প্রেমালয় ২,পর্ব-০৮,০৯

0
1079

#প্রেমালয় ২,পর্ব-০৮,০৯
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

৮.

– তোমাকে আজ অনেক কথা বলার আছে মুগ্ধ। অনেক সময় মানুষ যা চোখে দেখে ওটাও সত্যি হয় না। আর যা সত্যি তা সবার দৃষ্টির আড়ালে থাকে। সেখানে তোমাদের মাঝেও অনেক গল্প তোমাদের দুজনেরই অজানা। শুনেছি তোমার বেচে ফেরার তেমন একটা গ্যারান্টি দিতে পারছে না কেউ। তাই ভাবলাম মরার আগে হলেও তোমার সত্য’টা জানা দরকার।
যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই তোমাকে ভালো লেগেছিলো আমার। ধিরে ধিরে কখন যে তোমায় ভালোবেসে ফেলি তা নিজেও বুঝতে পারিনি। শিশির আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলো। তবুও তুমি তার সাথে বেশি চলাফেরা করতে দেখে শিশিরকেও খুব হিংসে হতো আমার। মাঝে মাঝে মনে হতে শিশিরের জায়গাম আমি থাকলে কত’ই না ভালো হতো।
শিশিরকে তোমার সাথে সহ্য হতো না আমার। ধিরে ধিরে শিশিরকেও অসহ্য লাগতে শুরু হলো। এর পর আমার মাথায় চাপে যে তোমাদের আলাদা করতে হবে। কিন্তু তা তোমাদের দুজনের সাথে মিশেই।
শুনেছি শিশিরের খালাতো ভাই সুশান্ত শিশিরকে পছন্দ করতো। ওটার’ই সুজুগ নিয়েছিলাম আমি।
ওই দিন কলেজে হৃদয়ের সাঝে ঝামেলা হওয়ার পর শিশির আমার ফোন থেকে সুশান্তকে ফোন দিয়েছিলো। কিন্তু কথা বলার আগেই হৃদয় তার হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নেয়। তারপরই তুমি এসে হৃদয়কে মেরেছিলে খুব। ওইদিন সুশান্তের নাম্বার টা পেয়ে সেভ করে রাখি।
এর পর নির্বাচনের আগের দিন হৃদয়কে আমিই হ্যাল্প করি শিশিরকে তুলে নিয়ে যেতে। আমি চাইলেই তোমাকে খবর দিতে পারতাম। কিন্তু দিই নি কারণ, আমি চেয়েছিলাম শিশিরের কারণে তুমি নির্বাচনে হেরে তার প্রতি রাগ ও ক্ষোভ তৈরি হবে। কিন্তু তুমি তা করোনি। শিশিরকে পেয়ে তুমি রাগের বিপরিতে উল্টো ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলে। আমার প্লেন হেরে গেলো। বিষয়টাকে আমি একটা চ্যালেন্জ হিসেবে নিয়ে নিলাম। যে আমি তোমাদের আলাদা করেই ছারবো।
এর পর সুশান্তকে ফোন দিয়ে তোমাদের বিষয় টা জানিয়ে দিই। আর সুশান্ত এসে শিশিরকে নিয়ে হোস্টেলে ভর্তি করিয়ে দেয়। আর তার থেকে ফোন নিয়ে নেয়। আর বলে দেয় শিশির যেন ক্লাস ব্যাতিত আর কোনো কাজে বাইরে যেতে না পারে। এর পর সুশান্ত দুই দিন পর পর আসতো। তাই শিশিরও যোগাযোগের সাহস পেতো না। আমাকে সব সময় বলতো, কলেজ লাইফ শেষ করে এখান থেকে বের হয়ে খুব ভালোবাসবে তোমায়। তখন সব কষ্ট দুর করে দেবে। কিন্তু এই সময় টা তোমাকে দুর থেকেই ভালোবাসবে সে।
আর তোমাদের এই দুরুত্ব আমার কাজটা সহজ করে দিলো। শিশিরের খবর দেওয়ার বায়না করে তোমার সাথে প্রতিদিন দেখা করতাম। আর ছবি গুলো কেন তুলতাম যানো? যাতে শিশিরকে প্রমান দেখাতে পারি যে আমরা নতুন রিলেশনে জড়িয়েছি। আর তোমাকে এসে জানাতাম যে শিশির বদলে গেছে, তোমাকে তার লাইফে চায় না। তোমার দেওয়া একটা চিঠিও আমি শিশিরকে দিই নি। ওগুলো এখনো আমার কাছে জমা হয়ে আছে। প্রতিদিন পড়তাম। শিশিরের নামটা কেটে আমার নামটা বসিয়ে দিতাম সব চিটিতে। ভালো লাগতো খুব পড়তে।
এভাবেই তোমাদের দুরুত্বটা আকাশ সমান তৈরি হয়। এর পর তুমি যেদিন তুমি দেশ ছেরে চলে যাচ্ছিলে, ওই দিন আমি তোমায় কেন জড়িয়ে ধরেছিলাম যানো? কারণ তখন শিশির তোমার কাছে ছুটে এসেছিলো। আর এই দৃশ্য দেখে চলে গেলো, তোমার সামনে আসেনি। তোমার দেওয়া ডায়রিটাও তার কাছে যায়নি। গিয়েছে আমার লেখা একটা চিঠি। আর তা কেমন ছিলো বুঝতেই তো পারছো?
তোমাদেরকে আলাদা করতে কম কষ্ট করতে হয়নি আমার। আমার এই সফল হওয়াটা অনেক পরিশ্রমের ফল।
আর এখন তোমাকে কথা গুলো এই জন্য বলছি যে, যাতে মরার আগে তুমি সত্যিটা জেনে মরতে পারো।
তোমার প্রতি এখন আর আমার কোনো ফিলিংস নেই। কারণ তুমি বেচে থাকলেও সারা জীবন পঙ্গু হয়ে বাচতে হবে। আর একটা পঙ্গুর সাথে সংসার করে আমার জীবনটা আমি নষ্ট করতে চাই না।

