প্রেম এসেছিলো নীরবে,সূচনা_পর্ব
সাদিয়া_জাহান_উম্মি
মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ের পিরিতে বসতে হবে জানা ছিলো না প্রাহি’র।অঝোড়ে কাঁদছে মেয়েটা।আঘাতের চিহ্ন এখনো হাতে পায়ে কপালে দেখা যাচ্ছে।কোনরকম ব্যান্ডেজ করা।শরীরের কোথাও কোথাও হয়তো রক্তক্ষরন ও হচ্ছে।এই রক্তাক্ত শরীরেই বেনারশি গায়ে জড়ানো মেয়েটার।সে বিয়েতে রাজি না।কিন্তু আজ মা, বাবা না থাকায় তার মতামতের কোন দাম নেই কারো কাছে। মামা,মামির কাছে বড় হয়েছে সে।মামি তাকে জোড় করে বিয়ে দিচ্ছেন।কারন একটাই প্রাহি এখন বড় হচ্ছে তাহলে তাদের খরচও বাড়বে।তাই বিয়ে দিয়ে ওকে বিদায় করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে তারা।এইটুকুন একটা মেয়ে কিইবা বুজে?আর তাকে কিনা ৪০ বছর বয়স এমন একজন বুড়ো লোকের সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন তারা।আবার যার কিনা একটা ছেলেও আছে যার বয়সই নাকি হবে তার মতো প্রায়।কিভাবে মেনে নিবে প্রাহি এটা।কাদঁতে কাঁদতে ফর্সা মুখস্রীটা লাল হয়ে উঠেছে ওর।এরই মাজে আগমন ঘটে প্রাহির মামির।তিনি এসেই প্রাহির গালে সজোড়ে থাপ্পর লাগালেন।এতে ছিটকে মেজেতে পড়ে যায় প্রাহি।প্রাহি আবারও কেঁদে উঠলো।এই অসহ্য যন্ত্রনা কিভাবে সহ্য করবে ও।একটু আগেই তো বেল্ট দিয়ে ইচ্ছেমতো মেরে গেলো মামি তাকে বিয়েতে রাজি হওয়ার জন্যে,তাহলে এখন আবার মারছে কেন?প্রাহির মামি আবারও তেড়ে এসে প্রাহির চুল মুষ্টিবদ্ধ করে ধরলন তারপর হুংকার ছুড়ে বললেন,
-” তোর যে এইটুকুন বয়সেই নাগর জুটিয়ে নিয়েছিস তা তো জানতাম না।দিব্যি তো একটু আগে ‘ আমি ছোট,আমাকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিও না ‘, বলছিলি।তা এই ছোট বয়সে শরীরে এতো জ্বালা আর সেই জ্বালা ছেলেদের সাথে নষ্টামি করে মিটাস বুজি? তোর এই নাগরকে এক্ষুনি বলবি এখান থেকে চলে যেতে আর তুই চুপচাপ বিয়েটা করে নিবি।নাহলে তোকে মেরেই ফেলবো হতচ্ছারি।”
প্রাহি যখন অবাক।ও প্রেম করতো তা ও নিজেই জানে না।আর ওর মামিই বা এসব কি বলছে?কে এসেছে? যে এভাবে মামি ওকে এসব বলছে?
ভাবনার মাজেই প্রাহি শুনতে পায় কেউ চিৎকার করে ওর নাম ডাকছে।প্রাহির মামি সেই শব্দে শুনে প্রাহিকে ঝটকা মেরে ফেলে দিয়ে এগুলেন সেদিকে কিন্তু দরজার কাছাকাছি আসতেই একটা লোক তাকে একপ্রকার প্রায় ধাক্কা দিয়ে ঝড়ের গতিতে গিয়ে প্রাহিকে জড়িয়ে ধরে।প্রাহি হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।এইসব কি হচ্ছে ওর বোধগম্য হচ্ছে না।আর এই লোকটাই বা কে?খানিক বাদেই লোকটা ওকে ছেড়ে দিতেই প্রাহি তাকালো লোকটার দিকে।বেশি বয়স না যুবক একটা ছেলে,ফর্সা মুখশ্রী চাপদাড়ি গুলো বেশ মানিয়েছে,কালো সিল্কি চুলগুলো কপালে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে,সাদা রঙ্গের শার্টিতে বেশ মানিয়েছে।প্রাহি বেশ অবাক হলো ছেলেটার চোখ দেখে।কালো চোখের মনিতে হালকা একটু বাদামি আভা আছে ছেলেটার।অনেকটা ওর নিজের চোখের মনির মতো।প্রাহির এই চোখজোড়া হয়েছে ওর মায়ের মতো।তবে আশ্চর্য এই লোকটা হুবহু সেম চোখের অধিকারি।ছেলেটাকে প্রাহির চেনা চেনা লাগছে।তবুও যেন মনে করতে পারছে না।ছেলেটার কথায় হুশ আসে ওর।ছেলেটা প্রাহির দুগালে হাত দিয়ে আদুরে গলায় বলে,
-” প্রাহি! বোন আমার।আর তোকে কোন কষ্ট সয্য করতে হবে না।এখন আমি এসে গেছি তো আমি তোকে নিয়ে যাবো এই নরক থেকে।তোকে আর কেউ একটা ফুলের টোকাও দিতে পারবে না।”
প্রাহি বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।ছেলেটা ওকে বোন বলছে। আবার ওর জন্যে এতো অস্থিরই বা হচ্ছে কেন?প্রাহি কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-” কে আপনি?”
ছেলেটা ছলছল চোখে হাসলো।বললো,
-” আমি! আমি তোর হেমন্ত ভাইয়া।তোর খালাতো ভাই।মনে নেই আমার কথা প্রাহি?”
প্রাহি চোখ ভরে উঠলো।হেমন্ত ভাইয়া এটা। ওর হেমন্ত ভাইয়া।তবে কি হেমন্ত ভাইয়া বিদেশ থেকে ফিরে এসেছে।ও যখন খুব ছোট ছিলো তখন হেমন্ত বিদেশ চলে যায়।তাই চেহারাটা অতোটা খেয়াল নেই প্রাহির।প্রাহি এইবার আর নিজেকে সামলাতো পারলো ‘হেমন্ত ভাইয়া!’ বলে চিৎকার করে হেমন্ত’র বুকের মাসে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগলো।আর বলছে,
-” এতোদিন কেন আসোনি ভাইয়া।আমি অনেক মিস করেছি তোমাকে ভাইয়া।অনেক মিস করেছি।আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও ভাইয়া।এখানে আমাকে কেউ ভালোবাসে না।সবাই খুব খুব অত্যাচার করে।”
হেমন্ত গলা ধরে আসছে।তাও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-” তোকে নিয়ে যাবো আমি বোন।তুই আর কাঁদিস না।তোকে আর কেউ কিছু করতে পারবে না।এটা তোর ভাইয়ার তোর কাছে প্রমিস।”
প্রাহি কাঁদতে কাঁদতে হেমন্তর বুকেই জ্ঞান হারালো।হেমন্ত নিজের চোখের কোনের জলটুকু মুছে প্রাহিকে কোলে নিয়ে উঠে দাড়ালো।প্রাহি মামি কিছু বলতে নিবে তার আগেই হেমন্ত রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো মামির দিকে।দাতেদাত চিপে বললো,
-” প্রাহিকে নিয়ে যাচ্ছি আমি।এটাই লাস্টবার মাফ করে দিলাম।যদি কোনদিন আমার বোনের আশেপাশেও দেখি আপনি যে আমারও মামি হোন ভুলে যাবো সেটা আমি।”
মামি আর ভয়ে কিছুই বলতে পারলো না।হেমন্ত ভরা বিয়ের বাড়ির এতোগুলো লোকের সামনে দিয়েই প্রাহিকে নিয়ে চলে যায়।হেমন্ত গাড়িতে বসে বোনকে বুকে জড়িয়ে নিলো।ইসস,মেয়েটার কি অবস্থা হয়েছে।একটা ছোট্ট মেয়েকে এইভাবে কিভাবে কেউ অত্যাচার করতে পারে।প্রাহির ঘুমন্ত মুখশ্রীতে কপালে চুমু খেলো হেমন্ত।ওর কোন বোন নেই।প্রাহিকেই ও ছোট থেকে নিজের বোনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে।আর সেকিনা ওর ছোট্ট বোনটাকে দিনের পর দিন এইভাবে অত্যাচারিত হতে হয়েছে। হেমন্ত পকেট থেকে ফোন বের করে ওর মাকে ফোন করে জানিয়ে দিলো যে ও প্রাহিকে নিয়ে আসছে।ওর মা তো খুশিতে গদগদ।বোনের মেয়েটাকে আজ কতোদিন পর দেখবে। হেমন্ত আগে প্রাহিকে নিয়ে হস্পিটালে গেলো।সেখানে গিয়ে প্রাহিকে ভালোভাবে চেক-আপ করিয়ে আনলো।যেখানে যেখানে ক্ষত হয়েছে ভালোভাবে ব্যান্ডেজ করিয়ে নিলো।ডক্টর বলেছে, প্রাহির শরীর প্রচুর দূর্বল ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করে না মেয়েটা।হেমন্ত ভালোভাবে সবকিছু বুজেশুনে প্রাহির জন্যে মেডিসিন নিয়ে রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।বাড়ি যাওয়ার পথেই প্রাহির জ্ঞান ফিরে আসে। মেয়েটা চোখ খুলে হেমন্ত দেখেই ওকে ঝাপটে ধরে বসে আছে।মেয়েটার উপর দিয়ে এতো ঝড় ঝাপ্টা গিয়েছে তা বুজাই যাচ্ছে না।হেমন্তকে দেখে প্রাহির মুখ থেকে মনে হয় হাসিই সরছে না।ভাইয়ার কাছে তার কতোশতো কথার ঝুলি খুলে বসেছে।আবার অভীমান করে নিজের কষ্টের কথাগুলোও বলছে।সে কতো করে মিস করেছে তার হেমন্ত ভাইয়াকে।হেমন্ত কেন ওকে ফেলে এতোদিন বিদেশে ছিলো।প্রাহি বলছে,
-” তুমি আমাকে ফেলে এতোদিন বিদেশে থেকেছো।তোমাকে আমি এতো এতো করে মনে করতাম।কিন্তু তুমি আসতে না।জানো মামি আমাকে কতো মারতো তখন মা, বাবা আর তোমার কথা শুধু মনে পড়তো।তোমার সাথে অনেক রাগ করেছি।তোমাকে আমি শাস্তি দিবো ভাইয়া।”
হেমন্ত মুচকি হাসলো।মেয়েটা বাচ্চাদের মতো কিভাবে তার কাছে নালিশ করছে।এমন মিষ্টি একটা মেয়েকে কিভাবে কেউ এইভাবে মারতে পারে?হেমন্ত বললো,
-” তুই যা শাস্তি দিবি ভাইয়া মাথা পেতে নিবো।তা কি শাস্তি দিবে আমার বোনটা আমাকে?”
প্রাহি গালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবলো তারপর বলে,
-” আমার স্কুলের পাশে একটা অনাথ আশ্রম আছে।সেখানে আমার অনেক ফ্রেন্ড আছে।আমাকে সাথে নিয়ে আমার ফ্রেন্ড্সদের সবাইকে চকলেট খাওয়াতে হবে।”
হেমন্ত শব্দ করে হেসে দিলো।তারপর বললো,
-” আচ্ছা ঠিক আছে আমার বোনটা যা শাস্তি দিয়েছে তা আমি মাথা পেতে নিলাম।”
প্রাহি নানান কথা বলছে হেমন্তকে।কে বলবে এই মেয়েটা দিনের পর দিন নরক যন্ত্রনা সহ্য করে গেছে।এতো ব্যাথা আর কষ্ট নিয়েও কিভাবে হেমন্তর সাথে সবটা ভুলে গিয়ে হাসি মুখে কথা বলছে।ভাবনার মাজেই ড্রাইভার জানায় তার ‘ সিকদার মহল!’, এসে পড়েছে।হেমন্ত প্রাহিকে কোলে নিয়ে এগিয়ে গেলো বাড়ির দিকে।প্রাহি ঘুমিয়ে আছে হেমন্তর কোলে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়ার মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে।হেমন্ত দারোয়ানকে ইশারা করলো বাড়ির কলিংবেল বাজাতে।বেজ বাজাতেই কিছুক্ষন পর দরজা খুলে গেলো।তারপর,,,,,
চলবে,,
Next part Kobe asbe?