প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(বোনাস পার্ট)

0
2535

প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(বোনাস পার্ট)
সাদিয়া_জাহান_উম্মি

গভীর রাত, আনুমানি ১২ টা বাজে।টেবিল লাইট জ্বালিয়ে বই পড়ছিলো ইশি।হঠাৎ ওর ফোনে কল আসলো।ইশা নাম্বারটা দেখে ভ্রু কুচকালো। এটা আজ নতুন না প্রায় নয়-দশদিন যাবত ওর ফোনে এই নাম্বার থেকে কল আসছে।ও ফোন রিসিভ করলে লোকটা কিসব আবোলতাবোল বকে।এতো করে ও জিজ্ঞেস করে যে আপনি কে?কিন্তু লোকটা তার পরিচয়ই দেয় না।বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো ইশি।ফোন রিসিভ না করলে লোকটা অনাবরত কল করতেই থাকে তাহলে।ইশি ফোন দিয়ে আস্তে করে বলে,

-” আস..আসসালামু আলাইকুম।”

ফোনের অপাশের ব্যাক্তি নরম সুরে বললো,

-“ওয়া আলাইকুমুস সালাম।কেমন আছো?”

ইশি শুকনো ঢোক গিললো।মেয়েটা প্রচন্ড ভীতু।কাপা কন্ঠে ইশি বলে,

-” ভা..ভালো।”

-” আমি কেমন আছেন জিজ্ঞেস করবে না?”

ইশির চোখে পানি চলে এসেছে।এই লোকটাকে ও অনেক ভয় পায়।অজানা কারনেই ভয় পায়।ধরা গলায় বললো,

-” আপ..আপনি কেমন আ..আছেন?”

ওপাশের ব্যাক্তিটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।ইশি যে আর একটু হলেই কেঁদে দিবে। তা সে ভালো করেই জানে।সে বললো,

-” তোমার সাথে কথা বলার সময় ভালো ছিলাম।কিন্তু এইযে তুমি কান্না করছো এটার জন্যে এখন আমি ভালো নেই।”

ইশি কান থেকে ফোন সরিয়ে অবাক হয়ে কিছুক্ষনের ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলো।এই লোকটা কিভাবে বুজলো যে ও কান্না করছে?ইশি আবারও ফোনটা কানে লাগিয়ে বললো,

-” আ..আমি কান্না ক..করছি না তো!”

-” আমি সেটা তোমার থেকেও ভালো জানি। বাদ দেও এখন এতো রাত অব্দি আর পড়া লাগবে না।বই খাতা গুছিয়ে সুন্দর মতো বিছানার পাশে রাখা দুধ টুকু খেয়ে ঘুমিয়ে পরো।”

সাথে সাথে ফোনটা কেটে দিলো।ইশিও একটা লম্বা শ্বাস টেনে নিলো। এতোক্ষন যেন শ্বাস্টা গলায় এসে আটকে ছিলো।ইশি আর পড়লো না।লোকটার কথা মতো চুপচাপ দুধটুকু খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
..
সুয়ে সুয়ে নিজের ফোনে ইশির পিক দেখছে হেমন্ত।এতোক্ষন ইশির সাথে হেমন্তই কথা বলছিলো।মেয়েটা এতোটা নরম মনের কেন ভেবে পায়না হেমন্ত।তাইতো প্রোপোজ করতে ভয় পায় সে।যদি ইশি আর কোনদিন ওর সামনে না আসে?তাহলে কিভাবে থাকবে ও?নাহ! কোনদিন পারবে না এইভাবে থাকতে হেমন্ত।শুধু পরিক্ষাটা শেষ হওয়ার আশায় আছে হেমন্ত।ইশির পরিক্ষা শেষ হলেই ইশির বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে সে।আপাততো বাগদান করে রাখবে।পরে অর্থের বিয়ে হলেই ও বিয়ে করে নিবে ইশিকে।ভাবনা শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো হেমন্ত।তারপর ঘুমোতে চলে গেলো।
——
ব্যালকনির ইজি চেয়ারে বসে কফি পান করছে অর্থ।আজ হেমন্তের সাথে কথা হয়েছে ওর।প্রাহির মা, বাবা’র কেসটা রি-ওপেন করার কথা বলছে ছেলেটা।তবে এটা তো একটা এক্সিডেন্ট সেটা পুলিশরা বলেছিলো।তাহলে কি সেই কেস আবারও রিওপেন করবে পুলিশ?কাল একবার হেমন্তকে নিয়ে যাবে সে পুলিশ স্টেশন।দেখা যাক কি করা যায়।আর প্রাহির সেফটির জন্যেও নতুন গার্ড্স রাখতে হবে।প্রাহিকে এখানকার নতুন স্কুলে ভর্তি করিয়ে এসেছে আজ অর্থ।হিয়াজ সিকদারই তাকে এই কথা বলেছে।নিউ টেন এ পড়ে এইবার প্রাহি।তাই গাজিপুর থেকে পুরোপুরিভাবে ট্রান্সফার করে ওকে এখানকার একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছে।পরশুদিন থেকে ক্লাস করতে যাবে সে।
কফি শেষে অর্থ দুহাতে মাথা চেপে ধরলো।এই পিচ্চি মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে অর্থ পাগল হয়ে যাচ্ছো।তাও যেন ভাবনার শেষ নেই।তবুও অর্থের প্রাহিকে ভাবতে ভালোলাগে।হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করে সে।এটা কেমন অনুভূতি?মাত্র দুটো দিনে একি করলো মেয়েটা তার সাথে?চোখ বন্ধ করলেই মেয়েটার স্নিগ্ধ মুখশ্রীটা ভেসে উঠে।কাজ করতে পারে না সে ঠিকঠাক। ঘুম আসে না তার এই মেয়েটার জন্যে।মেয়েটা কাছে না থাকলে একটা গুমোট অনুভূতি তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রাখে।কেন এমন হচ্ছে?নাহ, অর্থ কাল ওর বেষ্টফ্রেন্ডের সাথেও একবার দেখা করবে।ছেলেটার কাছে অর্থের সমস্ত অস্থিরতার কারন খুজে পায় সে।অর্থের সব রকম খারাপ পরিস্থিতিতে ওর এই বন্ধুটাই ওর সঙ্গ দেয়।তাই তো চোখ বুজে নিজের কলিজার বোনটাকে এমন একজন বন্ধুর কাছে সপে দিয়েছে সে।হিয়াকে ওর সাথে বিয়ে দিলে অর্থের কোন চিন্তাই থাকবে না।কারন ও জানে হিয়াকে ঠিক ওর মতো করেই সেই ছেলেটা আগলে রাখবে।
অর্থ আকাশের দিকে তাকালো।অর্ধচন্দ্র উঠেছে আজ।সুন্দর লাগছে দেখতে।অসংখ্য তারার মেলা আকাশে।অর্থ পন করে নিলো আজ চন্দ্রবিলাশ করেই একটা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিবে সে।

#চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here