প্রেম এসেছিলো নীরবে,পর্ব:২৮ লাস্ট পার্ট

0
3898

প্রেম এসেছিলো নীরবে,পর্ব:২৮ লাস্ট পার্ট
সাদিয়া_জাহান_উম্মি

চোখে মুখে পানির ছিটা পড়তেই পিটপিট করে তাকায় প্রাহি।মাথায় একটু জোড় খাটাতেই কিছুক্ষনের আগের সম্পূর্ণ ঘটনা মনে পরে যায়।ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সামনে তাকাতেই দৃষ্যমান হয় সেই পরিচিতো মুখখানা।প্রাহির চোখজোড়া আবারও ভিজে উঠে।প্রাহি কাঁদতে দেখে সেই ব্যাক্তিটি বললো, ‘ আরে আরে! কাঁদছো কেন?আমি তোমাকে এখান থেকে নিতে এসেছি।তুমি চিন্তা করো না।’

ব্যাক্তিটি হু হা করে হাসতে লাগলো।প্রাহি দূর্বল কন্ঠে বলে, ‘ কেন করলেন এরকম?কি ক্ষতি করেছি আমি? ‘

ব্যাক্তিটি হাসি থামিয়ে তেড়ে গিয়ে প্রাহির গাল চেপে ধরে।চোয়াল শক্ত করে বলে, ‘ অনেক কিছু করেছিস।আমার এতো বছরের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছিস।অর্থকে নিজের ভালোবাসার জালে ফাসিয়ে।’

প্রাহি কাঁদছে।অধিক দুঃখের কান্না।এ কাকে দেখছে।নিজের পিতার মর্যাদা দিয়েছিলো যাকে সেই নাকি আজ ওর চিরশত্রু।হিয়ান্ত সিকদার ওর খালুজান।প্রাহি ভেজা গলায় বলে, ‘ খালুজান, আপনি, আপনি শেষমেষ সামান্য সম্পত্তির লোভে আমার সাথে এমন করছেন?’

হিয়ান্ত হাসলো।বললো, ‘ এতো ভালো মানুষি দেখাস না তো।এইগুলো আমার সহ্য হয়না।মাথা খারাপ হয়ে যায়।তোর বাপ মা ও এই অতিরিক্ত ভালো মানুষি দেখাতে গিয়ে আমার কাছেই খুন হয়েছে।’

প্রাহি মনে হয় বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো।অবাকের চরম সীমানায় পৌছে গিয়ে বলে, ‘ মানে?’

হিয়ান্ত বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, ‘ওহ তুই তো জানিস না আবার।তোর বাবা মা এমনি এমনি মরেনি।তাদের মেরেছি আমি।তাও আবার তোর মামি মামির হাতে।’

প্রাহির একসাথে এতো সত্যতা হজম হচ্ছে না।বুকে ব্যাথা করছে।নিঃশ্বাস আটকে আসছে।তাও নিজেকে সামলালো।এতো সহজে ভেংগে পরলে চলবে না।ওর কপালে যা থাকার তা হবে।ভাগ্যকে কেউ বদলাতে পারে না।ও জয়কে বিয়ে করবে না কোনদিন।দরকার পরলে নিজেকে শেষ করে দিবে তাও না।তবে মৃত্যুর আগে ওকে সবটা জানতে হবে সবটা। প্রাহি শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, ‘ কেন মেরে ফেললেন আমার বাবা মাকে?কি দোষ ছিলো তাদের?’

হিয়ান্ত চেয়ারে আরাম করে বসলো।মাথার পিছনে দুহাত রেখে আয়েশি ভঙিতে বলে, ‘ যাক,তোর এই একটা কথা শুনতে পারি।তোর তো অধিকার আছে এটা জানার যে তোর বাবা মা কিভাবে মারা গিয়েছে।তাহলে শোন, তোর বাবাকে আমি অনেক হিংসা করতাম। সালা বিজন্যাসের দিক থেকে অনেক এগিয়ে ছিলো।কোটি কোটি টাকার ডিল শুধু সেই পেতো। হিয়াজ ভাইয়াও সেম ছিলো।তাদের দুজনের বিজন্যাসই অনেক ভালো চলছিলো।সবচেয়ে ভালো চলছিলো তোর বাবারটা।আর আমার শুধু লস খেতাম।তোর বাবা সেই জন্যে তার ডিলগুলো থেকে আমাকে ভিক্ষা দিতো অনেক ডিল।মনে মনে ক্ষুব্দ হলেও টাকার জন্যে নিয়ে নিতাম। সফল হলেও পারতাম না।কারন আমার একটু মদ, টদের নেশা ছিলো।জুয়া খেলতাম এইভাবেই টাকা নষ্ট হয়ে যেতো।এইসব একদিন তোর বাপ জেনে যায় তাই হিয়াজ ভাইকে বলে দেয়।ভাই সেদিন আমাকে অনেক মেরেছিলো।সেই থেকে আমি ভালো মানুষ হওয়ার ভাণ ধরলাম।একেবারে সাধু হয়ে গেলাম সবার সামনে।সবাইও ভীষন খুশি আমার এতো পরিবর্তন দেখে।তারপর তোর খালাকে পছন্দ হলো।আমি ভালো হয়ে গিয়েছিলাম।সেই জন্যে তারাও বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলো। এইদিকে সবার মন আর বিশ্বাস আরো ভালোভাবে অর্জন করলাম। বছর খানিক পর হেমন্ত হলো।ছেলের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করার জন্যে।জোরালো প্লান করলাম।তোর বাবা মাকে মারার প্লান।কিন্তু পারলাম কই।সালারা সব সম্পত্তি নিজেদের নামে না করে তোকে দিয়ে রেখেছিলো।তোর আঠারো বছর বয়স হলে অফিসিয়ালি সব পেয়ে যাবি তুই।তার আগে সেই সম্পত্তিতে কারো অধিকার নেই।তোর বাপ মাকে দিয়ে যেহেতু আমার কোন কাজ নেই।তাই ওদের শেষ করে দেওয়ার প্লান বানালাম।সেটা কোন ক্রমে ইলফার বাবা যেনে যায়।সালা অফিসে এতো কাজ করতো।আমারও মনে ছিলো না যে ও অফিসে আছে।ওই সালা সব জেনে যায়।তাই ওকেও পথ থেকে সরাতে হয়।তারপর তোর মামা মামিকে ভয় দেখিয়ে টাকার লোভ দেখিয়ে বললাম যে করেই হোক তোর বাবা মাকে যেকোন উপায়ে যেন মেরে ফেলে।তারাও তাই করলো দুজন লোককে কাজের লোক বানিয়ে তোদের বাড়ি পাঠালাম।তার কিছুদিন পরেই হেমন্তকে যেদিন এব্রোড পাঠিয়ে দিবো।সেদিন তোকে আগে ভাগে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসলাম।যাতে তোর কিছু না হয়।ব্যস,সুযোগ বুজেই খাল্লাস। তোকে হিয়াজ ভাই রাখতে চেয়েছিলো তার কাছে।কিন্তু আমি প্লান করে তোর মামা মামিকে বললাম তোকে নিয়ে পালিয়ে যায়।তুই বড় হতে থাকিস।এর মধ্যেই জয় আসে দেশে তোকে দেখে পছন্দ করে ফেলে।আরেক মুসিবত কাধে।এইটাকে ছলে বলে আমার পরিকল্পনার অংশ বানাই।এই বেটাও কিভাবে যেন আমার ঠিকানা পেয়ে যায়।যেখানে তোর মামা মামিও আমায় কোনদিন দেখেনি।সবাই আমাকে ব্লাক হান্টার নামেই চিনে। জয়কে বললাম সম্পত্তির অর্ধেক ওকে দিবো।আর তোকেও জয়য়ের সাথে বিয়ে দিবো।ভালোই চলছিলো।জয় আবার চলে গেলো।আমিও তোকে বিয়ে দেওয়ার নাটক সাজিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম।যাতে সমাজের মানুষ সন্দেহ না করে যে হুট করে তুই কোথাও উধাও হয়ে গেলি।কিন্তু সেখানেও গন্ডগোল।আমার ছেলে যে তলে তলে তোকে খোজাখুজি করছিলো আমি জানতাম না।হেমন্ত ওখানে গিয়ে তোকে নিয়ে আসে। তারপর থেকে তো জানিসই অর্থ তোকে ভালোবেসে ফেলে।কি এক মুসিবত।এতো চেষ্টা করতাম তোকে কিডন্যাপ করার জন্যে কিন্তু ওই অর্থ’র জন্যে পারছিলাম না সাথে আমার ছেলে আর ওই আরাফ তো আছেই।আবার আসলো ইলফা।তোকে মারার প্লান করলো।কিন্তু তোকে মরতে দেই কিভাবে বল?ওকে ফোন দিয়ে শাষালাম। ব্যস এমন ভ্য় পেলো তোর পিছু ছেড়ে দিলো।বউভাতের দিন জয় তোকে কিডন্যাপ করলো।আমার কাজটা সহজ করে দিলো।তোর সব সম্পত্তি আমার হলে ওকে মেরে ফেলবো।কিন্তু সালা এতো সহজে মানবে না।তার আগে তোকে ওর সাথে আজ বিয়ে দিতে হবে। তো কেমন লাগলো আমার এতো সুন্দর পরিকল্পনা।’

প্রাহির চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। তাও ভেংগে পরলো না।
প্রাহি বলে, ‘ এর শাস্তি আপনাকে চরমভাবে পেতে হবে খালুজান।অর্থ আসবেন।ঠিক আসবেন।হেমন্ত ভাইয়াও আসবে।আজ সবাই জানবে আপনার জঘন্যতম সব সত্য।’

‘ বড্ড বেশি কথা বলছিস।’ বলেই হিয়ান্ত থাপ্পর লাগায় প্রাহিকে।

এর মাঝে রুমে প্রবেশ করে জয়।ওর পিছুপিছু দুটো মেয়ে।জয় এসেই প্রাহির হাত পা খুলে দিতে লাগলো।হাত পা খোলা শেষ হলেই প্রাহির গাল চেপে ধরে বলে, ‘ লিসেন সুন্দর মতো এই শাড়ি গহনা পরে নেহ।কোন চালাকি করবি না।যদি কিছু করার ট্রায় করিস। আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।তোর বাবা মা যেভাবে মরেছে।এখন নতুন যেই পরিবার পেয়েছিস তাদেরও মেরে ফেলবো।’

হিয়ান্ত সিকদার মাথা দুলালেন, ‘ আ আ আ।শুধু অর্থ’র পরিবার, আমার স্ত্রী আর সন্তানের গায়ে যেন একটা আঁচও না লাগে।তাহলে তোমার বাবা মাকে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিবো।’

জয় হাসলো, ‘ হ্যা হ্যা অবশ্যই।আপনার কথা অমান্য করি কিভাবে?’

প্রাহি ওর পরিবারকে মারার কথা শুনে ভয় পেয়ে যায়।কি করবে ও? কিভাবে বের হবে এখান থেকে? জয় আর হিয়ান্ত চলে গিয়েছে।মেয়েরা প্রাহিকে শাড়ি গহনা পরাচ্ছে।প্রাহি নিজেকে যতোই শক্ত রাখুক না কেন?কিন্তু পারছে না।বাদ ভাঙ্গা অস্রুগুলো চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে।পাশের মেয়ে দুটোর ওকে দেখে মায়া লাগলো।কি করবে তারা?জানের ভয়ে ওদের এসব করতে হচ্ছে।মেয়েদুটোর নাম রিফা,সাবিহা। রিফা মেয়েটি সাবিহাকে ফিসফিস করে বলে, ‘ আপু, মেয়েটাকে দেখে মায়া লাগছে।কতোটুকুই বা বয়স।আপু আমরা কি কিছু কর‍তে পারি নাহ?’

সাবিহা করুন গলায় বলে, ‘ কি করবো আমরা?ওকে সাহায্য করতে গেলে আমাদের মেরে ফেলবে ওরা।’

রিফা বললো, ‘ আপু ওর এখন এখানে নেই।আমরা বরং ওকে আমাদের ফোন দিয়ে সাহায্য করি।আর ওর কোন পরিচিতো কাউকে ফোন দিয়ে এইখানের ঠিকানা দিতে বলি মেসেজ করে।’

সাবিহা সম্মতি দিলো।নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে ঠিকানাটা নিজেই টাইপিং করে দিলো তারপর প্রাহির দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘ বোন, তুমি কেঁদোনা।এই ফোনটা নেও আমি এখানে এখানে ঠিকানা টাইপ করে দিয়েছি।বাকি তোমার যা লিখতে মন চায়।লিখে তোমার পরিচিত কাউকে পাঠিয়ে দেও।’

প্রাহি চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।কান্না মাখা চোখে কৃতজ্ঞতার হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলে, ‘ ধন্যবাদ আপুরা।তোমাদের এই ঋন আমি কোনদিন ভুলবো না।আমার অর্থ এখানে আসলে তোমাদেরকেও এখান থেকে মুক্ত করবো আমি। আমি কথা দিলাম!’

প্রাহি ফোনটা নিয়ে অর্থকে মেসেজ করে সেন্ড করে দিলো।তারপর সাবিহা, রিফাকে ধরে কান্না করে দিলো।সাবিহা আর রিফা ওকে শান্তনা দিয়ে রেডি করাতে লাগলো।যাতে জয় বা হিয়ান্ত কারও যেন সন্দেহ না হয়।
———————-
হেমন্ত থম মেরে বসে আছে।ওর ঠিক কি করা উচিত ও জানে না।চরম সত্যগুলো যখন ওর সামনে আসলো ও নিজের খৈই হারিয়ে ফেললো।ওর নিজের বাবা এতোটা জঘন্য কিভাবে হতে পারে? কিভাবে? প্রাহির বাবা মা র মতো এতো ভালো মানুষদের সম্পত্তির লোভে মেরে ফেললো ওর বাবা।অর্থ প্রাহিকে একটা লকেট দিয়েছিলো সেটায় ছোট ব্লুটুথ মাইক্রোফোন সেট করা ছিলো ভীতরে।যাতে প্রাহির কোন বিপদ আপদ হলে অর্থ সহজেই বুজতে পারে।অর্থ যখন মেডিসিন বাহির করার জন্যে ড্র‍্যয়ার খুলেছিলো।তখন সেই লকেটটার বক্স দেখেই এটার কথা মনে পরে। আর ও তাড়াতাড়ি সেই ব্লুটুথ চালু করে ফেলে।পরে একে একে সব সত্য হিয়ান্ত সিকদারের মুখে শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়।বাড়ির প্রতিটা লোক সেখানে উপস্থিত।হেনা হাউ মাউ করে কাঁদছেন।নিজের স্বামির এমন কুলসিত রূপটা আজ তিনি মেনে নিতে পারছেন না।অর্থ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। অর্থ’র দাদা ঘুমোচ্ছেন।বেচারা এমনিতেই অসুস্থ।দিনরাত সুয়ে বসে থাকেন।নিজের ছোট ছেলে এতো খারাপ এটা জানলে তিনি হয়তো মরেই যাবেন।হিয়াজ সিকদারেরও চোখ ভিজে আসছে বার বার।রায়হানা আর হিয়া চাপা কান্না কাঁদছে আর হেনাকে সামলাচ্ছেন।অর্থর চোখজোড়া ঝাপ্সা হয়ে আসে।বাবার মতো নিজের চাচার এরূপ স্বরযন্ত্র ও মানতে পারছে না।তবুও নিজেকে সামলাচ্ছে ও।কারন হেমন্তকে এখন ওকেই দেখতে হবে।ছেলেটা ভীতরে ভীতরে নাহলে মরে যাবে।ওর ভাইটাকে সামলাতে হবে।অর্থ হেমন্ত’র মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো।ধরা গলায় বলে, ‘ ভাই কিচ্ছু হবে না।নিজেকে সামলা ভাই।আমি আছিতো।কিছু হবে না।’

হেমন্ত মাথা উঠিয়ে তাকালো অর্থ’র দিকে।চোখজোড়া লাল হয়ে আছে।হেমন্ত শক্ত কন্ঠে বলে, ‘ ভাই যেটা নায্য বিচার সেটাই হবে।পাপিকে শাস্তি পেতে হবে।সেটা যেই হোক না কেন?আজ আমার বাবা বলে তাকে আমি ছেরে দিবো।কিন্তু উনি যে আমার মতোই আরেকজনের সন্তানকে এতিম করে দিলো।আমি আমার কথা চিন্তা করলে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে।আর প্রাহির সাথে আবারও অন্যায় হবে।ওই বেচারি নির্দোষ হয়েও পদে পদে কষ্ট পেয়েছে।নিজের মা বাবার খুনিকে ও যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো।কিচ্ছু বলবো না।’

হেমন্ত এলোমেলো পা ফেলে হেনার কাছে আসলো।হেনার হাত দুটো ধরে ভেজা গলায় বলে, ‘ মা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেও।আমি সন্তান হয়ে নিজের বাবার সংগ দিতে পারবো না।কারন তিনি অন্যায় করেছেন।তুমিই বলো মা।এতোটা অন্যায় যে করে তাকে কি ছেড়ে দেওয়া যায়? আমি তাহলে মানুষ হিসেবে হেরে যাবো।নিকৃষ্ট হয়ে যাবো প্রাহির কাছে, হবো নিজের বিবেগের কাছে।’

হেনা হেমন্তকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘ সে আমার স্বামি আর তোর বাবা ঠিক আছে।তাই বলে যে সে অন্যায় করা সত্তেও আমি ক্ষমা করে দেবো এমনটা না।তিনি আমার বোন আর আমার ভাইয়ের মতো দুলাভাইকে খুন করেছেন।প্রাহিকে এতিম করেছেন।তাকে যোগ্য শাস্তি দিবি বাবা।সে যা করেছে তার কোন ক্ষমা নেই বাবা।ক্ষমা নেই।’

হেমন্ত হেনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।অর্থ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ফোন একটা মেসেজ আসে।অর্থ ফোন বের করে মেসেজটা ওপেন করতেই।ওর চোখজোড়া স্থির হয়ে যায়।সেখানে লিখা আছে।

‘ অর্থ আমি প্রাহি বলছি।আমাকে ‘******’ এখানে আটকে রাখা হয়েছে আমাকে নিয়ে যান অর্থ।আমি জয় ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাইনা।ও আমাকে জোড় করে বিয়ে করতে চাইছে।আমি এটা পারবো না।আপনি জলদি আসুন।যদি এমনটা হয় অর্থ আমি ওকে বিয়ে করবো না।তবে নিজেকে শেষ করে দিবো।আমি শুধু আপনার অর্থ আর কারো না।’

মেসেজটা পড়েই অর্থের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।ওই জয়কে ও ছাড়বে না।ওর প্রাহিকে বিয়ে করার শখ জেগেছে তাই না।এর পরিনাম হারে হারে টের পাবে জয়।অর্থ আরাফ আর হেমন্তকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ আরাফ আর হেমন্ত তাড়াতাড়ি চল।প্রাহি কার ফোন থেকে যেন মেসেজ পাঠিয়েছে।ওকে যেখানে নেওয়া হয়েছে সেখানের ঠিকানা দিয়েছে।ওই জয় ওকে জোড় করে বিয়ে করতে চাইছে।আমাদের জলদি যেতে হবে।নাহলে নাহলে প্রাহি বলেছে ও এই বিয়ে করবে না কখনও নিজেকে… নিজেকে নাকি শেষ করে দিবে।’

সবাই আৎকে উঠে ভয়ে।আরাফ আর হেমন্ত দ্রুত নিজেদের সামলে নিয়ে অর্থ’র সাথে বেড়িয়ে পড়লো।যাওয়ার আগে হিয়াজ সিকদারকে,হিয়াকে আর ইশিকে পুলিশ নিয়ে প্রাহির দেওয়া ঠিকানায় জলদি আসতে বললো।তারাও ছুটলো সেদিকে।

—————–
ড্রয়িংরুমের সোফায় আয়েশী ভঙ্গিতে বসে আছে হিয়ান্ত। ঠিক বিপরীত সোফায় জয় আর প্রাহি বসে আছে।প্রাহি কাঁদছে সে এই বিয়ে করবে না।মনে প্রানে শুধু অর্থকে ডাকছে ও।ওদের সামনে কাজি বসে আছে।যিনি প্রাহিকে কবুল বলতে বলছেন।প্রাহি কবুল বলছে না দেখে জয় ঠা-স করে একটা চর মেরে দিলো।প্রাহি ছিটকে গিয়ে সোফার হ্যান্ডেলের সাথে মাথায় আঘাত পেলো।ব্যাথাটা ব্যাথায় ঝিম ধরে গেলো।তাও নিজেকে সামলে নিয়ে নিভু নিভু চোখে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, ‘ আমি কখনই তোকে বিয়ে করবো না।মরে গেলেও না।’

এই বলে টি-টেবিলের উপর ফলের ঝুড়িতে যেই ছুড়ি রাখা ছিলো সেটা ছিনিয়ে নিয়ে উঠে দাড়ালো প্রাহি।নিজের হাতের কব্জিতে চেপে ধরলো ছুরিটা।ভয় পেয়ে যায় হিয়ান্ত আর জয়।হিয়ান্ত রাগি চোখে জয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ কিভাবে কি করছিলে?সামান্য এই পুচকে মেয়েটাকে সামলাতে পারোনি।’

জয় ঘাবড়ালো তাও বললো, ‘ দেখ প্রাহি।কিছু উল্টপাল্টা করিস না।নয়তো ওদের মেরে ফেলবো।’

প্রাহি হাসলো।ছুড়িটা আরো একটু শক্ত করে ধরে বললো, ‘ আমি জানি তুই তাদের কিছুই করতে পারবি না।আর আমি মরে গেলেও তোকে বিয়ে করবো না।’

জয় আগাতে নিলেই।প্রাহি সজোড়ে নিজের কব্জিতে চাকুটা দিয়ে আঘাত করে।তীব্র আর্তনাদ করে উঠে প্রাহি।ঠিক তখনি বাহিরে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যায়।ভয় পেয়ে যায় জয় আর হিয়ান্ত।কিছু বুজে উঠার আগেই দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে অর্থ, হেমন্ত,আর আরাফ।অর্থ প্রাহিকে নিচে পড়ে কাতরাতে দেখে চিৎকার করে উঠে।প্রাহির হাতের রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে।
অর্থ দৌড়ে গিয়ে প্রাহিকে জড়িয়ে ধরে।
জয় পালাতে নিলে আরাফ জয়ের পায়ে গুলি করে। জয় ফ্লোরে মুখ থুবরে পড়ে।হিয়ান্ত কি করবে দিশা পাচ্ছে না।ও যে এভাবে ফেসে যাবে নিজেও জানে না।ওর ছেলে আর পরিবারের কাছে এইভাবে ধরা পরে যাবে কল্পনাও করেনি।পালাতে নিলেই। হেমন্ত দৌড়ে গিয়ে নিজেই ওর বাবাকে আটকে ফেলে।চোখ ভিজে উঠছে।তাও রাশভারি কন্ঠে বলে, ‘ কোথায় পালাচ্ছো বাবা? এভাবে কিভাবে যেতে দেই বলো তোমাকে?’

হিয়ান্ত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে, ‘ যা করেছি সব তোর ভবিষ্যত উজ্জ্বল করার জন্যে করতে চেয়েছি।আমাকে বুঝার চেষ্টা কর বাবা।’

হেমন্ত ঘৃনাভরা চোখে নিজের বাবার দিকে তাকালো।নিজের ছেলের চোখে নিজের জন্যে এতোটা ঘৃনা দেখে থমকালো হিয়ান্ত।স্থির হয়ে গেলো।যে ছেলের চোখে নিজের জন্যে ভালোবাসা আর সম্মান দেখতে পেতো আজ সেই ছেলের চোখে ঘৃনা দেখতে পাচ্ছে।হেমন্ত পুলিশকে ইশারা করলো হিয়ান্তকে নিয়ে যেতে।পুলিশ তাই করলো।হেমন্ত এইবার দৌড়ে প্রাহির কাছে যায়।অর্থ চিৎকার করে কান্না করছে। ‘ প্রাহি! প্রাহি কেন করলে এমনটা?কেন করলে?আমি তোমাকে ঠিক বাচিয়ে নিতাম।তাও কেন করলে এমন?আমার প্রতি বিশ্বাস কেন রাখলে না?’

প্রাহি কাঁপা কন্ঠে বললো, ‘ ভয় পাচ্ছিলাম আ..আমি।আপ…আপনাকে ছা..ছাড়া অন্য..অন্যকাউকে বিয়ে করা সম্ভব না। আমি শুধু আপ…আপনাকে ভালোবাসি অর্থ।আপ..আপনি ছাড়া আমি কারো হ..হবো না।তাই এম..এমনটা কর..করতে বাধ্য হয়েছি।’

‘ প্রাহিইইইইইই!’ প্রাহি চোখ বুজে নিতেই দেখেই চিৎকার করে উঠে অর্থ।

হেমন্ত দ্রুত বললো, ‘ ভাই প্রাহিকে হাস্পাতালে নিতে হবে।ওর কিছু হবে না।তুমি জলদি ওকে তুলো।আমি গাড়ি রেডি করছি।’

অর্থ’র মাথা থেকে হাস্পাতালের কথা বেড়িয়ে গিয়েছিলো।জলদি প্রাহিকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।তারপর ছুটলো হাস্পাতালের দিকে। আরাফ হিয়ান্ত আর জয়কে পুলিশ ফোর্সদের হাতে তুলে দিয়ে।ওদের সাথে আসা হিয়াজ,ইশি আর হিয়াকে নিয়ে নিজেও হাস্পাতালের দিকে রওনা হলো।যেতে যেতে রায়হানাকে ফোন দিয়ে জানালেন সবটা আর হাস্পাতালে আসতে বললেন।রায়হানা, হেনা আর সেলিমা খালাকে নিয়ে হাস্পাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলেন।
_______________

হাস্পাতালের করিডোরে চাপা কান্না কাঁদছে সবাই।কি থেকে কি হয়ে গেলো।তাদের হাসিখুশি পরিবারটা এক নিমিষেই ধ্বংশ হয়ে গেলো।আরাফ আর ইশি সবাইকে সামলাচ্ছে ভরসা দিচ্ছে।কারন পরিবারের প্রতিটা মানুষই আজ প্রচুর ভেঙ্গে পরেছে।
হেমন্ত এক কর্নারে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।ইশি এগিয়ে গেলো হেমন্ত’র কাছে।হেমন্ত’র কাধে হাত রাখতেই।হেমন্ত তাকায় ইশির দিকে।হেমন্ত’র চোখজোড়া ফুলে লাল হয়ে আছে।ইশি হেমন্ত’র গালে আলতো করে হাত ছোয়ালো।হেমন্ত আবেশে চোখজোড়া বুজে নিয়ে।নিজেও ইশির হাতের উপর হাত রাখলো।তারপর চোখ মেলে তাকালো ইশির দিকে। ওর চোখজোড়া ছলছল করছে।ইশি ঠান্ডা স্বরে বলে, ‘ নিজেকে সামলান হেমন্ত।আপনি এভাবে ভেঙ্গে পরলে আন্টিকে সামলাবে কে? বলুন তো।এভাবে চুপচাপ থাকলে তো হবে হেমন্ত।আপনাকে স্ট্রোং হতে হবে।এইভাবে চুপচাপ হয়ে গেলে হবে না।’

হেমন্ত ইশিকে ঝাপ্টে ধরলো।কান্না করতে করতে বলে, ‘ বাবা এমন কেন করলো ইশি।আমার তো এতো টাকা পয়সা চাই না। আমার একটা হ্যাপি ফ্যামিলি চাই।কিন্তু সেটা তিনি হতে দিলেন না ইশি।আমি ক্ষমা করবো না উনাকে।কখনো ক্ষমা করবো না।’

ইশি নিজেও কাঁদছে।তারপরেও হেমন্তকে বললো, ‘ প্লিজ শান্ত হোন।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি আছি তো।সব ঠিক হয়ে যাবে।’

হেমন্ত ইশিকে ছাড়লো। ইশির গালে হাত দিয়ে বলে, ‘ তুমি আমার সাথে সারাজীবন থাকবে তো ইশি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।আমি তোমাকে হারাতে পারবো না।মা আর তুমিই এখন আমার সবচেয়ে বেশি কাছের।তুমি আমাকে সামলে নিও ইশি।আমি বাকি সব সামলে নিবো।প্লিজ আমাকে ছেরে যেও না।’

ইশির চোখ দিয়ে একফোটা অস্রু ঝরে পরলো, ‘ যাবো না। কখনো যাবো না আপনাকে ছেরে।’
————-
অর্থ একদৃষ্টিতে প্রাহির কেভিনের দিকে তাকিয়ে আছে।বিধ্বস্ত,এলোমেলো হয়ে আছে পুরো ও।কিয়ৎক্ষন পর ডাক্তার বেড়িয়ে আসলো।অর্থ অস্থির কন্ঠে বলে, ‘ প্রাহি?প্রাহি ঠিক আছে তো ডক্টর?’