দরজার আড়াল থেকে পুরোটা শুনেছে শিশির। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে তার। কেন সে মুগ্ধকে ভুল বুঝলো? কে জানতো, তার সবচেয়ে কাছের বেষ্টফ্রেন্ডই তার সাথে এভাবে বেঈমানি করবে?
শিশির ভিতরে এসেই মাহিমার গালে একটা চর বসিয়ে দেয়। তার কাতর গলার স্বরও খুব হিংস্র শোনাচ্ছে আজ।
– তোকে আমি বেষ্টফ্রেন্ড না, নিজের বোন ভাবতাম। ভেবেছিলাম কেউ আমায় না বুঝলেও তুই ঠিকই আমায় বুঝিস। কিন্তু তোর অভিনয় গুলো এতোটা দক্ষতার সাথে করেছিস, কেউই ধরতে পারেনি। বেড়িয়ে যা এখন থেকে, আমার দুই চোখের সামনেও যেন কখনো তোর চেহারা না পরে।
মাহিমা হাসতে হাসতে বেড়িয়ে যাচ্ছে। এটা বিজয়ি হাসি।
– এবার বুঝেছিস, ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কারো সাথে দেখলে কতোটা কষ্ট হয়? আর তোর সামনে আসার কোনো প্রয়োজন নেই আমার। মুগ্ধর প্রতিও কোনো ইন্টারেস্ট নেই এখন। আর একটা গুড নিউজ শুন। কাল সন্ধায়ই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। ভালো থাকিস তোর পঙ্গুকে নিয়ে। বায়।
,
,
শিশিরের হাত ধরে আছে সুশান্ত। মনে হচ্ছে এখন যেতে না চাইলেও শিশিরকে জোড় করে নিয়ে যাবে সে।
– দেখ শিশির, আমি সত্যিই তোকে খুব ভালোবাসি। আমি বুঝতে পারিনি তোর সাথে এতোকিছু ঘটেছে। তুই আমাকে বিয়ের আসরে রেখে পালিয়ে গিয়েছিস ভেবেই আমি রাগে তীসাকে বিয়ে করেছি। এখন শুধু আমার সাথে চল, আমি এক্ষুনি তীসাকে ডিবোর্স দিয়ে তোকে বিয়ে করবো। আমি তোকে সত্যিই খুব ভালোবাসি শিশির।
একটু বিরক্তি নিয়ে সুশান্তের থেকে নিজের হাত টা ছাড়িয়ে নেয় শিশির। সুশান্তের থেকে কিছুটা দুরে সরে বললো,
– এটাকে ভালোবাসা বলে না। আপনি যদি সত্যিই আমায় ভালোবাসতেন, তাহলে এভাবে আমার উপর রাগ করে হুট করে বিয়ে করে ফেলতে পারতেন না। খোজ নিয়ে দেখতেন আমি কি সত্যিই পালিয়ে গিয়েছি নাকি আমার কোনো বিপদ হয়েছে? কিন্তু আপনি সেটা করেন নি। কারণ আমার উপর এইটুকু বিশ্বাসও আপনার নেই। বিশ্বাস ছারা সারা জীবন কিভাবে একসাথে থাকবো বলতে পারেন? এখন এসে নিজের মিথ্যা ভালোবাসা দেখাতে আসবেন না। আর শুনে রাখুন, আমি মুগ্ধকেই ভালোবাসি। ওর উপর এতোদিন যেটা ছিলো সেটা শুধু অভিমান ছিলো।
সুশান্ত হেসে বললো,
– মুগ্ধকে ভালোবাসিস তুই? যে এখন মৃত্যুর সাথে লড়ছে? কি পাবি তাকে ভালোবেসে? মরে গেলে তো গেলোই, আর বেচে থাকলেও পঙ্গু হয়ে জীবন কাটাতে হবে।
– সে বেচে থাকলেও আমি তাকে ভালোবাসি, মরে গেলেও আমি তাকে ভালো বাসি আর চলাফেরা করতে না পারলেও আমি তাকেই ভালোবাসি। প্রয়োজনে সারাজীবন তার সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিবো। তাকে নতুন করে বাচার উৎসাহ দিবো। তবুও তাকে আর কষ্ট দিবো না আমি। আর আপনি যদি আমায় সত্যিই ভালোবেসে থাকেন, তাহলে তাহলে আমার একটা রিকুয়েষ্ট রাখবেন? আপুকে মন থেকে মেনে নিন। তার তো কোনো দোষ নেই। তীসা আপু খুব ভালো একটা মেয়ে, দেখবেন আপনার সংসার টা খুব সুন্দর করেই গুছিয়ে রাখবে। ভালো থাকবেন, আসছি আমি।
,
,
মুগ্ধর মাথার পাশে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে শিশির। আস্তে আস্তে মুগ্ধ শিশিরকে বললো,
– এখন আর আমাকে ভালোবেসে তোমার কি হবে? কিচ্ছু পাবে না তুমি। তুমি বরং তোমার ভালোবাসার কাছেই চলে যাও। আজ আর তোমাকে কেউ বাধা দিবে না।
– আমার ভালোবাসা শুধুই আপনি। অন্য কাউকে আমি কখনোই ভালোবাসিনি।(শিশিরের সোজা জবাব)
– আমি আর স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারবো না। তবুও ভালোবাসবে আমায়?
– ভালোবাসা কখনো দিক দেখে কমে যায় না। ভালোলাগা, মোহ এসব দিক দেখে কমে যায়। আর আপনি আমার মোহ নয় যে দিক দেখে কমে যাবে, আপনি আমার কোনো নেশা নয় যে লেবু তে কেটে যাবে, আপনি আমার ভালোবাসা যা কখনো কমবে না।
– আমার সাথে এভাবে সারাজীবন কাটাতে পারবে না তুমি।
– সেটা সময়ই বলে দিবে।
আজ মুগ্ধর চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। উঠে বসে হাতে পায়ের বেন্ডেজ গুলো খুলতে থাকে সে। শিশির শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এতো অসুস্থ একটা মানুষ কিভাবে স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ করছে? বুঝে উঠতে পারছে না এসব কি হচ্ছে। সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
মুগ্ধ সব খুলে নিচে নেমে দাড়ালো। শিশিরের দুই গালে হাত রেখে কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়ে বললো,
– সারা জীবন এমনই থেকো।

~ চলবে?,,,,,,,,

#প্রেমালয় ২
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

৯.

মুগ্ধ হাতে পায়ের ব্যন্ডেজ খুলতে থাকে নিজে নিজে। পাশে দাড়িয়ে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে শিশির। সে বুজে উঠতে পারছে না এসব কি হচ্ছে? মুগ্ধ কিভাবে এতো স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ করছে?
শিশিরকে চমকে দিয়ে মুগ্ধ শিশিরের দুই গালে হাত রেখে কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়ে বললো,
– সারা জীবন এমনই থেকো।
মুগ্ধর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দুই পা পিছিয়ে আশে শিশির। মুগ্ধর এক্সিডেন্টের পর থেকে এই পর্যন্ত সময়টা যেনো একটা ঘোরের মাঝে কাটালো।
দুই পা পিছিয়ে ঠায় দাড়িয়ে আছে শিশির। বড় বড় দুইটা নিশ্বাস নিলো সে। মনে হচ্ছে মুগ্ধর গালে এখন ঠাসিয়ে দুইটা চর মারতে পারলে শান্তি লাগতো মনে। কিন্তু তা করতে পারবে না সে। তার ধারণা মুগ্ধ বার বার তার ইমোশন নিয়ে খেলে। জীবনটা কি খেলা মনে হয় তার কাছে?

কিছু না বলে সোজা বেড়িয়ে যায় শিশির। কতো সুন্দর করেই না নাটক সাজালো মুগ্ধ। যদিও তার কাছে এসব কঠিন সাধ্য ব্যপার নয়।

বিকেল বেলা ঝির ঝির বাতাস বইছে। কালো মেঘে ভির জ্বমেছে আকাশের বুকে। দুড়ে একটা নির্জন জায়গায় এসে বসে রইলো শিশির। চার দিকে জনমানব তেমন একটা চোখে পরছে না। কয়েকটা নৌকা মেঘ দেখে তীরের দিকে যাচ্ছে। সামনে থাকা নদী হতে কানে ভেসে আসছে পানির কুল কুল শব্দ।
কিছুটা দুরেই মুগ্ধর গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি থেকে নেমে কপালে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকালো। অনেক মেঘ জমেছে আকাশের বুকে। আজ বৃষ্টি নামুক, সব অভিমান ধুয়ে মুছে সাফ করে দিক।
হাতে ফুল গুলো নিয়ে শিশিরের দিকে আগাতে থাকলো সে। আজও খুব রাগ করে আছে শিশির। রাগ ভাঙাতে হবে।
এর আগেও রিলেশনে থাকা সময়টায় এভাবে অনেকবার রাগ ভাঙিয়েছে শিশিরের।
মুগ্ধ চুপচাপ এগিয়ে শিশিরের পাশে গিয়ে বসলো। মুগ্ধকে দেখে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো শিশির।
মুগ্ধ শিশিরের দিকে তাকিয়ে কান ধরে বললো, সরি।
শিশির কিছু বলছে না, চুপচাপ বসে আছে। মুগ্ধ এখনো এক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে শিশিরের দিকে। শিশির এবার মুগ্ধর দিকে ফিরে বললো,
– জীবন টা শুধু অভিনয় মনে হয় আপনার কাছে?
– অভিনয়’ই তো, আর আমরা সবাই পাক্কা অভিনেতা।
শিশির কিছু বললো না। অন্য দিকে চেয়ে রইলো আবার।
– সরি বললাম তো, আমি কি ইচ্ছে করে এমন করেছি নাকি?
– তো কেন করলেন? এমনও তো হতে পারে মাহিমার কথাগুলোর মাঝেও অভিনয় ছিলো। হয়তো আপনিই বলিয়েছেন এসব?
শিশিরের কথায় একটু অবাক হলো মুগ্ধ। তবুও শান্ত ভাবে বললো,
– আমাকে তোমার এতোটাই নিচু মনে হয় শিশির?
শিশির কিছু বলছে না। রাগে কটমট করতে করতে বললো,
– মাহিমাকে এখন খুন করতে মন চাইছে আমার। নিজের বোন ভাবতাম তাকে আমি।
– আমার এই এক্সিডেন্ট এর অভিনয়টা কেন করেছি জানো? মাহিমার চালাকি আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। আমি তোমাকে এসব বললেও তুমি বিশ্বাস করবে না। আর মাহিমাকে তোমার কাছে ধরে এনে সব শুনালেও তুমি বিশ্বাস করতে না। মনে করতে আমি ভয় দেখিয়ে জোড় করে তাকে এসব বলাচ্ছি। তাই এভাবে একটু ট্রাই করেছিলাম। ঢিলও জায়গা মতো লেগেছে। আমার মরে যাওয়ার কথা শুনে সে নিজে এসেই সব স্বীকার করেছে। তুমি নিজেই সব দেখলে। তবুও বলছো এসব অভিনয় ছিলো? তোমাকে আর কিছু বলার নেই শিশির। তোমার ভিতরে আমাকে নিয়ে এতোই অবিশ্বাস তৈরি করেছো যে, এখন আমি মানুষটাকেই তোমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। এতো অবিশ্বাস আর এতো অভিনয়ের আড়ালে একটা গভির সত্য কি জানো? আমি তোমায় সত্যিই ভালোবেসেছি, কখনো তোমায় ঠকাইনি। কখনো না।

শিশির নিজের কান্না চাপা রেখে হুট করে খুব শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলো মুগ্ধকে। ঠায় দাড়িয়ে আছে মুগ্ধ। চোক্ষু জুগল বন্ধ করে একটা ভারি নিশ্বাস ছারলো।
আকাশের বুক ছিড়ে বৃষ্টি কনা আছরে পরছে দুজনের গায়ে। আজও শিশির কাঁদছে খুব। আজতো কোনো দুঃখ নেই তার। তবুও অঝোরে জল গড়িয়ে পরছে কেন সেটা তার অজানা। আর সেই জল ধুয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি ফোটায়।
শিশির মুখ তুলে মুগ্ধর দিকে তাকালো। খুব করুন এই দৃষ্টি। গোলাপের মতো ঠোট দুটু কাপছে তার। আর বৃষ্টি ফোটা সেই ঠোঁট জোড়া ছুয়ে দিয়ে নিচে গড়িয়ে পরছে। আজ বৃষ্টি ফোটাকেও খুব হিংসে হচ্ছে তার। কেন তার মায়াবিনির মুখকে স্পর্শ করছে তারা।
মুগ্ধ হাতে থাকা ফুল গুলোর পাপড়ি ছিড়ে শিশিরের মুখের উপর ছিটিয়ে দিলো। চোখ বুজে নিলো শিশির। এ যেন অদ্ভুত সুন্দর এক গোলাপি পরী।
,
,
শিশিরের খবর পেয়ে গেল তীসা। দেখা করতে চাইলো। সকালে নাস্তা সেরে বেড়িয়ে গেলো শিশিরের দেওয়া ঠিকানার উদ্দেশ্যে। আজই নিজের দায়িত্ব শেষ মনে করছে তীসা। শিশিরকে সব বুঝিয়ে দিয়ে এমন অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্ত হয়ে যাবে সে। তাই আজ অস্থিরতা টা খুব বেশি তার।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর শিশিরের দেওয়া ঠিকানায় পৌছে গেলো সে। কিছুক্ষন পর শিশিরও আসলো। আজ আর তাকে আটকে রেখে যায়নি মুগ্ধ। মুক্ত পাখির ন্যায় আকাশে ছেড়ে দিয়েছে। তার বিশ্বাস, আজ আর পাখি উড়ে যাবে না, দিন শেষে নিড়ে ফিরবে ঠিকই।

– কেমন আছো আপু?
তীসা কিছু না বলে শিশিরকে জড়িয়ে ধরলো।
– এতোদিন কোথায় ছিলি বোন? ওই লোকটা খুব কষ্ট দিয়েছে তোকে তাই না?
শিশির তীসাকে শান্ত করে বললো,
– আপু আগে চলো এক জায়গায় বসি।

তীসা শিশিরকে সব কিছু খুলে বললো।
– সুশান্ত তোকে খুব ভালোবাসে শিশির। আমার দিকে ফিরেও তাকায় না সে। আমি জানি সে কখনোই আমায় মেনে নিতে পারবে না। তুই ওর কাছে চলে যা বোন। তোকে খুব ভালোবাসে সে। তোরা নতুন করে সব গুছিয়ে সুখে থাক। বিশ্বাস কর আমি কখনো তোদের মাঝখানে কাটা হয়ে দাঁড়াবো না।
শিশির এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তীসার দিকে। মেয়েটা আজও সেই ছোট বেলার মতোই সহজ সরল। শিশির ভালো করে লক্ষ করে দেখে তীসা কাঁদছো ভেতরে ভেতরে। যা তাকে দেখলেই বোঝা যায়। কান্না গুলো গলায় এসে দলা পাকিয়ে আটকে যাচ্ছে, নাকি সে নিজেই আটকে রাখতে চাইছে?
শিশির তীসার দিকে চেয়ে হেসে বললো,
– নিজের সংসার টা অন্য কাউকে দিয়ে দিতে তোমার কষ্ট হবে না আপু? এতো বোকা কেন তুমি? কেন নিজের অধিকার আদায় করে চলতে পারো না? মাথা তুলে বাচতে শিখবে কোন দিন তুমি?
– আমি চাইনা এভাবে বাচতে। সব ছেরে একটু একা শান্তিতে বাচতে চাই। তুইও তো সুশান্তকে ভালোবাসিস তাই না? তাহলে এতো কথা বলছিস কেন? চল আমি নিজেই তোকে সুশান্তের হাতে তুলে দিবো। বিশ্বাস কর একটুও কষ্ট হবে না আমার।
– মন খারাপ করো না আপু, মানুষের জীবনে এমন খারাপ সময় যায়। আবার খারাপের পর ভালো সময়ও আসে। ধৈর্য ধরে থাকতে হয়। সব কিছু মানিয়ে নিতে শিখতে হয়। দেখবে এক সময় সব ঠিক হয়ে যাবে। নিজের সংসার টা ধরে রেখো আপু। তুমি এতো সহজেই হেরে যাবে? মাথা উচু করে বাচবে তুমি। কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবে না। দেখবে এর পর অন্যায় করতেও বিপরিত মানুষটার হাত কাপবে।
,
,
সন্ধার পর বাড়িতে গেলো মুগ্ধ। তার বাবা মেহের চৌধুরি বসে আছে সোফায়। হাতে চায়ের কাপ। পাশে বসে আছে মুগ্ধ। বাবা কেন ইমার্জেন্সি ডেকেছে বুঝতে পারছে না সে।
মেহের চৌধুরি চা রেখে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমি সব সোজাসুজি ভাবেই বলছি, কথা গুলো কানে ঢুকিয়ে নে। তোর অনেক কিছুই সহ্য করেছি, আর না। ওই মেয়েটার জন্য অজথা সময় নষ্ট করে লাভ নেই। কারণ ওই মেয়েটাকে কিছুতেই এই বাড়ির বৌ করে মেনে নিবো না। আর তোকে ডাকার উদ্দেশ্য টা হলো, কালকে মেয়ে দেখতে যাবো রেডি থাকি। আর ওই মেয়েটাকে ওর বাবা মায়ের কাছে পৌছে দিয়ে আসবি।
মুগ্ধর সোজা উত্তর,
– কিন্তু আমি তো শিশির ছারা অন্য কাউকে বিয়ে করবো না বাবা।
ছেলের এমন মুখের উপর কথা বলা শুনে চোখে মুখে রাগের চাপ ভেসে উঠে মেহের চৌধুরির।
মুদ্ধর মাঝেও একটা অনুসুচনা জেগে উঠে। বাবার উপর কথা বলার সাহস ও শিক্ষা কোনোটাই পায়নি সে।
আর কিছু না বলে চুপচাপ উঠে সেখান থেকে চলে গেলো মুগ্ধ। মেহের চৌধুরি স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললো,
– যেই বাড়িতে আমি এতো অপমানিত হয়েছি, ওই বাড়ির মেয়েকে আমি কিছুতেই এই বাড়িতে নিয়ে আসবো না, তাও আবার বৌ হিসেবে। তোমার ছেলেকে বলবে যেকোনো একটা বেছে নিতে। হয়তো ওই মেয়ে, নয়তো তার ফ্যামিলি।

~ চলবে?,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here