। তখনি দাদি ডাক দিলো,
– এই ইয়াং ম্যান, কাম হেয়ার।
সুশান্ত একটু বিরক্তি বোধ করলো। এই বুড়ির পাল্লায় পরলে আর রক্ষে নেই। পরে দেকা যাবে কথা বলা বন্ধ করে দিবে হুট করে। সুশান্ত রাগ টা চাপা রেখে হাসি মুখে দাদির দিকে এগিয়ে গেলো,
– হুম ওল্ড লেডি, তারাতারি বলো কি বলবা?
দাদি একটু অভিমানি ভাব নিয়ে বললো,
– নতুন বৌ পেয়ে আমায় ভুলে গেলা ডার্লিং? আমি এখন পুরোনো হয়ে গেছি তাই না? এখন আমাকে আর ভালো লাগে না? কথা বলতে বিরক্ত লাগে? ব্যস্ততা দেখাও আমার লগে? হুন, তোর দাদা বাইচ্চা থাকলে তোরে আমার পাত্তা দেওয়ারও টাইম ছিলো নাকি? তোর দাদা জোয়ান কালে এতো হ্যান্ডসাম ছিলো, তাও তো নাকে দড়ি দিয়ে কতো পেছন পেছন ঘুরাইছি। বৃষ্টির মাঝে দাড়াই থাকতো পুল নিয়া। কম ঘুরাই নাই তোর দাদারে আমি।
তীসা বললো,
– খুব ইন্টারেস্টিং তো।
– হ, একদিন সময় কইরা তোরে আমার পেমের গল্প হুনামু। এই এদিকে আয় এইখানে বয়। সুশান্তের দিকে চেয়ে বললো।
সুশান্ত গিয়ে দাড়ির পাশে বসে বললো,
– কি বলবা তারাতারি বলো।
দুই পাশে দুইজন মাজখানে দাদি। দাদি উঠে একটু দুড়ে গিয়ে দাড়ালো। হাত দিয়ে ইশারা করলো দুইজন কাছাকাছি বসতে। দাদি ছবি তোলার জন্য রেডি হচ্ছেন। নানান রঙের স্টাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত তিনি। একবার বলছে এভাবে বসতে আরেক বার বলছে ওভাবে বসতে।
এর পর দাদি এসে ছবি গুলো দেখালো।
– বুঝলি, এগুলো আসকে ফেসবুকে দিমু। ভাইয়ের বিয়ার পিক।
তীসা একটু অবাক হয়ে বললো,
– ভাই? তোমার তো নাতি লাগে।
– চুপ ছ্যামড়ি, নাতি লিখলে মানুষ কি বলবো? তুই জানস আমার ফেসবুকে বয়স কতো? একুশ একুশ,,,,, বুছলি?
দাদির কথার তালে সুশান্তও বসে আছে। ওদিকে তার মন পরে আছে অন্য জায়গায়। তার পুরোপুরি বিশ্বাস ছিলো যে তার শিশির তাকে ঠকাতে পারে না। নিশ্চই শিশির কোনো বিপদে পরেছে। সে তো তীসাকে জেদ করে বিয়ে করেছে। মন থেকে না। একবার শুধু তার শিশির পরীকে খুজে বের করুক।
তীসাকে সাইডে ডাকলো সুশান্ত। দাদি একটু হেসে বললো,
– যাও যাও, জামাইয়ে ডাকতাছে। বাপরে বাপ, বিয়ার একদিন না পার হতেই বৌ ভক্ত হয়ে গেছে।
সবার আড়ালে নিয়ে সুশান্ত খুব শক্ত গলায় তীসাকে বললো,
– দেখ, সবার সাথে এতো ভালো হওয়ার চেষ্টা করবি না। ভুলে যাস না, সবাই বিষয়টা যেভাবেই নিক আমি কখনোই তোকে মেনে নিবো না। আগেই বলেছি আমি জেদ করেই তোকে বিয়েটা করেছি। তুই এই বাড়িতে কয়েক দিনের অতিথি মাত্র। একবার শুধু শিশিরকে খুজে পাই।
সুশান্ত চলে গেলো। তীসা ছল ছল দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সুশান্তের দিকে। মনে মনে বলে উঠলো,
“হুম, আমি তো একটা খেলনা। সবাই জেদ করে যেদিকে লাথি দিবে আমি ওদিকেই যাবো।
,
,
অফিসে আসার পর থেকেই মাথায় একটা চিন্তা ঘুর পাক খাচ্ছে মুগ্ধর। শিশিরের কতা গুলো খুব ভাবাচ্ছে তাকে। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে, চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। হুট করে মনে পরলো মাহিমার কথা। হয়তো তার কাছ থেকেই কিছুটা জানা যাবে।
মাহিমাকে ফোন দিয়ে ইমার্জেন্সি দেখা করতে বলে মুগ্ধ।
মুগ্ধ আর মাহিমা বসে বছে একটা কপি শপে। ফাহিমাকে সব কুলে বললো মুগ্ধ। আর জানতে চাইলো শিশিরের এমন আচরণের কারণ টা কি? কিন্তু মাহিমাও ঘুরিয়ে পেচিয়ে মুগ্ধকে বললো।
– শিশিরের কথা গুলো মাত্রই একটা ঘোর ছিলো। অসুখের ঘোরে মানুষ কত রকমই আবোল তাবোল বকে। শিশিরকে আমি চিনি। আপনার সাথে কথা বলি দেখে সে আমার সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো। সে আসলে সুশান্তকেই ভালোবাসে। আপনার বিশ্বাস না হলে তাকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
– কিভাবে?
– আপনি তাকে সুজুগ দিবেন। যাতে পালিয়ে যেতে পারে। সে যদি না পালায় তাহলে বুঝবেন যে সে আপনাকে ভালোবাসে। আর যদি সুশান্তের কাছে চলে যায়, তাহলে বুঝবেন যে, আপনার প্রতি তার ভালোবাসা একটুও ছিলো না৷
___________________
আজ একদিন এই ঘরে বন্ধি হয়ে আছে শিশির। না জানে বাড়িতে সবাই তাকে নিয়ে কি ভাবছে? সুশান্ত ভাইয়াই বা কি ভাবছে? লোকটাকে এভাবে ঠকালাম? না আমি তো ঠকাইনি। না, তাকে সব বলতে হবে। সত্যিটা জানাতে হবে যে আমি তাকে ঠকাইনি। তার আগে আমাকে এই বাসা থেকে বের হতে হবে যেভাবেই হোক।
মাথায় শুধু এখান থেকে বের হওয়ার চিন্তা ঘুরছে শিশিরের। সবার ভুল ভাঙাতে হবে। দুই হাত মুঠু করে একটা নিশ্বাস ছারলো শিশির।
চলবে?,,,,,,,,,,,,
– রিচেক করা হয়নি, ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন?