অনুগল্প
প্রেমের জ্বর ( উড়বে হাওয়ায় বিষন্ন চিঠি)
জিনাত আফরোজ
সোহেব ঝড়ের গতিতে এসে ইলমাকে জড়িয়ে ধরে খুশি খুশি গলায় বলে,
– ইলু সুখবরটা সত্যি!!? আমি খুব খুব খুশি। আমিও বাবা হবো, কেউ আমাকে আদো আদো কন্ঠে বাবা বলে ডাকবে। উফফ আর ভাবতে পারছি না। এই তোর তো জ্বরে গাঁ পুড়ে যাচ্ছে। খবরদার ইলু তুই আজও জ্বরে বেহুশ হয়ে পড়বি না। তুই এতো হিংসুটে কেন রে? যখনি যখনি আমার জীবনে সেরা খুশি খবর আসে তখনি তুই জ্বরে কাত হয়ে পড়িস? তুই এতো হিংসুটে জানলে জীবনেও বিয়ে করতাম না।
– আমি কী করবো আমার আপনার সুখ সহ্য হয় না।
– তবে রে,,
সোহেব হেসে ইলমাকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে। আস্তে করে নাক কামড়ে দেয়।
– বিয়ের রাতে জ্বরে বেহুশের মতো ঘুমাইছিস, তারপর হানিমুনে গেলাম সেখানেও জ্বর নিয়ে গেলি। চাকরির প্রোমেশন পেলাম ভাবলাম সারাদিন ঘুরবো সেদিনও জ্বরে কাত হয়ে গেলি । তোর অনার্স ফাইনালে রেজাল্ট দিছে সেদিনও জ্বর। আজ আমার জীবনে আর একটা শ্রেষ্ট মূহুর্তে আজকেও জ্বর নিয়ে পড়ে আছিস। তুই একদিনও আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবি না ঠিক করছিস। আমাকে প্রতিনিয়ত তোর জ্বরের প্রেমের জোয়ারে ভাসাবি। আমি যে তোর জ্বরের প্রেমে জোয়ারে পুড়ে ছাঁই হয়ে যাচ্ছিরে ইলু।
সোহেব কথা বলতে বলতে ইলমার দিকে তাকিয়ে দেখে। ও এতোক্ষণে ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে।
সোহেব হেসে ইলমাকে গালে,কপালে, ঠোঁটে চুমু দিয়ে কাঁথা গায়ে দিয়ে দেয়।
তারপর জলপট্টি দেওয়ার ব্যাবস্তা করে। সোহেবের এটা অভ্যাস হয়ে গেছে। যখনি যখনি কোন খুশির খবর আসে ওদের, সেদিনেই ইলমার জ্বর চলে আসে। এ যেমন আজকে ওদের জীবনে সবচেয়ে খুশির খবর আসে ওরা বাবা-মা হবে। আর এতেই ইলমা জ্বরে কুপোকাত।
ওদের বিয়ের চার বছর চলছে,
এ চার বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। জামিরও বিয়ে করছে, তুলির বিয়ে হয়ে গেছে। জায়িন,ইশান,তনয়া কলেজে উঠছে। সব কিছু মোটামুটি বদলেছে। শুধু বদলেনি ইলমার প্রতি সোহেবের ভালোবাসা, বৈধ সম্পর্কে ভালোবাসাটা আরও গভীর হয়েছে ।
ইলমা সবাইর থেকে যেমন ভালোবাসা পেয়েছে। তেমন সাহানা বেগম (সোহেবের মা) ওকে উঠতে বসতে কথা শুনিয়েছে।
এতে অবশ্য ইলমা দমে যায়নি। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে গেছে সাহানা বেগমের মতে চলতে। উনার মন জয় করতে। এতে ঘরের অন্য সব সদস্যরাও ওকে সাহায্যে করছে। ডালিয়াও ওকে বড়ো জা’র মতো সম্মান করে।
সোহাইল আর ডালিয়ার ছেলে বাবু হয়েছে, সাহানা বেগম নাতনিকে অনেক আদর করে। তা দেখে সবাই ইলমাকেও বাচ্চা নিতে বলে। কিন্তু সোহেব রাজি হয়নি, ও ইলমার পড়াশোনা শেষ করে বাচ্চা নেওয়ার কথা বলে। ইলমাও আর বাড়াবাড়ি করেনি। ইদানীং সাহানা বেগমও ইলমাকে কিছু বলে না।
আগের যেমন স্নেহে করতো এখনো তেমন করে শুধু দেখায় না। এ যেমন এ কয়েকদিন ইলমার শরীর খারাপ দেখে সোহেবের সাথে চিল্লাচিল্লি করে নিজে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে । সোহেব কাজে আটকা পড়ে গেছে, ও চট্টগ্রাম গিয়েছিলো অফিসের কাজে।
ইলমার বাবাও এখন বিশ্বাস করতে শুরু করছে সম্পর্কে ভালোবাসা, বিশ্বাস, থাকলে সম্পর্কে কোন বাঁধা থাকে না। সম্পর্কের মাঝে ফাঁক রাখতে নেই, গোপনতা রাখতে নেই। দুজনের কাছে দুজনকে খোলা বইয়ের মত তুলে ধরলে, সে সম্পর্ক ভাঙ্গা সহজ নয়।
সমাপ্ত