‘ হ্যা উনি সম্পূর্ণ ঠিক আছেন।আপনারা দেখা করতে পারবেন।আমি কেভিনে যাচ্ছি।নার্সের মাধ্যমে প্রেস্ক্রিপন পাঠাবো।সেই।মেডিসিনগুলো খাওয়াবেন। আর বেশি বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াবেন।অনেক রক্ত ঝরেছে।সেটা পূরন হতে সময় লাগবে।’ বলেই ডক্টর চলে গেলেন।

প্রাহির কেভিনে একে একে সবাই দেখা করে আসলো। হেনা কেদে কেটে নিজের স্বামির কৃতকর্মের জন্যে ক্ষমা চাইলেন।তিনি পুরো ভেঙ্গে পরেছেন।প্রাহি উনাকে অনেক বুজিয়ে শুনিয়ে শান্ত করলো।সবার দেখা করলো।কিন্তু প্রাহি শুধু একজনকেই খুজে চলেছে।হিয়া আর ইশি সেটা বুজতে পারলো।তাই তারা সবাইকে কেভিন খালি করতে বলে ঠেলেঠুলে অর্থকে পাঠালো।
কেভিনে অর্থ প্রবেশ করতেই প্রাহির চোখ দিয়ে অস্রুকনা গড়িয়ে পড়লো। সেতো ভেবেছিলো আর বুজি এই লোকটাকে কোনদিন দেখতে পারবে না।কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা ওকে বাচিয়ে দিলেন।ফিরিয়ে দিলেন ওকে ওর অর্থ’র কাছে।অর্থ এখনো মুখ ফিরিয়ে আছে।একবারও তাকায়নি প্রাহির দিকে।প্রাহি বুজতে পারলো অর্থ অভিমান করেছে ওর উপর।প্রাহি হালকা আওয়াজে দূর্বল কন্ঠে বলে, ‘ আমার কাছে আসবেন না?এইভাবে মুখ ফিরিয়ে রাখলে তো আমি সত্যি সত্যি মরে যাবো।’

অর্থ ঝরের গতিতে প্রাহি কাছে এসে ওর মুখ চেপে ধরে চাপা ধমকে বলে, ‘ চুপ! একদম চুপ।আবারও মরার কথা বললে একেবারে মেরে ফেলবো।একটুও কি বিশ্বাস রাখতে পারলি না।আমি ছিলাম তো আমি আসতাম তোর কাছে।কেন এমনটা করলি?’

প্রাহি ওর ডানহাতটা দিয়ে অর্থ’ হাত সরালো। তারপর অর্থ’র হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,’ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম অনেক।অনেকগুলো সরি।আর কখনো করবো না প্রমিজ।’

অর্থ প্রাহিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, ‘ ভালোবাসি প্রাহি।প্লিজ আর কখনো এমন করো না।প্লিজ।ভালোবাসি! অনেক বেশি ভালোবাসি!’

প্রাহি মৃদ্যু হাসলো।এই গোমরামুখো লোকটা তাকে এতো ভালোবেসে ফেলবে ভাবতেই পারিনি।আর সেই ভালোবাসায় ও নিজেকেও এইভাবে ভাসিয়ে দিবে কল্পনার বাহিরে ছিলো।প্রাহি অর্থ’র কানে কানে প্রাহি ফিসফিস করে বললো, ‘ আমিও ভালোবাসি। তীব্রভাবে ভালোবাসি।’

অর্থ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো প্রাহির দিকে।তারপর কপালে চুমু খেয়ে আবারও জড়িয়ে ধরলো ওকে।
—————–
কয়েকবছর পর________
হিয়ান্ত সিকদার নিজের ছেলে আর স্ত্রীর এতো এতো ঘৃনা আর অপমান সহ্য করতে না পেরে পাগল হয়ে পাগলাগারদে আছে।প্রাহির মামা মামিকে যাবৎজীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে আর জয়কে ১০ বছরের জেল।
অর্থর দাদা ছেলের এই রূপ সহ্য করতে না পেরে মারা গেছেন তার কিছুদিন পরেই।এতো এতো দুঃখের শোক কাটাতে পরিবারের প্রতিটা মানুষের অনেক সময় লেগেছিলো।কিন্তু আজ তারা এখন সবটা সামলাতে শিখেছেন।অনেক ভালো আছেন তারা।পরিবারটা এখন অনেক হাস্যজ্জ্বল।
আজ অর্থ প্রাহি আর হেমন্ত ইশির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।অনেকটা ঝরঝাপ্টা পার করে তারা এক হয়েছে।
__________

বাসর ঘরে বসে আছে প্রাহি।প্রাহি এখন আর ছোট নেই।সে এখন বড় হয়ে গেছে।প্রাহির এখন বিশ বছর বয়স।সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।সবটার পিছনেই অর্থর অনেকটা পরিশ্রম আছে।অর্থ না থাকলে আজ ও এতোদূর পৌছাতে পারতো না।তবে প্রাহি সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ দেয় হেমন্তকে।কারন হেমন্ত ওকে সেদিন ওই নরক থেকে না আনলে ও আজ এতোটা সুখী হতো না।নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসে সে হেমন্তকে।প্রাহির ঠোঁটের কোন মুচঁকি হাসি ফুটে উঠে।বাহির থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসছে।হেমন্ত নিজের বাসর ছেরে অর্থ’র বাসর ঘরের গেট ধরেছে।সাথে আরাফ আর হিয়া।প্রাহির অনেক হাসি আসলো।এরা ভাইবোন পারেও বটে।কিছুক্ষন পর গেট খুলার আওয়াজে।গোমটার আড়াল হতে দেখতে পায় অর্থকে প্রাহি।লজ্জায় মুখ লাল হয়ে আসে ওর।বুকটা ধরফর করেছে।কেমন কেমন যেন লাগছে ওর।প্রাহি খাট থেকে নেমে আলতো পায়ে অর্থর সামনে দাড়ালো।তারপর ঝুকে গিয়ে অর্থকে সালাম করলো।অর্থ প্রাহির বাহু ধরে দাড় করিয়ে ওর ঘোমটা সরিয়ে দিলো।বধুবেশে প্রাহিকে অপরূপ লাগছে।অর্থ আরষ্ঠ ভঙিতে তাকিয়ে রইলো।তাকিয়েই রইলো।এই দেখার যেন নেই কোন শেষ।প্রাহির লজ্জায় মরে যাওয়ার উপক্রম।তা বুজতে পেরে হাসলো অর্থ।কাবার্ড খুলে প্রাহির দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘ যাও ফ্রেস হয়ে ওজু করে আসো। নামাজটা পরে নেই।’

প্রাহি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।ওয়াশরুমে গিয়ে বিয়ের শাড়ি,গহনা খুলে অর্থ’র দেওয়া শাড়িটা পরে নিলো।তারপর বের হয়ে আসলো।প্রাহি বের হতেই অর্থ নিজেও গিয়ে ওজু করে আসলো তারপর নামাজটা আদায় করলো।দুজনে মিলে কতোক্ষন কোর-আন তিলায়াত করলো।তা শেষ করে। প্রাহিকে বিছানায় বসতে বললো অর্থ। তারপর কাবার্ড খুলে আবারও হাতে করে কিছু একটা এনে প্রাহির হাতে দিলো তারপর বলে, ‘ এটা তোমার বাসর রাতের উপহার।আর তোমার দেনমোহর পরিশোধ করা।আলমারির লকারে আছে।যখন যা লাগবে নিয়ে খরচ করবে।’

প্রাহি মাথা দুলালো।ব্যাগটা খুলে দেখে তাতে একটা জায়নামাজ,তবসি, একটা হাদিস শরীফ, একটা অজিফা আছে।সব দেখে প্রাহি কিছু হয়ে অর্থকে ধন্যবাদ জানালো।সেগুলো সুন্দরভাবে আলমারিতে তুলে রাখতে গেলো।রাখা শেষে পিছনে ঘুরতে নিলেই।একজোড়া হাত ওর কোমড় স্পর্শ করে।কিছু একটা পরাচ্ছে অর্থ।প্রাহি তাকালো।দেখলো অর্থ ওর কোমড়ে স্বর্নের একটা বিছা পড়িয়ে দিচ্ছে।পড়ানো শেষে অর্থ প্রাহির কোমড়ে চুমু খেলো।কেঁপে উঠে সরে যায় প্রাহি।নিঃশ্বাসের উঠানামা বেরে গেছে প্রবলভাবে।
অর্থ ধীরপায়ে এগিয়ে গেলো প্রাহির দিকে। প্রাহির খোপা করা চুলগুলো একটানে খুলে দিলো। প্রাহির চুলে মুখ গুজে দিলো অর্থ।তারপর ফিসফিস করে বলে, ‘ আমার এতো বছরের অপেক্ষা আজ আজ শেষ হলো প্রাহি।তোমার প্রতি আমার #প্রেম_এসেছিলো_নীরবে, আস্তে আস্তে।সেটা যে কিভাবে এতোটা প্রবলভাবে আমাকে ঝেকে ধরলো আমি বুজতেও পারলাম।পাগলের মতো ভালোবেসে ফেললাম তোমায়।তোমায় ছাড়া আমার একমুহূর্ত থাকা সম্ভব না প্রাহি।আজ তোমাকে ভালোবাসতে চাই প্রাহি।অনেক ভালোবাসতে চাই।তোমাকে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন বুনতে চাই।তুমি দেবে কি আমায় সেই সুযোগ?’

প্রাহি হাসলো।লজ্জা মিশ্রিত সেই হাসি।পিছনে ঘুরে লজ্জাবতীর লতার ন্যায় লজ্জায় নুইয়ে পরলো অর্থ’র বুকে।অর্থ প্রাহির সম্মতি পেয়ে প্রাহিকে কোলে তুলে নিলো। প্রাহিকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে।নিজের গায়ের পাঞ্জাবি খুলে ফেললো।প্রাহির পাশে সুয়ে কতোক্ষন ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।তারপর আচমকা প্রাহির আঁচল সরিয়ে দিয়ে প্রাহির ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে প্রাহি অর্থকে আকড়ে ধরে শক্তভাবে।
আজ তারা মিলেমিশে একাকার হলো।ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো তাদের।এতো এতো অপেক্ষা অবসান হলো।অর্থ ওর সব ভালোবাসা বিলিয়ে দিলো প্রাহিকে আর প্রাহিকে নিজেকে অর্থ’র ভালোবাসায় উজার করে দিলো।
তাদের প্রেম_এসেছিলো_নীরবে ঠিকই।কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ হয়েছিলো তীব্রভাবে।সেই তীব্রতার প্রখরতা এতোই মজবুত ছিলো যে আজ তারা একে-অপররের নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে রন্দ্রে রন্দ্রে মিশে গিয়েছে।যা আলাদা হবে না কখনই।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here